তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩১+৩২

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:31
#Suraiya_Aayat

রাত 9.30টা,,,,,,
বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে স্মোক করছে আয়াশ, আকাশে বিষাক্ত ধোঁয়া ছাড়ছে ৷বাসার দারোয়ানকে আজ বিকালেই ছুটি দিয়ে দিয়েছে আয়াশ কারন জিজ্ঞাসা করলে বলেছে যে এমনিই একদিন ইচ্ছা হলো তাই তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিয়েছে ৷ সিগারেটটা শেষ হতে নিলেই আয়াশ পকেট থেকে ফোনটা বার করে কল করলো
” খালামনি ওনার খাওয়া শেষ?”

” হ্যাঁ আয়াশ বাবা ,ওনার খাওয়া শেষ ৷”
উনি আবার একটা শুকনো ঢোক গিলে বললেন
” ওনাকে কি আর একটা সুযোগ দেওয়া যাই না ? নাহ মানে এতবছর ধরে ওনার দেখাশোনা করতে করতে মানুষটার ওপর একপ্রকার মায়া পড়ে গেছে আরকি !”

আয়াশ একটা তাচ্ছিল্যর হাসি হাসলো,চোখে জল টলমল করছে ৷ আয়াশের মুচকি হাসির আওয়াজ ফোনের ওপাশে আয়াশের খালামনি মানে ইফার মায়ের কাছে পৌছালো না ৷ উনার কন্ঠ রিতীমতো কাঁপছে , অদ্ভুত এক চাপা কষ্ট অনুভব করছেন মনের মাঝে ৷ আয়াশ আকাশের দিকে তাকিয়ে তারপর ফোনে বলে উঠলো
” তুমি চলে এসো, আমি যাচ্ছি ৷”

কথাটা বলে আয়াশ ফোনটা কেটে দিলো ৷ দরজার এপাশ থেকে আয়াশের খালামনি চাপা স্বরে কথাগুলো বলছিলেন নূরের মায়ের আড়ালে ৷ আয়াশ গাড়ি ড্রাইভ করে বেরিয়ে এলো, ব্যালকনি থেকে সমস্তটা নূরের চোখে পড়েছে , আয়াশের মতিগতি বোঝার সাধ্য নূরের নেই ৷নূর চঞ্চল আর বিষন্ন মন নিয়ে রূমে চলে এলো ৷ রুমে এসে ফোনটা হাতে নিলো, ভাবলো ওর বাবার কাছে ফোন করবে ৷ ফোন করতে গিয়ে দেখলো ট্রলিটা দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে রাখা, মনে পড়ে গেল কালকে ওরা নাটোর যাবে, ভোর ভোর বার হতে হবে ৷ ভাবনা চিন্তা গুলো আপাদত দূরে সরিয়ে ফোন ধরালো নূর ৷ বেশি কিছুখন রিঙ হওয়ার পর নূরের বাবা ফোনটা ধরলেন তারপর উনি চুপ হয়ে রইলেন ৷ নূর বিষন্ন কন্ঠে বলল
” কেমন আছো বাবা ?”

উনি চুপ করে রইলেন কথা বললেন না কোন হয়তো বলার ইচ্ছা শক্তিটা মৃতপ্রায় ৷ ওনাকে চুপ থাকতে দেখে নূর আবার বললো
” বাবা !”

উনি এখনো চুপ , নূর ভাবলো হয়তো ওনার মন খারাপ বা কোন সমস্যা হয়েছে বা নূরের ওপর রগে আছে ৷ নূরের চোখে জল ভার করে এলো, বেশ ভাঙা কন্ঠে বলল
” বাবা তুমি আমার ওপর রেগে আছো ?ও বাবা !”

নূরের এই কথাটা শোনার পর থেকে উনি বলে উঠলেন
” আমাকে ক্ষমা করে দিস মা আমি তোদের সবাইকে মিথ্যা বলেছি ৷”

কথাটা বলে উনি যেন ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললেন ৷ ওনার কান্নার আওয়াজ শুনে নূর বেশ ভেঙে পড়লো তারপর নূর ও কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল
” তুমি একথা বলছো কেন বাবা ? কি হয়েছে আমাকে বলো ৷”

উনি ফোনর মধ্যে থেকেই বেশ শব্দ করে হাওহাউ করে কেঁদে উঠলেন , নূরের চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে, হঠাৎ এমন আচমকাই এমন পরিস্থির সম্মুখীন হবে নূর ভাবেনি ৷ চোখের জলটা মুছে আবার প্রশ্ন করে উঠলো
” কি হয়েছে তুমি আমাকে সব বলো, আর এভাবে কেঁদোনা প্লিজ ৷”

উনি কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলেন
” তোর মা বেঁচে আছে নূর, আমি বুঝতে পারিনি, তোর মায়ের মতো মৃত রক্তাক্ত লাশ দেখে সেদিন আমি সেটাকে তোর মা ভেবেছিলাম নূর ,আমি চিনতে পারিনি ৷”

নূর যেন আকাশ থেকে পড়লো এমন কথা শুনে ৷ এতো বছর পর যখন সবাই একটা মানুষকে মৃত হিসাবে ধরেই নিয়েছে তখন হঠাৎ ওর বাবার বলা একটা কথা যেন সবকিছুকে পাল্টে দিলো ৷ নূর উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো
” কি বলছো কি তুমি এসব ? তুমি ঠিক জানো ? আম্মু বেঁচে আছে ? আম্মু কোথায় ? আর সব প্রশ্নের উত্তর কি বাবা ৷”

