তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩৩+৩৪

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:33
#Suraiya_Aayat

আরো 3ঘন্টা টানা জার্নি র পর আয়াশ আর নূর নাটোর পৌছালো ৷ সারাটা রাস্তা নূর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে তাই বৃষ্টি হয়েছে নাকি বন্যা হয়ে গেছে তার খবর নূরের কাছে নেই ৷
হঠাৎ গাড়ি থেমে যেতেই আচমকাই নূরের ঘুম ভেঙে গেল ‌৷ আয়াশের দিকে তাকালো নূর, সারা চোখ মুখ জুড়ে ক্লান্তির ছাপ, সকাল 8টা মতো বাজে ৷ আয়াশ গাড়ি থেকে নামতেই হঠাৎ ধুতি আর পাঞ্জাবী পরিহীতা একজন মধ্য বয়সী দারোয়ান ছুটে এলো ওদের দিকে ,মূলত লাগেজ নামানোর জন্যই ছুটে এসেছে ৷ নূর এখনো গাড়ি থেকে নামেনি, গাড়িতে বসে আছে , আসলে এতোখন ধরে ঘুমানোর পর সবকিছু কেমন নতুন লাগলে তাই নতুনত্ব জিনিসটাকে বেশ উপভোগ করতে চাইছে ৷ আয়াশ বাইরে দারোয়ানের সাথে কথা বলছে নূর তা দেখলো আর বাইরে বেরিয়ে আসলো ৷ এদিকে একদম বৃষ্টি হয়নি, মাটিতে কাঁদাকাঁদা ভাবটা নেই ৷ আয়াশ নূরের কাছে এসে বলল
” আফু সোনা দেখো এটা হলো নাটোর , আগে কখনো এসেছো?”
নূর মাথা নাড়িয়ে চারিদিকে তাকালো, আগে কখনো নাটোর এ আসেনি ও ৷ আয়াশের মামার বাড়ির লোকেরা জমিদারী পরিবারের লোক ছিলেন ,,যুগ যুগ ধরে জমিদারী বংশধারা বজায় রেখে এসেছেন তারা কিন্তু কথায় আছে সময়ের সাথে পাল্টায় মানুষ আর তাদের স্বভাব আর তার ছোঁয়াই পড়েছে বর্তমানে ৷ আয়াশরাও জমিদারী বংশের তবুও তাদেরকে দেখে তা মনে হয় না, আয়াশ আহান দুজনেই বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করেছে আগেকার মানুষেরা বেশি উচ্চশিক্ষিত না হলেও তারা জমিদারীতে , এলাকা শাষন জিনিসগুলোতে পারদর্শী ছিলেন যা আজকালকার জেনারেশন এর মাঝে একটি বিরল স্বভাব ৷ নূর আরো কিছু ভাবছে আর ওর ভাবনার মাঝে আয়াশ বলল
” এটা হলো নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার চোগ্রাম , আর এখানকার জমিদার ছিলেন আমার মায়ের পূর্বপুরুষরা ৷ আর সেই বিশাল সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকার হলেন আমার মামা এবং আমার আম্মু ‌৷”

নূর আয়াশের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
” কিন্তু আপনার আম্মু তো !”

বাকিটুকু বলতে যাবে তার আগেই আয়াশ বলে উঠলো
” বেঁচে নেই ৷”

নূর আয়াশের মুখ ভাব বোঝার চেষ্টা করলো, কেমন যেন একপ্রকার অদ্ভুত চাপা কষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে ৷নূর হঠাৎ আনমনেই বলে উঠলো
” জানেন তো আমি গাড়িতে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম ৷”

আয়াশ চোখের জলটা আড়াল করার জন্য সানগ্লাসটা পরে নিয়ে বলল
” হমম !”

নূর আয়াশের দিকে মনোযোগ দিয়ে বলল
” জানতে চাইবেন না যে কি দেখলাম ?”

” হমম বলো ৷”

” জানেন তো আমি দেখলাম রাজকুমারীকে কেউ একটা গোপন কক্ষে বন্দী করে রেখেছে , তার মুখে কষ্টের ছাপ, স্বামীকে হারানোর বেদনা…..আর সন্তান !”
কথাটা বলে নূর আবার ভাবুক সুরে বলল
” আচ্ছা রাজকুমারীর কোন সন্তান নেই?”

আয়াশ এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল
” হমম আছে তো, রাজকুমারীর ও দুটো রাজপুত্র ছিলো ৷ তারপর কি দেখলে বললে না তো ?”

