তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব ৯+১০

#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ০৯)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
সকালে ঘুম ভাঙতেই নিচে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে নিচে চলে এলাম। এসে দেখি ফুপি ব্যাগ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে আর রাফিয়াকে বলছে তাড়াতাড়ি বেড় হতে।। আমি মায়ের পাশে গিয়ে বললাম

মা কি হয়েছে? ফুপি চলে যাচ্ছে নাকি??

তোর ফুপির শাশুড়ি খুব অসুস্থ হসপিটালে নেওয়া হয়েছে তাই চলে যাচ্ছে।

ফুপির শাশুড়ি অসুস্থ শুনে মনটা খারাপ হচ্ছে আবার একটা কথা ভেবে খুশি লাগছে তা হলো….ওই ন্যাকারাণী রাফিয়া ও চলে যাবে।এ দুদিনে কিভাবে যে ওকে সহ্য করেছি আমি! বেশি রাগ হতো তখন,যখন দেখতাম ও আদ্র ভাইয়ার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে চাইতো আর সুযোগ পেলেই উনার আশে পাশে ঘুরঘুর করতো।

ফুপিরা একটু আগেই চলে গিয়েছে,ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হইনি তাই রুমের দিকে যাচ্ছিলাম ফ্রেস হতে। রুমে ঢুকতে যাবো তখন আদ্র ভাইয়া ডাকলো,আমার রুমের পরে অথই এর রুম তারপরে আদ্র ভাইয়ার। আদ্র ভাইয়া উনার রুমের দরজায় দাড়িয়েই ডেকেছে। আমি এখানে দাড়িয়ে বললাম

ডাকলে কেনো কিছু বলবে??

উনি আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে একটু চোখ বুঝে আবার খুললো। তারপর হালকা হেসে বললো

আমার জন্য কফি নিয়ে আয়।

আমি যে কফি করতে পারি না সেটা তো তুমি জানোই,তাহলে আমাকে কেনো বলছো?

তোকে কি বলেছি নিজে করে আনবি? নিচে গিয়ে মাকে বল মা কফি করে দেবে। আর শোন কফিটা কিন্তু তুই নিয়ে আসবি।

আদ্র রুমে ঢুকে গেলো আর আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি। সকালে উঠে ফ্রেস হতে পারলাম না এখনো আর উনি আমাকে হুকুম করছে!বলি আমি কি তোমার ঘরের বউ যে হুকুম করছো আমাকে! কথাটা জোরেই বলে আবারো নিচে চলে এলাম। কিচেনে এসে দেখি কাকিমা কফির কাপ হাতে নিয়ে বেড় হতে যাচ্ছে…

কাকিমা কার কফি এটা??

আদ্রর জন্য নিয়ে যাচ্ছিলাম।

ওহ,আমাকে দাও আমি নিয়ে যাচ্ছি।

তুই নিয়ে যাবি! কেনো রে আগেও তো কতো দিয়ে আসতে বলেছি তখন যাস নি কেনো?

আজও কি ইচ্ছে করে নিতে চাইছি। তোমার ছেলে আস্তো একটা হনুমান বুঝেছো। আমাকে কফি নিতে পাঠিয়েছে আর বলেছে আমিই যেনো নিয়ে যাই। এখন যদি না নেই পরে আবার শুধু শুধু মুখ ফুলিয়ে রাখবে আর সুযোগ পেলেই বকা দেবে।

কাকিমা হেসে বললো….ঠিকআছে নিয়ে যা।
.
.
দরজায় দাড়িয়ে বললাম…ভাইয়া আসবো?

হুম আয়।

আদ্র ভাইয়া ল্যাপটপে কি যেনো করছে আমি কফির কাপটা বেড সাইড টেবিলে রেখে বললাম

কফি রেখে গেলাম খেয়ে নাও। বলেই চলে আসতে নিলে উনি কাপটা হাতে নিয়ে বলে উঠলো

এই দাড়া তোকে যেতে বলেছি আমি?

তোমাকে বলতে হবে কেনো আমি নিজেই যাচ্ছি।

কোথাও যাবি না তুই,এখানে আমার সামনে দাড়িয়ে থাকবি।

মানেটা কি! আমি তোমার সামনে থেকে কি করবো??