উনি ওনার কান্নার মাঝে দম আটকা কাশি কেশে বললেন
” আমিও জানতাম না কিছুই , আজ তোর মায়ের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে দেখি কবরের গায়ে অন্য এক মহিলার নামের নেমপ্লেট বসানো ৷ প্রথমে দেখে খানিকটা অবাক হয়েছিলাম, কিন্তু বিষয়টা কোন ছোটখাটো বিষয় না দেখে আমি গেলাম সেখানকার এলাকার ম্যানেজারের কাছে ৷ ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করাতে যে সেখানে অন্য কোন মহিলার নামের নেমপ্লেট কেন তখন উনি বললেন
” যার কবর তার নামের ই নেমপ্লেট দেওয়া আছে, তাছাড়া ওটা আপনার স্ত্রীর কবর না ৷ আপনাকে আমি দেখেছি কবর জিয়ারত করতে আসতে তাই আমি আপনাকে চিনি , কিন্তু কয়েকদিন আগে একটা পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য এসে জানান যে এখানে যার কবর দেওয়া হয়েছে ওনারা তাদের পরিবারের লোক, কথাটা শোনামাত্রই আমার আপনার কথাটা মাথায় আসে, আমি তখন খানিকটা আন্দাজেই ওনাদের সাথে তর্কে জড়ালাম তারপর সব জিজ্ঞাসা করতেই ওনার আমাকে সবটা বুঝিয়ে বললেন যে
” যেদিন ওই রোড এক্সিডেন্টটা হয় সেদিন ওনাদের পরিবারের লোক আর সারাদিন বাসায় ফেরেননি তাছাড়া ওনাদেরকে ফোন করে কেউ জানিয়ে ছিলেন যে তাদের বাসার কেউ একজন মারা গেছেন কিন্তু ইতিমধ্যে আপনি আপনার ওয়াইফের মৃতদেহ ভেবে তাকে নিয়ে যান কিন্তু তার আসল পরিবারের লোক এসে আর পাইনি , যখন যানলেন যে আপনারা নিয়ে গেছেন তখন আপনাদের খোঁজার চেষ্টা করেও পাইনি কারন আপনারা বাসা পরিবর্তন করেছিলেন ৷ তারপর হঠাৎ কিছুদিন আগে ওনারা বেশ কিছু প্রমানসহ জানালেন যে এটা ওনাদের পরিবারের একজনের কবর ৷ তাছাড়া এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার পর আপনারা কি বুঝতে পেরেছিলেন যে উনি আপনাদের বাড়ির লোক ৷ ”

তখন আরাফাত সাহেব মাথা নাড়িয়ে না জানালেন ৷
সব কথা আরাফার সাহেব নূরকে বললেন, উনি রিতীমতো ভেঙে পড়েছেন, কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না ৷ কথাগুলো শুনে নূর কেঁদে ফেলল তারমানে ওর মা বেঁচে আছে ৷ নূর ও কাঁদছে , হঠাৎ আরাফাত সাহেব চোখের জল মুছে বললেন
” তোর মা এখন কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে আমি জানিনা মা , আমি জানিনা, আর তোর মা ই বা সেদিন আর ঘরে ফিরলো না কেন আমি তা ও জানি না ৷ পারলে আমাকে ক্ষমা করিস ৷”

নূর ও নিজের চোখের জল মুছে বলল
” তুমি কেন ক্ষমা চাইছো, তোমার তো কোন দোষ নেই, ভাগ্যতে যা ছিলো তাই হয়েছে ৷ তাছাড়া এতো বছর পর আম্মু কোথায় থাকতে পারে আর আম্মুকে কোথায় বা খুঁজবো আমারা ?”

” আমি জানিনা মা আমি জানিনা ৷”

দুজন আরো বেশ কিছুখন কথা বলার পর নূর ফোনটা কেটে দিলো,, নূর আয়াশের ফোন করে খবরটা জানাবে বলে ফোন করতেই কলটা গেল না, ফোন সুইচ অফ, নূরের আর তর সইছে না কথাটা বলার জন্য, নূর না পেরে রুমের মধ্যে পাইচারি করছে আর আয়াশকে ফোন করার চেষ্টা করছে বারবার ৷ হঠাৎ বাইরে থেকে শো শো আওয়াজ শোনা যেতেই নূর জানালার দিকে তাকালো, জানকলাটা খোলা, নূর খুব ভুতের ভয় পাই তাই সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে জানালা দিয়ে দেই কিন্তু আজকে জানালাটা খোলা রেখেছে কেন নূর বুঝতে পারছেনা, হয়তো ভুলে গেছে ভেবে জানালাটা দিতে গেলেই বাইরের অন্ধকারে কেঁপে উঠলো নুর,তারপর হাত বাড়িয়ে জানালাটা বন্ধ করতে গেলেই নূর ওদের বাসার বিপরীতে কিছুটা দুরে আলো জ্বলতে দেখলো আর দুটো মানুষের অবয়বকে হাটতে দেখে ভয়ে জানালটা জোরে শব্দ করে টেনে দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো নূর,ভীষনরকম ভয় পেয়েছে ও ৷ নূর বিছানায় পা গুটিয়ে বসে মনে মনে অনেক সুরা পড়ছে ভয় কাটানোর জন্য ৷ ওটা যে গাড়ির হেডলাইটের আলো টিপটিপ করে জ্বলছিলো তা নূর বুঝতে পারেনি ৷

