তুই হৃদহরণী পর্ব ১৮

#তুই_হৃদহরণী
#সাদিয়া
পর্ব : ১৮

তুরফা এক রাশ ভয় নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটল ভেতরের দিকে। এদিকওদিক ফিরেও মোন কে পায় না সে। ভয় ভয় পায়ে তাড়াতাড়ি কে উপরে উঠে। মোনের রুমে যায়। ভেতরে যাওয়ার আগেই মোন হাই তুলতে তুলতে দরজা ঠেলে বাহিরে বের হয়ে আসল। মোন তুরফা কে দেখেই চলে এলো এদিক। ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল।
“তুরি তুই? কখন এলি? কাজ শেষ? জানিস সারারাত কত টেনশনে ছিলাম?”
তুরফার মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বের হয়ে এলো “ফিরাত ভাইয়া।” তুরফার মুখের ভাব গতি ঠিক ঠেকল না মোনের। কিঞ্চিৎ তরাসে সে নিচের দিকে তাকাল। ফিরাত অপরাধী দৃষ্টি তে মাথা নত করে আছে। আর তার দিকে অবাক করা নয়নে তাকিয়ে একজন অপরিচিত। মোন বিষয় টা ঠিক ঠাউর করতে পাড়ে নি। আবার তুরফার দিকে তাকাল। ওর চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করল। কিন্তু অস্থিরতা ছাড়া কিছুই পেল না।
“কি হয়েছে? তুরি কি হয়েছে?”
তুরফার মুখ দিয়ে যেন কিছু বের হয়ে আসতে চাইছে না। মোন বিরক্ত নিয়ে নিচে নামল। অপরিচিতের সামনে গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করল।
“কে আপনি? বাড়ির ভেতরে এলেন যে?”

“….
আহরার ফিরাতের দিকে তাকাল। গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“কে ও?”

“…..

মাঝ থেকে মোন আবার বলল,
“আরে আপনি কে?”

“ফিরাত তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি। কে মেয়ে টা?”

এবার মোনতাহ্ বুঝল ফিরাতের কেউ হবে। নয়তো নাম জানার কথা নয়। তুরফাও নিচে নেমে এলো তখন। মোনতাহ্ বিষয় টা না বুঝে সবার দিকে তাকাল ভ্রু এক করে।

“আন্সার মি ফিরাত।”

“মোনতাহ্।”

“আগেও শুনেছি। কিন্তু তোর কে হয়?”

“….

“কিছু জিজ্ঞেস করছি ফিরাত।”

দুই বন্ধুর কথায় বাকি দুজনই চুপ করে আছে। ওরা নীরব দর্শক।

“ফিরাত।”

“তোকে আগে বলা হয় নি আহরার। আমি ওকে ভালোবাসি।”

“….
বেশ অবাক হয় আহরার। মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। এই ফিরাত কে সে চিনত না। ফিরাত কিছু লুকাত না তার কাছ থেকে। আর এ কিনা ভালোবাসে অথচ সেই জানল না! কথা বলার মতো কিছু খুঁজে পেল না আহরার। গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

“আহরার আমার কথা টা শু..”

“রাতে এখানে ছিলি তুই?”

“হ হ্যাঁ।”

“ওর সাথে ছিলি?”

“হ্যাঁ। মানে..”

“ব্যস তাহলে আর কি? একটা মেয়ের সাথে একা বাড়িতে থাকতে তোর একটু বিবেকে বাঁধল না? কি করে পাড়লি? ফিরাত আমি তোকে দিয়ে কখনো এমন টা আশা করি নি।”

“আহরার শুন..”

“আর কি বলবি ফিরাত? মেয়ে টার কথা একবার ভেবেছিস? এখন ওর কি হবে? ওকে আর কেউ..”

