তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ২১

#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব-২১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
নিজেরগালে কারো গালের স্পর্শ পেতেই,মেহেভীন জমে বরফ হয়ে যায়। তার প্রতিটা শীরায় শীরায় বয়ে যাচ্ছে অস্হীরতা। এতোটা গভীর স্পর্শ অজানা যুবকটির। যুবকটি নিজের গালে রং মাখিয়ে, মেহেভীনের গালের সাথে নিজের গালের স্পর্শ করিয়ে, মেহেভীনকে নিজের ভালোবাসার রংয়ের রাঙ্গিয়ে দিচ্ছে। যুবকটি নীচে বসে পড়ে। মেহেভীন স্হীর দাঁড়িয়ে থাকে। যুবকটি মেহেভীনের পায়ে লাল রংটা লাগিয়ে দিয়ে, পায়ে আলতো করে চুমু খায়। মেহেভীন নিজের শাড়িটা খামচে ধরে। মেহেভীন এতোটাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছে যে, চিৎকারটুকুও তার মুখ থেকে বের হচ্ছে না। যুবকটি উঠে দাড়িয়ে মেহেভীনের চোখের বাঁধন খুলে দেয়। মেহেভীন চোখ খুলে তাকায়।

_______

আরিয়ান নিজের চেম্বারে বসে আছে। আজকে অনেক রোগির চাপ। একজনের পর একজন চলেই আসছে। আরিয়ান একটা ব্রেড মুখে নিতে নিলে, কেউ বলে উঠে,

‘মে আই কামিন।’

আরিয়ান সঙ্গে সঙ্গে নিজের মুখের ব্রেডটা রেখে দিলো। আজকে আর তার খাওয়াটা হলো না। আরিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,

‘ ইয়েস কাম। ‘

সঙ্গে সঙ্গে একটি থ্রি পিচ পরিহিতা রমনী চেম্বারে প্রবেশ করলো। তাকে দেখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো আরিয়ান। গোলা-গাল চেহারা। চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। মাথা ঝুটি করে রেখেছে। মুখটায় কিছুটা বাচ্ছাদের ছাপ রয়েছে। মেয়েটা আরিয়ানের সামনের চেয়ারটা বসে বললো,,

‘কি হলো মিঃ ডক্টর? এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন? ‘

মেয়েটার কথায় ঘোর ভাঙ্গলো আরিয়ানের। মেয়েটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে কলেজে পড়ুয়া মেয়ে হবে। বয়স যতটুকু বুঝা যায় ১৭-১৮ হবে। আরিয়ান কিছুটা ভাব নিয়ে বললো,

‘ আমি যার তার দিকে তাকাই না হুহ। আমার দিকে মেয়েরা তাকিয়ে থাকে। কলেজের ক্রাশ বয় ছিলাম আমি।’

মেয়েটা নিজের চশমটা ঠিক করে বললো,
‘ আমি তো স্পষ্ট দেখলাম। আপনি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলেন। মিথ্যে বলছেন কেন? একজন ছেলের একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখলে তার চোখ অটোমেটিক আটকে যাবে। এই বিষয়টা নরমাল। শুধু শুধু মিথ্যে বলে, নিজের পাপের বোঁঝা ভারি করছেন কেন? ‘

আরিয়ান ভরকে গেলো। মেয়েটা যথেষ্ট বকবক করে্। মেয়েটাকে দেখলে সরল-সোজা মেয়ে মনে হলেও, মেয়েটা ততটা সরল নয়। মেয়েটা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী।একেবারে অতি চালাক যাকে বলে।

আরিয়ান ঠান্ডা গলায় বললো, ‘নিজেকে কী আপনি সুন্দর মনে করেন? ‘

‘অবশ্যই আমি সুন্দরী। আমি স্বরং আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছে। আমার আল্লাহর সৃষ্টি কখনোই কুৎসিত হতে পারে। অন্যরা আমাকে সুন্দর মনে করুক কিংবা না করুক।আমি জানি আমি অত্যন্ত সুন্দর। আমার সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি সৃষ্টি অত্যন্ত নিপুন এবং সুন্দর।
তাই আমি মনে করি আমি সত্যি খুবই সুন্দর। কেননা আমাকে আমার রব সৃষ্টি করেছে। ‘

মেয়েটার কথা শুনে মুচকি হাঁসলো আরিয়ান। মেয়েটার প্রতিটা কথায় নিজের করা যুক্তি দিয়ে, অপরজনকে খুব সহজেই অন্যের মুখ বন্ধ করে দিতে পারে। মেয়েটা আরিয়ানের হাসির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এইযে দেখুন আপনার হাসিটাও কত সুন্দর। আমার রবের সৃষ্টি আপনি বুঝেছেন তাই এতো সুন্দর। ‘

আরিয়ান নিজের হাসি থামিয়ে দিলো।

‘ আরে হাসি থামালেন কেন? আরেকটু হাসুন। বেশ লাগছিলো। ‘
আরিয়ান কথাকে ঘুড়িয়ে বললো,

