তুমিময় বেদনা পর্ব -১০

#তুমিময়_বেদনা~
#Mst_Nafisa~
#Part_10

প্রান প্রিয় ছোট আব্বুর থেকে বিশ্বাসঘাতকতার আঘাত পেয়ে একদমি ভেঙ্গে পরে পরেছে জিসান। দুই ঘন্টা ধরে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। মিহু মাহিরা খান অনেক ডেকেছে কিন্তু খুলে দরজা জিসান। জিসানের আব্বু মারা যাওয়ার পর এই ছোট আব্বুকে তার আব্বুর যায়গা দিয়েছিলো জিসান। অন্ধের মতো বিশ্বাস করতো তার ছোট আব্বুকে কিন্তু সেই ছোট আব্বুই তার সপ্ন পুরন না হওয়ার কারণ, এই অন্ধকার জীবনে পা রাখার কারণ। মাফিয়া জগতে আসার জন্য ছোট আব্বুই বলেছিলো তারই বুদ্ধিতে জিসান সব কিছু করেছে।

।।

কিছুদিন যাবত জিসান কিছু জিনিসের হিসাব মিলাতে পারছে না। সব দিক দিয়ে কম পরছে, এই নিয়ে বেশ বকাবকি করেছে অফিসের স্টাফ দের। তাড়া হয়তো মন দিয়ে কাজ করছে না বলে জিসান কোন কিছুর হিসাব ঠিক ভাবে পাচ্ছে না। খুব রেগে অফিসের ম্যানাজার আরও কিছু স্টাফ দের মিটিং রুমে ডাকে জিসান।

“সমস্যা কি আপনাদের আপনারা কাজ কি করে করছেন? আমার কোম্পানিতে এত লস আসে কি করে?”

প্রচুর রেগে বলে জিসান। ম্যানাজার বলে,,

“স্যার আমরা তো ঠিক ভাবেই কাজ করছি আর সব কিছু ঠিকি হচ্ছে, এখন পর্যন্ত কোনো লসের কাজ হয়নি তাহলে লস কি করে হয় স্যার?”

“লস না হলে কি আমি মজা করার জন্য আপনাদের এখানে ডেকেছি মিস্টার জাহিদ? কিছু দিন থেকে দেখছি পর পর পাচটা ডিল সাকসেস হওয়ার পর ও আমার একাউন্ট ডিলের পরিমাণের থেকেও কম টাকা আসছে। এমন কেন হচ্ছে?”

“স্যার এই টাকার বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না কারণ এটা আপনার ছোট আব্বু মিস্টার আরিয়ান খান দেখে। ডিল সাকসেস হওয়ার পর উনার কাছেই সব টাকা আসে তার পরে আপনার কাছে যায়।”

জিসান এবার ভাবনায় পরে যায় তাহলে কি ছোট আব্বু অরধেল টাকা নিয়ে নেয় কিন্তু উনি তো জিসান কে না বলে একটা টাকাও নেয়না তাহলে এখন কেনো এমন করবে?। সেদিনের মত মিটিং শেষ করে অনেক রাতে বাসায় ফিরে জিসান। জিসান কে ক্লান্ত অবস্থায় দেখে মিহু জুইস করে আনে জিসানের জন্য। জিসান একটু খেয়ে বেডে হেলান দিয়ে বসে। মিহু দেখে জিসান কিছু নিয়ে চিন্তা করছে তাই মিহু জিজ্ঞেস করেই ফেলে।।

“কি হয়েছে তোমার? আজ কি খুব কাজ করা হয়েছে?”

মিহুর কথায় জিসান মিহুর দিকে তাকিয়ে থাকে, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে।

“কাছের মানুষ যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে তাহলে কেমন লাগতে পারে? ”

জিসানের এহেম কথায় ভীষন ভাবে ভরকে যায় মিহু। মুখ গলা সুখিয়ে যায় চেহারার রংই পালটে যায়। মিহু কি বলবে বুঝতে পারছে না ভয়ে কাপছে শুধু। তবুও কাপা কাপা গলায় বলে।

“ক..কে বিশ্বাসঘাতকতা করলো? ”

“ছোট আব্বু”.।

জিসানের মুখে ছোট আব্বুর কথা শুনে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মিহু। তারপরে জিসানের কাছে গিয়ে বলে।

” কি করেছেন উনি?”

