তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব ৩+৪

#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ০৩)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
বেডের উপর ফুচকা আর অনেকগুলো চকলেট রাখা,খুশিতে মনটা নেচে উঠলো। কে রেখেছে দেখার সময় নেই। একলাফে বেডে উঠে বসে আগে ফুচকা খেতে শুরু করলাম,ঝালটা একটু বেশি হয়েছে চোখ থেকে টপাটপ পানি পড়ছে।ঝাল বেশি লাগছে তাই চকলেট হাতে নিলাম,তখনি কেউ বলে উঠলো…

কি খাদক রে বাবা! একটু আগে ডিনার করে আসলো আর এসে আবারো গিলছে!!

আমি সামনে তাকিয়ে দেখলাম আদ্র ভাইয়া হাত ভাজ করে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে,ঠোঁটে লেগে আছে মুচকি হাসি। আমি চকলেট খেতে খেতে বললাম….আমি মটেও খাদক নই হুম,চকলেট ফুচকা এগুলো আমার সবথেকে প্রিয় খাবার এগুলো সামনে পেয়ে আমি না খেয়ে বসে থাকবো? কখনোই না। তোমার যদি খেতে ইচ্ছে করে তো বলো একটু চকলেট দিবো।

একটু কেনো??

পুরোটা চাও নাকি হুম? পুরোটা তো দেওয়া যাবে না। একটু দিতে চেয়েছি সেটাই তো অনেক।

তোর একটু আমার লাগবে না তুই খা। আচ্ছা আরু এত রাতে তোকে এসব কে এনে দিয়েছে?

কে এনে দিয়েছে জানি নাতো,রুমে এসে দেখলাম বেডের উপর রাখা খেতে বসে পড়লাম।

সে কিরে! ভূতে রেখে যায় নি তো আবার!!

ভাইয়া একদম মজা করবে না ভূত আসবে কোথা থেকে। হয়তো বড় চাচ্চু বা আব্বু এনেছে আবার হয়তো তুমিও আনতে পারো।

আমার কথা শুনে আদ্র ভাইয়া একটু অবাক হওয়ার ভান করে বললো…আমার কি মাথা খারাপ হয়েছে, তোর জন্য এই রাতে এগুলো আনবো আমি।

ঠিকআছে ঠিকআছে কে এনেছে এসব জানার দরকার নেই আমার। আচ্ছা আমি তোমার সাথে কথা বলছি কেনো? তোমার জন্য আজ আমার বেস্টু আমার উপর রাগ করেছে,কথা নেই তোমার সাথে যাও তুমি।

আমি কি করেছি যে তোর বেস্টু রাগ করেছে??

অনেক কিছু করেছো। এখন যাও তো খেতে দাও আমাকে,তখন থেকে তাকিয়ে আছো আমার পেটে ব্যাথা করবে না বুঝি!

যাহ বাবা, এ মেয়ে বলে কি!!ওই তোর খাওয়ার দিকে আমি কেনো তাকিয়ে থাকবো? এগুলো এনে দিলাম আমি,আর আমাকেই কথা শোনাচ্ছ!!

আমি বড় বড় চোখে তাকিয়ে বললাম কি বললে! এগুলো তুমি এনেছো??

ককই নাতো,এটা বলেছি নাকি। তুই হয়তো ভুল শুনেছিস। আমি এখন যাচ্ছি হ্যা। আদ্র ভাইয়া চলে গেলো,আমি ভাবছি উনি তো নিজেই বললো এগুলো উনি এনেছে আবার বলে ভুল শুনেছি!! ধেত এসব ভেবে আমার কোনো কাজ নেই,আমার জন্য এনেছে আমি খেতে থাকি।
.
.
আজ শুক্রবার সবাই আজ বাড়িতেই আছে। ড্রয়িংরুমে বসে আমি টিভিতে হিন্দি গান দেখছি আমার পাশে অথই আমার ফোনটা নিয়ে গেম খেলছে। হঠাৎ আদ্র ভাইয়া এসে আমার হাত থেকে রিমোট টা নিয়ে চ্যানেল পাল্টে দিলো। আমি বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বললাম…ভাইয়া এটা কি হলো??

কই কি হয়েছে??

