তুমি আসবে বলে পর্ব -৩৭+৩৮

#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৩৭

দেওয়াল ঘড়ির টিকটিক শব্দ টাও অনেক বেশি গাঢ় শোনাচ্ছে। অদূরেই বাড়ির পেছনের দক্ষিণ দিকটার তালগাছের বাবুই পাখির বাসা থেকে মৃদু কিচির মিচির শব্দ স্পষ্ট কানে আসছে। হারমোনিকা টায় বার কয়েক চেষ্টা করলেও সুর তোলার শক্তি কণ্ঠনালিতে জোগাতে পারেনি, এক রাত এক দিন পার হয়ে আবারও রাত নেমেছে ঘর থেকে বের হয়নি মেঘ। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত অবস্থায় ঘরের মধ্যে পরে আছে।
গতদিন রাতে উদ্ভ্রান্তের মতো যখন পালক কে খুঁজতে তার ঘরে গেছিলো কোথাও পাইনি খুঁজে তার প্রিয়তমা কে। অপেক্ষার কাটা ২৪ পেরিয়ে এক দিন এক ঘন্টা ছাড়িয়েছে। তবুও আসেনি,, আসেনি তার নূর। নিজের অজান্তেই শক্ত পুরুষালি ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে নোনাজলের বিন্দু ফোঁটায় তপ্ত হলো কপোল।

খট করে নব মোচড়ানোর শব্দে দ্রুত চোখ মুছে নিলো। ফ্লোরে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলো।
ঘরের লাইট টা জ্বালাতেই চোখ মুখ কুচকে এলো।
ধীর পায়ে এগিয়ে এসে মেঘালয়ের পাশে মেঝেতেই বসে মেঘের এলোমেলো চুলে পরম মমতার সহিত হাত বুলিয়ে বললেন

-মেঘ, কি হয়েছে বাবা। এতোটা বিধ্বস্ত কেনো লাগছে তোকে। কাল রাত থেকে ঘরে পরে আছিস,না খাওয়া না অফিস। আমার ছেলেকে এই চেহারাই আমি কখনো দেখিনি। মাকে বল কি হয়েছে

যন্ত্রনায় ছটফট করা মন টা একটু খানি মমতার আবেশে মিইয়ে গেলো। মেঘ দু হাতে জড়িয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।
নিলাশা চৌধুরীর ছেলের এমন অবস্থা তার মাতৃ মনটাকে চিন্তায় উৎকণ্ঠায় অস্থির করে তুলেছে। তার গম্ভীর চুপচাপ শান্ত ব্যক্তিত্বের ছেলেটার এমন অস্থির অবস্থা তাকে ভীষণ অশান্তি দিচ্ছে। আবারও মেঘের মাথায় খানিকক্ষণ হাত বুলিয়ে বললো

-আমার ছেলেটা অন্যদের কাছে ভীষণ গম্ভীর শান্ত ব্যক্তিত্বের, চাপা স্বভাবের হলেও মায়ের কাছে তো বন্ধুর মতোই ছিলো। মাকে লুকানো কবে শিখে গেলি মেঘ।

মেঘ কোনো উত্তর হীনা চুপটি করে মাথা গুঁজে আছে মায়ের কোলে, নিলাশা চৌধুরী আবারও বললেন

-তুই মাকে লুকালেও তোর চোখ দু’টো তো লুকাতে পারেনি। নয় মাস যাকে পেটে ধরেছি, যার সকল অভ্যাস পছন্দ অপছন্দের হিসেব আমার পাই পাই করে জানা,, তার মনে যে বৈশাখের আগেই ঝড় উঠেছে তা কি মা বুঝতে পারবে না ভেবেছিস?
খানিক থেমে আবারও বললেন

-তুই না বললেও তো মা ঠিকিই বুঝেছে। আফুকে ভীষণ ভালোবাসিস তাই না রে?

এবার মায়ের কথায় ভেতরের যন্ত্রনারা বাধ ভেঙে দিলো। কথায় আছে পুরুষ মানুষের ব্যক্তিত্ব বড় বৈচিত্র্য। কোথাও লোহার মতো শক্ত আবার কোথাও জলের চেয়েও স্বচ্ছ নরম। মায়ের এরূপ কথায় মেঘ নিজের সংযম ভেঙে মা কে জড়িয়েই কেঁদে ওঠে বলে

-নূর কে এনে দাও মা, ও আমায় ছেড়ে চলে গেছে,আমায় ভুল বুঝে চলে গেছে ও। ওকে আমার কাছে এনে দাও। ও কেনো বুঝলো না ওকে না দেখলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে,ওকে ছাড়া একটা দিন ও ভাবতে পারিনা,তবুও চলে গেলো। মা আমি কখনো কোনো কিছুতে জেদ করিনি,চাইনি। আজ চাইছি আমার নূর কে আমার কাছে এনে দাও মা। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো নাহ