নূর এবার উৎসাহ পেয়ে বলল
” হমম, তারপর রাজকুমারীর কষ্ট দেখে আমার অনেক কষ্ট হলো , তার মুখের সৌন্দর্য যেন কোথায় হারিয়ে গেছে, অন্ধকারে থাকতে থাকতে সে অন্ধের মতো আচরন করে ৷ কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় কি জানেন ? ”

আয়াশ ভ্রু কুঁচকে বলল
” কী?”

” রাজকুমারীর পাহারা হিসাবে থাকে একটা রক্ষী, দীর্ঘ বছর ধরে সেও অন্ধকারে রাজকুমারীকে পাহারা দিচ্ছে তবে সে রাজকুমকরীর সাথে গল্প করে, অনেক হাসে, কতো সুখ দুঃখের গল্প করে, কিন্তু রাজকুমারীকে সেই কক্ষ থেকে মুক্ত করার তার কোন উপায় নেই ৷”

” কেন?”

” কারন এই গোপন কক্ষের রাস্তা সে জানে তবে এতোবছরে হয়তো তাও ভুলে গেছে ৷ কারন সেও রাজকুমারীর সাথে বন্দী ৷ সে দৃষ্টিহীন কারন রাজকুমারীর ময়ায় পড়ে সে যেন কখনো রাজকুমারীকে পালাতে সাহায্য না করে তাই তাকে চিরকালের মতো অন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷”

আয়াশ শিউরে উঠলো, এগুলো কি কেবলই নূরের স্বপ্ন নাকি সৃষ্টিকর্তা নুরের এই স্বপ্নের মধ্যে কোন বাস্তবতা রেখেছেন যাতে আয়াশ সেই সূত্র বুঝতে পারে ৷ আসলেই কি এটা মিরাক্কেল !

আয়াশ শুকনো ঢোক গিললো, কি বলা উচিত এখন ওর !
কিছু বলছে না আয়াশ, নূর আবার বলে উঠলো
” সেও যে অন্ধ তার ও মুক্তির পথ নেই, তবে রাজকুমারীকে সে তার মনের কথা বলে অনেক গল্প করে তার সাথে ৷ রাজকুমারী এবং সে উভয়েই অপেক্ষায় আছে যে কবে তারা মুক্তি পাবে ৷”

আয়াশ বেশ সাহস জুগিয়ে বলল
” তুমি কি এতোকিছু স্বপ্ন দেখেছো আফু সোনা নাকি গল্পের মায়ায় পড়ে আমাকে মনগড়া গল্প শোনাচ্ছো কোনটা ?”
নূর নিজের মাথায় হাত রেখে বলল
” এই যে দেখুন নিজের মাথায় হাত রেখে বলছি ৷আমি এটা ভোরবেলা স্বপ্ন দেখেছি আর ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়, যদি কখনো এমন হতো যে রাজকুমারী সত্যিই ফিরে আসবে তাহলে কেমন হবে ?”

আয়াশ চুপ করে আছে , কোন কথা বলছে না দেখে নূর বলল
” আমার তো মনে হচ্ছিল যে এটা কোন গল্প না এটা সত্যি ! আচ্ছা সত্যি যদি এরকম রাজকুমারী থাকতো তাহলে আমি ঠিক ছুটে যেতাম তাকে বাঁচাতে কিন্তু আমার স্বপ্নটা যে অসমাপ্ত রয়ে গেল, আমি জানতে পারিনি রাজকুমারী আসলেই কোথায় আছে ৷”

আয়াশ নূরকে বুকে জড়িয়ে ধরলো কিছুখনের জন্য, আয়াশের হৃদস্পন্দন নূর শুনতে পাচ্ছে, এর আগে বহুবার নুর আয়াশের বুকে মাথা রেখেছে তবে কখনো আয়াশের হৃদস্পন্দের এই অস্বাভাবিক গতির সাথে পরিচিত হয়নি, আয়াশের শরীরের পতিক্রিয়া অস্বাভাবিক, অনেক আকুলিত যা নূর বুঝতে পারছে, মনের মধ্যে চাইতে না চাইতেও অদ্ভুত এক খটকা জাগছে রাজকুমারী কে নিয়ে , আসলেই কি সে এমন কোন রাজকুমারীর খবর জানে? নূর প্রশ্নটা নিজের মাঝেই দমিয়ে রাখলো কারন ও জানে এতো সহজে আয়াশ ওকে বলবে না তাই এখনই আয়াশকে জিজ্ঞাসা করা বৃথা ৷

