তুমি আসবে বলে পর্ব -৩৪+৩৫+৩৬

#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৩৪

এক হাত আমার কোমরে আবদ্ধ রেখেই আরেক হাতে ফোন চালিয়ে যাচ্ছে, মাস্ক পরা মুখটাই গাম্ভীর্যের ছাপ স্পষ্ট। একদম পেছনের দিকের সীটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা এখানে কি করে আসলো? দ্যা ওয়ান এন্ড অনলি সিরিয়াস চৌধুরী এখানে? বাসে? মার্সিডিজ রেখে বাসে চড়েছে? ব্যাপার টা ঠিক হজম হলো নাহ। এর আমার ভাবনার মাঝেই ফোনটা পকেটে রেখে আমার দিকে তাকালো। নীলাভ চোখ জোড়ার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একটু বেশিই অপ্রস্তুত আগছে। হাত ছাড়িয়ে আলগোছে সরে আসতে নিলেই বাসটা চরম বেই’মানি করলো। অসমতল রাস্তায় বাঁক টানতে নিলেই ভীষণ জোরে ঝাঁকি লেগে এক ধাক্কায় ছিটকে যেতে নিলেই বলিষ্ঠ হাতের বন্ধনের দৃঢ়তায় আটকে গেলাম। হ্যাচকা টানে আমায় বিদ্যুতের বেগে কাছে টেনে নিলো মেঘ। ভয়ে দু’হাতে খামচে ধরেছি। পাশ থেকেই জন দুয়েক ভদ্রলোক বেশ রাগ করলো ড্রাইভারের এহেন অসতর্কতার কারণে।

মেঘালয়ের শরীরের সাথে মিশে থাকার কারণে গ্রীষ্মের উত্তাপের চেয়েও গরম নিঃশ্বাস স্কন্ধদেশে শু’লের মতো ঢুক’ছে যেনো প্রতিটি লোমকূপে। তড়াৎ বেগে সরে যেতে নিলাম। তবুও হাতের বন্ধন আলগা না হওয়ায় সরে যেতে ব্যার্থ হলাম। মেঘ আলগোছে আবারও আমায় কাছে টেনে উনার বুক ঘেঁষে দাঁড় করালেন।
সীট টা একদম শেষের সারির। একটা সীটের সাথে হেলান দিয়ে তার সামনের সীটে পা বাধিয়ে আছে মেঘ। আর দু পায়ের মাঝে আমায় দাঁড় কয়ে রেখেছেন। আমি হতবাক হয়ে গেলাম উনার এভাবে আমায় অন্যের স্পর্শ থেকে সরিয়ে রাখার কৌশল টাই।

আমরা মেয়েরা তো প্রথম আশ্রয় পায় বাবা নামক মানুষটির ছায়ায়,যার সাথে থাকলে যেনো শত বিপদকেও ছো মেরে উড়িয়ে দেওয়া যায়, যে মানুষটাই আমাদের বাইরের দুনিয়ার কলু’ষিত রূপটা থেকে প্রতিটি ক্ষণে আগলে রাখেন,ভরা রাস্তা পার করিয়ে দেওয়া,ভীড়ের মাঝে এক হাতে আগলে নেওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতাই তো বাবা, আর দ্বিতীয় হলো সেই মানুষটি যে বাবার পরে আমাদের আশ্রয়স্থল হয়,যে জনমানব ভর্তি রাস্তায় ঠিক বাবাদের মতোই হাতটা ধরে নেয়,যেই হাত টা আমাদের এক বুক ভরসা দেয়,প্রশান্তি দেয়। মেঘের কাছে আমি সেই ভরসাটা পাই,প্রশান্তি পাই। অদ্ভুত নিশ্চয়তা পাই।
আমি বরাবর চেয়েছি আমার মনের মানুষটির মাঝে যেনো বাবার মতোই এক আকাশ ভরসা পাওয়া যায়,শত ভীড়েও সে আমায় আগলে নিতে পারে ঠিক যেমন মেঘ নিলো। হঠাৎ করেই অদ্ভুত প্রশান্তির হাওয়ায় শরীর জুড়ে গেলো। অসম্ভব ভালো লাগা ছেয়ে গেলো লোকটার প্রতি।

মৃদু ঝাঁকুনিতে বাস এগিয়ে চলেছে, জানালা দিয়ে আসা এলোমেলো হাওয়ায় চুল গুলো ছড়াছড়ির খেলা জুড়েছে শুভ্র কপালে। জাম কালার শার্ট এর কলার টাও মৃদু দোল খাচ্ছে এমন বাতাসে। লোকটা এতো সুন্দর কি করে! সৃষ্টিকর্তা যেনো সব মায়া আর ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছে চেহারাটার মাঝে, দিন দিন আমি আসক্ত হয়ে পরছি এই চেহারায়, যা না দেখলে আমার বক্ষপিঞ্জর অজানা ব্যাথার ব্যথিত হয় এক মুহুর্তেই শতবার।
আমায় এভাবে অপলক চেয়ে থাকতে দেখে মাস্কে ঢাকা মুখেই ভ্রু জোরা উচিয়ে জিজ্ঞাসা সূচক ইশারা করলো। আমি মৃদু হেসে ঘনঘন এদিক ওদিক মাথা নাড়িয়ে বুঝালাম কিছুই নাহ। সামনের লোকটার চোখ জোড়া ছোট হয়ে এলো চোখের দু পাশে পরা ভাজ গুলোই তার মাস্কে ঢাকা মুখের অমায়িক হাসিটা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলো। কেনো হাসেন উনি, জানেন না যে এই হাসিতে আমি বারংবার ম’রি,হাজার বার ঘা’য়েল হই।
ভেতরের অজানা আমিটা হুট করেই ভীষণ জেদ ধরলো, সে মাস্কের আড়ালের মুখটা নয় স্পষ্ট হাসি দেখতে চাই তার প্রাণপুরুষের।

বাসটা কিছুক্ষণের জন্য থামতেই পেছন থেকে লোকজন নেমে ভীড় কমিয়ে দিলো,গুটি কয়েকজন ছিলো তারাও ফাঁকা জায়গা পেয়ে সামনের দিকটাই গিয়ে বসলো। এই সুযোগ টার মোক্ষম ব্যবহার করলাম আমি। এই গরমেও উনার মাস্ক পরার কারণ টা আমার স্পষ্ট জানা। বিভিন্ন নিউজ রিপোর্ট আর ম্যাগাজিনে চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির সার্ভে প্রায়ই ছাপার কারণে তার মুখটা বেশ সুপরিচিত, তাই অযথা জনসম্মুখে এমন লোকাল বাসে প্রশ্নের সম্মুখীন না হতে চাওয়াটাই মুল কারণ মুখ ঢাকার।
কিন্তু আমিতো তা মানবো নাহ,দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে আরেকটু কাছে সরে এলাম। দুহাত উচিয়ে আলতো করে মুখের মাস্ক টা খুলে নিলাম। উনি চোখ রাঙাতেই খিলখিল করে হেসে দিলাম যেনো মহাসাধ্য সাধন করেছি, আশপাশে সাবধানী নজর বুলিয়ে বেশ জোরে চেপে ধরলো কোমর টা মুখ টা ঝুঁকিয়ে এনে সারা মুখে ফুঁ দিয়েই পিছিয়ে নিলো মুখ। লজ্জায় ঘাড় নিচু করে রেখেছি। উফ আমি জানতাম লোকটা বেহায়া তাও যে কেনো নিজে থেকেই পাকনামি টা করতে গেলাম, সামান্য মাথা টা উচিয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখি চোখ দু’টো ছোট ছোট করে বাকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। এক কান থেকে ব্লুটুথ হেডফোন টা খুলে আমার কানে গুঁজে দিলো,, মৃদু সুরে বাজছে সেখানে

