তুই যে শুধুই আমার পর্ব ১০+১১

পর্ব ১০+১১
#তুই_যে_শুধুই_আমার [ ❤You are only mine❤ ]
#সিজন_২
#Part_10
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

🍂এইদিকে🍂
আসিফ সায়রাকে হসপিটালে এডমিট করে,, আসিফ সায়রার বাবা মাকে কল করে সায়রার কথা জানায় আর হসপিটালে আসতে বলে,, একটু পর তারা এসেও পড়ে,,, জান্নাতও ইতি মধ্যে চলে এসেছে,,
ডাক্তার সায়রাকে চেক করছে,, একটু পর ডাক্তার বেড়িয়ে আসলে সবাই তাকে ঘিরে দাড়ায়,, সায়রার বাবা আমিনুল সাহেব এক অস্থিরতা ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করেন।।

আমিনুল সাহেবঃ আমার মেয়ে,, আমার মেয়ে কেমন আছে ডাক্তার?? ঠিক আছে তহ??

ডাক্তারঃ দেখুন শান্ত হোন হাইপার হবেন না। নিজেকে একটু শান্ত করুন। পেশেন্টের অবস্থা খুব একটা ভালো তা না। হাত ও পা অনেক বাজে ভাবে ছিলে গিয়েছে আর ব্লিডিং ও অনেক বেশি হয়েছে। ক্ষত স্থানটি ভালো মত পরিষ্কারও করা হয় নি যার ফলে ক্ষত স্থানটির চারপাশে খানিকটা ইনফেকশন হয়ে গিয়েছে যার ফলে ক্ষতটি আরও গভীর হয়ে গিয়েছে। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে ইনফেকশনটি বেশি ছড়াতে পারে নি কিন্তু…

আমিনুল সাহেবঃ কিন্তু কি ডাক্তার?? উত্তেজিত হয়ে

ডাক্তারঃ তার ব্রেইনের কিছু একটা প্রবলেম দেখা দিচ্ছে। কয়েকটা নার্ভ একদম কাজ করছে না। এক জায়গায় ব্লোকেজ ও হয়ে গিয়েছে।
তিনি মাথার ডান পাশে ঘুরতোর ভাবে আঘাত পেয়েছেন যার ফলে মাথার ডান পাশে কিছু একটা প্রবলেম দেখা দিচ্ছে। তার উপর তিনি জ্ঞান হারাবার আগে মেবি একটু স্ট্রেস আউট ছিলেন। মেন্টালি প্রেশারাইসড ছিলেন যার ফলে তার ব্রেইনে ইফেক্ট করেছে। একে তহ এই আঘাত তার উপর মেন্টালি প্রেশার, তার ব্রেইন একসাথে এত চাপ নিতে পারে নি যার ফলে তিনি সেন্সলেস হয়ে যায়।

আসিফঃ তহ এখন এর উপায় কি ডাক্তার??

ডাক্তারঃ অপারেশন।।

আমিনুল সাহেবঃ না কিছুতেই না। আমার মেয়ের কোন অপারেশন হবে না। আমি দিব না হতে।

ডাক্তারঃ দেখুন বুঝার চেষ্টা করুন যেহেতু তার মাথায় এক জায়গা ব্লোক হয়ে গিয়েছে সেহেতু এখন অপারেশন ছাড়া আর কোন উপায় নেই। চিন্তার কোন বিষয় নেই এইটা কোন মেজোর টাইপ অপারেশন না নরমাল একটা অপারেশন। আমরা জাস্ট সেই ব্লোকেজটা রিমুভ করবো। এতে তার কোন ক্ষতি হবে না বাট যদি ব্লোকেকটা রিমুভ না করা হয় তাহলে হয়তো বা তার ব্রেইন কাজ করা অফ করে দিতে পারে এন্ড তিনি ব্রেইন স্টোক ও করতে পারে।।