বেশ কিছুখন পর আয়াশ নুরকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে বলল
” ইনশাআল্লাহ সেই রাজকুমারী খুব শীঘ্রই ফিরে আসবে ৷”

নূর অবাক হলো তবুও তা চোখ মুখের ভাব ভঙ্গিতে প্রকাশ করলো না ৷ আয়াশ নূরের হাত ধরে বলল
” চলো তোমার স্বপ্নের হাত ধরে রাজকুমারী কে খোঁজা যাক ৷”
নূর মুচকি হাসলো, না বোঝার ভান করলো ৷ আয়াশ গেটে পা রাখতে যাবে তার আগে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল
” আমি তোমাকে একটা কাজ দেবো আফু সোনা, কাজটা ঠিকঠাক পালন করবে , ওকে?”

নূর অবাক হয়ে বলল
” কি কাজ ?”

” তুমি নিজেকে যাচাই করবে, আমি যতদূর জানি তুমি সহজে কারোর সাথে মিশতে পারোনা, তাই এই কাজ দিলাম তোমাকে যে তোমাকে এই বাসার মানুষদের সাথে সহজে মিশতে হবে আর আমাকে বলতে হবে কাকে তোমার কেমন লাগলো আর কার ব্যাবহার কেমন বুঝলে ? ”

নূর বোকার মতো মাথা নাড়ালো, আসলেই আয়াশের দেওয়া কাজটা ওর কাছে কঠিন মনে হচ্ছে ৷
আয়াশ নূরের চেহারা দেখে বলল
” কি পারবেনা ? না করলে পানিশমেন্ট ৷”

নূর মুখ ফসকে বলে ফেলল
” আপনার পানিশমেন্ট পেতে খারাপ লাগে না কিন্তু কাজটা কঠিন ৷” কথাটা বলে নিজের মাথায় টোকা দিলো নূর ৷
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” এখন চলো ৷”
আয়াশ নূরের হাত ধরে নিয়ে গেল ৷

নূর আর আয়াশ বাসায় ঢুকতেই চারিদেকি বেশ রমরমা শুরু হয়ে গেল, আজ 12 বছর পর আয়াশ এখানে এসেছে, এর আগে ছোট বেলায় আসতো তাই সেখানকার জায়গাগুলো আয়াশের কাছে বেশ অপরিচিত ৷ সময়ের সাথে মানুষ পাল্টায় তেমনি ঘরবাড়িগুলোও ৷ তাই সময়ের সাথে তার মিলিয়ে না চললে পেরে ওঠা মুশকিল ৷ তিনটে বউ বেশ আগেকার দিনের মেয়েদের মতো আটপৌড়ে শাড়ি পেরেছে শুধু তফাত একটাই আগেকার মেয়েরা ব্লাউজ পরতো না তবে শাড়িকে সুন্দর ভাবে পরিপাটি করায় তাদের সর্বাঙ্গ ঢাকা থাকতো , কিন্তু এখন যারা ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তারা বেশ পরিপাটি….তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটা বউ,তাদেরকে দেখে আজকালকার মেয়ে মনে হলেও গ্রামে থাকার দরুন পুরোনো আভিজাত্য তাদের মাঝে এখনো বিদ্যমান ৷ বউগূলো নূরকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে , কেউ কেউ আয়াশকে নিয়েও কথা বলছে ফিসফিসিয়ে ৷ এই বাড়ির মেয়েরা অন্দরমহলের বাইরে যাইনা তাই বর্তমান সমাজটা তাদের এখনো চেনা হয়ে ওঠেনি তবে নূর একজন সাধারন পরিবারের মেয়ে তাই অনেক স্বাধীনতা আর একরাশ স্বপ্ন নিয়ে ও বড়ো হয়েছে ৷ নূরের বেশ অসস্তি ফিল হচ্ছে তাদের এমন চাহনিতে ৷ নূরের কল্পনা জল্পনার রেশ কাটবে কি তার আগেই মধ্যে বয়সী একজন মহিলা বলে উঠলেন
” আমাদের আয়াশ আর তার বউ মাশাআল্লাহ ৷ সেই কোন ছোট বেলায় দেখেছিলাম যখন আমার নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে তখন ৷”
উনি কথা বলে উঠতেই আর একজন মধ্য বয়সী মহিলা বলে উঠলেন
” মেজদি আমি তো শুধু আয়াশ আর তার বাবার গল্প শুনেছি আগে কখনো দেখিনি ৷ তবে ছেলে আর ছেলের বউ দুজনেই মাশাআল্লাহ ৷”