ছেলের এমন আকুতি ভরা কান্নায় নিলাশা চৌধুরী ও নিঃশব্দে কেদে উঠলেন, একমাত্র ছেলেকে সোনায় মুড়িয়ে বড় করেছে, তার শান্ত স্বভাবের ছেলেটা কখনোও জিদ করেনি কোনো কিছুতে এবং করার প্রয়োজন ও হয়নি। চাওয়ার আগেই দ্বিগুণ এনে হাজির করেছে। এক মাত্র ছেলেটা তাদের চোখের মণি। তার এমন অবস্থায় মায়ের ভেতরে যন্ত্রনায় দগ্ধ হচ্ছে।
মেঘের মুখ টা দু হাতের আঁজলে নিয়ে উঠিয়ে বললো

-তোর নূর তোকে ছেড়ে কোত্থাও যায়নি মেঘ। তুই কি ওর চোখের ভাষা বুঝিস নাহ। ও তোর দিকে কিভাবে তাকাও আজও বুঝলি নাহ। তোর নূর ও তোকে ছাড়া থাকতে পারবে নাহ

-ও তো আমাকে ছাড়াই আছে মা, ও কি করে আমায় ছাড়া আছে, পঁচিশ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে তবুও ফিরলো নাহ। আমি নূর কে ছাড়া থাকতে পারছি না,ওকে আমার চাই মা ওকে না পেলে আমি শেষ হয়ে যাবো।

ছেলের এমন কথায় দু হাতে বুকে জড়িয়ে ধরলো নিলাশা চৌধুরী তার আদরের মানিক কে। ছোট্ট বাচ্চার মতো বাইনা ধরেছে মেঘ। ছেলের দীর্ঘ সাতাশ বছরে কখনো এভাবে কাঁদতে দেখেনি, কখনো কোনো জিনিসের জন্য এতোটা অস্থির হয়নি। নিজেকে সামলে মেঘ কে ছাড়িয়ে বললো

-তোর কাছ থেকে আমি এমনটা কখনও আশা করিনি মেঘ। বাচ্চাদের মতো হাত গুটিয়ে বসে কাঁদবি নাকি ফিরিয়েও আনবি তোর নূর কে।

মায়ের কথায় কিছুক্ষণ স্থির থেকে, মেঘ বললো

-ও তো অভিমান করে চলে গেছে আসবে ও?

ছেলের এমন পাগল পাগল কথায় নিলাশা সামান্য হেসে বললেন
-ধুর পাগল। ভালোবাসে তোকে ও,স্পষ্ট ওর চোখ কথা বলে, তোরা বাচ্চারা যতই লুকাস আমরা মায়েরা চেহারা পড়তে জানি। কোন সন্তানের মনে কি চলে তা বুঝতে আমাদের চাহনি টাই যথেষ্ট। তোর নূর ও তোর অপেক্ষায় আছে। যা ফিরিয়ে আন তোর নূর কে, অপেক্ষার প্রহর আর বাড়াস নাহ।
মায়ের কথা শুনে যেনো মেঘ হুস ফিরে পেলো। তাই তো! সে এতক্ষণ অপেক্ষা কেনো করলো। আগেই তো গিয়ে ফিরিয়ে আনা উচিত ছিলো।

তড়াৎ উঠে দাড়ালো, এলোমেলো কুচকানো শার্ট টা সোজা করে,বিছানার ওপর থেকে ফোনটা পকেটে পুরেই বাইরে দৌড় লাগালো।
পেছন থেকে নিলাশা চৌধুরী ডেকে বললো

-আরে পাগল ছেলে গাড়ির চাবিটা তো নিয়ে যা,নাকি দৌড়েই চলে যাবি।

মায়ের ডাকে আবারো পেছনে ছুটে আসে মেঘ, অধিক উত্তেজিত হয়ে গাড়ির চাবিটা নিতেই ভুলে গেছিলো। ফিরে এসে চাবিটা নিয়ে, মাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো। নিলাশা চৌধুরী শব্দ করে হেসে বললেন

-একা ফিরলে কিন্তু বাড়ির দরজা বন্ধ বলে দিলাম

মাকে বিদায় জানিয়ে আবারও ছুটলো মেঘ। গাড়িতে বসে চাবি ঘুরিয়ে স্টার্ট করেই হাই স্পীডে ছুটালো। কিছুতেই আর দূরত্ব সহ্য হচ্ছে নাহ। বুকের ভেতরের টাইফুন কে থামাতে হলেও নূর কে চাই। বুকের মাঝে চেপে ধনার জন্যে চাই।

______________

-তুমি তো কিছুই খাচ্ছো না মামনী। এসে থেকেই দেখছি মন মরা হয়ে আছো। তুমি কি কোনো ব্যপারে চিন্তিত?

বাবার কথায় ভাবনা থেকে সম্ভিত ফিরলো পালকের, মুখে হাসির রেখা টেনে উত্তর দিলো

-না আব্বু, আমি ঠিক আছি, সন্ধ্যায় খেয়েছি তো তাই এখন আর খেতে ইচ্ছে করছে নাহ।

-খেতে ইচ্ছে করছে না বললেই হবে? চেহারা টা কি করেছিস বল তো। শুকিয়ে কি অবস্থা করেছিস নিজের৷ চুপচাপ প্লেটের ভাত গুলো শেষ করবি যদি মা’র খেতে না চাস,

ধমক দিয়ে বললো পালকের মা রুমানা বেগম। এসে থেকেই ব’কে যাচ্ছে পালক কে, পালক না খেয়ে খেয়ে শুকিয়ে গেছে এই নিয়ে। বেশ আহ্লাদী হয়ে পালক বাবাকে বললো