তুমি চ্যানেল পাল্টালে কেনো আমি গান দেখছিলাম দেখো নি তুমি??

হুম দেখেছি,তার জন্যই তো চ্যানেল পাল্টে দিলাম। এসব কি গান শুনছিলি তুই!! এসব বড়রা শোনে তুই তো এখনো ছোট এসব গান আর শুনবি না বুঝলি।

একশো বার শুনবো,হাজার বার শুনবো। শোনো ভাইয়া আমি মটেও ছোট নই সামনে ইন্টার পরীক্ষা দিবো হুম। এখন রিমোট দাও।

খুব বড় হয়ে গেছিস তাইনা? আচ্ছা রিমোট দিবো আগে যা আমার জন্য কফি করে নিয়ে আয়।

কিহ! আমি কফি করে আনবো!! তখনি অথই ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো…ভাইয়া তুমি আর মানুষ পেলে না! আরিশা আপু কফি বানাতে পারে নাকি শুনে দেখো তো?

এবার আমার রাগ উঠে গেলো এতদিন তো আদ্র ভাইয়া আমার পেছনে লাগতো আর এখন এই অথই টাও কিছু না কিছু বলে আমাকে ছোট করে। কি সমস্যা ওদের দুভাই বোনের আল্লাহ জানে। আমি অথই এর হাত থেকে আমার ফোনটা টেনে নিয়ে বললাম…এই আমি না তোর বড় আপু হই তুই আমাকে এভাবে ছোট করলি! আমার ফোনে তোকে আর গেম খেলতে দিবো না,তোর ভাইয়ের ফোন নিয়ে খেল। আর শোন আমি তো পারি না কফি করতে যা না তুই তোর ভাইকে কফি করে খাওয়া।

আমার দিকে তাকিয়ে আদ্র ভাইয়া মুচকি হাসছে আর অথই হয়তো ভাবছে কি বলবে এখন। এর মধ্যেই কাকিমা এসে বললো…আরিশা কি হয়েছে এভাবে চেঁচিয়ে কথা বলছিস কেনো??

তোমার ছেলে মেয়েকেই জিগ্যেস করো না কি হয়েছে। তোমার ছেলেটা তো সুযোগ পেলেই আমাকে বকে। অথই টাও কম যায় না ও যে আদ্র চৌধুরীর বোন এটা ও বুঝিয়ে দেয়।

কাকিমা অথইকে বললো….অথই কি বলেছো আপুকে??

আসলে মা ভাইয়া আপুকে কফি করে আনতে বলেছিলো,আমি বলেছি ভাইয়া আরিশা আপু কফি বানাতে পারে নাকি শুনে দেখো তো।

অথই আরিশা তোমার বড় আপু আর যদি কখনো এরকম কথা বলো তখন তোমার খরব আছে। আর আদ্র তোকেও বলি বাড়িতে আমি আছি তোর ছোট কাকিমা আছে আমাদের বলতি কফি করে দিতে আরিশাকে কেনো বলেছিস। ওকে এসব করতে হবে না আমরা আছি কি করতে।

মা ওকে একটু কাজকর্ম কিছু শেখাও শশুর বাড়ি গিয়ে তো কিছুই করতে পারবে না।

তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। আরিশা আমাদের কাছেই থাকবে। আরিশা মা যা তো তোর চাচ্চু বাগানে আছে ডেকে নিয়ে আয় নাস্তা করতে হবে তো।

কাকিমাকে জড়িয়ে ধরে বললাম…কাকিমা তুমি খুব ভালো। লাভ ইউ,এখনি যাচ্ছি আমি।

আমি চলে আসতেই কাকিমা আদ্র ভাইয়াকে বললো…ওর পেছনে আর লাগবি না বলে দিলাম,সব সময় দেখি কিছু না কিছু বলে ওকে রাগিয়ে দিস। আর যেনো এমন কিছু না দেখি।

কাকিমা চলে গেলো আদ্র ভাইয়া নিজে নিজে বলতে লাগলো…মাঝে মাঝে বুঝতেই পারি না এটা আমার মা নাকি ওই পাগলিটার মা!!
.
.
বিকেলে ব্যালকনিতে বসে গান শুনছি আর গুনগুন করে গাইছি হঠাৎ অথই এসে পেছন থেকে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো,আমি বেশ বুঝতে পারছি নিশ্চই কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে। আমি ওর হাত ছাড়িয়ে বললাম…হয়েছে এত আদর দেখাতে হবে না কি বলতে এসেছিস সেটা বল??

