তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ২৪+২৫+২৬

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২৪

প্রথম পরীক্ষা শেষ। ওপর ওয়ালার শুকরিয়া আদায় করতে করতে ফুরফুরে মেজাজে ভার্সিটি প্রাঙ্গনে হাজির হলো তৃষা। আশেপাশে তাকিয়ে বন্ধুদের খোঁজ করে চলেছে। গেল কোথায় সব? পরীক্ষা শেষে উধাও হয়ে গেল কি? তৃষা যখন খোঁজাখুঁজিতে মগ্ন ঠিক তখনই তার সম্মুখে হাজির হলো সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এক ব্যক্তি! বিস্মিত তৃষার কণ্ঠনালী হতে বেরিয়ে এলো,

” আপনি! ”

” হাঁ আমি। কেন অন্য কাউকে আশা করছিলি বুঝি? ”

” অন্য কারোর কথা ছাড়ুন। আপনাকে তো এখানে মোটেও আশা করিনি। ”

অপর প্রান্তে থাকা মানুষটি মৃদু হাসলো। শুধালো,

” আমি বুঝি এতটাই আনএক্সপেক্টেড? ”

” সে আর বলতে? ”

তৃষা এবার নিজেকে ধাতস্থ করে প্রশ্ন করলো,

” তা আপনি এখানে! হঠাৎ আমাদের ভার্সিটিতে কেন?”

তৃষার সরল প্রশ্নে মানুষটি কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত হলো বুঝি! নিজেকে সামলিয়ে বললো,

” এখানে আসা কি বারণ? ভুলে যাস না আমিও এখানকার সাবেক স্টুডেন্ট। এখানে আসতে আমার রিজনের দরকার নেই। অধিকার আছে। বুঝলি? ”

” লও ঠ্যা লা! সামান্য কথায় মানবাধিকার পর্যন্ত চলে গেলেন? আশ্চর্য তো! ”

অপর প্রান্তে থাকা নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,

” ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ বাদ দিয়ে বল পরীক্ষা কেমন হলো? ”

তৃষা খুশিতে গদগদ হয়ে জবাব দিলো,

” আলহামদুলিল্লাহ্ খুউব ভালো হয়েছে। পাশ কনফার্ম। ইমপ্রুভমেন্ট দিতে হবে না। ”

নিশাদ ওর মাথায় গা|ট্টা মে রে বললো,

” ছা*গলি! এই তোর পড়াশোনার নমুনা? সামান্য পাশের খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছিস? দাঁড়া তূর্ণ’কে জানাচ্ছি। ”

তৃষা বিদ্রুপের স্বরে বলে উঠলো,

” এহ্! এমন ভাব করছেন যেন ভাইয়া কিছু জানে না। শুনুন ভাইয়া আমার ব্যাপারে এ টু জেড সবই জানে। ”

” তবুও গা|ধা পি টি য়ে ঘোড়া করতে পারলো না? ”

তৃষা চরম আশ্চর্যান্বিত হলো!

” আ আমাকে গা ধা বললেন? এত সুন্দর কিউট মেয়েটা গা ধা! আমি গা ধা হলে আপনি কি? হাঁ? আস্ত এক ভাল্লুক। সারাক্ষণ খ্যা খ্যা করে। ভাইয়ের বন্ধু তো নয় যেন আপন ভাই। খালি শাসন আর শাসন। ”

বিগড়ে যাওয়া মেজাজ নিয়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো তৃষা। আর নিশাদ বেচারা? কাশতে কাশতে অবস্থা কাহিল। শেষমেষ আপন ভাইয়ের সাথে তুলনা!

নিশুতি রাত। উন্মুক্ত বাতায়ন গলিয়ে কক্ষে প্রবেশ করছে হাওয়া। দুয়া এবং তৃষা বইপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে রয়েছে বিছানায়। দু’জনেই পড়াশোনায় মগ্ন। কখনো কখনোবা অমনোযোগী হয়ে নিজেদের মধ্যে ফুসুরফুসুর করছে। তা ঠিকই নেত্রপাত হলো সিঙ্গেল সোফায় থাকা মানুষটির। সে মোবাইলে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বলে উঠলো,

” এই যে দুই আদুআপা! পরশুদিন যে পরীক্ষা মনে আছে তো? নাকি ফুসুরফুসুর গুজুরগুজুর করতে করতে ভুলে গেছেন? ”

তৃষা কিছু বলার পূর্বেই দুয়া তীব্র প্রতিবাদ জানালো।

” একদম বাজে কথা বলবে না। আমরা আদুআপা হলাম কি করে? আমরা বুঝি বাংলার সেই আদুভাইয়ের মতো বছরের পর বছর একই ক্লাসে ছিলাম? ”

তূর্ণ চোখ তুলে তাকালো।

” ছিলি না। কিন্তু থাকতে কতক্ষণ? কে বলতে পারে ইমপ্রুভমেন্ট দিতে দিতেই হয়তো অনার্সে ছয়-সাত বছর লাগিয়ে দিলি? ”

তৃষা ন্যা কা কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে বললো,

” তুমি এতবড় অভিশা*প দিতে পারলে ভাইয়া? আমি নাহয় বোন। পর হই। কিন্তু দুয়া? ও তো তোমার বউ। জানের জান প্রাণের প্রাণ। তোমার গিলা, কলিজা, ফুসফুস ব্লা ব্লা ব্লা। তোমার অনাগত কু*টুশ সোনাদের মা জননী। তাকে তুমি এতবড় কথাটা বলতে পারলে? একটুও আত্মা কাঁপলো না? ”

এতখানি গাঁ*জা শুনে দুয়া স্তব্ধ! আর তূর্ণ? সে কটমট করে তাকালো বোনের দিকে। কড়া কণ্ঠে বললো,

” আগামী পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে তোরা দু’টো যদি পড়ায় মন না দিস? কানের নিচে ধপাধপ কয়টা লাগিয়ে দেবো। বিশ্বাস কর বেহনা। আমার হাত-পা কিংবা আত্মা একটাও কাঁপবে না। ”

ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দু’জনেই বইয়ে মুখ গুঁজে দিলো। তখনই শোনা গেল পুরুষালি কণ্ঠস্বর,

” কিসের কাঁপাকাঁপির কথা বলছিস তূর্ণ? ”

তিনজনেই কক্ষের দ্বারে তাকালো। নিজাম সাহেব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে। উনি ভেতরে প্রবেশ করতে করতে পুনরায় প্রশ্ন করলেন,

” কিসের কাঁপাকাঁপির কথা বলছিস বললি না তো? ”

তূর্ণ মোবাইলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো,

” তোমার গুণধর কন্যাদের কাঁপাকাঁপির কথা বলছিলাম। দু’জনে পড়তে পড়তে এতটাই কাহিল হয়ে পড়েছে যে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। ”

এতবড় মিথ্যা কথা! একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো দুয়া এবং তৃষা। দুয়া গরম চোখে গুণধর স্বামীর পানে তাকালো। তূর্ণ তাতে পাত্তা দিলে তো? নিজাম সাহেব অবশ্য এসব খেয়াল করলেন না। উনি মুচকি হেসে দুই কন্যার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

