তোমার পরিনীতা পর্ব ৪+৫

তোমার পরিনীতা -৪র্থ পর্ব

( শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিনীতা গল্পের ছায়া অবলম্বনে)

লেখক- ফায়জা করিম

( ১৮+ কনটেন্ট বিদ্যমান, কোন অবস্থায় গল্প কপি না করার অনুরোধ রইলো)

“এ বার কিন্তু দুই গালে দুটো চড় খাবি সুমো। ”

শ্রাবণের কথায় টলটলে পানিতে চোখ দুটো ভেসে গেল সুমনের। কি এক বাংলা ব্যাকরন বুঝাচ্ছে ঘন্টা… সুমন খানিকটা বুঝার পর আর ধরতেই পারছে না।

“আবার মুখ ব্যাঙের মতো ফুলাচ্ছিস… আর চোখ নামা বেয়াদ্দব, একটা কথা বললেই গরুর মতো চোখ করে বসে থাকে। নত্ব-বিধান, ষত্ব- বিধানের সংজ্ঞা বল ”

সুমনের মনে হলো ও এবার চিৎকার করে কাঁদে। আবার শুরু হইছে অত্যাচার। কিছু হলেই শ্রাবনদা প্রতিদিনের নিরামিষের ঘ্যাটের মতো নত্ব-বিধান, ষত্ব-বিধান ধরবে। এই দুটোর সংজ্ঞা সুমন খালি উল্টে ফেলে আর এগুলো কোন নটকার কাজে লাগে সেটা শ্রাবনদাই জানে। আর যখন সুমন পারেনা তখন শ্রাবনদা মহা উৎসাহে তার সবচেয়ে প্রিয় বিষয় ইংরেজি গ্রামারের টেন্স নিয়ে বসবে, আর এমন সব প্যেচিদা প্রশ্ন করবে যে সুমন একটা ভুল করবেই করবে আর অমনি শ্রাবনদা সমানে সেই প্রশ্নগুলোকে আরও জটিল করে তুলতে থাকবে আর শেষমেশ ওর উপর সিংহের বিশাল থাবা নিয়ে চড়াও হবে। আসলে সুমন বুঝে গেছে শ্রাবনদার সবচেয়ে পছন্দের বিষয় হচ্ছে ওকে মার দেওয়া, কারনে ওকারনে সুযোগ পেলেই তাই খালি মারে।

“কি হলো? ”

“কিছু না. ….”

“সুমো তুই কি আজকাল পড়াশোনা কিছু করিস। না সারাদিন ওই ফেসবুক ধরে পড়ে থাকিস… আমি তো যখনই ঢুকি তখনই তোর আইডির গ্রীন সিগন্যাল জ্বলতে থাকে।”

সুমন কোন উত্তর দিলো না, সারাক্ষন সুমনের আইডি অ্যাকটিভ শ্রাবণ কেমনে দেখে… তারমানে সে নিজেও সারাক্ষণ ওই করে…হুহ। যত দোষ নন্দঘোষ।

“কি রে মুখ ওরকম প্যাঁচার মতো করে আছিস কেন? ”

“কিছু না ”

“আচ্ছা ভালো, কিছু হওয়ার দরকার নাই … তুই নত্ব বিধান আর ষত্ব বিধানের সংজ্ঞাগুলো বল।”

“শ্রাবনদা আমি ভুলে গেছি আর প্রতিবার পড়া ধরার সময় কেন এইটাই তোমাকে ধরতে হবে… আরও কত বিষয় আছে পড়ার।”

“এই কোন পড়াটা কাজে লাগে সেটা বেশি জানিস তুই আমার চেয়ে। আর বাংলা ব্যাকরন পড়া কি তোর বিষয় না? যারা সিলেবাস করছে, যারা বই লিখছে তারা তোর চেয়ে মূর্খ ছিলো?”

“মূর্খ আর অত্যাচারী দুটোই, এগুলো কোন কাজে লাগেনা অথচ একগাদা ঠেসেঠেসে দিয়ে রাখেছে বই গুলো মোটা করার জন্য। তাদের তো আর পড়তে হয়না, দিয়েই খালাস।”

শ্রাবণের তাতানো মুখভঙ্গি দেখেও আজ মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে গেল সুমনের। আর তারপরই ঠাস করে একটা চড় পড়লো গালে।

“দিনকে দিন বেয়াদব হচ্ছিস। এক্ষুনি যা আমার সামনে থেকে আর কোনদিনও আমার কাছে পড়তে আসবিনা। কতবড় বেয়াদব হইছে।”

রাগ করে জোরের সাথে চেয়ারটা পিছনে ঠেলে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল শ্রাবণ। সুমন তখন মার খেয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে বইয়ের উপর মাথা রেখে। চোখের পানিতে বইয়ের কালো অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে গেল খানিকটা জায়গা জুড়ে।

