তুমি আসবে বলে পর্ব -৩২+৩৩

#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৩২

“তুমি কি স্বেচ্ছায় গাড়িতে উঠবে নাকি আমি তুলে নিয়ে বসাবো”

গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনে পা থামিয়ে দাড়ালাম। পেছনে ফিরে পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুটিয়ে দেখলাম। খয়েরী রঙের শার্ট এর সাথে কালো রঙের ফরমাল স্যুটে তাকে বরাবরের মতোই মাত্রা ছাড়ানো সুদর্শন লাগছে, সেই নীলাভ চোখ আর জেল দিয়ে সেট করা চুল। পকেটে গুজে দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গি সব ই এক আছে৷ কিন্তু লোকটার পাগলামি আবারও শুরু হয়েছে। আজ দুদিন ধরে জ্বা’লিয়ে মারছে আমায়। আমাকে গিফট পাঠানোর দুদিন হয়ে গেছে, সেদিনের পর থেকে কি হয়েছে খোদা জানে আবারও উনার হম্বিতম্বি শুরু হয়েছে, যা নয় তা বলে আমায় থ্রে’ট দেয়, সকালে ভার্সিটি যাওয়ার সময় দাঁড়িয়ে থাকে উনার গাড়িতে না উঠলে নাকি বুড়িগ’ঙ্গায় ফে’লে দিবেন। এ কি জ্বা’লা। দুইদিন করে ভার্সিটি শেষে বেরিয়ে দেখি গেইটেই অপেক্ষা করছিলো। দুদিন তো পালিয়ে বেচেছি। কিন্তু আজ আচ্ছা গেড়াকলে পরেছি

“আ’ম ওয়ার্ণিং ইউ ফর দ্যা লাস্ট টাইম, এরপর যা হবে তার জন্য তুমি দায়ি থাকবে।”

গমগমে গলার এমন ধমকিতে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, বার দুয়েক ঢক গিল্লাম। ভার্সিটি শেষে বেরিয়ে দেখি আজ মহাশয় অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে আছে। বাকিরা এখনো বের হয়নি ক্যাম্পাস থেকে,ক্যান যে পাকনামি টা করে আগে আগে বেরোতে গেলাম।
আমার ভাবনার মাঝেই উনি পা বাড়িয়ে আমার দিকে আসতে নিলেই আমি এক দৌড়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পরলাম, এই লোক দিয়ে এতোটুকুও বিশ্বাস নেই,পরে যদি সত্যিই রাস্তার মাঝে উঠিয়ে নেয়।
ধপ করে এসে আমার পাশে বসলো। আমার দিকে কোনো রকম না চেয়েই চাবি ঘুরিয়ে গাড়িটা শব্দ করে স্টার্ট দিয়ে ছুটতে শুরু করলো।

গভীর চোখ জোড়া সামনের দিকে স্থির। স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে নিঃশব্দে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। আমি বার দুয়েক আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম তাও কোনো গা করলো নাহ লোকটা,যেনো গাড়িতে উনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ব্যাক্তির উপস্থিতি নেই। লোকটা আস্ত গিরগিটি, কই সেদিন তো কি সুন্দর করে কথা বলছিলো আবার শুরু হয়েছে উনার সিরিয়াসপানা। ধ্যাত..
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বেশ তেজি গলায় বললাম

-আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়। এভাবে জোর করে আনার মানে টা কি!

তবুও কোনো হেলদোল নেই তার,একবার আড়চোখে চেয়ে আবারও ব্যস্ত স্টিয়ারিং ঘুরাতে, চোখ মুখ দেখে কিছুই ঠাওর করতে পারছি নাহ আদও রেগে আছেন নাকি। খানিক চুপ থেকে বেশ জোরেই চেঁচিয়ে বললাম

-কি সমস্যা বলছেন না কেনো কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন,আমার কথার কি কোনো দাম নেই। নাকি শোনার প্রয়োজন ই মনে করেন নাহ। মে’রে ফেলতে চান আমায়? বুড়ি’গঙ্গায় ফেলবেন তোহ?