” মন দিয়ে পড় ঠিক আছে? একটানা বেশিক্ষণ পড়িস না আবার। মাথা ধরে যাবে। একটু বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে পড়িস। ”

তূর্ণ বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

” আব্বু ভুল জায়গায় ভুল সাজেশন দিলে‌। এরা দু’জন পড়ার মাঝখানে বিশ্রাম নেবে কি করে? এনারা তো বিশ্রামের ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনা করছে। ”

তূর্ণ’র অতিরঞ্জিত কথায় বিরক্ত হয়ে দুয়া শ্বশুড়ের দ্বারস্থ হলো।

” বাবা! তোমার এই মিস্টার পারফেকশনিস্ট ছেলে সে-ই তখন থেকে আমাদের অপমান করছে। পড়ায় ডিস্টার্ব করছে। একে এখান থেকে যেতে বলো তো। আমরা পড়ায় মন বসাতে পারছি না। ”

তূর্ণ মোবাইল হাতে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। পড়নে থাকা টি শার্টের কলার ঠিক ঠিক করতে করতে বললো,

” এমন মিথ্যা বলিস না রে পুতলা। আল্লাহ্ পাপ দেবে পাপ। এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যা। ভালো হতে পয়সা লাগে না। ”

ভেংচি কাটলো দুয়া। তূর্ণ বক্র হেসে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল। নিজাম সাহেব ওদের দুজনকে ভালোমন্দ পরামর্শ দিয়ে সেথা হতে বেরিয়ে গেলেন।

আদিত্যর কিরণে আলোকিত ধরনী। ইউনিভার্সিটি চত্বর পেরিয়ে কথা বলতে বলতে বাহিরে এলো দুয়া এবং বন্ধুমহল। দুয়া এবং তৃষা বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে নিজ গন্তব্যে অগ্রসর হতে লাগলো। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেল গন্তব্যে। শ্বেত রঙা গাড়ির দেহে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তূর্ণ। হাতে মোবাইল। ওদের লক্ষ্য করে পকেটে মোবাইল পুরে রাখলো। হাস্যরসাত্মক কণ্ঠে শুধালো,

” কি রে জমজ আদুআপা? পরীক্ষা কেমন হলো? ”

দুয়া কাঠিন্য মিশ্রিত স্বরে বললো,

” বলবো না। ”

” হুয়াই? ”

” আগে এই আদু-কদু বলা বন্ধ করো। নাহলে নো আন্সার। ”

সশব্দে হেসে উঠলো তূর্ণ এবং তৃষা।

” দুয়া বেবি অসাম বলছোছ। উম্মাহ। লাবু বেবি। ”

তৃষা ফ্লাইং কিস করতেই দুয়াও বিনিময়ে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো। তূর্ণ মহাশয় একাকী বিড়বিড় করতে লাগলো,

” ঢং দেখে বাঁচি না। চোখের সামনে জলজ্যান্ত জামাই। তাকে অভুক্ত রেখে ননদকে চুমু দেয়া হচ্ছে! আল্লাহ্ পাপ দেবে রে পাপ। ”

দু’জনে তার এই কষ্ট মিশ্রিত বাক্য শুনতে পেলে তো? তারা তো নিজেদের মতো আলাপচারিতা করতে করতে গাড়ির পেছনের সিটে বসে পড়লো। তূর্ণ উদাসীন বদনে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসলো। হৃদয়ের অন্তঃস্থলে লাউড স্পিকারে বেজে চলেছে বেলাল খানের স্বর,

” কাটে না যে বেলা একাকি একেলা
ভালবাসা এ কি জ্বালা.. ”

দৃষ্টিসীমার বাহিরে চলে গেল গাড়িটি। কাকতালীয় ভাবে রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি তূর্ণ-দুয়াকে একত্রে দেখতে পেল। ঈষৎ জ্বলন অনুভূত হলো তার অন্তঃপুরে। মলিন হাসলো জাবির। সেথা হতে দৃষ্টি সরিয়ে কফিশপে প্রবেশ করলো। বসলো এক শূন্য চেয়ারে। সেথায় বসে জীবনের সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সে-ই ছোটবেলা থেকে সাজেদা তাকে বলে এসেছে দুয়া তার বউ হবে। সে যেন কখনো অন্য মেয়েতে বিমোহিত না হয়, প্রেমের সম্পর্কে না জড়ায়। মাতৃভক্ত জাবির তা বরাবরই মান্য করে এসেছে। কখনো অন্য মেয়ের পানে মুগ্ধ চাহনিতে তাকায়নি। দুয়াকেই তার হবু স্ত্রী হিসেবে জেনে এসেছে। মেনে এসেছে। মনের কোণে হবু বউ নামক মেয়েটির জন্য দিনকে দিন সুক্ষ্ম অনুভূতি জাগ্রত হতে লাগলো। তার ধ্যান ধারণায় শুধুমাত্র একটি নাম। জাহিরাহ্ দুয়া! কিন্তু আজ? তার হৃদয়ে লুকায়িত রমণী অন্য কারোর ঘরণী। তূর্ণ’র স্ত্রী।‌ একান্ত আপনজন; সহধর্মিণী। তার জন্মদিনের দিনেই তো চিরজীবনের জন্য বাঁধা পড়লো ওরা দু’জনে। ওদের দুজনকে একত্রে দেখলে বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথা অনুভূত হয়। কেমন যাতনায় পিষ্ট হয় অন্তঃস্থল। সে কি করে সইবে এই যাতনা? ভুলবে কি করে হৃদয়ে লুকায়িত রমণীকে? তাকে মনে করে প্রেম প্রেম অনুভব করাও যে গুনাহ! অন্যায়।