“কিরে সুমন কাঁদছিস কেন রে মা?” নির্মলা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

“বড়মা…., ” সুমন জোরে ফুঁপিয়ে উঠলো।
“তোমার ছেলে দেখো মেরে আমাকে কি করেছে, পুরো গাল লাল করে দিয়েছে মেরে। ”

“দেখি… আহারে।” সুমনের গালে হাত বুলিয়ে দিলেন নির্মলা।” দাড়া আসুক আজকে তোর দাদা, আজ ওর একদিন কি আমার একদিন। আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলা……”

“হুমম.. খুব করে বকবে। একই পড়া প্রতিদিন ধরলে কেমন লাগে তুমিই বলো বড়মা , তাও একদম একটা পচা জিনিস, দুনিয়ার অখাদ্য। ”

“না আজ আর বকলে হবে না, তোর দাদাকেও আজ একটা জোরে পিটানি দিতে হবে। এতো বড় মেয়ের গায়ে ও হাত তুলবে কেন? ”

“না.. না মারতে হবে না, মারলে আরও রাগ হয়ে যাবে, ” সুমন সন্ত্রস্ত সুরে বললো।

নির্মলা মৃদু হাসলেন, ” রাগ হলে হোক, তবুও আজ মারব ”

“না বড়মা.. শুধু বকো আর বলো যে প্রতিদিন ওই একই পড়া যেন না ধরে।”

“তা বলবখন কিন্তু এই একই পড়া যখন রোজ ধরে তখন তুই একটু শিখে নিলেই তো পারিস বাপু, রোজ রোজ এই নিয়ে গন্ডগোল, মার খাওয়া। ”

“শিখি তো কিন্তু খালি একটার জায়গায় অন্যটা বলে ফেলি আর অমনি ঠাস ঠাস করে মারে… উমম,” সুমন আবার খানিক কাঁদলো।

“আচ্ছা আমি বলে দিবো কিন্তু তুইও একটু মনযোগ দিস পড়ায়, দাদা তো ভালোর জন্যই বকে না? ভালো করে পাশ না করলে ভালো চাকরি কি করে পাবি। নিজের পায়ে দাড়াতে হবে তাই না? দেখিস তো তোর মামার কত সমস্যা।”

“হুম… বড়মা, আমি একদিন অনেক বড় একটা চাকরি করবো দেখো তুমি। তখন দাদা আর মারবে না বলো।”

“হুম.. আর মারবেনা।”

“কিন্তু আজকে মারছে সেটার জন্য তুমি বকবা ” সুমন চোখের পানি মুছতে লাগলো। গালটা এখনো জ্বলছে ওর।

“আচ্ছা বকবো ”

“হুমম।”

………………………………..

“মঞ্জু বাবার চা টা একটু দিয়ে আসো”

সমীরের কথায় তীর্যক দৃষ্টিতে তাকাল মঞ্জু।

“কেন সুমন কই?”

“সুমন মনে হয় ওবাড়িতে, বাবা অনেকক্ষণ আগে চা চেয়েছিলেন ” সমীর পেপারটা মেলতে মেলতে বললো।

“দিচ্ছি, এদিকে সারাদিন আমি একলা মানুষ গুষ্টির ভাত রেঁধে বেড়াই আর তোমার ভাগ্নী সুযোগ পেলেই ওবাড়িতে ফুরুৎ ”

“সুমনদি তো পড়তে গেলো মা, শ্রাবণদা যে ফোন করলো তখন যেতে ”

মঞ্জু চোখ পাকিয়ে তাকালো মেয়ের দিকে।

“তা আর বলতে…. শ্রাবণ হলো সুমনের কাছে সাক্ষাৎ ভগবান, সে ফোন দিলে কি আর সুমনের হুশ জ্ঞান বলে কিছু থাকে? মনে হয় তিনবেলার ভাতটাও ওই ছেলেই যোগান দেয় ওকে, ” শব্দ নয় যেন খানিকটা বিষ ছুড়ে দিলো মঞ্জু।

“কিন্তু সুমনদির কাপড় – চোপড়, খাতা – কলম সব তো শ্রাবনদাই কিনে দেয় মা,” প্রীতি না বলে পারলনা। মা শুধু শুধু শ্রাবণদাকে দেখতে পারেনা অথচ বড়মার কাছে আবার প্রীতির জন্য কিছু করা যায় কিনা সেটা নিয়ে প্রায়ই বলে, প্রীতির খুব খারাপ লাগে মায়ের এই দুরকম আচরন।

“হু.. দেয় তো কিন্তু সুমনকে দিয়ে সেটা উসুল করে নেয়না নাকি.. আজ এর কাপড় শুকিয়ে আনো ছাদে গিয়ে, কাল আচাড়ের বয়ামগুলো রৌদ্রে দাও, আর শ্রাবণের ঘর গুছানো তো সুমনের প্রতিদিনের কাজ, তারপরও বলিস এমনি এমনি দেয়…”