বেশ জোরে শব্দ করে ব্রেক কষে গাড়িটা থামলো। তীর্যক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে কাল ব্যাপন না করেই এক হাতে কোমর পেচিয়ে টান দিয়ে নিজের কোলের উপর বসিয়ে নিলেন। ভীষণ অপ্রস্তুত থাকাই আমি এখনো বুঝে উঠতে পারলাম নাহ ঘটনা টা। নিজের দিকে তাকিয়ে অবাকের শীর্ষে, এক টানে লোকটা কোলের উপর বসিয়ে নিয়েছে, একেই বলে সীট বেল্ট না বাধার কুফল। আমি আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম। কোনো রূপ প্রতিক্রিয়া হীনা সীটে মাথা এলিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে আছে। আমি সরে আসার চেষ্টা করতেই হাতের বন্ধন আরও দৃঢ় হলো, বেশ কিছুক্ষণ মোচড়ামুচড়ি করেও লাভ হলো না, আমি গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়েও লোকটার হাতের বন্ধন ছুটাতে পারলাম নাহ। ক্লান্ত হয়ে শান্ত বনে গেলাম

-এক জীবন ধরে চেষ্টা করলেও আমি হতে দূরে সরতে পারবে নাহ,যতক্ষন না আমি চাইবো।
আর সে আশা টাও বাদ দিয়ে দাও, এজীবনে ছাড়ছি নাহ।

বলেই চোখ খুলে তাকালো।ভীষণ শান্ত নীলাভ চোখ জোড়ার মাঝে হাজারো শব্দের আঁকিবুঁকি। যেনো স্পষ্ট কথা বলে তারা। হাজারো আর্জি রাখে আমার সামনে। এক সমুদ্র ভরসা খুঁজে পাই আমি চোখ জোড়ার মাঝে। ধপ করে চোখ সরিয়ে নিলাম, বেশ তেজ দেখিয়ে বললাম

-এটা কোন ধরনের অসভ্যতা, ছাড়ুন আমায়

-পারলে ছাড়িয়ে নাও,নিষেধ তো করিনি

-আপনি খুব ভালো মতোই জানেন আমি পারবো নাহ,তবুও মসকারা করছেন আমার সাথে?

এবার কোমরে রাখা হাতের বন্ধন আরও দৃঢ় করে কাছে টেনে নিলেন। আরেক হাতে আমার মুখে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো সযত্নে সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে নরম কণ্ঠে বললেন

-জানোই যখন আমার থেকে দূরে যাবার ক্ষমতা তোমার নেই, তাহলে বৃথা চেষ্টা করো কেনো।

উনার এমন কণ্ঠে যে আমার সর্ব’নাশ হয়, আমি থমকে যায় প্রতিবার,চুল পরিমান নড়াচড়া করতে পারিনা। দৃষ্টি ঝুঁকিয়ে নিলাম। আমার হাতটা নিজের হাতের মাঝে নিয়ে রাখলেন উনার বুকের বাম পাশটাই।
যেনো প্রলয়কারী টাইফুন বয়ে গেলো শরীর জুড়ে,
বুলেট ট্রেনের গতিতে ছুটছে যেনো প্রতিটি হৃদস্পন্দন। আর তা স্পষ্ট ঠেকছে আমার হাতে। এমন ঝড় উনার বুকে, এ কেমন তোলপাড়, শীতল স্পর্শের মতো ঝিমঝিম করে উঠলো শরীর টা, উনার বা পাশের পাঁজরের মাঝের মাংসপিন্ডের যান্ত্রিক জিনিসটা কতটা হাই লেভেলে পাম্প করছে ধারণার বাহিরে।

-বুঝতে পারছো নূর! আমার ভেতরের প্রবল দাবদাহে চামড়া পুড়ে যে তপ্ততা ছড়াচ্ছে তা কি তোমার নরম হাতের চামড়া স্পর্শ করতে পারছে নাহ? বুকের তান্ডবলীলার তাড়না কি তোমার মস্তিষ্কের নিউরনে ও প্রবাহিত হচ্ছে নাহ? হৃদয়ে ওঠা প্রলয়ের ঝংকার কি তোমার কায়ায় শিহরিত করছে নাহ? একটা বার ভেতরে মিশে দেখো কতটা যন্ত্র’নায় দ’গ্ধ হচ্ছি! কতোটা পো’ড়াচ্ছে তোমার শূন্যতা,, তবুও সরে যেতে চাইবে?

