তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব -০১

খাবার টেবিলে পরোটা আর আলুরদম দেখেই প্লে’ট সহ জো’রে ছু’ড়ে মারে মেঝেতে। প্লে’ট ঝন’ঝন শব্দে গড়াতে গড়াতে ডাইনিং এর কর্ণারে গিয়ে ক্ষা’ন্ত হয়।ভয়ে সোহা চোখ ব’ন্ধ করে কান চে’পে ধরে বসে পরে।

কি বলবে শ’ব্দ গু’চ্ছ সাজাতে হিমশিম খাচ্ছে। গ’লা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।সব কিছু দ’লা পাকিয়ে গলার মধ্যে যেমন আটকে আছে।

আ’স্তে আ’স্তে পিটপিট করে চোখ খোলে সোহা।

সামনে তার স্বামী নামক জ/ম দাঁড়িয়ে আছে র/ক্ত চ’ক্ষু নিয়ে। আড় চোখে দায়ান কে একবার পর্যবেক্ষন করে চোখ নামিয়ে নেয় সোহা।

দায়ান কিছুখন কট’মট চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে রাগে ফু’স’তে ফু’স’তে বলে ওঠে কে কি খায় জেনে রান্না করা উচিত। না জানলে করার কি দরকার? রিডিকুলাস বলেই নিজের গ’ন্ত’ব্যে বেরিয়ে পরে। যাওয়ার আগে ধা’ম করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে যায়।দরজা বারি খেয়ে বিকট শব্দ তুলে আবার ও খুলে যায়। সোহার অন্তর আ’ত্মা কেপে উঠে।

আস্তে আস্তে বসা থেকে উঠে দাড়ায় সোহা। কাপা কাপা পা ফেলে দরজার কাছে চলে যায়। সদর দরজা বরাবর রাস্তা হওয়ায় দায়ান এর গাড়ি শো করে ছুটে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।

দরজা ব,ন্ধ করে মেঝেতে দৃষ্টি দেয় সোহা। চারিদিকে পরোটা, আলুরদমের ছড়াছড়ি। এগুলো প’রি’ষ্কা’র করতে মন সায় দেয়না। শরীর টা ও কো’ল’য় না। সারা শরীর ব্যাথায় টন’টন করছে।চোখ ঝা’প’সা হয়ে আসছে।

এলো-মেলো পা ফেলে বেড রুমে এগিয়ে যায় সোহা। যে রুমটা তার জন্য বরাদ্দ। পুরো বাড়িতে সোহা একা,,, সেদিকে তার ব্রু’খে’প নেই।

একেই হয়ত বলে মনের জালার কাছে সব ভ’য় ই তুচ্ছ। তাইতো সেই ভি’তু সোহা আজ সাহসি হয়ে ওঠেছে।

বিছানার উপর ধ’পা’স করে শুয়ে বালিশের ভিতর মুখ লুকিয়ে ডু’ক’রে কেঁ’দে উঠে সোহা। কি থেকে কি হয়ে গেল। এমনকি আদৌ হওয়া উচিত ছিল? কেন এমন হল উত্তর খুজতে গিয়েও খুঁজে পায়না সোহা।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই শরীরটা কেমন মে’জ মে’জ করতে ছিল সোহার। সাথে শরীর গরম বুঝে গেল জ্ব’র আসতেছে।ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে দেখে ৭ টা বেজে গেছে।তারাতারি হ’ন্ত দ’ন্ত হয়ে বিছানা ত্যা’গ করে। সকাল ৯ টায় দায়ান এর কাজে যাওয়ার সময়,, এখনই রান্না চা’পা’তে হবে। নয়তো খেয়ে যেতে পারবেনা।জমিলা খালা তো নাই। তাই যা করার তাকেই করতে হবে। জমিলা খালা বলেছে ওনার গে’স্টি’ক এর জো আছে।
না খেয়ে থাকলে অ’সু’স্থ হয়ে পরবে।

জমিলা খালা দায়ানের বাড়ির দাড়োয়ানের বউ।সকালে এসে রান্না করে কাপড় ধুয়ে দিয়ে যায়।আর ঘর পরিষ্কার করে। দায়ানের বাড়ির নিচের তলায় ই দাড়োয়ান রহিম চাচা ও জমিলা খালা থাকে।

অ’সু’স্থ শরীর নিয়ে রান্না করতে গিয়ে ভুলেই গেছিলো জমিলা খালা বলেছিলেন দায়ান এসব অয়েলি খাবার খায় না। তাই এতো তা’ন্ড’ব ।

দায়ান এর সাথে সোহার বিয়ে টা পারিবারিক ভাবে ই হয়।দায়ান যখন ঈদের ছুটিতে গ্রাম এ যায়। তখন তার চাচা জো’র করে বিয়ের জন্য। দায়ান প্রথমে রাজি হতে চায়নি। চাচার ই’মো’শ’না’ল কথা বার্তায় রাজি হয়ে ছিল। আপন বলতে এই চাচাটাই আছে। সোহার বাবার বন্ধু দায়ানের চাচা। চাচা সারাক্ষণ সোহার গু’ণের মালা জ’পতো তাতে দায়ান এর ভ্রু’ক্ষে’প নেই। সে শহরে একবার যেতে পারলেই যেন বাঁচে। বিয়েটা সাদামাটা ভাবেই হয়।কোনো আয়োজন ছাড়া।

