তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব ১৫+১৬

#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ১৫)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
নিশা আপুর সাথে শপিং এ এসেছি। শপিং শেষ করে বেড় হচ্ছি পেছন থেকে কেউ আরিশা বলে ডাকলো। আমি নিশা আপু দুজনেই পেছনে ঘুরে তাকালাম। একটা মেয়ে হাসি মুখে আমাদের সামনে এসে দাড়ালো। খুব চেনা চেনা লাগছিলো মেয়েটিকে। মেয়েটি মুচকি হেসে বললো…….

তোমার নাম আরিশা?

হ্যা। কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?

সাদাফকে চেনো নিশ্চই? আদ্রর ফ্রেন্ড।

হ্যা চিনি। আপনাকে আগে কোথায় যেনো দেখেছি মনে হচ্ছে?

আদ্রর সাথে দেখেছো আমাকে। আমার নাম প্রিথা সাদাফের গার্লফ্রেন্ড। সাদাফের আর আদ্রর কাছে তোমাকে নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। আর তোমার ছবি দেখেছিলাম আদ্রর ফোন থেকে। তাই তোমাকে চিনতে প্রবলেম হয় নি।

ও আচ্ছা। আপু সাদাফ ভাইয়ার সাথে আসবেন আমাদের বাড়িতে।

হুম যাবো। তো এখন বলো কি খবর তোমাদের?

আমি বুঝতে পারছি উনি আদ্র আর আমার ব্যাপারে জানতে চাইছে। কিন্তু নিশা আপুর সামনে কি বলবো এখন। নিশা আপু চুপ করে আমার পাশেই দাড়িয়ে আছে। আমি আড় চোখে নিশা আপুর দিকে তাকিয়ে সামনে তাকালাম। প্রিথা আপু হয়তো কিছু বুঝতে পেরেছে তাই উনি হাসি মুখে বললো…..

আরিশা এটা কে তোমার সাথে?

উনার নাম নিশা আদ্র ভাইয়ার খালাতো বোন।

প্রিথা এবার বুঝতে পারলো আরিশা কেনো কিছু বলতে চাইছে না। প্রিথা আরিশার গালটা একটু টেনে বললো…..

আরিশা তুমি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। ভালো থেকো কেমন, আসছি।

আচ্ছা আপু।

প্রিথা চলে যেতেই নিশা বললো……আরিশা আদ্রর ফ্রেন্ডকে তুমি চেনো কি করে?

আমাদের বাড়িতে এসেছিলো আদ্র ভাইয়ার সাথে। আর যে মেয়েটি কথা বলে গেলো ওটা ওই ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড।

ওহ। মেয়েটি কিসের খবর জানতে চাইলো?

আরে তেমন কিছু নয়। আপু চলো এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

আরিশা আগে হাটা দিলো নিশা ওখানেই দাড়িয়ে সন্দেহের দৃষ্টিতে আরিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে মনে মনে বলছে…..আদ্র আর আরিশার ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত লাগছে। আগে যখন এসেছিলাম ওদের মাঝে তেমন কিছুই দেখতে পাইনি। কিন্তু এবার আসার পর থেকেই ওদের দুজনেই আচরণ অন্য রকম লাগছে। আর এ মেয়েটি তো আদ্রর ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ড সেও বললো আরিশাকে নিয়ে অনেক কথা শুনেছে। আচ্ছা আদ্র আরিশাকে নিয়েই কেনো বলতে যাবে ওই মেয়েটিকে? এর পেছনে কি বিশেষ কোনো কারন আছে??
.
.
রাত ১২ টা বাজে প্রায় ঘুম আসছিলো না। নিশা আপু ঘুমিয়ে পড়েছে। নিশা আপু আসার পর থেকে আদ্রর সাথে তেমন ভাবে কথা হয় না। ইচ্ছে করছে উনাকে একটু দেখতে কিন্তু এত রাতে তো সম্ভব নয়। তারপরেও যেনো মন মানছিলো না ছুটে যেতে মন চাইছে আদ্রর কাছে। মন জিনিসটা বড়ই গোলমেলে কখন কি চায় সে নিজেও জানে না।আচ্ছা এত রাতে উনার রুমে গেলে কি উনি আমাকে খারাপ ভাববে?নাহ খারাপ কেনো ভাববে আমাকে তো ভালোবাসে উনি। সব ভাবনা সাইডে রেখে পা বাড়ালাম আদ্রর রুমের দিকে। আমার রুমের বাইরে এসে থেমে গেলাম…..রাত তো অনেক হয়েছে হয়তো উনি ঘুমিয়ে পড়েছে এখন। তাছাড়া দরজাটাও খোলা রাখবে না নিশ্চই।
মন খারাপ করে রুমে চলে এলাম। জানালার পর্দা সড়িয়ে চোখ রাখলাম দূর আকাশে। আকাশের বুকে থাকা পূর্ণ চাঁদটা আলোকিত করে রেখেছে চারিদিক। তাঁরা গুলো মিটমিট করে জ্বলছে। মৃদু বাতাসে আমার চুলগুলো বারবার মুখে এসে পড়ছে। এমন মনোরম দৃশ্যে মুখরিত হয়ে মনের তিক্ততা অনেকটা কমে এসেছে।জানালার গ্রীল ধরে চাঁদের উপর দৃষ্টি রেখে দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ ফোনের রিংটন বেজে উঠলো। এতো রাতে কে কল দিলো? বেডের কাছে আসতেই আদ্রর হাসি মুখের ছবিটা দেখতে পেলাম। তারমানে উনি এখনো জেগে আছে! কিন্তু এতো রাতে ফোন দিলো কেনো? ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো……