পুরো শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠলো। এ যেনো শব্দবাণ হয়ে আমার শ্রবণযন্ত্র থেকে শরীরের সমস্ত লোমস্তরে কাটা দিলো। মাদকময় শব্দ কানে রি রি করে বাজছে। নিঃশ্বাস বেজায় ঘন হয়ে আসছে। অমসৃণ গালের ছোট ছোট দাড়ির খোঁচায় কানের পেছনের অংশে জ্বলন ধরেছে।
তপ্ত ঠোঁটের ছোয়া কানে লাগতেই দু হাতে খামচে ধরলাম। বাষ্পের ন্যায় গরম ধোঁয়া এসে ঠেকলো কানের পৃষ্ঠে

-একটা বার জড়িয়ে ধরবে নাহ নূর? একবার বুকের মধ্যিখানে মিশে আমায় শান্তি দাও,একটু শান্তি ভীষণ দরকার।

এরূপ কথায় যেনো শরীরের সমস্ত রক্ত তপ্ত হয়ে গেলো, বাষ্পীভূত হয়ে তা আমার চোখ দিয়ে নোনাজলে বেরিয়ে এলো। দু হাতে শার্ট খামচে ধরেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। এমন কেনো লাগছে, লোকটার মুখে এতো মায়া কেনো, মায়াভরা মুখটার দিকে চেয়ে আরও জোরে কেঁদে উঠলাম।
কিন্তু উনি আমায় থামাচ্ছেন নাহ, নির্লিপ্ত চাহনিকে কাতর করে আবারও বললেন

-পাষাণ মনটা কি তাও গলবে নাহ, একটা বার বুক জুড়ে শান্তি দেবে নাহ,ধরবে না জড়িয়ে?

এ কথায় কি ছিলো আমার জানা নেই। উদ্ভ্রান্তের মতো ঝাঁপিয়ে পরলাম উনার বুকে, এতোদিনের সব ধৈর্য সংযম ভেঙে চোখের সমস্ত বাধ ভেঙে দিলো। সশব্দে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। এক হাতে আমার কোমর, আরেক হাতের পাঁচ আঙুল আমার চুলে চিড়ুনির মতো গলিয়ে দিয়ে আকঁরে ধরলো মেঘালয়। যেনো পারেনা চামড়া ভেদ করে বুকের ভেতর মিশিয়ে নিতে।

কতখানি সময় কেঁদে উনার বুক ভিজিয়েছি জানা নেই, উনিও পরম আবেশে জড়িয়ে রেখেছেন আমায় বুকের মাঝে। দু’হাতের আঁজলে আমার মুখ খানা নিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখ জোড়ায় পরপর তিনবার ওষ্ঠদ্বয়ের স্পর্শ মেখে দিলো। দুহাতে আমার চোখের পানি মুছে বললেন

-হুসস,আর কাঁদে নাহ।

আমি এতক্ষণ যেনো ঘোরের মধ্যে ছিলাম,নিজের অবস্থান বুঝতে পেরেই ছিটকে সরে এলাম। আমায় এমন অপ্রস্তুত দেখে মুচকি হেসে আবারও গাড়ি চালানো শুরু করলেন। সারি সারি বিল্ডিং, ভবন পারি দিয়ে আধা ঘণ্টা পার করে গাড়ি থামালো এক নদীর পারে, নিজে আগে নেমে এপাশে এসে দরজা খুলে দাঁড়ালেন। আমি বেশ কৌতূহল নিয়ে বের হয়ে আশপাশ পর্যবেক্ষণ করছি। এই জায়গা টাই তো কখনো আসা হয়নি। ছোটো খাটো একটা নদীই বলা চলে। তার পাশ দিয়ে চলে গেছে সরু একটা রাস্তা, আশে পাশে ছোট জন চারেক বাচ্চারা খেলছে।

-এসো

বলেই আমার হাতটা মুঠোবন্দি করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। কাঠের বেশ চওড়া একটা বেঞ্চ পাতা। ওখানে গিয়ে নিজে বসে পাশে আমাকেও বসালেন

-এইটা আমার খুব পছন্দের গোপন একটা জায়গা

উনার কথায়,ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি, নদীর পারের এলোমেলো বাতাসে চুলগুলো খেলা করছে,ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে চেহারা টা।

-গোপন বলতে?