-আব্বু দেখোনা,আম্মু সবসময় ব’কে। আমিতো সন্ধ্যায় ই কতগুলো হাবি জাবি খেলাম।এখন এতগুলো ভাত কি করে খাবো।

মেয়ের কথায় মুচকি হেসে তারেক হাসান বললেন

-তোমার যতটুকু ইচ্ছে খাও। তোমার আম্মু একদম ব’কবে নাহ।

-হ্যাঁ আমিতো ব’কবোই নাহ।আমার কথার দাম আছে নাকি। বাপ মেয়ে দুটিতে আমার কোনো কথা শুনলে তো।

বলেই চেয়ার টেনে পাশে বসলেন। পালক মাকে জড়িয়ে ধরে বললো
-কি যে বলোনা আম্মু, তোমার কথা শুনবো নাহ তো আর কার কথা শুনবো বলোতো। আমরা তো তুমি উঠতে বললে উঠি বসতে বললেই বসি।

-হয়েছে,হয়েছে থাক। আর ঢং করতে হবে নাহ।

বলেই আবারও হাসি মজা শুরু করলো।
গতকাল আরশির জন্য ভেতরে পাহাড় সমান কষ্ট নিয়েও হাসি মুখে সারাটা সময় পার করেছে, সন্ধ্যা হতেই শরীর খারাপের দোহায় দিয়ে বেরিয়ে এসেছে, সাথে শিমুও এসেছিলো। মেঘের ওই অবিশ্বাসের আচরণে ভেতরটা কু’ড়ে কু’ড়ে খা’চ্ছে পালুকের। সারা রাস্তা নিঃশব্দে চোখের জল ফেলে বাড়ি আসতেই দেখে তার বাবা তারেক হাসান এসেছেন। বাবাকে দেখেই ভেতরের কষ্টু গুলো যেনো উগরে বেরিয়ে আসলো। দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে পালক। মেয়ের এমন কান্না দেখে অস্থির হয়ে উঠলে বাবাকে বলেছিলো
“তোমাকে আর আম্মুকে খুব মনে পরে আব্বু। তোমাদের ছাড়া ভালো লাগে নাহ। আমাকে একা রেখে আর যেও নাহ”
একটি মাত্র মেয়েটি তার খুব আদরের,বড় ছেলেটি তো সেই বছর দুয়েক আগেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছে পড়াশোনার খাতিরে, মেয়েকে নিয়েই তাদের সকল ব্যকুলতা, মেয়ের এমন কান্নায় নিজেও ভারাক্রান্ত হয়ে পরে, তাই দেরি না করেই সন্ধ্যায় ই পালক কে নিয়ে চলে আসে কুমিল্লায়। কিন্তু পালকের মনে যে ঝড় উঠেছে, দূরত্বে তার হার আরও দ্বিগুণ বেড়েছে। ভেতরের অশান্তি আর নির্দিষ্ট একটি মানুষের শূন্যতা তাকে কিছুতেই শান্তি দিচ্ছে নাহ। বাবা মায়ের মুখের দিকে চেয়ে শুধু উপরের হাসিটাই বহাল রেখেছে।।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকে ঘরে আসতে আসতে প্রায় বারোটা। একটা খাট,আলমারি, টেবিল,ছোট্ট বুকসেলফ, ড্রেসিং টেবিল দিয়ে সাজানো ছিমছাম ঘরটা, দক্ষিণ দিকের জানালা টা দিয়ে বেশ জোরে বাতাস বইছে। ঘরের লাইট টা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পরলো পালক।
ভেতরের অশান্তি ক্রমশ রূপ বাড়াচ্ছে। কিছুতেই শান্তি মিলছে নাহ। আচ্ছা! লোকটা কি তাকে মিস করছে না? তার মতো মেঘের মনেও কি পীড়ন অনুভূত হচ্ছে নাহ? নাকি এখনো রেগে আছে? এতোটা রাগ তার, একটু সুযোগ দিলে কি হতো। সে কি জানে না তার নূর তাকে ছাড়া কাওকে চাই নাহ, নূরের চোখটা কি সে এখনো পড়তে পারলো না,যেইখান টাই মেঘালয় নামক মানুষটাই সবটা জুড়ে।
বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে ছটফট করছে পালক৷ তখন দুঃখ আর আবেগের বশে চলে তো এসেছে কিন্তু এখন কিছুতেই ঠিক থাকতে পারছে নাহ। লোকটা সময়ে অসময়ে হাজির হয়ে, হুটহাট কাছে টেনে ভীষণ বাজে অভ্যাস গড়ে দিয়েছে পালকের। এখন তাকে ছাড়া ভাল্লাগে নাহ,কিছুতেই মন বসে নাহ। এই যে পুরো চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে আরও তিনটা প্রহরে কাটা দাঁড়ালো,লোকটা কি তাকে মনে করছে নাহ? তার মতো মেঘ ও কি সময় গুনছে নাহ?