সরি আরু তোর ঘুমটা ভাঙিয়ে দিয়েছি বলে। কি করবো বল আমার যে ঘুম আসছিলো না। খুব বেশি মিস করছিলাম তোকে। তাইতো তোকে বিরক্ত করলাম। তুই কি রাগ করেছিস আরু তোর ঘুম ভাঙালাম বলে? দেখ রাগ করলেও আমার কিছু করার নেই আমার এখন তোকে দরকার বুঝলি।

উনি একদমে কথাগুলো বলেই থামলো। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলে চলেছে যদি আমার জায়গায় নিশা আপু ধরতো ফোনটা! উনার কি সেটুকু সেন্স নেই!

আরু কি হলো চুপ করে আছিস কেনো?

আমি জানালার ধারে এসে আস্তে করে বললাম…..ফোনটা আমি না ধরে যদি নিশা আপু ধরতো। আমিই রিসিভ করেছি কিনা না জেনেই বলতে শুরু করলে!

আরু সোনা আমার এতো ভাবার সময় ছিলো না কে রিসিভ করেছে। আর নিশা ধরলেই বা কি হবে কদিন পরে তো সবাই জানতে পারবে। যাই হোক তোর ঘুম ভাঙানোর জন্য সরি।

আমি তো ঘুমাইনি জেগে ছিলাম।

কিহ! তুই এতো রাতে জেগে ছিলি কেনো? সাড়ে বারোটা বাজে।

ঘুম আসছিলো না তাই জানালার ধারে দাড়িয়ে চাঁদ দেখছিলাম।

ঘুম না আসার কারনটা কি আমি?

না তো তুমি কারন হতে যাবে কেনো এমনিতেই ঘুম আসছিলো না।

হুমম জানি আমি। আরু তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

আমার মনটা যেনো খুশিতে নেচে উঠলো কোনো কিছু না ভেবেই বললাম…..আমারো খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায়।

আদ্র হেসে উঠে বললো…..এইতো ঘুম না আসার কারনটা বুঝতে পেরেছি। আরু রুম থেকে বেড় হ।

কেনো?

বেড় হতে বলেছি তোকে, তোর কেনোর উত্তর দেওয়ার সময় নেই। এক্ষুনি বেড় হয়ে আয়।

উনি ফোনটা কেটে দিলো আমি নিশা আপুর কাছে এগিয়ে দেখলাম গভীর ঘুমে মগ্ন। ফোনটা বেডে রেখে বেড়িয়ে এলাম রুম থেকে। বাইরে বেড় হতেই আদ্রকে দেখতে পেলাম। কালো টি শার্ট আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরে উনার রুমের দরজায় হেলে দাড়িয়ে আছে। এদিকে আমি যে কি বেশে বেড়িয়ে এসেছি সেদিকে খেয়াল নেই। আদ্র আমার সামনে এসে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বাকা হেসে বললো…….

বাহ,আমার আরু সোনাকে দেখতে দারুন লাগছে তো। আমার মাথাটা আরো খারাপ করতে এভাবে এসেছিস তাইনা?

আমি আবার কি করলাম আমি তো……এটুকু বলেই খেয়াল হলো আমি তো ওড়না রেখেই বেড়িয়ে এসেছি! আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো ঘুরে রুমের দিতে দৌড় দিতে গেলে আদ্র আমার হাত ধরে কাছে টেনে নিলো। লজ্জা পেয়ে আমি মাথা নিচু করে নিলাম। উনি বলতে লাগলো……

ইসস এতো লজ্জা পেয়ো না গো। না হলে কখন যে টুপ করে খেয়ে ফেলবো তোমায় বুঝতেও পারবো না। আমার কাছে কিসের এতো লজ্জা হুম। আরু সোনা দেখি তাকাও আমার দিকে।

আমি চোখ তুলে তাকাতেই পারছিলাম না। ইচ্ছে করছিলো নিজেকে লুকিয়ে ফেলি। আমি মনের অজান্তেই আদ্রকে জড়িয়ে ধরে উনার বুকে মুখ লুকালাম। আমি হঠাৎ জড়িয়ে ধরায় আদ্র থম মেরে দাড়িয়ে রইলো উনি হয়তো আমার জড়িয়ে ধরাটা আশা করে নি। কয়েক সেকেন্ড এভাবে থেকে আমি চমকে উঠলাম উনাকে জড়িয়ে ধরেছি ভেবে। আমি উনাকে ছেড়ে দিতে নিলে আদ্র নিজের হাত উঠিয়ে আমাকে জড়িয়ে নিলো……..