আমার প্রশ্নে বেশ হাস্যজ্বল চেহারায় বললেন

-এই জায়গা টা ছোট বেলা থেকেই আমার ভীষণ পছন্দের, যখনি মন খারাপ হতো এখানেই এসে একা বসে থাকতাম। এই জায়গা টার কথা কেও জানে না, প্রথম মানুষ তুমি যাকে সাথে করে এনেছি

বলেই আমার দিকে তাকালো, আমি চোখ ঘুরিয়ে এদিকে ওদিকে তাকালাম,,, স্বচ্ছ পানির বহমান ধারার পাশে সবুজে ভরা ছোট ছোট ঘাস,আর দাঁড়িয়ে থাকা গাছ গুলো ছবির মতোই সুন্দর। তার খানিকটা উপরেই বাবুইপাখির কিচিরমিচির শব্দ আর উড়াউড়ি। ক্রিংক্রিং শব্দে সাইকেল গুলো পাশ কাটিয়ে সরু রাস্তা ধরে চলে যাচ্ছে,অদূরেই গ্রামের কয়েকটি ছোট ছোট মাটির দেওয়াল করা বাড়ি দেখা যাচ্ছে, হয়তো রাস্তা টা গ্রামের দিকেই যাওয়ারই। বাচ্চাগুলোও হয়তো এই গ্রামের ই। আসলেই মন ভালো করার মতো জায়গা

-হঠাৎ আমায় আনলেন যে?

-প্রিয় জায়গায় প্রিয় মানুষ টার সঙ্গ রাখাটাই কি প্রত্যাশিত নয়?

উনার মুখ থেকে প্রিয় শব্দ টায় যেনো অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করলো।

-হাওয়াইমিঠাই খাবে নূর?

হঠাৎ উনার এহেন কথায়, মাথা তুলে তাকিয়ে বললাম

-এইখানে কোথায় পাবো?

-ওয়েট!!

বলেই উঠে গেলেন। সরু রাস্তা ধরে উনিও মিলিয়ে গেলেন। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই দুটো হাওয়াই মিঠাই এনে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বসলো।
হাওয়াইমিঠাই আমার খুব পছন্দের একটা জিনিস। মন ভালো করে দেওয়ার মতো। আমি প্রফুল্ল হেসে বললাম

-এটা কোথায় পেলেন

আমার হাসিতে মৃদু হেসে জবাব দিলেন

-গ্রামের ভেতরে যেতে শুরুতেই একটা দোকান আছে, খুব ভালো হাওয়ায় মিঠাই পাওয়া যায়, এরা এখান থেকে বানিয়েই শহরে বিক্রি করে।

দু’হাতে দুটো মিঠাই নিয়ে, উনার দিকে না তাকিয়েই খাওয়া শুরু করলাম,একবার এইটা থেকে আরেক বার আরেকটা থেকে, কতদিন পর যেনো খাচ্ছি। কিছুক্ষণ গপাগপ গিলার পরে মনে হলো, উনাকে একবার বলা উচিত ছিলো। সেই তো এনে দিলো একটা দিলেই পারতাম। বেশ কাচুমাচু মুখ করে বললাম

-আপনি খাবেন? আসলে আমিতো দুটোই এঁটো করে ফেলেছি

উনি অপলক চেয়ে থাকতেই আমার এক হাত ধরে ঝুঁকে এসে আমার হাত থেকেই একবার খেলেন। ঠিক আমি যেই জায়গা টা থেকে খেয়েছি সেখান থেকেই। বেশ লজ্জা লজ্জা লাগছে। এভাবে আমায় লজ্জা দেওয়ার কি ছিলো আজব, লোকটা ভীষণ পাজি, এর মাঝেই লোকটা ডান হাতের তর্জনী দিয়ে আমার ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা মিঠাই ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের মুখে নিলো।

আমি হা করে তাকিয়ে আছি, অবাক হবো নাকি লজ্জা পাবো ভাবতে পারছি নাহ। পুরো হ্যাবলাকান্তের মতো চেয়ে থাকা অবস্থাই গাল দু’টো গরম হয়ে আসলো। আমার লজ্জা আরেক ধাপ বাড়িয়ে দিয়ে ফট করে চোখ টিপে দিলো আমার দিকে চেয়ে
.
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৩৩

গাড়িটা এসে থামলো চৌধুরী ভিলার সামনে। ভার্সিটি থেকে বেরিয়েছিলাম দুপুরের দিকে, এখন সন্ধ্যা পার হয়ে রাত নেমেছে। টিমটিমে তারার আলো গ্লাসের ফাঁকেও উঁকি দিচ্ছে। মাথা নিচু করে বসে আছি চুপচাপ। উনার দিকে তাকাতেও কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। অনবরত আঙুলের সাথে ওড়না পেচিয়ে যাচ্ছি। খানিক চুপ থেকে উনার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললাম

-তাহলে আসি?