কোলাহলে মুখরিত এক্সাম হল। পকপক পকপক করে চলেছে পরীক্ষার্থীরা। হঠাৎই পিনপতন নিরবতায় ছেয়ে গেল কক্ষটি। ডিউটিরত শিক্ষক চলে এসেছে। তাকে দেখেই সকলে অবাক! মেয়েদের হৃদয়ে ভালোবাসার লাল নীল সবুজ গোলাপ প্রস্ফুটিত করা মানুষের যে আগমন ঘটেছে। সকলের ক্রাশ লেকচারার আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ হাজির! মানুষটির পড়নে কালো রঙা শার্ট। শার্টের দু স্লিভ গুটিয়ে কনুইয়ে তুলে রাখা। দৃশ্যমান লোমশ হাতের একাংশ। শার্টের একটিমাত্র বাটন উন্মুক্ত তাতেই বাজপাখির নজরে তাকিয়ে দুষ্টু মেয়েদের দল। তাদের বে”হায়া দৃষ্টি ঘুরে বেড়াচ্ছে স্যার নামক মানুষটির এদিক সেদিক। দুয়া প্রথমে তূর্ণ’কে দেখে অবাক হলেও তা মুহুর্তের মধ্যেই ঈর্ষায় রূপান্তরিত হলো। লুচু মেয়েরা তার বরকে তো চোখ দিয়েই গি’লে খাচ্ছে। দ্যাখো কেমন ফা**তরা নজরে তাকিয়ে! কয়েকজন তো বসতেও ভুলে গেছে। অসহনীয় ঢং দেখে দুয়া’র শরীর গিজগিজ করতে লাগলো। তূর্ণ’র আদেশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েগুলো বেকুব হয়ে গেল। চটাপট বসে পড়লো নিজস্ব সিটে। তূর্ণ সামনের সারিতে পেপার সাপ্লাই করে পেছনে পাস করার আদেশ দিলো। দুয়া মাঝের সারির তৃতীয় বেঞ্চে বসে দোয়া দরুদ পাঠ করে নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস চালালো। কিছুটা সফল হলোও বটে।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর এক ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে। এই এক ঘন্টায় দুয়া বেচারি শান্তিমতো লিখতে পারলো কোথায়? মেয়েদের ঢং দেখতে দেখতেই ওর অবস্থা বেগতিক। মাথায় দাউ দাউ করে অ*গ্নিসংযোগ হচ্ছে। হবে না কেন? কারণ তো অবশ্যই রয়েছে। যেমন:

তূর্ণ পরীক্ষার্থীদের পেপারে সিগনেচার করছিল। প্রতি বেঞ্চে যখনই যাচ্ছিল মেয়েদের ঢং অমনি শুরু হয়ে গেল। কেউ হাত দিয়ে চুল ঠিক করছে। কেউবা পা নাচিয়ে চলেছে। কেউ কেউ মুখ টিপে হাসছে। মনে হচ্ছে দি কপিল শর্মার শো চলছে। কারো কারোর লজ্জায় মুখ কমলা হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো লেখালেখি বাদ দিয়ে হা করে স্যারকে গলাধঃকরণ করছে। একজন তো অস*ভ্যতামির সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে স্যারের হাতে হাত স্পর্শ করার মতো দুঃসাহস অবধি দেখিয়ে ফেলেছে। তূর্ণ যথাসময়ে নিজেকে সামলিয়ে ক্ষীণ কিন্তু কঠিন স্বরে মেয়েটিকে সাবধান বাণী শোনালো ” বিহেভ ইওরসেল্ফ। ” স্যারের কঠিন চাহনি দেখে মেয়েটি দমে গেল। তূর্ণ বিরক্ত হয়ে পরবর্তী বেঞ্চে অগ্রসর হলো। দুয়া এসব ঠিক লক্ষ্য করেছে। পারছে না পে ত্নী মেয়েটাকে উচিত শিক্ষা দিতে। কত বড় স্পর্ধা! তার স্বামী নামক স্যারের ওপর লুচু নজর দেয়! আবার হাত ধরতে যায়! বে*দ্দপ মেয়ে!

পরীক্ষার ইতিমধ্যে দেড় ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে। তূর্ণ এবং সাথে থাকা সুন্দরী ম্যাম পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। সুন্দ্রী ম্যাম যদিওবা তূর্ণ’র থেকে বয়সে কয়েক বছরের বড় কিন্তু এত রসিয়ে রসিয়ে কথা বলছে যে দুয়া ফুলে ফেঁপে উঠছে। এই বুঝি বি*স্ফোরণ ঘটলো! দু’জনের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বিরাজমান। তূর্ণ ঠ্যা লা য় পড়ে ম্যামের হা হা হি হি আর বকবক টলারেট করছে কিন্তু দুয়া! সে তো নিজের পরীক্ষা বাদ দিয়ে তার ভদ্রবেশী জামাইকে ভ*স্মীভূত করে চলেছে। একপর্যায়ে তূর্ণ’র চোখে চোখ পড়লো দুয়া’র। তূর্ণ চোখের ইশারায় শুধালো ” কি? এক্সামে মনোযোগ দে। ” দুয়া রাগত চাহনিতে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। মনোযোগ দিলো পরীক্ষায়। তূর্ণ মুচকি মুচকি হেসে চলেছে।
°

পরীক্ষা হল থেকে বেরিয়ে এলো দুয়া এবং বন্ধুমহল। তৃষা এবং পুষ্পি অবশ্য অনুপস্থিত। বিশাল খ্যাক খ্যাক করে চলেছে,

” আদ্রিয়ান স্যার আস্ত নি|ষ্ঠুর। ক্যামনে পারলো আমারে নিঃস্ব করতে? হ্যার লাগি আমার কনফার্ম পাশ করা সাবজেক্ট এখন দোদুল্যমান। পাশ ও ফেলের মাঝখানে গড়াগড়ি খাইতাছে। এইসব সহ্য করা যায়? ”

দুয়ার দিকে তাকিয়ে,

” এই দুয়া ছে ম ড়ি? তোর ধারে বিচার দিলাম। তুই বিচার করবি এর। কেমন বউ তুই? স্বামীরে টাইট দিতে পারোছ না? ”

দুয়া এক্সাম হল থেকেই বেরিয়েছে থমথমে মুখে। চোয়াল তার শক্ত। বিশালের কথায় আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মতো অবস্থা হলো। খ্যাক করে উঠলো মেয়েটা।

” সারাবছর পড়ালেখা করবি না আর পরীক্ষা শেষে স্যারদের দোষারোপ করবি? স্যাররা কি পরীক্ষার হলে গা*ঞ্জা খাইতে আসে? ওনারা ডিউটি দেবে না? ছা”গল একটা। ”

বড় বড় কদম ফেলে সেথা হতে প্রস্থান করলো দুয়া। বন্ধুমহল তো অবাক!

” যাহ্ বাবা! এই মাইয়া কার রাগ আমার ওপর ফি’ক্কা
মা”রলো? হাঁ? ”

চলবে.

[ কেমন লাগলো হাস্যরসাত্মক পর্বটি? কমেন্ট করে জানাবেন কিন্তু। ]#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২৫

” এই যে মিসেস দুয়া! আধ ঘন্টা সময় দিলাম। এরমধ্যে সাজুগুজু করে রেডি হয়ে পড়ুন। বাহিরে যাবো। ”

দুয়া’র কর্ণে কথাটা পৌঁছালো ঠিকই। তবুও মেয়েটি কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না। তার মনে যে অভিমানের পাহাড় তৈরি হয়েছে! তা ভঙ্গ করা বিনা সে শুনবে না কিছুই।
.