‘ আপনি এখন আমার কাছে কিসের জন্যে এসেছেন তা জানতে পারে কি? ‘

মেয়েটি কিছুটা ভাবুক ভঙ্গিমায় বললো, ‘আসলে আমি মানুষটা সুন্দর, কিন্তু মাথায় প্রচন্ড গবর ভরা।
পড়া কিছুতেই মাথায় ঢুকে না। টানা তিনবার ফেল করেছি,এইবার করলে বাবা আমাকে বিয়ে দিবে। আমি আবার এখুনি বিয়ে করতে চাইনা। এখনো আমার পুরো পাড়া জুড়ে সবার শান্তির ঘুম হারাম করতে হবে। এখুনি বিয়ে করে ফেললে, সবার ঘুম হারাম করবো কীভাবে। ‘
তাই বলছি কি এমন কোন চিকিৎসা নেই যাতে আমার মাথাটা একেবারে ঝাকাঝাক হয়ে যায়। ‘

মেয়েটার এমন অদ্ভুদ কথাতে আরিয়ান চুপ হয়ে যায়। তার ধআরিয়ান বিড়বির করে বলে, ‘এই মেয়েকে বিয়ে করবে যে বিয়ে করবে, সে নিশ্চিত স্বইচ্ছায় নিজের জন্যে কবর কুড়বে। ‘

‘কি বললেন? ‘

‘না মানে কিছু না। আপনার নামটা জানতে পারি? ‘

‘ফারিয়া তাবাসসুম। এইবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। ‘

‘ আপনার নাম্বার টা দিন। ‘

‘ অ্যা? ‘

‘হ্যা নাম্বার দিন। আপনার যা জটিল রোগ যাতে
চিকিৎসা করার জন্যে আপনার ফোন নাম্বারটাই প্রয়োজন। ‘

‘অদ্ভুদ লোক আপনি মশাই। চিকিৎসা করার জন্যে নাম্বার লাগে? ‘

‘ডক্টর কে আমি নাকি আপনি? ‘

‘জ্বী আপনি। ‘

‘অতএব আমি এখন যা বলছি তাই করুন। ‘

ফারিয়া তার নাম্বার টা দিয়ে, মুখ বেকিয়ে চলে গেলো। ফারিয়া চলে যেতেই,আরিয়ান আরেকদফা হেসে উঠে। তার মাথায় হঠাৎ করেই একটা শয়তানী বুদ্ধি চলে আসলো। ফারিয়াকে একটু জব্দ করতে হবে। মেয়েটা নিজেকে প্রচন্ড বুদ্ধিমতী মনে করে।

_______

মেহেভীন সামনের দিকে তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলো না। কেননা রুমটা বেশ অন্ধকার। কিন্তু মেহেভীন অনুভব করতে পারছে তার সামনে কেউ দাড়িয়ে আছে। যুবকটি মেহেভীনের দিকে ঝুঁকে নিজের অধরজোড়া এগিয়ে নিয়ে যায় মেহেভীনের দিকে। মেহেভীন তা বুঝতে পেরে, নিজের আখিজোড়া বন্ধ করে ফেলে। মেহেভীনের ভয়ার্থ মুখখানি দেখে,যুবকটির বড্ড ইচ্ছে করলো এই মোহনীয় মুখটাকে আদরে ভরিতে দিতে। কিন্ত কিছু একটা ভেবে যুবক নিজেকে নিয়ন্ত্রন করলো। মেহেভীনের কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো কানে গুজে দিতে দিতে মেহেভীনের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস সুরে বললো
, ‘ তোমার চেহারাতে একপ্রকার মুগ্ধতা আছে প্রেয়সী।
যখন তুমি নিজের আখিজোড়া বন্ধ করে রাখো,তখন কি ভয়ংকরভাবে তুমি মোহনীয় হয়ে উঠো। আজ হাজারো নারীর মাঝে আমার চোখ শুধুমাত্র তোমাতে সীমাবদ্ধ ছিলো। এতোটাই মুগ্ধ হয়েছি আমি। তোমাতে নিজেকে বার বার হারিয়ে ফেলি। ‘

যুবকটা কথাটি বলে, আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে মেহেভীনের কোমড়। মেহেভীন ঠায় দাড়িয়ে থাকে। সে আসলে বুঝতে পারছে না, তার সাথে আপাতত হচ্ছে টা কি?

