তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব -০১

তুই কি ভেবেছিস বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবি আর আমি তোকে ডেং ডেং করে বিয়ে করে নিবো। তুই কি করে ভাবলি তোর মতো একটা চরিত্রহীন ছেলেকে এই হৃদিতা চৌধুরী বিয়ে করবে। হৃদরাজের থেকে তার হৃদপরীকে আলাদা করার প্লেন করলি কিন্তু একটাবার খোঁজ নিলি না এর পরিনাম কি হবে?

তোর হৃদরাজ কই। দেখি না তো। সে তো বাইরে। দেখিস কোনো বিদেশি মেয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসবে।

আমাকে কি তোর বোকা মনে হয়?আমি অবুঝ যে তুই আমাকে ভুলভাল বুঝাবি তা নিয়েই পড়ে থাকবো। তোকে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে।

তুই আমাকে কি করবি। আমি ইচ্ছে করলে এখনি তোর সাথে যা ইচ্ছা তাই করতে পারি তোর ধারণা আছে?

রিয়েলি? প্লিজ আরমান ভাই আমার কোনো ক্ষতি করো না। আমি তোমার পায়ে পড়ছি আরমান ভাই। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।

হৃদিতার কথা শুনে আরমান বিদঘুটে হাসছে। হঠাৎ ই হৃদিতার চেহারার রং পালটে গেল। এমন ভাবে চেয়ে আছে যে সব কিছু ভস্ম করে দিবে। তা দেখে আরমান ও একটু ভয় পেয়ে গেল। ভয়টাকে প্রকাশ না করে স্বাভাবিক হয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই হৃদিতা হুংকার দিয়ে উঠলো

তুই কি ভেবেছিলি আমি এগুলো বলবো?হৃদিতা চৌধুরী তোর কাছে মিনতি করবে। দাড়া আজকে তোকে একটা শিক্ষা দিতেই হবে। অনেক দিন ধরে পিছে পড়ে আছিস। কিছু বলছিনা বলে বেশী বাড় বেড়েছিস।

কথা গুলো বলেই হৃদিতা মুখ দিয়ে একটা শিষ বাজায় সাথে সাথে আরমানকে কয়েকটা ছেলে মেয়ে হটিস্টিক হাতে নিয়ে ঘিরে ধরে তা দেখে আরমান থরথর করে কেঁপে উঠে। আজকে একটু বেশী সাহস দেখাতে গিয়েছিল। এখন যে তার জন্য তাকে এভাবে পস্তাতে হবে এক মুহূর্তের জন্যও ভাবে নি। হৃদিতা আর ছেলেমেয়ে গুলো আরমানকে দেখে বাঁকা হাসে। হৃদিতা কয়েকটা ছেলেকে ঈশারা করে চলে যায় ওইখান থেকে। ছেলেগুলো ইশারা পেয়েই আরমানকে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে। দলের মেইন লিডার হলো হৃদিতা তা কেউ জানে না। দলের নাম ‘হৃদতান’। এই দল সম্পর্কে সবাই শুনেছে আর সবাইকে চিনলেও লিডার যে হৃদিতা তা কেউ জানেনা। এবার পরিচয়ে আসা যাক।

হৃদয় চোধুরীর আর পরশী চৌধুরীর এক ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে পরশ চৌধুরী ছোট মেয়ে হৃদিতা চোধুরী। হৃদিতা চৌধুরী হলো সবার কলিজা। ছোট আর নাদুসনদূস বলে একটু বেশী আদর করে। পাপা আর ভাইয়ের কলিজা। যাকে মারল সে হলো আরমান হৃদিতার ভার্সিটির সিনিয়র। অনেকদিন ধরে পিছে পড়ে আছে। চরিত্রের বালাই নেই। হৃদিতা অনেকবার বুঝিয়েছে ওর হৃদরাজের কথাও বলেছে কিন্তু কে শুনে কার কথা সম্পত্তির লোভে আর হৃদিতার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিয়ে করার ধান্দা করেছে। তাই বানচাল করার জন্য বন্ধুদের নিয়ে আজকে দিয়েছে কেলানি। বন্ধুরা হলো রাইসা রাহি রোহানি সাহিল আর আধির। এরা হলো একেকটা কলিজার বন্ধু। ভাই-বোনের মতো। এমন কোনো কথা নেই যে এদের মধ্যে কেউ কারোরটা জানেনা না। অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। ভার্সিটির সবাই ওদের চিনে। যেমন বড়লোক তেমনি টেলেন্টেড। আর ব্যবহারও অনেক ভালো। সবাইকে যথেষ্ট সম্মান ও স্নেহ করে চলে। তাইতো সবাই খুব ভালোবাসে। ওরাও কিছুক্ষন মেরে হৃদিতার কাছে আসলো।

