#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ০৭)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
সেদিনের পর থেকে আদ্র অনেকটা পাল্টে গিয়েছে। আচরনটাও কেমন জানি অন্য রকম লাগে। আরুর সাথে ঠিকমতো কথা বলতো না তবে লুকিয়ে লুকিয়ে আরুকে দেখতো আদ্র। এখন আরুর প্রতি আদ্রর ভালোবাসাটা আরো বেড়েছে। এক অজানা অনুভূতি আদ্রকে আকড়ে ধরেছে প্রবলভাবে। এক মুহুর্ত ও আরুকে না দেখে থাকতে পারে না আদ্র।
আরুও সেদিনের পর থেকে আদ্রর এমন পরিবর্তন দেখছে, হঠাৎ এমন হওয়ার কারন কি এটাই বুঝতে পারে না আরু।
কলেজ যাবো তাই রেডি হয়েই ব্রেকফাস্ট টেবিলে এলাম সবাই আছে শুধু আদ্র ভাইয়া নেই। উনি কি ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে গিয়েছে নাকি এখনো রুমেই আছে বুঝতে পারছি না। মা পাশে থেকে বলে উঠলো
আরিশা কলেজে দেরি হয়ে যাবে তোর খাওয়া বাদ দিয়ে বসে আছিস কেনো?
হুম খাচ্ছি তো। আমি আস্তে আস্তে খেতে লাগলাম খাওয়া শেষের দিকে তখনি আদ্র ভাইয়ার গলা শুনতে পেলাম উনি সিঁড়ি দিয়ে তাড়াতাড়ি নামছে আর কাকিমাকে বলছে
মা আমাকে এখন খাওয়ার জন্য জোর করবে না আমার একটু কাজ আছে বেড় হতে হবে।
একদম নয় সকালে না খেয়ে বেরোবি কেনো,অল্প কিছু খেয়ে যা।
আমি হাত না ধুয়েই তাকিয়ে আছি উনার দিকে,আজ একটু অন্য রকম লাগছে দেখতে। আচ্ছা উনাকে অন্য রকম লাগছে নাকি আমার চোখ উনার সৌন্দর্যটা অন্য ভাবে দেখছে?? আদ্র ভাইয়া আজ ব্লু কালার শার্ট পড়েছে হাতা কনুই পর্যন্ত ফোন্ড করা। ব্লু শার্টের সাথে পড়নের কালো জিন্সটা দারুন মানিয়েছে। সিল্কি চুলগুলো কপালে পড়ে আছে। আর হাতে ব্র্যান্ডের ব্লাক কালার ঘড়ি। একহাতে ফোন। সব মিলিয়ে ক্রাশ খাওয়ার মতো একটা লুক।
আমি যেনো এক অন্য জগতে চলে গিয়েছি কাকিমার কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো
আরিশা এই আরিশা কি হয়েছে কি ভাবছিস তুই??
ককই কাকিমা ন না তো কিছু না।
বুঝিনা কি হয়েছে তোর আজ কদিন ধরে দেখছি কেমন যেনো অন্য মনস্ক হয়ে থাকিস। যাই হোক জলদি হাত ধুয়ে বেড়িয়ে পড় আদ্র বাইরে ওয়েট করছে তোর জন্য।
আদ্র ভাইয়া আমার জন্য ওয়েট করছে! কিন্তু কেনো?
তোকে কলেজে নামিয়ে দেবে। কথা না বাড়িয়ে যা,ওর কি যেনো কাজ আছে দেরি হলে রেগে যাবে।
.
.
আমি বাইরে বেড়িয়ে দেখলাম আদ্র ভাইয়া গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ফোন টিপছে। আমাকে দেখেই গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো। আমি পেছনের দরজা খুলতে নিলে আদ্র ভাইয়া সামনে তাকিয়ে বললো
এই যে ম্যাম আমি আপনার ড্রাইভার নই ওকে,পেছনে না বসে সামনে এসে বসুন।
আমি কিছু না বলে চেয়ে আছি উনার দিকে
কি হলো কি আরু শুনতে পাসনি দাড়িয়ে আছিস কেনো?তোর জন্য এমনিতেই দেরি হয়েছে আরো দেরি করাবি নাকি।
আমি চুপচাপ সামনে বসে সিটবেল্ট লাগিয়ে নিলাম। উনি গাড়ি স্টার্ট করলেন। এ কদিনের মধ্যে আজ আদ্র ভাইয়া একটু স্বাভাবিক ভাবে কথা বললো। কিন্তু আমার কি হয়েছে? উনার সামনে আসলে কথা বলতে পারি না। কেনো এমন হচ্ছে তা মাথাতেই আসছে না।
এই যে ভাবনারাণী, কি এতো ভাবিস বলতো তখন থেকে ডেকে চলেছি।
আমি একটু নড়ে উঠে বললাম
কিছুই ভাবছি না। বলো কি বলবে?