“Tu ki jane pyaar mera, main karoon intezar teraa…tu dil tu yu jaan meri,,jan merii…main tenu samjhawan ki,nah tere bina lagda ji”

যেনো গানের শব্দ গুলো মেঘ নামক পুরুষটির কণ্ঠেই বাজছে আমার কানে,,, এতো! এতো ভালো কেনো লাগছে। তীব্র গরমের দুপুরে ভ্যাপসা হাওয়ার এই লোকাল বাসটাও যেনো অদ্ভুত সৌন্দর্যের প্রতিমা লাগছে। এতো ভালো কেনো লাগছে! প্রেমে পরলে কি এতো ভাল্লাগে! ভালোবাসা কি সত্যিই এতোই সুন্দর?!

~

-উফ এই পালক ফোন কেনো ধরছে নাহ,কই মরলো শয়তান টা, এখন আমি কি করবো। আমার কি করা উচিত? কফি বানানো উচিত, হ্যাঁ কফিই তো খেতে চেয়েছে এতো নার্ভাস হওয়ার কি আছে, কফিই তো

নিজের সাথেই একা একা বকবক করছে শিমু অনবরত, ধ্রুব তার সাথে চৌধুরী ভিলাতেই এসেছে, মেঘালয় তাকে ডেকেছিলো কোনো এক ফাইল নিতে। কিন্তু তাকে ডেকে সে নিজেই হাওয়া, ধ্রুব বার কয়েক ফোন দেওয়ার পর মেঘালয় থেকে টেক্সট এসেছে, তাকে ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করতে বলে। শিমুও সৌজন্যের খাতিরে ধ্রুব কে বলেছিলো মেঘালয় না আসা অব্দি সে তার ঘরেই বসতে পারে, বলে তো দিয়েছে এখন পালক ও ফিরছে নাহ। লোকটার সামনে দাঁড়ালেই কেমন মাথা টা গোলমেলে হয়ে যায়। এখন ভর দুপুরে একটা মেহমান আসলে তাকে কিছু তো অফার করা উচিত, চা কফির কথা জিজ্ঞাসা করাই ধ্রুব বলেছে এই গরমে কোল্ড কফি হলে মন্দ হয়না। এখন রান্নাঘরে এসে চিরচেনা কফি বানানোর পদ্ধতি টাও যেনো ভুলতে বসেছে।

সাত পাচ ভাবা বন্ধ করে, ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে দুটো গ্লাস নিয়ে কফি বানানো শুরু করলো।

-আমি হেল্প করবো

পেছন ঘুরেই দেখে ধ্রুব এক হাতে কিচেন কেবিনেটে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার পেছনেই।

-আরে না না, আমিই করে নিতে পারবো আপনি কেনো কষ্ট করে আসতে গেলেন

-কষ্ট, কিসের কষ্ট? একা একা বসে থাকার চেয়ে ভাবলাম তোমাকে হেল্প করি গল্পও করা হয়ে যাবে। আমি কিন্ত কফি বেশ ভালো বানায়।

-আমি ব্যস্ত হবেন নাহ আমিই পারবো

-আরে একবার সুযোগ দিয়েই দেখো নাহ, ভালো না লাগলে বলিও

বলেই শিমুকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই কফি বানাতে শুরু করলো ধ্রুব। শিমু বারণ করা সত্ত্বেও শুনলো নাহ। বেশ দক্ষতার সাথেই পাঁচ মিনিটের মধ্যেই কফিটা বানিয়ে গ্লাসে দুটো স্ট্র দিয়ে বসার ঘরে আসলো।
শিমুও পেছন পেছন এসে বসলো সোফায়।
ধ্রুব একটা গ্লাস শিমুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো

-আফটার ইউ

শিমু একটু খেয়ে বললো

-বাহ,খুব ভালো কফি বানাতে পারেন তো!

-খারাপ হলেও কি বলবে নাকি

-সত্যিই ভালো হয়েছে আপনি টেস্ট করে দেখুন।

শিমুর কথায় ধ্রুব এক চুমুক খেয়ে বললো

-হুমম,ভালোই হয়েছে, আমি বরাবর ই ভালোই বানায় তবে আজ একটু নার্ভাস হয়ে গেছিলাম আরকি

-কেনো।

-আসলে এতোদিন তো শুধু নিজের জন্যেই বানিয়েছি, আজ কোনো মেয়ের জন্য বানালাম,একটু তো হেসিটেশন লাগেই তাই নাহ

বলেই হেসে দিলো ধ্রুব। এহেন কথায় শিমুও হেসে দিলো শব্দ করে বেশ, ধ্রুব হাসি থামিয়ে বললো

-প্রিটি স্মাইল

___________________

বাস স্ট্যান্ডে এসে নামলাম দুজনে। মেঘ আমার এক হাত ধরে রাস্তা পার করে হাত উচিয়ে একটা রিকশা থামিয়ে আমায় বললো

-উঠুন ম্যাডাম

-রিকশাতে যাবো? দুজন একসাথে?