কার কতদিন এইভাবে চলবে হৃদি -রাহি

যতদিন বেঁচে আছি -হৃদিতা

তোর কি মনে সে এখনো তোকে মনে রেখেছে -রাইসা

হৃদরাজ কখনো তার হৃদপরীকে ভুলতে পারে না -হৃদিতা

আচ্ছা শোন কাল যে পিয়াস বজ্জাতটে কেলানি দিয়েছি ওরা কিন্তু ঝামেলা করতে পারে -আধির

ঝামেলা করবে কালকে কম দিয়েছিস এরপর একমাস হসপিটালে থাকার ব্যবস্থা করবি -হৃদিতা

ইয়াহ জো হুকুম মহারানী -সাহিল

আচ্ছা শোন কালকে তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে আসবি -রোহানি

আচ্ছা এখন আয় বাসায় যাই । ভাইয়ার আসার সময় হয়ে এলো। আমাকে না দেখতে পেয়ে বাড়ি মাথায় তুলবে -হৃদিতা

হৃদিতার ভাইয়ের কথা তুলতেই রাইসা লজ্জা ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে। এটা নতুন না পরশের কথা উঠলেই রাইসা এমন করে। পরশ বাবার বিজনেস সামলায় এখন। রাইসা পরশকে সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসে। কখনো বলে নাই। বলবে কি করে সামনে গেলেই কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়। ওদের সবার বাসা পাশাপাশি। সাথে তাদের সবার পরিবারের সাথেও বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। সবাই কথা বলতে বলতে যে যার বাসায় চলে গেল। হৃদিতা বাসায় গিয়েই দেখলো ওর ভাইয়া সোফায় বসে আছে। তা দেখেই দৌড়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কোলো বসে পড়ে।

ভাইয়ু আমার পাওনা -হৃদিতা

কিসের পাওনা হৃদিপাখি -পরশ

ভালো হচ্ছে না কিন্তু ভাইয়ু। আমি এবার কেঁদে দিবো কিন্তু -হৃদিতা

আচ্ছা আচ্ছা বনু আমি তো মজা করছিলাম। আমার হৃদিপাখির এই আবদার টা কি আমি ফেলতে পারি। এই নে তোর ডেইরি মিল্ক চকলেট -পরশ

লাভ ইউ এত্তগুলা ভাইয়ু -হৃদিতা

বলেই পরশের গালে টুস করে একটা চুমু বসিয়ে দিল। পরশও তার কলিজাকে পরম আদুরে কপালে ভালোবাসে চুমু দিল। রান্নাঘর থেকে এইসব দেখছে পরশী চৌধুরী মুখে লেগে আছে তার তৃপ্তির হাসি। এখন লাঞ্চের সময়। পরশের যত কাজ ই থাকুক না কেন সব কাজ ফেলে প্রত্যেক দিন এই সময়ে ওকে বাসায় আসতেই হবে। না আসলে যে ওর হৃদিপাখি না খেয়ে থাকবে। লাঞ্চে হৃদিতাকে প্রত্যেকদিন খাইয়ে দিতে হয় পরশ কে। যখন ভার্সিটিতে থাকে তখন ভার্সিটিতেই চলে যায়। পরশও খুব যত্ন সহকারে এই কাজটি করে। হৃদিতা নিজের হাতে খুব কম খায়। সকালে মম দুপুরে ভাইয়ু রাতে পাপা সবসময় এমন করেই খায়। কেউ কিছু বলেও না। পরশ লাঞ্চ করে চলে গেল অফিসে। হৃদিতা তার ঘরে চলে গেল। গিয়েই একটা ডাইরি নিয়ে বসল। ওর লিখালিখির অভ্যাস অনেক আগে থেকেই সেই ছোট্ট বেলা থেকেই। জীবনের সব কথা লিখে রাখে ওর ডাইরিতে। লিখতে লিখতে নিচে থেকে ওর ডাক পড়ল। পরশী চৌধুরী ডাকছে। কে যেন ফোন দিয়েছে।

কি হলো মম ডাকছো কেন?

