তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব ৫+৬

#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ০৫)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
কলেজ ছুটির পর রাস্তার একপাশ দিয়ে আমি আর মনিকা গল্প করতে করতে আসছিলাম। আজকের আবহাওয়াটা একটু অন্য রকম আকাশটা মেঘলা যেকোনো সময় ঝপঝপ করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করবে। চারিদিকে মৃদু বাতাস বইছে ভালোই লাগছে। তাই কলেজ থেকে বেড়িয়ে আজ আর রিক্সা নেই নি দুজনে মেঘলা আবহাওয়া উপভোগ করতে করতে গল্প করছি আর সামনে এগোচ্ছি।
একটা বড় গাছের নিচে কয়েকজন ছেলে বসে আড্ডা দিচ্ছে দেখেই মনে হচ্ছে ছেলেগুলো বখাটে টাইপের। আমরা পাশ কেটে যেতে নিলে ২ টা ছেলে এসে সামনে দাড়ালা দাত কেলিয়ে হেসে বললো

এই যে বেবিরা আমাদেরকে পাশ কাটিয়ে কোথায় যাচ্ছো, এসো একটু গল্প করে যাও আমাদের সাথে।

ছেলে ২ টা আবারো হেসে উঠলো,আমার খুব রাগ হচ্ছে এদের কথা শুনে,তাকাচ্ছে ও কেমন ভাবে যেন। আমি কিছু বলতে নিলে মনিকা আমার হাত ধরে নিলো আমি তাকাতেই চোখের ইশারায় বললো কিছু না বলতে,মনিকা নিজেই বললো

ভাইয়ারা আমাদেরকে যেতে দিন আমরা কলেজ থেকে বাসায় যাচ্ছি দেরি হচ্ছে আমাদের।

ওদের মধ্যে একটা ছেলে জোরে হেসে বললো

হেই সুইট গার্ল,টেনশন নিয়ো না আমরা নিজ দায়িত্বে তোমাদের বাসায় পৌছে দিবো। এবার চলো আমাদের সময় দাও।

কথাটা বলে ছেলেটা পাশের জনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো। আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না রেগে বলে উঠলাম

এই যে ভাইয়ারা সমস্যা কি আপনাদের হুম? কেনো পথ আটকে দাড়িয়েছেন? আপনাদের কি বাড়ির লোকেরা এই শিক্ষা দিয়েছে রাস্তায় মেয়েদের পথ আটকে বাজে নজরে তাকাতে??

ওদের মাঝে থেকে একজন বলে উঠলো

ওই আসিফ এই মাইয়ার মুখে তো কথা ফুটেছে। কথার কি তেজ দেখছোস!! পাশের ছেলেটি বললো

হ তাই তো দেখছি,আমাদের কি সমস্যা তাইনা। ওই গাড়িটা নিয়ে আয় তো ওদের সাথে নিয়ে দেখিয়ে দেই আমাদের সমস্যা কোথায়।
ছেলে ২টা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিলো,এতক্ষণ তেমন কিছু মনে হয়নি তবে এখন খুব ভয় লাগছে। এ ছেলেগুলো শুধু বখাটে নয় খুবই খারাপ এরা,ওদের চাহনি দেখেই বুঝতে পারছি। মনিকা ভয়ে আমার হাত চেপে ফিসফিসিয়ে বললো

সব দোষ তোর বারবার বললাম রিক্সা নিতে তুই না করলি। এখন কি করে বাঁচবো আমরা? হাত পা যে ঠান্ডা হয়ে আসছে।

মনিরে আমি কি জানতাম এমন একটা ঝামেলায় পড়বো। ভয়তো আমারো হচ্ছে তবে ভয় পেলে চলবে না। আমি সাহস করে বলে উঠলাম