____

ফাঁকা রাস্তার মাঝে গাড়িটা দাড় করিয়ে রেখে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে আয়াশ আর নূরের মা ৷ আয়াশের চোখে আছে হিংস্রতা আর নূরের মায়ের চোখে বিরক্তি আর রাগ ৷ গাড়িটা রাস্তার মাঝে রাখা, গাড়ির আলো একবার জ্বলছে একবার নিভছে ৷ নূরের মা বিরক্ত হয়ে বললেন
” মানেটা কি আয়াশ, তুই এসব আলতু ফালতু প্রশ্ন করছিস কেন? আর তোর কি মনে হয় যে আমি তোকে মিথ্যা বলছি ? তোকে মিথ্যা বলে আমার কি লাভ ! ওটা যেমন তোর মা তেমনি আমার বড়ো আপু ৷”

আয়াশ ভারী গলায় বলে উঠলো
” আমার আম্মু কোথায় খালামনি ? এখনো সুযোগ আছে বলো যে সে কোথায় নাহলে আজকেই তোমার শেষ দিন আর তোমাকে শেষ করতে আমি দুইবার ও ভাববো না ৷”

উনি রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
” তুই যে এভাবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে দোষী প্রমান করবি ভাবিনি আয়াশ, তোকে আমি নিজের সন্তানের মতো ভাবতাম আর তুই কিনা তার এই প্রতিদান দিলি ৷ ছিহ! এখন তো ভাবলেই গা ঘিনঘিন করছে যে আমার ফুলের মতো মেয়েটার জীবনসঙ্গী হিসাবে আমি তোকে ঠিক ভেবেছিলাম ৷”

আয়াশ পকেট থেকে রিভলবারটা বার করে বলল
” খবরদার তোমার ওই মুখে আমার আফুসোনার নাম নিয়েছো তো তোমাকে মেরে ঝাঝরা করে দেবো ৷ অনেক বছর সময় দিয়েছি তোমাকে আর না ! আজ তোমার পর্যাপ্ত সময় শেষ, আমি আর একবার জিজ্ঞাসা করবো যে আমার আম্মু কোথায় ৷ বলো কোথায় , শেষ বারের মতো বলছি, আর তোমার মেয়েকে আমি এমনি এমনি বিয়ে করিনি, নিজের কাজ হাসাল করার জন্যই করেছি, নাহ আছে ওর প্রতি অনুভূতি আর না আছে ভালোবাসা,ওর মতো হাজার হাজার মেয়ে আমার পিছন পিছন ঘোরে বুঝেছো ? আর সে আমার প্রেমে পাগল আমি না ৷”

” ছিহ আয়াশ , ছিহ ! আমার মেয়ে সমন্ধে কোন বাজে কথা আমি শুনতে চাইনা,তুই কি মানুষ ?”

” মানুষ আমি কখনোই ছিলাম না, আমি হলাম ডেভিল আর তোমার মেয়েটাও কতো বোকা , আমি কাছে টানলেই সুড়সুড়করে কাছে চলে আসে, মেয়ে মানুষের স্বভাবই এমন ডাকলে না করতে পারেনা, না জানি এতো আবেগ কই পাই ৷”

কথাটা শুনে উনি ওনার কোমরে গুঁজে রাখা চাকুটা বার করতে গেলেই পরপর দুটো গুলি এসে ওনার শরীরকে ভেদ করে গেল, উনি মাটিতে পড়ে গেলেন, চারিদিকে রক্ত, আয়াশ বন্দুকটা নামিয়ে একবার পিছন দিকে তাকালো , খালি অন্ধকার আর অন্ধকার ‌৷আয়াশ বন্দুকটা হাত থেকে ফেললো না, বন্দুকটা হাতে রেখেই নূরের মায়ের বডির কাছে হাটু গেড়ে বসলো আর রক্ত দিয়ে পিচের ওপর লিখলো
” আই এম দা ভিলেন ইন ইউল লাভ স্টোরি আফুসোনা ৷”
কথাটা বলে হাসলো আয়াশ, তারপর ওনার দিকে তাকিয়ে বললেন
” তোমাকে মারা তো যাস্ট একটা বাহানা ! সো স্যাড ! ”

____

ভয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে নুর,রাত 1টা বাজে, আয়াশ এখনো বাসায় ফেরেনি ৷নূর ও আর ঘর থেকে বার হয়নি, ইফার মাথা ব্যাথা করছিলো বলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলো আর ইফার মা ওনার বোনের ছেলে অসুস্থ বলে সন্ধ্যাবেলা আর একবার বাসা থেকে বেরিয়ে গেছিল তাই নুর বলার মতো কাউকে সুযোগ পাইনি ৷
হঠাৎ কম্বল সরিয়ে গলায় উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই নূর কেঁপে উঠলো,,বুঝতে পারলো যে আয়াশ ফিরেছে তাই অযথা ভয় না পেয়ে বরং আরো সাহস পেলো ,হৃদস্পন্দন ক্রমাগত বাড়ছে আয়াশের স্পর্শে, আবেগে ব্ল্যাংকেট আকড়ে ধরলো নুর,হঠাৎ আয়াশ নুরকে ঘুরিয়ে ওর মুখমুখি করে নূরের গলায় মুখ ডুবিয়ে দালো, আচমকাই আয়াশের এমন ব্যাবহার নূরের কাছে একটু অদ্ভুত লাগলেও অবাক হলো না কারন আয়াশ এমনই আর নূর এগুলোতে অভ্যস্ত ৷আয়াশ ও কিছু বলছেনা আর নূর ও কিছু বলছেনা, রুম জুড়ে চলছে পিনপনত নিরবতা , কেবল অনুভূত হচ্ছে আয়াশের উষ্ণ ছোঁয়া আর নূরের ছন্দহীন হৃদস্পন্দন ৷ আয়াশ নূরের শরীরে ওর স্পর্শ গুলো গভীরভাবে দিতে লাগলেই নূর কানিকটা লজ্জা আর কম্পিত কন্ঠে বলে উঠলো
” প্লিজ এতো কাছে আসবেন না ৷”