-না তো কি দুজন দুই রিকশা নিয়ে যাবো

-না মানে আসলে…

-চুপ, আসলে নকলে পরে চুপচাপ রিকশাতে ওঠো,নাকি চাচ্ছো আমি কোলে করে উঠাই

উনার ধমকে সাথে সাথে রিকশায় উঠে বসলাম। এই লোক দিয়ে একটুও বিশ্বাস নেই, ভরা বাসে যে কোমর ঝাপতে ধরতে পারে, সে রাস্তার মাঝে কোলে তুলেও নিতে পারে।
আমি উঠে বসার পরপর ই মেঘ উঠে বসলো পাশে। উনার দিকে ফিরে বললাম

-কথায় কথায় এভাবে কোলে তুলে নেওয়ার ধমকি দেন কেনো হ্যাঁ, আমি কি ছোট বাচ্চা

-তুমি তো ইচ্ছে করেই ত্যাড়ামি করো যাতে আমি কোলে নেওয়ার কথা বলি।

সামনের দিকে তাকিয়েই রোবটের মতো উত্তর দিলো ব্যাটা খ’বিশ। ভ্রু কুচকে বেশ তেজ দেখিয়ে বললাম

-সবাইকে কি নিজের মতো নি’র্লজ্জ ভাবেন নাকি যে এসব ভাববে। যখন তখন আমায় এভাবে তুলে নেবো বস্তায় ভ’রে নেবো এমন হুম’কি ধম:কি একদম দিবেন না বলে দিলাম। আমি আপনাকে মোটেও ভয় পায়না

-আচ্ছা! পাও না ভয়

বলেই আরও কাছে সরে এলেন, আমি উনার দিকে তাকিয়ে দেখি আবারও কালকে রাতের মতো ডে’ভিল স্মাইল টা দিয়েছে, নির্ঘাত কিছু একটা অ’ঘটন ঘটাবে এই লোক,আমি হাড়ে হাড়ে চিনি এই সিরিয়াস চৌধুরীকে।
শুকনা ঢক গিলে সরে গেলাম খানিকটা। উনি আরও আমার দিকে সরে এলো। এ কি জ্বা’লা। আচ্ছা জ্বা’লানো জ্বা’লাচ্ছে আমায় এই লোকটা, সরতে সরতে একবারে কিনারা ঘেঁষে আসতেই এক হাতে দিয়ে কোমর ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে নিলেন।
আমি উনার হাতটা এক ঝামটা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললাম

-এভাবে বেশ’রমের মতো হুটহাট একটা মেয়ের কোমর জড়িয়ে ধরতে লজ্জা লাগে না আপনার

-জড়িয়েই তো ধরেছি,আর কিছু তো করিনি এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে ,, আর তাছাড়াও এখনই তো সব লজ্জা শেষ করে ফেললে হবে নাহ, কিছু বাচিয়েও রাখো,ইন ফিউচার না তো ধার করেও পাবে নাহ

এমন বেহুদা কথা শুনে আমার কি বলা উচিত আমি জানি নাহ। এই লোকটা মেঘালয় চৌধুরী হতেই পারে নাহ,আমি যাকে চিনতাম তাকে বো’ম মার’লেও একটা কথা বলানো যেতো নাহ,আর এই লোকটা যা নয় তা বলে,তাও লাগাম ছাড়া

-আমার ভবিষ্যতের চিন্তা আপনাকে করতে হবে নাহ,আপনি নিজের টা ভাবুন

-নিজের টাই তো ভাবলাম। এই যে সরে সরে একদম কিনারা ঘেঁষে যাচ্ছিলে, এমনিতেই তো লিলিপুট একটা মানুষ। পরে দেখা গেলো ঠা’স করে পরে গিয়ে মাজা ভে’ঙে বসে থাকলে সেই আমাকেই তো কোলে নিয়ে দৌড়াতে হবে ষাট কেজি

কিহ,আমি ষাট,আমার মতো মানুষের ষাট কেজি কি করে বললো লোকটা

-এই, এই আপনাকে বলেছি না একদম ষাট কেজি বলবেন নাহ আমায়, আমার ওজন পঞ্চাশ ও পার হয়নি। সমস্যা আপনার তাই আপনি পঞ্চাশ কেজির ও কম ওজনকে ষাট কেজি বানাচ্ছে।

আমার কথায় মেঘ ঘাড় কাত করে তাকালো,বাকা হাসিটা দিয়ে মাথা টা ঝুকিয়ে এনে,নাকে একটা ঘষা দিয়ে বললো

-আমার সমস্যা আছে কি নেই সেটা সময় আসলেই বুঝিয়ে দেবো, তখন হাজার বারণ করেও কিন্ত কোনো লাভ হবে নাহ, আই ওন্ট লিসেন এ ওয়ার্ড।

এমন বেহা’য়াপনা কথা শুনে লজ্জায় আমি কোন রঙ ধারন করবো জানি নাহ, একটা মানুষ কি করে এতোটা লাগাম ছাড়া হয় জানিনা। মামনী কি খেয়ে পেটে ধরেছিলো এই লোকটাকে। লজ্জা পেলেও তা দমিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বললাম

-খবরদার আমার সাথে ফালতু মজা করবেন নাহ একদম, নি’র্লজ্জ বেহায়া পরপুরুষ কোথাকার।

আমার কথা শুনে চোখ ছোট করে তাকিয়ে বললো।

-জানো নূর, রাগলে তোমায় একদম দুই ফুটের ডাইনাসোর লাগে।

রাগী রাগী মুখ করে রাখতে চাইলেও কিছুতেই পারলাম নাহ। উনার এরূপ কথায় না চাইতেই ফিক করে হেসে দিলাম। এই লোকটার সাথে থাকলে আর কি শুনতে হবে খোদা জানে
.
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব: ৩৫-৩৬

অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছে আরশি, ভেতরটাই তার হাজারো গুমোট অনুভূতিতে জর্জরিত। নিজের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর প্রতি তার এক আকাশ সমান অভিমান জমেছে যা তার ভেতরের প্রদাহ কে তিন গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
সেদিন ভার্সিটি থেকে চলে আসার পর, পালকের সাথে দেখা করতে তার বাড়ির দিকেই যাচ্ছিলো। রাস্তায় পালক আর আরাবকে এক সাথে দাঁড়িয়ে দেখে রিকশা থামিয়ে দাঁড়ালে আরাবের পালকের সাথে হেসে হেসে কথা বলা ওকে জোর করে নিজের সাথে গাড়িতে নেওয়া,সবটাই দেখেছে। সেদিন কেমন জানি একটা চিনচিনে ব্যাথা হয়েছিলো তার বক্ষস্থলে। কই আরাব তো তার সাথে কখনো ওভাবে হেসে হেসে গল্প করেনি,কথা বলেছে তবে তার পরিসর নিতান্তই ক্ষুদ্র। পালকের সাথে কথা বলার সময় যেভাবে সহজভাবে হেসে হেসে গল্প করে আরশির সাথে তা কখনো করেনি আরাব,আরশির সামনে এলে কেমন অপ্রস্তুত হয়ে যায় ছেলেটা। সেদিন পালকের বাড়ি না গিয়ে রিকশা ঘুরিয়ে আবারও বাড়ি ফিরে এসেছিলো।
নিজের ভেতর অদ্ভুত এক কষ্ট হচ্ছিলো। আরাবকে সে ভালোবেসে ফেলেছে তো! মুখে মুখে সবার সামনে ক্রাশ বলে ইয়ারকি করলেও মনের গহীনে সেই আরাব নামক লোকটা তাকে পু’ড়িয়ে মা’রছে,সে যন্ত্রণা সে সইতে পারছে নাহ। কিছু দিন অস্থিরতায় কাটিয়ে পালক কে বলবে ভেবে বেরিয়েছিলো। কিন্তু এমন দৃশ্য দেখে হুট করেই মনটা বিষিয়ে গেছিলো। না চাইতেও হাজারো ভয়,কল্পনা জেকে বসেছিলো মন মস্তিষ্কে। পরের দিন মেঘের পালক কে ভালবাসার কথা শুনার পর যেনো নিজেকেই নিজের মা’রতে ইচ্ছে করছিলো। সে কি করে এমন বিশ্রি একটা ধারণা আনলো। পালক ও যে মনে মনে মেঘকেই চাই সেটা তো তার ও জানা।