আপন চিন্তায় বুদ হয়ে থাকার মাঝেই জানালা টা বিকট শব্দে কেঁপে উঠলো। আর আকাশ টাও ধরনি কাঁপিয়ে গর্জন করে উঠলো। বর্ষার আগমনে প্রায় ই এমন ভারি বর্ষনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, আজকে সারা টা দিন ই কেমন গুমোট পরিবেশ ধরে ছিলো। এখন তার ই পরিপ্রেক্ষিতে বর্ষনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মেঘ। বিছানা ছেড়ে উঠে বাতাসের দাপটে ধাক্কা খাওয়া জানালা টা লাগাতে গেলেই বিদ্যুতের হালকা চমকানিতে বাড়ির বাইরের রাস্তাটায় যেনো কোনো মানুষের অবয়ব আছে বলে মনে হলো পালকের। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেও কিছু দেখতে না পেরে দরজা টা লাগিয়ে দিলো।
ঘড়িতে সাড়ে বারোটা বাজে৷ ভেতরের অস্থিরতা টা যেনো হুট করেই আরও বেড়ে গেলো। কিছুতেই স্থির হতে পারছে নাহ পালক। এমন কেনো লাগছে, কেনো মেঘের অনুভূতি টা আরও প্রখর হচ্ছে, হৃদপিন্ডটা মেঘের ঝলকানির সাথে সমানভাবে কেঁপে কেঁপে উঠছে। কেনো মনে হচ্ছে মেঘালয় তার আশেপাশেই আছে। অনবরত পায়চারি করার মাঝেই ফোনটা বেজে উঠলো।

এতো রাতে কে ফোন দিলো? ভেবেই হাতে তুলে নিতেই, এগারো ডিজিটের নাম্বার টা স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করা দেখেই ভেতর টা ধক করে উঠলো। আননোউন নাম্বার। তবুও কেনো মনে হচ্ছে চেনা কেও? হাজারো অস্থিরতা ঢক গিলে গলাধঃকরণ করে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো।
মিনিট খানেক দুই পাশে পোড়োবাড়ির নিস্তব্ধতা বিরাজমান। থেকে থেকে অপর পাশ থেকে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ কানে আসছে।

-নূর!

দু হাতে খামচে ধরলো পরনের জামা টা, অস্বাভাবিক ভাবে কম্পিত পাজরের মাংশপিন্ডটায় যেনো কেও বরফ গলানো পানি ঢেলে দিলো। ভ্যাপসা গরমেও দক্ষিণ পুর্ব অঞ্চলের হীম শীতল বাতাসের প্রখরতা বয়ে গেলো পালকের কায়া জুড়ে।
ওপাশ থেকে ভরাট কণ্ঠের শব্দ টা আবারও শ্রবণেন্দ্রিয়ে তোলপাড় তুললো।

-আমায় ছেড়ে থাকতে এতটুকুও কষ্ট লাগলো না?

চোখ মুখ খিচে কান্না আটকালো, ঠোঁট দুটো কামড়ে ধরে রেখেছে, তবুও অক্ষিকোটর ভেদ করে উষ্ণ পানির বারিধারা বয়ে গেলো। নিঃশব্দ ফোনের স্পীকারে শুধু ফুঁপানির শব্দ কানে লাগছে মেঘের। ফোস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নরম কণ্ঠে বললো।

-আর কতো দূরে থাকবে, এই অধম টাকে আর কতো কষ্ট দেবে নূর? একটা বার সামনে আসবে নাহ, একশত তেরো কিলোমিটার দুই ঘন্টায় পাড়ি দিলেও, দশ গজ সমান পা আগানোর শক্তি পাচ্ছি না তো।
খানিক থেমে আবারও বললো
-আর কতক্ষণ অপেক্ষা করাবে, উনত্রিশ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে, এবার তো আমায় একটু শান্তি দাও,একটা বার বাইরে আসবে নূর?

শেষের কথাটাই যেনো তীব্র আকুতি ঢেলে দিলো। প্রতিটি শব্দ,বাক্য বান হয়ে বুকটা এফোড় ওফোড় করে দিচ্ছে পালকের। কিন্তু মেঘ কি বললো? বাইরে? তার মানে…
এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে ছুটে গেলো পালক বারান্দায়, রাস্তার সোডিয়াম লাইটের মৃদু আলোয় স্পষ্ট পুরুষ অবয়ব টা দৃশ্যমান। বিকট শব্দে বজ্রপাত হতেই এক মুহূর্তের জন্য স্পষ্ট দেখলো পালক চেহারা টা, গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লম্বা চওড়া শরীর টা, দু কদম পিছিয়ে গেলো। হাতের কম্পনে ফোনটা ধরে রাখা দায় হয়েছে, ওপাশ থেকে আবারও বললো

-দাঁড়িয়ে থেকো না নূর, দ’ম ব’ন্ধ হয়ে ম’রছি আমি। বক্ষপিঞ্জরের য’ন্ত্রনা আমায় মাইল মাইল পারি দিয়ে এনেছে এতদূর, আর দাঁড়িয়ে থেকো নাহ। আমি আর পারছি না অপেক্ষা করতে।