আয়াশ নূরের গলা থেকে মুখ সরিয়ে কিছুখন নূরের মুখের দিকে চেয়ে রইলো, মেয়েটার মুখে একরাশ লজ্জা আর ভয় কাজ করছে ৷ আয়াশ একহাত দিয়ে নুরের পেটিকোটের ফিতেটায় হাত দিতে গেলেই নূর একনিশ্বাসে বলে উঠলো
” আমি অসুস্থ , প্লিজ ! ”

আয়াশ বুঝতে পারলো নূর ঠিক কি বোঝাতে চাইছে, নূরের ইশারা বুঝতে পেরে আয়াশ ওর হাতটা সরিয়ে নিয়ে নূরের ঠোঁটজোড়া দখল করে নিলো ৷ নূর আয়াশের শার্ট ধরে খামচি মেরে ধরলো, ভয়টা ক্রমে ক্রমে কমে আসছে ৷ কিছুখন পর আয়াশ নূরকে ছেড়ে নূরের পেটে মাথা রাখলো আর দু হাত দিয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরলো, আয়াশ ভাবলো যে নূর হয়তো এতখন পেটের ব্যাথায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে ছিলো আর এই অবস্থায় পেটে পেইন হওয়াতে অসম্ভব কষ্ট হয়, আয়াশ নূরের পেইন কমাতে নূরের পেটে মাথা রাখলো, নূর কিছু বলছেনা ৷ বেশ অনেকখন আয়াশ ওভাবেই রইলো হঠাৎ নুরের মনে পড়লো ওর আম্মু কথা, কথাটা ভাবতেই নূর উত্তেজিত হয়ে বলল
” জানেন তো আমার আম্মু বেঁচে আছে এখনো, আমার আম্মুর কিছু হয়নি ৷ ”

কথাটা বলেও আয়াশের তরফ থেকে কোন রিপ্লাই এলো না দেখে নূর ভাবলো আয়াশ হয়তো সবটা বলেই তারপর কোন মন্তব্য করবে তাই নূর একে একে সব কথা আয়াশকে বললো ৷ সব কথা শুনেও আয়াশ কিছু বলল না দেখে নূর ধীমে কন্ঠে বলল
” আমার আম্মু হলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো হ্যাপিনেস,আম্মুকে পেলে আমার আর কিছু চাইনা ৷”

তবুও আয়াশের কোন রিপ্লাই নেই দেখে নুর এটু উঁচু হয়ে দেখলো আয়াশ ঘুমিয়ে পড়েছে, নূর নিজের মাথায় চাপট মারলো তারমানে এতখন ও নিজে নিজেই বকে গেছে একা একা কথাটা ভেবে নিজেকে স্টুপিড মনে হলো ৷ নূর ও আর বেশি কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লো ৷ প্রায় 10 মিনিট পর আয়াশ নূরের ওপর থেকে সরে এসে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর নিজের মনে মনে বলল
” সো স্যাড আফু সোনা , ডেভিলকে কি কেও ড
ডেভিলের গল্প শোনায় সো স্যাড ! আর কি বললে সে তোমার বড়ো হ্যাপিনেস ? তাহলে আমি কি ?”
#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:32
#Suraiya_Aayat