সেদিনের পর বেশ ভালোই ছিলো। ভালোবাসার মানুষ টাকে কাছে না পেলেও দূর থেকে দেখেই নিজেকে শান্তনা দিতো। কিন্তু দিন দিন আরাব যেনো আরশিকে একেবারেই এড়িয়ে চলছে, আরশি নিজ থেকে কথা বলতে গেলেও আরাব কেমন গা ছাড়া উত্তর দিয়ে সরে বাচে। মন মন্দিরে যাকে নিয়ে এতো আয়োজন তার এই নিখুঁত অবহেলায় যেনো ক্রমশ ভেতর টা দগ্ধ হচ্ছিলো। মাত্রা তো সেদিন ছাড়ালো যেদিন মায়ের সাথে নিউ মার্কেট যাওয়ার পথে পালক কে একটা ক্যাফে তে দেখেছিলো আরাবের সাথে। ভেতরের সকল যন্ত্রণা যেনো ফুলকিতে রূপ নিয়েছে, এক দম বন্ধ করা অনুভূতি অচিরেই তাকে গ্রাস করে যাচ্ছে। হুট করেই রাস্তায় কোনো ছেলের সাথে নিজ বান্ধবীকে দেখে ভুল বোঝার মতো সম্পর্ক তাদের নয়। তাই আরশিও এ ব্যাপারে পালককে নিয়ে কখনও নিজের ভালোবাসা ছিনিয়ে নেওয়ার মতো জঘন্য ভাবনা টা আনবে নাহ।তবুও কেমন এক পো’ড়ানো অনুভূতি গোগ্রাসে গিলে খাচ্ছে তাকে। কেনো পালক লুকাচ্ছে, কি লুকাছে। সে তো বললো কিছু কেনাকাটা করতে যাবে,আরাবের সাথে দেখা করার কথা তো বলেনি। আরশি পালককে ফোন দিলেও সে কৌশলে এড়িয়ে গেছে ব্যাপার টা।

নিজের ভালোবাসার এমন অবহেলা আর প্রাণের চেয়েও প্রিয় বোন সমতুল্য বান্ধবীর এভাবে এড়িয়ে যাওয়া টা তাকে ভেতর থেকে কুড়ে খাচ্ছে। সে কোনো ভাবেই বুঝতে পারছে নাহ,আর নাই বা বোঝাতে পারছে

ধপ করে গায়ের থেকে কেও চাদর সরিয়ে দেওয়ায় হুড়মুড়িয়ে উঠলো আরশি। অন্ধকার ঘরটাই লাইট জ্বেলে ঠাসঠা’স করে জানালা গুলো খুলে দিয়ে খাটের উপর বসলো।

-এই ভর দুপুর বেলা চিত হয়ে আছোস ক্যান ছেমরি

আদ্রিশের কথায় সোজা হয়ে বসলেও কোনো উত্তর দিলো নাহ আরশি। আজকে ভার্সিটি যাইনি।দুইদিন ধরে কারো ফোন ও ধরে না। এক কথায় নিজেকে বেশ গুটিয়ে নিয়েছে, গলা খাকারি দিয়ে হালকা কেশে বললো

-এমনেই শরীর টা ভাল্লাগছে নাহ

-কি সমস্যা তোর? এমনে ঘরের মধ্যে চিপকাই আছোস ক্যান। কইদিন ধরে দেখতাছি কথা বলস না ঠিকমতো। ক্যাম্পাসে আসিস নাহ,আসলেও দুই একটা ক্লাস করে চলে যাস আড্ডাতেও বসিস নাহ। হইছে টা কি তোর।

-বলছি তো কিছুই হয়নি,শরীর টা ভাল্লাগছিলো নাহ কিছুদিন তাই

আবারও একই উত্তর দিলো আরশি। ট্যুর থেকে আসার পর থেকেই আরশির আচরণে বেশ কিছুটা পরিবর্তন বুঝা যাচ্ছিলো। কথা বার্তা কম বলতো, আগের মতো হাসি খুশি চেহারার ছাপ টা যেনো কমে আসছিলো। গত কিছু দিন যাবৎ একেবারেই অন্যরকম ব্যবহার করছে আরশি। দুই দিন তিন দিন পরপর ভার্সিটি যায় গেলেও দু একটা ক্লাস করে চলে আসে, আগের মতো আড্ডাও জমাই নাহ। ওকে হাজারো কথা বললেও তেড়ে ঝগড়া করতে আসেনা। আজকে ভার্সিটিতে না পেয়ে রাফাত,শিমু,আদ্রিশ,নিবিড় এসেছে ওর বাড়িতে।।

-এই নাটক টা আংকেল আন্টির সামনে পর্যন্তই থাক। আমাদের প্লিজ এই মিথ্যা বাহানা দেখাইস নাহ। তোর নাড়ি, নক্ষত্র চেনা আমাদের। ফটাফট বলে ফেল কি হয়েছে

নিবিড়ের কথার প্রেক্ষিতে রাফাতও সায় দিয়ে বললো

-তাই তো, অসুস্থতা টা যে তোর শরীরের না তা আর যাই হোক আমরা বেশ বুঝেছি। কয়দিনে চেহারা টা কি করেছিস,পেত্নী লাগতাছে পুরা। মনে হয় তিনদিন তোরে পানি ছাড়া কিছুই দেয়নি খাইতে।

রাফাতের এমন খোঁচা দেওয়া কথাই ও আরশি সবাইকে অবাক করে কোনো উত্তর দিলো নাহ।এমন চটপটে হাসিখুশি মেয়েটার এই চেহারা ওরা কেও ই সহ্য করতে পারছে নাহ। ভেবেছিলো ওর মুড অফ যাচ্ছে কিছুদিন গেলে সেরে যাবে কিন্তু দিনদিন যেনো আরশির উদাসীনতা বেড়েই চলেছে, ববন্ধুত্বের মাঝেও যেনো এক ক্রোশ দূরত্বের বেড়াজাল টেনেছে।তাই তো নিজের ব্যক্তিগত কারণ টাও জানাতে নারাজ।

শিমু দাঁড়ানো থেকে আরশির পাশে গিয়ে বসলো। বেলা ৪ টা বেজে গেছে অথচ মেয়েটা দরজা জানালা খুলেনি, উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলো। বিছানায় ওরা সবকয়টি এসেই টেনে তুলেছে।
আরশির কাঁধে হাত রেখে শিমু বললো

-তুই এমন কেনো করছিস আরু,তুই তো এমন ছিলিস নাহ। কি হয়েছে তোর আমাদের তো বল।

আরশি নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকালো শিমুর দিকে। বাকি সকলের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বললো
-আফু আসেনি?