“বারে সুমনদির মোবাইল আর ওটা চালানোর খরচও তো দেয় শ্রাবনদা। তারপর পূজোয় সুমনদিকে কত সুন্দর একটা ব্যাগ আর জুতো কিনে দিলো বড়মা আগেরটা ছিড়ে গেছে বলে। ওগুলোতো তো শ্রাবনদার টাকার বাইরে কিনে দিলো বড়মা শখ করে।”

“ওরকম বড়লোকেরা মন চাইলে কাজের লোকদের খুশি করার জন্য একটু আধটু দেয়ই। কই এতোই যদি ভালোবাসতো তাহলে সুমনের সাথে সাথে তুই ও তো কতদিন ওদের বাড়ির কাজ করে দিস, তোকে কি দেয়? এক বাটি পায়েস…হুহ। আসলে সুমন একভাবে কাজ করে দেয় বলে ওকে এটা ওটা দিয়ে হাতে রাখে। আজকালকার দিনে চুরি ছ্যাচ্চরি করবেনা এরকম লোক পাওয়াই তো এক মুশকিল ”

মায়ের কথায় প্রীতি যথেষ্ট বিরক্ত হলো। যদিও নির্মলার সাথে প্রীতির, সুমনের মতো গাঢ় সম্পর্ক নয় তারপরও প্রীতি বড়মা নামের মানুষটিকে যথেষ্ট সম্মান করে আর তিনিও ওকে যথেষ্ট স্নেহ করেন।

“বড়মা অনেক ভালো মানুষ মা… ওনার সম্মন্ধে এমন কথা বলোনা”

“আশ্চর্য আমি নির্মলাদিকে খারাপ কখন বললাম? পেটের মেয়ে হয়ে তুই আমার নামে এতোবড় অপবাদ দিলি? এইজন্য বলে কারো ভালো করতে যেওনা, নিজের পেটের মেয়ের কাছেই আমি এখন শত্তুর ” মঞ্জু আক্ষেপ করতে লাগলো। ” শ্রাবণের বিয়েটা আগে খালি হোক, তারপর দেখবো তোর সুমনদির অতো বাহাদুরি যায় কই। শ্রাবণের বউ এসে যখন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ও ঘর থেকে বের করে দিবে তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল।”

“মা তুমি এমন সব অলক্ষুনে কথা বলো নাতো।শ্রাবনদার বউ মোটেই ওরম হবেনা।”

” অলক্ষুনে নয় বরংচ গরীবের কথা বাসী হইলে ফলে তাই বল।”

“আমি চাই তোমার কথা কখনই না ফলুক।”

“আহ থামবি তোরা, মঞ্জু বাবার চা টা এখনো দিলে না,” সমীর এবার আর নাক না গলিয়ে পারলনা, মা – মেয়েতে যুদ্ধ করে বাবাকে চা টাই দিচ্ছে না।

সমীরের কথা শুনে মঞ্জু গজ গজ করতে করতে রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলো।

………………………..

“ও মা…… বড়ি সব শেষ? ”

তরকারীর বাটি নেড়েচেড়ে একটা আধাভাঙ্গা ডালের বড়ি নিজের থালায় তুলে নিলো শ্রাবণ। বছরে নতুন ডালের বড়ি ওর খুব পছন্দের।

“আরও সবার শেষে খেতে আসো… আমি আর অত পাহারা দিয়ে পারিনা, অনেকগুলো দিয়েছিলাম সবাই খেয়ে শেষ করে ফেলেছে ”

” আমার জন্য একটা বাটিতে কয়টা তুলে রাখলেই তো হতো,” নিচু স্বরে বললো শ্রাবণ।

“আগে বিয়ে করে একটা বউ আনো তারপর থেকে সব তোলা পাবে,” নির্মলা কড়াই খুঁজে আর দুটো বড়ি শ্রাবনের থালায় তুলে দিলেন।

“বারে.. একটু তরকারি তুলে রাখার জন্য আস্ত একটা বউ নিয়ে আসতে হবে! এতো অবিচার মা,” শ্রাবণ মুচকি হাসলো,জানে মা এবার ক্ষেপবে। কিছুদিন আগে নতুন এক পাত্রী দেখেছে ওর জন্য সবাই মিলে কিন্তু শ্রাবণ মোটে সময়ই বের করতে পারছেনা, তাই যাওয়াও হচ্ছে না।

ছেলের কথার ঢঙে এবার কপট রাগ দেখালেন নির্মলা,” বিয়ের কথা বললেই খালি তোর অবিচারের কথা মনে উঠে আর যে ছোট্ট মেয়েটা তোর প্রতিদিনের খাবার হিসেব করে গুছিয়ে রাখে তাকে তুই কোন হিসেবে মারলি?”

