তুই যে শুধুই আমার পর্ব ১৩

#তুই_যে_শুধুই_আমার [❤You are only mine❤]
#Part_13
#Writer_Tanzin_Islam_Ishika

পুরো রুমে অন্ধকার বিরাজমান,, এক থম থম পরিবেশ,,হাল্কা ফেরি লাইটের আলোতে সায়রাকে দেখা যাচ্ছে,, চুল গুলো এলোমেলো অবস্থায় সে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে মুখ লুকিয়ে কান্না করছে,,
আর তার দিকে এক জোড়া রক্তিম চোখ তাকিয়ে আছে,, ভীষণ লাল হয়ে আছে চোখ দুটি,,যে কেউ সেই চোখের দিকে তাকালে তার আত্মা শুকিয়ে যাবে,,চোখ দেখে মনে হচ্ছে যেন এখনই তার চোখ দুটি দিয়ে আগুনের বর্ষন হবে,, সেই চোখ দুটোর মালিক আর কেউ না বরং আরুশ নিজেই,,,


🍁
কি হয়েছে তাই ভাবছেন তহ,, তাহলে চলুন দেখে আসি কি হয়েছিল,,,
🍁
.
.
স্টেজ থেকে নেমে আসতেই আমি একটা ওয়েটার সাথে ধাক্কা খাই,,, যার ফলে আমার গাউনে পানি পরে যায়,, আমি আরুশকে বলে ওয়াশরুমে চলে যাই এইটা মুচতে,,, কিন্তু যেই না ওয়াশরুমে ঢুকতে যাব,, তখন কেউ এসে আমার মুখ চেপে ধরে আমি হাত ছুড়াছুড়ি করেও তার সাথে পেরে উঠছিলাম না,, সে আমায় টেনে পিছনের গেট দিয়ে বাগানের দিকে নিয়ে যায়,, আর সেখানে গিয়ে আমায় মাটিতে ছুড়ে মারে,, মাটিতে ছুড়ে মারার ফলে আমার হাত খানিকটা ছিলে যায়,, আমি সেইদিকে তোক্কোয়া না করে সামনে তাকাই,, সামনে তাকিয়ে দেখি রুহান দাড়িয়ে আছে,, আমি ওকে দেখে রেগে যাই,, আর উঠে গিয়ে ওর কলার ধরে টান দিয়ে বলি,,

সায়রাঃ কি সমস্যা কি,, এই রকম অসভ্যতার মানে কি,,, খানিকটা জোর গলায়,,

রুহান নিজের কলার ছাড়িয়ে বলে,,

রুহানঃ খবরদার,, আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলবে না,, তা না হলে এর পরিনতি খুব খারাপ হবে,,

সায়রাঃ কি করবে হ্যাঁ তুমি কি করবে,,

রুহানঃ পাখা গুজাইসে তাই না,,এই পাখা কিভাবে কাটতে হয় তা আমি ভালো করেই জানি,, তুমি কি মনে করসো তোমাকে আমি শান্তিতে থাকতে দিব,, কোন দিনও না,, তোদের দুইজনকে বরবাদ করে দিব আমি,,

সায়রাঃ অনেক হয়েছে আর না,, তোর এই ভালো মানুষের পিছনে লুকিয়ে থাকা নরপশুকে আমি সকলের সামনে তুলে ধরবই,, তোর জন্য আজ আমি আমার আরুশের কাছ থেকে এত দূরে,,, যেখানে আমার ওর ভালবাসা প্রাপ্য সেখানে আমি আজ ওর ঘৃণা পাচ্ছি,, শুধু মাত্র তোর জন্য,, আজই আমি আরুশকে সব বলে দিব,,

রুহান এক মুচকি হেসে বলে,,
রুহানঃ তোর কথা শুনলে শানি,,

আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই রুহান আমায় জরিয়ে ধরে,, আর এক দিয়ে আমার মাথা ওর বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরে,, যার ফলে আমি কিছু বলতে পারছিলাম না,, আর যেভাবে ধরেছে তার ফলে আমি নড়তেও পারছিলাম না,,রুহান এইবার বলতে শুরু করে,,

রুহানঃ তুমি আমায় এত ভালবাস তা আমার জানা ছিল না,,তুমি যে আমায় ছাড়া এক মূহুর্তও থাকতে পারো না,, তাই তহ সুযোগ বুঝে
আজ এই পার্টিতে তুমি আমার সাথে টাইম স্পেন্ড করবে বলে আসতে বললে,,
আচ্ছা এইভাবে আর কতদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করব বলো,, আমার যে আর সইছে না,, কবে তুমি আরুশকে দিয়ে প্রোপার্টিস এর পেপার সাইন করিয়ে সব সম্পত্তি নিজের নামে করাবে আর আমার কাছে চলে আসবে বলো,,

