তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব ৮

#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ০৮)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
রাতে অথই আর আমি আমার রুমে বসে গল্প করছিলাম তখন আদ্র ভাইয়া এলো অথইকে ধমক দিয়ে বললো

অথই এখানে কি করছিস তুই যা রুমে গিয়ে পড়তে বস।

অথই কোনো কথা না বলে চুপচাপ বেড়িয়ে গেলো,আমি উঠে দাড়িয়ে বললাম

ভাইয়া ওকে এভাবে বললে কেনো? মন খারাপ হয়ে গেলো তো ওর।

মন খারাপ করার কি আছে পড়া বাদ দিয়ে আড্ডা দিবে আমি তা দেখবো। ও তো ছোট ওকে আর কি বলবো বলা উচিৎ তো তোকে।

আমাকে কেনো আমি কি করেছি?

সামনে যে তোর পরীক্ষা সে খেয়াল তো নেই তোর সারাদিন লাফালাফি, সুযোগ পেলেই ফোন আর আড্ডা। আবার যদি দেখি পড়া বাদ দিয়ে আজে বাজে কাজ করছিস ঠাটিয়ে চড় মারবো তখন।

ভেতরে আসতে পারি? কথাটা শুনে আদ্র ভাইয়া আমি দুজনেই দরজার দিকে তাকালাম,রাফিয়া দাঁত কেলিয়ে হেসে দাড়িয়ে আছে। এমনিতেই আদ্র ভাইয়ার উপর রাগ হচ্ছিলো তার মধ্যে আবার এই ন্যাকারাণী হাজির। অসহ্য। হাসিটা আসছে না তাই জোরপূর্বক হেসে বললাম

এসেই তো গেছো আবার অনুমতি চাইছো কেনো,এসো ভেতরে।

না মানে তোমরা কথা বলছিলে ভাবলাম পার্সোনাল কোনো কথা বলছো তাই আর কি।

রাফিয়ে এসে বেডে বসে পড়লো। আদ্র ভাইয়া রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললো

রাফিয়া আমরা কোনো পার্সোনাল কথা বলছি না। যদি তেমন কিছু বলার হতো তাহলে তোকে দেখানোর জন্য দরজাটা খোলা রাখতাম না।
আদ্র ভাইয়া বেড়িয়ে যেতে গিয়ে ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে বললো

আরু পড়তে বস এখন।

আদ্র ভাইয়া চলে যেতেই রাফিয়ে মুখ বাকা করে বললো

আরিশা আদ্র তোর প্রতি এত খেয়াল কেনো রাখে বলতো??

আমি উনার বোন হই খেয়াল রাখাটা কি স্বাভাবিক নয়!

ঠিক তা নয় আদ্রকে দেখেছি সব সময় তোর প্রতি একটু স্পেশাল ভাবে কেয়ার করে। কে জানে কি চলছে ওর মনে।

রাফিয়া আপু তুমি একটু বেশি বুঝে নিচ্ছো তেমন কিছুই নয়। এখন তুমি যাও আমি পরতে বসবো।

যাচ্ছি যাচ্ছি তোর রুমে আমি থাকতে আসি নি।

রাফিয়া বেড়িয়ে গেলো…যাক বাবা বাঁচা গেলো,এই মেয়েটাকে কেনো জানি আমার সহ্যই হয় না। আমার ফুপিটা এত ভালো তার মেয়ে এমন কেনো হয়েছে কে জানে।
.
.
রাতে ঘুমিয়ে আছি ঘুমের মাঝেই অনুভব করতে পারছি কেউ আমাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আমার মুখের উপর কারো গরম নিশ্বাস পড়ছে। আমি চেয়েও চোখ খুলতে পারছি না মনে হচ্ছিলো আমার চোখ জোড়া চেপে ধরে রাখা হয়েছে। হঠাৎ আমার কপালে ঠোঁটের স্পর্শ পেলাম। সারা শরীর কেঁপে উঠলো আমার ধপ করে চোখ খুলে ফেললাম। তখনো দুটি চোখ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চমকে উঠে চিৎকার দিতে নিলে সে আমার মুখ চেপে ধরলেন। আবছা আলোয় লোকটিকে চিনতে না পারলেও চোখ দুটো ভীষণ চেনা চেনা লাগছে।
সে আমার মুখ চেপে ধরায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো আমার হাত দিয়ে ওই হাতটি সরানোর চেষ্টা করছি পারছি না। মুখ থেকে উমম উম শব্দ ছাড়া কিছুই বেড় করতে পারছি না। তখনো সে চোখ দুটো আমার চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি আর না পেরে তার হাতে জোরে একটা চিমটি কাটলাম। লোকটি সাথে সাথেই আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলেন। আমি ছাড়া পেয়ে জোরে নিশ্বাস নিয়ে দ্রুত বেড থেকে নেমে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। তারপর সে লোকটির দিকে ঘুরেই আমি শকড। হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। আমার সামনে থাকা লোকটি আর কেউ নয় আদ্র ভাইয়া উনি বেডের পাশে বসে আছে এখনো তার চোখ আমার দিকে।
আমি আস্তে আস্তে উনার দিকে এগিয়ে সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললাম…