“ওহ… বিচার দেয়া হয়ে গেছে। বেশ করেছি মেরেছি…. দুনিয়ার ফাঁকিবাজ। এক পড়া সাতদিন আগে দিছি সেদিনও পারে নাই। মারব না তো কি করবো?”

“বাবারে তার জন্য একটা ধমক দিলেই তো হয়। সুমন কি এখন আর আগের সেই ছোট্ট সুমন আছে। গায়ে পায়ে কত বড় হয়ে গেছে হিসেব করেছিস, এতো বড় মেয়ের গায়ে কেউ হাত তোলে।”

“ওই গায়ে পায়েই খালি বাড়ছে মাথায় আছে খালি গোবর। ”

” তা হোক গোবর… তারপরও ওভাবে মারবি না। যা বলার মুখে বলবি। ওর কেউ নেই বলে সমীরদারা হয়তো সরাসরি এসে কিছু বলেনা কিন্তু কোনদিন ওর মামী এসে হুট করে কিছু বলে বসবে… তার তো আবার মুখের কোন হিসাব কিতাব নেই। আর এতো বড় মেয়ের গায়ে তুই পরপুরুষ হয়ে হাত তুলিস না, ওটা খারাপ দেখা যায়।”

মাত্রই কাটা থেকে মাছ ছাড়াচ্ছিল শ্রাবণ, আঙ্গুলের মাথায় সূক্ষ একটা খোঁচা খেয়ে থেমে গেলো। ‘পরপুরুষ’! শব্দটা বড় অদ্ভুত লাগলো শ্রাবণের কানে। মা কি করে কথাটা বললো সেটা ওর ঠিক মাথায় ঠিক ঢুকলনা।

“পরপুরুষ মানে… আমি মেরেছি বলেই আজ আমি পর হয়ে গেলাম একদিনের মধ্যে আর তারপরও তুমি বলবে এটা অবিচার নয় মা! ”

“আহারে…. এতো ভারী মুশকিল হলো, আমি বলছি কি আর তুই বুঝছিসিই বা কি।”

” তো বোঝাও, ” শ্রাবণ জেদী সুরে বলে উঠলো,” আমি পরপুরুষ তো… ঠিক আছে আমি মারবও না আর মোবাইলের খরচও টানব না, দেখি ওনার মামী ওতে কত টাকা লোড দেয়।”

নির্মলা কপাল চাপড়ালেন,”তোর মাথায় কি বুদ্ধিরে শ্রাবণ… তুই টাকা ভরে না দিলে ওর মামী যে এক পাই পয়সাও ওতে দিবেনা সেটা তুই ভাল জানিস। মাঝখান থেকে মেয়েটা খালি ভুগবে। কলেজে প্রতিদিন যেতে পারেনা সংসারের কাজ রেখে বান্ধবীদের কাছ থেকে পড়া জেনে নেয়। মোবাইল বন্ধ থাকলে সেটুকুও জানতে পারবেনা, আর মঞ্জুর ফোন ধরলে ধমক খেতে খেতে জান যাবে সুমনের, অনুজ আমেরিকা থেকে পাঠিয়েছে ওটা। ”

“তো আমি কি করবো আমি তো পরপুরুষ ” একগুয়ের মতো বললো শ্রাবণ।

“পরপুরুষ না হলেও বোন বড় হয়ে গেলে দাদাদের মারতে নেই। এমনকি বাবারও মারতে নেই,মেয়েদের আদর করতে হয় যতদিন বাবার বাড়ি থাকে।”

“হ্যা আদর দিয়ে দিয়ে একটা আস্ত বাদর বানাতে হয়, ” শ্রাবণ পুরো খাবার না খেয়েই রাগ করে উঠে চলে গেলো নিজের ঘরে। নির্মলা বিমর্ষ মুখে ওর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইলেন। শ্রাবণকে তিনি কি করে বোঝাবেন যে হাজার স্নেহ করলেও তারা সুমনের রক্তের আত্মীয় নন, কোন বিপদ হলে তখন এই আত্মীয়তার কোন মূল্য থাকবে না, উল্টো নিমেষের মধ্যে শ্রাবণের দিকে আঙ্গুল উঠবে।

……………………………

“বড়মা শ্রাবনদা কই গো?”