আঁধার রজনী। বিছানায় শুয়ে রয়েছে দুয়া। দেহে জড়ানো পাতলা ব্ল্যাংকেট। ম্লান হয়ে রয়েছে বদন। বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে ইউনিভার্সিটির সে-ই অপ্রত্যাশিত মুহূর্তগুলো। তূর্ণ ভার্সিটিতে গেলে সর্বদা বুঝি এমনই হয়? সে তো জানতোই না। তারা ভিন্ন ভিন্ন ডিপার্টমেন্টের লেকচারার এবং স্টুডেন্ট। তাই এতটা কাছ থেকে কখনোই এমন দৃশ্য অবলোকন করা হয়ে ওঠেনি। যদিওবা দুয়া জানতো মেয়েরা আদ্রিয়ান স্যারের জন্য ফিদা। তাই বলে এসব হয়ে থাকে! আর তার অর্ধাঙ্গ মশাই? সেজেগুজে রাজাবাবু হয়ে ভার্সিটি যায় আর মেয়েরা তাকে অনায়াসে গলাধঃকরণ করে! ইশ্! ওই মুহূর্তগুলো চোখের পর্দা হতে সরে যাচ্ছে না কেন? কেন তাকে বারবার দুঃখ দিতে ভেসে উঠছে! কেন? সে মানতেই পারছে না তার একান্ত মানুষটির জন্য বহিরাগতদের এত উ*ন্মাদনা! এত কাণ্ড! মানবে কি করে? আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ’র জীবনে একমাত্র নারী হলো সে। জাহিরাহ্ দুয়া। তূর্ণ’র অর্ধাঙ্গিনী। যেখানে সে আজ পর্যন্ত তার বিয়ে করা বরের জন্য কোনোরূপ উ*ন্মাদনা প্রদর্শন করেনি সেখানে বাইরের মেয়েগুলো…! নোনাজলে ভরপুর হলো মেয়েটির আঁখি যুগল। অদৃশ্য যাতনায় ক্লিষ্ট অন্তঃস্থল। ঠিক তখনই কর্ণ কুহরে পৌঁছালো পুরুষালি কণ্ঠস্বর,

” এই যে মিসেস দুয়া! আধ ঘন্টা সময় দিলাম। এরমধ্যে সাজুগুজু করে রেডি হয়ে পড়ুন। বাহিরে যাবো। ”

দুয়া’র কর্ণে কথাটা পৌঁছালো ঠিকই। তবুও মেয়েটি কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না। তার মনে যে অভিমানের পাহাড় তৈরি হয়েছে! তা ভঙ্গ করা বিনা সে শুনবে না কিছুই। মশাইয়ের কেমন বোধহীন আচরণ! বউ অভিমান করেছে সে খবর অবধি রাখে না। নিজের মতো দিনটি কাটিয়েছে। এখন রাতদুপুরে এসে অর্ডার করছে! বাহিরে যাবে নাকি? হুহ্! যাবে না দুয়া। সে যেন একাকী যায়। তবে দুয়া তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে ব্যর্থ হলো। তূর্ণ মহাশয়ের এক বজ্র ধমকেই মেয়েটা কুপোকাত। সুরসুর করে রেডি হতে গেল তূর্ণ’র বাছাই করা পোশাক নিয়ে। তবে মনের মাঝে থাকা অভিমান এখন এভারেস্ট ছুঁই ছুঁই!

সমতল আরশির সম্মুখে দাঁড়িয়ে দুয়া। দীঘল কালো কেশে চিরুনি চালনা করে চলেছে। মলিন তার মুখখানি। হঠাৎই ডান কাঁধে পুরুষালি স্পর্শ অনুভূত হলো। কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই তাকে পেছন ফিরে দাঁড় করালো তূর্ণ। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দু’জনে। অভিমানিনী কন্যা অবনত করে নিলো মুখশ্রী। তূর্ণ তা লক্ষ্য করেও কিচ্ছুটি বললো না। বরং হাঁটু গেড়ে বসলো। আলতো করে দু হাতে শাড়ির কুঁচি ধরলো। অনভিজ্ঞ হাতে যথাসম্ভব শাড়ির কুঁচি ঠিকঠাক করে দিলো। দুয়া অবাক নেত্রে তা দেখতে লাগলো। অভিমানের পাহাড় কি সামান্য হ্রাস পেল! শাড়ির কুঁচি ঠিকঠাক করে উঠে দাঁড়ালো তূর্ণ। বাঁ হাতে লালচে চুলে ব্যাক ব্রাশ করে বললো,

” কোনো আর্টিফিসিয়াল রঙচঙ ইউজ করবে না। শুধুমাত্র মায়াবী আঁখি জোড়া কাজল কালো রেখায় রাঙাবে। গট ইট?”

মেয়েটিকে কিছু বলবার সুযোগ না দিয়েই সেথা হতে প্রস্থান করলো তূর্ণ। বিস্মিত চাহনিতে তাকিয়ে রইলো দুয়া!

তমস্র রজনী। আঁধারে ঘনিভূত বসুন্ধরা। হিমেল হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে গাত্র। ডার্ক ব্লু রঙা পাঞ্জাবির স্লিভ গুটিয়ে কনুইয়ে তুলে রাখলো তূর্ণ। আঙ্গুল চালনা করলো চুলের ভাঁজে। তখনই দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো বাড়ির মূল ফটকে। মুহুর্তের মধ্যেই শান্ত হয়ে গেল অশান্ত-অবাধ্য হৃদয়! তার হৃদয়ের প্রশান্তির মূল উৎস, তার মাইরা যে এগিয়ে আসছে তারই পানে। স্ট্রিট লাইটের কৃত্রিম আলোয় তূর্ণ দেখতে লাগলো তার মাইরা’কে। মেয়েটির পড়নে ডার্ক ব্লু রঙের এমব্রয়ডারেড বর্ডার স্যাটিন জর্জেট শাড়ি। দীঘল কালো কেশগুচ্ছ খুলে রাখা। বেলি ফুলের মালা জড়ানো চুলের পেছনাংশে। মায়াবী আঁখি যুগল রাঙানো কাজল কালো রেখায়। ঠোঁটে লিপস্টিকের মৃদু ছোঁয়া। ডান হাতে শাড়ির কুঁচি আঁকড়ে ধীরপায়ে হেঁটে আসছে মেয়েটি। যার প্রতিটি কদমে মানুষটির হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে। দূর হতেই বেলি ফুলের সুবাস কড়া নাড়ছে নাসারন্ধ্রে। মা’তাল হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে অন্তঃস্থল। নিজেকে সামলানো দুষ্কর হয়ে উঠছে। এ কি মোহনীয় রূপে নিজেকে উপস্থাপন করলো মাইরা! সে যে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছে! বেসামাল-বেকাবু হচ্ছে পৌরুষ চিত্ত। অর্ধাঙ্গিনীর রূপের বহরে তার মতো নগণ্য প্রেমিক পুরুষ যে অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে! বড় বড় শ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করার প্রয়াস চলমান রাখলো তূর্ণ।

সম্মুখে এসে দাঁড়ালো দুয়া। অভিমানিনী আড়চোখে তাকালো তার সুদর্শন একান্ত জনের পানে। ডার্ক ব্লু রঙা পাঞ্জাবি জড়িয়ে সুঠামদেহে। পাঞ্জাবীর বুকের বাম পার্শ্ব কারুকার্য খচিত। লালচে চুলগুলো কিঞ্চিৎ এলোমেলো করে রাখা। চশমা বিহীন আঁখি যুগলে অবর্ণনীয় মুগ্ধতা! আস্তে করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো মেয়েটি। র’ক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো দু কপোলে। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় ডান হাতটি বাড়িয়ে দিলো তূর্ণ। নিজস্ব অভিমান একপাশে রেখে মেয়েটি স্বামীর হাতে হাত রাখলো। পুরুষালি হাতের মাঝে শক্ত রূপে আবদ্ধ হলো কোমল হাতটি। দু’জনে একত্রে পদযুগল ফেলে বেরিয়ে এলো
‘ ছায়াবিথী ‘ হতে।