“ছোট আব্বুর যদি টাকার এতো প্রয়োজন ছিলো তাহলে আমাকে বলে নিতে পারতো এতো দিন তো তাই করে এসেছে আমাকে বলেই নিয়েছে কিন্তু এখন কেন এমন করলো? আমার কাছে চাইলে কি আমি দিতাম না? আমার যা সেটা তো তার ও।”

মিহু বুঝতে পারলো ব্যাপার টা যে জিসান অরধেক সত্যি টা জেনেছে এখনো অনেক বেশি জানতে। এখনি সুযোগ জিসান কে সব খুলে বলার তার ছোট আব্বুর মুখস খুলে ফেলার এখন জিসান সব কিছু বিশ্বাস করছে আর বিশ্বাস করবে নাই বা কেন মিহুর কাছে যথেষ্ট প্রমান আছে আরিয়ান খানের আসল রুপ বের করার জন্য। মিহু চট করেই বলে ফেললো।

“আপনার ছোট আব্বু এখন কথায় আছে?”

“তোমাকে তো আগেই বলেছি সুইডেনে গেছে।”

“আদও কি উনি সুইডেনে গেছে? তার খবর কি রাখেন আপনি? একটা কথা মনে রাখবেন ভালো মানুষের মুখস পরে থাকলেই সে ভালো মানুষ হয় না। যাচাই করে দেখুন উনি সুইডেনে নেই আর এটাও খবর নিয়ে দেখুন আপনার সুইডেনে কোনো কোম্পানি আছে নাকি।”

মিহুর কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে জিসান মিহুর মুখের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে ল্যাপটপ টা নিয়ে কি যেনো করতে লাগে জিসান। এক এক করে সব খবর নিচ্ছে জিসান বেশ কিছুক্ষণ পরে জিসান অনেক বেশি রেগে যায় কারণ সব খবর সে পেয়েছে এতো আরিয়ান খান যা যা করেছে সব জানতে পেরেছে। জিসানের কাছে আরিয়ানের সব খবর জানা বা হাতের খেল কিন্তু জিসান আরিয়ান খান কে এতই বিশ্বাস করতো যে তার দিকে কখনো নজর ই রাখেনি। আর জিসানের এই বিশ্বাস টাই কাজে লাগিয়েছে আরিয়ান খান। রাগে চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে জিসানের মিহু বুঝতে পারে সব জানতে পেরেছে এত দিন কি কি করেছে তা। কিন্তু আসল কথায় জানে না জিসান যেটা এবার জানতেই হবে জিসানকে। মিহু বলে।

“আপনি এটাও জেনেছেন নিশ্চয়ই আপনার ছোট আব্বু বিবাহিত? ”

মিহুর কথায় জিসান মিহুর দিকে তাকায় এক বারের জন্য ভাবে মিহু এত কথা জানে কি করে আর আগে থেকে জানলে তাকে বলেনি কেন? কিন্তু জিসানের এতোই রাগ উঠে আছে যে মিহুর কথা ভুলেই গেলো সে এখন আরিয়ানকে কি শাস্তি দেওয়া যায় সেটাই ভাবছে। কিন্তু জিসান কি করে শান্তি দিবে তাকে ছোট বেলা থেকে যাকে আব্বু বলে এসেছে আব্বুর যায়গা দিয়েছে তাকে কি করে শাস্তি দিবে। মিহু বলে,,,,

“শুনেছি আজ বিকেলে উনি এই বাড়ি আসছে, এই পর্যন্ত আপনি চুপ থাকুন আর রাগ কন্ট্রোল করুন। কারণ আরও কিছু সত্যি জানার আছে আপনার যা আপনি জানেন না আজ সব আপনাকে বলা হবে।”

জিসান এবারও অবাক হয় আর কি জানার আছে তার? আর কিসের সত্যির মুখোমুখি হতে হবে তাকে যা সে জানে না। মিহুর কথায় চুল করে থাকে জিসান,,।