দদেখুন আমাদের যেতে দিন না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।

ছেলেটা বাকা হেসে বললো…..খুব খারাপ নয় বেবি বলো খুব ভালো হবে।

বাকী যে ২ জন ছিলো ওরা এসে বললো….ভাই গাড়ি রেডি আছে। কথাটা শুনে ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে আমার,যতই সাহস দেখাই না কেনো এদের সাথে তো পেরে উঠবো না। এদিকে হালকা বৃষ্টি পড়ছে রাস্তায় ও তেমন কেউ নেই। আমি মনিকার হাত চেপে ধরে দু এক পা করে পেছনে যেতে লাগলাম।ছেলেগুলো খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে এগিযে আসছে।
হঠাৎই একটা গাড়ি এসে আমাদের পাশে দাড়ালো সেদিকে তাকাতেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আদ্র ভাইয়া এসেছে। ভাইয়া আমাদের সামনে এসে দাড়িয়ে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বললো

ওদের পথ আটকেছিস কেনো তোরা? ওপেন রোডে ইফট্রিজিং করছিস এর পরিনাম কি হবে জানিস?? পুলিশ ডাকবো?

ছেলেগুলো কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে একজন নরম স্বরে বললো

সরি ভাই আর কখনো এরকম কাজ করবো না।আমাদের মাফ করে দেন।
আদ্র ভাইয়া এবার ঘুরে আমাদের দিকে তাকালো,ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। ভাইয়ার চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললো

মনিকা তোমরা গাড়িতে গিয়ে বসো।

আদ্র ভাইয়া আমাকে না বলে মনিকা কে বললো!! মনে মনে বললাম আরু তোর গালে যে আজ আরো একটা চড় পড়বে। আমি আর মনিকা চুপচাপ এসে গাড়িতে বসে পড়লাম। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম আদ্র ভাইয়া খুব রেগে ওদের সাথে কথা বলছে। বৃষ্টিতে কিছুটা ভিজে গিয়েছি ওড়না দিয়ে হাত মুখ মুছতে লাগলাম। মনিকা বলে উঠলো

এই আরু আজ আদ্র ভাইয়া না এলে কি হতো বলতো! ভাগ্গিস ভাইয়া ঠিক সময়ে এসেছে।

কি আর হতো ওই মানুষ রুপি পশুদের হাতে বলি হতে হতো আমাদের।

আরু তখন তো ভয়ে তুইও কাঁপছিলি আর এখন এত স্বাভাবিক কি করে!! তবে যাই বলিস আদ্র ভাইয়ার চোখে যে রাগ দেখলাম আজ,তোর কি হবে সেটাই ভাবছি আমি।

আমার মনে আবার ভয় ঢুকে গেলো,এমনিতেই আদ্র ভাইয়া আমার উপর রেগে আছে আজ আরো রেগে গেলো কি যে হবে আল্লাহ জানে।

আদ্র ভাইয়া এসে গাড়িতে সামনে ড্রাইভার এর পাশে বসে পড়লো। আমাদের দিকে একবার ও তাকালো না। আমাদের বাড়ির আগেই মনিকাদের বাড়ি পড়ে ওকে ওর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আমরা বাড়ি চলে এলাম। আদ্র ভাইয়া এর মাঝে একটি কথাও বলে নি আমার সাথে এমনকি তাকায় ও নি।

আচ্ছা এর হলোটা কি আমাকে তো বকলো না!! নাকি কাল আমি ওনাকে নিয়ে কাকিমাকে বলেছি আজ উনি আমাকে নিয়ে মাকে বলবে?? হায় আল্লাহ মা তো আস্ত রাখবে না আমাকে। কলেজ ছুটির পর একটুও দেরি না করে যেনো বাড়িতে ফিরি এই বাণীটা প্রতিদিন আমার মা আমার কানে ঢুকিয়ে দেয়। আজ তো দেরি হয়েছে তার উপর ভাইয়া যদি কিছু বলে আমার ১২ টা বাজবে।
.
.
বাড়িতে এসে আদ্র ভাইয়া সোজা নিজের রুমে চলে গেলো আমিও নিজের রুমে এসে ফ্রেস হয়ে নিলাম।
রাতে সাবাই একসাথে খেতে বসেছি ভয়ে ছিলাম কেউ কিছু বলবে ভেবে কিন্তু না কেউ কিছুই বললো না। তারমানে ভাইয়া কাউকে কিছু বলেনি,আর ভাইয়ার সাথে বাড়িতে এসেছি তাই হয়তো দেরি হয়েছে বলে মা ও কিছু বলে নি। সাবাই খাচ্ছি কিন্তু আদ্র ভাইয়াকে দেখছি না। যাক বাবা ভালো হয়েছে নিশ্চিন্তে খেতে তো পারবো। খাওয়া শেষ করে উঠে চলে আসতে নিলে মা ডাকলো