রাতের শহরে এগিয়ে চলেছে রিকশা। পাশাপাশি বসে একজোড়া কপোত-কপোতী। দু’জনের গাত্র প্রায় ছুঁই ছুঁই। চন্দ্রিমার উজ্জ্বলতায় উজ্জ্বল তারা দু’জনে। হিমশীতল পবনে গাঁয়ে কাটা দিচ্ছে বুঝি। অর্ধাঙ্গিনীর অবস্থা অনুধাবন করতে পারলো তূর্ণ। নিভৃতে আরেকটু ঘনিষ্ট হয়ে বসলো। ডান হাতটি শাড়ির ফাঁক গলিয়ে স্পর্শ করলো কটিদেশ। শিউরে উঠলো মেয়েটি। অবাক নেত্রে তাকালো স্বামীর পানে! তূর্ণ পুরুষালি হাতে কটিদেশ আবদ্ধ করে নিজের পানে টেনে নিলো। নিজস্ব উষ্ণতার সান্নিধ্যে মাইরা’য় উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে লাগলো। উষ্ণতা অনুভব করে মেয়েটি আরো গুটিয়ে গেল। মিশে রইলো একান্ত মানুষটির বক্ষপটে। কর্ণযুগল ঠেকে বক্ষে। বক্ষপিঞ্জরের অন্তরালে লুকায়িত হৃদযন্ত্রটির স্পন্দন স্পষ্ট রূপে কর্ণ কুহরে পৌঁছাতে লাগলো। দুয়া আঁখি পল্লব বন্ধ করে বক্ষস্থলে আরো মিশে গেল। ডান হাতে আঁকড়ে ধরলো পাঞ্জাবীর বুকের অংশ। বিমোহিত হয়ে শ্রবণ করতে লাগলো হৃৎস্পন্দনের সুমধুর ধ্বনি। তূর্ণ’র অধর কোণে ফুটে উঠলো মোহনীয় দ্যুতি।
..

নদীর পাড়ে পাশাপাশি বসে দু’জনে। উপভোগ করে চলেছে রাতের অবর্ণনীয় সৌন্দর্য! নিশাকরের দ্যুতি ছড়িয়ে নদীর বুকে। শীতল পবনে জুড়িয়ে যাচ্ছে তনুমন। আশপাশে দন্ডায়মান অগণিত বৃক্ষ বুঝি পাহারাদারের ন্যায় তাদের আগলে রাখছে। পবনের ছোঁয়ায় নৃত্যরত নদীর জল। পাশাপাশি বসে দু কপোত কপোতী। অসীম সুখে আচ্ছাদিত হয়ে চলেছে অন্তঃপুর। অভিমানিনীর অভিমান ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে বহু পূর্বেই। তবুও নীরবতা বিরাজমান। যা আর সহ্য হলো না প্রেমিক পুরুষটির। নিমিষেই বাঁ হাতে মাইরা’কে নিজের পানে টেনে নিলো। চমকিত রমণী কিছু বলতে উদ্যত হতেই তার ওষ্ঠে তর্জনী ছুঁয়ে থামিয়ে দিলো তূর্ণ। নয়নে মিলিত হলো নয়ন। অতিবাহিত হলো কয়েক পল। দুয়া’র কর্ণ কুহরে পৌঁছাতে লাগলো পুরুষালি ভারিক্কি স্বরের অসাধারণ ছন্দ ভাণ্ডার,

” এভাবেই সম্পূর্ণ আড়ষ্ট হয়ে পড়ি ;
তোমাকে ছাড়াতে গেলে আরো ক্রমশ জড়িয়ে যাই আমি,
আমার কিছুই আর করার থাকে না।
তুমি এভাবেই বেঁধে ফেলো যদি দূরে যেতে চাই,
যদি ডুবে যেতে চাই, তুমি দুহাতে জাগাও,,
এমন সাধ্য কি আছে তোমার চোখের সামান্য আড়াল হই, দুই হাত দূরে যাই, যেখানেই যেতে চাই,
সেখানেই বিছিয়ে রেখেছো ডালপালা
তোমাকে কি অতিক্রম করা কখনো সম্ভব!!
– মহাদেব সাহা ”

বিমোহিত রমণী বাকশূন্য হয়ে পড়েছে! অনিমেষ নেত্রে তাকিয়ে অর্ধাঙ্গের পানে। এত সুন্দর-অসাধারণ শব্দমালার বিপরীতে কি বলা যায় বুঝতেই পারছে না। তাই তো তাকিয়ে নিঃশব্দে। তূর্ণ দূরত্ব ঘুচিয়ে আরো নিকটে এলো। দু’জনের মধ্যিখানে ইঞ্চির তফাৎ মাত্র। তূর্ণ’র তপ্ত শ্বাস আছড়ে পড়ছে মেয়েটির মায়াময় মুখশ্রীতে। নিভু নিভু করছে আঁখি পল্লব। ওষ্ঠে তপ্ত শ্বাস ফেলে তূর্ণ বললো,

” তোমার চোখের সামান্য আড়াল হই কিংবা দু হাত দূরে যাই‌। যেখানেই যেতে চাই, সেখানেই বিছিয়ে রেখেছো মায়াবী ডালপালা। তোমাকে কি অতিক্রম করা কখনো সম্ভব? সম্ভব নয়। তবুও তুমি হীনমন্যতায় ভুগছো? কেন মেয়ে? তুমি কি দেখতে পাচ্ছো না এই আঁখি জোড়ায় তোমার জন্য কতখানি স্নিগ্ধতা বিরাজমান? তুমি কি শুনতে পারছো না এই হৃদয় তোমার নামে দিবা-রাত্রি সুমধুর ধ্বনিতে মুখরিত? সত্যিই কি তুমি এতখানি অবুঝ? তবে কি করে তোমায় বোঝাবো আমার হৃদয়ে লুকানো প্রেমের সীমা-পরিসীমা? ”

অপলক চাহনিতে তাকিয়ে রইলো মেয়েটি। তার পানে জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে তূর্ণ। নিজেকে ধাতস্থ করতে সক্ষম হলো দুয়া। নয়নে নয়ন মিলিয়ে একান্ত মানুষটির কপোলে বাঁ হাতটি রাখলো। মধুর কণ্ঠে বলতে লাগলো,