ভোরের আকাশ আর পরিবেশ দুটোই ভীষন আদুরে শুধু বারবার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করে ৷ ভোর রাতে বৃষ্টি হয়েছে হালকা তাই পরিবেশের শীতলতা বেশ, বাইরে এখনো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে যা গাড়ির জানালার বদ্ধ কাঁচে এসে আছড়ে পড়ে তার কার্নিশে জমে জমে রয়েছে ৷ নূরের ভীষন ইচ্ছা করছে সেই কাঁচের গায়ে হাত দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলোকে স্পর্শ করার,,যদিও সেই ফোঁটা আঙুল স্পর্শ করে শরীরে শীতলতা বইয়ে দেবে না কিন্তু কাঁচের এপার থেকে তার সাথে অবস্থান মিলিয়ে চলার চেষ্টা টুকু তো করা যেতে পারে নাকি !
নূর আয়াশের দিকে তাকালো,,ওপরের শার্টের একটা বোতাম খোলা আর মাঝেমাঝে চঞ্চলতা আর বিরক্তিতে মাথার চুল গুলো আঙুল দিয়ে আকিবুকি স্পর্শ করায় সেগুলো বড্ড এলোমেলো হয়ে আছে ৷ নূর সেই বৃষ্টির ফোঁটা গুলোকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবে কি ভাবছে কারন এতে আয়াশ যদি ওকে নিত্যন্তই বোকা ভাবে তখন !
হাতটা নিশপিশ করছে ভীষন, গাড়ি চালানোতে আপতত আয়াশের সম্পূর্ণ ধ্যান জ্ঞান আর গাড়ি চালানোর সময় আয়াশ খুব একটা কথা বলেনা, অর্ধেক রাস্তা তো নূর ঘুমিয়েই কাটিয়েছে আর বাইরে বৃষ্টি সাথে ভোরের অন্ধকারে সব যাত্রাটুকু অনুভব করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি ওর , কতোটা রাস্তা এসেছে বা এখনো কতোটা রাস্তা যেতে হবে তা নূর জানে না ৷ নিজের ভিতরকার আড়ষ্টতা কাটিয়ে আর নিজের ভাবনা গুলোকে দূরে সরিয়ে নূর গাড়ির কাঁচে লেগে থাকা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি বিন্দু গুলোর সাথে আঙুল মেলাতেই এক প্রশস্ত হাসি ছেয়ে গেল নূরের ঠোঁট জুড়ে, আনন্দে হাসিটা যখনই খিলখিলিয়ে উঠবে তখন হঠাৎই বিরাট একটা ব্রেক কষে আয়াশ গাড়িটা থামালো ৷ নূরের মুখের হাসিটা যেন হঠাৎই মিলিয়ে গেল ,,আয়াশের দিকে তাকাতেই দেখলো আয়াশ সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নামছে, আয়াশের মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে যেন একাই ঘুরতে যাচ্ছে তার আশেপাশে বা তার সাথে কেউ নেই ৷আয়াশ গাড়ি থেকে নেমে নিজেই গটগট করে হেটে চলে গেল নূরের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ না করে ৷নূর আয়াশের এই ব্যাবহারের সাথে অপরিচিত, আয়াশ কখনো এমনটা করে না ৷ নূর গাড়ি থেকে নামলো না সেখানেই ঠাই বসে রইলো, বুকের মাঝের চাপা বেদনাটা কষ্ট দিচ্ছে , ভাবার চেষ্টা করছে সব যে ওর দ্বারা কি কোনরকম কোন ভুলক্রুটি হয়ে গেল আয়াশের প্রতি যা নূরের করা উচিত হয়নি ৷ভাবনা বেদনা বাড়ায় নূরের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হলো না, চোখ থেকে হঠাৎই টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়াই নূর তাড়াতাড়ি করে জলটা মুছে নিলো ৷ আয়াশ একদিন বলেছিলো ওকে
” কখনো অনুভতি ব্যাক্ত করতে নেই তাহলে তা সস্তা হয়ে যাই ৷”
তাহলে এখন কি নূরের অনুভূতি গুলো আয়াশের কাছে সস্তা ?
কথাটা আর বেশি মনোযোগ দিয়ে ভাবতে পারলো না নূর,তার আগেই গাড়ির জানালায় আঙুল দিয়ে কড়া নড়ার মতো এক খটখটানি আওয়াজ তৌরি হলো যাতে নূরের ভাবনার ব্যাঘাত ঘটলো ৷ জানালার কাঁচটা নামাতেই দেখলো বছর দশেকের এক ছেলে গামছা মাথায় দিয়ে মাথা নীচু করে গুটিশুটি মেরে বলল
” আফা ওই ভাইয়াটা আপনারে সেথায় যাইতে কইলো ৷”
নূর গাড়ি থেকে নামতে গেলেই ছেলেটা নুরের হাতে একটা ছাতা ধরিয়ে দিয়ে বলল
” আপা এই যে ছাতাটা লন আর আইয়া পড়েন তাড়াতাড়ি ৷”
নূর ছেলেটাকে ভিজে ভিজে না গিয়ে ওর ছাতায় করে যেতে বলবে তার আগেই ছেলেটা দৌড় দিলো, তবুও নূর খানিকটা উচ্চস্বরে ডেকে বললো
” এই ছেলে এই , ভিজছো কেন থামো ৷”
কে শোনে কার কথা, ছেলেটা দৌড়ালো টিপটিপ বৃষ্টিতে গামছা মাথায় ৷ পেট চালানোর জন্য, নিজেদের পরিবারের মানুষদের মুখে দু মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য নিজেদের গোটা ছেলেবেলা বিষর্জন দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে তাই তারা এসব কাজে অভ্যস্ত ৷নূর ছাতাটা মেলিয়ে নামতেই দেখলো বাইরে প্যাচপ্যাচে কাঁদা , নুরের কোমরের ব্যাথাটা কমেছে কিন্তু একেবারে ঠিক হয়নি তাই সাবধানেই চলাফেরা করতে হবে নাহলে যখন তখন পা পিছলে গেলে কোমর ভেঙে একাকার হবে ৷ নূর বেশ পা টিপেটিপে হাটতে শুরু করলো, আয়াশকে দেখা যাচ্ছে, তবুও বৃষ্টির মাঝে আয়াশের দৃশ্যটা স্পষ্ট না ৷ নূরের সমগ্র শরীরটা না ভিজলেও শাড়ির পাড় আর আঁচলের খানিকটা অংশ ভিজে গেল ৷ আয়াশের সামনে গিয়ে ছাতাটা রেখে শাড়ির আঁচলটা ঝাড়তে গেলেই দেখলো আয়াশ খাওয়া শুরু করে দিয়েছে, বিষয়টা নূরের একদম ভালো লাগলো না, ও না আসার আগে কিভাবে আয়াশ খাওয়া শুরু করে দিতে পারে নূর জানেনা ৷ শাড়ির অবশিষ্ট অংশটার জল না ঝরিয়ে ধপ অরে বসে পড়লো যাতে কোমরে খানিকটা হলেও ব্যাথা পেলো কিন্তু এই মুহূর্তে আয়াশের প্রতি রাগের কাছে ব্যাথাটা নেহাতই ক্ষীন ৷ এতো বিরহ আর সহ্য করা যাই না , নূরের নিজের ও একটা সহ্য ক্ষমতা আছে আর যার সীমাটা নেহাতই কমে কমে আসছে ৷ নূর এবার খানিকটা ঝাঁঝিয়ে বলে উঠলো
” এই আপনি কেমন মানুষ হ্যাঁ! আমি আসার আগেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন ৷ স্ত্রীকে রেখে কেউ খাই? তাছাড়া আমরা দুজন তো একসাথেই বেরিয়েছি নাকি আলাদা বেরিয়েছি কোনটা?”