আরু তুই আমাকে জড়িয়ে ধরলি! আমি তো ভাবতেই পারছি না আমার আরু আমার এতো কাছে আমার বুকে জড়িয়ে আছে।
.
.
সবাই মিলে নাস্তা করতে বসেছি আদ্র নিচে আসতেই নিশা আপু বলে উঠলো…….

আদ্র এতো দেরি হলো কেনো আসতে? আয় এখানে বস।

নিশা আপু নিজের পাশের চেয়ারটা টেনে দিলো। আদ্র নিশা আপুর কথায় কান না দিয়ে আমার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। আমি আড় চোখে একবার উনাকে দেখে নিশা আপুর দিকে তাকালাম। মুখটা কালো করে ফেলেছে দেখে মনে হচ্ছে আদ্রর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে।

আদ্র খাচ্ছে আর নিজের পায়ের আঙ্গুল দিয়ে আমার পায়ের আঙ্গুল স্পর্শ করছে। আমার শরীরে কাটা দিয়ে উঠছিলো এমনটা করায়। সবাই এখানে আছে কোনো মানে হয় এ রকম করার!খাবার টাও যেনো আমার গলায় আটকে গেছে। খেতে পারছি না। আদ্র চুপচাপ খেয়ে চলেছে। হনুমান কোথাকার আমার খাওয়ার বারোটা বাজিয়ে নিজে আরাম করে খাচ্ছে।

কি হলো আরিশা খাচ্ছিস না কেনো??

কাকিমা আমার পেছনে দাড়িয়ে বললো। আমি উঠে দাড়িয়ে বললাম……আমার খাওয়া হয়ে গেছে।

আদ্র আমার হাত ধরে বসিয়ে বললো…..মাত্রই তো খেতে বসলি এতো তাড়াতাড়ি খাওয়া হয় নাকি। চুপচাপ শেষ কর সবটা।

আদ্র আরিশা তো বলছে ওর খাওয়া হয়ে গেছে তাহলে ওকে জোর করছিস কেনো?

আদ্র নিশা আপুর দিকে তাকিয়ে বললো……আরুর খাওয়া হয়নি আমি জানি। তাই ওকে খেতে বলেছি এতে জোর করার কি হলো।

নিশা আপু আর কিছু বললো না। আমি জানি বাকীটা না খেলে আদ্র আবারো আমাকে খেতে বাধ্য করবে তাই এখনি খেয়ে নিলাম। রুমে আসতেই নিশা আপু বললো…..

আরিশা একটা কথা বলবো তোমায়?

হ্যা আপু বলো।

আমি একটা বিষয় খেয়াল করেছি আসার পর থেকে।আদ্র তোমার প্রতি এতো কেয়ারিং কেনো?

নিশা আপুর মনে যে কিছুটা সন্দেহ ঢুকেছে বেশ বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার এখন কি বলা উচিৎ? নিশা আপু আবারো কিছু বলতে নিলে অথই এলো…….

আরিশা আপু নিচে চলো মনিকা আপু এসেছে।

যাক মনিকা এসে ভালোই হয়েছে নিশা আপুর থেকে তো বাঁচলাম। নিচে এসে দেখলাম মনিকা আর ওর বাবা এসেছে। আমাকে দেখেই মনিকা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আগামি সপ্তাহে মনিকার বিয়ে ঠিক হয়েছে তারই দাওয়াত দিতে এসেছে। মনিকা বলছে বিয়ের তিন দিন আগে আমাকে যেতে মাকেও রাজি করিয়েছে। আমারো ইচ্ছে ছিলো আমার বেস্টুর বিয়েতে আগে যাবো খুব মজা করবো। কিন্তু আদ্র আমার ইচ্ছেতে এক বালতি পানি ঢেলে সব আনন্দ মাটি করে দিলো।
মনিকারা চলে যাবার পর আমি উপরে আসছিলাম আদ্র উপরে সিঁড়ির সামনে দাড়িয়ে ছিলো আমি উপরে উঠতেই উনি আমার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে এলো।

কি হলো আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেনো??

কারন আছে তাই এনেছি। আরু তুই মনিকার বিয়েতে তিনদিন আগে যাবি না বিয়ের দিন বাড়ির সকলের সাথে যাবি।

কি বলছো তুমি তখন তো অর্ধেক বিয়ে শেষ হয়ে যাবে। মা তো বলেছে যেতে আমি আগেই যাবো আমি মনির একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড আর আমি ওর পাশে থাকবো না তা কি করে হয়।

আরু আমি যেতে বারন করেছি তুই যাবি না।

আদ্র ধমকের সাথে কথাটা বলতেই আমি কেপে উঠলাম। আদ্র আমার দুগালে হাত রেখে স্লো ভয়েজে বললো…..

