তুমি এলে তাই পর্ব ৭

#তুমি এলে তাই ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৭
.
পার্ফরমেন্স শেষ করে গুঞ্জন স্টেজ থেকে নেমে গেলো। আর তারসাথে স্পন্দনও ঘোর থেকে বেড়িয়ে এলো। স্পন্দনের বাবা আরহান চৌধুরী হালকা হেসে বললেন,

— ” বাহ দারুণ গাইলোতো মেয়েটা।”

মিসেস চৌধুরীর ওনার সাথে তাল মিলিয়ে বললেন,

— ” হ্যাঁ তাইতো দেখলাম। তোমার ছেলের মুখে ওর নিন্দা শুনেই বুঝেছি মেয়েটার মধ্যে অসাধারন কিছুতো আছে।”

স্পন্দনের কানে ওনাদের কথা এলেও উত্তর দেওয়ার মনমানসিকতা আপাতত ওর মধ্যে নেই। ও সত্যিই অবাক হয়েছে গুঞ্জনের গান শুনে। গুঞ্জনের আচার আচরণ, কথাবার্তা শুনে মনেই হয়নি যে ওর মধ্যে এমন প্রতিভাও থাকতে পারে।

এদিকে গুঞ্জন স্টেজ থেকে নামতেই সারা দৌড়ে এসে ওকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” ওয়াও ওয়াস ওয়াও…ইট ওয়াস মাইন্ডব্লোয়িং। আর তুমি কী না বলেছো অতোটাও ভালো না?”

গুঞ্জন মুচকি হেসে বলল,

— ” ভুল কিছূ বলেছি কী?”

সারা মুখে মুচকি হাসি রেখে বলল,

— ” অবশ্যই ভুল বলেছো। তুমি নিজেও জানোনা তুমি কতো ভালো গান গাও।”

অঙ্কুর গুঞ্জনের কাছে এসে বলল,

— ” সিরিয়াসলি ইয়ার। তুই এমনিতেও ভালো গাস। কিন্তু আজ যেনো তোর গানে একটা ম্যাজিক ছিলো।”

প্রাপ্তি ও এক্সাইটেড হয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ ইয়ার পুরো ফিদা হয়ে গেছি।”

গুঞ্জন একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

— ” অনেক হয়েছে এবার ক্লাবে যাবিতো নাকি? চল তাহলে?”

সারা মুখ গোমড়া করে বলল,

— ” এখনই চলে যাবে?”

গুঞ্জন সারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” যেতে হবে। গান গাইতে এসছিলাম গাওয়া শেষ! আব কেয়া?”

এটুকু বলে চলে যেতে নিয়েও সারার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল,

— ” আমার সাথে এতো কথা বলোনা। তোমার ভাইয়া তো এখানেই আছে। দেখতে পেলে পরে তোমাকেই বকবে।”

গুঞ্জন ওর বন্ধুদের নিয়ে চলে গেলো আর সারা কিছুক্ষণ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে চলে গেলো স্পন্দনদের কাছে।

________________________

রাতের ডাইনিং টেবিলে গুঞ্জনের হোল ফ্যামিলি বসে ডিনার করছে। ডিনার করতে করতে মেঘলা হেসে বলল,

— ” আজ গুটি কী দারুণ গান গাইলো তাইনা?”

রিয়াদ হোসেন কিছু বলবেন তার আগেই গুঞ্জনের কাকী মিসে অনিলা মুখ বাকিয়ে বললেন,

— ” গেয়েছে তো কী হয়েছে? একটা গান ই তো গেয়েছে? এতো লাফানোর কী আছে?”

মেঘলা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” আচ্ছা গুটিকে নিয়ে তোমাদের এতো কীসের প্রবলেম বলবে? কী করেছে ও তোমাদের?”

মিস্টার রাশেদ অবাক হয়ে বললেন,

— “এমনভাবে বলছিস কেনো? আমরা কী ওর খারাপ চাই নাকি?”