হাতের ফোনটা ছিটকে পরে গেলো, এক ছুটে ঘর থেকে চাবি এনে বারান্দার দরজা টা খুলেই বিদ্যুতের বেগে দৌড়ালো পালক। সময়,স্থান,পরিস্থিতি মাথায় কোনো টারই হিসাব নেই। তার সামনে শুধু মেঘালয় নামক লোকটা। বড় বড় পানির ফোটায় ভিজে যাচ্ছে শরীর, বিদ্যুতের ঝলকানি বেড়েই চলেছে,সাথে ঝড়ের দাপট।
তার চেয়েও তীব্র বেগে ছুটে গিয়ে ঝাপটে পরলো পালক মেঘের বুকে। দু হাতের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে খামচে ধরলো পিঠ। প্রসস্ত পিঠে নখ গুলোর পাঁচটা আঁচড়ের ছাপ বসে গেলো।
প্রবল বৃষ্টির শব্দের সাথে কণ্ঠনালীর সকল বাধা ভেদ করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো পালক।
তার কান্নার আহাজারিতে বজ্রপাত আর বৃষ্টির বেগ তরতর করে বাড়ছে, গলা ছেড়ে কেঁদে দিলো পালক মেঘের বুকে।

কান্নার দাপটে ভাঙা ভাঙা শব্দে বললো

-এতো দেরি কেনো করলেন মেঘ, কেনো আসতে দিলেন আমায়,কেনো শুনলেন না আমার কথা, কতটা কষ্ট হয়েছে আমার জানেন,কেনো আসেননি আগে কেনো?
বলের নখের আঁচড় আরও গাঢ় করে ধরলো।

দু’হাতে ঝাপটে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। কোমর ঝাপটে ধরে উচু করে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে মেঘ। ঘন হওয়া কণ্ঠস্বরে অস্ফুটভাবে বললো।
“ভালোবাসি নূর”
এক মুহূর্তের ব্যবধানেই রিনিঝিনি কণ্ঠের ভাঙা ভাঙা শব্দে উত্তর এলো
“ভালোবাসি”

চরম শব্দে ধরণী কাঁপিয়ে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো, বৃষ্টি আর বাতাসের দাপটে এক হলো আকাশ বাতাস, এক হলো দুটো বুক, অনুভূতি। ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে শুষে নিলো অধরামৃত। ঘনঘন নিঃশ্বাস প্রগাঢ় বন্ধনে মিলে গেলো দুটো মন,দুটো আত্মা
.
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu_♥#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৩৮

-আজই চলে যাবে? তুমি যে বললে কিছুদিন থাকতে চাও

-থাকতেই তো চেয়েছিলাম আব্বু, কিন্তু হঠাৎ করেই ক্লাস টেস্টের ডেট দিয়েছে। অ্যাটেন্ড না করলে ফেইল আসবে, আমি ফ্রী হলে আবারও আসবো।

-সে কি কথা হলো, এতদিন পরে আসলি সপ্তাহ খানেক ও থাকতে পারবি না

রুমানা বেগমের কথায়,পালক গিয়ে মাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলে
-আমি কিছুদিন পরেই আবার আসবো আম্মু, দুটো দিন থাকলাম তো এরপর এসে অনেকদিন থাকবো।

-কি আর করার,নিজের খেয়াল রাখিস মা।

-অবশ্যই রাখবো,তোমারাও খেয়াল রাখবে নিজের,আর একদম চিন্তা করবে না আমার জন্য। তুমিতো জানোই মা আন্টি মামনী আমাকে কতো ভালোবাসে,তবুও শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করে অসুস্থ হও কেনো বলোতো, বরং এবার ঢাকা গিয়ে কিছুদিন আমার সাথেই থেকে এসো ভাল্লাগবে আমার।

-যেতে তো চাই, তোর আব্বু তো সময় পাইনা।। আচ্ছা সে যাই হোক, তোর তো বাসের সময় হচ্ছে। তৈরি হয়ে নে,বেরোবি তো?

-হ্যাঁ আম্মু, আমি এক্ষুনি রেডি হয়ে আসছি।

বলেই খাওয়া শেষ করে ঘরে এসে গেলো পালক। আসলে এই সবটা করা লাগলো মেঘালয় নামক লোকটার জন্য । সারা রাতেও বাড়ি ফেরেনি লোকটা, এখনো গাড়ি নিয়েই বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে অপেক্ষায় আছে, তাকে হাজারো বার বুঝিয়েছে পালক যে সে দুই এক দিনের মধ্যেই ফিরে যাবে। তবুও তার এক কথার নড়চড় নেই “তোমাকে রেখে আমি একা কিছুতেই ফিরবো নাহ”। সারাটা রাত ধরে রেখেছিলো নিজের কাছে। রাতের কথা মনে পরতেই এখনো পালকের সারা মুখ লজ্জায় লাল হয়ে আসছে।
ভারি বর্ষনের দাপটে সারা শরীর ভিজে জবজবে, দু হাতে বুকের মাঝে কতক্ষণ চেপে ধরে রেখেছিলো সে সময় বেহিসেবী। চোখে, নাকে, কপালে সারা মুখে অজস্র চুমুতে ভরে দিয়েছিলো। অস্থির কণ্ঠে বারবার বলেছিলো

-ভালোবাসি নূর,অনেক বেশি ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি। আর কখনো দূরে যেতে দেবো না জান, একটু খানিও দূরে যেতে দেবো নাহ। চলো না আমরা এক্ষুনি ফিরে যায়।