আপু তুমি আমার উপর রেগে আছো??

অথই এর মুখের দিকে তাকিয়ে ওর ইনোসেন্ট ফেস দেখে ফিক করে হেসে দিয়ে বললাম…না বনু আমি আর রাগ করে নেই বল কি বলবি??

আপু বলছিলাম কি অনেক দিন ফুচকা খাওয়া হয় না,চলো না আজ ফুচকা খেয়ে আসি।

আমি তো কাল রাতেও…..এই রে কি বলতে যাচ্ছিলাম আমি! নাহ ওকে বলা যাবে না। কথা ঘুরিয়ে বললাম চাচ্চু আর আব্বু তো আজ বাড়িতে কি বলে যাবো আমরা??

ও নিয়ে তুমি ভেবো না সবাইকে ম্যানেজ করেই তোমার কাছে এসেছি। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও তো।

বাহ,তুই তো অনেক ফাস্ট হয়ে গেছিস। বাট তোর ভাই টা কোথায় সে বাধা দিবে না তো??

ভাইয়া বাড়িতে নেই রাতের আগে ফিরবেও না।

হুমম ভালো হয়েছে,তুই যা রেডি হ আমিও রেডি হয়ে আসছি।
.
আমি আর অথই ফুচকা খাচ্ছি। আমাদের ডান পাশে ফুলের বাগান আর বা পাশে বড় একটা লেক খুব সুন্দর একটা জায়গা,গোধুলি বিকেলের রোদ পানিতে এসে পড়েছে হালকা বাতাস বইছে যার কারনে পানি ঢেউ দিচ্ছে রোদের আলোতে পানি ঝিলমিল করে উঠছে। অপরুপ মনোমুগ্ধকর একটি দৃশ্য।
আমি অথই এর সাথে দু একটা কথা বলছি আর এদিক ওদিকে তাকিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করছি। হঠাৎ চোখ পড়লো আমাদের থেকে কিছুটা দূরে একটা ব্রেঞ্চের দিকে….আমার চোখ দুটো রসগোল্লার মত বড় হয়ে গেলো অথইকে হাতের ইশারা করে তাকাতে বললাম ওর ও আমার মত সেম অবস্থা।

অথই অবাক হয়ে বললো আপু আমরা যা দেখছি ঠিক দেখছি তো??

ভুল দেখার কি আছে? চল এখন বাড়ি যাই এখানে আর থাকা যাবে না। বাকীটা বাড়িতে গিয়ে বুঝে নিও
#তোকে_অনেক_ভালোবাসি (পর্ব ০৪)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
ড্রয়িংরুমে বড় কাকিমা মা আমি আর অথই বসে আছি। কাকিমা তো মুখটা কালো করে বসে আছে আজ যে আদ্র ভাইয়ার কি হবে উফ ভেবেই আমার আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে।
আমরা যখন ফুচকা খাচ্ছিলাম তখন দেখলাম আদ্র ভাইয়া আর একটা মেয়ে বসে আছে,দেখে মনে হয়েছিলো মেয়েটির মন খারাপ ছিলো। আদ্র ভাইয়া কাকে যেন বার বার ফোন দিচ্ছিলো আর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কিছু বলছিলো। ব্যাস এটুকু দেখে অথই আর আমি হতভাগ। কারন আদ্র ভাইয়া যে কোনো মেয়ের সাথে ওমন একটা জায়গায় যাবে ভাবি নি তাই ধরে নিলাম ওটা উনার গার্লফ্রেন্ড।
আমি বাড়িতে এসে কাকিমাকে সবটা বললাম। বলবোই না কেনো? আদ্র ভাইয়া সেদিন শুধু শুধু আমাকে চড় মারলো খারাপ কথা শোনালো আর আমি ছেড়ে দিবো,তা তো হবে না।

কলিংবেল বেজে উঠলো অথই গিয়ে দরজা খুলে দিতেই আদ্র ভাইয়া ওর মাথায় একটা টোকা দিকে হেসে ভেতরে ঢুকলো,উনার পেছনে আরো একটা ছেলে ও ঢুকলো। এটা আবার কে উনার সাথে এটাই ভাবছি।