” এ নয়ন জোড়ায় বিরাজমান স্নিগ্ধতা সত্যিই আমার তরে? তবে এই স্নিগ্ধতা আমি আম”রণ দেখতে চাই। করতে চাই উপলব্ধি। এ হৃদয় যে সুমধুর ধ্বনিতে মুখরিত তা যদি সত্যিই আমার বিহনে হয়ে থাকে তবে..! আমি জীবনের শেষ মুহূর্ত অবধি এই ধ্বনি শুনতে চাই। আজীবন লেপ্টে থাকতে চাই এই মানুষটির বুকে। বলো প্রিয়। আমি জানতে চাই তোমার হৃদয়ে লুকানো প্রেমের সমস্ত সীমা-পরিসীমা। মাপতে চাই তোমার প্রেমক্ষেত্র। ”

দুয়া বাক্যমালা সম্পূর্ণ করতে না করতেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো তূর্ণ। পেশিবহুল দু হাতে মাইরা’কে সন্নিকটে টেনে নিলো। আবদ্ধ করলো বাহুডোরে। বাম হাতটি কটিদেশে স্থাপিত তো ডান হাতটি আঁকড়ে রয়েছে পৃষ্ঠদেশ। বক্ষস্থলে সম্পূর্ণ রূপে মিশিয়ে নেবার প্রয়াস চালিয়ে গেল মানুষটি। লাজে রাঙা মেয়েটিও আজ লাজের গণ্ডি পেরিয়ে এলো। কোমল দু হাতে আঁকড়ে ধরলো অর্ধাঙ্গের পৃষ্ঠদেশ। বদ্ধ হলো আঁখি পল্লব। পৃষ্ঠে নখ বিঁধে যাচ্ছে তবুও টু শব্দটি করলো না তূর্ণ। সে তো মগ্ন তার মাইরা’তে‌। দু’টো তৃষ্ণার্ত হৃদয় একে অপরের সনে লেপ্টে। মিটিয়ে চলেছে সমস্ত তৃষ্ণা। অগণ্য সময় পেরিয়ে গেল। চোখ মেলে তাকালো তূর্ণ। বাহুডোরে আবদ্ধ মেয়েটির মুখশ্রী মুখোমুখি আনলো। ধীরগতিতে নেত্রপল্লব মেলে তাকালো দুয়া। সিক্ত তার আঁখি যুগল। তূর্ণ দু হাতের আঁজলায় অর্ধাঙ্গিনীর মুখশ্রী আগলে নিলো। অগ্রসর হলো তার মুখখানা। ললাটের মধ্যিখানে ছুঁয়ে দিলো ওষ্ঠ। আবেশে মুদিত হলো মেয়েটির নেত্রজোড়া। দু নেত্রপাতা অনুভব করলো আর্দ্র স্পর্শ। শিহরণে আবিষ্ট মেয়েটি বাঁ হাতে অর্ধাঙ্গের কাঁধ এবং ডান হাতে পাঞ্জাবীর বুকের অংশ আঁকড়ে ধরলো। তূর্ণ ওষ্ঠের গাঢ় ছোঁয়া এঁকে দিলো ফুলো ফুলো দু কপোলে। অতঃপর তার অবাধ্য দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো নে”শালো ওষ্ঠাধরে। শুকনো ঢোক গিললো মানুষটি। আলতো করে বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে দিতে লাগলো অধরে। অধরে রূক্ষ হাতের স্পর্শ। শিউরে উঠলো মেয়েলী সত্ত্বা। তূর্ণ অধর পানে অগ্রসর হতে উদ্যত হতেই বাঁধা প্রাপ্ত হলো। লাজে রাঙা মেয়েটি তড়িৎ মুখ লুকালো একান্ত জনের বক্ষস্থলে। নিঃশব্দে হেসে উঠলো তূর্ণ। দু হাতের বাঁধনে বন্দিনী করে নিলো তার মাইরা’কে।

নিশুতি রাত। পাশাপাশি শুয়ে দু’জনে। নয়নে মিলিত নয়ন। চোখেমুখে তৃপ্তির আভা। তূর্ণ নীরবে এগিয়ে এলো। অধর ছুঁয়ে দিলো ললাটে। দুষ্টু হেসে বললো,

” পরীক্ষা দেখে বেঁচে গেলেন বিবিজান। নাহলে আজ আমি ফুল ফর্মে ছিলাম। এক দমে সেঞ্চুরি করে তবেই ক্ষ্যা’ন্ত হতাম। ”

লাজে রাঙা মেয়েটি অর্ধাঙ্গের বক্ষপটে মুখ লুকিয়ে নিলো। বিড়বিড় করে আওড়ালো,

” বেলাজ পুরুষ। ইশ্! ”

সশব্দে হাসলো তূর্ণ। মাইরা’কে বুকে আগলে নিয়ে আঁখি পল্লব বন্ধ করলো। আজ তার সবচেয়ে তৃপ্তিকর নিদ্রা হতে চলেছে। তার হৃদয়ে লুকানো প্রেম যে সফলতার পানে কয়েক ধাপ ধাবিত হয়েছে! দু’জনের চোখেমুখেই তৃপ্তির ছাপ। আঁখি পল্লব বন্ধ করে একে অপরকে আঁকড়ে দু’জনে পাড়ি জমালো ঘুমের রাজ্যে।

চলবে. #তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২৬

মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ভেসে আসছে সুমধুর আযানের ধ্বনি। সময় হয়েছে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের। নিদ্রা হালকা হলো মেয়েটির। নিভু নিভু চোখে একটিবার তাকিয়ে নিজ অবস্থান বোঝার চেষ্টা করলো। স্বল্পক্ষণেই বোধগম্য হলো সে কোথায় রয়েছে। কর্ণ কুহরে আযানের ধ্বনি পৌঁছাতেই বালিশের পাশে থাকা ওড়না নিয়ে মাথায় দিলো। ঠোঁট নাড়িয়ে জবাব দিতে লাগলো আযানের। আযান শেষ হতেই অধর কোণ প্রসারিত হলো। বাম পার্শ্বে তাকাতেই চোখের তারায় দৃশ্যমান হলো একান্ত মানুষটি। দু হাতের মধ্যিখানে তাকে কেমন করে আবদ্ধ করে রেখেছে! যেন ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে। মানুষটিকে এখন যতটা নিশ্চিন্ত, নীরব দেখাচ্ছে গত রাতে ঠিক তার বিপরীত ছিল। সদা প্রাণবন্ত মানুষটির অধরে লেপ্টে ছিল অবর্ণনীয় খুশির রেখা। চোখেমুখে তৃপ্তির ছাপ! আর তা অবলোকন করে সে-ও যে প্রচুর প্রশান্তি অনুভব করছিল। কাছের মানুষটির সুখদুঃখ এভাবেই বুঝি বিপরীত জনে প্রভাব ফেলে! হয়তো হাঁ। এই মানুষটি তো ধীরে ধীরে তার কাছের, খুব কাছের একজন হয়ে উঠছে। যার হাসিতে খুশি সে। দুঃখে দুঃখ ভারাক্রান্ত! আচ্ছা ভালোবাসা নামক মহাব্যাধি কি এত সহজেই সংক্রমণ করে? তাদের বিয়ের বয়স তো মাত্র তিনমাস। এতেই দু’জনের হৃদয়ে ‘লাভ ট্রি’ বেড়ে উঠতে আরম্ভ করেছে! এ-ও সম্ভব? হয়তো হাঁ। চার বর্ণের ভালোবাসা যে বড্ড আনপ্রেডিক্টেবল! অভাবনীয়। কখন কিভাবে সংক্রমিত করবে জানা নেই কারোর। তবে মাঝে মাঝে মনে হয় তার থেকে এই মানুষটির চাওয়া-পাওয়া, মুগ্ধতা, আকুলতা বড্ড বেশি। মাত্র তিন মাসেই এতখানি আকুলতা? নাকি এই আকুলতার পেছনে লুকায়িত ভিন্ন সত্য? জানা নেই।

