তুই এলে তাই পর্ব ১৬

#তুমি এলে তাই ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১৬
.
গুঞ্জন চোখ বন্ধ করেই উঠতে নিলেই ওর কাধের ভাজের দিকে আরেকটা আঘাত করলো। গুঞ্জন মৃদু আর্তনাদ করে আবার বসে পরল। কপালে হাত দিয়ে দেখলো কপাল রক্ত থেকে বেরোচ্ছে। ও ভ্রু কুচকে সামনে তাকিয়ে দেখলো সেই ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে আছে যাদের ও মেরেছিলো। সবার হাতেই হকিস্টিক আর মুখে হিংস্রতা । গুঞ্জনের গায়ে আবার আঘাত করতে নিলেই গুঞ্জন হাত দিয়ে ধরে নিলো। জোরে টান দিয়ে কাছে এনে পেট বরাবর জোরে একটা লাথি মেরে দিলো। তারপর উঠে দাড়ালো ওর মাথাটা হালকা ঝিমঝিম করছে তবুও দাঁড়িয়ে আছে। গুঞ্জন হাত ঝেড়ে হাফানো কন্ঠে বলল,

— ” এই তোদের যোগ্যতা হ্যাঁ? সামনে থেকে মারার যোগ্যতা নেই তাই পেছন থেকে আঘাত করছিস। কাওয়ার্ডস।”

ওদের মধ্যে একজন বলল,

— ” হ্যাঁ। সেটাই আজ বোঝাবো তোকে?”

এটা বলে গুঞ্জনের দিকে এগিয়ে আসতেই
গুঞ্জন নাক বরাবর ঘুষি মেরে দিলো। ওই টিমের লিডার বলল,

— ” এভাবে হবেনা একা একা গিয়ে লাভ নেই। সবাই মিলে যা।”

সবাই মিলে হকিস্টিক নিয়ে এগিয়ে আসতে নিলেই গুঞ্জন সবার সামনে থাকা লোকটার পায়ে ল্যাং মেরে হাত থেকে হকিস্টিক নিয়ে ওদের মারতে শুরু করলো সবাইকে এলোপাথাড়ি মেরে যাচ্ছে। কিন্তু যতো সময় যাচ্ছে মাথা ব্যাথা আর ঝিমুনি দুটোই বেড়ে যাচ্ছে। একপর্যায়ে গুঞ্জন আর হকিস্টিকটা ধরে রাখতে পারলো না। হাত থেকে পরে গেলো। ওরা এই সুযোগেরই হয়তো অপেক্ষা করছিলো। গুঞ্জনকে খালি হাতে পেয়ে হকিস্টিক দিয়ে ওর পিঠে আঘাত করলো। এরপর কয়েটা আঘাত করতেই গুঞ্জন বসে পড়লো মাটিতে। গুঞ্জনের কপাল দিয়ে রক্ত পরছে, হাত ঘার অনেক জায়গায় আঘাতের লাল লাল দাগ হয়ে গেছে। টিমের সেই লিডার বলল,

— ” কী হকিস্টিক নিয়ে খেলার খুব শখ না তোর? এখন কেমন লাগছে। মেয়ে মেয়েই হয় বুঝলি? যেসব মেয়েটা নিজেদের ”

গুঞ্জনের এটা শুনে জেদ চেপে গেলো জোরে শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,

— ” হ্যাঁ এইজন্যই তো একটা মেয়েকে মারতে এতোগুলো ছেলে এসছিস। তাও সামনে থেকে না পেছন থেকে মেরেছিস।”

কথাটা শুনে লোকটা গুঞ্জনের কাধে জোরে আঘাত করলো। গুঞ্জনের শরীরে তেমন শক্তি নেই তবুও জেদের বশে এসে পরে থাকা হকিস্টিকটা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যেটুকু শক্তি আছে তা দিয়েই ওদের মারতে শুরু করলো। এবার ও শক্তির চেয়ে বেশি টেকনিক ইউস করছে।

স্পন্দনও গাড়ি করে ঘুরতে ঘুরতে এখানেই এসছিলো। নদীর পার দিয়ে হাটছিলো হঠাৎ দেখলত দূরে গোন্ডগোল হচ্ছে। স্পন্দন পায়ের গতি বাড়িয়ে একটু এগোতেই দেখতে পেলো গুঞ্জন কতোগুলো ছেলেকে মারছে। অনেকটা দূর থেকে দেখছে তাই গুঞ্জনের শরীরের ক্ষতগুলো দেখতে পায়না। গুঞ্জনকে এভাবে মারপিট করতে দেখে স্পন্দন বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” কী দরকার এতো হিরোগিরি করার? যা কিছু হয়ে যেতে পারে। নাহ আমাকেই যেতে হবে।”