আমিনুল সাহেবঃ না এমন হতে পারে না। কিছুতেই না। আমার মেয়ের কিছু হতে পারে না। অশ্রু ভেজা কন্ঠে।

জান্নাতঃ আঙ্কেল নিজেকে সামলান। সায়রার কিছু হবে না। অপারেশনের জন্য রাজি হয়ে যান। এইটা ইম্পর্ট্যান্ট। আমি আপনার ভয় বুঝি কিন্তু সায়রার কথা একবার ভাবুন প্লিজ। সি নিডস দি অপারেশন।

আমিনুল সাহেবঃ তাহলে আপনি অপারেশনের ব্যবস্থা করুন ডাক্তার। আমি আমার মেয়েকে কোন মতেই সুস্থ দেখতে চাই। যে কোন মূল্যে। ওই আমার শেষ সম্বল। একজন তহ চলেই গিয়েছে ছেড়ে এখন ওর ও যদি কিছু হয় আমি মরে যাব ডাক্তার মরে যাব।। এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ইমা বেগম ( সায়রার মা) এসে আমিনুল সাহেবকে ধরেন আর তাকে সামলাতে থাকে,,

আসিফঃ ডাক্তার আপনি যথা জলদি অপারেশনের ব্যবস্থা করুন। প্লিজ।।

ডাক্তারঃ ইয়াহ সিউর,, কিন্তু তার আগে প্লিজ আপনারা দয়া করে হসপিটালের সকল ফরমালিটিস পূরণ করে দিন।। তা না হলে আমরা কিছুই করতে পারছি না।।

তখন পিছন থেকে আরুশ বলে উঠে।।

আরুশঃ আপনি ফরমালিটিসের চিন্তা করবেন না।। সে সব আমি দেখে নিব।। আপনি শুধু অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হন।।

ডাক্তারঃ আরেহ মি. আরুশ খান আপনি!! আপনি এইখানে কি করছেন??

আরুশঃ That’s none of your business. Please go and check the patient. I just want her back at any cost. You got it.

ডাক্তারঃ ইয়াহ সিউর।

এই বলে ডাক্তার চলে যায় আর জান্নাত তেড়ে এসে চেঁচিয়ে বলে।

জান্নাতঃ আপনি এইখানে কেন এসেছেন তামাশা দেখতে নাকি দেখতে যে সায়রা বেঁচে আছে না মরে গেছে!!

তখন পাশ দিয়ে যাওয়া একজন নার্স বলে উঠে।

নার্সঃ This is hospital mam please don’t shout.

জান্নাতঃ Sorry and hey you mr. Khan please come outside with me.

আরুশঃ You go first. I am just coming in a few minute.

এই বলে আরুশ কোথায় জানি চলে গেল তখন আমিনুল সাহেব বলে উঠেন।

আমিনুল সাহেবঃ জান্নাত মা এনি কে??

জান্নাতঃ এনি সেই ব্যক্তি যার জন্য সায়রার মাথায় এত প্রেশার ক্রিয়েট। এনি এই সায়রার অফিসের বস মি. আরুশ খান

আমিনুল সাহেবঃ কি বলছো এইসব। অবাক হয়ে

জান্নাতঃ আঙ্কেল আমি এইসব নিয়ে পড়ে কথা বলছি। আগে তার সাথে আমার বোঝা পড়া বাকি আছে। আসিফ তুই এই দিক সামলিয়ে নিস। তোকে এখন আঙ্কেলের বড্ড প্রয়োজন।

আসিফঃ ডোন্ট ওয়ারি ইয়ার। আ’ম হিয়ার, ইউ জাস্ট গো নাও।

জান্নাত আর কথা না বাড়িয়ে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে যেতে নেয় তখন দেখে ক্যাশ কাউন্টারের কাছে আসতেই দেখে আরুশ সকল ফরমালিটিস পূরণ করছে এবং টাকা জমা দিচ্ছে আর বলছে।

আরুশঃ টাকা গুলো নিয়ে যথা দ্রুত সম্ভব অপারেশনটা স্ট্রাট করুন। হারি আপ।

তা দেখে জান্নাত এসে আরুশের হাত ধরে আর বলে।

জান্নাতঃ কোন সাহসে আপনি এই টাকা গুলো জমা দিচ্ছেন? কি হন আপনি সায়রার যে আপনি এর জন্য টাকা দিচ্ছেন? সায়রার বাবা মার বুঝি টাকা নেই যে আপনি টাকা দিচ্ছেন?