সব কিছুর মাঝে দায়ানের চাচি নিরব দ’র্শ’ক ছিল।মুখের হাবভাবে বুঝে গিয়েছিল চাচি এই বিয়েতে খুশি নন।ওনি হয়তো ভাবছে বিয়ের পর দায়ান টাকা পয়সা দিবে না।

দায়ান আর সোহা একে অপরকে বিয়ের আগে দেখে নাই।বিয়ের পর যদিও দায়ান কে সোহা দেখেছে। দায়ান হয়তো দেখেনি এখনো প’র্য’ন্ত। সোহাকে ভালো করে,কারণ সোহার দিকে ফিরে ও তাকায় না।সামনে পরলেও সোহা মাথা নিচু করে রাখে।

শহরে দায়ান একাই আসতে চেয়ে ছিল। সোহাকে নিতে চায়নি।চাচার জো’রা’জো’রি তে রাজি হয়ে নিয়ে এসেছে। আজ চারদিন হয় সোহা শহরে এসেছে।

দায়ান এখানে এসে আগেই বলে দিয়েছে,, সোহার সাথে একঘরে থাকতে পারবে না।আলাদা রুমে থাকতে হবে।সহজে যেন দায়ান এর মুখোমুখি না হয়।খুব দরকার ছাড়া যেন সামনে না আসে।

এই কয়দিনে সোহা যা বুঝল দায়ান খুবই ব’দমেজা’জী। গ’ম্ভী’র একজন মানুষ। তাও লোকটার প্রতি অজানা একটা টান অনুভব করে।হয়তো সম্পর্কের জো’র এটা,,,, এই বদ’মেজা’জী লোকটাকেই সোহার কেন যেনো ভালো লাগে।তাইতো লুকিয়ে লুকিয়ে দায়ানকে দেখে সোহা। খুব মায়া হয় লোকটার আপন বলতে কেউ নেই।একা থাকার কারণেই মনে হয় এমন হয়ে গেছে।

কা’ন্না করতে করতে কখন যে চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারেনি।অসু’স্থতার কথাটা ও দায়ানকে কে বলা হয়নি ভ’য়ে।কি জানি কি ভেবে বসে। হয়তো ভাববে উ’ট’কো ঝা’মে’লা ঘা’ড়ে এসে পরেছে।

চারিদিকে আজানের সুমধুর ধ্ব’নি কানে আসতেই পিট’পিট করে চোখ খোলে সোহা। জোহরের আজান দিতেছে, পেটে এখনো কিছু পরেনি।ব্যা’থাটা এখন নেই জ্ব’র ও কমে গেছে।শরীর ঘে’মে নেয়ে একাকার।
যাক বাবা উনি জানার আগেই জ্ব’র ভেনিশ বা’চলাম মনে মনে বলে উঠলো সোহা।

উঠে ডাইনিং টা প’রিস্কার করল সোহা,, গোসল করে নামাজ পরে নিল।

এখন খিদের চোটে পেটে ইঁদুর দৌড়া’দৌড়ি করতেছে। মনে হইতেছে।উফ ভাত খেতে ও ইচ্ছে করছেনা। মুখটা কেমন বি’স্বা’দ লাগতেছে।যাই দেখি গিয়ে রান্না ঘরে কিছু আছে কি না।

রান্না ঘরে গিয়ে বি’স্কুট এর বয়াম আর কলা দেখে সোহার খুশি আর দেখে কে? কলা আর বি’স্কুট খেয়ে নিল ,,, আর মনে মনে বলল আহহহ কি সুস্বাদু।

“পেট শান্তি দুনিয়া শান্তি”।

জমেলা খালার কাছে শুনেছিল দায়ান এসব খাবার পছন্দ করে না।
পরে ভাবল হয়তো জমেলা খালা রান্না করে আর খায় জমেলা খালার আবার স্বভাব আছে রান্না করার সময় খাওয়া।এই কয়দিনে জমেলা খালার সাথে অনেকটাই মিশে গেছে সোহা।

এ বাড়িটা এখনো ভালো করে দেখা হয়নি সোহার।এখন পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখা উচিত।যেই ভাবা সেই কাজ।

বাড়িটা বিশাল বড় দু- তলা। সব কিছু পরিপাটি করে সাজানো গোছানো। যাক সোহা প্রতিদিন এই পাশ থেকে ঔ পাশ টক্কর দিবি তাহলেই সময় কেটে যাবে।
আমিতো ভাবছিলাম এক রুমে বন্দি হয়ে থাকতে হবে।