-আফুর একটা কাজ পরে গেছে, তাই আসতে পারেনি। আমরা হুট করেই এসেছি তো তাই ও আসতে পারেনি।

মলিন হাসলো আরশি। অভিমানের পাল্লা টা যেনো তরতর করে বেড়ে গেলো, নাহয় বললো না তার আরাবের সাথে কি সম্পর্ক। তা বলে তার এহেন অবস্থা টাও কি আফু খেয়াল করেনি। এতোটা পর করে দিলো তাকে। ভেতর থেকে কান্নার স্ফূলিঙ্গ যেনো মুখ ভেদ করে বাহিরে আসতে চাইলো। তবুও নিজেকে সংযত করে চুপ করে থাকলো।

-এমনে শিম্পাঞ্জি টাইপ পোজ দিয়ে বইয়া আছোস ক্যান ছেমড়ি। অনেক দিন আড্ডা দেইনা। চল আজকে ঘুরে আসি বাইরে

নিবিড়ের কথা শুনে আরশি বিরক্তি নিয়ে বললো

-তোরা যা,আমি যাবো নাহ

-যাবি না মানে, তোর পারমিশন চাইছি আমরা? যেতেই হবে কোনো কথা নাই।

ভেতরের দম বন্ধ করা অনুভূতি কষ্ট সব মিলিয়ে যেনো আরশি কিছুতেই নিজেকে সংযত রাখতে পারলো নাহ।চেঁচিয়ে উঠে বললো

-কি সমস্যা তোদের, বললাম না ভাল্লাগছে নাহ,আমি কোথাও যাবো নাহ। তাও ছ্যাঁছড়ার মতো বলার কি আছে, এক্ষুণি বেরো। বেরিয়ে যা আমার ঘর থেকে সবাই।

হুট করে এভাবে আরশির রেগে উঠায় সবাই চমকে গেছে, আরশি সবসময় তাদের সাথে ঝগড়া মারামারি করলেও এভাবে বলেনি। কিছুক্ষণ থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো ওরা, পর মুহূর্তে আদ্রিশ শিমুকে কিছু একটা ইশারা করেই তিনজন বেরিয়ে গেলো। হাত দিয়ে মাথা টা চেপে ধরে বসে আছে।

-ওঠ, উঠে ফ্রেশ হয়ে আই

বলেই শিমু এক হাত ধরে টেনে তুললো আরশিকে।

-আজব, এক কথা কতবার বললো আমি

আরশিকে কথা শেষ করতে না দিয়েই শিমু আগেই থামিয়ে বললো

-তোর থেকে কিছু শুনতে চেয়েছি? অনেক দেখা হয়েছে তোর ইচ্ছে, এই কইদিন বেশ করেছিস মন মর্জি। এখন চুপচাপ যেমন বলবো করতে থাকবি।

বলেই আরশিকে জামা আর তোয়ালে ধরিয়ে দিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বললো।

-পাঁচ মিনিটের মধ্যে বেরোবি

এদিকে রাফাত নিবিড় আদ্রিশ বসার ঘরে সোফায় বসে আছে। আরশির মা পারুল বেগম এসে ওদের সামনে বসে বললেন

-মেয়েটার কি হয়েছে দেখো, ঠিক করে খাই নাহ কথা বলে নাহ,সারাদিন ঘরে কোণঠাসা হয়ে থাকে। কিছু বললেই রেগে যায়

-আপনি চিন্তা করবেন নাহ আন্টি। ওর কিছুই হয়নি। এমনিতেই হয়তো রেগে আছে আমাদের উপর, এই জন্যেই তো ধরে নিয়ে যেতে এসেছি।

রাফাতের কথায় সামান্য হেসে পারুল বেগম বলেন

-তা তো জানিই বাবা। তোমরা থাকতে আমার মেয়ের কিছু হতেই পারে নাহ তাই তো তোমাদের উপর এতো ভরসা।

-একদম…ওরে ভূতে ধরলে ঝাটা পে’টা করার জন্য আমরা অলয়েজ হাজির।

রাফাতের কথা শুনে হেসে দিলো পারুল বেগম, এই ছয়জন কে সে চার বছর ধরে চেনে,আর এদের বন্ধুত্বের গভীরতা টাও তার জানা।
আরও কিছুক্ষণ কথা বলার পর শিমু আরশিকে নিয়ে এলো।
পরনে কালো রঙের একটা লং থ্রি পিস। হাতে চুড়ি আর কানে দুল ও পরিয়ে দিয়েছে। আরশিকে এসব জোর করে পরিয়েছে শিমু হাজার বারণ করার পরেও।