আরিশা শোন

হ্যা মা বলো

মা খাবারের একটা প্লেট আমার হাতে দিয়ে বললো….এই খাবারটা আদ্রর ঘরে দিয়ে আয় ওর নাকি মাথা ব্যাথা করছে তাই খাবারটা ঘরেই পাঠিয়ে দিতে বলেছে।

আমার তো আবারো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো,ওই বদরাগী লোকটার সামনে আমাকেই কেনো পাঠাতে চায় এরা!!

মা আমি কেনো যাবো তুমি যাও না দিয়ে এসো।

একটা চড় দিবো,গেলে কি হবে শুনি যা গিয়ে দিয়ে আর আর শোন বলবি মাথা ব্যাথার ওষুধ খেতে।

কি আর করা খাবারটা নিয়ে দরজায় এসে দাড়িয়ে দোয়া পড়ে বুকে ফু দিয়ে নক করলাম ভেতর থেকে বলে উঠলো

দরজা খোলা আছে

আমি আস্তে আস্তে রুমে ঢুকে দেখলাম আদ্র ভাইয়া কপালে হাত দিয়ে চোখ বুজে শুয়ে আছে। আমি খাবারটা বেড সাইড টেবিলে রেখে বললাম

ভাইয়া তোমার খাবার রেখে গেলাম খেয়ে নিয়ো। কথাটা বলে চলে আসতে নিলে আদ্র ভাইয়া ডাকলে

আরু দাড়া

আমি দাড়িয়ে পড়লাম কিন্তু আমার ভেতর থেকে বলছে আরু দাড়াস না বেড় হ জলদি এ রুম থেকে। আমার গলাটা শুকিয়ে আসছে ভয়ে ভয়ে ফিরে তাকিয়ে বললাম

ভাইয়া কিছু বলবে??

ভাইয়া উঠে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো….তোকে সেদিন কলেজ থেকে কি বলেছিলাম??

কি বলেছিলে??

মনে নেই কি বলেছিলাম??

উহু।

ঠিকআছে আমিই মনে করিয়ে দেই,সেদিন তোকে বলেছিলাম কখনো লিমিট ক্রস করবি না তাহলে আজ কলেজ ছুটির পর বাড়িতে না এসে রাস্তায় হাটছিলি কেনো?

আমি আমতা আমতা করে বললাম….
আসলে ভাইয়া আজ আবহাওয়াটা ভালো লাগছিলো তাই আর কি।

ওও আচ্ছা আবহাওয়া উপভোগ করছিলেন আপনি,আমি আর একটু পরে গেলে তো ওই হারামি গুলো তোদেরকে নিয়ে স্পেশাল টাইম উপভোগ করতো। তখন খুব ভালো লাগতো তাইনা??

উনি রেগে কথাগুলো বলছিলো আমি মাথা নিচু করে বললাম….আর এমন ভুল হবে না কাল থেকে বাড়ির গাড়িটা নিয়ে কলেজে যাবো আসবো।

আদ্র ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে নরম স্বরে বললো….ঠিকআছে মনে যেনো থাকে যা এখন।

আমি যেনো একটু সাহস পেলাম মাথা তুলে বললাম….কালকের ওই ব্যাপারটা নিয়ে আমার উপর এখনো রেগে আছো?

আমি কারো উপর রেগে নেই।

ওহ ঠিকআছে তুমি খেয়ে নাও আর মা বললো তোমার নাকি মাথা ব্যাথা করছে ওষুধ খেয়ে নিতে বলেছে।

আমার মাথাটা সত্যিই খুব ব্যাথা করছে মাথাটা টিপে দিবি।

আদ্র ভাইয়ার হঠাৎ এমন কথাতে অবাক হয়ে তাকালাম উনার দিকে

কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো,অসম্ভব কিছু বলেছি নাকি??

