তুমিময় বেদনা পর্ব -১১

#তুমিময়_বেদনা~
#Mst_Nafisa~
#Part_11

“ও কিছুই বলতে পারবে না বাকি টা আমি বলছি।”

আরিয়ান জিসান পাসে তাকিয়ে ভিষণ ভাবে অবাক হয়। জিসানের মুখে হাসি আর আরিয়ানের মুখে কালো অন্ধকারে ছেয়ে যায় পাসে বসে কথা বলা বেক্তিকে দেখে। কারণ সেটা আর কেউ না জিসানের আম্মু, হ্যাঁ জিসানের আম্মু কথা বলছে। আরিয়ান ভেবেই নিয়েছিলো মাহিরা খান কথা বলতে পারবে না তাই এই বিষয়ে ভয় নেই। কিন্তু কে জানে হুট করেই তার একে একে সব কিছু বের হয়ে আসবে। জিসান উঠে তার আম্মু কাছে গিয়ে আম্মুর হাত ধরে বলে।

“আম্মু তুমি কথা বলতে পারছো? আমার কি যে ভালো লাগছে।”

“হুম পারছি আর শুধু আজ থেকে না আরও অনেক আগে থেকেই আমি কথা বলতে পারি কিন্তু কিছু কারণে চুপ ছিলাম এখন সব বলতে হবে আমাকে সময় চলে এসেছে।”

আম্মুর কথা শুনে ব্রু কুচকে তাকায় জিসান আর বলে।

“আর কি কথা আম্মু?”

মাহিরা খান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলা শুরু করে।

“কলেজের প্রথম দিনে আমার কিছু সমস্যা হয় সেই সমস্যার সমাধান করে দেয় আরমান তোর আব্বু। আরমান আমার সিনিয়র ছিলো সেদিন আমায় হেল্প করাই ভালো সম্পর্ক হয় আমাদের। আর এই দিকে আমার ক্লাসমেইট ছিলো আরিয়ান ও আমাকে প্রথম দিন থেকেই পছন্দ করতো আমি বুঝেছিলাম কিন্তু কিছু বলিনি। আমি জানতাম ও না আরিয়ান আরমান দুই ভাই। দিন যত যেতে লাগে আরমানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গভীর হতে থাকে এক সময় দুই জন দুইজনকে ভালোও বেসে ফেললাম। এই খবর যখন আরিয়ান পায় তখন সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে এসে আমাকে প্রপোজ করে কিন্তু আমি রিজেক্ট করে দেয় আমাকে অনেক বুঝানো হয় আরিয়ান আমাকে কতো ভালোবাসে আমি তবুও মানিনি কারণ আমি আরমান কে ভালোবাসি। কিছুদিন পরে জানতে পারি আরমান আরিয়ান দুই ভাই। আমি রিজেক্ট করার পর আরিয়ান আমাকে আমাকে আর কিছু বলে নি আমি ভেবেছিলাম বুঝেছে হয়তো। তারপরে আরমান আমার বিয়ে হয় তার এক বছর পর তুই আসিস আমার কোল জুরে। তখন আরিয়ান পড়াশোনার জন্য বাইরে চলে যায়। আমাদের সংসার ভালোই চলছিলো অনেক ভালো ছিলাম আমি। তোর যখন ১৫ বছর বয়স তখন বাইরে থেকে আসে আরিয়ান প্রায় ১৫ টা বছর পরে আসে নিজের বাসায়,, আমি ভেবেছিলাম আগের সব কিছু ভুলে গেছে কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম। আরিয়ান কিছুই ভুলেনি আমাকে তখনো বিরক্ত করতো অনেক রকম ভাবে। আরমানের চোখে আমাকে খারাপ প্রমান করার চেষ্টা করতো। কিন্তু এতে কাজ হয়নি,, একদিন অফিসের প্রোগ্রামে আমি আর আরমান যায় বাসায় রেখে যায় তোকে। প্রোগ্রামের ঠিকানায় গিয়ে দেখি সেখানে কোন প্রোগ্রামই হচ্ছে না আরিয়ান মিত্থে বলে নিয়ে এসেছে আমাদের। আরমান কিছুই বুঝতে পারেনি সেদিন কিন্তু আমি বুঝেছিলাম সব টা, আমার সঙ্গে এখন তার খান সম্পত্তিও চাই তাই আরমান কে আমার চোখের সামনে এই আরিয়ান গু/লি করে মা/রে। আমি কান্না করেছি হাত জোর করে ভিক্ষা চেয়েছি সব সম্পত্তি তাকে দিয়ে দিব বলেছি তবুও ছারেনি সেদিন আমাদের এই লোক। আমি আর কোনো রাস্তা না পেয়ে একটা ফ্লাওয়ারভাস নিয়ে আরিয়ানের মাথায় মারি কিছুখনের জন্য আরিয়ান জ্ঞান হারায়। আমি জলদি করে আরমান কে নিয়ে গাড়ি তে বসায় হস্পিটালে নেওয়ার জন্য কিন্তু সঙ্গে ড্রাইভার ছিলো না আর আমিও ড্রাইভিং জানতাম না। তবুও সাহস করে আমি নিজেই ড্রাইভিং করতে লাগি আর যেটার ভয় ছিলো সেটাই হয় আমাদের এক্সিডেন। এই আরিয়ান আমার আরমানকে মে/রে/ছে তোকে বাবা হারা করেছে এই আরিয়ান।”