আদ্র ভাইয়া কাকিমার কাছে এসে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো….সাদাফ এ হলো আমার মা আর ওইটা আমার ছোট কাকিমা।(মাকে দেখিয়ে) মা ও হলো আমার ফ্রেন্ড শুধু ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে ও আমার খুব কাছের একজন ভালো ফ্রেন্ড,স্কুলে,কলেজে একসাথেই পড়েছি বাট ভার্সিটিতে ওকে পাই নি,দেশের বাহিরে চলে গিয়েছিলো ২ দিন আগেই ফিরেছে।

সাদাফ কাকিমার সামনে এসে সালাম দিয়ে। হাসি মুখে কাকিমাকে বললো…কেমন আছেন আন্টি??

কাকিমা সালামের উত্তর নিয়ে গম্ভীর মুখেই বললো…হুম ভালো আছি। তুমি ভালো আছো তো??

হ্যা আন্টি আমি খুব ভালো আছি আদ্রর মত একটা বন্ধু থাকলে খারাপ থাকার প্রশ্নই আসে না।

ঠিকআছে বাবা তুমি আদ্রর রুমে গিয়ে রেস্ট করো আমি চা পাঠাচ্ছি তোমার জন্য। অথই যা তো সাদাফকে উপরে আদ্রর রুমটা দেখিয়ে দে।

মা আমি যাচ্ছি তো অথই তোকে যেতে হবে না।

আদ্র তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে তুই এখানেই থাক। সাদাফ তুমি যাও অথই ভাইয়াকে নিয়ে যা।

সাদাফ আদ্র ভাইয়ার দিকে একটু তাকিয়ে অথই এর সাথে উপরে চলে গেলো। আমি এতক্ষণ চুপচাপ সব দেখছিলাম,এখন কাকিমার দিকে ইশারা করে বললাম কিছু বলতে।
.
.
মা কি বলবে বলো? আর তোমাকে এত গম্ভীর দেখাচ্ছে কেনো?

আদ্র তুই আজ বিকেলে কোথায় ছিলি??

কোথায় ছিলাম মানে! তোমাকে তো বলেই গিয়েছি ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবো আর আমি সাদাফ এর সাথেই দেখা করতে গিয়েছিলাম।

তাই বুঝি তাহলে লেকের পাড়ে একটা মেয়ের সাথে কে বসেছিলো?? আরিশা অথই তো ভুল দেখে নি তাইনা?

মেয়ে মানে!! এটুকু বলে আদ্র ভাইয়া আমার দিকে তাকালো। আমি কিছু না বলে কাকিমার পেছনে গিয়ে দাড়ালাম।

মা ওরা এসে যা বলেছে সেটাই তুমি বিশ্বাস করে নিলে,আর তার জন্যই মন খারাপ করে আছো। আগে তো সবটা শুনবে নাকি।

কি শুনবো হ্যা,আজ পর্যন্ত তুই যা যা করেছিস কার সাথে মিশেছিস সব আমাকে বলেছিস,আমাকে না বললেও তোর ছোট কাকিমাকে বলেছিস। আর আজ এত বড় একটা বিষয় লুকিয়ে গেলি। ওই মেয়ের সাথে তোর কত দিনের সম্পর্ক বল??

মা এসব কি বলছো তুমি! আমার কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক নেই।

তাহলে মেয়েটি কে ছিলো??

মা বলে উঠলো আপা বাদ দাও না ছেলে বড় হয়েছে সম্পর্ক থাকতেও পারে। আদ্র তুই রুমে যা সাদাফ তোর রুমে গিয়ে একা বসে আছে।

না ছোট কাকিমা আমাকে সবটা ক্লিয়ার করতে দাও। মা শোনো হ্যা আমি লেক পাড়ে একটা মেয়ের সাথে বসে ছিলাম ওর নাম প্রিথা আর ও হলো সাদাফের গার্লফ্রেন্ড….সাদাফের সাথে ওর দু বছরের রিলেশন। কোনো একটা কারনে ওদের মাঝে ঝগড়া হয়েছিলো,সাদাফ ওর কল পিক করতো না। তাই বাধ্য হয়ে প্রিথা আমাকে কল দিয়ে বলে সাদাফের সাথে দেখা করিয়ে দিতে। পরে আমি সাদাফকে ওই লেক পাড়ে আসতে বলি আর প্রিথাকেও। সাদাফের আসতে দেরি হয়েছিলো প্রিথা আগেই চলে এসেছিলো তাই আমি ওর সাথে বসে ছিলাম। বুঝেছো এখন? নাকি সাদাফকে ডেকে এর প্রমাণ দিতে হবে??