আরুশঃ আমি কি তা বলেছি।। দেখো তাদের
এখন এমন মনমানসিকতা নেই যে তারা এইসবের দিকে মনোযোগ দিতে পারবে। তাদের মনের অবস্থা এখন একদমই ভালো না আর না এখন তাদের ভালো মন্দ বুঝার জ্ঞান বোধ আছে।। আর আমার জানার মতে তাদের তেমন কোন নেই এইসব দিকটা ভালো মত দেখবে। তুমি আর ওই ছেলেটাও এখনো ছোট এইসব ফরমালেটিস তোমরা সামলাতে পারবে না। এতে সায়রার অপারেশনেই দেরি হবে আর ওরই ক্ষতি হবে তাই আমি যা করছি তা আমায় করতে দাও।

জান্নাত এইবার আরুশের হাতটা ছেড়ে দেয় কেন না আরুশের কথা একদিক দিয়েই ঠিক এই। এখন আপাতত সায়রার অপারেশনটা খুব বেশি দরকার আর আঙ্কেল আন্টি এখন এইসব কিছু ঠিক মত করতেও পারবে না। কেন না তারা এখন একদম ভেঙে পড়েছে। তারা এখন নিজের মধ্যে নেই। তাদের মনে এখন যে ভয় কাজ করছে তা জান্নাতের অজানা নয়।


হসপিটালের সামনে একটি পার্কে বসে আছে আরুশ আর জান্নাত। জান্নাত নিজের রাগ ধরে রাখতে পারছে না।। মনটা চাচ্ছে এই আরুশ না পারুশ খানকে কাঁচা চিবিয়ে ফেলতে। কিন্তু তাও নিজেকে সংযত রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

জান্নাতঃ কেন এসেছেন এইখানে? তখন অপমান করে কি মন ভরে নি যে এখন আবার চলে এসেছেন? আজ আপনার জন্য সায়রার এই অবস্থা। সায়রার যদি কিছু হয় না তাহলে আমি আপনাকে ছাড়বো না আই সোয়ের।

আরুশঃ দেখ তুমি আমায় ভুল বুঝছো। তখন রাগের মাথায় কি থেকে কি বলে ফেলেছি নিজেরও খেয়াল নেই। কিন্তু যাই বলেছি মন থেকে নয়। এইটা আমি জানি সায়রা যতই দুষ্টু হোক আর যতই বাচ্চামো করুক ও কাজের প্রতি অনেক বেশি এক্টিভ। কাজের প্রতি ও কখনো এতটা অবহেলা করে না কিন্তু আজ যখন এই ক্লাইন্টসরা আমায় এত কথা শুনালো তখন মাথা ঠিক ছিল না। মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছি তাই যত রাগ ছিল সব সায়রার উপর গিয়ে পড়ে।

জান্নাতঃ বাহ বললেই হলো। না জেনে শুনে এত কিছু বলে ফেললেন একবার ওর কথাটুকু শুনতে চাইলেন না। আরেহ যেখানে আমরা ওর সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে ভয় পাই সেখানে আপনি ওকে থাপ্পড় মেরেছেন,ধমকিয়েছেন আরও কত কি না বলেছেন। ও কতটা সেন্সিটিভ তা আপনার ধারণার ও বাইরে।। ও যতটাই নিজেকে হাসি খুশি দেখাক না কেন ভিতর ও যে কষ্টটা দাফন করে রেখেছে তা আপনাদের ধারণার ও বাইরে। যে মেয়েকে আমি এই দুইবছরে একবারও কাদতে দেখি নি আজ আপনার জন্য আমি ওর চোখে পানি দেখেছি।

আরুশঃ আ’ম সরি। নিজের অজান্তেই অনেক বেশি বলে ফেলেছি আমি। আমার এমন করাটা ঠিক হয় নি। কিন্তু আমার তোমার থেকে কিছু জানার আছে।

জান্নাতঃ কি??