যুবকটি মেহেভীনের হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে, ‘ তুমি আমার জীবনের প্রতিটা রংয়ের উৎস। তাই আমি তোমাকে আজ আমার ভালোবাসার রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দিলাম। তোমার জীবনে কোন অতীতের কালো রংয়ের প্রবেশ আমি করতে দিবো না। আজ আমি তোমায় প্রমিস করলাম।’

মেহেভীন কিছু বলার আগেই, যুবকটি আস্তে আস্তে হারিয়ে গেলো অন্ধকারের মাঝে। মেহেভীন আর একসাথে এতোকিছু সহ্য করতে পারলো না। সে অনেকটা ঘোরের মাঝে আছে। তার মাথার উপর দিয়ে সব যাচ্ছে। কে সেই যুবক? যে এতো অদ্ভুদ কান্ড ঘটিয়ে গেলো তার সাথে। মেহেভীন মাটিতে পুনরায় লুটিয়ে পড়লো।

অভ্র নিজের রুমের রকিং চেয়ারে বসে আছে। মায়রার গর্ভে তার সন্তান বেডে উঠছে। কথাটি যতটা সহজ তার থেকেও বেশি কঠিন। অভ্র এক দুটানায় পড়ে যাচ্ছে। মায়রাকে এখন সে সহ্য করতে পারছে না। অপরদিকে মেহেভীনের স্মৃতি সে ভূলতে পারছে না। মেহেভীন নামটি মাথায় আসতেই অভ্রের মনে পড়ে যায় কালকের ঘটনাটি। মেহেভীন অন্য একজনকে জড়িয়ে ধরেছিলো। এইসব কথা ভাবতে গেলেও, রাগে মাথায় আগুন ধরে যায়। অভ্র ভাঙ্গা গ্লাসটি রাগে চেপে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে অভ্রের হাত থেকে ফিনকি রক্ত গডিয়ে পড়ে। মায়রা রুমে এসে দেখে, অভ্রের হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।মায়রা সঙ্গে সঙ্গে অভ্রের কাছে গিয়ে, অভ্রের হাত টা ধরে বলে,

‘ অভ্র তোমার হাত থেকে তো রক্ত পড়ছে। কীভাবে কাটলো? চলো তোমার হাতে ওষুধ লাগিয়ে দেই। ‘

অভ্র নিজের হাতটা সরিয়ে বললো, ‘ মায়রা তুমি এখন আমার চোখের সামনে যাও। একদম ন্যাকামি করবে না। আমার এখন কিচ্ছু ভালো লাগছে না। ‘

কথাটি তীরের মতো বিধে যায় মায়রার মনের ভিতরে। সে তো শুধু ওষুধ লাগাতে এসেছিলো, তবে তাকে কেন শুনতে হলো অভ্রের কটু বানী?

_________

টিপ টিপ করে নিজের চোখের পাতা খুললো মেহেভীন। আরহামের ঘরে নিজেকে দেখে, সে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো। মেহেভীন আস্তে ধীরে উঠে বসলো। তার সামনে আরিয়ান এবং আরহাম দাড়িয়ে আছে। আরহাম মেহেভীনকে উঠতে দেখেই,গলাতে গম্ভীর সুর এনে বললো, ‘ আমি বুঝে উঠতে পারিনা। এই মেয়ের কি স্টুপিডের মতো কাজ না করলে কী হয় না? ‘

মেহেভীন বলে উঠলো, ‘ আমি আবার কি করলাম? ‘

‘কি করেছো তুমি? আমাকে জিজ্ঞাসা করছো স্টুপিড মেয়ে। তুমি ভার্সিটির স্টোর রুমে কি করছিলে? কিছু স্টুডেন্ট সেখানে তোমাকে অজ্ঞান পেয়ে, আমাদের ইনফর্ম করছে। নাহলে ওরা না দেখলে আজকে অজ্ঞান হয়েই সারারাত স্টোর রুমে পড়ে থাকতে। ‘

‘ আরে আমি কী ইচ্ছে করে করেছি নাকি? আমাকেই তো জোড় করে ওই… ‘

মেহেভীন বাকি কথাটি বলতে পারলো না, তার আগেই আরহাম রামধমক দিয়ে বললো,

‘ এখন তুমি তোমার স্টুপিড কাজের জন্যে সাফাই দিতে যেও না। ‘

কথাটি বলে আরহাম মেহেভীনের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,

‘ এইবার থেকে তোমার উপর দ্বিগুন নজর দিবো আমি। তোমার মতো স্টুপিড মেয়েকে একা ছাড়াটাই ভূল। ‘

আরিয়ানের দিকে কাদু চেহারা করে মেহেভীন বলে,

‘ দেখছিস আরিয়ান কেমন করে তোর ভাই আমার সাথে। ‘

‘সত্যি ভাই এইভাবে বকিস না তো আমার লিটেল সিসকে।প্রেগ্ন্যাসির সময় একটু–আকটু মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক।’

মেহেভীন ঢগঢগ করে তাড়াতাড়ি করে পানিটা খেয়ে ফেলে। তাড়াতাড়ি পানি খাওয়া ফলে,সঙ্গে সঙ্গে তার কাশি উঠে যায়। আরহাম মেহেভীনের কাছে গিয়ে, মেহেভীনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

‘ এমনি এমনি স্টুপিড বলি আমি? সামান্য পানিটুকুও খেতে পারো। ‘

মেহেভীন ঠোট ফুলিয়ে থাকে। আরিয়ান হেসে উঠে।

______

চলবে…ইনশা-আল্লাহ।
[কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু 💖🥺]
গল্পের লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here