উষ্ণ শ্বাস ফেলে তূর্ণ’র বাহুবন্ধনী হতে আস্তে ধীরে নিজেকে মুক্ত করে নিলো দুয়া। গলায় ওড়না জড়িয়ে উঠে বসলো। অর্ধাঙ্গের বাহুতে হাত রেখে আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলো,

” শুনছো? ওঠো। আযান দিয়েছে। ”

” হুঁ। ”

অস্ফুট স্বরে জবাব দিলো তূর্ণ। ক্ষণিকের মধ্যেই আঁকড়ে ধরলো মেয়েটির কটিদেশ। শিউরে উঠলো দুয়া। শুকনো ঢোক গিলে একটু ঝুঁকে পড়লো। মানুষটির বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে ডাকতে লাগলো।

” শুনছো? আযান দিয়েছে। নামাজ পড়বে না? ওঠো। নামাজের সময় চলে যাচ্ছে তো। ”

ধীরে ধীরে নেত্রপল্লব মেলে তাকালো তূর্ণ। চক্ষুতারায় দৃশ্যমান হলো মাইরা’র মায়াবী বদন। মুচকি হাসলো তূর্ণ। হঠাৎই স্বল্প উঁচু হয়ে টুপ করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো ললাটে। তার হাসিতে সংক্রমিত হয়ে মেয়েটিও মিষ্টি করে হাসলো। লাজুক সে হাসি। তূর্ণ বিমুগ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে দেখলো অধরে লেপ্টে থাকা হাসিটুকু!

দুয়া’র পরীক্ষা সমাপ্ত হয়েছে তিনদিন পূর্বে। আপাতত সে ছুটি কাটাচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকেই দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস আরম্ভ হতে চলেছে। ছুটি বলতে এই সপ্তাহটুকু ই। তাই তো নিজের মর্জি মাফিক দিন কাটাচ্ছে ননদ-ভাবী যুগল।
.

সাময়িক সময়ের জন্য কিচেন হতে বিতাড়িত তাসলিমা। কেননা আজ কিচেনে দায়িত্বরত ওনার আদরের পুত্রবধূ এবং কনিষ্ঠ কন্যা। ওনার ঠাঁই হয়নি। ওনাকে এক বাক্যে বলা হয়েছে ” তুমি রেস্ট নাও। ” ব্যাস।‌ কিইবা করার আছে? উনি চিন্তিত বদনে কিচেন ত্যাগ করলেন। দুই অনভিজ্ঞ পিচ্চি কিচেনের দায়িত্ব নিয়েছে। রান্নার নামে স’র্বনাশ না করে ফেলে? পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুয়া এবং তৃষা।

” বেবি দুয়া! আজ কি তৈরি করবি রে? ”

” জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ। ”

তৃষা বিরক্ত হয়ে বললো, ” রাখ তো তোর ওয়াচ। বললে হয় টা কি? ”

” এক্সাইটমেন্ট নষ্ট হয়ে যায়। ”

” হ। ” ভেংচি কাটলো তৃষা।

দুয়া একটি চালনি হাতে নিয়ে তাতে বিটেন রাইস রাখলো। সিঙ্কের নিম্নে গিয়ে ভালোমতো চাল ধৌত করতে লাগলো। তৃষা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে। দুয়া ধৌতকৃত চাল নরম করার উদ্দেশ্যে দশ মিনিটের জন্য রেখে দিলো একপাশে। তৃষা জিজ্ঞেস করলো,

” এবার কি করবি রে? ”

সিদ্ধ আলু দেখিয়ে দুয়া বললো,

” এগুলো ম্যাশ করবো। ”

” চমৎকার! দে দে আমায় দে। আমি ফটাফট করে ফেলছি। ”

তৃষা নিজ উদ্যোগে আলু ম্যাশ করতে এগিয়ে গেল। এই ফাঁকে দুয়া অন্যান্য উপকরণ কাটতে লাগলো। খানিক বাদেই শোনা গেল করুণ স্বর,

” বেবি? ম্যাশ ক্যামনে করে? ”

কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে হলো দুয়া’র। ওর কাছ থেকে সিদ্ধ আলুগুলো নিয়ে ম্যাশ করতে লাগলো। আর দেখিয়ে বললো,

” এভাবে করে। বুঝেছিস? ”

” অফকোর্স বুঝেছি। এটাকে ম্যাশ বলে? আগে বলবি না? ”

দাঁত কেলিয়ে হাসলো তৃষা। দুয়া নিঃশব্দে হেসে উঠলো। একটি বাটিতে ছাঁকা আলু রাখলো। অতঃপর ভিজানো পোহা, গ্রেটেড গাজর, গ্রেটেড পনির বা চানা, স্বাদে নুন, কালো মরিচ গুঁড়ো, গরম মরিচ গুঁড়ো, কাটা আদা, কাটা সবুজ মরিচ, ধনিয়া পাতা এবং শেষ পর্যন্ত লেবুর রস যোগ করলো। ভালভাবে সংযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত উপাদান মিশ্রিত করতে লাগলো। সহজ কাজ দেখে তৃষা উৎসাহী কণ্ঠে বললো,

” এটা সহজ আছে। আমায় দে তো। ”

” তুই আসলেই পারবি? নাকি আবার আকাম? ”

” এই না না। সত্যি পারবো। ”

সরে দাঁড়ালো দুয়া। প্রায় মিশ্রিত উপাদান ভালোমতো মিশ্রণ করে কাজ পূর্ণ করলো তৃষা। দুয়া মিশ্রণের একটি অংশ হাতে নিলো এবং প্রতিটিকে একটি কাটলেটে আকার দিতে লাগলো। এ দেখে তৃষা নিজেও কাটলেট তৈরি করতে চেষ্টা করলো। কিন্তু বেচারির হচ্ছে না ঠিকমতো। রাগে গজগজ করতে করতে কতক্ষণ গা’লমন্দ করলো মিশ্রণকে। সশব্দে হেসে উঠলো দুয়া। অবশেষে দু’জনে মিলেমিশে বেশ কতগুলো কাটলেট আকারে তৈরি করলো। বড় করে হাঁফ ছাড়লো তৃষা। মেয়েটা এতেই কাহিল।