মিসেস অনিলাও বিরক্তি নিয়ে বললেন,

— ” সেইতো? এইযে এতোটা রাত হয়ে গেছে এখনো বাড়ি ফেরার নাম নেই। কী করে বেড়াচ্ছে কে বলতে পারে? দেখো কবে বংশের মুখে চুনকালি লেপটে দেয়।”

রিয়াদ হোসেন আর মিসেস নিলিমা চুপচাপ শুনছেন কিছু বলছেন না। আবির পাশের ওদিকে সোফাতেই বসা ছিলো। হঠাৎ করেই ও বলে উঠল,

— ” গুঞ্জন তো তোমাদের চেয়ে আমাদের বেশি আপন তাইনা? অনেক তো ভাবলে তোমরা ওকে নিয়ে এবার আমাদের একটু ভাবতে দাও। নিজেদের ব্রেইনে এতো চাপ নিওনা। চিল করো।”

রিয়াদ হোসেন আবিরের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” আবির কী হচ্ছে কী?”

আবির একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” যাক। তুমি কথা বলতে পারো তাহলে? আমিতো ভেবেই বোবা হয়ে গেছো। এতোক্ষণ তোমার নিজের মেয়ের নামে কেউ এতো বাজে বাজে কথা বলছিলো তখন তো কিছু বলোনি?”

মিসেস নিলিমাও একটু রেগে বললেন,

— ” তোমার বোন যেভাবে চলাচল করে তাতে এগুলো বলা কী খুব অস্বাভাবিক?”

আবির ভ্রু কুচকে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আমি যদি বলি ওর এরকম জীবণযাপনের জন্যে আমরাই দায়ী তাহলে?”

রিয়াদ হোসেন অবাক হয়ে বললেন,

— ” কী বলতে চাইছো তুমি?”

আবির হালকা হেসে বলল,

— ” কিছু না। তবে কাকা কাকী তোমাদের বলছি গুটি যেরকম আছে সেরকম বেশ ভালো আছে। আর তোমাদের কথা অনুযায়ী যদি এইসব আচরণের কারণে ওর বিয়ে নাও হয় তাহলেও আমার বোনকে সারাজীবন বসিয়ে খাওয়ানোর মত যোগ্যতা আমার আছে। সো এসব তোমাদের না ভাবলেও চলবে। সো স্টে ইন ইউর লিমিট ওকে?”

রাশেদ হোসেন ধমকের সুরে বললেন,

— ” আবির ভুলে যেওনা গুঞ্জনকে কিন্তু আমরাই মানুষ করেছি।”

আবির আবারও একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” তাইতো মেয়েটার এই অবস্হা।”

এটুকু বলে ওখান থেকে চলে গেলো আবির। আর মেঘলাও বিরক্ত হয়ে নিজের খাবারের প্লেটটা নিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। গুঞ্জনের বাবা মাও একটা হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।

_____________________

এদিকে স্পন্দনদের বাড়িতেও ডিনার করতে করতে আরহান চৌধুরী নিজের স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

— ” যাই বলোনা কেনো মেয়েটা কিন্তু বেশ ভালো গান গায়। আর দেখতেও খুব মিষ্টি। যদিও পোশাকআশাক একটু ছেলে ছেলে টাইপ। কিন্তু তাতে আর কী?”

মিসেস চৌধুরীও একটু হেসে বললেন,

— ” আরে পোশাকে কী যায় আসে? কী সুন্দর দেখতে বলো মেয়েটা? তারওপর কী গলা আমার তো বেশ ভালো লেগেছে।”

স্পন্দন এতোক্ষণ চুপচাপ ওনাদের কথ শুনলেও এবার একটু রাগী কন্ঠে বলল,

— ” কারো পোশাক দিয়ে যেমন কাউকে জাজ করা যায়না। ঠিক সেরকমই শুধুমাত্র গানের গলা ভালো হলেই সেই মেয়েটাও যে ভালো হবে সেটাও বলা যায়না। তাইনা? আর ওই মেয়ের ব্যবহারগুলো দেখেছি আমি সো প্লিজ আমার কাছে অন্তত ওর সাফাই গাইতে এসোনা।”

সারা মাথা নিচু করে খেয়ে যাচ্ছে। ও তো গুঞ্জনের মধ্যে খারাপ কিছুই দেখতে পায়না। কিন্তু স্পন্দন যে কেনো গুঞ্জনকে সহ্য করতে পরেনা সেটাই ও বুঝে উঠতে পারেনা। মিসেস চৌধুরী বললেন,

— ” আমি মেয়েটাকে যতটুঢ় দেখলাম তাতে আমার কিন্তু খারাপ মনে হয়নি।”

স্পন্দন বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” প্লিজ মা বাদ দাও ওর কথা। খাওয়ার সময় আর বেশি কথা বলোনা।”

স্পন্দনের কথায় কেউ আর কিছু বললোনা। স্পন্দন আর সারা খেয়ে উঠে যাওয়ার পর। মিসেস চৌধুরী আরহান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তুমিও কী সেটাই ভাবছো যেটা আমি ভাবছি?”