তোর মামুনি ফোন দিয়েছে নে ধর কথা বল।

আমার সুইট মুইট কিউট পিউট গুলুমুলু মামুনি কেমন আছো?

তোর সাথে কথা নেই আমার। তোর আমার কথা মনে আছে? কেউ আমাকে ভালোবাসে না।

মামুনি তুমি এটা বলতে পারলে। আমি আমার সুইট মুইট কিউট পিউট গুলুমুলু মামুনিকে ভুলে যাবো তার আগে তো আমি নিজেকেই ভুলো যাবো।

হইছে হইছে আর পাম দেওয়া লাগবে। কালকে যেন তোকে আমার সামনে দেখি।

জো হুকুম মামুনি। আপুকে আর কুলকুলিকে কিন্তু বলবে না সারপ্রাইজ দিব।

আচ্ছা এখন রাখছি।

ফোন কেটে দেওয়ার পর হৃদিতা আবার উপরে চলে গেল।যার সাথে কথা বলল সে হলো হৃদিতার ফুপি।রিদিমা চৌধুরী, স্বামী আহনাফ চৌধুরী। মামুনি আর বাবাই বলে ডাকে। ফুপির এক ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে হৃদান চৌধুরী, বড় মেয়ে আলো চৌধুরী ছোট মেয়ে আনহা চৌধুরী।
এখন রাত হয়ে আসছে। বেলকনিতে চলে গেল হৃদিতা। হৃদিতার বেলকনিটা খুব সুন্দর। একপাশে দোলনা চারপাশে বিভিন্ন ফুলের টব রাখা সামনেই একটি শিউলি ফুল গাছ।শরৎ কাল বলে চারপাশ মো মো করছে শিউলি ফুলের সুভাসে। হৃদিতা তা উপভোগ করছে। হঠাৎ ই ওর মনটা খারাপ হয়ে গেল।

তুমি খুব ভালো আছো হৃদরাজ তাই না। তোমার হৃদপরীকে ছাড়া কত আনন্দে আছো। কিন্তু আমি পারছি না কেন বলো তো। কথা দিয়েছিলে না কোনোদিন আমাকে ছেড়ে যাবে না। কথা রাখতে পারোনি তুমি। যখন এই হাতটি তোমার ধরার কথা ছিল তখন তুমি চলে গেছ নিজের ক্যারিয়ারের জন্য। আমার থেকে তোমার কাছে তোমার ক্যারিয়ার টাই বড় হলো। কোনো দিন ক্ষমা করবো না তোমায় কোনোদিন না। সবার কাছে আমার মধ্যে তুমি ধোয়াসা হয়েই থাকবে। জানবে না কেউ এই হৃদিতা চৌধুরী তার হৃদরাজ কে এখনো মনে রেখেছে। মনে রেখেছে বলে কি প্রচন্ড ভালোবাসে কেউ জানবে না এমনকি তুমিও না। কিন্তু আমার আর তোমার মধ্যে কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি আসলে তাকে সরাতেও আমার হাত কাঁপবে না। তুমি নামক অক্সিজেন ছাড়া যে নিশ্বাস নেওয়া বড্ড কঠিন। বড্ড কঠিন হৃদরাজ বড্ড কঠিন।