ভাইয়া তুমি এতো রাতে আমার রুমে কি করছিলে?আর আমার দিকে ওভাবে কেনো চেয়ে ছিলে?

আদ্র ভাইয়া চোখ নামিয়ে নিয়ে মাথা নিচু করে বললো

আরু তুই কি ভয় পেয়েছিস??

এভাবে ভূতের মতো অন্ধকারে আমার মুখের উপর ঝুকে থাকলে তো ভয় পাবোই। তুমি জানো তুমি আমার মুখ চেপে ধরাতে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো আমার। বললে না তো কেনো এসেছো??

তোকে দেখতে।

কিহ! আমাকে দেখতে! এতো রাতে আমাকে দেখার কি আছে শুনি,সকালে দেখতে পারতে না?

আদ্র ভাইয়া করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো

আরু তুই কি বুঝিস না কিছু নাকি বুঝতে চাইছিস না??

আমি আবার কি বুঝতে চাইছি না! তুমি বুঝিয়ে বলো তাহলেই বুঝবো।

আদ্র ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো….থাক তোকে কিছুই বুঝতে হবে না। ঘুমিয়ে পড় আমি যাচ্ছি।

আদ্র ভাইয়া চলে গেলো এদিকে আমি এখনো অবাক হয়ে ভাবছি….উনি কেনো এসেছিলো এতো রাতে? বললো তো আমাকে দেখতে এসেছিলো। কিন্তু কেনো? আর আমি কি বুঝতে চাইছি না? আমার মাথাতে তো কিছুই আসছে না। রাফিয়া তখন বললো আদ্র ভাইয়া আমার প্রতি স্পেশাল ভাবে কেয়ার করে, হুম এটা ভুল কিছু বলেনি। কিন্তু কি আছে এর পেছনে? আচ্ছা আদ্র ভাইয়া কি আমাকে ভালোবাসে?? আমাকে জানতে হবে যেভাবেই হোক জানতে হবে আদ্র ভাইয়ার মনে ঠিক কি আছে।
.
.
আদ্র ভাইয়ার কথা মতো আজ হিজাব পড়ে কলেজে এসেছি। যদি না পড়তাম পরে বকা শুনতে হতো বকা শুনার থেকে হিজাব পড়ে বেড় হওয়া অনেক ভালো। এতে অবশ্য আমারো ভালো হয়েছে আজ চুল নিয়ে কোনো ঝামেলা করতে হয় নি।
মনিকা আমি সামনা সামনি বসে আছি। রাতের সব কিছু বলেছি ওকে। মনিকা নিজের মুখে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। আমি ওর বাহু ঝাকিয়ে বললাম

ওই মনি কি ভাবছিস তুই বলতো?

ভাবছি আদ্র ভাইয়াকে আমি ভাইয়া বলেই ডাকবো নাকি দুলাভাই।

ওর কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকালাম….মনি কি বলছিস তুই!! আদ্র ভাইয়াকে দুলাভাই ডাকবি কেনো??