মেঘের এমন অস্থিরতা দেখে পালক বলে

-শান্ত হোন,,আমি কোথাও যাচ্ছি না, আমিতো আছিই আপনার। এখন এতো রাতে কি করে যাবো বলুন

-আমি তোমায় ফিরিয়ে নিতে এসেছি নূর,তোমাকে ছেড়ে আমি কিছুতেই যাবো নাহ।

-পাগলের মতো কথা কেনো বলছেন বলুন তোহ, এতো রাতে কি করে যাওয়া যায়, আব্বু আম্মু সকালে উঠে যখন দেখবে আমি নেই তখন কি ভাববে

পালকের কথায় মেঘ কিছুক্ষণ শান্ত ভাবে তাকিয়ে থেকে পালকের হাত ধরে টেনে গাড়ির ব্যাকসীটে বসিয়ে নিজেও বসে পরে পাশেই।

-তাহলে আজ সারারাত তুমি এখানে থাকবে,আমার সাথেই। আর কাল সকাল হলেই চলে আসবে আংকেল আর আন্টিকে বলে, তারপর আমি তোমায় নিয়ে যাবো বাড়ি।

পালক শুধু নিঃশব্দে তাকিয়ে দেখছে মেঘকে, তার প্রথম দেখা মেঘ আর এই মেঘের মাঝে বিস্তর ফারাক, সেই রাগী, গম্ভীর, মুখচোরা, শান্ত ব্যক্তিত্বের লোকটা এখন নিতান্তই একটা বাচ্চার মতো আচরণ করছে, ঠিক যেভাবে বাচ্চারা খেলনার জন্য জিদ ধরে, ওটা না পেলে যাবে নাহ তেমনই। পালক অপলক চেয়ে থাকে বিন্দু বিন্দু বৃষ্টি ফোঁটায় ভিজে থাকা মুখটার দিকে। মেঘ পালকের দিকে ফিরে বলে

-আমি কাল রাত থেকে ঘুমাইনি নূর,ভীষণ ক্লান্ত লাগছে, আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও নাহ

বলেই কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে পরে। দু’হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে পালকের পেটের ভেতর মুখ গুঁজে দেয়। বৃষ্টির পানিতে ভিজে হিম হয়ে থাকা শরীরে মেঘালয় যেনো তপ্তটার উৎস টুকু মেলে দিলো। পাতলা জামা ভেদ করে মেঘের উষ্ণ শ্বাস যেনো সুচের মতো বিধছে শরীরে, সারা শরীর জমে আসছিলো। মেঘ কে সরিয়ে দিতে নিলেই দু’হাতের বন্ধন আরও নিবিড় করে চেপে ধরে বলেছিলো

-হুসস,,একদম নড়াচড়া করবে না,এই দুইদিন আমায় ভীষণ পু’ড়িয়েছ এবার একটু শান্তি দাও।

বলেই পালকের হাত টা নিয়ে নিজের চুলে মধ্যে গুঁজে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো।
প্রতিটি কথার সাথে ঠোঁটের স্পর্শে পালকের শরীরে যেনো আগুন জ্ব’লছিলো। অসহ্যকর একটা অনুভূতির বেড়াজালে জমে গেছিলো। কিছুক্ষণ স্থির থেকে ধীরে ধীরে আঙুল গলিয়ে দিলো মেঘের চুলের ভেতর। লোকটা ভেজা শরীর নিয়েই ঘুমিয়ে গেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই। আর পালক সারা রাত চেয়ে ছিলো মেঘের ঘুমন্ত মুখটার দিকে। আনমনেই আওড়েছিলো কয়েক বার “এই মুখটার দেখে আমি ম রেও শান্তি পাবো”

“হয়েছে তোমার মামনী ”

বাবার ডাকে রাতের স্মৃতিচারন থেকে সম্ভিত ফিরে পালকের, ওড়না টা গলায় পেঁচিয়ে ব্যাগ টা হাতে নিয়েই বের হয়।

-তুমি শুধু শুধু কষ্ট করে কেনো যাবে আব্বু,আমিতো একাই যেতে পারবো

-কই কষ্ট, শুধু বাসেই তো উঠিয়ে দেবো।
বলেই পালকের হাত থেকে ব্যাগ টা নিয়ে হাঁটতে শুরু করলো তার বাবা। পালক মায়ের কাছে গিয়ে আবারও বিদায় জানিয়ে নিজেও বেরিয়ে পরে। বাবা মাকে ছেড়ে যেতে প্রতিবারই ভীষণ কষ্ট হয়। কিন্ত কি করার, মেঘের জিদের বসে বেরোলেও পুরোটা মিথ্যা বলেনি পালক। আবেগের বশে চলে আসলেও দুদিন পর সত্যিই তার ক্লাস টেস্ট। তাই আজ তার এমনিতেও ফেরা লাগতো।
তারেক হাসান মেয়েকে রিকশা করে এনে, বাসের টিকেট কেটে তুলে দেয়। বাসটা চলতে শুরু করলেই মেয়েকে বিদায় জানিয়ে সেও ফিরে যায়।
বাসটা চলার দুই মিনিটের মাথায় ফোন বেজে ওঠে পালকের, রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে
ধ মকের সুরে বলে

-আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য, আর তুমি কি না বাসে উঠে গেলে

