তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব ১৯+২০

#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ১৯)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে রিক্সায় উঠতে নিলে কেউ আরিশা বলে ডাকলো আমি ঘুরে তাকাতেই একটি ছেলে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো…….কেমন আছো আরিশা??

ছেলেটিকে চেনা চেনা লাগছে কোথায় যেনো দেখেছি। কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না।

আমি ভালো আছি। আপনি কে আমাকে চিনলেন কি করে??

এ কদিনে ভুলে গেলে! আমি ইফতি। মনিকার বিয়েতে দেখা হয়েছিলো আমাদের।

ছেলেটি পরিচয় দেওয়াতে আমার কপাল কুঁচকে গেলো। এই ছেলে এখানে কি করছে? একটু হেসে বললাম…….ও আচ্ছা আপনি আমি চিনতে পারি নি। ভাইয়া আমার দেরি হচ্ছে আসি।

আরে দাড়াও কথা শেষ হয়নি তো।

আমার সাথে আপনার কি কথা??

কথাটা হলো তুমি সেদিন আমাকে মিথ্যে বলেছিলে যে তুমি বিবাহিত। কি ঠিক বলেছি তো??

হায় আল্লাহ এই ছেলে জানলো কি করে? আমি একটু ভেবে বললাম……হুম ঠিক বলেছেন বিয়ে হয় নি তবে হবে। যাকে দেখিয়েছিলাম উনার সাথেই আমার বিয়ে হবে।

বিয়ে হবে হয় নি তো। তাহলে তো একটা চান্স নেওয়াই যায়।

মানে! কিসের চান্স??

আসল কথাটি বলি তোমাকে মনিকার বিয়েতে দেখেই আমার ভালো লেগে গিয়েছিলো। কিন্তু তুমি যখন বলেছো তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি যখন এ ভার্সিটিতে ভর্তি হলে তখন থেকে আমি তোমাকে ফলো করতে লাগলাম। আমার মনে হয়েছিলো বিয়ের ব্যাপারটা সত্যি নয় তাই খোজ নিতে লাগলাম আর সত্যিটা পেয়েও গেলাম যে তুমি বিবাহিত নও। তাই আমি ভাবছি……

ইফতি আর কিছু বলার আগেই আদ্র এসে আমার সামনে দাড়লো উনার চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠেছে। ইফতির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আমার হাত ধরে টেনে গাড়িতে নিয়ে বসালো। উনার রাগ দেখে আমি যেনো জমে গিয়েছি কিছু বলতে পারছিলাম না শুধু ঢোক গিলছি। আদ্র সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে একটিও কথা বলছে না। আমি কিছুটা সাহস করে কথা বলার জন্য মুখ খুলতেই আদ্র বলে উঠলো……..

এই মুহুর্তে আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।

উনি সামনে তাকিয়েই বললো আমি আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ বসে রইলাম। উনার রাগের কারনটা বুঝতে পারছি কিন্তু এতে আমার কি দোষ। আজ আমার কপালে যে কি আছে কে জানে।
.
.
বাড়িতে এসে আদ্র সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। আমি শুধু ভাবছি উনি রেগে গেলে তো আমাকে বকে তাহলে আজ কিছু বললো না কেনো! কি চলছে উনার মনে?

