তুই হৃদহরণী পর্ব ১৩

#তুই_হৃদহরণী
#সাদিয়া
পর্ব : ১৩

তুরফা মোনতাহ্ কে ভয় পেয়ে পেয়ে বাসায় ঢুকেছিল কাল রাতে। মোনতাহ্ তখন ঘুমে ছিল। ঘরের চাবি দুজনের কাছে দুই টা থাকে। চাবি দিয়ে রুমে এসে ছিল সে। মোনতাহ্ তখন ঘুমে ছিল। কোনো রকম নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল তুরফা। আজো সকাল সকাল বেড়িয়ে এসেছে খাবার না খেয়ে। অফিসে গিয়ে দেখল আহরার এখনো আসে নি। ওদিকে খিদেও পেয়েছে তার খুব। খিদের ট্রেন ছুটছে ঝকঝক করে। ট্রেন কি আর হুটহাট করে থামে নাকি? সে চলছে তো চলছেই। তুরফার খিদেও সেরূপ।

ক্যান্টিনে গেল তুরফা কিছু খাওয়ার জন্যে। গিয়ে পেল মিহির কে। কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে মিহির ডাক দেয়।

“ম্যাডাম।”

তুরফা দাঁড়ায়।

“সময় হবে এক সাথে কফি খাওয়ার?”

“….

“আপনি না চাইলে..”

“চলুন বসা যাক।”

মিহির খুশি হলো। তুরফার সামনাসামনি চেয়ার টেনে বসল।

“সেদিন যেন কি বলতে চেয়েছিলে তুমি?”

“আগে খেয়ে নেই পরে বলছি।”

“ওকে শিওর। কি খাবে বলো অর্ডার করছি।”

“আমার টা আমি পারব।”

তুরফার সোজাসাপ্টা কড়া কথায় চুপ বনে গেল মিহির। তুরফা খাবার অর্ডার করল। নেকাবের নিচে স্যান্ডউইচ খেতে লাগল।

“তুমি আজ এখানে যে?”

“আপনি যে জন্যে এসেছেন আমিও সেই জন্যে।”

“না তুমি তো রোজ রোজ আসো না।”

“আপনি মনে হয় রোজ আসেন?”

“হুম আসিই তো।”

“….

তুরফা খাওয়া রেখে মাথা তুলে তাকাল মিহিরের দিকে। শান্ত দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
“আমার সকাল দুপুর এখানেই চলে।”

“বাসায় খান না?”

“বাসায় কি আর বউ আছে যে রেঁধে খাওয়াবে?”

“নিজের টা নিজেও করা যায়।”
খাবার মুখে দিতে দিতে জবাব দিল তুরফা।

“ম্যাডাম মা বাবা গ্রামের বাড়ি থাকে। এখানে কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা ফ্ল্যাটে থাকি। ছেলে মানুষ, সকালে লেইট করে ঘুম থেকে উঠে রান্না করে খেয়ে অফিসে আসা? অসম্ভব। ১২ টা ওখানেই বেজে যাবে। মাঝখান দিয়ে চাকরি টা চিকার মতো দৌড়ে পালাবে। হাহা হা।”

“এমনি তেও যেতে পারে।”

মিহির ভ্রু কুঁচকাল তুরফার দিকে। অবাক হয়ে বলল,
“বুঝলাম না।”

“মানে আপনি যা করছেন। এমন বেখেয়ালি হয়ে অন্য দিকে মন দিলে চাকরি থেকে এমনি সেক করে দিবে। সে রাগি..”