দুয়া প্রতিটি পোহা কাটলেট একের পর এক ময়দার পেস্ট এবং তারপরে রুটির টুকরো টুকরো করে কোট করলো। তৃষাও বাকী কাটলেটগুলি একইভাবে প্রস্তুত করতে সহায়তা করলো। অতঃপর দুয়া সমস্ত কাটলেট তেলে ভেজে নিলো। ‘ভেজিটেবল পোহা কাটলেট’ প্রস্তুত‌। তৃষা সার্ভি প্লেট ধরে দাঁড়িয়ে। তাতে একে একে কাটলেট গুলো রাখলো দুয়া। কাটলেট এর সঙ্গী হিসেবে ঠাঁই পেল তেঁতুলের চাটনি।

তৃষা লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাটলেটের দিকে।

” ইয়াম্মি লাগছে রে বেবি। আমি খাবো। ”

তৃষা হাত বাড়াতেই দুয়া ট্রে সরিয়ে নিলো।

” একদম না। আগে বড়রা খাবে। তারপর আমরা। ”

” আরে বেবি একটু খাইতে দে না। এমন করোছ ক্যান? দেখি লবণ মরিচ ঠিক আছে কিনা। কম-বেশি হলে তো বড়রা পঁচা বলবে। ”

” তা-ও তুই পাবি না। ”

দুয়া জিভ দেখিয়ে ভেংচি কাটলো। অতঃপর ট্রে হাতে প্রস্থান করলো সেথা হতে। তৃষা বিড়বিড় করে বললো,

” শ*তান মাইয়া। এক পিসও খাইতে দিলো না। ”
..

গোধূলি লগ্ন। লিভিং রুমে বসে আলাপচারিতায় লিপ্ত পরিবারের সদস্যরা। নিজাম সাহেব এবং নাজমুল সাহেব ব্যবসায়িক আলাপ করছিলেন। তাসলিমা এবং আনোয়ারা বেগম আরেক সোফায় বসে। তূর্ণ এবং নিশি পাশাপাশি বসে একই মোবাইলে ভিডিও দেখছে। তখনই সেথায় উপস্থিত হলো দুয়া।

” ট্যান ট্যানা। নাস্তা হাজির। ”

সকলে তাকালো দুয়া’র দিকে। দুয়া মিষ্টি হেসে টি টেবিলের ওপর স্ন্যাকস্ এর ট্রে রাখলো। আনোয়ারা বেগম মুচকি হেসে বললেন,

” আরে নানুভাই? এ কি দেখছি? আজকের নাস্তা তোমার বানানো? ”

দুয়া কিছু বলার পূর্বেই ছুটে এলো তৃষা। বাংলা সিনেমার মতো চেঁচিয়ে প্রতিবাদ জানালো,

” নাহ্! ”

হতবিহ্বল সকলে। তৃষা লাজুক হেসে মিনমিন করে বললো,

” ওর সাথে আমিও ছিলাম। ”

তূর্ণ প্রশ্ন করে বসলো,

” শুধুই সাথে ছিলি? নাকি হাতও লাগিয়েছিস? ”

” অফকোর্স লাগিয়েছি। এই বে.. থুক্কু ভাবি। বল আমি ছিলাম না? ”

দুয়া দাঁত কেলিয়ে হাসলো।

” আমি কি জানি? আমি তো নাস্তা বানানোয় বিজি ছিলাম। ডানে বায়ে অত দেখিনি। ”

তৃষা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

” জীবনে প্রথমবারের মতো রান্নার ব্যাপারে ক্রেডিট পাওয়ার সুযোগ পেলাম। সেইটাও কেড়ে নিবি? ”

দুয়া হেসে চলেছে। তৃষা বিড়বিড় করে কিছু ছোট্ট অভিশা*প দিলো। এই যেমন: ভাই ভাবী যেন ক্রিকেট টিমের প্যারেন্টস্ হতে পারে।

দুয়া সকলের হাতে ভেজিটেবল পোহা কাটলেট তুলে দিলো। তূর্ণ’র হাতে দিতেই সে মিনি প্লেটে থাকা কাটলেট ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো। ভ্রু নাচিয়ে শুধালো,

” রেসিপি কি রে? করলার তৈরি না তো? খাওয়া যাবে?”

দুয়া কটমট করে তাকিয়ে জবাব দিলো,

” তোমার জন্য স্পেশাল মিষ্টি করলা দিয়ে বানিয়েছি। অনেক মজা। খাও খাও। ”

তূর্ণ নাকমুখ কুঁচকে ফেললো। এমন ভাব যেন পৃথিবীর সবচেয়ে অখাদ্য ওকে খেতে দেয়া হয়েছে। দুয়া তাতে পাত্তা না দিয়ে নিশি’র হাতে কাটলেট তুলে দিলো।

” আহা হা! মাশাআল্লাহ্! কি মজা হয়েছে মামণি! কাটলেট তো নয় যেন অমৃত। ”

বাবার ভুল শুধরে দিলো তূর্ণ।

” আব্বু এটা স্পাইসি ডিশ। তোমার মিষ্টি ডিশ নয় যে অমৃত বলছো। ”

থতমত খেলেন নিজাম সাহেব। আমতা আমতা করে বললেন,

” মি মিষ্টি! আমার মিষ্টি ডিশ মানে কি? হাঁ? ”

” কেন? ভুলে গেলে? রোজ দু-টো গোলাকার সাদা কালো মিষ্টি। হুঁ? ”

খুকখুক করে কাশতে লাগলেন নিজাম সাহেব। তাসলিমা স্বামীর পানে গরম চাহনিতে তাকিয়ে। ডায়বেটিকস এর রোগী কিনা রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে দু’টো মিষ্টি লুট করছে! নিজাম সাহেব স্ত্রীর চাহনি লক্ষ্য করে ছেলেকে চোখ গরম দিলেন। কিন্তু তূর্ণ মহাশয় তা দেখলে তো? সে তেঁতুলের চাটনি মেখে কাটলেট খেতে ব্যস্ত। ইতোমধ্যে তিনটে খাওয়া শেষ। চতুর্থ পিস হাতে। সকলেই দুয়া’র প্রশংসা করলো। একমাত্র তূর্ণ বাদে। সে পঞ্চম পিস হজম করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললো। সকলের অগোচরে তাকালো অর্ধাঙ্গীর পানে। চোখে চোখ পড়তেই চোখ টিপে দিলো তূর্ণ। হকচকিয়ে গেল দুয়া! বক্র হাসলো মানুষটি। তাতেই প্রশংসা অনুধাবন করে লজ্জা মিশ্রিত হাসলো দুয়া।

” সত্যিটা আর কতটা লুকাবেন ফুফু আম্মা? এবার তো মুখ খুলুন। সে রাতে কি হয়েছিল এ টু জেড বলুন। উই আর ইগারলি ওয়েটিং। বলুন বলুন। ”

আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ। চরমভাবে ধ*রাশায়ী করেছে ফুফু শাশুড়িকে। কি হতে চলেছে এবার? অবশেষে বিবাহ রহস্য উদঘাটন হতে চলেছে কি?

চলবে.

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here