রাতে ডিনারের সময় ও আদ্র নিচে নামেনি। উনাকে না দেখতে পেয়ে খারাপ লাগছিলো আমার। অল্প করে খেয়ে উঠে গেলাম। রুমে এসেও শান্তি পাচ্ছিলাম না সেই দুপুর থেকে আদ্রর সাথে কথা বলা তো দূরে একবার দেখাও হয়নি। ফোনটা হাতে নিয়ে আদ্রর নাম্বারে কল দিলাম বারবার রিং হচ্ছে ধরছে না। সামান্য একটা বিষয়ে এভাবে রাগ করার কোনো মানে হয়? আমি সোজা আদ্রর রুমের দরজায় এসে দাঁড়ালাম দরজায় হাত দিতেই দরজা খুলে গেলো। পা টিপে টিপে ভেতরে ঢুকলাম। সারা রুমে চোখ বুলিয়ে আদ্রকে দেখছি না,ব্যালকনিতে ও নেই। গেলো কোথায় এই রাতে??
আমি আদ্রর রুমেই বসে রইলাম। উনাকে না দেখে যেনো আমার শান্তি হচ্ছিলো না। আমি প্রায় ১৫ মিনিট বসে থেকে উঠে দাড়ালাম দরজার কাছে আসতেই আদ্র রুমে ঢুকলো। আমি স্থির হয়ে দাড়িয়ে ভয়ে ভয়ে তাকালাম উনার দিকে। আদ্র ভ্রু কুঁচকে বললো…….

এ সময় আমার রুমে কি করছিস তুই??

তোমাকে খুব মিস করছিলাম তাই এসেছি।

কেনো আমাকে মিস করার কি আছে। যা না ওই ছেলেটির সাথে রাস্তায় দাড়িয়ে কথা বল ওকেই বেশি বেশি করে মিস কর।

এ তুমি কি বলছো ওই ছেলেকে আমি মিস করতে যাবো কেনো। আমি তোমাকে ভালোবাসি মিস করলে তোমাকেই মিস করবো।

তাই না। তাহলে ওই ছেলেটি যখন বিয়ের কথা সত্যি কিনা জানতে চেয়েছিলো তখন না বলেছিলি কেনো শুনি?সত্যি বলে নিজেকে মহৎ বানাতে চাইছিলি। সবার কাছে এতো সত্যেবাদী হওয়া ভালো নয় এটা তোর মাথায় আসেনি?

আমি কি করবো ওই ছেলে তো বললো সে নাকি খোজ নিয়ে জেনেছে আমি বিবাহিত নই।

এই মাথামোটা মেয়েকে আমি কি করে বুঝাবো! ওই ছেলে জেনেছে ভালো কথা তুই আগের কথাটাই বলতো পারতিস যে বিয়ে হয়ে গেছে। তা না করে তুই সত্যি টাই বললি।

এভাবে কেনো বলছো আমি তেমন কিছু না ভেবেই বলে ফেলেছি। ভুল তো হয়েই গিয়েছে তাই বলে এভাবে রেগে থাকবে তুমি?

ভুলটা কেনো হবে ভার্সিটিতে পড়িস তোর বুদ্ধি হবে কবে বলতো।

আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আদ্র আমার চোখের পানি মুছে শান্ত কন্ঠে বললো…….বলেছি না তোর কাঁন্নাতে আমার কষ্ট হয়। আমি কি বকেছি তোকে কাঁদছিস কেনো?

তুমি আমার সাথে দুপুর থেকে কথা বলোনি খুব কষ্ট হচ্ছিলো।

এখন তো কথা বলছি। তোর উপর রাগ হয়েছিলো অনেক ছেলেটি যাই বলুক না কেনো তুই কড়া ভাবে কথা বলে কাটিয়ে দিতে পারতি তা না করে উল্টো ওকে সুযোগ দিয়ে দিচ্ছিলি এর জন্যই রাগ হয়েছিলো। এমন হলে তো চলবে না কোথায় কি বলতে হয় সেটা মাথায় রেখে এগিয়ে যেতো হবে তোকে।

আমি সত্যি বুঝতে পারি নি। আচ্ছা আবার যদি ওই ছেলেটি কথা বলতে আসে আমি অনেক গুলো কথা শুনিয়ে দিবো।

আদ্র আমার কপালে চুমু খেয়ে বললো…….আর কিছু শুনাতে হবে না ওকে আমি যা বলার বলেছি।

কি বলেছো??

এতো কিছু জানতে হবে না এখন রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড় কেমন।

মাথা নাড়িয়ে চলে যেতে গিয়ে আবার আদ্রর সামনে এসে বললাম…….তুমি তো খাও নি ক্ষিদে পেয়েছে নিশ্চই??