স্পন্দন আরেকটু এগোতেই স্পন্দন দেখতে পেলো যে গুঞ্জনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন। সেটাষদেখে স্পন্দনের পায়ের গতি বেড়ে গেলো। ও পায়ের গতি বাড়িয়ে দিলো। হঠাৎ ও দেখলো যে গুঞ্জন একজনকে মারছে আরেকজন ওর মাথায় আঘাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্পন্দন চিৎকার করে সাবধান করবে তার আগেই ওর মাথায় পেছন থেকেই লোকটা জোরে আঘাত করে দিলো। গুঞ্জন জোরে চিৎকার করে উঠল আস্তে করে হাত থেকে হকিস্টটা পরে গেলো ওর। স্পন্দন ‘গুঞ্জন’ বলে জোরে চিৎকার করতেই লোকগুলো থতমত খেয়ে তাকালো। স্পন্দন দৌড় লাগালো গুঞ্জনের কাছে যাবে বলে। গুঞ্জন অজ্ঞান হয়ে ওখানে পরে গেলো।স্পন্দনকে দেখে দৌড়ে সবগুলো পালিয়ে গেলো স্পন্দন লোকগুলোর পেছনে যেতে নিয়েও থেমে গেলো তারপর দৌড়ে গুঞ্জনের কাছে গিয়ে ওর মাথাটা কোলে নিয়ে গালে হালকা চাপড় মেরে বলল,

— ” গুঞ্জন? এই গুঞ্জন? হেই?”

গুঞ্জনের কোনো রেসপন্স না পেয়ে স্পন্দন বুঝলো মাথায় আঘাতটা বেশি জোরে লেগেছে তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে। কপাল থেকে রক্ত বেড়িয়ে যাচ্ছে মাথায় পেছনে হাত দিয়েও রক্ত ফিল করলো তবে হালকা। কিছু না ভেবেই পকেট থেকে ওর রুমাল বার করে গুঞ্জনের মাথা বেধেঁ দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো। কারণ ওকে এভাবে ফেলে রাখা যাবেনা। কিন্তু এটা গ্রামের খুব ভেতরের রাস্তা। ওকে নিয় শহরে হসপিটালে যেতে বেশ সময় লাগবে কি করবে কিছু বুঝতে পারছেনা। তবুও কোলে নিয়ে একপ্রকার দৌড়তে শুরু করলো গাড়ির উদ্দেশ্য। গাড়ির কাছে গিয়ে দেখলো কিছু লোকজন ছোটাছুটি করে এদিকে যাচ্ছে। তবুও এসব পাত্তা না দিয়ে গাড়িতে গুঞ্জনকে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসতে নিলো তখনি কেউ একজন কৃষক টাইপ লোক বলে উঠল,

— ” সাহেব কই যাইবেন?”

স্পন্দন গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” শহরের রোডে হসপিটালে আসলে ও মাথায় অনেক জোরে আঘাত পেয়েছে তাই..।”

লোকটা একটু চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠল,

— ” কিন্তু সাহেব সামনের ঐ রাস্তা দিয়া তো যাইতে পারবেন না আইজ আর। আসলে দুই পাড়ার লোকের মধ্যে গন্ডগোল লাগছে। মারামারি লাগতে পারে। রাস্তা আটকাই দিছে আর এখন তো সন্ধ্যাও হইয়া গেছে।”

স্পন্দন রেগে গিয়ে বলল,

— ” আরে মেয়েটার মাথা দিয়ে রক্ত বেড়োচ্ছে। অনেক আঘাত আছে শরীরে। আর আপনারা.. এনিওয়ে আমিও দেখছি এই রাস্তা কীকরে বন্ধ রাখে।”

বলে পকেটে হাত দিতে নিলেই খেয়াল করলো ফোন নেই। ও এবার সবটা চেইক করে বলল,

— ” ওয়াট দা হেল আমার ফোন কোথায়?”

অনেক খুজেও ফোনটা আর পেলোনা গাড়ির ওপর একটা পাঞ্চ মেরে বলল,

— ” সিট এখন কী করবো?”

কৃষক লোকটা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

— ” সাহেব একটা কতা কমু?”

স্পন্দন বিরক্তি নিয়ে বলল,

— ” আপনি আবার কী বলবেন?”