আরুশঃ কি সেই কষ্ট? আই ওয়ান্ট টু নো। এমন কি হয়েছিল যে ও এমন হলো।

জান্নাতঃ আপনি কোন অধিকার নিয়ে এইসব জানতে চাচ্ছেন? সায়রার জীবন নিয়ে আপনার জানার কোন অধিকার নেই। ইউ হ্যাভ নো রাইটস ওন হার।

আরুশঃ যদি বলি আছে। যদি সায়রার সম্পর্কে প্রত্যেকটা কথা জানার আমার পূর্ণ অধিকার আছে তাহলে।

জান্নাতঃ মানে। কিসের অধিকারের কথা বলছেন আপনি। অবাক হয়ে।

আরুশঃ দ্যান লিসেন!!
____________________________

আরুশঃ এখন তহ বুঝেছো কিসের অধিকার। এখন তহ কোন অবজেকশন নেই তাই না।

জান্নাতঃ হাহ, এক বড় নিশ্বাস নিয়ে। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না বাট করতে বাধ্য হচ্ছি। আপনি যে একটা ঠকবাজ তা জানেন!! আপনার নামে ঠকবাজির মামলা করা উচিৎ।। এখন যদি এই জিনিসটা না থাকতো খুন করতাম আপনাকে আমি। ইউ চিটার। 😤😤

আরুশঃ দেখ যা করেছি তা সায়রা আর আমার ভালোর জন্যই করেছি। তুমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আর ওর পাস্ট সম্পর্কে সব জানো বলে এইসব বললাম আদার ওয়াইস এইসব আমি কাউকেই বলতাম না। এখন প্লিজ সেই অজানা সত্যিটা আমায় বলো।

জান্নাত এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলা স্টার্ট করে।


#Part_11
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

জান্নাত এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলা স্টার্ট করে।

জান্নাতঃ সায়রা মোটেও আগে এত দুষ্টু ছিল না। ও অনেক শান্ত শিষ্ট আর চাপা স্বভাবের মেয়ে ছিল। ওর জিদ ছিল অনেক কিন্তু তা ও সকলের সামনে প্রকাশ করতো না। ও সব সময় চুপচাপ থাকতো কোন কথা বলতো না তাই ওর তেমন বেশি ফ্রেন্ডস ও ছিল না আমি আর সাহিবা আপু বাদে।

আরুশঃ এই সাহিবা কে?

জান্নাতঃ সায়রার বড় বোন। সাহিবা আপু সায়রা থেকে ১ বছরের বড় ছিলেন। সায়রা আর সাহিবা আপুকে এক সাথে পাশে বসালে কেউ বলতেই পারতো না তারা বোন। কেন না দুইজনের স্বভাবে ছিল আকাশ পাতালের তফাৎ। সায়রা যেমন ছিল ভদ্র, সাহিবা আপু ছিল তেমন মারাত্মক দূষ্টু। সায়রা এখন ঠিক যেমন সাহিবা আপুও ঠিক তেমনই ছিলেন। সব সময় ঘরবাড়ি মাতিয়ে রাখতেন।
সায়রা চুপচাপ থাকলেও সাহিবা আপু থাকতেন না। কিন্তু যত যাই হোক দুইবোনে মিল ছিল অনেক। দুইজন ছিল দুইজনের প্রাণভমরা। একজনকে ছাড়া আরেকজন একদিনও থাকতে পারতো না। তাদের মধ্যে এতো ভালবাসা দেখে দুই একসময় আমার এই হিংসে হত যে কেন আমার এমন একটা বোন নেই। কিন্তু হয়তো তাদের এই ভালবাসায় কাউরো নজর লেগে যায়।।
২বছর আগে সায়রা জিদ ধরে বসে সে সাহিবা আপুর কাছ থেকে স্কুটি চালানো শিখবে। সায়রা কখনো সাহিবা আপু থেকে কিছু চাই নি এই প্রথম কিছু চাওয়ায় তিনি মানা করতে পারেন নি। সাহিবা আপুর আগে থেকেই স্কুটি ছিল সে ওই স্কুটি দিয়েই সায়রাকে শিখানো শুরু করে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সায়রা স্কুটি চালানো শিখে যায়,, সেই কি খুশি এই না হয়েছিল সায়রা। কিন্তু ওর এই খুশিতে মনে হয় কাউরো নজর লেগে যায়। ওর জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।