আদ্র হেসে বললো…….বা বাহ আমার বউটার এতো খেয়াল! আমি একটু আগেই খেয়ে এসেছি বুঝেছিস।

হুম ঠিকআছে রাত জেগো না আমি যাচ্ছি।

আরু চলে যেতেই আদ্র মুচকি হেসে বললো……আরু তোর উপর আমি যতই রাগ করি না কেনো কখনো দূরে সড়িয়ে রাখতে পারবো না। তোর ভালোবাসার মায়াটা যে বেধে রেখেছে আমাকে। কাল তোর জন্য বড় একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আরু। তুই হয়তো অনেক বেশি অবাক হবি সারপ্রাইজটা পেয়ে।
.
.
সকালে জানালার পর্দা ভেদ করে সোনালি রোদ এসে মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো। রোদের আলো চোখে পড়ায় টিপটিপ করে চোখ মেলে তাকিয়ে উঠে বসলাম। আজ সকালটা কেমন যেনো অন্য রকম লাগছে মনে হচ্ছে নতুন কিছুর আগমন ঘটতে চলেছে আমার জীবনে। ফোনটা হাতে নিয়ে টাইম দেখে আমার চোখ কপালে!! ৯ টা বেজে গেছে অথচ কেউ ডাকলো না? আমাকে যে ভার্সিটি যেতে হবে সবাই কি ভুলে গেছে? আদ্র ও তো ডেকে দিতে পারতো।
ফ্রেস হয়ে নিচে চলে এলাম মা কাকিমা রান্না ঘরে আমি গিয়ে মাকে বললাম………

মা এতো বেলা হয়ে গিয়েছে আমাকে ডাকো নি কেনো? প্রথম ক্লাসটা মিস করে ফেললাম।

ইচ্ছে করেই ডাকিনি আজ ভার্সিটি যেতে হবে না।

ভার্সিটিতে যাবো না,কিন্তু কেনো??

মা কিছু বলতে নিলে কাকিমা বলে উঠলো……..আরিশা একদিন না গেলে কিছু হবে না। তুই এখন রুমে যা ওহ শোন অথই এখনো ঘুমাচ্ছে ওকে ডেকে তোল গিয়ে।

অথই স্কুলে যায় নি??

না ও নাকি আজ যাবে না।

কি হলো ব্যাপারটা আমি ভার্সিটি গেলাম না অথইও স্কুলে যায় নি আদ্র কিছুই বললো না! অন্য সব দিনে তো সে নিজেই বকে মাথায় তুলতো আমাদের দেরি হলে আর আজ একদম নিরব! আদ্র কি তাহলে বাড়িতে নেই? উনার রুমে গিয়েই দেখি আছে নাকি।
আদ্রর রুমের দরজা খোলা ভেতরে গিয়ে উনাকে পেলাম না। গেলো কোথায় এই সময়ে? প্রতিদিন তো নিজেই আমার ঘুম ভাঙায় আজ কি হলো? ধুর এতো ভেবে কি হবে ভালোই হয়েছে অনেক দিন পর অথই আর আমি জমিয়ে আড্ডা দিবো।

অথইকে ডেকে তুলে আমি রুমে চলে এলাম। একটু পরে অথই এসে ধপ করে বসে পড়লো আমার পাশে। আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকা করে মুচকি হাসছে।

অথই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিস কেনো,জোকার মনে হয় আমাকে হু??