মোনতাহ্ বুঝল না কি ইঙ্গিত করা হচ্ছে। তবে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা তুরফা বুঝল আহরারের ইঙ্গিত। মানুষ টা এমনি। কিন্তু তারও কেমন মানতে ইচ্ছে হচ্ছে না সব কিছু। বিশ্বাসও করতে কেমন কষ্ট লাগছে। নির্বোধের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আহরার মুখে আবারো গাম্ভীর্য এক ভাব এনে বলল,
“মিস মোনতাহ্ আপনার সাথে যদি কিছু হয়ে থাকে তবে আমি তার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করছি আমার বন্ধু তেমন নয়। ফিরাত খুব ভালো। হয়তো একটা ভুল হয়ে গিয়েছে তার জন্যে ওকে খারাপ ভাববেন না। ও আসলেই খুব ভালো। ওর সাথে আপনি অসুখী হবেন না এটা নিশ্চিত বলতে পাড়ি। আর আপনারা একটা ভুল করেই ফেলেছেন যেহেতু বাহিরে তা জানার আগে আমি চাই কাল আপনাদের বিয়ে টা হয়ে যাক।”
এবার দম নিল আহরার। সবাই অবাক হয়ে গেল তার কথায়। বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছে ফিরাত মোনতাহ্ আর তুরফা। কেউ কিছু বলতেও পারছে না। মোন আর ফিরাত আকাশ থেকে পড়ছে এমন লাগছে। আহরার কি বুঝাতে চাইছে কাল রাতে তারা.. কিন্তু তারা তো কোনো রকম ভুল করে নি তবে? মোনতাহ্ কিছু বলার আগেই তুরফা বলল,
“কিন্তু এটা তো ঠিক নয়। হুট করেই বিয়ে..”

“আপনার সাথে কিছু হয়েছে কি তুরফা? নাকি আপনাকে কেউ এমন বলেছে? আপনি কথা বলছেন কেন? যার হারায় সে বুঝে।”

মোনতাহ্ অবাক হয়। তুরফা কেও চিনে এই লোক? কে উনি?
“আপনি কিছু না জেনেই কথা বলছেন।”

“না মিস মোনতাহ্ বিষয় টা আমি বেশ বুঝেছি। আপনি কি আড়াল করতে চাইছেন আমি বুঝতে পারছি না। নিজের সম্মানের তাগিতে লুকাচ্ছেন নাকি অন্য কারণে তা আমার জানা নেই। তবে বলছি বিষয় টা যদি জানাজানি হয়ে পড়ে তবে কিন্তু এর চেয়েও সম্মান হানি হবে। এমনিতেই আপনারা দুজন মেয়ে একা থাকেন। এখন এমন একটা কথা এই বাড়ির বাহিরে গেলে সম্মান হানি তো হবেই সাথে বিপত্তি। এসব কিছুর কি দরকার বলুন মোনতাহ্? যেখানে ফিরাত আপনায় ভালোবাসে সেখানে তো আর দ্বিতীয় কথা থাকতে পাড়ে না। রাজি হয়ে যান। নিজের সম্মানের কথা ভেবেই রাজি হয়ে যান। কাল পরশুর মাঝেই বিয়ে টা হয়ে যাক তারপর সব দেখা যাবে।”

“আরে আপনি বিষয় টা বুঝতে চাইছেন না কেন? যেখানে সম্মান হানির কিছু ঘটেই নি সেখানে বিয়ে..”

“সারারাত আপনারা বাড়িতে ছিলেন। তাও একা। এসে দেখলাম আমার বন্ধুর এই অবস্থা। গায়ে কোনো কাপড় নেই। তার মানে কি বুঝে নিব আমি আপনারাই বলুন।”

“আরে..”

“আমি আর কিছু শুনতে চাই না। দেখুন আপনার সম্মানের কথা চিন্তা করে ফিরাতের তরফ থেকে এই প্রস্তাব দিলাম আমি। একবার ভাবুন আপনি আর ফিরাত খালি বাসায় একা ছিলেন। এটা বাহিরে জানাজানি হলে কি অবস্থা টা হবে একটা বার ভাবুন। আপনারা কিছু না করলেও এটা জানলে কি হবে একটু ভাবুন তো মোনতাহ্?”

“…..