আরুশঃ মানে! ভ্রু কুচকিয়ে

জান্নাত এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলা শুরু করে।

🍂
জান্নাতঃ সেইদিন সায়রা ওর নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স পায় আর সেই খুশিতে ও সাহিবা আপুকে ট্রিট দেওয়ার জন্য বের হয়। সায়রা সেদিন নিজেই ড্রাইভ করে। সাহিবা আপু না করেছিল কেন না সে এখনো নতুন তাই কিন্তু সায়রা কথা শুনে নি। ও নিজেই ড্রাইভ করা শুরু করে।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে মাঝ রাস্তায় গিয়ে। মাঝ রাস্তায় তাদের মেজোর একটা এক্সিডেন্ট হয় যেখানে সায়রা আর সাহিবা আপু গুরুতরভাবে আহত হন। দুইজনকেই পাশের হসপিটালে এডমিট করা হয়। আঙ্কেল আন্টি এইসব জানার সাথে সাথে সেইখানে চলে আসেন। সায়রার অবস্থা একটু ভালো হলেও সাহিবা আপুর অবস্থা ছিল ভয়াবহ। তিনি বাম সাউডে অনেক জ্বরেই আঘাত পান যার ফলে তার একটা কিডনি ডেমেজ হয়ে যায়। ডাক্তাররা বলে তার দ্রুত অপারেশন করতে হবে তা না হলে ইনফেকশন হয়ে যাবে আর সাথে সাথে তিনি পেরালাইজড হয়ে যাবেন। এই শুনে আঙ্কেল আন্টি একদম ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু নিজেকে সংযত রেখে তারা অপারেশনের জন্য হ্যাঁ বলে।
এরই মধ্যে সায়রা জ্ঞান ফিরে আর ও বাইরে এসে এইসব শুনে ফেলে আর পাগলের মত সাহিবা আপুর নাম নিতে থাকে।
ওর একটাই কথা ও সাহিবা আপুর কাছে যাবে। অনেক বলেও যখন ওকে বুঝানো যায় নি তখন ডাক্তার রা ওকে পারমিশন দেয় দেখা করার। তখন সায়রা ভিতরে গিয়ে সাহিবার আপুর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে। মুখটা একদম মলিন হয়ে আছে। সায়রা সাহিবা আপুর কাছে গিয়ে বসে আর বলে।

সায়রাঃ এই আপু তুই এইভাবে চুপচাপ শুয়ে আছিস কেন। তোকে না এমন চুপচাপ একদম মানাচ্ছে না। তোকে কেন যেন সায়রা সায়রা লাগছে। সাহিবা সাহিবা লাগছে না। উঠ তুই আর কথা বল আমার সাথে। এই আপু উঠ না।

অনেক ডাকাডাকির পর সাহিবা ধীরে ধীরে চোখ খুলে আর সায়রা দিকে চায়। সাহিবাকে চোখ খুলতে দেখে সায়রা খুশি হয়ে যায়। সে উৎফুল্লের সাথে বলতে থাকে।