উনার যেনো পছন্দ হলো না কথাটা, বেশ অসহায় মুখ করে বললেন

-এখনি চলে যাবে?

উনার এরূপ আচরণে আমার লজ্জা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এখন উনার দিকে তাকালেও আমার ভেতর টা ধক করে ওঠে। লোকটা কথায় কাজে নানা ভাবে আমায় বিব্রত করে, এই যে কোনো কারণ ছাড়াই অপলক চেয়ে থাকে,উনি কি বোঝেন না এতে আমার কতটা অস্থিরতা শুরু হয়।
মৃদু স্বরটা বজায় রেখে আবার বললাম

-বাড়ি এসে গেছে

-আরেকটু থাকো নূর

এহেন কথায় থতমত খেয়ে গেলাম। পেটের ভিতর কেমন সুরসুরি দিচ্ছে। লোকটা দিন দিন এতটা বেহায়া কেনো হচ্ছে। কারণে অকারণে কাছে রাখতে চাই,উনার সামনে থাকলে যে আমি একুল ওকুল ভুলে বসি তা কি উনি বুঝেন নাহ

-রাত হয়ে গেছে, এখন যাওয়া উচিত

বেশ কিছুকাল চেয়ে থেকে সীট বেল্ট খুলতে খুলতে বললেন

-এখানেই দাঁড়াও তবে, আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।

এখন আবার দাঁড়াতে কেনো হবে, আমি তো পারলে দৌড়ে পালিয়ে বাচি।

-আ আম দাঁড়াতে কেনো হবে, আমি একাই যেতে পারবো

-যা বলেছি তাই করবা,এক চুল যদি নড়েছো বস্তায় ভরে আমার ঘরে সোপিচ বানিয়ে রাখবো

এমন গমগমে গলা শুনে ধপ করে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালাম। এই লোকটা জীবনে শুধরাবে নাহ জীবনেও নাহ। এই ভালো তো এই রা’ক্ষস। এতক্ষণ তো কি সুন্দর বুলি ছড়াচ্ছিলো। এখন আবার শুরু হলো জ’ল্লাদি পানা। আস্তো গোমড়া মুখো লোক।
আমার বিড়বিড়ানির মাঝেই লোকটা গাড়ি পার্ক করে হাজির হলো।

-চলো

বলেই আমার এক হাত ধরে হাঁটা ধরলো। আরে এটা তো বাড়ি এভাবে হুটহাট হাত ধরলে কেও দেখলে কি ভাববে। আমি হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করে বললাম

-হাতটা ছাড়ুন, আমি তো একাই যেতে পারবো।

হাঁটা থামিয়ে আমার দিকে ফিরে বললো।

-ছটফট করা বন্ধ করে চুপচাপ হাঁটো,না তো ছটফটানি কি করে বন্ধ করতে হয় আমার জানা আছে।

বলেই আবারও সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। লোকটার মুখের কোনো ব্রেক নেই। একটা মানুষ এতোটা লাগাম ছাড়া কি করে হয়। আল্লাহ কোনদিন মাটি ফাঁক করবেন জানি নাহ আমি ঢুকে পরতে চাই। এভাবে হাত ধরে রাখায় আর নির্লজ্জের মতো কথায় আমার গাল গরম হয়ে আসছে। দু হাতের মৃদু কম্পন অনুভব করছি।

-হাত ধরেছি বলেই এতো কাঁপা-কাঁপি অন্য কোথাও ধরলে কি করবে

অন্য কোথাও! ছিহ,, লোকটা এতো বেহায়া, আর কতো লজ্জা পেতে হবে আমায় উনার সামনে,খোদা তুমি কি দেখতে পাচ্ছো নাহ।
গরম হওয়া গাল নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি চার তালায় এসে পরেছি। হাফ ছেড়ে বাচলাম যেনো। এক ছুটে দরজার সামনে গিয়ে পরপর তিনবার বেল বাজালাম। আড়চোখে পাশে তাকিয়ে দেখি লোকটা আরামসে দু হাত ভাজ করে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উফফ এই বলদ এখনো দরজা খুলছে নাহ, ধাপ ধাপ করে কয়েকবার দরজা ধাক্কা দিলাম। তাও কোনো সারা শব্দ নাই। আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি লোকটা এখনো আগের ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে। চোখে মুখে কেমন শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। শুকনো ঢক গিলে বললাম

-আপনি এখনো যাচ্ছেন নাহ কেনো।

বেশ দায়সারা ভাবে এক ভ্রু উচিয়ে বললো

-আমার ইচ্ছা, এনি প্রবলেম?