আরু আমার কথাটা একটু বুঝার চেষ্টা কর,বিয়ে বাড়িতে অনেক ধরনের ছেলেদের আমদানি থাকে আমি চাইনা আমার আরু তাদের চোখে পরুক। তাছাড়া বিয়ে বাড়িতে সব সময় নিজেকে সেভ রাখা যায় না। আর আমি তোকে যেখানে তিন মিনিট না দেখে থাকতে পারি না সেখানে তিনদিন কি করে থাকবো বল।

আজব তো! আমি কি ছেলেদের কাছে দিয়ে ঘুরঘুর করবো নাকি যে তাদের চোখে পড়বো? ঠিকআছে আমাকে নিয়ে তোমার ভয় তো তুমিও চলো আমার সাথে তাহলে আর না দেখে থাকতে হবে না।

আদ্র রেগে আমার থেকে দূরে গিয়ে বললো……তুই তাহলে আমার কথা শুনবি না তাইতো। যা যেখানে খুশি যা আমি আর তোকে বাধা দেবো না।

আদ্র খুব রেগে গিয়েছে। সামান্য একটা ব্যাপারে এভাবে রেগে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না। আমি এগিয়ে গিয়ে উনার হাত ধরতেই এক ঝটকায় আমার হাত ছাড়িয়ে বললো……বলেছি তো তোকে বাধা দেবো না তাহলে হাত ধরে কি বলতে চাইছিস। আর কিছু বলতে হবে না যা এখান থেকে।

আমার কথাটা তো শোনো।

আরু যেতে বলেছি তোকে।

উনার এমন আচরনে খুব খারাপ লাগছিলো। কাছের মানুষ একটু রেগে কিছু বললে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক,আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। আমি তো এটাই বলতে চেয়েছিলাম মনির বিয়ের দিনেই যাবো কিন্তু উনি সেটা না শুনেই আমাকে চলে যেতে বললো। আর কিছু না বলে আমি মন খারাপ করে বেড়িয়ে এলাম উনার রুম থেকে।
.
.
সারাদিনে রুম থেকে আর বেড় হই নি। আদ্রর ওমন আচরনে কষ্ট হচ্ছিলো আমার। নিশা আপু বারবার জানতে চেয়েছে মন খারাপ কেনো আমি এটা সেটা বলে এড়িয়ে গিয়েছি।
দুপুরে খাইনি রাতেও যাইনি খেতে আদ্র একবারো আসেনি আমি খেয়েছি কিনা জানতে ঠিকআছে আমিও যাবো না উনার সামনে। কি ভেবেছে নিজেই শুধু রাগ দেখাতে পারে আমি পারি না।

ওদিকে আদ্রও আজ রুম থেকে বেড় হয়নি খায়ও নি কিছু। আদ্রর মা খাবার নিয়ে আদ্রর রুমে এলো। আদ্র কপালে হাত রেখে শুয়ে আছে।

আদ্র কি হয়েছে তোর শরীর খারাপ?

মায়ের গলা শুনে আদ্র উঠে বসলো…….না মা আমি ঠিকআছি।

তাহলে কি হয়েছে?দুপুরে খাসনি এখনো নিচে নামলি না। আরিশাকেও জোর করে খাওয়াতে পারি নি। তুই কিছু বলেছিস ওকে?

মা আরু এখনো খায় নি?

নাহ সেই সকালে যা নাস্তা করেছে।

এ খাবারটা কি আমার জন্য এনেছো?

হ্যা সারাদিন তো খাসনি তাই নিয়ে এলাম।

আদ্র মায়ের হাতে থেকে খাবার প্লেটটা নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আদ্রর মা হা করে বসে আছে তবে তার বুঝতে বাকী নেই আদ্র খাবার নিয়ে কোথায় গেলো।

আরিশার রুমের দরজা লক করা ভেতর থেকে আদ্র এসে নক করলো। নিশা দরজা খুলতেই আদ্র বললো……আরিশা কোথায়?

আরিশা তো ব্যালকনিতে কোনো দরকার? আদ্র তোর হাতে খাবার কেনো?

আদ্র নিশার কথার উত্তর না দিয়ে ভেতরে ঢুকে বললো……নিশা তুই কিছুক্ষণের জন্য অথই এর রুমে যা।

কেনো?

যেতে বলেছি যা।

নিশা আপু কোথাও যাবে না। তুমি আমার রুমে কেনো এ সময়?