না ঠিক তা নয়,বলছিলাম কি ভাইয়া খাবার খেয়ে ওষুধ খেলে ব্যাথাটা কমে যেতো।

আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। ঠিকআছে তুই যা কিছু করতে হবে না। আদ্র ভাইয়া কথাটা বলে আবারো শুয়ে চোখ বন্ধ করলো।

আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। চুপচাপ একটু দাড়িয়ে থেকে এগিয়ে গিয়ে উনার মাথার পাশে বসে হাতটা উনার কপালে রাখলাম। হাতের ছোয়া পেয়ে আদ্র ভাইয়া চোখ মেলে তাকালো কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে আবারো চোখ বন্ধ করে নিলো। হয়তো সত্যি খুব বেশি খারাপ লাগছে।
·
·
·#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ০৬)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
কেটে গেলো কয়েকটা দিন আদ্র ভাইয়া আমার সাথে এখন অনেকটা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে আগের মত বকে না তবে যদি একটু এদিক ওদিক করি কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে ডেকে আমাকে কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখে। আগে যদিও উনি কিছু বললে প্রতিবাদ করতাম কিন্তু এখন কেনো জানি পারি না। কেনে যে বলি না নিজেও ভেবে পাই না আমি।

আজ সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছে কলেজে যাই নি অথই ও আজ স্কুলে যায় নি। বড় চাচ্চু আব্বু কাকিমা আর মা আজ খুব ভোরে আমাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছে তখন অবশ্য বৃষ্টি ছিলো না। এখন বাড়িতে আমি অথই আছি। আদ্র ভাইয়াও বেড়িয়েছে।মুষল ধারায় বৃষ্টি পড়ছে আমি রুমেই ছিলাম অথই দৌড়ে এসে আমার পাশে বসলো আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম

কিরে এভাবে দৌরে এলি কেনো??

আপু ছাদে যাবে।

ছাদে যাবো এখন! দেখছিস না বৃষ্টি হচ্ছে!

বৃষ্টি হচ্ছে বলেই তো যাবো বৃষ্টিতে ভিজবো। আপু প্লিজ চলো না।

কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজলে যদি জ্বর হয়। তখন তো বাড়ির সবাই আমাকেই বকবে তুই তো ছোট তোকে কেউ কিছুই বলবে না।

এই আপু আমি মাঝে মাঝে ভাবি তুমি আমার বড় নাকি আমি তোমার! চলো তো কেউ কিছু বলবে না মাত্র ১০ মিনিট ভিজবো এতে জ্বর হবে না।

আমারো ইচ্ছে করছিলো কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না অথই যেনো আমার সাহসটা বাড়িয়ে দিলো। তবে আমার অনেক দিনের ইচ্ছে শাড়ি পড়ে বৃষ্টিতে ভিজবো। আচ্ছা আজ শাড়ি পড়লে কেমন হয়? কিন্তু আমার তো শাড়ি নেই,মায়ের শাড়িগুলো সব আলমারিতে রাখা চাবিও নেই আমার কাছে। কাকিমার আলমারি তো লক করা থাকে না ওখান থেকেই পড়বো হুম।যেই ভাবা সেই কাজ অথইকে বললাম কাকিমার আলমারি থেকে একটা শাড়ি এনে দিতে ও ভ্রু কুঁচকে বললো

আপু তুমি এখন শাড়ি দিয়ে কি করবে??

শাড়ি দিয়ে বউ সাজবো এত কথা না বলে শাড়ি নিয়ে আয়।

অথই গিয়ে হালকা সবুজ রঙের একটা সিল্কের শাড়ি নিয়ে এলো সাথে ম্যাচিং পেটিকোট ব্লাউস ও এনেছে।আমি শাড়িটা হাতে নিয়ে মুখটা কালো করে অথইকে বললাম

বনুরে আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না এখন কি হবে??