তখন আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিলি কেনো?
কখন তাকিয়ে ছিলাম!
আমি যখন বেড় হচ্ছিলাম আর তুই খাচ্ছিলি। জানিস তোর ওভাবে তাকানোতে মা আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছিলো। তারজন্যই তো বাইরে এসে দাড়িয়েছিলাম আর মাকে বলেছি তোকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিতে।
আমি কি ইচ্ছে করে তাকিয়েছি নাকি তোমাকে তো আজ খু……এটুকু বলেই থেমে গেলাম। ধেত কি বলে ফেলছিলাম আমি না জানি ভাইয়া কি ভাববে!
আদ্র ভাইয়া গাড়িটা ব্রেক করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো….আমাকে কি আরু বল??
আমি মাথা নিচু করে রইলাম। কি বলবো এখন! কথা ঘুরানোর জন্য বললাম
ভাইয়া গাড়ি থামালে কেনো তোমার না কাজ আছে,আর আমারো তো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আদ্র ভাইয়া সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বললো আশেপাশে তাকিয়ে দেখ কলেজের সামনে আমরা।
আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম কলেজ গেটের সামনেই আমরা। আমি দ্রুত নিজের সিটবেল্ট খুলে নেমে পড়লাম ততোক্ষণে আদ্র ভাইয়া নেমে দাড়িয়েছে।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম
ভাইয়া তোমার না কাজ আছে বললে??
হুম আছে। তুই ভেতরে যা আমার কাজ নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। আর শোন ছুটির পরে আমি এখানে ওয়েট করবো।
.
.
ছুটির পর গেটের সামনে আসতেই আদ্র ভাইয়া আর সাদাফ ভাইয়াকে দেখতে পেলাম। মনিকা আমার সাথেই ছিলো ভাইয়ার সাথে যাবো শুনে ও রিক্সা নিয়ে চলে গেলো। কতো করে বললাম আমাদের সাথে যেতে কিন্তু ও যাবে না।
আমি ভাইয়ারদের সামনে আসতেই সাদাফ ভাইয়া হেসে বললো
হাই ভা….নো নো আরু, কেমন আছো তুমি??
আমি হেসে বললাম…ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কি বলতে চেয়ে থেমে গেলেন?
সাদাফ আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকালো আদ্র চোখ গরম করে তাকালো উনার দিকে। সাদাফ ভাইয়া আগের তুলনায় মুখের হাসিটা আরো প্রশারিত করে বললো
আরে তেমন কিছু না তো। আদ্র আমি এখন যাই রে। আরু ভালো থেকো।
সাদাফ ভাইয়া চলে গেলো,এতোটাই দ্রুত গেলো যেনো উনি এই মুহুর্তে সেখানে না পৌছোলে অনেক কিছু মিস করে যাবেন।
আদ্র ভাইয়ার কথায় গাড়িতে এসে বসলাম,উনিও নিজের জায়গায় বসে গাড়ি চালাতে লাগলো। দুজনেই চুপ কেউ কিছু বলছি না। আমি বাইরে দৃষ্টি রেখে বসে আছি,অবাধ্য কাঁটা চুলগুলো বাতাসে বারবার আমার চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে। আর আমি বিরক্ত নিয়ে একহাতে সড়িয়ে দিচ্ছি। আদ্র ভাইয়া হঠাৎ বলে উঠলো
আরু এর পর থেকে বাইরে বেড় হলে হিজাব পড়ে বেড় হবি।
উনার কথায় আমি ঘুরে তাকালাম,উনি সামনের দিকে তাকিয়ে বলেছে কথাটি।
ভাইয়া আমি হঠাৎ হিজাব পড়বো কেনো??