আরিশা ব্যালকনির দরজায় দাড়িয়ে আদ্রকে কথাটা বলতে আদ্র ওর দিকে তাকিয়ে বললো……একটা থাপ্পড় মেরে সব গুলো দাঁত ফেলে দিবো তোর। কিসের এতো রাগ তোর হ্যা?সারাদিন না খেয়ে বসে আছিস। আবার এখন উল্টো জেদ দেখাচ্ছিস।
নিশা তোকে না বললাম অথই এর রুমে যেতে।

নিশার কাছে ওদের হাবভাব মটেও সুবিধার লাগছে না। আদ্র রেগে আছে বুঝতে পেরে কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

আদ্র প্লেট বেডের উপর রেখে আমার হাত ধরে এনে বেডে বসালো। উনি রেগে আছে তাই কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না। আদ্র আমার পাশে বসে এক লোকমা ভাত তুলে আমার মুখের সামনে ধরে বললো……

আরু হা কর।

খাবো না আমি। মুখ ঘুরিয়ে বললাম।

হা করতে বলেছি তোকে।

বললাম তো খাবো না তুমি……..এটুকু বলে উনার চোখের দিকে তাকাতেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম ভীষণ রেগে আছে। আমি একটা ঢোক গিলে হা করলাম উনি কয়েক লোকমা খাওয়ানোর পর উনার চেহারা স্বাভাবিক হলো। আমি আস্তে করে বললাম…..

তুমি খেয়েছো?

না খাই নি তুই খাওয়া শেষ কর তারপর তোকে খাবো।

কিহ! বলছো কি তুমি?

চুপ কোনো কথা নয় খেয়ে নে।

হুম। খাবো দুজনে একসাথে। আমি ভাত তুলে আদ্রর মুখের সামনে ধরলাম উনি চেয়ে আছে আমার দিকে……কি দেখছো হুম তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমিও খাও নি। নাও হা করো।

আদ্র মৃদু হেসে খেয়ে নিলো। দুজনের খাওয়া শেষ হতে আদ্র বললো…….মনিকার বিয়েতে যেতে দেবো না বলে এতো রাগ ঠিকআছে যাবি তবে তিনদিন আগে নয় একদিন আগে।

থাক আমি যাবো না বিয়ের দিনেই যাবো।

বললাম তো যাবি এখনো রেগে আছিস?

না রেগে নেই কষ্ট পেয়েছিলাম তোমার আচরনে।

সরি আরু সোনা আর কষ্ট দিবো না তোকে।

আদ্রর ইনোসেন্ট ফেস দেখে ফিক করে হেসে উঠলাম। উনি বুকে হাত দিয়ে বললো……এমন করে হেসো না গো বুকে লাগে।
·
·
·
চলবে……………………………..
#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ১৬)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
মনিকার আজ গায়ে হলুদ একটু আগেই এসেছি ওদের বাড়িতে আমার সাথে অথই এসেছে। আদ্র শাড়ি পড়তে বারন করেছে তাই আমি হলুদ আর সবুজের মিশ্রণে একটা গাউন পড়েছি। মনিকাকে সাজিয়ে হলুদের স্টেজে এনে বসানো হয়েছে। ওকে খুব সুন্দর লাগছিলো দেখতে হলুদ শাড়ি ফুলের গহনা তে মনিকাকে হলুদ পরী দেখতে লাগছিলো। এতটাই সুন্দর লাগছিলো যে আমি নিজেই ক্রাশ খেয়েছি। ওর পাশে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম…….

মনি তোকে হলুদের সাজে দেখে আমি চোখ সরাতে পারছি না কাল বিয়ের সাজে দেখলে কি হবে কে জানে। এখন এটাই ভাবছি তন্ময় ভাইয়া কাল তোকে দেখে সেন্স হারিয়ে না ফেলে। (তন্ময় মনির হবু বর)

আরু চুপ করবি কি বলছিস এসব।

বা বাহ আমার বেস্টুটা দেখছি লজ্জা পেতেও শিখে গেছে।

মনিকার হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে রুমে আসতেই আদ্র কল দিলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো……

কি করছে আমার আরু সোনা?

মাত্র হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো রুমে এলাম। তুমি কি করছো?

তোকে দেখছি।

আমাকে! আমি তো তোমার সামনে নেই কিভাবে দেখছো?

আমার মনের আ্যলবামে তোর অনেক ছবি সযত্নে রেখে দিয়েছি সেগুলোই দেখছি।

ওহ তাই বলো আমি ভেবেছি তুমি হয়তো এসেছো এখানে।

হা হাহা তাই। তাহলে চলে আসি এখন। কি আসবো?

রাত হয়ে গেছে তো এখন আসতে হবে না কাল সকালে এসো।

মনিকা ভেতর থেকে আরুকে বললো…….
আরু তোর কথা বলা হলো আমাকে একটু হেল্প করনা পরে কথা বলিস।

শোনো এখন রাখছি আমি মনি ডাকছে।

আচ্ছা যা। আরু শোন।

হুম বলো?

সাবধানে থাকবি কেমন কোনো ছেলের সাথে কথা বলবি না। মনিকার সাথে থাকবি বাইরে বেড় হওয়ার দরকার নেই। অথইকে নিজের সাথে রাখবি সব সময় বুঝেছিস?

