তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব -১১

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১১

ঘাড়ে কারোর গরম নিঃশ্বাস আ*ছ*ড়ে পড়ায় মৃদু কেঁ*পে উঠলো আরশি। কিন্তু কিছু বলতে বা করতে পারলো না। কারণ তার হাত, মুখ বাঁ*ধা। এমনকি চোখটাও বাঁ*ধা। আরশি ভাবতে লাগলো ট্যাক্সি তে উঠার পরের ঘটনা। সে বাসার উদ্দেশ্যেই রওনা করেছিলো। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর আরশির মনে পড়ে তার মায়ের ওষুধ প্রায় শেষ। তাই সে একটা ওষুধের দোকানের সামনে ট্যাক্সি থামিয়ে ওষুধ নিতে নামে। কিন্তু দোকানে যাওয়ার পূর্বেই তাকে কি*ড*ন্যা*প করা হয়। একটা চ*ল*ন্ত গাড়ি চোখের পলকে তাকে উঠিয়ে নেয়। আর গাড়িতে উঠিয়েই চোখ, মুখ বেঁ*ধে ফেলে।

কেউ একজন ধীরে ধীরে আরশির মুখের বাঁ*ধন খুলে দেওয়ায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে আরশি। সামনের মানুষ টা কাছাকাছি থাকায় পরিচিত একটা ঘ্রাণ পায় সে। মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে যায়,

— এমপি সাহেব?

থেমে যায় সামনের মানুষটার হাত। কয়েক সেকেন্ড থ*ম*কে থেকে সামনের মানুষ টা আরশির চোখের বাঁ*ধন খুলে দিলো। অনেকক্ষন চোখ বাঁ*ধা থাকায় প্রথম কয়েক সেকেন্ড কিছুই দেখতে পেলো না আরশি। ধীরে ধীরে দৃষ্টি পরিষ্কার হলো তার। নিজের খুব কাছে পরিচিত একটা মুখ আবিষ্কার করলো আরশি। তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। আবরার কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে গলা ঝা*ড়*লো আরশি। চোখ সরিয়ে নিলো আবরার। ধীরে ধীরে আরশির হাতের বাঁ*ধ*ন খুলে দিতে লাগলো। আরশি অ*স্থি*র কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

— এমপি সাহেব আপনি আবার আমাকে কি*ড*ন্যা*প করিয়েছেন?

আবরার মনোযোগ দিয়ে দড়ির গি*ট খুলতে খুলতে বললো,

— হ্যা করিয়েছি তো?

আরশি আবরারের দিকে তাকিয়ে বললো,

— এসব করার মানে কি? আপনি বারবার কেনো এমন করছেন? আ*জ*ব তো?

আবরার গি*ট খুলে দড়ি টা ফেলে দিলো। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— ইচ্ছা হয়েছে তাই করিয়েছি কি*ড*ন্যা*প। আবার ইচ্ছা হলে আবার করাবো। তোমার কোনো স*ম*স্যা?

আরশি চোখ ছোট ছোট করে বললো,

— এই আপনি কি পা*গ*ল? শেষমেষ কিনা একজন পাবনা প*লা*তক লোক কে এমপি বানানো হয়েছে। মানে আপনি আমাকে কি*ড*ন্যা*প করিয়ে এখন বলছেন আমার কি?

আবরার ক*ড়া চোখে তাকালো আরশির দিকে। আরশি ও স*রু চোখে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। আবরার কে এখনো সেই অনুষ্ঠানে পড়া পোশাকে দেখে আরশি ভাবলো,

— লোক টা কি অনুষ্ঠান থেকে বের হয়েই আমাকে কি*ড*ন্যা*প করার পা*য়*তা*রা করেছে নাকি? দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। এহহ্হঃ তখন তো এমন ঢং করলো যেনো আমাকে চেনেই না।

আবরার আরশি কে ক*ড়া লুক দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আবরার বের হতেই পুরো রুমে চোখ বু*লা*লো আরশি। আজকে সে আগের রুমে নেই। আজকের রুম টা সুন্দর। দেখে কোনো বাংলো বাড়ির বিশাল রুম মনে হচ্ছে। সম্পূর্ণ রুম দামি দামি জিনিস দিয়ে সাজানো। আরশি কে একটা চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। দুই মিনিটের মাথায় আবার রুমে আসলো আবরার। এসে এক হাঁটু গে*ড়ে বসলো আরশি সামনে। আরশি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। ঠোঁটে আবরারের হাতের ছোঁয়া লাগতেই কেঁ*পে উঠলো আরশি। সরে যেতে চাইলেও ন*ড়ার শ*ক্তি যেনো হারিয়ে গেছে তার। আবরার আপন মনে কিছু একটা লাগাচ্ছে আরশির ঠোঁটের কোণে। আরশি বুঝলো হয়তো কোনো ওষুধ লাগাচ্ছে আবরার। অনেক জো*রে বা*ধা*র কারণে ঠোঁটের আশপাশ ব্য*থা করছিলো আরশির। আর এখন তো ওষুধ লেগে চি*ট*মি*ট করছে। আবরার কে এতো কাছ থেকে আর নিতে পারলো না আরশি। চোখ বন্ধ করে জো*রে জো*রে শ্বা*স ফেলতে লাগলো।