তুরফার মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল। কারণ সামনে তাকিয়ে দেখল আহরার চোখে সানগ্লাস দিয়ে হনহন করে এ দিকে আসছে। ব্ল্যাক সুটকোট, মোটা ফ্রেমের কালো সানগ্লাস। চুল স্পাইক করে রাখা। দেখতে বেশ লাগছে। তুরফা এক নজরে শুধু তাকিয়ে রইল। তাদের কাছে এসে আহরার দাঁড়িয়ে সানগ্লাস টা খুলল। প্রথমে মিহিরের দিকে প্রচন্ড রেগে অগ্নিদৃষ্টি দিল। তারপর তুরফার দিকে তাকাল। চুপ করে তুরফার হাতে বেড়ির মতো খপ করে ধরল। এক টান দিলে তুরফা হুমরি খেয়ে উঠে এলো। হাত ছাড়ানোর খুব চেষ্টা করছে তুরফা। আরো রেগে যায় আহরার। রেগে মেগে তুরফা কে টেনে হিচড়ে নিয়ে আসতে শুরু করল। মিহির হতবাক হয়ে শুধু দেখল।

কেবিনে নিয়ে গিয়ে আহরার তুরফার হাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে রইল। মাথায় আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করছে। কপালের রগ ধপধপ করছে রাগে। আহরার চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তুরফা জোড়ালো কন্ঠে বলল,
“কি সমস্যা আপনার?”

“….

“আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না। আপনার সেই রাইট নেই। হুটহাট শরীর স্পর্শ করুন আমায়। ঘেন্না লাগে। আপনার সাহস কি করে হয় এমন করার?”

“…..

“আপনার সাথে আমার অফিসিয়ালি সম্পর্ক। কোনো ব্যক্তিগত নয়। আপনি আমার কেউ নন। আপনি..”

“তোর সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক।”
বেশ রেগে গিয়ে আহরার তুরফার ঘাড়ের পেছনে হাত নিয়ে মুখ টা কাছে নিয়ে এসে এ কথা বলল দাঁতে দাঁত কেটে। রাগের জন্যে নিশ্বাস তার বেশ গতিতে চলছে। আহরার আরেক ধাপ তুরফার মুখ এগিয়ে নিয়ে আসে। ফের দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলতে লাগল,
“মুখে এত কথা তোর? আহরার কে তুই প্রশ্ন করছিস?আমি কে? এত সাহস আসে কোথা থেকে তোর বলবি? তুই আমার নূর। তুই হৃদহরণী আমার। তোর সাথে আমার শুধু আত্মার সম্পর্ক।”

“ছাড়ুন। ছাড়ুন আমায়।”

“তুরফা আমার হাত থেকে তোর কোনো দিন ছাড় নেই। আহরারের তুই।”

“নিলজ্জ্বের মতো বাজে কথা আমার একদম সহ্য হয় না। আপনি পরপুরুষ আমার জন্যে। ছাড়ুন বলছি আমায়। না হলে..”

“না হলে কি?”
আহরার তুরফার আরো কাছে গেল। দুজনের নাক ছুঁইছুঁই। গরম নিশ্বাসে দুজনেই উষ্ণ হয়ে উঠছে। তবুও তুরফা পরপুরুষের ছুঁয়ায় বিচলিত হচ্ছে। শরীর রি রি করছে।

“না হলে কি বল? পরপুরুষ? মিহির তবে কি? ওর সাথে কেন এত কথা? আমার শরীর জ্বলে যায় ওসবে।”

“আমার এখন জ্বলছে আপনার ছুঁয়ায়। ছাড়ুন আমায়।”

আহরারের এক হাত তুরফার ঘাড়ের পেছনে। এবার অন্য হাত তুরফার কোমরে শক্ত করে চেঁপে ধরে। তুরফা রাগে ঘৃণায় চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চাঁপল।
“পরপুরুষ? তবে তোর নিজের হয়ে দেখাই? একান্তই তোর নিজের।”

“আপনি আপনায় ছাড়ুন।”

“….

“ছাড়ুন আমায়।”

“আমার উত্তর।”

“….

“আমি তোমায় নিজের করতে চাই তুর।”
তুরফা ভয়ংকর রেগে গিয়ে আহরার কে ধাক্কা দিল। বেশি দূর টলাতে পারল না বিশাল দেহকে। অল্প একটু দূরে গেল মাত্র। রাগে চোখ দিয়ে পানি আসছে তুরফার।
“আপনি এই জীবনে চাইলেও আমায় পাবেন না। আপনার মতো নগণ্য মানুষের হতে চাই না আমি। আমি মরে গেলেও..”