হুম বুঝেছি।

কি বুঝলি?

ওই তো আমি তোমার চোখে এখনো বাচ্চা তাই আমাকে সাবধান করছো। এই তোমার কি মনে হয় হুম আমার মাথায় কি কোনো বুদ্ধি নেই? আমি নিজেকে সামলাতে পারি না?

আরে আরু সোনা রেগে যাচ্ছিস কেনো টেনশন হয় তো আমার।#তোকে অনেক ভালোবাসি এইজন্যই তো এত চিন্তা তোকে নিয়ে।

আমি সেভ আছি আর থাকবো টেনশন করো না। রাখছি এখন।
.
.
মনিকা ওর হবু বরের সাথে ফোনে কথা বলছে অথই ঘুমিয়ে পড়েছে।অনেক রাত হয়েছে বিয়ে বাড়ি হলেও এখন চারিদিকে নিরবতা বিরাজ করছে। দরজায় কেউ নক করছে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। আমি দরজা খুলতেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে চোখের পলকও ফেলছে না। আমি ছেলেটির সামনে হাত নাড়িয়ে বললাম……..

ভাইয়া কিছু বলবেন আপনি??

ছেলেটি নিজের মাথা চুলকে বললো…….মনিকা কোথায়?

মনি তো ওর হবু বরের সাথে কথা বলছে। ডেকে দিবো?

নাহ থাক এখন ওকে ডিস্টার্ব না করাই ভালো। আপনি মনিকার বেস্ট ফ্রেন্ড তাইনা?

হ্যা। আর কিছু বলবেন আপনি?

আপনার নামটা জানতে পারি?

আমার নাম আরিশা তাসনীম। আপনি এখন আসতে পারেন বাই। বলেই আমি দরজা বন্ধ করে দিলাম। এ ছেলের সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।

আজ মনিকার বিয়ে বাড়ি ভর্তি লোকজন। পার্লার থেকে লোক এসেছে মনিকাকে সাজাতে। আমার পার্লার এর সাজ তেমন পছন্দ নয় তাই একাই হালকা সেজেছি। আমার আর অথই এর সেম ড্রেস শুধু কালারটা ভিন্ন। আমি পড়েছি ব্লু কালারের উপর ব্ল্যাক স্টোনে কাজ করা গাউন আর অথই পড়েছে মেরুন কালার। মনিকার সাজানো এখনো হয়নি। আমি অথইকে নিয়ে বাড়ির বাইরে এলাম। আদ্র আর নিশা আপু আসছে ওদের জন্য ওয়েট করছি। পেছন থেকে কেউ বললো…….

হাই আরিশা।

আমি পেছনে ঘুরে কাল রাতের সে ছেলেটিকে দেখতে পেলাম। বিরক্তির স্বরে বললাম……কি চাই?

আপনার সাথে কথা বলতে চাই। বাহ,আপনাকে তো খুব সুন্দর লাগছে। ও কে?অথইকে দেখিয়ে।

ও আমার বো…..

আমি বোন বলার আগেই অথই বলে উঠলো……..এটা আমার ভাবি আর আমি ওর একমাত্র ননদ।

অথই এর কথা শুনে আমি যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি খুশি হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে এ কথাটাই বলা ঠিক হয়েছে। ছেলেটি ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে মুখের আভাটাও পুরো অন্য রকম হয়ে গিয়েছে। বিষ্ময় কাটিয়ে বললো……..

আপনি বিবাহিত! কই আপনাকে দেখে তো তা মনে হয় না।

আমি যে বিবাহিত সেটা কি গায়ে লিখে বেড়াতে হবে? ও তো বললোই আমি ওর ভাবি হই তারপরেও বিশ্বাস হচ্ছে না আপনার?

ছাড়ো তো ভাবি ভাইয়া তো একটু পরে আসবেই তখন নিজের চোখে দেখে উনি বিশ্বাস করবেন। তাইনা ভাইয়া?

ছেলেটি আর কিছু বললো না মুখটা কালো করে চলে গেলো সেখান থেকে। আমি আর অথই উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম।

কি ব্যাপার এতো হাসি কিসের?

আমরা হাসি থামিয়ে পাশে তাকাতেই আদ্র আর নিশা আপুকে দেখতে পেলাম। আদ্র মুচকি হেসে আবারো বললো…….

হাসছিস কেনো এখানে দাড়িয়ে?

ভাইয়া হয়েছে কি……

আমি অথই এর মুখ চেপে ধরলাম। এখন যদি আদ্রকে ছেলেটির ব্যাপারে বলা হয় তাহলে উনি রেগে যেতে পারে। তাই কথা ঘুরিয়ে বললাম…….

তেমন কিছু নয় এমনিতেই হাসছি। এতো দেরি হলো কেনো তোমাদের,মা কাকিমা এলো না কেনো?