“জানিনা ঘরেই তো ছিলো, তুই আবার এখন ওর ঘরে গিয়ে যন্ত্রনা করিস না।”

“না আমি ওঘরে যাচ্ছি না।”

“বড়মা….. ”

“হুমম…”

“আমি কি খুব খারাপ? ”

“সেকি কেন.. এরকম আজব কথা তোর মাথায় আসে কি করে।” নির্মলা এক চামচ চিনি কাপে দিয়ে সেটা সুমনের হাতে ধরিয়ে দিলেন,” যা এটা নিয়ে ছোরদার রুমে আগে দিয়ে আয়।”

“এই তুমি মানা করলে”

“তুই খালি চট করে চাটা দিয়েই চলে আয়, দাড়াস না।”

“যাচ্ছি কিন্তু যদি তোমার ছেলে আবার আমাকে মারে তাহলে কিন্তু আমি চা না দিয়েই ফেরত চলে আসবো।”

“আচ্ছা আগে নিয়ে তো যা।”

সুমন চায়ের কাপ হাতে ঘরে ঢুকে কোথাও শ্রাবণের ছায়া দেখতে পেল না।

চলবে……
তোমার পরিনীতা – ৫ম

( শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিনীতা গল্পের ছায়া অবলম্বনে)

লেখিকা- ফায়জা করিম

( ১৮+ কনটেন্ট বিদ্যমান, কোন অবস্থায় গল্প কপি না করার অনুরোধ রইলো)

“শ্রাবণ… এই তুই কি করছিস.. এদিকে কোথায় যাচ্ছিস বলতো?”

শ্রাবণ গাড়ি ব্রীজে না উঠিয়ে পাশের রাস্তায় নিতেই মৌমিতা অবাক হয়ে জানতে চাইলো।

” দয়া করে মুখটা একটু বন্ধ রাখবি… আর পাঁচটা মিনিট ধৈর্য ধর। নিজেই দেখতে পাবি তোকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি আমি।”

শ্রাবণ গাড়িটাকে ব্রীজের পাশের ঢালু রাস্তাটা ধরে নিচে নামিয়ে আনল। সামনেই নদী, নদীতে ছোট বড় অনেকগুলো নৌকা দেখা যাচ্ছে, তাতে আবার দু’একটা পাল তোলা নৌকাও আছে। গাড়ির এসিটা বন্ধ করে দিয়ে গ্লাসগুলো বেশ খানিকটা নামিয়ে দিল শ্রাবণ। ফুরফুর করে তাজা বাতাসের মনকাড়া গন্ধটা এসে নাকে লাগলো ওদের।

মৌমিতা মনে মনে হাসলো । শ্রাবণটা না একটু পাগল আছে। এই রকম সেজে গুঁজে লালটুস হয়ে ও এখন যাবে নদীর ধারে কাঁদা মাখাতে? অবশ্য মৌমিতার কাঁদাজলে তেমন আপত্তি নেই, তবে শাড়ির পাড়টা নষ্ট হয়ে গেলে কেঁদে ফেলবে ও। বড্ড প্রিয় এই শাড়িটা মৌমিতার।

কিন্তু পাঁচ মিনিট পরেই মৌমিতার নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে হলো। কোথায় ভাবলো শ্রাবণ ওকে নিয়ে নদীর পাড়ের হাওয়া খাওয়াবে কি… উল্টো গাড়িটা নদীর পাশের কার্পেটিং করা রাস্তা দিয়ে সামনে এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে।

“এই তুই কই চললি… আমরা ঠিক সময়ের মধ্যে না পৌছালে কিন্তু লাবন্য রেগে টং হবে।”

শ্রাবণ উত্তর না দিয়ে ঘ্যাচ করে গাড়ির ব্রেকটা কষলো,” কথা কম বল… নইলে কিন্তু স্কচটেপ এনে মুখে লাগাব। আমি তোর লাবন্যর চাকরি করি নাকি? ”

মৌমিতা আর কথা বাড়াল না। সকাল থেকেই শ্রাবণের মেজাজটা খারাপ মনে হচ্ছে, কিন্তু কি নিয়ে ওর মুড অমন খারাপ সেটা মৌমিতার ঘটে ঢুকছেনা। বলা নেই কওয়া নেই দুম করে সকাল সকাল বান্দা আজ ওদের বাড়ি এসে হাজির । অথচ আসার কথা ছিল বিকেলে।

সকাল সকাল ঘরের দরজায় শ্রাবণকে দেখেই মৌমিতার মা খুব খুশি হয়ে গিয়েছিলেন। আগাগোড়াই শ্রাবনকে খুব পছন্দ মধুমিতার… মৌমিতা জানে। তাই সময়ের আগে লাবন্যদের বাসায় যাবার কথা বললে আর কিছু বলেনি মা, অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য শ্রাবণের সাথে অনেক রাত বিরেতে বাড়ি ফেরার অভ্যাসটা মৌমিতার বহুদিনের। নিরাপদে বাড়ি পৌছে দিয়ে যেত বলে এখনো কোনো প্রয়োজন হলে শ্রাবণকেই সবার আগে মনে পড়ে মৌমিতার। আসলে নির্ভরতাটা একটু বেশি হয়ে গেছে ওর শ্রাবণের উপর। আর শ্রাবণ দুষ্টুমি যাও বা একটু আধটু করে, পাহারা দেয়ার বেলায় ওর চেয়ে উপযুক্ত লোক খুব কমই আছে মৌমিতাদের গ্রুপে। কলেজ থেকেই স্টাডি ট্যুর বা গ্রুপ পিকনিকে গেলেও ওর টাওয়ারের মতো লম্বা শরীরটা দিয়ে সবার দিকে কড়া দৃষ্টি রাখাটা একটা অলিখিত দায়িত্ব ছিল শ্রাবণের। শ্রাবণের এই দায়িত্বশীল আচরনটা দারুন পছন্দ মৌমিতার।