তোকে আমি কোনো প্রশ্ন করতে বলি নি যা বলেছি সেটাই করবি কথাটা যেনো মাথায় থাকে। আমি চাইনা তোর চুলের প্রশংসা আর কেউ করুক।
আমার ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো উনার কথা শুনে। আজব তো! আমার চুলের প্রশংসা কেউ করলে তাতে উনার প্রবলেম কি!
.
.
কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি পৌছে গেলাম। আমি গাড়ি থেকে নেমে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম আদ্র ভাইয়াও আমার পেছনেই আসছে। কলিংবেল দুবার চাপতেই দরজা খুললো কেউ। সামনে ফুপিকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরলাম
ফুপি কেমন আছো? কখন এসেছো তুমি? এতোদিনে আমাদের কথা তোমার মনে পড়লো বুঝি? নাকি ভুলে গিয়েছিলে হুম?
ফুপি হেসে বললো….উফ আরিশা তুই সেই বাচ্চাটি রয়ে গেলি। এতো প্রশ্ন একসাথে করে! কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দেবো আমি!
আদ্র ভাইয়া পেছন থেকে বলে উঠলো….পাগলি হলে যা হয় আর কি।
আমি ফুপিকে ছেড়ে ঘুরে বললাম…কি বললে তুমি! আমি পাগলি??
তা নয়তো কি, ফুপিকে দেখেই তো বাদরের মতো লাফিয়ে উঠলি তারপরেই প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে নিয়েছিস। ফুপি কি পালিয়ে যাচ্ছে হুম।
আদ্র থাক না জানিস তো ও এমনি। তুই কেমন আছিস বল??
আমি তো খুব ভালো আছি ফুপি।
আদ্র ভাইয়া আগে যেতে লাগলো আমি ফুপির সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ কেউ এসে আদ্র ভাইয়ার গা ঘেঁষে দাড়িয়ে বললো
আদ্র এতোক্ষণে আসার সময় হলো তোমার,সেই কখন থেকে ওয়েট করছি তোমার জন্য।
আদ্র ভাইয়ার মুখে বিরক্তির ছাপ আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে সরে দাড়িয়ে বললো
রাফিয়া তোকে কতোবার বলেছি গা ঘেঁষে কথা বলাটা আমার পছন্দ নয়। আর আমাকে তুই ভাইয়া না বলে আদ্র বলছিস কেনো?
ওহো আদ্র এভাবে কেনো বলছো? আমি না হয় একটু কাছে এসে দাড়িয়েছি কি এমন ক্ষতি হয়েছে তাতে। আর ভাইয়া বলার কথা বলছো উহুম আমি তোমায় ভাইয়া বলে ডাকবো না আদ্র বলেই ডাকবো।
ফুপি এগিয়ে গিয়ে রাফিয়াকে বললো….রাফিয়া আদ্র তোর বড় ওকে ভাইয়া বলেই ডাকবি তুই।
রাফিয়া আমার ফুপির মেয়ে আমার থেকে দুবছরের বড়। সব সময় একটা ন্যাকা ন্যাকা ভাব নিয়ে চলে যার কারনে ওকে আমার পছন্দ নয়। দরকারের বাইরে কখনো ওর সাথে কথা ও বলি না আমি। কিন্তু আজ ও আদ্র ভাইয়ার গা ঘেঁষে দাড়ানোতে আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেনো মোচর দিয়ে উঠলো! ইচ্ছে করছিলো ওকে টেনে আদ্র ভাইয়ার থেকে দূরে সরিয়ে আনি।
আমি উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আদ্র ভাইয়া রাফিয়াকে বললো
শোন রাফিয়া তোকে আগেও বলেছি এখনো বলছি আমার গা ঘেঁষে কখনো কথা বলতে আসবি না আর ভাইয়া বলবি আমায়,নো আদ্র ওকে।নেক্সট টাইম এমন ভুল যেনো না হয়।
আদ্র ভাইয়া ওকে এগুলো বলে আমার দিকে একবার তাকিয়ে উপরে চলে গেলো। মনে মনে আমি খুশি হলাম রাফিয়ার এমন ন্যাকামো আদ্র ভাইয়া প্রশ্রয় দেয় নি বলে। কিন্তু আমার এই খুশি হওয়ার কারনটা কি??
·
·
·
চলবে………………………