-আন্টি তাইলে আমরা আসি,এই চুন্নির জন্য অলরেডি দেরি হয়ে গেছে, বলেই আরশির হাত টেনে হাটা ধরলো আদ্রিশ। পিছু পিছু বাকি তিনটাও ছুটলো

~~~~

মিটিংয়ের মাঝে থাই গ্লাসের বাইরে রাস্তার নিচের দিকটাই চোখ যেতেই,ভ্রু কুচকে এলো মেঘের।

-এক্সকিউস মি

বলেই বসা থেকে উঠে এসে দাঁড়ালো ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট টার দোতালার থাই গ্লাসের সামনে।
নাহ সে ভুল দেখেনি। তার সামনের বিল্ডিং টার সামনেই সত্যিই দাঁড়িয়ে আছে নীল রাঙা জামা পরা মেয়েটা। হাতে এক গুচ্ছ সাদা গোলাপের বুকে। বেশ উৎকণ্ঠিত চেহারায় কারো অপেক্ষা করছে কারো জন্য। এর মাঝেই কেও একজন আসতেই হাস্যজ্বল চেহারায় গোলাপ গুলো তাকে দিলো। ছেলেটি আরও বেশি আগ্রহের সাথে ফুলগুলো নিয়ে কাছে গিয়ে কিছু একটা বলতেই খিলখিল করে হেসে উঠলো পালক। হাত ধরে পালককে রেস্টুরেন্টের ভেতরে নিয়ে গেলো আরাব।

এ দৃশ্য দেখে মেঘের কান যেনো ঝনঝন করে উঠলো। ভেতরের জ্বালার থেকে মস্তিষ্কের পীড়ন তাকে জ্বালাচ্ছে। ২১° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এসির ভেতরেও কপাল বেয়ে তরতর করে ঘাম ঝরছে। হাত মুষ্টি করে গটগট করে হাটা ধরলো সিড়ির দিকে।

নিচতালার একপাশের জায়গা টা জুড়ে সাদা রঙের গোলাপ দিয়ে সাজানো। তার মাঝে লাল রঙের লাভ সেইপ বেলুন আর সবুজ রঙের আর্টিফিশিয়াল পাতা আর বেগুনি কড়ি গুলোয় কালারফুল লাইটের আলোয় ঝিকিমিকি করছে। সামনের একটা বড়ো টেবিল জুড়ে চকলেট কেক। ঝলমলে আয়োজনে আশপাশ টার চাকচিক্যময় পরিবেশে আরাব আর পালক দাঁড়িয়ে আছে।

-তুমি ঠিক যেমনটা বলেছিলে ঠিক সেইভাবেই করেছি। চলবে তো?

-আরে চলবে মানে,দৌড়াবে। ঝাক্কাস লাগছে আরাব ভাই। আরু তো আজ হার্ট ফে’ইল করবে।

বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো পালক।
আরাব এগিয়ে এসে পালকের হাত ধরে বললো

-অল ক্রেডিট গোজ টু ইউ পালক। আমি মানুষ সিলেক্টে একদম ভুল করিনি। আমি জানতাম তুমিই সাহায্য করতে পারবে আমায়। আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো বোন। আমার ছোট বোনের অভাব টা আজ তুমি পূরন করে দিয়েছো।

পালক আরাবের হাত ধরে বললো

-বোন ডেকেছেন,আবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। তাইলে কিন্তু আমি খুব রাগ করবো। বড়ো ভাইয়ের জন্য কি এইটুকুও করতে পারবো নাহ

পালকের কথায় আরাব কিছু বলতে নিলেই পেছন থেকে আসা শব্দে থেমে যায়

-নূর!!

গমগমে ডাকে পিছু ফিরে তাকায় দুজনে। জ্বলজ্বল করা নীলাভ দৃষ্টি ক্রোধে তাক করে আছে হাতের দিকে। মেঘের দৃষ্টি দেখেই পালক হাত ছাড়িয়ে ছিটকে সরে আসে। কান দুটো বেজায় লাল হয়ে গেছে, গলার রগ টা ফুলে স্পষ্ট।
রাগে রীতিমতো সারা শরীর কাঁপছে মেঘের।
পালক যেনো আকাশ থেকে পরলো। মেঘ! এখানে কি করে! আজ তো তার কোনো স্পেশাল মিটিং ছিলো। এখানে কি করে, নিশ্চিত আরাবের সাথে দেখে ভুল বুঝেছে।
পালক দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে মেঘের কাছে যেতে নিলেই হাত উঠিয়ে থামিয়ে দেয় মেঘ। চোখ দু’টোয় তার ক্রোধ আর অশ্রুতে ঝলমল করছে। মেঘের এই চেহারা টা পালকের বুকে ছুড়ি’ঘাত করছে যেনো। এগিয়ে গিলে বলতে নিলো

-আমার কথা টা আগে শুনুন..

পুরোটা শেষ করার আগেই মেঘ বলে উঠলো

-এই তোমার ইম্পর্ট্যান্ট কাজ নূর? আমার সাথে আসলে না গুরুত্বপূর্ণ কাজের দোহায় দিয়ে, এই তাহলে সেই স্পেশাল কাজ? বাহহ

বলেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। মেঘের চোখে এমন অবিশ্বাস কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না পালকের, সে তো সবটা তাকে জানাতে চেয়েছিলো

-আপনি আমার কথা টা একবার শুনুন প্লিজ আপনি যা ভাবছেন তেমনটা নাহ

-তাহলে কি নূর, কি বলতে চাচ্ছো তুমি। এই ফুলে সাজানো জায়গা, তোমার হাস্যজ্বল চেহারা, নিজ হাতে ফুল তুলে দেওয়া, হাতে হাত রাখা আমায় ভাবতে বাধ্য করছে। আমায় এভাবে ঠকালে নূর? আমার ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলে? এই দৃশ্য দেখানোর চেয়ে আমার বুকে ছু’ড়ি মার’লে না কেনো

মেঘের প্রতিটি কথায় পালকের ভেতর শু’লের মতো আঘাত করছে, সে তো ঠকায়নি। ঠকায়নি মেঘ কে। সেও তো বাসে, বাসে তো ভালো। মেঘের এরূপ কথায় ভেতর টা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হচ্ছে।
পা বাড়িয়ে এগিয়ে যেতে নিলেই মেঘ থামিয়ে দিয়ে বললো

-নাহ,একদম নাহ। তোমার ছায়াও আমি আর দেখতে চাইনা। তুমি যখন আমার উত্তর না দিয়েই ফিরে গেছিলে ভেবেছিলাম সময় চাও। আমিও অপেক্ষা করেছি। তুমি আসবে বলে আমি এক জীবন অপেক্ষা করতাম নূর, কিন্তু আমার অপেক্ষার পুরষ্কার স্বরূপ এমন সারপ্রাইজ পাবো ভাবতেও পারিনি

-ভাই তুমি যেমন ভাবছো তেমনটা না একবার পালকের কথা টা শোনো

-আমার আর নূরের মাঝে বাইরের কারো ইন্টাফেয়ারেন্স আমি চাইনি। তোমার তো একদম ই নাহ। ছোট ভাইয়ের জায়গা দিয়েছিলাম তোমায়,, প্রতারক!

আরাবকে থামিয়ে দিয়ে বললো মেঘ
নিজের চোখের সামনে প্রিয়তমার মিষ্টি হাসি আর হার অন্য কারো হাতে দেখার চেয়ে বেশি কষ্টকর হয়তো কল্পনাতেও নেই মেঘের। তার উপরের রাগ টা দেখাতে পারলেও ভেতরের আঘাত টা তো কাওকে দেখাতে পারছে নাহ