আমি কিছু বুঝতে পারছি না,, রুহান কি বলছে না বলছে,, আর কেনই বা বলছে,, আমি সব বুঝে উঠার আগেই কেউ এসে এক ঝাটকায় আমাকে রুহানের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলে,, আর আমার গালে স্বজরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়,, আমি সামনে তাকিয়ে দেখি আরুশ রক্তিম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,, আমি কিছু বলার আগেই আরুশ রুহানকে পিটাতে শুরু করে,, আর বলতে থাকে,,

আরুশঃ তোর সাহস কিভাবে হলো সায়রা এর কাছে আসার,, আজ তহ তোকে আমি মেরেই ফেলব,,
এই বলে মারতে থাকে,, সকলেই মারামারির আওয়াজ শুনে বাগানে চলে আসে,, আর অনেক কষ্টে আরুশকে ছাড়ায়,, আরুশ এখনো রাগে ফুসতে আছে,, আমি নিরবাকের মত সব দেখছি,, কি থেকে কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না,, তখন আরুশ আমায় সকলের সামনে টানতে টানতে নিয়ে আসে,, আর আমায় গাড়িতে ছুড়ে মেরে ফুল স্প্রীডে গাড়ি চালাতে থাকে,,,


কিছুক্ষন আগে🍁
সায়রা এর লেট হচ্ছিল দেখে আরুশ সায়রাকে খুজতে ওয়াশরুমে যায়,, কিন্তু সেখানে না পেয়ে সে ঘাবড়িয়ে যায়,, আর সায়রাকে খুজতে থাকে,, একটা ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করলে বলে সে না সায়রাকে বাগানের দিকে যেতে দেখেছে,,, তাই আরুশও বাগানের দিকে যায়,, আর সামনে যেতেই দেখে রুহান সায়রাকে জরিয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে,, যা দেখে আরুশের মাথা গরম হয়ে যায়,,
যেহুতু সায়রা উল্টো ঘুরে ছিল তাই আরুশকে দেখে,, কিন্তু রুহান ঠিকই দেখেছিল,, তাই সে তখন সায়রাকে জরিয়ে ধরে ওইসব বলে,,


🍁
বর্তমানে,,
আরুশ আমার কান্না দেখে আরও রেগে যায়,, আর আমার সামনে এসে আমার চুলের মুঠি ধরে আমাকে টেনে দাড় করায়,, আর আরেক হাত দিয়ে আমার গাল দুটো চেপে ধরে বলে,,

আরুশঃ তোর কয়জনকে লাগে শুনি,, আমার দ্বারা বুঝি তোর হচ্ছে না,, আমি তোর মনের জ্বালা নিভাতে পারছি না নাকি যে বার বার তোকে রুহানের কাছে যেতে হয়,, এমন কি আছে রুহানের মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই,, রুহান তাকে এমন কি দিয়েছে যে বার বার তুই ওর কাছে ছুটে চলে যাস,,

আমার গাল দুটো চেপে ধরায় আমি কিছু বলতে পারছিলাম না,, আর এইসব শুনার পর আমার চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে থাকে,, তা দেখে আরুশ বলে,,

আরুশঃ একদম ন্যাকা কান্না করবি না,, এইসব কুমিরের চোখে জল এখন আমায় গলাতে পারবে না,, কেন আবার আমায় ধোকা দিতে চাইলি শুনি,, আমার টাকা বেশি বলে সব সম্পত্তি নিজের নামে করে আবার তুই সেই রুহানের কাছে যেতে চাইলি,, কেন রে কেন,, আমি তোকে খুশি রাখতে পারতাসি না,, নাকি তোর ভিতরের জ্বালা মিটাতে পারছি না,,, বল,,
তোর কাছে কি কখনোই আমি আমার ভালবাসার দাম পাব না নাকি,, এত কিছু করার পরও আমি শুধু তোকেই চেয়েছি,, তোকেই আপন করে নিয়েছি,, কিন্তু তুই কি করলি,, আমায় আবার ধোকা দিলি,, বার বার আমায় আঘাত এই করলি,,তুই আসলে ভালবাসার যোগ্যই না,,

এই বলে আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল,, আমি কান্না করতে করতে বলি,,

সায়রাঃ আমার কথাটা শুনো,, তুমি যা ভাবছো তা ভুল,, আমাকে

আরুশঃ চুপ একদম চুপ,, তুই কি ভাবিস আমাকে যে এখন তুই বলবি সব মিথ্যা আর আমি মেনে নিব,, এতই বোকা মনে হয় আমায়,, যা দেখেছি নিজের চোখে দেখি,, আর যা শুনেছি নিজের কানে শুনেছি,, আসলে এতে তোর কোন দোষ নেই,, সব দোষ আমারই,, আমিই এক চরিত্রহীনা মেয়েকে ভালবেসেছি,, যার কিনা চরিত্রের কোন ঠিক নেই,, যার নাকি একজনকে দিয়ে হয় না,, তার তহ ৪-৫ জন লাগে,, নিজের দেহকে তহ সবার মাঝে বিলীন করতে ভালো লাগে,,যতসব চরিত্রহীনা জানি কোথাকার,,,