আয়াশ মুখের হালিমটুকু শেষ করে পরোটাটা ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলল
“কেন খেতে পারবোনা ? তাছাড়া তুমি না আমাকে ভালোবাসো তাহলে আবার কি !”
কথাটা শুনে নূরের ভ্রূ কুঁচকে এলো, তারপর ভ্রু কুঁচকে বলল
” তো ?”
আয়াশ পরোটাটা ছিঁড়ে বলল
” তুমি জানো না যে পেয়ার আন্ধা হোতা হে ? টিভিতে দেখোনি বলতে ! প্রায় সিনেমাতেই তো বলে ‌৷”
নূরের ভিতরকার বিরক্তির মাত্রাটা বাড়তে লাগলো,,,,,কোন কথার কিভাবে লজিক দেখাচ্ছে মানুষটা ?
নূরের ভিতরে তর্ক করার ইচ্ছাটা মরে গেল, কান্না পাচ্ছে ভীষন, ঠোঁট জোড়া ফুঁপিয় ওঠার উপক্রম ,,মাথা নীচু করে বসে আছে ৷ হঠাৎ আয়াশ বলে উঠলো
” শুনেছি ভালোবাসা বেশি হলে প্রেমিক খেলে নাকি প্রেমিকার আর ক্ষিদে থাকে না আবার প্রেমিকার খাওয়া হলে প্রেমিকের ক্ষিদে থাকে না তারপর চুমু দিলে বলে জ্বর সেরে যাই এক্সেট্রা এক্সেট্রা…..”

নূর আয়াশের দিকে তাকালো মুখ ভার করে, মানুষটা এমন কঠিন হৃদয়ের কেন,বোঝা মুশকিল যে কখন কি চায় ! এই বরফ তো এই জল ৷ নূর আয়াশের দিকে ছলছল চোখে একবার তাকিয়ে মাথা নীচু করে নিলো, ওর সামনে প্লেট ও নেই কোন, টেবিলে কেবল একটাই প্লেট যেটাতে শুধু আয়াশ খাচ্ছে ৷ হাত হাত রেখে মাথা নীচু করে বসে আছে নূর ৷হঠাৎ আয়াশের কন্ঠস্বর শুনলো
” হা করো ৷”
নূর মাথা উঁচু করলো, আয়াশ ওর সামনে খাবার ধরে আছে , আয়াশ হঠাৎ মুখটা নীচু করে নিলো আর খাবারটা আগের মতোই ধরে রেখেছে ৷ নূর একবার বোঝার চেষ্টা করলো তারপর আরও কিছুটা ভাবার সময় নেবে তখন আয়াশ একটু জোর গলায় বলল
” হা করো ৷”
নূর আর ভাবার সময় পেলো না, তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলল আয়াশের হাত থেকে ৷ হঠাৎ আবার আয়াশ বলে উঠলো
” ছলছল চোখে আমার দিকে তাকাবে না কখনো, নিজেকে কেমন নিষ্প্রান আর শক্তিহীন বলে মনে হয় ৷”
হঠাৎ এমন কথা শুনে নুরের গলায় খাবার আটকে যাওয়ার উপক্রম, মানুষটার হলোটা কি?
নূর জল খেয়ে আয়াশের দিকে তাকাতেই আয়াশ বললো
” ভালোবাসা হলো মানুষের সবচেয়ে বড়ো দূর্বলতা , আর যে খুব সহজেই ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়ে ফেলতে পারে তার মূল্য আর বাস্তবতা অপর মানুষটির কাছে তত দ্রুত কমতে থাকে ৷”
নূর ভাবুক সুরে বলল
” তাহলে কি আমার বাস্তবতা আর মূল্যও কি আপনার কাছে কমে গেছে ? আর তা এত দ্রুত ?”

নূরের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আয়াশ বলল
” আচ্ছা তুমি যদি কখনো জানো যে আমি তোমার সাথে বৈবাহিত সম্পর্কে থাকা সত্বেও আমি অন্য নারীতে মজে থাকি কিন্তু তোমাকে তা কখনোই বুঝতে দিইনা , তাহলে তখন তোমার কেমন লাগবে কথাটা শুনে ?”

আয়াশের বলা কথাটা শুনে নূরের সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো তারপর খানিকটা কাঁপা কন্ঠে বলল
” মানে আপনি বলতে চাইছেন যে আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন তাইতো ?”

আয়াশ মুচকি হেসে আর এক টুকরো পরোটা নুরের মুখের সামনে ধরতেই নুর আয়াশের হাতটা নামিয়ে দিয়ে বলল
” আপনি আগে আমার কথার উত্তর দিন তারপর বাকি কথা হবে ৷”

” এটা আগে খাও,অনেক লম্বা একটা গল্প শোনাবো তোমাকে ,তাই খেতে খেতে শোনো ইনটারেস্টিং লাগবে ৷”

নূরের খাওয়ার ইচ্ছা নেই তবুও আয়াশের কথায় আটকা পড়ে ওকে খেতে হচ্ছে ৷

“শুরু করি ?”