লোকটা ইতস্তত করে বলল,

— ” ঐযে কাইটা ছিড়া গেলে সাদা কাপুড় দিয়া বান্ধে না ওইগুলা আছে আমগো কাছে।”

স্পন্দন অবাক হয়ে বলল,

— ” ফার্স্ট এইড বক্স আছে আপনাদের কাছে?”

লোকটা একটু হাসি দিয়ে বলল,

— ” হো আছে তো। ঐ যে মাঝে মাঝে অফিসের মেডামরা সারেরা আহে তারাই ঐ যে আপনে কইলেননা বাক্স ওইটাই দিয়া যায়। যদিও আমরা তেমন ব্যাবহার করতে জানিনা।”

স্পন্দন ভ্রু কুচকে বলল,

— ” এ.জি.ওর লোকেরা?”

লোকটি একটু উৎসাহি কন্ঠে বলল,

— ” হ হ হেরাই। তা কই কী আইজ তো আর যাইতে পারবেন না। তো মেডামরে লইয়া আমগো বাইত আহেন। মেডামের মাথায়ও ব্যান্ডেজ করোন যাইবো আর তার একটু দূরেই ডাক্তার সাহেবের বাড়ি। ছুটিতে আইছে বেড়াইতে। হেরেও ডাইক্কা আনুমনে। ”

স্পন্দন একটু ভাবুক হয়ে বলল,

— ” আপনাদের বাড়ি?”

লোকটা মুখে মলিন হাসি ফুটিয়ে বলল,

— ” জানি আমরা গরীব। বাড়িখান ছোডই। আপনাগো ইট্টু অসুবিধা হইবো কিন্তু আমরা যত্নেআত্মির ভালাই করি। আপনাগো খুব বেশি কষ্ট হইতে দিমু না।”

স্পন্দন ভেবে দেখলো যে ঠিকি বলেছে লোকটা গুঞ্জনের ইমিডিয়েট ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। আর হসপিটালেও যেতে পারবেনা রোড ব্লক তাই। সো এটাই বেস্ট হবে। তাছাড়া ওনারা ডক্টরতো ডেকে আনবেই। এসব ভেবে বলল,

— ” ওকে চলুন কোথায় আপনাদের বাড়ি?

লোকটা খুশি হইয়া বলল,

— ” চলেন তাইলে। একটু ভেতরেই বাসা গাড়ি যাইবোনা। মেডামরে কোলে উঠাইয়া লন। গাড়ি থাউক হেনে।”

স্পন্দন গুঞ্জনকে কোলে নিয়ে লোকটাকে অনুসরণ করে হাটা দিলো। ভেতরে কিছুটা হেটে একটু ছোট্ট বাঁশের বেড়ার ঘর। লোকটা দরজার কাজে গিয়েই হাক ছাড়লেন,

— ” ও সিয়ামের মা। দেহো কারা আইছে।”

এটুকু ডাকতেই একজন মহিলা মাথায় ঘোমটা টানতে টানতে বেড়িতে এসে বলল,

— ” কারা আইছে গো।”

এটা বলে তাকাতেই স্পন্দন আর স্পন্দনের কোলে গুঞ্জনকে দেখে উনি অবাক হয়ে বললেন,

— ” আরে এরা তো শহরের সাহেব আর মেডাম। মনে হইতাছে। কি হইছে ম্যাডামের?”

লোকটা বলল,

— ” আর বইলোনা। মাথায় জোরে ব্যাথা পাইছে মেডাম। আর রাস্তাও বন্ধ গন্ডগোলের লাইগ্গা। তাই এইহানে লইয়া আইলাম আইজ রাইত এইহানেই থাকবো ওরা।”

লোকটির স্ত্রী বললেন,

— ” ভালা করছো তা বাইরে দাঁড় করাইয়া রাখছো ক্যান? ভেতরে নিয়া আসো তাড়াতাড়ি।”

স্পন্দনকে বলতেই স্পন্দন গুঞ্জনকে নিয়ে বেতরে ঢুকলো। ভেতরে আট বছরের একটা ছেলেও বসে আছে। দুটোই রুম ভেতরে খাট একটা। তাও চৌকি টাইপ। স্পন্দন গুঞ্জনকে ওটাতে শুইয়ে দিয়ে বলল,

— ” ফার্স্ট এইড বক্সটা তাড়াতাড়ি আনুন প্লিজ।”

লোকটা হকচকিয়ে তার স্ত্রীকে বললেন,

— ” যাওনা ঐ স্যারেরা যেই বাক্স দিছিলো ঐটা নিয়া আসো।”

মহিলাটি একপ্রকার দৌড়ে চলে গেলেন আনতে। বাচ্চা ছেলেটি এসে লাফ দিয়ে খাটে উঠে গুঞ্জনের পাশে বসে বলল,

— ” এনার কী হয়েছে?”