একটা মেয়ে সব সহ্য করতে পারে কিন্তু নিজের চরিত্র নিয়ে কোন কথা সহ্য করতে পারে না,, সায়রাও পারেনি,,
সায়রা এইসব শুনে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না,, সে আরুশের সামনে গিয়ে ওর গালে স্বজরে একটা থাপ্পড় মারে,, সায়রা এর শরীর রাগে থরথর করে কাপছে,, আরুশ থাপ্পড় খেয়ে রেগে সায়রাকে কিছু বলতে যাবে তার আগে সায়রা আবার আরুশের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়,, আর চিৎকার করে বলে,,

সায়রাঃ ব্যাস আর না,,অনেক বলেছ তুমি,, আমার চরিত্র নিয়ে আর একটা কথা আমি সহ্য করবো না,, আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলার তোমার কোন অধিকার নেই,,
ভালবাসি বলে এই না তুমি যা বলবে তা আমি চুপচাপ সহ্য করবো,,
আরেহ জানো কি তুমি,, আমি এইসব কেন করেছি,, কেন তোমায় দূর করেছি,, কেন তোমায় কষ্ট দিয়েছি,, কিছুই তহ জানো না,, তোমায় যা দেখিয়েছি তাই বিশ্বাস করেছ,, এর পিছে থাকা সত্যি তুমি কখনো জানতেই চাও নেই,, কতবার বলতে চেয়েছি কিন্তু তুমি তহ শুনতে নারাজ,,

আরুশ আর সায়রা এর এমন জোরে জোরে কথা বলার ফলে আরুশের বাবা মা ওদের রুমের সামনে হাজির হয়,, আর দরজা ধাক্কাতে থাকে,, কিন্তু ওরা কেউ খুলে না,, উল্টো আরও জোরে আরুশের গলা ভেসে আসে,,

আরুশঃ কি বলবি তুই,, হ্যাঁ কি বলবি,, তোর বলার মত কিছু আছে নাকি,, আর কিসের সত্যি কথা বলছিস তুই,, কোন সত্যি নেই,,, এইখানে এইটা সত্য তুই চরিত্রহীনা,,

সায়রাঃ ব্যাস,,,আজ তুমি চুপ থাকবে আর আমি বলব,,, অনেক সহ্য করেছি আর না,, জানতে চাও জেন করেছিলাম সেই দিন এমন তাহলে শুনো,, তোমার জন্য করেছিলাম সব সেইদিন,, তোমাকে ওই রুহান হাত থেকে বাচানোর জন্য এইসব করেছিলাম আমি,,
তারপর সায়রা সেই শুরু থেকে আজকের ঘটনা পর্যন্ত সব খুলে বলে,,,

সব শুনে আরুশ স্তব্ধ হয়ে যায়,, যে কিছুতেই এইসব মানতে পারছে না,, সে নিজেকে সামলিয়ে বলে,,

আরুশঃ মিথ্যে সব মিথ্যে,, তুই সব বানিয়ে বানিয়ে বলছিস,,,

সায়রাঃ নিজেকে এতও নিচু করো না যে পরে নিজের সাথে নিজের চোখ না মিলাতে পারো,, এমন না হয় অনুতাপের আগুনে তুমি জ্বলে পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাও,,
আমার কথা মানো না মানো এইটাই সত্যি,, আমার কাজ ছিল তোমায় সত্যি জানানো তা আমি জানিয়ে দিয়েছি,, এখন আমার আর কোন দায়বদ্ধতা নেই,, তোমায় আর আমার মত চরিত্রহীনার চেহারা দেখতে হবে না,, চলে যাচ্ছি আমি,, আজীবনের জন্য,,

এই বলে সায়রা গেট খুলে আরুশের বাবা মার সামনে দিয়ে হনহনিয়ে চলে যায়,, আরুশের বাবা মা অনেক ডাকার পরও শুনে নি,, তাই তারা আরুশের কাছে যায়,, দিয়ে দেখে আরুশ মূর্তির মত দাড়িয়ে আছে,, আরুশের মা আরুশকে জিজ্ঞেস করতে থাকে কি হয়েছে,, কিন্তু আরুশের কোন হেল দুল নেই,, আরুশের মা আরুশকে ধাক্কা দিতেই আরুশের হুস আসে,, আর সে কিছু না বলে বাইরে সায়রা এর পিছে চলে যায়,,, সাথে আরুশের বাবা মাও,,
বাসার বাইরে গিয়ে সায়রাকে খুজতে থাকে,, একটু সামনে গিয়ে দেখে সায়রা রাস্তা মাঝ বরাবর হেটে চলেছে,, আরুশ পিছন থেকে অনেক বার সায়রাকে ডাকে কিন্তু সায়রা শুনে না,, এমন সময় আরুশ দেখে একটা ট্রাক ফুল স্প্রিডে সায়রা এর দিকে তেড়ে আসছে,, তাই আরুশ দৌড়ে সায়রা এর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে,,
হঠাৎ আরুশ চিৎকার দিয়ে উঠে,,,

আরুশঃ সায়রারারায়ায়ায়ায়ায়ায়া,,,




#চলবে😇

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here