আমি তো সবটা শুনে হা হয়ে গেছি। হায় আল্লাহ সবটা না জেনে এত বড় ভুল করলাম আমি! আদ্র ভাইয়া তো মনে হচ্ছে রেগে গিয়েছে আজ আমার কি হবে কে জানে!

মা কাকিমার দিকে এগিয়ে এসে বললো…আপা আমি তোমাকে বলেছিলাম হয়তো কোনো ভুল আছে,কিন্তু তুমি আরিশা,অথই এর তালে তাল মিলালে। এবার হলো তো ছেলেটা কষ্ট পেলো।

কাকিমা আদ্র ভাইয়ার সামনে গিয়ে নরম স্বরে বললো…আদ্র মাকে ভুল বুঝিস না বাবা,তুই তো আমার সাথে সব শেয়ার করিস তাই এ বিষয়টা শুনে খারাপ লাগছিলো।

মা এভাবে বলো না ভুল বুঝেছিলে সেটা মিটে গেছে আমি তোমাকে ভুল বুঝিনি। শুধু এটুকু বিশ্বাস রাখো তোমার ছেলে তোমাকে না জানিয়ে কোনো মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়াবে না। মা আমি এখন রুমে যাই হুম।

কাকিমা ভাইয়ার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো…আচ্ছা যা। তোদের জন্য নাস্তা পাঠাচ্ছি আমি।

আদ্র ভাইয়া চলে যেতে গিয়ে আবার ঘুরে আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো…মা তোমাদের আদরের মেয়ে আরিশাকে বলে দিও সব সময় আমরা সামনে যা দেখি তা সত্যি না ও হতে পারে,শুধু শুধু মনের রাগের জন্য অন্যকে কারো কাছে কখনো যেনো ছোট না করে।

আদ্র ভাইয়া উপরে চলে গেলো। বুঝতে পারছি আমার উপর খুব রেগে আছে,আমাকে সব সময় আরু বলে ডাকে আর আজ আরিশা বললো এতেই বুঝতে পারছি আমি ভুল করে ফেলেছি। ধুর আমার মাথায় কি কিছুই নেই? আগে আদ্র ভাইয়ার কাছে শুনে নিলেই তো পারতাম। এখন নিজেরি খারাপ লাগছে।

মা এসে আমাকে বললো…তোর কি বুদ্ধি হবে না কখনো? কম তো বড় হস নি। আদ্র তোর বড় যা দেখেছিস নিজের মাঝেই রাখতি আপার কাছে বলতে এলি কেনো? এখন তো ছেলেটাও কষ্ট পেলো,আপারো হয়তো খারাপ লাগছে।

অনু ওকে এভাবে বলিস না বুঝতে পারে নি ও। আরিশা তুই নিজের ঘরে যা এখন। এসব নিয়ে আর কোনো কথা বাড়ানোর দরকার নেই।

আপা তুমি ওকে কিছু বলতে দাও না কেনো বলোতো,ওর থেকে আমাদের অথই বেশি বুদ্ধি নিয়ে চলে। কথাগুলো বলে মা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।

কাকিমা আমার গালে হাত রেখে হেসে বললো…মন খারাপ করিস না,আমি কিছু মনে করিনি তুই উপরে যা।

আমি মাথা নাড়িয়ে চলে আসলাম সত্যি খুব খারাপ লাগছে আমার। আদ্র ভাইয়া রাগ করলো,কাকিমার ও মন খারাপ হয়েছে আর মা ও বকলো আমাকে।
.
.
রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে রুমে পানি নেই। নিচে যাচ্ছি পানি খেতে। সিঁড়ির কাছে আসতেই কাকিমাকে দেখলাম ট্রে হাতে নিয়ে উপরে আসছে।