সায়রাঃ আপু তুই ঠিক আছিস তহ?? দেখিস তোর কিছু হবে না সব আগের মত ঠিক হয়ে যাবে।

সাহিবা তখন ধীরে ধীরে নিজের অক্সিজেন মাস্ক খুলতে থাকে তা দেখে সায়রা বাঁধা দিতে নিলে সাহিবা মানা করে। সাহিবা নিজের অক্সিজেন মাস্ক খুলে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে।

সাহিবাঃ সা,,য়,,রা দে,,খ বো,ন আ,,মা,,র কা,,ছে,, বে,,শি স,,ম,য় নেই। তা যা ব,ল,ছি তা ম,ন দি,,য়ে শো,,ন

সায়রাঃ কি সব বলছো তুমি। তোমার কিছু হবে না তুমি একদম ঠিক করে যাবে। সব আমার দোষ না আমি ড্রাইভ করার জিদ করতাম আর না এইসব হতো।

সাহিবাঃ আরে,,হ ধুর পা,,গ,লি। এই,,সবে,, ত৷ তোর দো,,ষ নেই। যা হও,,য়া,,র ছিল তা হ,,য়ে,,ছে। কি,,ন্তু তার আ,,গে তুই আ,,মা,,য় ক,,থা দে আমি যা ব,,ল,,বো তুই তা ক,,র,,বি। কাঁপা কাঁপা গলায়

সায়রাঃ বল কি কথা চাই তোমার?

সাহিবাঃ আ,,মি চ,,লে যাওয়ার প,,র তুই মা বাবাকে দেখে রা,খি,,স। আ,,মি যে,,ম,,ন সব,,সময় বা,,ড়ি,,ঘর মা,,তি,,য়ে রা,খ,তা,ম তুই ও অম,,নেই রাখ,,বি। এক ক,,থায় আমি যে, মনে চল,,তাম ওম,,নেই চলবি। আমা,,র স্বপ্ন,,টা তু,ই পূ,,রণ করবি।। আমাকে তুই নিজের ভিতরের বাঁচিয়ে রাখবি কথা দে।।
হাত উঁচু করে।

সায়রা সাহিবার হাত ধরে বলে।

সায়রাঃ না তোমার কিছু হবে না আমি কিছু হতে দিব না তোমায়।

সাহিবা এক মুচকি হাসি দেয় যার মানে ছিল ভালো থাকিস আর নিজের খেয়াল রাখিস। সায়রা কি তা আদো বুঝেছিল কি জানি না
কিন্তু সাহিবা আপু আর কিছু বলতে পারে না এর আগেই ওর শ্বাসকষ্ট উঠে যায়। সায়রা তখন পাগলের মত চিৎকার করতে থাকে। সায়রার চিৎকার শুনে ডাক্তার আর নার্সরা ছুটে আসে আর সব চেক করে বলে সাহিবাকে এখনই অপারেশন থিয়েটারে নিতে হবে। সায়রা পাগলামো করছিল বলে সায়রাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেয়া হয়।
সাহিবা আপুকে অপারেশনের জন্য নেওয়া হয় কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। তিনি কোন মেডেসিনেই রেসপন্স করছিলেন না। ডাক্তাররা নিজেদের বেস্ট ট্রাই করছিলেন কিন্তু ততক্ষণে সব যেন হাতের বাইরে চলে আর সাহিবা আপু ও চলে যায় এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে।