স্পন্দন মুচকি হেসে ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” কিছুনা বাবু একটু ব্যাথা পেয়েছে।”

এরমধ্যেই লোকটার স্ত্রী ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। স্পন্দন তাড়াতাড়ি সেটা হাতে নিয়ে গুঞ্জনের পাশে বসে কপাল সহ মাথার পেছনের দিকটা ঔষধ লাগিয়ে ক্লিন করে চিকন করে এক ব্যানডেজেই কপাল আর মাথার পেছন দিকটা ব্যান্ডেজ করে দিলো। তারপর বাকি সব ক্ষত স্হানে ঔষধ লাগিয়ে দিলো কিছু কিছু জায়গায় ব্যান্ডেজও করে দিলো। কিছুক্ষণ পর লোকটা বলল,

— ” উনি আপনের বউ তাইনা?”

স্পন্দন একটু চমকে তাকালো। লোকটার স্ত্রী বিরক্ত হয়ে বললেন,

— ” কী যে কওনা তুমি। ওনারা এইসময় একসাথে গ্রামে আইছেন, কোলে করে নিয়া আইলো দেখলানা। বউ না হইলে আনতো।”

স্পন্দন কিছুই বললনা। কারণ এখন যদি ওরা জানতে পারে গুঞ্জন ওর স্ত্রী না তাহলে ফালতু ঝামেলা হবে। গ্রামের লোকেরা এসব বিষয়ে খুবই সেন্সেটিভ। স্পন্দন বাচ্চা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তোমার নাম কী?”

ছেলেটি সরল ভাবে বলল,

— ” সিয়াম।”

স্পন্দন মুচকি হেসে বলল,

— ” কোন ক্লাসে পড়ো?”

ছেলেটা এবার হেসে দিয়ে বলল,

— ” ক্লাস থ্রী”

স্পন্দন একটু হেসে বলল,

— ” বাহ। খুব ভালো।”

কৃষক লোকটি বললেন,

— ” একটাই তো পোলা সাহেব। আমরা গরিব তো কী এরে যদি ঠিকমতো মানুষ করতে পারি তাইলেই আমাগো সব কষ্ট স্বার্থক।”

স্পন্দন মনে মনে সত্যিই মানুষ কতো সংগ্রাম করে জীবণে । আর ওরা তো সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে তাই এই কষ্টটা বুঝতে পারেনি। এরপর ওনারা স্পন্দনের সাথে নানারকম কথা বললেন। বিভিন্ন কিছু জিজ্ঞেস করলেন। আর ওনাদের ছেলের সাথেও স্পন্দনের অনেক কথা হলো। ঘন্টাদুই পরেই পরেই গুঞ্জনের জ্ঞান ফিরে এলো আস্তে আস্তে চোখ খুলে একটা আলাদা পরিবেশে নিজেকে আবিষ্কার করে একটু উত্তেজিত হয়ে উঠে বসতে নীলে শরীরে মাথায় অনেক ব্যাথা অনুভব করলো।স্পন্দনকে দেখে স্বস্তি পেলো ও কারণ জ্ঞান হারানোর আগে স্পন্দনকে ওর দিকে ছুটে আসতে দেখেছে ও। স্পন্দন গুঞ্জনের হাত ধরে বলল,

— ” রিলাক্স আমি আছি।”

গুঞ্জন চারপাশে তাকিয়ে আর কৃষক লোকটা আর তার স্ত্রী সন্তানকে দেখে একটু অবাক হলো। ওনারা বুঝলেন ওদর একটু আলাদা কথা বলতে দেওয়া উচিত তাই লোকটি বলল,

— ” আপনেরা কথা কন আমরা রাত্রের খাওনের ব্যবস্হা করি।”

ওনারা চলে যেতেই গুঞ্জন উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো,

— ” ওরা? ওরা কোথায়? আর এটা কোন জায়গা? আমি এখানে কেনো…”

স্পন্দন গুঞ্জনের হাত শক্ত করে ধরে বলল,

— ” ওরা নেই পালিয়ে গেছে। আর কিছু হয়নি তোমার। একটু অসুস্হ আছো তোমার রেস্ট দরকার।”

বলে গুঞ্জনকে বেড়ার সাথে বালিশ রেখে ওখানে হেলান দিয়ে শুইয়ে দিলো। তারপর গুঞ্জনকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলল। গুঞ্জন স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আপনি এখানে কী করছিলেন?”