এই মেয়েটা বুঝবে কবে আমি কি চাই। কথাটা বিড়বিড় করে বললো।

ভাইয়া কিছু বললে??

কই না তো কিছুনা। আরু একটা কথা বলবি?

কি কথা।

আমি যে তোকে মাঝে মাঝে বকা দেই আবার এটা সেটা করতে বলি তাতে কি তুই বিরক্ত হস??

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। আসলে আমি বিরক্ত হলেও কেনো জানি এই বিরক্তি মাখা ব্যাপার গুলোতে ভালো লাগে আমার।

কি হলো আরু বল কিছু?

জানি না আমি।

আদ্র ভাইয়া কফির কাপটা রেখে আমার সামনে এসে দাড়ালো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো

ঠিকআছে জানতে হবে না। তখন তুই কি যেনো বলছিলি! ও হ্যা মনে পড়েছে, তুই কি আমার ঘরের বউ যে হুকুম করছি। এটাই তো বলেছিলি তাইনা??

আমি চমকে উঠলাম উনার কথায়,আমি কি কথাটা এতোটাই জোরে বলেছি যে উনি শুনে ফেলেছে!! কথাটা মনে মনে ভেবে একটু হেসে বললাম

কই আমি তো এমন কিছু বলিনি।

কিন্তু আমি তো শুনলাম তুই এটাই বলেছিস।

শুনেছো তাহলে আবার জানতে চাইছো কেনো হুম??

ইচ্ছে হয়েছে তাই। তবে যাই হোক তুই যদি বলিস ঘরের বউ…….

উনাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললাম….আমি যাচ্ছি এখন। উনি জোরে হেসে উঠে বললো

আচ্ছা যা আর আটকাবো না তোকে।

আমি উনার দিকে না তাকিয়ে বেড়িয়ে আসতে নিলে উনি পেছন থেকে বললো

আরু তোর ঘুম জড়ানো মুখে এলোমেলো চুলগুলোতে খুব সুন্দর দেখায়।

আমি কথাটি শুনে মুচকি হেসে বেড়িয়ে আসলাম। কেনো জানি না আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছিলো উনার সামনে। কিছুটা লজ্জা ও লাগছিলো তাই আর কিছু বলতে না দিয়ে চলে এলাম।
থাকনা কিছু অজানা কথা, যে অজানা কথা মনের অনুভূতি গুলো আরো গভীরে নিয়ে যাবে। যা থেকে তৈরি হবে একটা অদৃশ্য মায়ার বাধন।
.
.
কলেজে এসে একা একা বসে আছি মনিকা এখনো আসে নি। ওকে ছাড়া আর কারো সাথে মিশতেও আমার ভালো লাগে না। ক্লাস শুরু হতে এখনো ১৫ মিনিট বাকী। ক্যান্টিনে বসে মনিকাকে তখন থেকে কল দিচ্ছি কিন্তু ও ফোন ধরছে না।
খুব রাগ হচ্ছিলো ফোন যদি না ধরবে তাহলে ফোনটা ব্যবহার করে কি জন্য! আজ আসুক আগে ওর ফোনটা ভাঙবো আমি। নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বলছিলাম কথা গুলো। পাশে থেকে কেউ বলে উঠলো

এক্সকিউজমি, আমি কি এখানে বসতে পারি??

আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম একটা ছেলে হাসি মুখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।

আপনি এখানে বসবেন কেনো??

আপনি একা একা বসে আছেন,আবার দেখছি নিজে নিজেই কিছু বলে চলেছেন। নিশ্চই বোর হচ্ছেন একা একা রাইট?তাই ভাবলাম আপনার বোরিংনেসটা যদি কিছুটা দূর করতে পারি।

আমি ভ্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম….আপনাকে কি বলেছি আমি একা একা বোর হচ্ছি??