-আসলে আব্বু দিয়ে গেলো তো তাকে কি বলতাম।

-এক্ষুণি বাস থেকে নামো।

-কিন্ত মাত্রই চলা শুরু করলো বাসটা,নেক্সট স্টপ আসার আগ পর্যন্ত তো থামাবে নাহ।

-তুমি থামবে নাকি আমি গাড়িটা এনে বাসের সামনে দাঁড় করাবো।

মেঘের এমন হু মকি শুনে আচ্ছা ঠিকাছে বলেই ফোন কেটে দেয়, দিন দিন যতটা পাগলামি বাড়ছে মেঘালয়ের এতে তার দ্বারা কোনো কিছু অসম্ভব নয়। কিন্তু পালক পরলো বিপাকে, এখন সে কি বলবে। কনডাক্টরের দিকে খানিক চেয়ে মৃদু কেঁশে ডেকে বললো।

-বাসটা কি এখানে থামানো যাবে প্লিজ

কনডাক্টর টাকা গুনতে গুনতে বেশ বিরক্ত নিয়ে বলে

-কি বলেন আফা,এইতো ছাড়লো মাত্র, আর আপনার টিকের তো সাভারের, তাইলে এহানে ক্যান নামবেন

-আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ পরে গেছে, আমার এক্ষুনিই ফিরতে হবে,আপনি দয়া করে ড্রাইভার কে একবার বলুন প্লিজ।

-পরের স্ট্যান্ডের আগে তো গাড়ি থামবো না আফা, তার পরেও আপনে যখন এতো করে বলছেন আমি বইলা দেহি ভাইরে

বলেই সামনে এগিয়ে গেলো লোকটা, কিছুক্ষণ ড্রাইভারের সাথে কথা বলেই, ব্রেক করে থামলো বাসটা, লোকটা এসে তাড়া দিয়ে বললো

-দেরি কইরেন না আফা, আপনের জন্য এমনেই বাস থামাইতে হইছে শিগগির নাইমা পরেন,আর হ্যাঁ ট্যাকা কিন্তু ফেরত দেওন যাইবো নাহ।

আমি পারাপারি করে ব্যাগ নিয়ে নামতে নামতে বললাম
-টাকা লাগবে নাহ, অনেক ধন্যবাদ

আমি নামতেই বাসটা মুহুর্তেই আবারও ছুটে দৃষ্টির বাহিরে যাওয়ার আগেই কালো রঙের মার্সিডিজ টা এসে থামলো আমার সামনে, ভেতর থেকে দরজা টা খুলে দিতেই উঠে বসলাম। মেঘ আমার হাত থেকে ব্যাগ টা নিয়ে থপ করে পেছনের সীটে রেখে দিলো। এমন পাগলামি করার কোনো মানে হয়! বেশ রাগ দেখিয়ে উনাকে বললাম

-কি সমস্যা বলুনতো,সব সময়ে সব কাজেই এমন ধমকা ধমকি করেন কেনো,আর পাঁচ মিনিট গেলেই তো নেক্সট স্টপ আসতো আপনি…

পুরোটা শেষ করার আগেই আমায় হ্যাঁচকা টান দিয়ে কাছে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো। অপ্রস্তুত থাকায় বেশ অবাক হয়ে চুপ করে আছি। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কিছুক্ষণ বাদে বললেন

-অস্থির না হয়ে কি করবো বলো, সেই সকালে আমায় রেখে গেলে,কতক্ষণ পার হয়েছে বলো তো, ভেতরটা অস্থির হয়ে ছিলো তোমার জন্য

নরম কণ্ঠে বলা শব্দ গুলো শুনে চুপ করে গেলাম। আমায় এক হাতে জড়িয়ে রেখেই গাড়ি চালানো শুরু করলেন। ইস! এতো ভালো কেনো লাগছে? ভালোবাসা এতো সুন্দর কেনো! ভালোবাসার মানুষের বুকটাতে এতো সুখ! এতোটা শান্তি! অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভেতরে ঠান্ডা হয়ে আসলো। আমিও নড়াচড়া না করে লক্ষী মেয়ের মতো বুকের সাথেই লেপ্টে থাকলাম। ইদানীং এই লোকটার এই পাগলামি গুলো ছাড়া আমিও যে থাকতে পারিনা

_______________________

-আফুর কি খবর বলতো, ও কি এখানো ফেরেনি?

-তাতে তোর কি, তুই তো পায়ে গেছোস তোর আরাব ভাইরে, ওপস এখন তো ভাইয়া আর ভাইয়া নেই ছাইয়া হয়ে গেছে।

ঠা’স করে একটা চাপড় বসিয়ে দিলো আদ্রিশের পিঠে আরশি।

-আমার কি মানে, আমার বান্ধবীর খোঁজ আমি রাখবো নাহ।

-এহ আইছে বান্ধবি আলা, ছাইয়ার শোকে তো ভেটকাইয়া পইরা আছিলি কতদিন, তখন কই গেছিলো বান্ধবী গিরি

-আদ্রিইশশা তুই আসলেই একটা..