-স্যার ক্লায়েন্ট রা অনেকক্ষণ অপেক্ষায় আছে। তারা আর সময় নষ্ট করতে চাইনা।

অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কথায় মেঘ নিজেকে কিছুটা সামলে বললো

-ইয়াহ৷ লেটস গো

বলেই অ্যাসিস্ট্যান্ট আগে আগেই চলে গেলে মেঘ একবার পালকের দিকে চেয়ে হাঁটা ধরলো।
মেঘের ওই অবিশ্বাসের চাহনির চেয়ে হাজার টা আ’ঘাত ভালো ছিলো। মেঘ শুধু হাত কেনো সারা অঙ্গে ক্ষ’ত করে দিক,তবুও অবিশ্বাস না করুক।পালকের মন জুড়ে মেঘ ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের কল্পনাও নেই।
মেঘের পিছু ছুটে গিয়ে এক হাত ঝাপটে ধরে পালক অস্থির হয়ে বললো

-আমার কথা টা একবার শুনুন, আমি ঠকায়নি আপনাকে,আরাব ভাইয়ের সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। আমরাতো…

কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই মেঘ এক ঝামটা দিয়ে হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে দরজা খুলে চলে গেলো। পালক ছিটকে পরতে নিলেই আরাব এক হাতে ধরে নিলো।
পালক হাটু গেড়ে কান্নায় ভে’ঙে পরে বললো

-আরাব ভাই উনাকে বুঝান না আমি উনাকে ঠকায়নি। মেঘের পালকে শুধু মেঘের ছোঁয়ায় ই আছে৷ তার মনে অন্য কোনো স্পর্শ হওয়ার আগে সে ম’রে যাবে তবুও এ নূর নামে ডাকার অধিকার কাওকে দিবে না, কাওকে নাহ। একটা বার উনাকে বলুন নাহ

বলেই সশব্দে কেঁদে দিলো। পালকের এমন কষ্টে আরাবের নিজেকে সবচেয়ে বেশি দোষী মনে হচ্ছে৷ তার জন্যেই সবটা হলো। সে তো সত্যিই পালক কে নিজ বোনের মতোই ভালোবাসে,এর চেয়ে অন্যরকম নয়। মেঘ তো শুনলো নাহ। আরাব জানে ওই মুহূর্তে মেঘের জায়গায় নিজে থাকলেও হয়তো এমনটাই করতো,কোনো পুরুষ ই পারবে নাহ তার ভালোবাসা কে অন্য কারো সাথে দেখতে। তবুও পালকের কষ্ট তার সহ্য হচ্ছে না।

-পালক, কাঁদে নাহ। মেঘ তো তোমায় ভালোবাসে তাই তো অভিমান করেছে, ও ঠিক মেনে যাবে দেখো ও তোমায় ভুল বুঝবে নাহ

পালক কান্নার বেগ আরও বাড়িয়ে বললো

-মেঘ কে বলুন না ভাই। মেঘের চোখে অবিশ্বাস আমি সইতে পারছিনা কিছুতেই নাহ। আমিও তো উনাকে ভালোবা..

পুরোটা বলার আগেই বাইরের দিকে চেয়ে থেমে গেলো, কান্না থামিয়ে উঠে দাঁড়ালো। পালকের দৃষ্টি অনুসরণ করে আরাব তাকিয়ে দেখে রাফাত নিবিড় আদ্রিশ শিমু সবাই আসছে আরশি কে নিয়ে যার জন্যেই এতসব আয়োজন।

-আপনি সবটা শুরু করুন আরাব ভাই, আমি আসছি।

-কিন্ত এতকিছুর পরেও

-হ্যাঁ । যা হওয়ার তা অবশ্যই হবে, ঠিক যেমনটা পরিকল্পনা করা হয়েছে

-পালক তুমি..

-আমি যা বলছি করুন । আমি কষ্ট পেয়েছি বলে আমার বান্ধবীকেও কষ্টে রাখতে পারবো নাহ। অনেক অভিমান জমেছে আমার প্রতি ওর,সেগুলো ভা’ঙতে হবে। ওর কষ্ট গুলো হাসিতে পরিণত করার সময় এসেছে।

বলেই হালকা হেসে পালক ওয়াসরুমের দিকে গেলো।

/

-তোরা কি করছিস বলতো, এখানে কেনো আনলি আমায়।

-দেখ ছেমরি সারা রাস্তা তোর পকপক শুনেছি, এইবার আরেকটা কথা বললে কচু কা’টা করুম তোরে৷ বেশি সাহস বাড়ছে না? এক্কেরে ছে’ইচ্চা দিম

আদ্রিশের কথায় ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে, রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকতেই লাইট গুলো বন্ধ হয়ে গেলো। আশপাশে অন্ধকারে ছেয়ে গেলো।

-একি! লাইট বন্ধ হলো কেনো,এই তো জ্বলছিলো? রাফাত? শিমু? কথা বলছিস না কেনো তোরা

অন্ধকারের মধ্যেই আস্তে আস্তে এক পা করে ফেলছে আরশি। কেও উত্তর করছে নাহ। সবটা চুপচাপ। তার এবার ভয় লাগছে। ওরা কোথায় গেলো

-নিবিড়, কথা বলছিস না কেনো তোরা,আমার ভয় লাগছে

বলতেই ধপ করে পেছন থেকে আলো জ্বলে উঠলো। পেছন ফিরেই দেখে, বেশ বড়ো সরো একটা প্রজেক্টের জ্বেলে আছে , আর তাতে জ্বলজ্বল করছে একটা হাস্যমুখ।
চাবাগানের মাঝখানে দু হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হালকা গোলাপি ওড়না টা বাতাসে উড়িয়ে,,,এলোকেশি মেয়েটার এমন নিখুঁত প্রতিমূর্তি যেনো কেও বেশ যত্নে ধারণ করেছে!

এটা তো আরশির নিজের ছবি! এভাবে? এটা কেমন সারপ্রাইজ? আজ তো তার বার্থডে ও নাহ। আবার কিছু বলতে নিলেই। বেজে উঠলো গিটারের টুংটাং শব্দ

“Tere khayalon mein bitein ye ratein,dil mera mange ek hi dua…tu samne ho aur karon main batein lamha rahein yu thera huwa…pehle to kabhi yu mujhko nh aisa kuch huwa dewani lehro ko jaise sagar milaaa…ek ladki ko dekha to aisa laga jaise oh mere sohneya ve chad sari galliyan ve nal tere tur chaleya main,, le chal mujhko duniya se tu durr……”

গানের প্রতিটি লাইনের সাথে পরিবর্তন হচ্ছে ছবিগুলো, যার প্রতিটিই তার অজান্তে তোলা। কিন্ত সেদিকে তো আরশির খেয়াল নেই, সে এক মনে চেয়ে আছে কালো রঙের শার্ট পরিহিত গিটার হাতে গান গাওয়া ছেলেটির দিকে। গান শেষ করে আরাব আরশির সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো

“আমি কখনো তোমায় ছুঁয়ে দেখিনি। তোমার হাসির কারণ হয়ে দেখিনি
কখনো তোমার হৃদয়ের অভ্যন্তরে চেয়ে দেখিনি,
কখনো কিছু দেয়নি,চাই ও নি..তবে আজ চাইবো। দেবে কি?