“তুরফা।”
গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে আহরার তুরফার গলা চেঁপে ধরতে গেল। কিন্তু ধরল না। হাত নামিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। তুরফার সব রাগ ভয়ে পরিণত হতে শুরু করেছে। আহরার চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে রইল। লম্বা পায়ে দেওয়ালের কাছে গিয়ে খুব জোরে শব্দ করে একটা ঘুষি মারল। তুরফা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ভয় এখন তার শিরায় শিরায় ঢুকছে। মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে লাগল। আহরার সেখানে দাঁড়িয়েই ঘনঘন নিশ্বাস নিল। দাঁতে নিজের দাঁত নিজেই কিড়িমিড়ি শুরু করছে। তুরফার কাছে গেল। শান্ত কন্ঠে বলল,
“মুখোশ খোল।”

“….

“মুখোশ খুলতে বললাম।”
ভয়ে তাকাতেও পারছে না আহরারের দিকে। কিন্তু ভেতরে খারাপ কিছুর আশংকা চেঁপে ধরেছে তাকে।

“মুখোশ টা খোল তুরফা।”
ভয়ানক ভাবে চেঁচিয়ে বলল আহরার এ কথা। তুরফা আচমকা আহরারের দিকে তাকিয়ে নেকাব টা খুলল। পানি তে চোখ তার টলমল করছে। আহরার চোখ বন্ধ করে রাগের আগুন নেভাল। তুরফার পাশ দিয়ে গিয়ে আহরার টেবিলে থেকে পানি টা নিল। সেটা নিয়ে আবার তুরফার কাছে গেল। এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ধরো এটা।”

“….

“ধরো।”
তুরফা তরাস চোখ নিয়ে আস্তে আস্তে মাথা উপরে তুলল। কাঁপা হাতে গ্লাস টা হাতে নিল। আহরার চেয়ার টা টেনে দিয়ে তুরফার কাছে আনল।
“বসুন এখানে।”
তুরফা ভ্রুকুঞ্চন করে তাকাল আহরারের পানে। “লোকটা কি পাগল নাকি? তুই, তুমি, আপনি যখন যা ইচ্ছা হয় বলে।”
“বসুন এখানে হৃদহরণী।”

“….

“কি হলো বসুন।”
তুরফা এদিক ওদিক তাকিয়ে বসল।
“এবার পানি টা খান।”

“…..

“তুর এক কথা দ্বিতীয় বার বলতে ভালো লাগে না আমার।”
ভয়ে তুরফার গলা শুকিয়ে আছে। তাই আহরারের কথায় নয় বরং প্রয়োজনের তাগিদে পানি খেলো। আহরার গ্লাস টা তুরফার হাত থেকে নিয়ে টেবিলের উপর রাখল। এবার তুরফার কাছে এসে হাটু গেরে বসল। তুরফা হতভম্ব হয়ে পরল। এ কেমন লোক?
“এখন বলেন মিহিরের সাথে কিসের এত কথা আপনার?”

“….

“তুরফা বলুন। মিহিরের সাথে আপনার কিসের কথা?”

“….

“আন্সার মি তুরফা।”

“দ দরকার ছিল।”

“সেটাই জানতে চাইছি।”

“আপনাকে..”

“আমাকেই আপনার সব বলতে হবে তুরফা। আপনাকে মনে জায়গা দিয়েছি তাই বলে আহরার কে সহজ ভাববেন না। আপনায় যেমন আলতো হাতে মনে তুলেছি তেমনি শক্ত হাতে নিগ্রহ দিতেও জানি। আপনাকে না হয় প্রণয়ের উৎপীড়ন দিব আমি।”

চলবে….
(কপি করা নিষিদ্ধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here