না সেটা বলেন নি আমার মনে হলো।

ও আচ্ছা আপনার মনে হয়েছে! ঠিকআছে এক কাজ করুন আপনার সেই মনে হওয়াটাকে বলুন আপনার সামনে থাকা মেয়েটি এখানে একা বসেই ভালো আছে।

ছেলেটা হেসে উঠে বললো….হুম বলেছি মনকে। বাট সে মনটা বলছে এখানে একটু বসতে।

ঠিকআছে আপনি আপনার মনকে নিয়ে বসুন আমি যাচ্ছি।

আমি উঠে যেতে নিলে ছেলেটা বলে উঠলো….আরে মিস রেগে গেলেন নাকি আপনি? ঠিকআছে আপনাকে যেতে হবে না আমিই যাচ্ছি।

হুমম প্লিজজ যান এখান থেকে।

যাচ্ছি তার আগে আপনার নামটা বলবেন কি??

আমি রেগে বললাম…যাবেন আপনি।

ওকে ওকে রাগ করবেন না যাচ্ছি। শুনুন আমি সাইফ। এ কলেজেই অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ি,ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট। কোনো প্রবলেম হলে বলবেন।

এবার আরো রাগ উঠে গেলো আমার। আমি কি কিছু জানতে চেয়েছি যে এই অসভ্য ছেলেটা এসব বলছে!! আমি কিছু বলতে যাবো তখনি মনিকা দৌড়ে এসে হাপাতে হাপাতে বললো

আরু সরি জানু অনেক লেট করে ফেলেছি তাইনা।

এমনিতে ওর উপর রাগ ছিলো তারপর ওই ছেলেটা এসে আরো রাগিয়ে দিয়েছে

ওই কে তোর জানু,একদম জানু বলবি না আমায়। ফোন কোথায় তোর শুনি? ওটা কি সাজিয়ে রাখার জন্য কিনেছিস?

আরে ফোন ভুল করে রেখে এসেছি। প্লিজ রাগ করিস না চল ক্লাসে যাই এখন।

আমি কিছু না বলে ঘুরে দাড়াতেই দেখলাম ছেলেটা এখনো দাড়িয়ে আছে

কি ব্যাপার আপনি এখনো কি করছেন এখানে??

আপনার নামটা শুনে দাড়িয়ে পড়েছি। আরু নাইস নেম।

ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে হেসে চলে গেলো। ইচ্ছে করছিলো ওর দাঁত গুলো ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেই।

মনিকাকে বকতে বকতে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম হঠাৎ খেয়াল করলাম আদ্র ভাইয়া আমাদের থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছে,উনার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট।
কিন্তু উনি এতো রেগে আছে কেনো? আমার দিকেই তো তাকিয়ে আছে। ওই ছেলেটা আমার সাথে কথা বলেছে উনি দেখে ফেলে নি তো? হঠাৎ সেই চড়ের কথা মনে পড়ে গেলো। আজও আবার চড় খেতে হবে নাকি! তবে আমার তো কোনো দোষ নেই আমি তো কথা বলতে চাইনি, ছেলেটাই কথা বলতে এসেছে।
·
·
·
চলবে………………………
#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ১০)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
আদ্র ভাইয়ার সামনের চুপচাপ বসে আছি আর উনি এটা ওটা বলে আমাকে বকেই চলেছে। আমাকে কিছু বলার সুযোগ উনি দিচ্ছে না। আমারো রাগ হচ্ছিলো উঠে চলে আসতে নিলে উনি ধমক দিয়ে বললো

আরু চুপচাপ বস এখানে,তোকে কোথাও যেতে বলেছি আমি? ওই ছেলেটার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছিলো বুঝি? এখন আমার কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগছে?

আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না,ধৈর্যর ও একটা সীমা থাকে,সব কিছু ভালো ভাবে না শুনে উনি আমাকে যা নয় তাই বলে যাবেন! আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম

ভাইয়া তোমার প্রবলেমটা কি বলবে আমাকে? সব কিছু ভালো ভাবে না জেনে কেনো আমার ঘাড়েই দোষ চাপাও,একটা বার কি জানতে চেয়েছো ওই ছেলেটাকে আমি চিনি নাকি। সব সময় নিজে যেটা মনে করো সেটাই হবে তাইনা। আরে ওই ছেলেটাকে তো আমি বার বার বলছি চলে যেতে আমি তো যেচে কথা বলতে যাইনি। আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে যাও ওই ছেলের কাছেই শুনে দেখো।
আমি আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে চলে এলাম।