উনার কথার উত্তর না দিয়ে আবারও বেল বাজালাম। এই ভম্বল নিশ্চিত ঘুমিয়েছে, আজকে ওর মরন ঘুম ছুটাবো। একবার দরজা টা খুলুক ওরে দুই ঘন্টা পানিতে চুবিয়ে রাখবো। রাগে আমার মেজাজ টা খারাপ হচ্ছে৷ তার উপর এই লোকটা এভাবে তাকিয়ে আছে

-কি সমস্যা আপনার, এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? যান ঘরে যান

-আমি কোথাই দাঁড়িয়ে থাকবো সেটা আমার ইচ্ছে, আমার বাড়ি। তোমার পারমিশন নিতে হবে নাহ

-আপনার বাড়ি আপনি যেখানে খুশি দাঁড়িয়ে থাকুন শুয়ে থাকুন আমার কিছুই নাহ,আমার সামনে থেকে সরুন। একদম এভাবে তাকাবেন নাহ আমার দিকে

-কিভাবে তাকিয়েছি?

-ওই যে ওভাবে

-কিভাবে

-আমি জানি নাহ, আপনি এক্ষুণি এখান থেকে যান,নয়তো আমি কিন্তু চিল্লাবো

এবার বুকে ভাজ করা হাত নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। ধীর পায়ে দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন

-তাই? তবে চিল্লাও আমিও দেখি তুমি কতো জোরে চিল্লাতে পারো

উনি এগোচ্ছেন আর আমি পিছাচ্ছি, কেমন বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ইয়া মা’বুদ এ যাত্রা বাচিয়ে দাও আর কখনো এই লোকটার সামনে পরবো নাহ।
এগিয়ে এসে ঠিক আমার সামনে বরাবর দাঁড়ালো

-আ আপনি এগিয়ে আসছেন কেনো

আমতাআমতা করে আমি জিগাসা করতেই, বাকা একটা হাসি দিয়ে বললো

-তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো কেনো

পেছাতে পেছাতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে, লম্বা চওড়া লোকটা এসে একদম সামনে দাঁড়ালো। এক হাত আমার মাথার কাছে আরেক হাত কোমরের কাছে দেওয়ালে রেখে ভর দিয়ে ঝুঁকে এলো। ভয়ে থরথর করে কাঁপছি। এখন আমার কি হবে। মেঘালয় কাছে আসলেই আমার বুকে এলোপাথাড়ি ঝড় শুরু হয়, হাত পা সমানতালে কাঁপছে।
মেঘ এক হাত উচিয়ে পালকের কপালে ঘামে লেপ্টে থাকা চুল সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিলো। চোখ বন্ধ করে রাখা মুখটা দেখে স্মিত হেসে সারা মুখে ফুঁ দিলো।

মেঘের উষ্ণ শ্বাসে কেঁপে উঠে টিপটিপ করে চোখ খুলে তাকালাম। লোকটা আরও কাছে এসে আমার গালের সাথে গাল ঠেকিয়ে খোঁচা খোঁচা দাড়ির ঘষা দিয়ে চট করে সরে গেলো।
আর তখনি খট করে দরজা খুলার শব্দ হলো। আমি এখনো বুঝতে পারলাম না কি হলো। শুধু শরীর জুড়ে বিদ্যুতের বেগে তরঙ্গ বয়ে গেলো। পাথরের মতো জমে আছি, গালে হাত স্থির দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় পাশ থেকে ধাক্কা লাগতেই ধ্যান ভাংলো

-আফু,এসেছিস? আমি আরও কখন থেকে ফোনে ট্রাই করছি তোকে। আসলে আমি রান্নাঘরে ছিলাম তো,বেল বাজার শব্দ শুনতে পাইনি। বেশ কয়েকবার শব্দ হওয়ার পর মনে হলো কেও দরজা ধাক্কাচ্ছে তাই দেরি হয়ে গেলো, সরি রে