আহরারের কথা ফেলে দেওয়ার মতোও নয়। যুক্তিসংগত কথা সব। তবুও মোনতাহ্ কিছু বলতে পারছে না পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তুরফাও বুঝতে পারছে না কিছু কি বলা উচিৎ কোনটা নয়। অপর দিকে ফিরাত হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে সব প্রত্যক্ষ করছে। যেন তার এখানে বলার কিছুই নেই।

“আশা করি এটা নিয়ে আর কেউ কিছু বলবে না। কারণ এখানে বলার মতো আর কিছু নেইও।”
এটা বলে আহরার আরাম করে সোফায় বসে ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি তুলে আনে। বাকি তিন জন নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজেদের মতো ভাবনায় ব্যস্ত। আহরার সবাই কে একবার পরখ করে নিল। শুধু চুপ করে রইল। এদিকে তুরফা সাত পাঁচ ভেবে মোন কে একটু দূরে টেনে নেয়। কন্ঠ খাদে নিয়ে বলতে থাকে
“দেখ মোন তুই আমার লক্ষ্মী বোন। একটু ভাব চিন্তা কর একটু। উনি কিন্তু খারাপ কিছু বলছেন না। আসলেই এমন হবে। যদিও আমি বুঝতে পারছি না কিছু। কিন্তু একটু ভাব এমন একটা কথা বাহিরে গেলে..”

“তুরি তুইও?”

“….

“ওই আমাকে অবিশ্বাস ক..”

“অবিশ্বাস নয় মোন। বিষয় টা নিয়ে একটু চিন্তা কর। তোর এই বাড়ি নিয়ে কত মানুষের লোভ লালসা আছে ভেবে দেখ তারউপর এমন একটা কথা পারায় ছড়ালে মানুষ বাসা থেকেই বের করে দিবে। সব চেয়ে বড় কথা তোর গায়ে কালি লাগবে। আমি এমন টা সহ্য করতে পারব না। তোর আমার দিকে বাজে মানুষের নজর আছে। আমার চিন্তা না করলেও আমি তোর চিন্তা করি। তোর পাশে ফিরাত ভাইয়ার মতো একজন থাকলে কেউ কিছু বলতেও পারবে না। আর উনি এটা ঠিক বলেছেন ফিরাত ভাইয়া খুব ভালো মানুষ। সবার আগে উনি তোকে ভালোবাসে।”
আর কিছু বলতে পাড়ল না মোন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে তুরফার দিকে তাকায়।
“কিন্তু..”

“কোনো কিন্তু নয় মোনতাহ্। রাজি হয়ে যা না প্লিজ লক্ষ্মী টি। আর যাই হোক ফিরাত ভাইয়ার সাথে ভালো থাকবি তুই। যেভাবেই বিয়ে টা হোক না কেন। তবে এটা ঠিক তোর উপর আমার বিশ্বাস ভরসা দুটোই আছে। এমন ভুল ভুলেও করবি না আমি মানি। যে যাই বলুক। কিন্তু সব কিছু একটু ভাব।”

“তুরি..”

“প্লিজ।”

“তুই..”

“আমার চিন্তা..”

কথায় ফোঁড়ন কেটে আহরার বলে উঠল।
“ওর চিন্তা আপনার করতে হবে না মিস মোনতাহ্। আপনি নিজের চিন্তায় মশগুল থাকুন। ওর চিন্তার মানুষ আছে।”
কথাটা বেশ শান্ত হয়ে বলল আহরার। মোনতাহ্ ভ্রু কুঁচকে তাকাল তুরফার দিকে। তুরফা আহরারের দিকে রাগি দৃষ্টি দিলেও মোনের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল।
“বাজে লোকের কথা শুনিস না। উনি..”

“তবে উনার কথায় বিয়ে করতে যাবো কেন?”

“আল্লাহ উনার কথায় তুই বিয়ে করবি কেন? লাড্ডু তোর জন্যে তুই বিয়ে করবি। নিজের কথা ভেবে করবি। শুনেছিস?”

“….