স্পন্দন একটু হেসে বলল,

— ” আসলে আমি মাঝেমাঝেই ফ্রি থাকলে এদিক ওদিক কোনো দূরের পথে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যাই। তবে ভাগ্য ভালো কোইন্সিডেন্টলি আমিও এখানেই এসছিলাম নইলে আজ কী হতো বলোতো?”

গুঞ্জন উদাস কন্ঠে আনমনে বলল,

— ” কী আর হতো? ওরা আমাকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিতো আর সবাই মুক্তি পেয়ে যেতো।”

স্পন্দন বুঝতে না পেরে বলল,

— ” সরি?”

গুঞ্জন নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

— ” নাহ কিছুনা। বাই দা ওয়ে থ্যাংকস।”

স্পন্দন কিছু না বলে হাসলো। তারপর বলল,

— ” এনিওয়ে ওরা কিন্তু আমাদের হাজবেন্ড ওয়াইফ ভাবছে।”

গুঞ্জন অবাক হয়ে বলল,

— ” মানে?”

এরপর স্পন্দন সেই কাহিনীও বলল গুঞ্জন হাত ভাজ করে চোখ ছোট করে বলল,

— ” বহুত বাংলা সিনেমা দেখেন আপনি?”

দুজনেই বিষয়টা নিয়ে খুব হাসলো। এরমধ্যেই ওনারা একটা বড় টাইপ গোল বাসতে ভাত নিয়ে এসে বললেন,

— ” আসলে আপনেরা যে আইবেন তা জানতাম না তাই এই ডাইল আর আলুভর্তা আছিলো তাই আনলাম।”

গুঞ্জন বলল,

— ” আরে ডাল আর আলুভর্তা কতোদিন খাইনি জানেন? ইস আমারতো জ্বিবে জল চলে এসছে। তবে এখানে কেনো একসাথেই যাবো সবাই।”

বলে উঠতে নিলেই ব্যাথায় বসে পড়লো গুঞ্জন। স্পন্দন ধমকে বলল,

— ” এতো লাফাও কেনো ? একটু চুপচাপ বসা যায়না।”

লোকটার স্ত্রী বললেন,

— ” মেডাম তো নিজ হাতে আইজ খাইতে পারবোন না তাই আপনিই খাওয়াইয়া দিবেন নিশ্চয়। তাই এক থালেই আনছি।”

স্পন্দন একটু অস্বস্তিতে পরে গেলো সাথে গুঞ্জনও কিন্তু কিছু করার নেই এটা সত্যিই যে গুঞ্জন আজ নিজে খেতে পারবেনা আর স্পন্দন ওনাদের সামনে নাও করতে পারবেনা তাই খাইয়ে দিতে হলো। খেতে গুঞ্জন সিয়ামের সাথে খুব গল্প করলো।

বেশ রাত হয়েছে। স্পন্দন আর গুঞ্জন দুজনেই বেডে বেড়ার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। ওদের এইরুমে থাকতে দিয়ে পাশের রুমে পাটি পেতে শুয়েছেন ওনারা।ওরা না করেছিলো কিন্তু ওনারা শোনেনি। একরুমে থাকতে ওদের ইতস্তত লাগছে তাই স্পন্দন বলল গুঞ্জনকে ঘুমোতে ও জেগে থাকবে কিন্তু গুঞ্জন কী শোনার মেয়ে ওর এক কথা ওও জাগবে। স্পন্দনের ধমকিও কাজে দিলোনা তাই মানতে হলো। গঞ্জন নানারকম কথা বলছে লোকটা কেমন স্ত্রী কেমন সিয়াম কেমন। আর স্পন্দন শুনছে। একসময় কথা বলতে বলতে গুঞ্জন ঘুমিয়ে পড়লো আর স্পন্দের কাধে ওর মাথা পড়লো। স্পন্দপ পড়লো আরেক জ্বালায় বালিশ একটাই যেটাতে ও হেলান দিয়েছে আর হেলান না দিলে ও জেগে থাকতে পারবেনা ক্লান্তি বেশি লাগবে আর ঘুম চলে আসবে। একটু ভেবে ও গুঞ্জনের মাথাটা নিজের কোলে রাখলো। গুঞ্জন গুটিয়ে শুয়ে রইলো স্পন্দনের কোলে। স্পন্দন নিজের অজান্তেই মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত বুলাতে শুরু করলো।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here