চলতে চলতেই গাড়িটা হঠাৎ একটা জায়গায় এসে থেমে গেল।

“চলতো ওই বাড়িটার সামনে,” শ্রাবণ আঙ্গুল দিয়ে পাশাপাশি দুটো তালগাছওয়ালা একটা বাড়ি লক্ষ্য করে দেখালো।

শ্রাবণের পিছু পিছু একটা টিনের গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলো মৌমিতা। ভাল করে ভিতরে তাকিয়ে দেখলো একটা বড় দোচালা টিনের বাড়ি,তাতে সুন্দর নীল রঙ করা। সামনে বড় একটা পরিপাটি উঠোন। ঘরের একপাশ দিয়ে লতানো গোলাপ গাছের ঝার। গাছটি ঘরের চাল বেয়ে উপরে উঠে গেছে, তাতে অসংখ্য আধা ফোঁটা গোলাপ কুড়ি।এক ঝলক দেখেই পুরো দৃশ্যটা মনে গেঁথে গেল মৌমিতার। একদম ছবির মতো দেখতে বাড়িটা।

“কিরে কেমন লাগছে? ” কেমন একটা কৌতুকচ্ছলে কথাটা জানতে চাইলো শ্রাবণ।

“সুন্দর…. ভীষন সুন্দর। কিন্তু তুই বলা নেই কওয়া নেই দুম করে আমায় এখানে নিয়ে এলি কেন? কার বাড়ি এটা? তোর কোন আত্মীয়র?”

“আত্মীয় না আত্মীয়ার….তবে এখনো হয়নি। হবো হবো করছে মনে হচ্ছে। ”

শ্রাবণের ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি খেলা করছে।

“ওহ কারো বিয়ের সম্মন্ধ চলছে বুঝি? ”

“ওরকমই একটা কিছু, তোর পছন্দ হয়েছে কিনা সেটা বল।”

“হুমম.. খুব। এরকম ঝকঝকে উঠোনওয়ালা বাড়ি দেখলেই আমার মনটা ভালো হয়ে যায়, তারপর আবার কাছেই এতো বড় একটা নদী। কিন্তু শহর থেকে বেশ দূরে, কার জন্য সম্মন্ধ করছিস… তোদের সুমনের জন্য?”

মৌমিতার কথা শুনে শ্রাবণ হো হো করে হেসে ফেললো,”প্রেমে পড়লে মানুষের বুদ্ধি-সুদ্ধি লোপ পায় সেটা শুনেছি কিন্তু তোর কথায় তার হাতে নাতে প্রমান পেলাম,” হাসতেই হাসতেই মাথা নাড়লো শ্রাবণ।”সুমনের জন্য সম্মন্ধ… তোর মাথাটাই গেছে মৌমি। সুমোতো ইন্টারমিডিয়েটই পাশ করে নাই এখনো… বাচ্চা একটা মেয়ে।”

“এতো হাসিস না তো উজবুকের মতো, যেভাবে বলছিস এতোটা বাচ্চা মেয়েও না তোমার সুমো,” মৌমিতা গাল ফোলাল।

“ওহ রিয়েলি.. কিন্তু তোর পাশে কিন্তু বাচ্চাই মৌমি,” শ্রাবণ টিপ্পনী কাটতে ছাড়লনা।

“হয়েছে হয়েছে এতো শোনাতে হবেনা, আমি জানি আমি বুড়ি, ” মুখ ভেঙচালো মৌমিতা।
“এখন বল কার সম্মন্ধ করছিস এ বাড়িতে।”

“তোর… দেখিসনা বাবু সেজেগুজে আসছে।”

শ্রাবণের কথাটা শোনার সাথে সাথে শ্রাবণের চোখের দৃষ্টি অনুসরন করে সামনে তাকালো মৌমিতা। সাথেই সাথেই মুখটা গম্ভীর হয়ে এলো ওর। অমিয়! এটা অমিয়দের বাড়ি!