কথাটা বলতে না বলতেই আর একজন বলে উঠলেন
” আমার দেখার আশা তো ক্ষীন কারন আমি তো সবচেয়ে ছোট ৷”
ওনার কথাটা শোনার পরপর মেজ বউ খানিকটা ইর্ষান্বিত দৃষ্টিতে তাকালেন, নূর তা খেয়াল করলো কারন আয়াশ বলেছে সবাইকে বোঝার চেষ্টা করতে, যেকোনো সময় জিজ্ঞাসা করে উঠতে পারে যে কাকে কেমন লাগলো তাই আগে থেকে খেয়াল রাখা ভালো কারন সাবধানের মার নেই ৷
আয়াশ মুখ খুলে বলল এবার
” আফু সোনা ইনি আমার মেজো মামী, ইনি সেজ মামী আর ইনি ছোট ৷”
নূর অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
” আর বড়োটা ? উনি বুঝি আর নেই ?”

কথাটা শুনে সেজো মামী বলে উঠলেন
” থাকবেনা কেন ! বড়ো আপা তো অসুস্থ তাই তিনি সবসময় ঘরেই থাকেন বাইরে আসেন না ৷”
নূর বলল
” ওহহ !”
তার কথা শুনে মেঝো বউ বলল
” থাক থাক এসব কথা , এই বউরা দেখো তোমাদের আর একজন সঙ্গী এসেছে তাকে ঘরে নিয়ে যাও,,আর হ্যাঁ শোনো সে যেন অন্দরযহলেই থাকে বাইরে না বার হয় দেখো ৷”

সবাই একসাথে বলে উঠলো
” আচ্ছা মা ৷”

এতো জনের গলার আওয়াজে কান ধাঁধিয়ে যাওয়ার উপক্রম, আর এদের কথা শুনে বোঝার উপায় নেই যে কে কার শাশুড়ি ৷
একজন এসে আয়াশকে রুম দেখানোর জন্য নিয়ে গেলো, আয়াশ নূরের দিকে ভরসার চাহনিতে তাকিয়ে বলল
” রূমে আসো ৷”

নূর কিছু বলল না, অসলে এতো লোকজন দেখে খানিকটা ভড়কে গেছে, একে একে বাকি বউগুলো কাছে এসে নূরের সাথে টুকটাক কিছু কথা বলল, তারা অত্যন্ত মিশুকে প্রকৃতির মানুষ ৷ কিছুখন পর বউগুলো নূরকে ঘর দেখিয়ে দিলো, বিরাট এক বারান্দার সামনে একটা বড়ো ঘর, দেখেই বোঝা যয় যে জমিদারী বাড়ি,,নূর আগে কখনো দেখেনি, আয়াশরা জমিদার আর উচ্চবিত্ত হলেও বোঝার উপায় নেই কারন তারা অনেক অধুনিক ৷ নূর রুমে ঢুকতেই অয়াশ দরজার পাশ থেকে দাঁড়িয়ে থেকে নূরের হাতটা ধরে নিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো ৷

” একবার বলো ভালোবাসি ?”

হঠাৎ আয়াশের মুখ থেকে এমন কথা শুনে নূর চমকে গেল তৎক্ষনাত মনে পড়ে গেল আয়াশের বলা কথাটা
” ভালোবাসার প্রকাশ ঘটালে তা সস্তা হয়ে যায় ৷”

নূর কথাটা মাথায় রেখে বললো
“যদি না বলি তো ?”

কথাটা শোনামাত্রই আয়াশ মুচকি হেসে নূরকে কাছে টেনে নিতেই দরজার বাইরে প্রচন্ড রকমের ঝনঝন আওয়াজ শুনে আয়াশ নুরকে ছেড়ে বাইরে গেল গিয়ে দেখলো কেউ নেই,আছে শুধু ভাঙা দুটো মাটির গ্লাস আর তাতে থাকা সরবত মাটিতে ভাসছে ‌৷ আয়াশের মাথায় অনেক কিছু ভাবনা এলো তারপর দরজা দিয়ে রুমে ঢুকে নূরকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললো
” কাছে পেতে ইচ্ছা করছে বড্ড ৷”

নূর হালকা কাঁপা কন্ঠে বলল
” এটা সম্ভব না, আমি অসুস্থ ‌৷”

আয়াশ নূরের গলায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল
” জানি তাই তো দূরে সরে আছি ৷”

নূর টপিক চেন্জ করার জন্য বললো
” বাইরে কে ছিলো ?”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
“শাকচুন্নী ৷”

কথাটা শুনে আয়াশ আর নূর দুজনেই হেসে ফেলল ৷
#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:34
#Suraiya_Aayat

” আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? না মানে আমি বলতে চাইনি বাট জানার কৌতুহল জাগছে প্রচুর ৷ বলি ?”