কি যে বলো না আপ ধেত আবার ভুল করছি তুমি তো আমার ভাবি হও তোমাকে জোকার মনে হবে কেনো।

তোর হাসির ধরন দেখে তো সেটাই মনে হচ্ছে। আর শোন আমাকে আপু বলবি ভাবি নয় তাছাড়া এখনো ভাবি বলার সময় হয় নি।

সময় হয় নি হতে কতক্ষণ। আমি তোমাকে ভাবি বলবো আমার আরো ভাই আছে নাকি যে তাদের বউকে ভাবি ডাকবো। আমার একমাত্র ভাইয়ার বউ হবে তুমি উফ কি যে খুশি লাগছে আমার।

হয়েছে বোনু এখন চল নিচে যাই ক্ষিদে পেয়েছে।

অথইকে নিয়ে নিচে আসতেই কাকিমা বললো……..আরিশা আদ্রকে ফোন দিয়ে শোন তো কখন আসবে।

কোথায় গিয়েছে উনি?

একটা কাজে গিয়েছে তুই ফোন দিয়ে শোন আগে।

আদ্রকে ফোন দিচ্ছি ধরছে না। এদিকে মা কাকিমা অথই এদের ব্যবহার ও কেমন যেনো লাগছে। চাচ্চু ও আজ বাড়িতে আছে আব্বু বেড়িয়েছে সেও নাকি চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে।
সোফায় বসে টিভি দেখছি কলিংবেল বেজে উঠতে মা গিয়ে দরজা খুললো। আদ্র এসেছে সাথে ফুপিও এসেছে। আমি দৌড়ে গিয়ে ফুপিকে জড়িয়ে ধরলাম। আদ্রর দিকে তাকালাম না আমার ফোন ধরেনি এজন্য অভিমাম করেছি,কথা বলবো না হু।
ফুপি আমার কপালে চুমু একে দিয়ে বললো…….

আরিশা আমি সত্যি ভাবতে পারছি না আজ তোর…..

ফুপিকে থামিয়ে আদ্র বললো……..ফুপি তোমাকে না বলেছি মুখ বন্ধ রাখতে।

মুখ বন্ধ রাখতে হবে কেনো এই ফুপি তুমি বলো কি বলতে চাচ্ছিলে।

উহু আমি কিছু বলবো না।

ফুপি মায়ের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে কি যেনো বলতে লাগলো। আমি আদ্রর দিকে তাকাতেই উনি বাকা হেসে চোখ টিপ মারলো। মুখ ভেংচি কেটে চলে এলাম সেখান থেকে।

রুমে এসে এদিক ওদিকে পাইচারি করছি আর ভাবছি কি হতে চলেছে আমার মন বলছে কিছু একটা হবে। কিন্তু কি সেটা?
রুমে বসে এসব ভাবছি দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকাতেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো মনিকাকে দেখে। মনিকা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওকে ছাড়িয়ে বললাম……..

মনি তুই! হঠাৎ না জানিয়ে এলি যে??

কেনো আসতে পারি না বুঝি?

আমি তা বলেছি নাকি কোনো ফোন না দিয়ে এলি তাই বলছি। একাই এসেছিস?

না তন্ময় ও এসেছে নিচে আদ্র ভাইয়ার সাথে কথা বলছে। জানিস তো আরু আমার আনন্দে লাফাতে ইচ্ছে করছে। অবশেষে আমার অপেক্ষার পালা শেষ হলো।

আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই অথই এসে বললো……মনিকা আপু আদ্র ভাইয়া তোমাকে ডাকছে।