ওর কথাও এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কানে বেরিয়ে যাচ্ছে। এবারো আমার জবাব না পেয়ে শিমু আমার বাহুতে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললো

-কি হলো আফু, এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো

শিমুর ডাকে হুস ফিরতেই আশে পাশে তাকালাম। নাহ মেঘালয় নামক মানুষ টা এখানে কোথাও নেই, কয়েক মুহূর্তেই গায়েব হয়ে গেলো! না আমার মনের ভুল ছিলো?

আমার ভাবনার মাঝেই শিমু জোরে বলে উঠলো

-তুই কি ভেতরে আসবি নাকি সারারাত ওখানেই কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে আছে?

শিমু চেঁচানিতে ঘোর ভাংলো। ওর দিকে তাকিয়ে তেড়ে বললাম

-একদম চেঁচিয়ে কথা বলবি না বেয়াদপ,আমি কানে কালা নই৷ সবগুলো এক একটা আপদ। আমায় পাগল করে তবেই এদের শান্তি হবে

বলেই ওকে সরিয়ে গটগট করে রুমের দিকে হাটা দিলাম। হাতের ব্যাগ টা থপ করে রেখেই ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দিলাম। আপাতত মাথা টা ঠান্ডা করা খুব দরকার, ছোট্ট মাথাটায় এতো চাপ নিতে পারছি নাহ….

_______________________________

রাস্তার পাশ দিয়ে হাতের ফাইল গুলো নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছে ধ্রুব। আজকে গরম টা বেশ পরেছে,বর্ষার আগমনে এমন হুটহাট ভ্যাপসা আবহাওয়া লেগেই আছে। আজকে গাড়িটাও সার্ভিসিং এ দেওয়া। রাস্তায় জ্যামে আধ ঘন্টা বসে থেকে রিকশা থেকে নেমে ফুটপাত ধরেই হাঁটা ধরেছে।
হুট করেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে, নিজের ফাইলগুলোর সাথে আগন্তুকের হাতের বই গুলোও পরে গেলো

-এই সরি সরি সরি, আমি খেয়াল করিনি। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।
বলেই দুহাতে বইগুলো তুলে সামনে ধরে বললো

-এই যে আপনা…

পুরোটা শেষ না করেই আবার বললো

-আরে আপনি!

-হ্যাঁ না মানে জ্বি

থতমত খেয়ে শিমু উত্তর দিলো। সে ভাবতেও পারেনি ধ্রুবের সাথে এভাবে হুট করে দেখা হয়ে যাবে, ট্যুর থেকে ফেরার পর আর তাকে দেখা যায়নি। নিজের অজান্তেই শিমুর মন বার কয়েক চেয়েছে শ্যাম মুখ খানা দেখতে।কিন্তু আজ এভাবে সামনে দেখে যেনো মাথা টা গুলিয়ে গেছে

-আপনি এই দুপুরে, একা ফিরছেন যে?

-আসলে পালকের কোনো কাজ আছে নাকি তা বলেই ভার্সিটিতে থেকে গেলো, আমি আর আরশি আসছিলাম ওর বাড়ির গলি আসায় ওউ চলে গেলো, তাই একাই ফিরছি আরকি

ধ্রুব গাল প্রসারিত করে বরাবরের মতোই চমৎকার হাসি দিয়ে বললো

-তাহলে তো ভালোই হলো, আপনাদের বাড়ির ওদিকেই যাচ্ছি চলুন একসাথে যাওয়া যাক।

শিমু সৌজন্য হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে হাঁটা ধরলো। আর পাশাপাশি ধ্রুব

-আপনার আপত্তি না থাকলে আমি কি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি?