আদ্র আরুর যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে নিজেই নিজের মাথার চুল টেনে বলতে লাগলো….উফ আমি আবারো আরুকে ভুল বুঝলাম। সত্যিই তো ওর কোনো কথা না শুনে ওকে এতো কথা শোনানো মটেও উচিৎ হয় নি আমার। কিন্তু কি করবো ওকে যে কোনো ছেলের সাথে দেখলেই আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। আরু নিশ্চই খুব মন খারাপ করেছে আগে গিয়ে ওকে ঠিক করি তারপর ওই ছেলেটাকে দেখবো।
.
.
বাড়িতে এসে দরজা লক করে বসে আছি,মা,কাকিমা কয়েকবার খাওয়ার জন্য ডেকেছে আমি খাবো না বলে দিয়েছি। রাগ কিছুতেই কমছে না আমার ইচ্ছে করছে ওই হনুমানটাকে পঁচা পানিতে চুবাতে। বদ লোক একটা আমাকে কখনোই বুঝে না। আবার ভালোবাসা দেখাতে আসে হুহ।
ওয়াশরুমে এসে প্রায় দু ঘন্টা ভিজছি। শরীরটা কেমন যেনো ভারী ভারী লাগছে হাত পা কেমন যেনো কুঁচকে গেছে হয়তো অনেক সময় ধরে ভেজার কারনে এমনটা হয়েছে। আমি আস্তে আস্তে ড্রেস পাল্টে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এলাম। সকালে তেমন কিছু খাইনি দুপুরেও খাই নি তারপর এত সময় ধরে ভিজে শরীর দুর্বল লাগছে। বেডে এসে গা এলিয়ে দিলাম চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে তাই চুল গুলো বালিশের উপর দিয়ে মেলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম।
এভাবে কতোক্ষণ ছিলাম জানি না,মা আর কাকিমা জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর ডেকে চলেছে। আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে জানালার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম সন্ধা হয়ে এসেছে। আমি উঠতে চেয়েও পারছি নয় মাথা ব্যাথা করছে,শরীরে অনেক তাপ অনুভব করছি। আমি কোনো ভাবে উঠে দরজাটা খুলে দরজায় ভর দিয়ে দাড়ালাম। সামনে মা কাকিমা দাড়িয়ে আছে আর ওদের পেছনে আদ্র ভাইয়া।

মা বলে উঠলো….আরিশা কি হয়েছে তোর সেই দুপুরে এসে দরজা আটকেছিস,তোর চোখ মুখ এমন ফ্যাকাসে লাগছে কেনো? শরীর খারাপ লাগছে?

পাশে থেকে কাকিমা অস্থির গলায় বললো….আরিশা তুই ঠিক আছিস?

আমি কাপা কাপা গলায় বললাম….হুম আমি ঠিকআছি।

মা এগিয়ে এসে আমার কপালে হাত দিয়ে চমকে উঠে বললো…আরিশা তোর গায়ে তো খুব জ্বর!আর তুই বলছিস ঠিকআছি!

কাকিমা ও এগিয়ে এসে কপালে হাত দিলো আদ্র ভাইয়া এতোক্ষণ চুপ ছিলো আমার জ্বরের কথা শুনে আমার কাছে এসে বললো

আরু তুই আজও অনেকক্ষণ ধরে ভিজেছিস তাইনা!

আমি উনার দিকে না তাকিয়ে বেডের দিকে যেতে নিলে মাথাটা ঘুরে উঠলো,চারপাশে সব ঝাপসা হয়ে এলো,পড়ে যেতে নিলে আদ্র ভাইয়া আরু বলে চিৎকার করে উঠলো। তারপর কি হয়েছে মনে নেই।
.
.
চোখ খুলে নিজেকে বেডে আবিষ্কার করলাম। বুঝতে পারছি আমার হাতটা কেউ শক্ত করে ধরে আছে। পাশে তাকাতেই আমি চমকে উঠলাম আদ্র ভাইয়াকে দেখে! উনার চোখ ফুলে আছে চুলগুলো কেমন এলোমেলো,সকালে যে শার্ট গায়ে ছিলো ওটাই পড়ে আছে এখনো! আমার হাতটা উনি আরো শক্ত করে ধরে নরম স্বরে বললো

আরু এখন কেমন ফিল করছিস? মাথা ব্যাথা আছে এখন?

আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললাম…এখন ঠিকআছি।

আরু এতো রাগ তোর আমার উপর! আমি না হয় ভুল করে তোকে কথা শুনিয়েছি। তার জন্য তুই নিজেকে কষ্ট দিবি! সারাদিন না খেয়ে আছিস এমনিতেই দুর্বল ছিলি তার উপর ভিজে জ্বর বাধিয়ে নিয়েছিস।সেই সন্ধা থেকে সেন্সলেস হয়ে ছিলি এখন রাত ১১ টা বাজে জানিস কতো কষ্ট হয়েছে আমার। এমনকি বাড়ির সকলে কতো দুশ্চিন্তা করছে তোর জন্য।বাবা চাচ্চু এখনো না খেয়ে বসে আছে। ছোট কাকিমা এখানের ছিলো একটু আগে তোর জন্য খাবার রেডি করতে পাঠিয়েছি।

আমি এক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি কি বলবো বুঝতে পারছি না। উনাকে এভাবে দেখে সব রাগ নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।আমি উঠে বসতে নিলে আদ্র ভাইয়া আমার হাত ধরে বসিয়ে দিলো। তারপর আমার কপালে হাত দিয়ে বললো

জ্বর এখনো আছে দেখছি।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম….আপনার চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে কেনো?

আমার কথা ছাড় তো। তোর কি মাথা ব্যাথা করছে?

উনি কথা ঘুরাতে চাইছে তাই আমি আর কিছু বললাম না। শুধু মাথা এদিক ওদিকে নাড়ালাম,মানে মাথা ব্যাথা নেই।

মা সুপ ডিম দুধ নিয়ে রুমে এসে বললো….আরিশা মা এখন কেমন আছিস?

মায়ের দিকে তাকিয়ে আমার বুকটা কেপে উঠলো,মায়ের মুখটাও শুকিয়ে গেছে। এখন আমার আরো বেশি খারাপ লাগছে নিজে জেদ করে বাড়ির সবাইকে কষ্ট দিলাম আমি। আমি একটু হেসে বললাম

হ্যা মা ভালো আছি এখন।

একটু পরে কাকিমা এলো মা আর কাকিমা মিলে আমাকে জোর করে সুপটা খাওয়ালো। কিছুই খেতে ইচ্ছে করছিলো না। আর খেতে পারবো না বলতেই আদ্র ভাইয়া বললো

আরু তোকে সুস্থ হয়ে উঠতে হবে তো জলদি খেয়ে নে ওষুধ খেতে হবে।

আমি মলিন মুখে বললাম তোমরা কি চাইছো আমি যেটুকু খেয়েছি সেটুকু পেট থেকে বেড়িয়ে আসুক?

কাকিমা বললো….আচ্ছা আর খেতে হবে না আদ্র ওষুধ গুলো দেখে খাইয়ে দে ওকে।

আদ্র ভাইয়া ওষুধ খাইয়ে দিলো আমাকে। আব্বু আর চাচ্চু ও এসে দেখে গিয়েছে। মা আমার পাশে থাকতে চেয়েছিলো জোর করে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এই আদ্রকে কিছুতেই সরাতে পারছি না উনার একটা কথা যতোক্ষণ আমি ক্ষমা না করবো উনি এখানে আমার পাশেই বসে থাকবে। আমি এখন কি করে বলি ক্ষমা তো দুরে থাক উনার উপর আর একটুও রেগে নেই আমি। কিন্তু এখন তো বলতেই হবে….

ভাইয়া তুমি যাও আমি রেগে নেই তোমার উপর।

সত্যি বলছিস তুই? আমাকে ক্ষমা করেছিস?