নূরের মাথায় আকিবুকি করতে করতে বলে উঠলো আয়াশ ” হমম বলো ৷”

নূর এটু ইতস্তত বোধ করে বলল
” না মানে আমি যতদূর জানি বা যতদূর শুনেছি যে আপনার মামা মাত্র 1টা , তাহলে এতগুলো মামী হয়ে গেল কি করে ? 4 টে মামি আর তাদের এতগুলো বউ ৷ কীভাবে?”

আয়াশ এবার একটু জোরে খিলখিলিয়ে হেসে বলল
” তোমাকে বলেছিলাম না আফু সোনা যে বংশ পরম্পরা বজায় রাখার কথা, আমার মামা ও তাই করেছেন, তিনিও চার চারটে বিয়ে করেছেন আর তাদের এতগুলো বংশধর ৷”

আয়াশের কথাটা শুনে নূর চমকে উঠলো, ভেবে অবাক হলো খুব ৷ মানুষকে দুটো বিয়ে করতে শুনেছে কিন্তু এই পরিবারে চার চারটে বিয়ে !
নূর আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলল
” আমি তো তার 4 টে বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা দেখছি না ৷ তার প্রথম স্ত্রী নিশ্চয়ই খুব সুন্দর ছিলেন নাহলে তিনি বিয়ে করতেন না এটা তো শিওর অথবা সম্পত্তির জন্য করেছেন বা তাই যদি হয়ে থাকে তাই বলে 4 টে বিয়ে করবেন ?”

আয়াশ এবার উঠে নূরের দিকে ঝুকে গিয়ে পেটে হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল
” একটা জিনিস বোঝায় তোমাকে, মন দিয়ে শুনবে কেমন?”
নূর বোকার মতো মাথা নাড়িয়ে বলল
” হমম৷”

আয়াশ এবার বুদ্ধিমত্তার সাথে বোঝাতে লাগলো
” যদি তোমার কথার সূত্র ধরে আমি এগোয় যে তিনি টাকার জন্য বিয়ে করেছেন 1টা তাহলে এমনটা কি হতে পারে না যে তার মাঝে অর্থের লোভটা নেহাতই বেশি তাই এমন কাজ করেছেন, কি মনে হয় না?”

নূর মাথা নাড়িয়ে আয়াশের কথাতে সম্মতি জানালো, তারপর আয়াশ আবার বলল
” শোনো তারপর, তো একবার যে টাকার প্রতি ভালোবাসা পেয়ে যাবে সে আরো টাকা পেতে চাইবে , আর তা খুব সহজে হাসিল করার উপায় কি?”

” কি ?”

” আবার বিয়ে করা , মানে এটা বোঝায় যে উনি সেই কারনেই এতগুলো বিয়ে করেছেন ৷ আমি তো ভাবলাম যে আরো কয়েকটা করবে কিন্তু তাও করেনি এটাই ভালো ৷”

কথাটা শুনে নূর জিভ কামড়ে বললো
” নাউজুবিল্লাহ ৷ আমার জামাই এমন করলে আমি তো এক কোপে ফালাফালা করে দিতাম…”
কথাটা বলতে বলতে নূর মারার মতো করে হাত ওঠালো ৷

আয়াশ এবার নুরের গায়ে গা ঘেষে বলল
” তোমার এতো সাহস আছে আমাকে মারার আফু সোনা ৷”