আমি কিছু বলতে নিলে মনিকা বললো……..আরু আমি শুনে আসি ভাইয়া ডাকছে কেনো।

মনিকা চলে গেলো। আমি হাবলার মতো তাকিয়ে রইলাম ওর যাওয়ার দিকে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না সকালে ফুপি এলো,এখন মনি আর তন্ময় ভাইয়া এলো তাও আমাকে না জানিয়ে। সব যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার!
·
·#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ২০)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
ব্যালকনিতে বসে গান শুনছি আর ফোনটা নাড়ছি। মনিকা নিচে গিয়েছে আর আসে নি। আমি একবার রুম থেকে বেড় হতে চেয়েও বেড় হই নি। বাড়ির সাবার আচরন অন্য রকম লাগছে আজ নিচে গেলেই মাথার মধ্য একের পর এক প্রশ্ন ঘুরবে। ওসব প্রশ্নের চাপ না নিয়ে রুমে বসে থাকাই ভালো। এমনিতে আদ্র সব সময় বলে আমার বুদ্ধি নেই। এখন ওসব নিয়ে ভাবতে গেলে আমার মাথাটা আরো অকেজো হয়ে যাবে। আমি বরং গান শুনি এই ভালো।
দরজা নক করার আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলতে গেলাম মনি এসেছে হয়তো। এতক্ষণে ওর আসার সময় হলো।
কিন্তু না আমার ভাবনা পুরোই ভুল মনি আসেনি এসেছে আদ্র। আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে বললো…….দরজা আটকে কি করছিলি??

কি আর করবো আমার বিয়েতে কি গানে ডান্স করবো সেটাই সিলেক্ট করছিলাম।

কথাটা আমি আনমনেই বলে জিভ কাটলাম। এ আমি কি বলছি! আরু আরু তোর মাথাটা একে বারেই গেছে দেখছি! উনি নিশ্চই এটা নিয়েও এখন মজা করবে। ধেত!

আদ্র মুচকি হেসে আমার দিকে মুখ এগিয়ে বললো…….বাহ আমার বউটা এতো ফাস্ট আগে থেকেই গান সিলেক্ট করছে!! তো শুধু গান সিলেক্ট করছিলি নাকি সাথে ডান্স প্র্যাকটিস ও করছিলি হুম??

আমি শুকনো হাসি দিয়ে বললাম……..আসলে তেমন কিছু নয় আমি ভুলে ও কথা বলে ফেলেছি। আমি তো এমনি গান শুনছিলাম।

ওও তাই বুঝি! আচ্ছা মানলাম তবে যা একবার মুখ থেকে বেড় করেছিস সেটা তো করতেই হবে আরু সোনা।

মানে কি করতে হবে?

কি আবার ডান্স করতে হবে তাও আবার আমার সাথে। কাপল ডান্স। বলেই উনি চোখ টিপ মারলো।

আমি পারি না ডান্স করতে আর তোমার সাথে তো কখনোই না, ইম্পসিবল।

হুম দেখাই যাবে। আমার বাইরে অনেক কাজ যেতে হবে। শোন তুই রুমের থেকে একপা বেড় হবি না তোকে যেনো আমি এ রুমের দরজার বাইরে না দেখি।

কেনো বেড় হলে কি হবে?

আমি না করছি তুই বেড় হবি না যদি কেউ এসে বলে আমি যেতে বলেছি তখনি যাবি। একটু পরে মা এসে তোকে যা বলবে তাই করবি মাকে কোনো প্রশ্ন করবি না। যদি শুনি মুখ থেকে কোনো কথা বেড় করেছিস তাহলে মাইর একটাও নিচে পড়বে না তোর ওই মিষ্টি গালে পড়বে। বুঝেছিস??

আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বললাম……হুম বুঝেছি।

কি বুঝেছিস বল??

কাকিমা যা বলবে সেটা করবো তাকে কোনো প্রশ্ন করবো না।

এই তো গুড গার্ল। আমার আরুর মাথাটা দেখছি কাজ করতে শুরু করেছে।

আদ্র আমার গাল টেনে চলে গেলো আমি হা করে তাকিয়ে আছি। মাথার মধ্যে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে সকাল থেকে এতো এতো প্রশ্ন জড়ো হয়েছে মাথায় কিন্তু আফসোস এখন পর্যন্ত কোনো উত্তরের দেখা মিললো না। মনিটা কি করছে কে জানে ও এলেও তো নিজেকে একটু শান্ত করতে পারতাম। রুমের বাইরেও তো যেতে পারবো না।কি করা যায়?? পেয়েছি মনিকে ফোন দিয়ে বলি উপরে আসতে।
কপাল খারাপ হলে যা হয় ফোন দিতেই বেডের উপর ফোন বেজে উঠলো মনির ফোনটা আমার রুমেই রেখে গিয়েছে।
.
.
কাকিমা কয়েকটা শপিং ব্যাগ নিয়ে আমার রুমে এলো সাথে মা মনিকা অথই ও এসেছে। মা এসেই আমার গালে হাত রেখে কিছু সময় ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে আমার কপালো ঠোঁট ছুইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। মায়ের হঠাৎ এমন আচরন দেখে বিষ্মিত চোখে চেয়ে আছি মনে হচ্ছে যেনো আজ আমার বিয়ে আর আমি দূরে চলে যাবো। বিয়ের কথা মাথায় আসতেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো মাকে বললাম……..