গ্রামে সারাদিন হই হোল্লোর করে দিন কাটানো যেত,,,থাক তাও এখানেই মানিয়ে নিতে হবে। কি আর করার,,, এখানে এমনিতেই কম কথা বলতে হবে তার উপর জ/মরাজ ছাড়া কোনো মানুষ ও নেই কথা বলার।

এসব ভেবে মন টা খারাপ হয়ে গেল সোহার। সোহা এমনিতে সাধাসিধে হলেও কথা বলায় আর চঞ্চলতায় পটু।যার কিছুই দেখাতে পারতেছে না এইখানে।

এসব ভাবতে ভাবতেই সোহা বাড়ি দেখতে শুরু করলো,,

প্রথমেই ছাদে গেলো। বিকেল হয়ে এসেছে।সূর্যের তাপ কমে গেছে।ছাদে তেমন কিছুই পেলোনা সোহা।কর্ণার সাইটে একটা ছোটো দোলনা আছে।ঐটা দেখে দৌড়ে গিয়ে ধপাস করে বসে পরলো।আর দোল খেতে লাগলো।কিছুক্ষন দোলনায় বসে দোল খেয়ে ওঠে পরলো। কি মনে করে ছাদের কিনারায় গিয়ে নীচে উঁ’কি দিলো।

নিচে বাড়ির সামনে যা দেখলো তাতে সোহার চ’ক্ষু চরক গাছ। দৌড়ে নিচে নামলো।বাড়ির সামনে বড় বাগান কতো রকম ফলের ও ফুলের গাছ। কিন্তু একটা বিষয় খুব খারাপ লাগলো।সব গাছ পালা আগাছায় ভরপুর। অনেক গাছ যত্নের অভাবে মৃ’ত প্রায়।

কোনো কিছু না ভেবেই বাগান সাফ করার কাজে নেমে পরে সোহা।ওড়নাটা কোমড়ে পেঁচিয়ে বেঁধে নেয়। প্রথমেই ফুল গাছ গুলো পরিষ্কার করতে লাগে। মরা ফুল গাছের ডাল গুলো ভেঙে সরিয়ে ফেলে। গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে দেয়।আগাছা গুলো পরিষ্কার করে দেয়।

হঠাৎ পিছন থেকে কারো গলা শুনে ভয় পেয়ে যায় সোহা।তাকিয়ে দেখে বাড়ির দারোয়ান রহিম চাচা।

– মা জননী আপনি এখানে কি করতেছেন?(রহিম চাচা)

– তেমন কিছু না চাচা।বাগানটা সাফ করতেছিলাম।

– ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। কিছু দরকার হলে আমায় অবশ্যই বলবেন মা জননী।

-জী চাচা।
– আগে বড় মেডাম থাকতে বাড়িটা ফুলের রাজ্য মনে হতো।এতোদিন এসব দেখাশোনা করার কেউ ছিলনা। এখন মনে হচ্ছে বাড়ির প্রাণ আবার ফিরে আসবে।আসল মানুষ যে এসে গেছে।

– সোহা বোঝে গেলো চাচা তার শাশুড়ী মায়ের কথা বলছেন। হ্যা চাচা এখন থেকে বাড়িটা সত্যিকারের বাড়ি করে তুলবো আমি আবার আগের মতো। দোয়া করবেন।

– অবশ্যই মা জননী। আরেকটা কথা,,,, জমেলার আসতে কয়েকদিন সময় লাগবে।একটু ঝামেলা হয়েছেতো গ্রামে তাই।

– আচছা। কোনো সমস্যা নাই চাচা।
কথা বলেই রহিম মিয়া আবার নিজের কাজে চলে যায়। সোহা আবার নিজের কাজে মন দেয়।

বাগান পরিষ্কার করা শেষ হলে উঠে দাঁড়ায় সোহা।এখন এইদিকটা কিছুটা বাড়ি বাড়ি মনে হচ্ছে। এতেক্ষন মনে হয়েছিল ভুলে জঙ্গলে চলে এসেছিলাম। বাগানের ডান পাশে ও দেখা যায় একটা দুলনা রাখা আছে। সোহা গিয়ে ওখানে বসে পরে। এতোখন কাজ করে হাপিয়ে গেছে। অন্ধকার নেমে পরতেছে।চারিদিকে আজান দিচ্ছে। আজান শুনেই আঁতকে ওঠে সোহা।ভূ’তের ভয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ির ভিতর পা চালায়।আর নিজে নিজেই বিরবির করে কথা বলতে লাগে_______

মানলাম তুই একা মানুষ। তাই বলে বাড়ির দিকে নজর দিবিনা? সারাজীবন তো আর একা কাটাতিনা। বাড়ির কোনো দিকেই কোনো খেয়াল নাই।সারাদিন বাইরে পরে থাকে কাজ নিয়ে হুহ।

ওনার নাম দায়ান কোন হিসাবে রাখলো। আমি বুঝে পাই না।ব’দ মেজা’জী একটা।

এর নাম দায়ান না রেখে দা*নব রাখা উচিত ছিল।

#চলবে

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো

#Jhorna_Islam (লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here