নূর অবাক হয়ে বলল
” তারমানে আপনিও 4 টে বিয়ে করবেন?”
আয়াশ নূরের গলায় নাক ঘষে বলল
” হমমমম……”
নূর বিছানা ছেড়ে উঠে শাড়ি ঠিক করতে করতে বলল
” তাহলে জেনে রাখুন সেদিন আমিও আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো ৷”
আয়াশ ভ্রু নাচিয়ে বলল
” এত সাহস তোমার আছে আফু সোনা ?”
নূর মুখ ভাঙচি দিয়ে ঘোমটা টেনে ঘরের বাইরে বার হলো, কারন এই ঘরে ঢুকতে যাওয়ার সময় বউগুলো ওকে বলেছিলো যে সবসময় ঘোমটা টেনে অন্দরমহলে ঘোরাঘুরি করতে ৷নূর ঘরের বাইরে বার হলো কোন বউকে দেখলো না তবে কিছু পুরুষকে দেখলো বারান্দাগুলো সাজাতে কারন কালকে অনুষ্ঠান আছে ৷ নূর তাদের দেখে ঘোমটাটা আর একটু টেনে নিলো যদি এটা দেখে কেউ আবার কোন মন্তব্য করে তখন ৷ হয়তো সবাই এখন রান্নার কাজে ব্যাস্ত তাই কারোর দেখা মিলছেনা ৷ নূর হাটতে লাগলো , বারান্দা টা অনেক বড়ো আসলে বলতে গেলে পুরো বড়িটাই অনেক বড়ো, কিছু কিছু জায়গায় নতুন ভাবে মেরামতির কাজ করা আছে ৷বাড়িটার এক একটা দেওয়ালে এক এক রকম নকশা কারুকার্যে ভরপুর যা দেখার মতো ৷ হঠাৎ দেখলো একটা বউ ঘোমটা টেনে আর থালা ভর্তি খাবার নিয়ে একটা ঘরে ঢুকে গেল, বাসাতে ঢোকার সময় নূর তাকে দেখেনি তাই প্রথম দেখাতেই তাকে অচেনা হিসাবে মেনে নিতে বিশেষ কোন অসুবিধা হয়নি ৷ নুর তাকে ভালো ভাবে দেখার জন্য পা চালাতেই সে ঘরের ভিতর ঢুকে দরজা দিয়ে দিলো,,দরজার বিরাট খট করে আওয়াজে নূর দূর থেকেই কেঁপে উঠলো ৷ তার পোকাশ আশাক এই বাড়ির বউ গুলোর মতো অতোটাও সুন্দর না হলেও সাধারন , তাহলে মেয়েটা কি বাসার কাজের লোক ! কথাটা ভেবে নূর সেখানেই কিছুখন দাঁড়িয়ে রইলো ৷ নূর পা বড়িয়ে অন্য দিকে যেতে যাবে তখনই সেই ঘর থেকে তীব্র আওয়াজ ভেসে এলো এক মহিলা কন্ঠের , একপ্রকার পাগল পাগল স্বভাবের মানুষের গলা যা থেকে বোজা যাচ্ছে সেই ঘরে এমন কাউকে রাখা হয়েছে যে মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ নুর তাই খুব সহজেই ভেবে ফেলল যে মেয়েটা নেহাতই তার দেখা শোনার কাজ করে ৷ নূরের কেন জানি না খুব আগ্রহ জাগলো বিষয়টা নিয়ে যে কে এমন থাকতে পারে এই জমিদার বাড়িতে যে মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ ভাবলো বেশ কিছু দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে আর মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করবে যে কে আছে সেই ঘরে ৷ কথাটা ভেবে সেখাধেই ঠাই দঁড়িয়ে রইলো তারপর দরজার খট করে আওয়াজ হওয়ার সাথে সাথে সেজো মমির বড় বউ হুঠ করে এসে বললেন
” কি গো তুমি এই ঘরের সামনে কি করছো? চলো চলো এখানে থেকো না, খাওয়ার সময় হয়ে এসেছে ৷”
ওনার কথা বলার সাথে সাথে সেই ঘরের দরজাটা খট করে আওয়াজ হয়ে কেউ যেন বন্ধ করে দিলো যার অর্থ সেঝো মামীর বড় বউকে আসতে দেখে দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছেন সেই মেয়েটা ৷ নূর সেদিকে একবার তাকালো,,নূর তাকাতেই বড়ো বউ ও তাকালো তারপর বেশ ভ্রু কুঁচকে বলল
” এদিকে আর আসবে না,,চলো খাওয়ার সময় হয়েছে আর সব জিনিসে বেশি কৌতুহল ভালো না ৷”
নূর ওনার ব্যাবহারে অবাক হলেন তবুও কিছু বললো না কারন মানুষ গুলোকে একেবার প্রথম দেখাতে বুঝে ওঠা সম্ভব নয় ৷ নূর একটু অবাক হয়ে বলল
” এখনই খাবো? এখন তো সবে 12.45 বাজে, এখনই দুপুরের খাবার ?”
উনি একটু ঝাঁঝিয়ে বললেন
” হ্যাঁ, আমরা এখনই খায় এই বাড়ির নিয়ম আর অতিথি আসলে একটু আগেই খাওয়া দাওয়ার কাজ সেরে ওঠা হয়, আর রাতেও আমরা 9টার মধ্যে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি , বুঝলে !”
নূর তাদের এই চিরাচরিত রিতীনিতী শুনে শুকনো ঢোক গিললো ৷ বুঝে উঠতে পারছে না মানুষগুলো এভাবে থাকে কি করে যেখানে এটুও আধুনিকতার ছোঁয়া নেই ৷
তবুও বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালো ৷
কোন কথা না বাড়িয়ে ওনার পিছু পিছু হাটলো নূর ৷ আয়াশ কোথায় খাবে সেই কথাটা ভয়ে জিজ্ঞাসাও করতে পারেনি কারন তাতেও যদি আবার একটু কথা শুনতে হয় তখন? তাই মুখ বুজিয়ে চুপচাপ হাটলো ৷
খাবার ঘরে গিয়ে খাবারের রমরমা আয়োজন দেখে নূরের মাথা ঘুরে আসার উপক্রম,এতো খাবার একটা মানুষ কিভাবে খাবে ? নূর খাবারের সামনে বসে বললো
” এটা আমার একার খাবার নাকি সবার খাবার ৷”
নূরের এমন কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো ৷ আয়াশ এখানে নেই তাই সাহস জোগনোর মতো কেউ নেই ৷ নূর চুপচাপ রইলো, পাশ থেকে সবাই বলছে ” নাও নাও খাওয়া শুরু করো ৷”
নূর হাতে গোনা 3 থেকে 4 টে পদ খাওয়ার পর আর খেতে পারলো না ৷ খেয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে আর পারছে না নূর, কোনরকমে সময় কাটিয়ে রুমে এলো ৷