সব কিছু বলে অঝরে কান্না করতে থাকে মাহিরা খান। জিসানের চোখ থেকেও পানি পরছে কিন্তু সেটা যেনো কোন আগুন ঝরে পরছে। আরিয়ান খান নিজের কুকিরতি শুনে মাথা নত করে বসে আছে। তার পালানোর যায়গা নেই ছাড়ি দিকে গ্রাড এসে দাঁড়িয়েছে। সবাই চুপ তখন মিহু বলা শুরু করে।

“আমি যখন প্রথম এই বাড়িতে আসি তখনই সন্দেহ হয়েছিলো এই বাসায় কিছু চলছে। তারপরে দেখা হয় মামনির সাথে, মামনির দেখা শুনা করার জন্য আমাকে রাখে ডালি। মামনির বিষয়ে সব শুনার পর আমার সন্দেহ হয় একটা মানুষ কি করে ১০ বছর ধরে কোমায় থাকতে পারে তাও এতো ভালো ভালো ডক্টর দেখিয়ে ভালো মেডিসিন খেয়েও। পরে বুঝতে পারি মামনিকে যে মেডিসিন দেওয়া হয় সেটা সুস্থ করার না বরন আরও অসুস্থ করে দেওয়ার মেডিসিন। আমি বুঝতে পারিনি এই কাজ কে করতে পারে কিন্তু একদিন দেখলাম এই বাসার এক কাজের লোক মামনির মেডিসিন পালটাতে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরি। আর তাকে জিজ্ঞেস করি এই কাজ কেন করছে আর কে করাচ্ছে প্রথমে না বললেও পরে ভয় দেখিয়ে জানতে পারি এই কাজ আরিয়ান খান করায় তাকে। সেদিনের পর থেকে মামনির সব কাজ খাওয়া মেডিসিন নেওয়া আমি করি। আর সুস্তও হয়ে উঠে মামনি,, চলাফেরার সঙ্গে কথাও বলতে পারতো মামনি আর তখনই আমি মামনির কাছে এই সব শুনি। আমার কাছে কোন প্রমান ছিলো না আর আপনি আরিয়ান খানকে অনেক ভালোবাসতেন বিশ্বাস করতেন তাই কিছু বলতে পারিনি। তাই মামনিকে বলি আরও কিছু দিন চুপ থাকতে কারণ মামনি কথা বলা মানে আরিয়ানের সর্বনাশ, মামনির ক্ষতি করার চেষ্টা করতো তাই এমন করি। আমি প্রমান দেওয়ার আগেই আপনি কিছু জেনেছেন আর আমরা পুরো টা বললাম।”

জিসান রাগ নিয়ে বলে,,

“কে সেই কাজের লোক? ”