কাকিমা আমাকে দেখেই বললো…আরিশা তোকে পেয়ে ভালোই হলো,কফির ট্রেটা নে তো আদ্র আর সাদাফ ছাদে আছে একটু দিয়ে আয়।

কাকিমা আমি যাবো? আদ্র ভাইয়া তো রেগে আছে আমার উপর।

আরে ও হয়তো ভুলে গিয়েছে তোর উপর ও রেগে থাকতে পারে নাকি। নে ধর দিয়ে আয় ঠান্ডা হয়ে যাবে।

আমি কাকিমার থেকে কফির ট্রে টা নিয়ে ছাদের দরজায় এসে দাড়ালাম। ভয় করছে আদ্র ভাইয়া যদি উনার বন্ধুর সামনে আমাকে বকে। মনে সাহস জুগিয়ে এগিয়ে গেলাম। ছাদের রেলিং ধরে সামনে তাকিয়ে দুজনে খুব হাসাহাসি করে কথা বলছে। আমি পেছনে দাড়িয়ে বললাম…ভাইয়া তোমাদের কফি।

আদ্র ভাইয়া সাদাফ দুজনেই তাকালো,আদ্র ভাইয়া রাগি গলায় বললো…তোকে কে বলেছে কফি আনতে মা কোথায়?

কাকিমা আমাকে দিলো তোমাদের দিয়ে যাওয়ার জন্য।

ওহ,ঠিকআছে রেখে যা।

আমি মাথা নাড়িয়ে ট্রে থেকে কফির কাপ দুটো রেলিং এর উপর রেখে চলে আসতে নিলে সাদাফ ভাইয়া বলে উঠলো

এই দাড়াও দাড়াও,তুমি নিশ্চই আরিশা রাইট?? আদ্র তোমাকেই আরু বলে ডাকে??

আমি একটু হেসে বললাম…হুম আমি আরিশা।

সাদাফ ওকে যেতে দে তো,আরু তুই যা।

আরে যেতে তো দিবোই আগে একটু কথা বলি,যার কথা সব সময় শুনি তার সাথে একটু কথা না বললে কি হয়। আরিশা আমিও তোমাকে আরু বলে ডাকলে মাইন্ড করবে তুমি??

না ভাইয়া ডাকতে পারেন।

ও থ্যাংকস,জানো তো আরু তোমাকে নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। তবে যতটা শুনেছি এখন তেমন মনে হচ্ছে না,তুমি নাকি অনেক বেশি কথা বলো কই এখন তো তেমন কিছুই বলছো না! তবে একটা বিষয় মিলে যাচ্ছে তোমার চেহারা তোমার চুল তোমার হাইট এর যে বর্ণনা পেয়েছিলাম সেটা মিলে গিয়েছে।

আমি অবাক হয়ে সাদাফ ভাইয়াকে বললাম…আমাকে নিয়ে অনেক কথা শুনেছেন আপনি!! আর আমার বর্ণানা কে দিয়েছে আপনাকে!! আমি তো ইমপর্টেন্ট কেউ নই।

সাদাফ ভাইয়া কিছু একটা বলতে নিলে আদ্র ভাইয়া বললো…সাদাফ তুই যদি এই বেয়াদব মেয়েটার সাথে আর একটা কথা বলিস তাহলে তোকে তুলে আমি ছাদ থেকে ফেলে দিবো। আরু তুই এখনো কেনো দাড়িয়ে আছিস যা এখান থেকে।

আদ্র ভাইয়া ধমক দিয়ে বলায় আমি কিছুটা কেঁপে উঠলাম তবে এটা ভেবে খারাপ লাগছে উনি সাদাফ ভাইয়ার কাছে আমাকে বেয়াদব মেয়ে বললো কেনো।
আমি চলে আসলাম ওখান থেকে রুমে এসে ভাবছি…সাদাফ ভাইয়া এসব কেনো বললো! কে বলেছে আমার ব্যপারে উনাকে? আদ্র ভাইয়া ছাড়া তো এ বাড়ির কেউ উনাকে চিনতো না। তাহলে কি আদ্র ভাইয়া বলেছে?? হুম হতেও পারে।
·
·
·
চলবে………………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here