-আব্বে থাম আপদের দল। আজাইরা মারামারি বাদ দেহ।আমার কথা শোন

আদ্রিশ নিবিড় আর আরশি বসে ছিলো ক্যাম্পাসের মাঠে, রাফাত আর শিমু কিছুক্ষণ বাদেই এসে বসলো। রাফাত ওদের থামিয়ে বলে

-সকালে মামনী আসছিলো আম্মুর সাথে গল্প করছিলো শুনলাম, মেঘ ভাই নাকি কাল রাতেই আফুরে আনতে গেছে

-হোয়াটট,,ভাই তো সেই ফাস্ট রে,, কিন্তু আন্টি কি করে জানলো মানে কেমন কি, আন্টি এসব কি করে

নিবিড় কে থামিয়ে রাফাত আবারও বললো

-আবে আমারে শেষ করতে দে শা’লা। মামনী সব জানে ব্রোহহ। মামনীই নাকি ভাইরে পাঠিয়েছে আফুরে আনতে

-কিহহ,, কি কস। আন্টি? আন্টি কি করে জানলো

আরশিকে থামিয়ে রাফাত বললো

-জানি নাহ,আমিও জানি নাহ, আমি হালকার উপরে ঝাপসা শুনছি, শুধু এইটুকুই বলতে পারি আমাগো বাপ মায়েরা আমাগোর চেয়েও এক কাঠি উপরে বস। সব বুঝে। মামনী নাকি আগেই বুঝতে পেরেছিলো মেঘ ভাইয়ের ব্যপার টাহ, আর কাল ভাই নিজেই মামনীরে সব কইছে

-ইয়েএএএএএএ,,তার মানে খুব শীঘ্রই একটা সুসংবাদ পাইতাছি ভাইই

বলেই আরশি উড়াধুড়া লাফানো শুরু করলো। আরশিকে থামিয়ে শিমু বললো

-থাম,কি শুরু করলি, সবাই দেখছে।।

-দেখুক,আজকা তো আমি খুশির ঠেলাই ক্লাস ই করুম নাহ, জম্পেশ একটা পার্টি হবে।

আদ্রিশের কথায়,আরশিও বললো।
-একদম, চল আফুদের ওখানেই যাই,

-কিন্ত ক্লাস?

-রাখ তোর ক্লাস,একদিন না করলে কোনো মহাভারত টা অশুদ্ধ হবে নাহ
বলেই শিমুকেও সাথে নিয়ে হাঁটা ধরলো সবাই।

___________________

বেলা প্রায় সাড়ে দশটা,গাড়িটা এসে থামলো চৌধুরী বাড়ির সামনে। চাবিটা ঘুরিয়ে, মেঘ আলতো করে হাত রাখলো পালকের মাথায়, মেয়েটা ওর বুকেই ঘুমিয়ে গেছে, সারা রাস্তা এক হাতে ধরেই আগলে রেখেছে পালক কে। এই শান্তিটার জন্য সে কতো না ছটফট করেছে। মেয়েটাকে কিভাবে সে নিজের সাথে এভাবে জড়িয়ে নিলো মেঘ আজও বুঝতে পারেনা। এইতো সেদিন,, দুটো মাসের চেয়ে কয়েক দিন বেশি হবে পরিচয়ের সময়সীমা, এর মাঝে এতোটা ভেতরে কিভাবে গেঁথে গেলো। পালকের সেই বোকা বোকা কথা,ধমক খেয়ে চুপসে যাওয়া চেহারা আর খিলখিল করা হাসি না দেখলে যে মেঘের ভালো লাগেনা। সবসময় নিজের কাছে ধরে রাখতে ইচ্ছে করে।

পালকের ঘুম পাতলা হতেই নড়েচড়ে ওঠে, মেঘ মুচকি হেসে পালকের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে

-বাড়ি এসে গেছে সুইটহার্ট, উঠবেন নাকি আরও কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরেই থাকতে চান

মেঘের কথায় ঘুম পুরোপুরি ছুটে যায়। মাথা উচিয়ে মেঘের দিকে তাকাতেই, পালকের নাকের উপর টুপ করে একটা চুমু দেয় মেঘ।
ছিটকে সরে আসে পালক। ঘুমটা না সরতেই মেঘের এমন কান্ডে ভীষণ লজ্জা পায় পালক। লোকটা আর কত বেহায়া হবে খোদা জানে, পালকের লজ্জায় লাক নীল হওয়া মুখ দেখে মেঘ সরে এসে বলে

-এতো লজ্জা পেতে দেখলে তো লজ্জা আরও বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হয়।

পালক মেঘের দিকে ঘুমে লাল হওয়া চোখে তাকালে মেঘ আবারও বলে

-তুমি কল্পনার চেয়েও সুন্দরী, ফুলের চেয়েও মনোরম… বাতাসের চেয়েও অন্তর্ভেদী তাই তো তুমি হীনা থাকতে পারি না,থাকবোও না।। খুব তাড়াতাড়িই নিয়ে আসবো,আমার বউ করে।
গেট রেডি টু বি মিসেস চৌধুরী সুইটহার্ট

মেঘের এমন কথায় অঙ্গে অঙ্গে আলোড়ন তৈরি হচ্ছে পালকের, লজ্জার আরেকটুও থাকতে পারছে নাহ,

-ধ্যাতত…

বলেই দরজা খুলে এক ছুটে দৌড়ে চলে যায় পালক
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu_♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here