তুমি এখন শাড়ি পড়ে কি করবে এটাই তো বুঝতে পারছি না,এদিকে বৃষ্টি কমে যাবে তোমার এই শাড়ি পড়া দেখতে দেখতে।

এই বৃষ্টি কমার নয়। শোন আমার খুব ইচ্ছে শাড়ি পড়ে বৃষ্টিতে ভিজবো তাই শাড়িটা পড়তে চাইছি। এখন কিছু একটা আইডিয়া দে বনু।

আপু তুমি শুধু বড়ই হয়েছো মাথায় কিছুই নেই। তুমি তো ইউটিউব দেখে পড়ে নিতে পারো।

গুড আইডিয়া! এটা তো আমার মাথাতেই আসে নি। আমি ইউটিউবে দেখে অথই এর সাহায্যে শাড়িটা পড়লাম তেমন ভালো হয়নি পড়া আবার খারাপ ও হয় নি। অথই আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে হেসে বললো

আপু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে শাড়িটা দারুন মানিয়েছে। পুরো বউ বউ লাগছে,আচ্ছা আপু তুমি আদ্র ভাইয়ার বউ হবে? আমি তোমাকে ভাবি বলে ডাকবো।

আমি চোখ বড় বড় করে তাকাতেই অথই মাথা ঝাকিয়ে বললো

আরে আপু আমি তো মজা করছিলাম। চলো চলো এখন ছাদে যাই।
.
.
আমি অথই ছাদে এসে মনের সুখে ভিজতে লাগলাম দুজনে এদিক ওদিকে ছুটোছুটি করছি আর বৃষ্টিজল গায়ে মাখছি। আমার শাড়িটা ভিজে একদম শরীরের সাথে মিশে গিয়েছে দুহাত দুদিকে মেলে আকাশের দিকে মুখ তুলে চোখ বন্ধ করে আছি। হঠাৎই অথই রেলিং ধরে বলে উঠলো

আপু ভাইয়া চলে এসেছে এখন কি হবে??

ওর কথা শুনে আমিও এগিয়ে গিয়ে দেখলাম ভাইয়া গাড়ি পার্ক করছে। শুরু হয়ে গেলো আবার ভয়ে কাঁপাকাঁপি,ভাইয়া যদি দেখে বৃষ্টিতে ভিজছি তাহলে আমাদের দুজনের আজ খবর করে ছাড়বে। আমি অথইকে বললাম

অথই তুই জলদি নিচে যা তাড়াতাড়ি কাপর পাল্টে দরজা খুলে দিবি। ভাইয়া যখন রুমে ঢুকবে তখন আমাকে এসে বলবি। দেরি করিস না যা।

অথই দেরি না করে নিচে চলে গেলো। বৃষ্টিটা এখন আরো বেড়েছে। আমি ছাদে থাকা দোলনায় বসে পড়লাম কিন্তু বসে থাকতে মন চাইছে না তাই আবারো উঠে দুহাত মেলে ঘুরতে লাগলাম।

আদ্র ভাইয়া কলিংবেল চেপে চলেছে অথই তাড়াতাড়ি কাপর পাল্টে দরজা খুলে দিলো।

কিরে এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে,কোথায় ছিলি??

ভাইয়া আমি তো ওয়াশরুমে ছিলাম তাই দেরি হয়েছে।

ওহ তুই না হয় ওয়াশরুমে ছিলি। আর একজন তো আছে সে কোথায়??

অথই একটু ভয়ে ভয়ে বললো….আপু! আপু তো নিজের ররুমেই আছে।

আদ্র আর কিছু না বলে উপরে চলে এলো, উপরে উঠতে আমার রুমটা আগে পড়ে। দরজাটা খোলাই ছিলো আদ্র ভাইয়া কি মনে করে যেনো আমার রুমে ঢুকলো আমাকে না পেয়ে অথইকে ডেকে বললো

আরু তো রুমে নেই তুই যে বললি ও রুমে আছে।

অথই কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না একটু চুপ থেকে বললো

আছে হয়তো কোথাও আমি জানি না। অথই কথাটা বলে চলে গেলো। আদ্র সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো অথই এর যাওয়ার দিকে। নিজেই মনে মনে বললো