ফিরাত শুধু কাঠেরপুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। না ‘হুম’ বলছে আর না ‘না’। সে শুধুই নির্বাক হয়ে রইল। এখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে তাতে তার ভ্রুক্ষেপই হচ্ছে না। যেন অন্য দুনিয়ায় বাস করছে সে এখন। তবুও মনের কোণায় আহরারের কথা চিন্তা করে খানিক ভয় পাচ্ছে ভেতরে ভেতরে।

মোনতাহ্ কি বলবে বুঝে পায় না। কিছু না করেও দোষী কেন হবে? এটা তো অনুচিত। কিন্তু ফিরাত? তার দিকে তাকাতেই রাতের সময় টার কথা মনে হলো। আবারও এক ভালোলাগা কাজ করা শুরু করে দিলে মনের ভেতর। এক আবেশ জড়িয়ে ধরল তাকে। নিজের কথা, সব কিছু ভেবে, নিজের ভালোলাগার কথা চিন্তা করে না করার কারণ খুঁজে পেল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল।

“Your answer I will take the yes indicator”

“…..
মোনতাহ্ কিছু বলতে পাড়ল না। একবার হ্যাঁ বলবে নাকি না তা নিয়েই ভাবতে লাগল।

“দেখুন মোনতাহ্ তাড়াতাড়ি জবাব দিন কাজ আছে যেতে হবে।”

“….

“মোন বোন আমার হ্যাঁ বল।”

“….

“কিরে বল।”

“আমি কোনো দোষ করি নি। আর না কোনো অন্যায়। তবুও যদি এটাই ভালো হয় তবে আমার বলার কিছু নেই। আমার মায়ের এত স্বপ্নের করা বাড়ি আমার জন্যে কিছু হতে পাড়ে না। যদিও উনি.. কিন্তু এলাকার মানুষের বাজে নজর আছে আমাদের দুজনের উপর। একটু ছুত পেলেই ঝেঁকে বসবে একদম। তাই যা সব কিছুর জন্যে ভালো হয় তাতেই আমি রাজি।”

মোনতাহ্ র উত্তরে খুশি হয় তুরফা। এক গাল হেসে হাতে তালি দেয়। আহরার শুধু ভেতরে হাসে। কি অদ্ভুত দুনিয়ার মানুষ। ফিরাত যেন হতবাক। কি শুনল ভেবে পায় না। মুখ একটু হা হয়ে দেখছে মোনতাহ্ কে। মোন একবার ফিরাতের দিকে সুক্ষ্ম এক দৃষ্টি দিয়ে উপরে চলে যায়। তুরফা তো খুশিতে গদগদ। মোনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আহরার ত্রাস পায়ে এগিয়ে যায় তুরফার দিকে। খানিক ঝুঁকে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে
“খুশির খবরে মিষ্টি দিতে হয় জানো না? নাকি বাসায় নেই?”
আহরারের কথায় লজ্জায় পড়ে যায় তুরফা। আনমনে জিহ্বে দাঁত কাটে। পিছন ঘুরতে গেলেই বারি খায় আহরারের সাথে। আহরার এক গাল এসে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তুরফা দ্রুত গলায় বলল,
“দুঃখিত। আপনারা বসুন আমি এখনি..”

“তার দরকার নেই মিস তুরফা। আমার কাজ আছে। তাছাড়াও যেচে জিনিস নেওয়া সর্বদা সস্তা মনে হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হুট করে পাওয়া জিনিসের স্বাদ যেমন অমৃত হয় তেমনি দুষ্কর। তবুও তার রেশ সবসময় মনে প্রশান্তির দাগ কাটে।”
তুরফা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে ফিরাতের দিকে তাকায়।
“এখনো থাকবি নাকি যাওয়ার দরকার আছে?”
আহরারের কড়া কথায় ফিরাত হুশে ফিরে। অন্য দুনিয়া থেকে সবে যেন পৃথিবী তে পা রাখল সে।
“হ্যাঁ হ্যাঁ আ আসছি।”
আহরার ততক্ষণে বেড়িয়ে যায়। ফিরাত তুরফার দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি বলে,
“পরে কথা বলে নিব তোমার সাথে তুরফা।”
বলেই ফিরাত যেভাবে ছিল সেভাবেই শার্ট প্যান্ট হাতে নিয়ে গাড়ির দিকে রওনা দিল। না জানি আহরার কত টা রেগে আছে তার উপর। গাড়িতে উঠলে আহরার চালাতে শুরু করে। ফিরাত কি বলে শুরু করবে ভেবে পায় না। আমতাআমতা করে বলেই ফেলল।
“আ আসলে ইয়ার আমি..”
বলতে গিয়েও আটকে আসে ফিরাতের। ওদিকে আহরার নিজের মতো করে ড্রাইভ করছে। স্থির দৃষ্টি তার। কিছুই হয়নি এমন ভাব।
“আমি ওমন কিছু করি নি আহরার। ট্রাস্ট মি। আই ডিডনট হ্যাভ এনি প্রিজিকেল রিলেশনশিপ উইত হিম। প্লিজ ট্রাস্ট মি আহরার।”