নূর কিছু উত্তর দিলো না, আয়াশ বলতে শুরু করলো
” অনেক বছর আগের কথা ,কোন এক অচিনপুরে এক রাজকন্যা ছিলো যে কিনা অপরুপ সুন্দরী, আশেপাশের গ্রাম থেকে কতো রাজপুত্র,জমিদার ,মনিবের ছেলে তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিতো কিন্তু তার বাবা সুযোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন ৷ দূর দূরান্তে তার রুপের প্রশংসা শোনা যেত, কিন্তু সেই রাজকুমারীর মাঝে কোন অহংকার ছিলো না তার নিজের রুপ নিয়ে, তার চালচলন ছিলো বড্ড স্বাভাবিক সাধারন মানুষের মতোই , অপর দিকে রাজকুমারীর এক বড়ো ভাই আর বোন ছিলো,বড়ো ভাই ছিলো বিবাহিত, রাজ্যের কাজে তিনি বেশির ভাগ সময়ই বাইরে থাকতেই , স্ত্রীকে বেশি সময় দিতে পারতেন না ৷ রাজকুমারীর ছোট বোন ছিলো বেশ চঞ্চল আর দুষ্টু প্রকৃতির, বেশ ছন্নছাড়া ৷”

নূরের শুনতে বেশ ভালো লগছে তাই উৎসাহের সাথে কিছুখন পরপর বলছে
” তারপর !”

এর মাঝে আয়াশ ও নূরকে খাইয়ে দিচ্ছে ৷ আয়াশ আবার বলতে শুরু করলো
” রাজকুমারী তার পরিবারকে অনেক ভালোবাসতো, তাই তার নিজস্ব জীবনের সব সিদ্বান্ত তার পরিবারের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলো ৷ তো বেশ চলছে এইভাবে , রাজকুমারীর সমন্ধ আসে কিন্তু রাজকুমারীর বাবা মানে রাজা তিনি কোন না কোন কারন দেখিয়ে রাজি হতেন না ৷তারপর হঠাৎ একদিন রাজকুমারী জানলো তার স্বপ্নের রাজকুমার তার জীবনে আসতে চলেছে, আগামী মাসে তার বিয়ে কোন এক নাম না জানা রাজ্যের রাজকুমারের সাথে ৷ বিয়ের আগে কেউ কাউকে দেখেনি , বিয়ের দিন সেই রাজকুমারীকে দেখে একপ্রকার তাক লেগে গিয়েছিলো রাজকুমারের ৷ তাদের বিয়ে হয় , রাজকুমার এমন রুপবতী বউ পেয়ে তো ধন্য যাকে বলে, তারপর বিয়ের পর রাজকুমারী তার বাপের বাড়ি যায় সাথে তার স্বামী মানে সেই রাজকুমার ও যান ৷ তারপর কথা আলাপে জানতে পারে রাজকুমারীর ভাবী তিনি দিনের অর্ধেকটা সময় মনমরা হয়ে থাকেন তারপর সেই কথা শুনে রাজকুমার তার সাথে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করে যা রাজকুমারী অত্যন্ত স্বাভাবিক দৃষ্টিতে নিয়েছিলো ৷ নারীর মোহে মে পুরুষ একবার আটকা পড়ে যায় মহসেই মোহ কাটানো দুষ্কর , কথাটা সত্যি প্রমান করে রাজকুমার রাজকুমারীর ভাবীর মোহে জড়িয়ে পড়েন একরকম ভাবে ৷”

কথাটা শুনে নূরের নিশ্বাস আটকে এলো, ঢকঢক করে জল খেয়ে বলল
” ওয়েট , একটু শ্বাস নিই, বড্ড দম আটকে আসছে ৷”
আয়াশ একটু ব্যাস্ত হয়ে বলল
” কেন কষ্ট হচ্ছে তোমার ?”

নূর মাথা নাড়িয়ে বলল
” হ্যাঁ ভীষন তবে আপনার গল্প শুনে ৷ বলুন তারপর !”

আয়াশ মুচি হেসে বলল
” তারপর আর কি ? যা হওয়ার তাই, রাজকুমারী কখনো বুঝতে পারেনি তার স্বামীর এমন গোপন সম্পর্কের কথা ৷ তারপর রাজকুমারী তার নিজের বাপের বাড়ি না গেলেও রাজকুমার ঠিক তার শ্বসুরবাড়ি যেত বেশ ঘনঘন, সবাই তা তখন স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখতো , কারন এমন জামাই পাওয়া দুষ্কর যে শ্বশুর বাড়ির মানুষদের কে এতো খেয়াল রাখে ,তাই তার ওপর সন্দেহের আঙুল ওঠার সম্ভবনা ছিলো ক্ষীন ৷ তারপর একদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাজকুমারীর ছোট বোন খুব সাধারন আর মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলের সাথে পালিয়ে যাই ‌যা কেউ মেনে নিতে পারেনি অতঃপর তাকে ত্যায্য কন্যা করা হয় , আর সেই দিন রাজকুমরীর ছোট বোনকে খুঁজতে খুঁজতে ধরা পড়ে যাই রাজকুমারীর স্বামী আর তার ভাবীর এই গোপন সম্পর্কের কথা ৷ রাজকুমারী কখনো কল্পনাতেও আনেনি যে তার যে স্বামী তিন বেলা তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করেন তিনিই এমন পরনারীতে আসক্ত হবেন, এ সম্পর্কের নাম ও রাজকুমারীর জানা ছিলো না, কিন্তু খবরটা রটে উঠতেই তার কানে উঠলো ” পরকীয়া ” নামক শব্দটা ,যেই শব্দের সাথে তাদের বংশের প্রতে্্যকটা পুরুষ জড়িত ৷”

নুর এবার খাওয়া থামিয়ে বলল
” তারপর সেই রাজকুমারী কি তার স্বামীকে ছেড়ে চলে গেল?”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” নাহ ! সে তার স্বামীকে গোপনে একটা দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছিলো যা তার স্বামী কখনো বুঝেই উঠতে পারেনি কিন্তু যখন বুঝেছিলো তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিলো ৷ তারপর এভাবেই চলল তাদের কয়েক বছর জীবন….”