মা হঠাৎ এভাবে আদর করছো কেনো আমাকে? তোমার চোখ ছলছল করছে কেনো?

মা মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো……..আমার মেয়েকে আমি আদর করতে পারি না বুঝি। শোন না আমি যাই এখন।

মা তাড়াহুড়া করে বেড়িয়ে গেলো আমি মায়ের যাওয়ার দিতে তাকিয়ে আছি। কাকিমা আমার হাত ধরে টেনে বেডে বসালো। সবগুলো শপিং ব্যাগ আমাকে দেখিয়ে বললো……..

আরিশা এ ব্যাগ গুলোতে শাড়ি আর কিছু জুয়েলারি আছে এসব পড়ে নে কেমন,মনিকা তোকে সাহায্য করবে। মনিকা ওকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিও।

আচ্ছা আন্টি।

আমি কিছু বলতে চেয়েও চুপ হয়ে গেলাম। আদ্র তো কাকিমাকে কোনো প্রশ্ন করতে বারন করেছে। কি আর করা বোবার মতো মুখ বন্ধ করে কাকিমাকে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম।

কাকিমা চলে যেতেই অথই এসে হেসে উঠে বললো…….দেখেছো মনিকা আপু ভাবির মুখে কোনো কথা নেই।

হুম আদ্র ভাইয়া হয়তো বোবা থাকার থেরাপি দিয়ে গেছে বুঝলি।

আমি দাঁত কটমট করে ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম…….আমি এত্তো কনফিউশনের মধ্যে আছি কিছুই ঢুকছে না মাথায় আর তোরা দাঁত কেলিয়ে হি হি করে হাসছিস!

আরু তোর মথাটা ঠিকঠাক ভাবে খাটালে তো কনফিউশন দূর হবে। আদ্র ভাইয়া ঠিকি বলে আসলেই মাথামোটা তুই।

আমি এবার নরম স্বরে মনিকাকে বললাম……..মনি জানু আমার বলনা কি হচ্ছে এসব। কাকিমা এগুলো পড়তে বললো কেনো?

মনিকা আমার মাথায় একটা টোকা মেরে বললো…….আমাদের মুখ বন্ধ তোকে আমরা কিছু বলবো না এখন যেহেতু বুঝছিস না তাহলে আরো কিছুক্ষণ ওয়েট কর সব বুঝতে পারবি। এখন যা তো ফ্রেস হয়ে আয়। সাজাতে অনেক সময় লেগে যাবে। চার টা বাজে আদ্র ভাইয়া বলেছে সাড়ে পাঁচটার আগে তোকে রেডি রাখতে।

আরুকে টকটকে লাল রঙের বেনারসি পড়ানো হয়েছে। সাথে সিম্পল জুয়েলারি কারন আরুর ভারি জুয়েলারি পছন্দ নয়। আরুর টানা টানা চোখে মোটা করে কাজল, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক আর হালকা মেক আপ এ অপ্সরীর মতো দেখতে লাগছিলো। আরু নিজেকে এমন সাজে দেখে ঠিক বুঝতে পেরেছে এটা বিয়ের সাজ। কিন্তু আরু অন্য কিছু ভাবছে আদ্রর বাবা বলেছিলো আদ্রর মাস্টার্স কমপ্লিট হওয়ার পর ওদের বিয়ে হবে। কিন্তু আদ্রর তো পরীক্ষা হয় নি এখনো তাহলে??আরুকে আয়নার সামনে বসিয়ে মনিকা দেখছে সব ঠিক আছে নাকি। অথই আরুর পেছনে দাড়িয়ে বললো……..