“তুই আমায় ওদের বাড়ি নিয়ে এলি কেন শ্রাবণ,” দাঁতে দাঁত ঘষলো মৌমিতা এবার। সেদিনও একবার অমিয়র সাথে ওকে যেতে বলেছিলো শ্রাবণ। মৌমিতা নিঃশব্দে ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ঠিক আবার অমিয়কে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে ফাজিল ছেলেটা।

“একদম আমার মুডটা খারাপ করবিনা মৌমি। সারা স্টুডেন্ট লাইফ ওর গলা ধরে ঝুলে এখন উনি নেকু সাজছেন।”

“মোটেই না… আর ও গেলে আমি তোর সাথে আর কোনদিনও কথা বলবো না মনে রাখিস।”

“আমার সাথে কথা বলতে কে বলেছে তোকে , অমির সাথে বলিস তাতেই আমরা খুশি।”

“আমরা মানে? ” মৌমিতা আড়চোখে দেখলো পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে অমিয়। নীল পাঞ্জাবিতে কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে অমিয়কে। গত তিনটা মাস কোন যোগাযোগই নেই মৌমিতার সাথে ওর। অভিমানে গুমরে মরছে মৌমিতা, কোন কথা নেই ওর অমিয়র সাথে।

“আমি আর মাসিমা,” শ্রাবণ গাড়িতে উঠে বসলো।

“মা!”

“হু… ”

“আমি… আমি না তোদের দেখে নেব,” হাত দিয়ে দুটে কিল দিতে মন চাইলো মৌমিতার, শ্রাবণকে। কিন্তু বেশি কিছু বলার বা করার সুযোগ পেলনা মৌমিতা। অমিয় কাছাকাছি এসে গেছে। তবে অমিয় গাড়ির কাছে আসার আগেই দ্রুত শ্রাবণের পাশের সিটটা দখল করে নিয়ে বসলো ও। অমিয় বসুক একা পিছনে, অবহেলা করলে কেমন লাগে বুঝুক একটু।

..……………..…….

“সুমন….. বই রেখে লতিগুলো একটু বেছে দিয়ে যা এক্ষুনি, সারাদিন পড়ার অজুহাত দেখিয়ে সারাদিন ঘরে বসে থাকা চলবে না ,” মঞ্জু রান্নাঘর থেকে গজ গজ করতে লাগলো। সমীর আবার চিংড়ি ছাড়া লতি বেশি খেতে চায় না কিন্তু মাছের দাম দেখে আজকাল মাছ খাওয়া প্রায় ভুলেই যাচ্ছে ওরা। বিরক্তির সাথে বাজারের ব্যাগ থেকে আধাপোয়া নোনা চিংড়ি বের করলো মঞ্জু।

“আসছি মামী.. ”

সুমন এই দিয়ে সকাল থেকে দশবার নত্ব বিধান আর ষত্ববিধানের সংজ্ঞা লিখলো। আজ সুমন জিদ ধরেছে যে করেই হোক এ দুটোকে আজ ও মুখস্থ করেই তবে ছাড়বে। রাতে শ্রাবনদাকে একদম গড়গড় করে মুখস্থ বলে দিবে আজ।

শ্রাবণের ঘরে চা নিয়ে গিয়ে সেদিন ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল সুমন। মনটা তখনই কামড় দিয়েছিলো ওর। শ্রাবণদা বাসায় থাকলে সাধারণত বিকেলে বড়মার হাতের চা টা না খেয়ে বাইরে বের হয়না আর বন্ধের দিনতো প্রশ্নই আসেনা। মনে মনে প্রমাদ গুনেছিলো সুমন যে আজ হয়তো শ্রাবন বাইরে থেকে ফিরে আসলে বড়সর একটা বকার ঝড় যাবে ওর উপর দিয়ে।

কিন্তু রাত আটটা বাজলেও শ্রাবণ বাসায় ফিরে আসেনি।

রাত নয়টার দিকে আবারও শ্রাবণের ঘরে গিয়ে দেখে এসেছিলো সুমন , তখনও শ্রাবণ ঘরে ফিরেনি। না পেরে সুমন, মানু মাসিকে বলে এসেছিলো শ্রাবণ আসলেই ওকে খবর দিতে। তার আধাঘন্টা পরই চিলেকোঠার ঘর থেকে নেমে এসেছিলো শ্রাবণ। এতোক্ষন নাকি ওখানেই কাজ করছিলো সে।

খবর শুনেই আবার ছুটেছিলো সুমন।

“শ্রাবণদা তুমি এতো সময় ওখানে কি করছিলে? বড়মা কতো চিন্তা করছিলো তুমি জান? ” সুমন সোজা কৈফিয়ত চেয়ে বসেছিলো রাগ হয়ে। বিকেল থেকে কতবার করে ও এসে এসে দেখে গেছে শ্রাবণ এসেছে কিনা সেটা জানার জন্য, আর ওই লোক দিব্যি বাড়ি বসে ছিলো।