আহরার শান্ত গলায় বলল,
“আই নো।”
তার কথায় ফিরাত বেশ চমকাল। কিছু বলল না। ভ্রু দুটি একত্রে হয়ে এলো এমনি এমনি। কি বলে এ? অস্ফুট কন্ঠে ফিরাতের গলা থেকে বের হয়ে আসে,
“তবে ওখানে..”

“আই এম বেটার দ্যান ইউ ইন দিজ মেটার।”

“মানে?”

“ভুলে যাস নি হয়তো একসময় মেয়েদের শরীর নিয়ে খেলা করতাম। কয়েক দিন আগে ছাড়লেও শুরুর টা কয়েক বছর আগেই হয়েছিল। তোকে দেখেই বুঝেছি মোনতাহ্ র সাথে তুই প্রিজিকেল ইনভলব হসনি। তার লক্ষণ আমার চোখে পড়েনি। একটা মেয়ে ফাস্ট এটায় জড়ালে উত্তেজিত হয়ে অন্যদিকের মানুষটাকে দাগ কেটে দেয়। অনেক কিছুই করতে পাড়ে। তার কিছুই পাইনি তোর মাঝে। তার চেয়ে বড় কথা আমার ভরসা আছে তোর উপর। তুই এমন কিছু করবি না। তাও বিয়ে আগে? হাউ ফানি ফিরাত। এটা চিন্তা করাও নিতান্ত বোকামি। আমি নির্বোধ নই।”
গাড়ি চালাতে চালাতে কথা গুলি ধীর গলায় বলে গেল আহরার। ওদিকে ফিরাত ঠিকি নির্বোধের মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে। কিছু মাথায় যাচ্ছে না তার।
“তবে ওখানে যে..”

“ইচ্ছাকৃত ছিল।”

“কি?”
বড়সড় ধাক্কা খায় ফিরাত।

“প্রেমে পড়লি জানালি না। রাতে চলেও এলি একা। একার জীবনে আর কত হাটবি? তাই জীবন পথে হাঁটার জন্যে তোর সঙ্গী করে দিলাম। আর ওমন কথা গুলি না বললে মোনতাহ্ কিন্তু রাজি হত না। বেশ ভালো করেই জানিস কিন্তু তুই।”
ফিরাতের বিস্ময় কাটছে না তবুও মনে ভালোলাগছে। আনমনে হেসে উঠে সে। ফিরাতের দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু ভাবে। মুচকি হেসে বলে,
“রাতে কোথায় ছিলি? তোর জন্যে বসে ছিলাম। ঝড়ের রাতে একা ছিলি কোথায়?”

আবারো আহরার সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে সোজা জবাব দেয়।
“অফিসে।”

ভ্রু আবার কুঁচকে আসে ফিরাতের।
“তুরফা তো অফ..”

“ইয়েস ও নিজেও ছিল।”

“মানে?”

“মানে আমি ইচ্ছা করে ওকে আহরারের শাস্তি দেখাতে এমন করেছি। বিকেল বাহিরের আবহাওয়া দেখে একা ছেড়ে আসার ইচ্ছা হয় নি। তাই সবাই চলে গেলেও আমি রয়ে গিয়েছিলাম ওখানে সিম্পল।”

“তার মানে তুই আর তুরফা একা অফিসে ছিলি?”