উফ ভাইয়া ক্ষমার কথা কেনো আসছে আমি বললাম তো রেগে নেই আমি।

উনি হেসে বললো…আচ্ছা ঠিকআছে আমি যাচ্ছি।

আদ্র ভাইয়া উঠে দাড়িয়ে হুট করে নিজের মুখটা আমার দিকে এগিয়ে এনে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে মুচকি হেসে বেড়িয়ে গেলো। হঠাৎ করে উনি এ কাজ করায় আমি এখনো হা করে সামনে তাকিয়ে আছি।
.
.
চারদিন পর আজ কলেজে এসেছি। এই চারদিনে আদ্র ভাইয়া আমার আশে পাশেই থেকেছে। বেশি বিরক্ত হতাম খাবার সময় হলে কিছুতেই খেতে ইচ্ছে করতো না।কিন্তু খাবার সময়ে আদ্র ভাইয়া যেখানেই থাকুক না কেনো আমার সামনে হাজির হতো আর সব খাবার খাইয়ে ছাড়তো।

কলেজ গেট দিয়ে ঢুকছি আমার পেছনে আদ্র ভাইয়া। এ কদিনে যেনো আঠার মতো লেগে আছে আমার সাথে। হঠাৎ সাইফ নামের সেই ছেলেটা আমার সামনে এসে দাড়ালো। আমি ওকে দেখে আগে আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকালাম কিন্তু উনার চোখের চাহনিটা একদমই শান্ত! এক পকেটে হাত দিয়ে আর এক হাতে নিজের চুল ঠিক করতে ব্যাস্ত সে!!সাইফ ভীত চোখে আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমার সামনে মাথা নিচু করে বললো

আসসালামুয়ালাইকুম ভাবি। কেমন আছেন??

আমার চোখ দুটো বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়েছে এ ছেলে ভাবি বলছে কেনো আমাকে!! আদ্র ভাইয়া ও কিছুই বলছে না!! নিজেকে সামলে বললাম

ওয়ালাইকুমআসসালাম। আমি ভালো আছি। আপনি আমাকে ভাবি কেনো বলছেন,আপনার কোন ভাইয়ের বউ আমি??

কেনো আপনার পেছনে যে……

সাইফ আমার পেছনে তাকিয়েই চুপ হয়ে গেলো

কি হলে বলুন??

আপনি আমার ভাবি হন এটাই জানি আর কিছু বলতে পারবো না। আর সেদিনের জন্য আমি দুঃখিত আমাকে মাফ করে দিবেন। আসি ভাবি।

সাইফ আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। আমি পেছনে ঘুরে আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকালাম উনি মিটমিট করে হাসছে।

ভাইয়া তুমি হাসছো কেনো??

আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই হাসছি।

সেদিন তো আমাকে এই ছেলেটার জন্য এত্তোগুলো কথা শুনালে,আর আজ এই ছেলে তোমার সামনে আমাকে ভাবি বললো তুমি কিছু বললে না কেনো??

আমি কি বলবো। ওর কোনো ভাইয়ের জন্য হয়তো তোকে পছন্দ করেছে তাই ভাবি বলেছে। এতে প্রবলেম কোথায়।

আজব তো! কোথাকার কে এসে আমাকে ভাবি বলবে আর তুমি কিছুই বলবে না??

আমি আর কিছু বলবো না। এমনিতেই আমি বকেছি বলে রেগে জ্বর বাধিয়ে চারদিন সবাইকে খাটিয়েছিস বিশেষ করে আমাকে। আমি বাবা আর খাটতে পারবো না। তাই ভেবে নিয়েছি তোকে আর কিছু বলবো না।

আমি আমাকে কিছু বলার কথা বলিনি বলেছি ওই ছেলেটাকে বলো। ও কেনো ভাবি বললো আমাকে।

ওই একি হলো,আমি পারবো না কিছু বলতে। যা ক্লাসে যা এখন।

আদ্র ভাইয়া বাকা হেসে উনাদের ডিপার্টমেন্ট এর দিকে চলে গেলো। আর আমি বোকার মতো উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি,কি যে হচ্ছে সবটাই আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সাইফ আমাকে ভাবি বললো আদ্র ভাইয়া এতে কোনো রিয়েক্টই করলো না!!
.
.
ক্লাস শেষ করে মনিকাকে সাথে নিয়ে ওই ছেলেটা মানে সাইফকে খুজতে লাগলাম। কোথাও দেখছি না ওকে। একটু পরে আদ্র ভাইয়া এসে আমাদের সামনে দাড়ালো
ভ্রু কুঁচকে বললো

প্রবলেম কি? কলেজের মধ্যে এদিক ওদিকে ঘুরপাক খাচ্ছিস কেনো??