আরহান চৌধুরী কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বললেন,

— ” হুমম তবে কাজটা সহজ হবেনা। তোমার ছেলে যা রেগে আছে মেয়েটার ওপর। অনেক কঠ খর পোড়াতে হবে।”

মিসেস চৌধুরীরও সায় দিয়ে বললেন,

— ” হ্যাঁ। আর গুঞ্জন সম্পর্কে যেটুকু শুনেছি তাতে ওও এতো সহজে মানবে বলে মনে হয়না।”

আরহান চৌধুরী একটা শ্বাস ফেলে বললেন,

— ” হুমম দেখি কী করা যায়।”

________________________

গুঞ্জনদের ক্লাস সবে শেষ হলো। আজ প্রাপ্তির বার্থডে তাই এখন সবাই মিল ক্লাবে যাবে। ওখানে রাত বারোটা পর্যন্ত থেকে কেক টেক কেটে তারপর বাড়ি ফিরবে। তাই সবাই প্রস্তুতি নিতে নিতে বাইরে বেরোবে ঠিক সেই সময় সারা এলো ওদের কাছে। গুঞ্জনের কাছে গিয়ে হাসি মুখে বলল,

— ” হাই! কোথাও যাচ্ছো মনে হয়?”

গুঞ্জন মুচকি এক হাসি দিয়ে বলল,

— ” আসলে আজ প্রাপ্তির বার্থডে আছে তাই আমরা রাত পর্যন্ত সবাই মিলে ক্লাবে সেলিব্রেট করবো।”

সারা গিয়ে প্রাপ্তির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

— ” হ্যাপি বার্থডে।”

প্রাপ্তি মুচকি হেসে হাত মিলিয়ে বলল,

— ” থ্যাংক ইউ।”

সারা এক্সাইটেড হয়ে গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আমিও যাবো তোমাদের সাথে।”

ওরা সবাই বেশ অবাক হলো। গুঞ্জন মুখে হাসি রেখেই ভ্রু কুচকে বলল,

— ” অনেক রাত হবে কিন্তু ফিরতে।”

সারা হেসে দিয়ে বলল,

— ” সমস্যা নেই আমি ম্যানেজ করে নেবো।”

গুঞ্জন হাত ভাজ করে একটু এগিয়ে বলল,

— ” তোমার ভাইয়া রাগ করবে না? আমার সাথে কোথাও গেলে? ”

সারা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

— ” ভাইয়াকে বলবোই না। বলবো যে ফ্রেন্ড এর বাসায় ছিলাম। শুধু আব্বু আম্মুকে বলে রাখবো ওরা গাড়ি পাঠিয়ে দেবে।”

— ” কিন্তু তোমার ভাই…”

সারা কিউট একটা ফেস করে বলল,

— ” প্লিজ প্লিজ প্লিজ। না করোনা। তোমার ফ্রেন্ডের বার্থডে তে এতো করে নিতে চাইছি। নেবে না বলো?”

সারা এমনভাবে বলল যে গুঞ্জন আর না করতে পারলোনা। মুচকি হেসে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে।”

সারা খুশি হয়ে ওকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ সো মাচ।”

গুঞ্জন সারাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

— ” হুমম বাট একটা কথা মনে রেখো ওখানে কিন্তু নানারকমের মানুষ থাকে। আমরা ওখানে আমাদের মতো আলাদাভাবে ইনজয় করতে থাকি। তাই তুমি কিন্তু আমাদের সাথেই থাকবে এদিক ওদিক যাবেনা। চাইলেও কিন্তু সবসময় চোখেচোখে রাখতে পারবোনা আমি। সো বি কেয়ারফুল ওকে?”

সারা মাথা নাড়ল। এরপর ওরা সবাই মিলে ওদের জিপে করে ক্লাবের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here