আহরার গাড়ি চালিয়ে একবার ফিরাতের দিকে সামান্য ভ্রুকুঞ্চন করে বলে
“তো?”

“তো মানে? আমি আর মোনতাহ্ একা বাসায় ছিলাম কিছু হয়নি তবুও তুই বিয়ের পাঁকা করে এলি অথচ তোর বেলায়?”

“দেখ..”

“কি দেখব? তুরফার সাথে বাজে কিছু করবি বলে আমার মনে হয় না। তোর চোখে এটা বুঝেছি আমি। কিন্তু আমার সাথে অন্যায় করছিস তুই।”

“কি যা তা বলছিস?”

“ঠিকি বলছি। তুই আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করলি দুজনে একা বাসায় ছিলাম বলে। কিন্তু তোর নিজের কিছু করলি না? ইনফেক্ট তুইও একা অফিস ছিলি তুরফার সাথে।”

“দেখ তুরফা কে আম….”

আহরার কথাটা শেষ করার আগেই ফোন বাজল। গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই ফোন টা হাতে নিয়ে থমকে যায়। পা দিয়ে দ্রুত ব্রেক কষে। উদগ্রীব হয়ে পড়ে সে। মুহূর্তে রাগে গজগজ করতে থাকে আহরার। চোখ লাল হয়ে আসছে। ফোনের স্কিনের নাম্বার টা মুটেও পছন্দ নয় মুখ দেখেই তা স্পষ্ট। যেন পরমশত্রু কল দিয়েছে তাকে। না ধরেই রেখে দিল হাতে। কিন্তু রাগে ফেটে যাচ্ছে। ভেতরে যে দহন হচ্ছে তার দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ফিরাত অবাক হয় আহরার কে দেখে। হাত বাড়িয়ে আহরারের হাতে থাকা ফোনের স্কিন টা দেখল সে। নাম্বার টা দেখেই চমকায় ফিরাত। আহরারের রাগের কারণ বুঝতে পাড়ে। তার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল ফিরাত। সে খুব ভালো করেই জানে যাই হোক কলদাতার সাথে সে কথা বলবে না বরং আরো রাগবে। সহ্য করতে পাড়ে না যে আহরার। ভেতরে কষ্টের আগুনে হয়তো এখনো পুড়ছে। কি বলবে ফিরাত বুঝল না। শুধু ড্যাবড্যাব করে আহরারের দিকে তাকিয়ে রইল। কল হতে হতে কেটে যায়। আহরার চোখ বন্ধ করে গরম উত্তপ্ত লাভার মতো নিশ্বাস ফেলে দিল। কিন্তু শান্তি পায় না আবার কল আসে তার ফোনে। এবার আহরার খুব বেশি রেগে যায়। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। দাঁতে দাঁত কিড়িমিড়ি করে চোখ বন্ধ করল রাগ দমাতে। তবে কিছুতেই পারছে না। ফিরাত বুঝল আহরারের ক্ষতি হবে এতে শরীর খারাপ করবে। তা ভেবেও সাহস হচ্ছে না বলার কল টা ধরার জন্যে। ভয়ংকর রেগে যাবে এতে আহরার। চোখ গুলি লাল হয়ে এলো ওর। চোখের অতি কোমল রগ গুলিও যেন লাল টকটকে হয়েছে। রাগের বহিঃপ্রকাশ তা। কথা আসছে না গলা দিয়ে রাগের কারণে। তবুও শক্ত গলায় কড়া করে ফিরাতের দিকে ফোন টা এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তোর মন চাইলে কল ধরে কথা বলে ফোন টা রেখে দে। নয়তো ফোনটাই অফ করে রাখ। আর এটাও বলে দিস সহ্য হয় না উনাদের। আর যেন কল না দেয় আমাকে। উনাদের কল আশা করি না আমি। কারণ উনাদের কেই প্রচন্ড ঘৃণা করি আমি দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ঘৃণা।”

চলবে…
(#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here