আচ্ছা আরু বৃষ্টিতে ভিজছে নাতো??
.
.
আদ্র ভাইয়া ছাদে চলে এলো আমি তখনো চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছি। আদ্র ভাইয়া সিঁড়িঘরের থেকেই দেখতে পেলো আমি উল্টো দিকে ঘুরে দুহাত মেলে বৃষ্টি বিলাস করছি। আমাকে ভিজতে দেখে উনি খুব রেগে গেলো। এদিকে আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দুহাতে বৃষ্টির পানি জমিয়ে হেসে উঠে উপরে দিকে ছুড়ে দিলাম, ঘুরে দাড়াতেই আদ্র ভাইয়াকে দেখতে পেয়ে আমার আনন্দময় হাসিটা উড়ে গেলো,উনি যে খুব রেগে গিয়েছে। আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম এখন কি করবে উনি এটাই ভাবছি।
কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর উনার কোনো সাড়া না পেয়ে মুখ তুলে তাকিয়ে আমি থ হয়ে গেছি। আদ্র ভাইয়ার চোখে এখন রাগ নয় অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছি। উনি একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে। উনার এই তাকিয়ে থাকার মানেটা আমি বুঝতে পারলাম না। কিন্তু খুব লজ্জা লাগছিলো আমার শাড়িটা ভিজে শরীরে লেগে আছে তাড়াতাড়ি শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজেকে ঢাকতে লাগলাম। তবে বিষেশ কোনো লাভ হলো না,উনি একই ভাবে চেয়ে আছে। নাহ এভাবে আর দাড়িয়ে থাকা যাবে না। আমি আস্তে আস্তে পা বাড়ালাম নিচে যাবো বলে। সিঁড়ির কাছে এসে ভাইয়াকে পাশ কাঁটিয়ে যেতে নিলে উনি আমার হাত ধরে ফেললো আমি চমকে উঠে তাকালাম উনার দিকে।

ভাইয়া আমি আর কখনো ভিজবো না প্রমিজ করছি। আম সরি ভাইয়া।

আমি ভেবেছি উনি হয়তো রেগে আমার হাত ধরেছে কিন্তু উনি যা করলো তাতে আমার চোখ কপালে।
আদ্র ভাইয়া আমার দিকে ঘুরে এক ঝটকায় আমার হাত ধরে উনার কাছে নিয়ে নিলো। উনার প্রতিটি নিশ্বাস আমার চোখে মুখে পড়ছে। উনি হঠাৎ এমন করায় আমি এখনো অবাক হয়ে চেয়ে আছি উনার চোখের দিকে। তবে আজ যেনো এ চোখ অন্য কথা বলছে। আদ্র ভাইয়া একহাতে আমার কোমড় ধরে আছে অন্য হাতে আমার কপালে থাকা ছোট চুল গুলো আলতো করে কানের পেছনে গুজে দিলো। আমি কিছুটা কেঁপে উঠে চোখ নামিয়ে নিজেকে ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম

ভ ভাইয়া কি ককরছেন ছাড়ুন আমাকে। কিছু বলছে না দেখে জোরে করেই বললাম….ভাইয়া আমাকে ছাড়ুন।

আদ্র ভাইয়া চমকে উঠে আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে গেলো। কি হলো হঠাৎ উনার?? আমি নিচে চলে আসলাম।

আদ্র এতক্ষণ ঘোড়ের মাঝে ছিলো কি করছিলো নিজেও জানে না। আরুকে আজ এক নতুন রুপে দেখেছে আদ্র। এমনিতেই ওর প্রেমে পড়েছে অনেক আগেই তার ওপর আজ শাড়ি পড়ে বৃষ্টিতে ভিজছিলো আরু,আদ্র ওকে ওভাবে দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে।
আদ্র সিঁড়ির রেলিং এ নিজের হাত জোরে আঘাত করে মাথা চেপে বলতে লাগলো

কি করছিলাম এটা আমি,আরু খারাপ ভাবলো না তো আমায়? কিন্তু আমি কি করবো ওকে ওভাবে দেখে তো নিজেই হারিয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েটা এমন কেনো আমাকে যে পাগল করে ছেড়েছে। আমি যে ওর প্রতি দিনে দিনে আরো আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি।
·
·
·
চলবে………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here