রুমে এসে দেখলো আয়াশ ঘুমাচ্ছে তা দেখে নূরও পাশে শুয়ে পড়লো, পাশে শুতেই আয়াশ ঝাপটি মেরে ধরে বলল
” কেমন খেলে আফু সোনা ?”
নূর অসস্তি বোধ করে বলল
” ছাড়ুন আমাকে নাহলে যা খেয়েছি তাও উল্টি হয়ে যাবে ৷”
আয়াশ মজা করে বলল
” খুশির খবর নাকি আফু সোনা, কই আগে বলোনি তো ৷”
নূর বড়ো বড়ো চোখ করে বলল
” আচ্ছা আপনি কি হাতুড়ে ডাক্তর নাকি যে যা খুশি বলবেন?”
আয়াশ হো হো করে হেসে বলল
” নাহ তার থেকেও বেশি কিছু ৷”
নূর ভাবলো আয়াশ এখন ভলো মুডে আছে তাই জিজ্ঞাসা করবে যে আয়াশ কি করে যদি বলে
” আচ্ছা আপনি কি কাজ করেন?”
নূরের আচমকা এমন কথাতে আয়াশ খাবড়ালো না, খুব স্বাভাবিক ভাবে বললো
” কিছু না , ওনলি ভবঘুরে ৷”

নূর মুখ ঘুরিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে বলল
” থাক বলতে হবে না,বারবার আপনার মুখ থেকে মিথ্যা কথা বলিয়ে আপনার গুনাহ বাড়াতে চাইনা ৷”
আয়াশ হাতের ওপর মাথা রেখে বলল
” আচ্ছা এটা হিন্টস দিচ্ছি ওকে?”

“ওকে বলুন”

কথাটা বলে আয়াশ বলতে শুরু করলো
“Aayash(5)395m-next-t9r-next-t”

এটা আমার পেশা…..
নূর শুনে অবাক হয়ে কিছুখন আয়াশের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর কিছু বুঝতে না পেরে বিরক্ত হয়ূ ওর মাথার বালিশ টা আয়াশের দিকে ছুড়ে বলল
” আমিই স্টুপিড যে আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছি ‌৷”

আয়াশ মুচকি হেসে নূরকে জড়িয়ে বলল
” রাগ করে না, তুমি আমার আফু সোনা ৷”

” তুমি কি মেয়েটার কথা একেবারেই ভুলে গেছো রেদোয়ান? না মানে মেয়েটা একটা ভুল করেই ফেলেছে তাই বলে এমন ব্যাবহার ও তার প্রাপ্য নয় ৷”