বাহ আমার ভাবিকে কত্তো মিষ্টি দেখাচ্ছে। সো বিউটিফুল।

আরু উঠে দাড়িয়ে মনিকার দিকে তাকিয়ে বললো……..মনি আমার এ সাজ দেখে বুঝতে পারছি এটা বিয়ের সাজ তারমানে আজ আমার বিয়ে তাইতো? তাহলে আমাকে কেনো কেউ কিছু বলছে না? আর এখনি তো চাচ্চু আমার আদ্রর বিয়ে দিতে চায়নি তাহলে কিভাবে সম্ভব??

হ্যা তোর বিয়ে আজ ঠিকি ধরেছিস। কিন্তু তুই এতো সিওর কি করে যে তোর বিয়েটা আদ্র ভাইয়ার সাথেই হবে?

মানে! এই মনি কি বলছিস তুই আদ্র আমাকে ভালোবাসে তাহলে আমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হতে যাবে কেনো?

মনিকা দুষ্টু হেসে বললো………আর কিছু সময় ধৈর্য রাখ সব বুঝতে পারবি।

মনিকা অথই বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। আমি বেডে বসে ভাবতে লাগলাম……আজ আমার বিয়ে আর আমিই জানতাম না! কত্তো প্লান ছিলো এই বিয়ে নিয়ে আর কি হলো এটা! এ কেমম বিয়ে! আচ্ছা মনি এটা কেনো বললো, আমার বিয়ে আদ্রর সাথে না হয়ে কার সাথে হবে? এসব ভাবতে ভাবতে আমি যেনো অন্য জগৎ এ হারিয়ে গিয়েছি। মনির ধাক্কায় হুস এলো।
.
.
মনিকা আমার চুলটা ঠিক করে বললো……..আরু এখন তোকে নিচে যেতে হবে আদ্র ভাইয়া তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।

মনিকার হাত ধরে বললাম………মনি আমার কেমন ভয় ভয় লাগছে।

এখন বুঝতে পারছিস তো কেমন লাগে এই বিয়ের কথাটা মাথায় ঢুকলে। আমারো ঠিক এমনটাই হয়েছিলো তখন তুই মজা নিয়েছিলি। কিন্তু আমার না একটুও মজা করতে ইচ্ছে করছে না রে আদ্র ভাইয়া কতো ভালো ছিলো বল।

আমি চমকে উঠে বললাম……..মনি আদ্র কোথায় উনি ঠিক আছে তো?বিয়ে কি অন্য কারো সাথে হবে বলনা মনি??

আরে আরে উত্তেজিত হচ্ছিস কেনো। এটুকুতে চোখেও পানি জমে গিয়েছে!এতো ভালোবাসিস তুই আদ্র ভাইয়াকে! আচ্ছা নিচে চল তো আগে।

মনিকা আমাকে নিয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই আমি অবাক হয়ে চারিপাশে দেখতে লাগলাম। সারা বাড়িতে লাইটিং করা আর ফুল দিয়ে সাজানো। আমি তো সকালেও নিচে এলাম তখন তো এর ছিটেফোটাও ছিলো না!! এসব দেখে আমি অবাক হলেও মুখে হাসি ফোটাতে পারছি না। যতক্ষণ আদ্রকে না দেখবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না।
নিচে আসতেই প্রিথা আপু আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমার গালে হাত রেখে বললো………

আরিশা তোমাকে অনেক কিউট লাগছে আমি মেয়ে হয়েই তোমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি যদি ছেলে হতাম কি হতো ভাবতে পারছো।

আমি জোরপূর্বক হেসে এদিক ওদিকে তাকিয়ে আদ্রকে খুজতে লাগলাম। কোথাও নেই উনি। আব্বু এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে গেলো। বাড়িতে বাইরের কেউ নেই আব্বু মা কাকিমা চাচ্চু ফুপি অথই মনিকা প্রিথা আপু। প্রিথা আপুকে বললাম………

আপু আদ্র কোথায় এখানে নেই কেনো উনি??