সায়রা যখন ঘুম থেকে উঠে তখন সাহিবা আপুকে খুঁজতে থাকে। এইদিকে আঙ্কেল আন্টিও পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলেন। তখন আমি সায়রাকে আর আমার বাবা মা সায়রার বাবা মাকে সামলায়। সায়রা কিছুতেই সাহিবা আপুর মৃত্যু মেনে নিতে পারছিল না। এক প্রকার পাগলামো শুরু করে দিয়েছিল। তাই ওকে বাধ্য হয়ে আবার ঘুমের ইঞ্জেকশন দিতে হয়।
প্রায় একদিন বেলা শেষে সায়রা ঘুম থেকে উঠে আর সেই থেকে একদম চুপ হয়ে যায়। সাহিবা আপুর জন্য একটুও কাদে নি ও। নিজেকে দোষারোপ করতো সাহিবা আপুর মৃত্যুর জন্য।। আমরা অনেক বুঝিয়েছি ওকে।।
কিন্তু সে বুঝেনি বরং সেইদিনের পর থেকেই সায়রা প্রায় নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল।। প্রায় ২ মাস সায়রা নিজে ঘর বন্ধি করে ফেলে। কাউরো সাথে কোন কথা বলে না। আন্টিও বেশ ভেঙে পড়েছিলেন কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই নিজেকে সামলিয়ে নেন সায়রার জন্য। কিন্তু সায়রাকে তিনি সামলিয়ে উঠাতে পারেন নি। সকলেই যখন সব আশা ছেড়ে দিয়েছিল তখন সায়রা রুম থেকে বাইরে এসে আন্টি আর আঙ্কেল জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।।
প্রায় ২ মাস পর ও কান্না করেছিল। মন খুলে কান্না করেছিল। আর সেইদিনের পর থেকেই সায়রা একদম চেঞ্জ হয়ে যায়। নিজেকে সাহিবা আপুর মত গড়ে তুলে। শান্ত শিষ্ট সায়রা থেকে ও হয়ে উঠে দুষ্টু সায়রা। সাহিবা আপুর মত সব সময় হাসি খুশি প্রানবন্তর হয়ে উঠে। কান্না কি তা ভুলেই যায়।নিজের মাঝে সাহিবা আপুকে বাঁচিয়ে রাখতে ওর যত প্রচেষ্টা। সাহিবার আপুর স্বপ্ন ছিল ফ্যাশন হাউজে কাজ করার তাই সায়রাও এইটাকে নিজের স্বপ্ন করে তুলে আর লেগে পড়ে সেই স্বপ্ন সত্যি করতে।।
কিন্তু আজ আপনিই ওর এই স্বভাব আর কাজ নিয়ে ওকে এত কথা শুনালেন। আপনার জন্য আজ ওর চোখের সেই কান্না আসে। যার সন্ধান আমরা এই দুই বছরে পাই নি।
🍂


এইসব শুনে আরুশের চোখ ছলছল করছে মনে হচ্ছে এখনই যেন তা টুপ করে গড়িয়ে পড়বে।। কিন্তু না আরুশ নিজেকে সংযত রেখে বলে।

আরুশঃ থ্যাংক ইউ আমাকে সব বলার জন্য। এখন আমি আসি।
এই বলে আরুশ এক মুহুর্ত সেখানে না দাড়িয়ে হনহনিয়ে চলে আসে আর জান্নাত আরুশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।


রাত ১২ টা বাজে,,
এক আবছা অন্ধকার রুমে বসে আছে আরুশ। নিচে বসে খাটের সাথে মাথাটাজে হেলিয়ে বসে আছে সে। রুমের সকল আসবাপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। কোথাও কোথাও কাঁচের সূক্ষ্ম টুকরা তহ কোথাও সাজিয়ে রাখা সোপিজ গুলো। আরুশের চোখ দুটো একদম লাল হয়ে আছে। চুল গুলো উষ্কশুষ্ক। এক হাতে খানিকটা রক্ত জমাট বেঁধে আছে আর অন্য হাতে একটা বিয়ারের ক্যান। যা সে একটু পর পর খাচ্ছে আর এক ধ্যানে সামনে থাকা এক ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছে। রুমের মধ্যে থাকা জলন্ত ফ্যারিলাইটের আলোয় ছবিটা বেশ স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে। ছবিটি আর কাউরো না বরং…



#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here