মিহু ডালিকে ইশারা করতেই আবুল নামের কাজের লোক টাকে জিসানের সামনে নিয়ে আসে। আবুল ভিষণ কাপছে ভয়ে সে জানে জিসান কতটা ভয়নক রাগি। জিসান রেগে গা/ন বের করে মা/র/তে নিবে ঠিক সেই সময় মিহু আটকিয়ে নিয়ে বলে।

“অন্যের কথায় অনেক খু/ন মা/রা/মা/রি করেছেন এবার এদের পুলিশের হাতে তুলে দেন ওরাই শাস্তি দিবে।”

জিসান কিছু বললো, কাকে যেনো ফোন করে কিছুক্ষণ পরে পলিশ আসে। আরিয়ান আর আবুল কে নিয়ে যেতে লাগে সেই সময় মাহিরা খান উঠে আরিয়ান খানের সামনে গিয়ে বলে।।

“গিয়েছিলে আমার ছেলের শেষ দিনের উপায় খুঁজতে আর নিজের শেষ দিন নিয়ে এলে। পাপ বাপ কেউ ছারে না, যে বড়ো ভাই তোমাকে আপন ভাইয়ের মতো দেখেছে তাকে তুমি মেরে ফেলেছো এখন এই শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হতো। ”

বলেই মাহিরা খান চলে যায়, জিসান পলিশ কে কিছু একটা ইশারা করে পলিশ ও বুঝে যায়। পলিশ চলে যায় আরিয়ানকে নিয়ে। সবাই চলে যেতেই জিসান মিহুর কাছে এসে মিহুকে জরিয়ে ধরে বলে।

“তুমি না থাকলে আমি এতো কিছু জানতেই পারতাম না। আমার পিছনে এতকিছু চলে এসেছে এতো বছর ধরে আর আমি সেটার কোন খবরই জানতাম না। থ্যাংকিউ আমার জীবনে আসার জন্য, থ্যাংকিউ আমার জীবনটা আলোক্রিত করার জন্য। আই লাভ ইউ তেজপাতা।

” অনেক হয়েছে ছারুন তো এটা আমাদের রুম না।আর আপনি মামনির রুমে গিয়ে একটু মামনিকে সময় দিন।”

জিসান মিহুর কথায় সাই দিয়ে মামনির রুমে যায়,, গিয়ে দেখে মামনি বেডে বসে কান্না করছে। জিসান তার আম্মুর কাছে পাসে বসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে। আম্মু কান্না থামিয়ে বলে।

“আমার সোনাটার অনেক কষ্ট হয়েছে তাই না এতো বছর?”

“হুম আম্মু অনেক, আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম,, মিহু যদি না আসতো আমি কিছুই ফিরে পেতাম না। ”

“হুম একদম ঠিক বলেছিস, আমার মেয়েটা অনেক ভালো ও আসার পর থেকে আমি নিজেকে সুস্ত মনে করেছি ওর অনেক বকবক শুনেছি। মেয়েটাকে কোনো দিন ভুল বুঝিস না কষ্ট দিস না। সব সময় আগলে রাখবি বড্ড ভালো মামনিটা।”

“হুম আম্মু ওকে কখনো কষ্ট দিবো না ভুল বুঝবো না।”

মাহিরা খান পরম যত্নে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তখন মিহু রুমে এসে বলে।

“বাহ বাহ আমে দুধে মিসে গেলো আর আমি আঁটি হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছি।”

মিহুর কথায় মাহিরা জিসান দুই জনে হেসে দেয়। তারপরে মিহুকে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে।

“তোরাই তো আমার সব কিছু রে। ” (মিহুর কপালে চুমু দিয়ে)

জিসান হুট করে মিহু গালে চুমু দিয়ে বলে।

“আমিও তোমার সব কিছু বুঝেছো।”

জিসানের এহেম কান্ডে মিহু লজ্জায় শেষ আর মাহিরা খান মুখ টিপে হাসছে। মিহু রাগি চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে “অসভ্য লোক একটা”। জিসান ও যেনো বুঝতে পেরে ফিসফিস করে বলে। ” অসভ্য হলেও তোমারই”। মিহু আবার রাগি চোখে তাকায় আর জিসান চোখ টিপ দিয়ে দেয়।।।

রাত ১১ টা।

চলবে…

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here