রেদোয়ান ওর ডায়েরিতে কিছু একটা লিখতে লিখতে বললো
” আমি তো বলেছি বাবা যে মায়া যেদিন নিজের ভুল বুঝতে পারবে সেদিন না হয় ওর কাছে ফিরে যাবো আমি ৷ আর তাড়া দেখলেই তো ওকে সেদিনের পর না একবার ও ফোন করে সরি বলেছে না একটাবার ও খোঁজ নিয়েছে ৷ ”

উনি চিন্তিত মুখ করে চুপ করে রইলেন কি ই বা বলার আছে ওনার যেখানে ওরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সমস্যা গুলো মেটাতে নারাজ সেখানে উনি কি করবেন আর ৷

রেদোয়ান বেশ কিছুখন পর বললো
” আমি আর এখন এই বিষয়ে কোন কথা বলতে চাইছি না আর না কিছু ভাবতে চাইছি, আমরা বরং আম্মুকে খুঁজতে মনোযোগ দিই সেটাই ভালো হবে ৷”

কথাটা শোনার পর ও আরাফাত সাহেবের মাঝে কোন হেলদোল নেই দেখে রেদোয়ান বললো
” কি হলো চুপ করে আছো কেন? আম্মুকে খুঁজবে না নাকি সে এতো বছর আমাদের মাঝে ছিলো না বলে তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে কোনটা ? নাকি তুমি তার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন?”

রেদোয়ানের এমন খোঁচা দেওয়া কথা শুনে উনি উঠে দাঁড়ালেন তারপর বললেন
” সে নিজে থেকেই হারিয়ে গেছে , আমরা তাকে হারিয়ে যেতে বলিনি অতঃপর সে যখন এতদিনেও নিজের ইচ্ছাতে ফেরেনি তাই আমার মনে হয় তার প্রতি এতো ভাবনা ভেবে নিজেদের রাতের ঘুম নষ্ট করা নেহাতই বোকামোর কাজ রেদোয়ান তাই তোমাকেও বলছি তার ফিরে আসার আশা ছেড়ে দাও, যে নিজের ইচ্ছাতে হারিয়ে যাই সে কখনো ফিরে আসে না ৷”
কথাটা বলে উনি চলে যেতে নিলেই রেদোয়ান বললো
” তুমি যখন আম্মুর আর কোন খোঁজ খবর রাখতে ভ
চাইছো না তখন আমার আর মায়ার ব্যাপারেও কোন কথা বলবেনা এটাই আশা রাখবো কারন তুমি নিজের জীবনের সিদ্বান্ত নিয়েই অনিশ্চিয়তার মাঝে ৷ ”

কথাটা হয়তো বড্ড বেশি আত্মসম্মানে লাগলো ওনার তাই আর বেশি কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন, কথায় কথা বাড়ে !

#চলবে,,,,

দুটো গল্প দিতে হয় যাই পর্ব ছোট হতেই পারে,তবুও 1550+ শব্দের লিখেছি ৷ আর আমার দিনকাল একটু খারাপ যাচ্ছে তাই মন মেজাজ ও ভালো নেই, গল্প কেমন লাগছে জানিনা তবে আপনাদের যদি মনে হয় ভালো লাগছে তো পড়বেন নয়তো আমি কাউকে পড়ার জন্য জোর করতে চাইনা , এটা সবার ব্যাক্তিগত ব্যাপার , আর এতো রহস্য সবার ভালো না ই লাগতে পারে ইভেন সবার ভালো লাগবে তেমনটাও কথা না যার ভালো লাগবে না ইগনোর করবেন অযথা কমেন্ট বক্সে তাড়াতাড়ি রহস্য উন্মোচন করুন, জগাখিচুড়ী , দিন দিন বোরিং হচ্ছে এমনটা বলবেন না তাহলে আমি এসব বরদাস্ত করবো না , বলে রাখলাম ৷
#চলবে,,,,

রেসপন্স দিনদিন কমছে, এমন চললে কিন্তু আর লিখবো না,হুঠ করে এ্নডিং দিয়ে দেবো কিন্তু ৷ রেসপন্স বাড়ান, আমি গল্পটা নিয়ে অনেক কিছু ভেবেছি তাই বলছি ৷ এই পর্ব থেকে যদি লাইক কম আসে তো আর 3 পর্বে শেষ করে দেবো গল্প ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here