ধ্রুবের এমন আবদারে শিমুর কেনো জানি ভেতরে ভেতরে অদ্ভুত ভালো লাগে, কণ্ঠের খাদ সমান রেখেই সম্মতি দিয়ে বলে

-হ্যাঁ অবশ্যই, আপনি তো আমার অনেক বড়ো তুমি করে বলাটাই স্বাভাবিক, এতে আপত্তি থাকার কি আছে

শিমুর সম্মতিতে ধ্রুব খানিকটা সহজ হলো। যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো। নিজের চেয়ে এতো ছোট বয়সী মেয়েটাকে আপনি বলতে কেমন বেমানান লাগে,আবার তুমি করে বলতেও দ্বিধা লাগে।

-থ্যাংকস, তবে তুমি চাইলে আমাকেও তুমি করে বলতে পারো

-না না,আমি আপনিতেই সহজ বোধ করি।

হঠাৎ করেই হেসে দিলো ধ্রুব, এমন অহেতুক হাসায় শিমু বেশ লজ্জিত বোধ করে তাকালো,সে কি ভুল কিছু বলে ফেলেছে। ধ্রুবের দিকে তাকিয়েই দেখে ছোট ছোট দাড়ি ভর্তি গাল দু’টো প্রসারিত হয়ে আছে, কাধ আর গলার দিকে ব্রোঞ্জ রঙের শার্ট টাই মৃদু ঘামের ছোপ। গালের বাম পাশে একটা টোলে যেনো হাসিটা আরও বেশি মারাত্মক লাগছে। তাকিয়ে থাকতে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে। শিমুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধ্রুব হাসি থামিয়ে ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞাসা সূচক ইশারা করে ঘাড় নামিয়ে বললো

-বিব্রত করে দিলাম বুঝি?

__________________________

-ঠিকাছে,তবে তাই হবে

-তুমি সিউর তো কাজে দেবে প্ল্যান টা?

-হ্যাঁ সিউর আমি। আপনি শুধু যেমন বলেছি তেমনটাই করুন

-থ্যাংকিউ,থ্যাংকিউ সো মাচ আমি জানতাম তুমিই হেল্প করতে পারবে

-ধন্যবাদ বলার কিছুই নেই৷ এটাতো আমার জন্যেও অনেক বেশি খুশির। আচ্ছা আজকে তাহলে আসি, বেশ দেরি হয়ে গেছে।

-ওকে, বাই

বিদায় জানিয়ে আমিও চলে এলাম। শিমু আর আরশি কে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি৷ আমার একটু আলাদা দরকার ছিলো। ব্যাপারটি গোপন নয় তবে জানানোর সঠিক সময় এখনো আসেনি।

দুপুরের রোদে গরম টা আরও তিন ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে, রাস্তা ঘাটে যেনো তাপ ছড়াচ্ছে রোদে। এর মাঝে আমি একা বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি।। আজকে ফিরতে এমনিতেই লেট, তার উপর ভার্সিটি থেকেও বেশ দূরে জায়গা টা। মোট মিলিয়ে দ্রুত ফিরতে হলে বাসে করে ফেরাটাই উত্তম। যদিও এই গরমে বাসে ভ্রমণ মানে খুব বাজে অবস্থা, তবুও কিছু করার নেই।
সাত মিনিট অপেক্ষার পরেই বাস এসে থামলো। চট করে উঠে পরলাম। যদিও বাসে খুব বেশি ভীড় নেই,কিন্তু সীট একটাও অবশিষ্ট নেই। অগত্যা আমাকে দাঁড়িয়েই যেতে হবে। বাসের মাঝ বরাবর গিয়ে বৃদ্ধ মহিলার সীটের পাশে দাড়ালাম।
বাসের ঝাঁকুনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। যেই রাস্তা এক ধাক্কায় যেনো ছিটকে যাচ্ছি।
শক্ত করে সীট টা আকঁরেই ধরেও লাভ হলো না এক ঝটকায় ছিটকে গেলাম।
তবে বাসের ঝাঁকিতে না, কোমরে কারো হাতের দৃঢ় বন্ধন অনুভব করছি। আমাকে পেছন থেকে টেনে সীট থেকে সরিয়ে নিজের একদম কাছে ঘেষে দাড় করিয়েছে, ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া। মুখটা মাস্কে ঢাকা থাকলেও চিনতে এক বিন্দু পরিমাণ সময় লাগেনি। এই গরমেও সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে এলো।
এই লোকটা এখানে কি করে এলো!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

হীডিংঃ গল্পের বিষয়বস্তু অনুযায়ী বাক্যালাপের একটা অংশ আজকে অস্পষ্ট রেখেছি,সময় মতো সবটা ক্লিয়ার করে দেবো৷ ধৈর্য ধরে পড়বেন আশা করি।
হ্যাপি রিডিং🌼

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here