কিন্তু অবাক ব্যাপার সুমনের অভিযোগ শুনে শ্রাবণ একটুও রাগ করেনি বরং এক ঝলক ওকে দেখেই আবার মাথা নিচু করে কি যেন শুধু ভাবছিলো।

শ্রাবণ এতোটা সময় বাড়িতেই ছিলো অথচ একবারও ওর ফোন ধরেনি, সুমনের মেজাজ তখন তুঙ্গে। শ্রাবনদা বড় বলেই কি যা ইচ্ছা তাই করবে নাকি…. মনে হচ্ছিল ইচ্ছোমতো কামড়ে দেয় শ্রাবনদার হাত… ছোটবেলার মতো। নেহায়েত সুমন বড় হয়ে গেছে, নাহলে ও ঠিকই কামড়ে রক্ত বের করে দিত এতক্ষণে।

“শ্রাবনদা… ”

“কি? ”

“তুমি কি আজকাল বয়রা হয়ে যাচ্ছ , এতোবার করে বলছি অথচ তুমি কিছুই শুনতে পাচ্ছ না?”

“কেবল বয়রা নারে সুমো … তোর শ্রাবনদা আজকাল কানাও হয়ে যাচ্ছে। দেখিস না কত কিছুই এখন আর ঠিকমতো খেয়াল করতে পারিনা আমি।”

হাসার চেষ্টা করলেও শ্রাবণের মুখটা তখন কেমন থমথম করছিলো, মনে হচ্ছিল কোন কারনে ভিতরে ভিতরে খুব কষ্ট পাচ্ছে সে।

“বালাই ষাট… তুমি কেন কানা হবে শ্রাবনদা,” সুমন, শ্রাবণের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছিলনা। শ্রাবনদাকে কি বড়মা অনেক বেশি বকেছিলো ?

” তুই এতো তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলি কেনো সুমো, ছোট ছিলি সেইতো ভালো ছিল।”

সুমন, শ্রাবনের এই কথার কোন মানেই উদ্ধার করতে পারলনা। শ্রাবনদার আসলে হলোটা কি? ওর বড় হওয়ার সাথে শ্রাবনদার মন খারাপের কি সম্পর্ক….

কিন্তু শ্রাবনদার চোখমুখ বলে দিচ্ছে কোন কারনে তার মন খুব খারাপ। অবশেষে সুমন নিজেই ভয়ে ভয়ে শ্রাবণকে বলেছে যে , “এরপর থেকে আর কখনো পড়ায় ফাঁকি দিব না শ্রাবনদা।তুমি যেমন ভাবে পড়তে বলবে তেমন ভাবেই পড়বো।”

কিন্তু শুনে শ্রাবণ কেবল বলেছিলো, “ভালো।”
তারপর আবার চুপ হয়ে গিয়েছিলো।

সুমন খাবার ঘরে এনে দিবে কিনা জিজ্ঞেস করলে, শ্রাবণ তারও কোন উত্তর দেয়নি তখন । অবশেষে সুমন নিজেই ট্রে তে করে খাবার নিয়ে এসেছিল, কিন্তু শ্রাবন তখনও একভাবেই ধ্যান ধরে বসে আছে। সুমন ডেকে ডেকে বিরক্ত হয়ে শেষে পাশে যেয়ে বসতেই শ্রাবণ সচেতন হলো। তার পরই হঠাৎ করে বলে বসলো, ” তোর উপর আমার কোন অধিকার নেই সুমো। তুই আর আমার কাছে কক্ষনো পড়তে আসিস না। ”

” তুমি এমন কথা বলছো শ্রাবনদা? তোমার কি হয়েছে? ”

সুমন তাড়াতাড়ি শ্রাবনের কপালে হাত দিয়ে দেখে সব স্বাভাবিক, কোন জ্বর নেই। তাহলে এরম ভুল ভাল কেন বকছে শ্রাবনদা? পুরো সন্ধ্যা বাইরে বসেছিল.. বাতাস লাগলো কি না কে বলবে। সুমন রাগ হয়ে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু শ্রাবন তার আগেই নিজের কপাল থেকে সুমনের হাতটা সরিয়ে দিয়ে গম্ভীর হয়ে বলে উঠেছিলো,” কারন আমি পরপুরুষ।”

“পর পুরুষ ওটা আবার কি পুরুষ গো শ্রাবনদা?”

সুমন ভয়ে মাথা চুলকাচ্ছিল। ওকি আবার পড়া ভুলে গেল? কিন্তু সেদিন শ্রাবনদা নিজেই ওকে পড়ালো পুরুষ তিন প্রকার। এক উত্তম পুরুষ, দুই মধ্যম পুরুষ আর তিন নাম পুরুষ। কিন্তু তখন তো পরপুরুষ বলে কিছু পড়ায় নি।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here