কোথায় দেরি হয়েছে তাড়াতাড়ি তো এসেছি। আর মায়ের ভালো লাগছিলো না আসবে না বলেছে তাই ছোট কাকিমা ও এলো না।

ওহ ঠিকআছে ভেতরে চলো। নিশা আপু এসো।

আমি নিশা আপু অথই আগে হাটছি আদ্র আমাদের পেছনে। ওড়নায় টান পড়ায় ঘুরে তাকালাম। আদ্র ওড়নার এক পাশে ধরেছে চোখের ইশারায় বলছে পেছনে হাটতে।
আমি আদ্র পাশাপাশি হাটছি। উনি আস্তে করে বললো……

আরু এতো সেজেছিস কেনো তুই?

কোথায় এতো সেজেছি?কেনো দেখতে খারাপ লাগছে?

না ম্যাম অনেক বেশি সুন্দর লাগছে আপনাকে। আমার তো ইচ্ছে করছে তোকে সামনে বসিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। এই আরু কোনো ছেলে নজর দেয় নি তো তোর দিকে?

আমি মটেও তেমন সুন্দরী নই যে ছেলেরা নজর দেবে।

কে বলেছে আমার আরু সুন্দরী না। আমার চোখে সে সব থেকে বেশি সুন্দরী। যার রুপে আমি মুগ্ধ হই। যার চোখের দিকে তাকালে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। যার মায়াতে আমি গভীর ভাবে বাধা পড়ে গিয়েছি সে সুন্দরী রমণীটা আর কেউ নয় আমার আরু।

হয়েছে চলো এখন।
.
.
মনিকাকে একটু আগে শশুর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছে। মনিকা নেই আমি আর থেকে কি করবো তাছাড়া আদ্র রেখে যাবে না। মনিকার মা ওর বোন বারবার বলেছে থাকতে কিন্তু আমার থাকা সম্ভব নয়। রাত হয়ে গিয়েছে অথইকে নিয়ে আদ্র বাইরে অপেক্ষা করছে।নিশা আপু আমার সাথে আমি রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে এলাম। আদ্রদের কাছে এসে দাড়াতেই ওই ছেলেটি সামনে এসে দাড়ালো। আমাক দিকে তাকিয়ে বললো…….

এটাই আপনার হাজবেন্ড?

ছেলেটি যে এমন একটা প্রশ্ন করবে ভাবতেও পারি নি। আদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে অথই হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আর নিশা আপু পুরোই সন্দেহের দৃষ্টিতে একবার আমাকে দেখছে আবার আদ্রকে দেখছে। আমি কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না। ছেলেটি উত্তরের আশায় এখনো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। হঠাৎ আদ্র বলে উঠলো……

হ্যা আমি ওর হাজবেন্ড। এনি প্রবলেম?

নো,ইট’স ওকে। জাস্ট সিওর হলাম।

ছেলেটি চলে গেলো সেখান থেকে। নিশা আপু আদ্রকে বললো……

আদ্র এটা কি বললি তুই! নিজেকে আরিশার হাজবেন্ড বললি কেনো?

নিশা আমার মনে হয়েছে এটা বলা দরকার ছিলো তাই বলেছি।

নিশা আপু আর কিছু বললো না মুখটা কালো করে গাড়ির দিকে চলে গেলো। আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বললো…….

আসল ব্যাপারটা কি বলতো ছেলেটি কে,আমি তোর হাজবেন্ড কিনা কেনো জানতে চাইলো?

আমি কিছু বলার আগে অথই সব বলে দিলো।

আদ্র সব শুনে হো হা করে হেসে উঠলো। আমি তো ভেবেছি উনি রাগ করবেন কিন্তু না উনি হাসছেন! হাসতে হাসতে অথইকে একহাতে জড়িয়ে বললো……

এই না হলো আমার বোন। অথই তুই ঠিক জায়গায় ঠিক কথা বলেছিস। তার জন্য তোকে কি দেওয়া যায় বলতো?

উমম বেশি কিছু নয়, দুই বক্স চকলেট দিলেই চলবে।

ওকে আমার সুইট বোনটি কালই পেয়ে যাবি। তবে তোর ভাবিকে কিন্তু একটুও দিবি না। তোর যে টুকু বুদ্ধি আছে ওর সেটুকুও নেই। বেশি বেশি চকলেট খেয়ে ওর বুদ্ধিটা আরো কমে এসেছে।

আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম…….তোমাদের চকলেট আমি খেতে চাইনি হুহ।
.
.
আমার একটা বদ অভ্যাস আছে রাতে কানে ইয়ার ফোন গুজে গান না শুনলে আমর ঘুম আসে না। মনিকাদের বাড়ি থেকে আসার সময় আমার ফোনটা আদ্র নিয়েছিলো আর নেওয়া হয় নি। এখন তো আনতেই হবে না হলে গান শুনবো কিসে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১০:১৫ বাজে নিশা আপু এখনো রুমে আসে নি। মনিকাদের বাড়ি থেকে আসার পর একটিও কথা বলেনি আমার সাথে। ড্রয়িংরুমে কেমন যেনো গম্ভীর হয়ে বসে ছিলো ডিনার ও করেনি। কি হলো হঠাৎ নিশা আপুর? রুমে আসলেই জেনে নিবো আগে ফোনটা নিয়ে আসি।

ওদিকে আদ্র নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে সাদাফের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে।

আদ্র তোর আরু কেমন আছে? মনের কথা তো বলেই দিয়েছিস তো বিয়ে করছিস কবে ওকে?