প্রিথা আপু কিছু না বলে চোখের ইশারায় বললো সিঁড়ির দিকে তাকাতে??

আমি সিঁড়ির দিকে তাকিয়েই থ আমার হার্টবিট যেনো কয়েক সেকেন্ড থেমে গিয়েছে!মনের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। আদ্র শেরোয়ানি পড়ে নেমে আসছে। আমি অপলক তাকিয়ে আছি উনার দিকে প্রিথা আপু আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো………

কি হলো আরিশা হারিয়ে গেলে নাকি?

আমি একটু কেঁপে উঠে চোখ নামিয়ে নিলাম। আদ্র আমার সামনে এসে দাড়ালো তখনি কয়েক রকম ফুলের পাঁপড়ি পড়তে লাগলো আমাদের উপর।
সাদাফ ভাইয়া আর তন্ময় ভাইয়া কিছু পেপারস আর দুজন লোক নিয়ে ভেতরে এলো। সাদাফ ভাইয়া আদ্রকে বললো……….

শালা আজ সকাল থেকে অনেক খাটিয়েছিস এর শোধ তুলবো দেখে নিস। সব রেডি এখন কবুল বলার জন্য প্রস্তুত হ। আর এই যে ভাবি এ ব্যাটা তো বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে কাল দুপুরে হঠাৎ করে বললো বিয়ে করবে। কি এমন করলে বলতো??

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না আর কি বা বলবো আমাকে তো আগে থেকে কিছুই জানানো হয় নি। তবে এটা সিওর বিয়ে আদ্রর সাথে হচ্ছে তাহলে মনি আমাকে ভয় দেখালো কেনো? এরকম মজা করার কোনো মানে হয়? ইচ্ছে করছে ওর চুলগুলো টেনে ছিড়তে। আমি মনির দিকে তাকাতেই ও ইনোসেন্ট ফেস করে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো………

জানু তুই এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো আমি তো একটু মজা নেওয়ার জন্য তোকে ওসব বলেছি। তুই কি ভেবেছিস আদ্র ভাইয়া তোকে অন্য কারো হতে দেবে।

আদ্র সাদাফকে বললো………বন্ধুর জন্য যদি এটুকু না করিস তাহলে আর কেমন বন্ধু হইলি বল।
আদ্র আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো……..ম্যাম সারপ্রাইজটা কেমন হয়েছে বলো?

একটুও ভালো নয় এটা কোনো সারপ্রাইজ হলো? উল্টে সারাদিন আমার টেনশন হয়েছে। আর এই মনি সে টেনশন আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলো। ইচ্ছে করছে আগে ওই পেত্নীটার মাথা ফাটাই তারপর তোমার।

আদ্র হেসে বললো………ঠিকআছে মাথা ফাটাবে না কি করবে পরে ভেবো এখন তো হাত রাখো আমার হাতে।

সাদাফ বলে উঠলো………
আদ্র বিয়ে এখনো হলো না আর তুই আরুকে এখন থেকেই তুমি করে বলছিস! এত্তো প্রেম!!

বলতে তো হবেই তাই দেরি করে লাভ কি আগে থেকেই বলি।

অবশেষে আমার আদ্রর বিয়ে সম্পুর্ণ হলো। সত্যি আমি সারপ্রাইজড হয়ে গেছি! কখনো ভাবি নি এতো তাড়াতাড়ি বিয়েটা হয়ে যাবে। কিন্তু আদ্র সবাইকে কি করে মানালো সেটাই মাথায় আসছে না!
·
·
·
চলবে………………………..
·
চলবে………………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here