আরু তোর মাথায় কি আছে বলতো? এসব তো অথই ও বুঝতে পারবে আর তুই বুঝিস না। আমি আগে থেকে একটু আইডিয়া করেছিলাম আদ্র ভাইয়া তোকে ভালোবাসে তারপর কাল রাতের যে কাহিনি তুই বললি আমাকে তাতেই তো কোনো ভাবনা চিন্তা ছাড়াই বুঝে নেওয়া যায় আদ্র ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।

মনি তোর কি মনে হয় আমি কিছু ভাবি নি? উনি আমাকে ভালোবাসে কিনা এটাও আমার মাথায় এসেছে কিন্তু কেনো ভালোবাসবে উনি আমাকে! আমি তো অনেক ছোট উনার থেকে। আবার এদিকে আমরা চাচাতো ভাই বোন।

আরু কেউ কাউকে কেনো ভালোবাসে এটা হয়তো সে নিজেও জানে না মনের অজান্তেই তার প্রতি একটা টান চলে আসে। আর কি বললি ভাই বোন? এসব কোনো ব্যাপার না এ ধরনের সম্পর্ক অনেকেই করেছে।
আরু একটা কথা বলতো, তুই কি আদ্র ভাইয়াকে সেভাবে কখনো দেখেছিস??মানে আমি বলতে চাইছি উনার প্রতি তোর ভালো লাগা ঠিক কতোটা??

ভালো লাগা কতোটা ঠিক জানি না তবে ভালো লাগে। মাঝে মাঝে তো ক্রাশ ও খাই উনার লুক দেখে।

হুম বুঝলাম তোর এই ভালোলাগা একসময় ভালোবাসাতেও পরিনত হবে।
.
.
বিকেলে ছাদের দিকে যাচ্ছি আর মনিকার বলা কথাগুলো ভাবছি। আদ্র ভাইয়ার চিন্তা আমি কোনো ভাবেই মাথা থেকে বেড় করতে পারছি না যতোই ভাবছি এসব আর ভাববো না ততোই যেনো মাথার মধ্যে কাল রাতের ব্যাপারটা ঘুরছে।
হঠাৎ পা স্লিপ করে পরে যাচ্ছিলাম চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। এই বুঝি আমার কমোড়টা ভাঙবে এখন।
কিন্তু না আমি পড়ার আগেই কেউ একজন আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে ফেললো। আমি চোখ খুলে আদ্র ভাইয়াকে দেখতে পেলাম উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো

দেখে চলতে পারিস না এখন যদি এখানে আমি না থাকতাম তাহলে তো পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেতি।

আদ্র ভাইয়া আমাকে ওভাবেই ধরে রেখে কথা বলছে আর আমি উনার শার্টের কলারের নিচে খামচে ধরে চেয়ে আছি উনার চোখের দিকে। এ চোখ দুটোর ভাষা হয়তো আমি বুঝতে পারছি। উনার এ চোখ জোড়াতে আমি নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি,মনে হচ্ছে ওই চোখ দুটো গভীর ভাবে দেখার অধিকার শুধুই আমার।
উনিও আর কিছুই বললো না একই ভাবে দুজনে দুজনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।
হঠাৎই মনে পড়লো আমি আদ্র ভাইয়ার খুব কাছে আছি উনি আমার কোমড় জড়িয়ে রেখেছে। আমি নড়েচড়ে উঠতেই উনি আমাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ালো

সরি ভাইয়া আমি খেয়াল করি নি কিভাবে যে পা টা স্লিপ কাঁটলো!

উনি আস্তে আস্তে বললো খেয়াল না করেই ভালো করেছিস। তা না হলে তোর চোখের অনুভূতিটা বুঝতাম কি করে।

ভাইয়া কি বলছো তুমি,জোরে বলো।

বলছি দেখে শুনে চলবি এভাবে সব সময় তো ধরার জন্য আমি থাকবো না।

তুমি না থাকলে অন্য কেউ ধরবে।

কি বললি তুই অন্য কেউ কেনো ধরবে তোকে? তোকে টার্চ করার অধিকার শুধু একজনেরি আছে।

তাই নাকি! তো কে সে??

আছে একজন।

ভাইয়া চলে গেলো সেখান থেকে,আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম…..তুমি ঠিকি বলেছো এতো দিন সত্যি কিছু বুঝি নি আসলে চেষ্টাই তো করিনি বুঝার,তবে আজ আমি ঠিকই বুঝতে পারছি। তোমার চোখের ভাষা আমি কিছুটা হলেও পড়তে পেরেছি।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো আমার মন কি চাইছে? এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে আমার মনে এটাই কি তাহলে ভালোবাসার পূর্ব লক্ষণ??
·
·
·
চলবে……………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here