কোনো প্রবলেম নেই আর যদি থাকে সেটা আমি নিজেই বুঝে নিবো,তুমি যাও।

আমি যাবো মানে! কোথাও যাবো না আমি, কাকে খুজছিস বল? থাক তোকে বলতে হবে না। মনিকা তুমি বলো তো এই পাগলি কাকে খুজছে?

ভাইয়া আরু সাইফ নামের একটা ছেলেকে খুজছে।

মনিকার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললাম….ওই হারামি তোকে বলতে বলেছি আমি?

তুই বলতে বলবি কেনো ভাইয়া জানতে চেয়েছে আর আমি বলবো না!

তোকে আমি পরে দেখে নিবো আগে ওই ছেলেকে খুজি চল আমার সাথে।

আদ্র ভাইয়া সামনে দাড়িয়ে বললো
এই এই দাড়া,আরু তুই দেখছি নিজের হবু বরকে দেখার জন্য উতলা হয়ে উঠেছিস!! এতো তাড়া কেনো হুম পরে দেখলে কি তাকে আর পাবি না??

মানে! কি বলছো তুমি! কে হবু বর কাকে দেখার জন্য উতলা হয়েছি??

সাইফ সকালে তোকে ভাবি বলেছে,হয়তো ওর কোনো ভাইয়ের হবু বউ তুই। আর কে সেই ছেলে মানে তোর হবু বর কে তার সন্ধান পাওয়ার জন্য সাইফকে খুজছিস তুই তাইনা।

একদম ফালতু কথা বলবে না। চিনি না জানি না তাকে হবু বর বলছে। মনি চল তো।

আদ্র ভাইয়া শব্দ করে হেসে উঠলো আমি মনিকার হাত ধরে চলে এলাম সেখান থেকে।

আরু একটা কথা বলবো?

একটা নয় অনেক গুলো বল।

বলছি কি ওই ছেলে মানে সাইফ কোনো ভাবে আদ্র ভাইয়ার দিক থেকে তোকে ভাবি বলেছে মনে হচ্ছে।

ওর কথা শুনে দাড়িয়ে পড়লাম…..কি বলছিস মনি,সাইফ আদ্র ভাইয়ার কথা কেনো বলবে?

দেখ আমার যা মনে হলো সেটাই বললাম। সাইফ সেদিন অন্যভাবে কথা বলেছে তোর সাথে। আর আজ সোজা ভাবি বলে তোর সাথে সন্মান দিয়ে কথা বলেছে, আবার সেদিনের জন্য মাফ ও চেয়েছে। সবটাই তো আদ্র ভাইয়া শুনেছে তাইনা?

হুম উনি আমার সাথেই ছিলো তখন।

তাহলে আসল ব্যাপারটা হলো আদ্র ভাইয়া ওই ছেলেকে আগেই যা বুঝানোর বুঝিয়েছে আর তোকে ভাবি বলে ডাকতে বলেছে।

মনি তুই সিওর হচ্ছিস কি করে সাইফ আদ্র ভাইয়ার দিক থেকে আমাকে ভাবি বলেছে?

আরে গাধী,সাইফ তোকে ভাবি বলেছে শুনে আদ্র ভাইয়া ওকে কিছু বলেনি তাতে বোঝা যায় এর পেছনে আদ্র ভাইয়া আছে।

মনিকার বলা কথাগুলো শুনে আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো,মনিকা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো

সারাজীবন না বুঝে এমন বোকা হয়ে থাকিস না,পড়াশোনায় তো একদম পার্ফেক্ট আছিস। তাহলে বুদ্ধিতে কম কেনো? আল্লাহ জানে আদ্র ভাইয়া আমার এই গাধী বেস্টুটাকে কিভাবে সামলাবে!
·
·
·
চলবে……………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here