হৃদিতা এসব বিড়বিড় করছে আর তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। ভালোবাসার মানুষটা পাশে না থাকলে যে কষ্ট হয় সেটা শুধু যার সাথে হয়েছে সেই বুঝবে। হৃদিতা নিজেকে স্বাভাবিক করে পড়তে গেল। সামনে থার্ড ইয়ার এক্সাম। অবশ্য এতে ওর কোনো চিন্তা নেই। ও জানে এবারও ওর রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারবে না ও ফার্স্ট ছিল থাকবে। একটা বই নিয়ে রিভিশন শুরু করলো। একটু পরেই ওর পাপা আর ভাইয়ু আসবে। তাই হলো প্রায় বইটা রিভিশনের শেষের দিকে তখন গাড়ির হর্ন শুনতে পেলো। হৃদিতাও তাড়াতাড়ি পড়াটা কমপ্লিট করে দৌড়ে নিচে গেল। গিয়েই দেখলো রোজকার মতো ওর পাপা ওর জন্য ফ্রেশ না হয়েই বসে আছে। হৃদিতা গিয়ে ওর পাপাকে এক গ্লাস পানি দিল। হৃদয় চৌধুরী সেটা তৃপ্তি সহকারে পান করলেন। এটা হৃদিতার নিত্য দিনের কাজ। তারপর হৃদয় চৌধুরী মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে নিজের ঘরে গেল ফ্রেশ হতে। আর হৃদিতা বসে বসে টিভিতে কার্টুন দেখতে শুরু করলো। প্রায় ২০ মিনিট পর সবাই ডাইনিং এ উপস্থিত হলো। সবাই বলতে হৃদয় চৌধুরী পরশী চৌধুরী পরশ আর হৃদিতা। আরো মানুষ আছে হৃদয় চৌধুরীর ছোট ভাই রিয়ান চৌধুরী তার স্ত্রী নিশি চৌধুরী আর তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের নাম নাশিন চৌধুরী মেয়ের নাম রিয়া চৌধুরী। ওরা এখন দেশের বাইরে আছে প্রায় একবছর ধরে।সামনেই আসবে। রিয়ার অসুস্থতার জন্য দেশের বাইরে যেতে হয়েছিল। রিয়া হৃদিতার ২ বছরের বড়। পরশ আর নাশিন সমবয়সী। হৃদিতা ছোট আব্বু ছোট আম্মু রিয়ু আর ভাইয়া কে খুব ভালোবাসে। তারাও হৃদিতা আর পরশকে আত্না মনে করে। ওরা চলে যাওয়ায় হৃদিতার নিঃসঙ্গতা আরো বেড়েছে। হৃদয় চৌধুরীর মনটা আজকে ভালো নেই। কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে পারছে। এখন যে হৃদিতাকে খাইয়ে দিচ্ছে তাতেও মনোযোগি না কি যেন ভেবে চলছে। তা দেখে পরশী চৌধুরী চুপ থাকতে পারল না।

কি গো কি এত ভাবছো তুমি। সেই কখন থেকে লক্ষ্য করছি তুমি অন্যমনষ্ক হয়ে আছো।

হ্যাঁ পাপা আজ অফিসেও অন্যমনষ্ক ছিলে। কি হয়েছে পাপা, এনি প্রবলেম?

না না তেমন কিছু না। খাওয়া শেষ করো তাড়াতাড়ি।

হৃদিতাও আজকে চুপ করে থাকলো অন্যদিন হলে ওর পাপা ইর ভাইয়ুর সাথে আজকে সারাদিন কি কি করেছে তা নিয়ে গল্পে মেতে থাকতো। সবার খাওয়া দাওয়া হলে যে যার রুমে চলে গেল হৃদিতা আবার কার্টুন দেখা শুরু করল। একটু দেখে আর ভালো লাগছে না বলে ঘুমানোর জন্য গেল। হঠাৎ পাপার রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পাপা আর মমের কথা শুনে থেমে গেল হৃদিতা।

পরশী আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। মেয়ের হাবভাব দেখে তো মনে হয় না যে ছোটবেলার কথা ওর মনে আছে। কয়েকদিন পর যখন আসবে তখন মেয়েকে চাইলে তো না করতে পারবো না

না করবে কেন। কথা যখন দেওয়া আছে। আর ওর হালাল ভাবে সম্পূর্ণ হক আছে হৃদিতার উপর। আর হৃদুর না মনে থাকলো ছোটবেলার কথা। নতুন করে ভালোবাসা জয় করে নিবে আমার ছেলেটা

আমারও বিশ্বাস আছে ওর উপর। এখন তোমার কথা শুনে একটু চিন্তামুক্ত হলাম। চলো ঘুমায়। কালকে তাড়াতাড়ি উঠতে

হৃদিতাও চলে গেল ওর মুখে যেমন খুশির হাসি লেগে আছে তেমনি রয়েছে রহস্যময় হাসি। ওর যে প্রতিশোধ নেওয়া বাকি আছে। হৃদিতাও হাড়ে হাড়ে বুঝাবে কথা খেলাপের পরনতি কি হতে পারে। কষ্ট কাকে বলে বুঝাবে।

চলবে….?

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#সূচনা_পর্ব
Tahrim Muntahana

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here