তোমার কারণহীনাই মন ভালো হওয়ার কারণ হতে চাই,
তোমার প্রতিটা ব্যকুল শর্তবিহীন চাওয়ার কারণ হতে চাই
তোমার বার্ধক্যে রাস্তা পার করিয়ে দেওয়ার হাতটা হতে চাই
আজ প্রথম একটা উপহার দিতে চাই,নেবে?
নেবে আমার সারা জীবনের ভালোবাসা? নেবে এ অব্যক্ত প্রেমিকের অনুভূতির দায়ভার? ”

আরশি এখানো থ হয়ে আছে, যেনো স্বপ্ন দেখলে, বার কয়েক চোখের পলক ঝাপটালো। নাহ স্বপ্ন নাহ। এ বাস্তব। আশপাশে তাকিয়েই দেখতে পেলো ঝলমলে হাসি ঝুলিয়ে রাখা পালকের চেহারা টা, যেনো এটা ই খোঁজ করছিলো। এবার দু চোখের অশ্রু ছেড়ে দিলো। পা বাড়িয়ে পালকের কাছে যেতে নিলেই হাত উচিত থামিয়ে দেয় পালক। ইশারা করে আরাবের দিকে, আরশি ফিক করে হেসে দিয়ে হাত টা বাড়িয়ে দেয়।

________________________

আকাশ টাই থেমে থেমে মেঘের গর্জন দিচ্ছে। তারা গুলো আজ আকাশের বুকে লুকিয়েছে। আশেপাশে কোনো হাসি নেই,আনন্দ নেই। গুমোট পরিবেশ টা স্থির হয়ে আছে। ঠিক তেমনি স্থির দাড়িয়ে আছে মেঘ। জায়গা টা শহরের একটু বাইরের দিকে।খরস্রোতা নদীর উপর ছোট খাটো একটা ব্রিজ , বেশ জনমানবশূন্য। থেকে থেকে দু একটা গাড়ি পেরিয়ে যাচ্ছে পেছন দিয়ে

তখন সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়ি চালিয়ে এখানে এসেছে মেঘ। কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে আছে জানা নেই। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়েছে। বুকের ভেতর যে দ’হন শুরু হয়েছে তাতে কিছুতেই শান্তি মিলছে নাহ। দম বন্ধ হয়ে আসছে থেকে থেকে। এ কেমন বিশ্রী কষ্ট, এ কেমন দগ্ধ অনুভূতি, ভীষণ পো’ড়াচ্ছে, ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে। মন বলছে তার নূর ঠকায়নি তাকে, তাকে অবিশ্বাস কর‍তে নারাজ। মন জুড়ে নূরের প্রেমে অন্ধের মতো বারবার বলছে ভুল হয়েছে কোনো, নূর তো তার স্নিগ্ধ মিষ্টি ফুল, সে মেঘ ছাড়া অন্য কারো হতেই পারে নাহ। কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে তাহলে চোখের দেখা কি ভুল ছিলো?

নিজের কাধের উপর কারো হাতের উপস্থিতি পেতেই ফিরে তাকায় মেঘ

-তুমি? তুমি এখানে কি করে আসলে?

-অনেক্ষণ ধরে খুঁজছিলাম, পরে লোকেশন ট্র‍্যাক করে জানতে পারলাম এখানে।

-চলে যাও এখান থেকে, আমায় খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য করো নাহ,যাস্ট গেট লস্ট আরাব

-সে আমি যাবো, কিন্তু কিছু বিষয় না জানালে যে আমারও পাপ হবে। কোনো দোষ ছাড়াই নিষ্পাপ দুটো মন কষ্ট পাক তা আমি হতে দিতে পারিনা

-কি বলতে চাও তুমি। সাফাই দিতে এসেছো?

-নাহ,সত্য দেখাতে এসেছি।

বলেই পকেট থেকে ফোন বের করে মেঘের সামনে ধরে বললো

-সবসময় চোখের দেখায় আসল দেখা হয়না। আপেক্ষিক দৃষ্টির আড়ালে অনেক কিছুই থাকে যা চোখের দেখায় ধরা পরে নাহ। পালক কে আমি নিজের বোনের মতোই ভালোবাসি,এটাকে ভুল বুঝো নাহ ব্রো

মেঘের ভেতরটা বিদ্যুতের বেগে খেলে উঠলো। তার মানে তার মন ঠিকই বলেছে,নূর.. নূর তাকে ঠকায়নি ভুল ছিলো মেঘ ভুল ছিলো। এক মুহূর্তেই সব মন খারাপ দূর হয়ে গেলো।একরাশ প্রশান্তিতে সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে মেঘ আরাবকেই ঝাপটে ধরলো। আরাব ও দু’হাতে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আরাব কে ছেড়ে মেঘ অস্থির হয়ে বললো

-থ্যাংস,থ্যাংকিউ সো মাচ।। আমি কতটা খুশি বলে বোঝাতে পারবো না

-শুধু খুশি হলেই হবে না ব্রো। ডোন্ট ওয়েস্ট টাইম। গো এন্ড মেক হার ইউরস

আবারও আরাবকে ঝাপটে ধরলো মেঘ। ছেড়ে দিয়ে ছুটে গেলো গাড়ির দিকে, আবারও থ্যাংকস বলে গাড়ি স্টার্ট করে,ঝড়ের বেগে ছুটিয়ে নিলো। আরাব মেঘের এমন পাগলামি দেখে হা হা করে হেসে উঠলো।

ঝড়ের বেগে গাড়ি ছুটিয়ে এক ঘন্টার দূরত্ব আধা ঘণ্টার পরপরই পার করে ফেললো মেঘ। ব্যাস অনেক হয়েছে, আর নাহ। আর দূরত্ব নাহ। এইটুকু সময়ের দূরত্ব যেনো এক বছর সমান লেগেছে, নিজের প্রিয়তমার বিরহে প্রতিটি মুহুর্তে প্রহর সমান পীড়া দিয়েছে, আর নাহ।। নূর কে চাই,এক্ষুনি চাই। দুহাতে বুকে ঝাপটে ধরতে চাই। বুকের ভেতর চলা অসহনীয় যন্ত্রণার শান্তি নূর,তাকে চাই।
গাড়িটা জোরে ব্রেক কষে দারোয়ানের হাতে চাবি ধরিয়ে পার্ক করতে বলে ছুটে গেলো সিড়ির দিকে, তিনতলা বেয়ে চারতলায় উঠে পালকের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেল বাজালো। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। নূর কি খুব অভিমান করেছে? খুব কেঁদেছে নিশ্চয়?
মেঘের ভাবনার মাঝেই খট শব্দ করে দরজা খুলে দিলো মেঘ, শিমুকে কিছু বলতে না দিয়েই ভেতরে ঢুকে পালক কে ডাকা শুরু করলো

-নূর? নূর? কোথায় তুমি,দেখো আমি এসেছি। কই তুমি নূর!

সব গুলো ঘরে, রান্নাঘরে, ওয়াসরুমে ঢুকে দেখলো। কিন্তু কোথাও নেই পালক। এদিক ওদিক ঘুরে না পেয়ে বারান্দার দিকে পা বাড়াতে নিলেই পেছন থেকে শিমু বললো

-আফু নেই ভাইয়া

তড়াৎ ঘুরে দাঁড়ালো মেঘ,

-নেই মানে?

-ও চলে গেছে, নিয়ে গেছে ওকে
.
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu_♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here