জিসানকে ফ্রেশ হতে বলে খাবার কে যায় মিহু। খাবার নিয়ে এসে নিজ হাতে খাইয়ে দেয় জিসানকে। জিসান ও চুপ চাপ খেয়ে নেয়,, জিসান প্রাই এমন বায়না ধরে মিহুর কাছে খাইয়ে নিবে তখন মিহু বিরক্তি প্রকাশ করলেও ভালোবেসে খাইয়ে দিতো। মিহু জানে আজ জিসান খাবে না তাই আগেই খাবার এনে নিজেই খাইয়ে দিতে লাগে আর জিসান ও খেয়ে নেয় চুপ করে।

বিকেল ৫ টা বাজে বসার রুমে সোফায় বসে আছে জিসান আরিয়ান, জিসানের পাসে দাঁড়িয়ে আছে মিহু আরেকটা সোফায় বসে আছে মাহিরা খান তার পাসে দাঁড়িয়ে আছে ডালি। আরিয়ান খান বলে জিসান কে,,,

“বাবাই এখানে সাইন করে দাও, তোমার সাইন লাগবে বলেই আবার আসতে হলো আমাকে।”

জিসানের রাগ লাগলেও চুপ করে আছে শুধু মিহুর কথায়। মিহু বলে,,,

“এটা কিসের পেপার ছোট আব্বু?”

মিহুর এমন প্রশ্নে বেশ রাগ হয় আরিয়ান খানের কিন্তু প্রকাশ করে না, মুখে হাসি রেখে বলে।

“বউমা এটা আমাদের বিজনেসের ব্যাপার তুমি বুঝবে না জিসান বুঝে ও ঠিক করে দিবে।”

মিহুও মুখে হাসি নিয়ে বলে।

“আচ্ছা তো জিসান আপনি পড়ে দেখুন পেপার গুলো কিসের?”

এবার আরিয়ান ভয় পেয়ে যায় এর আগে যত বার সাইন করে নিয়েছে জিসানের থেকে তাতে কোনো বার পড়ে দেখেনি জিসান। এবার যদি মিহুর কথা শুনে পড়ে দেখে তাহলে তো আরিয়ান ধরা পরে যাবে আর এবার নতুন কিছু পেপার ও অ্যাড করেছে আরিয়ান। আরিয়ান খানের ঘাম ঝরতে লাগে এবার। টি টেবিলে পানি রাখা ছিলো সেটা খেয়ে আবার বলে।

“কতো বারই তো সাইন করেছে বাবাই আবার নতুন করে পড়ার কি আছে?”

মিহু কিছু বলার আগে জিসান বলে।

“আরেক বার পড়ি না হয় ছোট আব্বু।”

এটা বলেই জিসান পড়া শুরু করে,, পেপার গুলা ছিলো একটা নারীপাচারের আর একটা জিসানের সব সম্পত্তির দলিল যাতে লেখা আছে জিসান তার সব সম্পত্তি আরিয়ান খানের নামে করে দিচ্ছে। জিসান পেপার গুলো পড়ে আরিয়ান খানের দিকে তাকায় আরিয়ান খান ভয়ে কাপছে।

ধরা পরে গেছে তো সে এখন কি করবে? ভুল হয়েছে এমন বোকামি করা আরিয়ান খানের। এবার কি তাহলে তার হাত থেকে সোনার ডিম পারা হাস চলে যাবে? কি ভুল টাই না করলো আরিয়ান। জিসান মেকি হেসে তাকিয়ে আছে আরিয়ান খানের দিকে।

“এসবের মানে কি ছোট আব্বু?” (শান্ত কন্ঠ জিসানের)

কিছুই বলছে না আরিয়ান খান।

“ও কিছুই বলতে পারবে না বাকি টা আমি বলছি।”

আরিয়ান জিসান পাসে তাকিয়ে ভিষণ ভাবে অবাক হয়। জিসানের মুখে হাসি আর আরিয়ানের মুখে কালো অন্ধকারে ছেয়ে যায় পাসে বসে কথা বলা বেক্তিকে দেখে।

চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here