নূর কৌতুহল নিয়ে বলল
” আরে তারপর কি হলো বলুন না ?”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” সেই রাজকুমার আজও ক্ষমা প্রার্থনার অপেক্ষায় অপেক্ষরত ৷”

” কেন রাজকুমারী বুঝি আর নেই , আর দেরিই বা হয়ে গিয়েছিলো কেন ?”

” আছে হয়তো কোথাও গোপনে,ধরা ছোঁয়ার বাইরে যাকে চাইলেও কেউ ধরতে পারবে না ৷”

নূর মন খারাপ করে বলল
” রাজকুমারীর কি কষ্ট ৷ যাই হোক তারপর রাজকুমারীর ছোট বোনটার কি হলো ?”

আয়াশ কথাটা শুনে হো হো করে হেসে বলল
” এটা না হয় সিকরেট থাক অন্য কোন দিন বলবো কারন তার কাহিনী আরও লম্বা ৷”

আয়াশ হাতটা ধুঁয়ে নূরকে বলল
” গল্পটা বলার উদ্দেশ্য কি জানো ?”

নূর অবাক হয়ে বলল
” কি ?”

” এই পুরো খাবারটুকু তোমাকে খাওয়ানো, দেখো তোমার খাওয়া শেষ ৷”

নূর প্লেটের দিকে তাকালো, হ্যাঁ ওর খাওয়া শেষ, গল্প শুনতে শুনতে কখন যে দুটো পরোটা আর হালিমটা খেয়ে ফেলেছে মনে নেই ৷ নূর অবাক হয়ে বলল
” তাইতো ! কিন্তু আপনি তো খেলেন না ?”

আয়াশ চোখ টিপ মেরে বলল
” কই আমার তো পেট ভরা, এই যে তুমি খেলে তাই আমার ও খাওয়া শেষ ৷ পুরো ফিল্মী ৷ জোশ ‌৷”

নূর মুচকি হসলো, অনুভূতিগুলো এখন ক্রমশ স্বাভাবিক ৷ আয়াশের বলা সেই রাজকুমারীর গল্পের শেষ অধ্যায়টুকু আয়াশেথনর নিজের ও জানা নেই, জানলে হয়তো আলাদিনের সেই আশ্চর্য প্রদীপ পাওয়ার মতো খুশি হতো ৷
খাবারের টাকা দিয়ে আয়াশ আর নূর গাড়িতে উঠলো ৷আয়াশ গাড়ি স্টার্ট দেবে তখন নূর বলে উঠলো
” একবার আফু সোনা বলে ডাকুন না প্লিজ ৷”

আয়াশ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
” কেন ?”

নূর একরাশ আনন্দের সাথে বলল
” আপনার আফু সোনা ডাকটা শুনলে মনে হয় যে আপনি শুধু আমার ৷”

আয়াশ নূরের দিকে তাকিয়ে বলল
” তাই নাকি ?”

নূর রেগে বলল
” হমম তাই কিন্তু সকাল জেকে একবার ও আফু সোনা বলেনি , আগে বলুন তাড়াতাড়ি ৷”

আয়াশ চোখ টিপ মেরে বলল
” ডেভিলরা এতো রোমান্টিক ডাক ডাকে না ৷”

নূর বিরক্ত হয়ে বাইরের দিকে তাকালো, আয়াশ ড্রাইভ করা শুরু করলো ৷
বৃষ্টি আর নেই,ভোর কাটিয়ে আলো ফুটছে,এখনো একটা দীর্ঘ যাত্রা বাকি তবে এখনো জানা হলো না রাজকুমারীর ছোট বোনের গল্প তবে হয়তো জানবে কখনো !
আয়াশ হঠাৎই মুচকি হেসে বলল
” আফু সোনা চলোনা আমরা রাজকুমারীকে খুঁজি !”

নুর অবাক হয়ে চেয়ে বলল
” কীভাবে ?”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” জানিনা ৷”

নূরের মনটা খারাপ হয়ে গেল ৷তারপর মনমরা হয়ে বলল
” আচ্ছা রাজকুমারীর ছোট বোনের গল্পটা তো জানেন তাহলে সেটা বলুন !”

আয়াশ ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল
” ওটা হলো কনফিডেন্টশিয়াল !”

নূর ভাবান্তর ঘটিয়ে বাইরে তাকালো ৷

#চলবে,,,, Suraiya Aayat

2016 শব্দের , আজকে গঠনমূলক মন্তব্য চায়🙂 নাহলে গল্প দিবো না কালকে ৷
#চলবে,,,,, Suraiya Aayat

নূরের প্রতি আয়াশের কি ধরনের অনুভূতি আছে বলে আপনাদের মনে হয়? আর আজকের পর্বটা কেমন হয়েছে ? 1809 শব্দ !

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here