বাবা চাচ্চুর সাথে কথা বলবে বলেছে দেখি কি হয় আগে।

তোর চাচ্চু যদি মেনে না নেয়?

মেনে তো নিতেই হবে। আমি যেমন আরুকে ছেড়ে থাকতে পারবো না আরুও পারবে না আমি জানি। চাচ্চু আরুকে খুব ভালোবাসে ওর খারাপ নিশ্চই চাইবে না।

ওদের কথা বলার মধ্যেই নিশা এসে আদ্রর ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিলো।

আদ্র উঠে দাড়িয়ে নিশার দিকে তাকিয়ে বললো…..নিশা তুই ল্যাপটপ অফ করলি কেনো?

আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই অফ করেছি।

আজব তো! তোর ইচ্ছে আমার কাজের মধ্যে নাকি! আর কারো রুমে আসতে হলে দরজায় নক করতে হয় জানিস না?

তার রুমে আসতেই নক করতে হয় যাকে পর ভাবা হয়। বাট আমি তো তোকে পর ভাবি না এ জন্য নক করার কোনো প্রয়োজন মনে করিনি।

নিশার তাকানো কথা বলা আদ্রর চোখে আজ অন্য রকম লাগছে। আদ্র নিশাকে বললো……কি দরকারে এসেছিস সেটা বল?

আদ্র তুই আরিশাকে ভালোবাসিস?

আদ্র নিশার কথায় কিছু মনে করলো না স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো…….হ্যা আরুকে আমি ভালোবাসি,অনেক ভালোবাসি।

নিশা কয়েক সেকেন্ড থম মেরে আদ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো……..আদ্র আমি তোকে ভালোবাসি সেই ছোট থেকে ভালোবেসেছি তোকে। প্লিজ আদ্র আমাকে ফিরিয়ে দিস না।

আদ্র অবাক হয়ে নিশার দিকে তাকালো…….নিশা তোর মাথা ঠিক আছে! এসব কি বলছিস তুই!

আমার মাথা একদম ঠিক আছে,আদ্র আমি সত্যি #তোকে অনেক ভালোবাসি।

দেখ নিশা তোকে আমার বোন ছাড়া অন্য কিছু কখনো ভাবি নি। তাছাড়া আমি আরিশাকে ভালোবাসি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি ওকে আমি।

নিশার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আদ্রর বিরক্ত লাগছে নিশাকে এখন। রেগে বললো……নিশা তোকে এই মুহুর্তে আমার বিরক্ত লাগছে। আর এই ন্যাকা কান্না বন্ধ কর।

আদ্র অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাড়িয়ে আছে নিশা হুট করে আদ্রকে জড়িয়ে ধরলো। আদ্র শকড নিশা হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরায়। নিশা কাঁদতে কাঁদতে বললো…….

আদ্র আমার খুব কষ্ট হচ্ছে প্লিজ আমাকে দূরে ঢেলে দিস না।

দরজার দিকে কিছুর আওয়াজ পেয়ে আদ্র তাকালো সেদিকে। আরু দরজায় নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে দাড়িয়ে আছে। আরুর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আরু ওখানে আর না দাড়িয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলো।
আদ্রর বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। নিশাকে ছাড়িয়ে ওর গালে জোরে একটা চড় বসিয়ে দিলো। রাগে ওর চোখ থেকে আগুন বেড় হচ্ছে। কপালের রগ ফুলে উঠেছে। নিশাকে আরো একটা চড় মারলো আদ্র। নিশা নিজেকে সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেলো। ছলছল চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বললো………

আদ্র তুই আমাকে মারলি!

হ্যা মারলাম। তোর কারনে যদি আমার আরু আমাকে আজ ভুল বোঝে তাহলে তোকে খুন করে ফেলবো আমি। কোন সাহসে তুই জড়িয়ে ধরলি আমায়? এ বুকে শুধু মাত্র আরুর জায়গা শুনেছিস তুই? তোর গায়ে হাত তুলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিলো না আমার। কিন্তু তুই আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ধৈর্যর বাধ ভেঙে দিয়েছিস। আমার আরুর চোখে পানি এনেছিস। ওর একটু খানি কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না সেখানে ও আজ তোকে আমার বুকে দেখে চোখের পানি ফেলছে শুধু মাত্র তোর কারনে।

আদ্র আর কিছু না বলে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো। নিশা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। শব্দহীন কেঁদে চলেছে।
·
·
·
চলবে…………………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here