আরশির বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে আলতো হাসলো আবরার। ঠোঁটের কোনগুলো তে ভালো মতো ওষুধ লাগিয়ে হাত টা টে*নে রাখলো নিজের হাঁটুর উপর। আরশি ধ*প করে চোখ খুলে ফেললো। আবরার এখন মনোযোগ দিয়ে আরশির হাতের লাল হওয়া জায়গা গুলোতে ওষুধ লাগাচ্ছে। সাথে ফুঁ ও দিচ্ছে যাতে না জ্ব*লে। অ*তি*রি*ক্ত টা*ই*ট করে বাঁ*ধা*র কারণে দুই হাত ই লাল হয়ে আছে। দুই হাত ই ছু*লি*য়ে ছু*লি*য়ে গিয়েছে। আরশি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে।

আরশির কেনো যেনো একটুও ভ*য় লাগে না আবরারের কাছাকাছি থাকলে। এইতো কিছুক্ষন আগে যখন তাকে কি*ড*ন্যা*প করা হয় তখন সে মনে মনে ভ*য় পাচ্ছিলো যদিও তা বাইরে প্রকাশ করে নি। কিন্তু আবরার কে দেখা মাত্র সেই ভ*য় উ*ধা*ও হয়ে গেছে। আরশির অদ্ভুত এক বিশ্বাস জন্মেছে আবরারের প্রতি। তার বিশ্বাস আবরার তার কোনোরকম কোনো ক্ষ*তি করতেই পারে না। আরশি নিজেও জানে না তার আবরারের প্রতি এই বিশ্বাসের কারণ কি। সে তো আবরার কে ভালো মতো চেনেও না। তবুও…..

আবরার ওষুধ লাগানো শেষ করে আরশির দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো দুজনের। আরশি চোখে চোখ পড়ে যাওয়ায় অ*প্রস্তুত হলো। দৃষ্টি সরিয়ে এদিক ওদিক ফেরাতে লাগলো। কিছু টা সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে আবরার কে বললো,

— নিজে ব্য*থা দিয়ে আবার নিজেই ওষুধ লাগাচ্ছেন। ব্যাপার টা কেমন হলো না?

আবরার আরশির চোখে চোখ রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— তোমাকে আ*ঘা*ত ও করবো আমি আর ওষুধ ও লাগাবো আমি। এর মাঝে যদি অন্য কেউ ঢু*কে পড়ে বা তোমাকে আ*ঘা*ত করে তাহলে….

আবরার কথা শেষ না করেই চোখ বন্ধ করে ফেললো। যেনো নিজেকে ক*ন্ট্রো*ল করার চেষ্টা করছে। আরশি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। মনে মনে চলছে আবরার কি বলতে চাইছিলো? আবরার কে চোখ খুলতে দেখে আরশি অ*স্থির কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

— কি বলছিলেন আপনি? কথা কেনো শেষ করলেন না? আ.. র আর আমাকে আবার উঠিয়ে নিয়ে আসার কারণ কি?

আবরার বাঁ*কা হেসে বললো,

— বাকি টা তোমার না শুনলেও চলবে। আর তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে আসার কোনো কারণ নেই। বললাম না ইচ্ছা হয়েছে তাই। আর প্রথম দিন আমার সাথে যে বে*য়া*দ*বি করেছিলে মনে আছে তো?

আরশি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আবরারের দিকে। আবরার হাই তু*লে বললো,

— তোমাকে তো তার জন্য কোনো শা*স্তি*ই দেই নি। ভেবে নাও এটাই তোমার শা*স্তি। ইচ্ছা হলে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো, ইচ্ছা হলে কল দিবো। তুমি বি*র*ক্ত হবে কিন্তু…. কিন্তু কিছু করতে পারবে না। তোমাকে বি*র*ক্ত হতে দেখে আমি শান্তি পাবো। একবারে শা*স্তি দিয়ে দিলে তো কোনো মজাই পেতাম না। এভাবে শা*স্তি দিয়ে মজা আছে। ইউনিক শা*স্তি তোমার জন্য। অনলি ফর ইউ উমম…

আরশি দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— সো স*রি একটুও ভ*য় পেলাম না। তবে বি*র*ক্ত হচ্ছি ট্রাস্ট মি।

আবরার স*রু চোখে তাকালো আরশির দিকে। বললো,

— তুমি অদ্ভুত একটা মেয়ে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। একেবারে তি*তা করলা। মুখ টা খুললেই করলার রস ঝ*রে ঝ*রে পড়ে। নিজের বান্ধুবীর কাছ থেকে তো কিছু শিখতে পারো। কি সুইট মেয়ে টা।

আরশি ভেং*চি কে*টে বললো,

— আমি তি*তা করলাই। এতোই যখন সুইট দরকার মুন কে নিয়ে আসলেই পারতেন। সে তো সুইট সাথে বিউটিফুল ও। ভার্সিটি তে তো এমন ভা*ন করলেন যেনো আমাকে চেনেন ই না। হুহ।

আবরার বাঁ*কা হেসে আরশির দিকে ঝুঁ*কে বললো,

— আর ইউ জে*লা*স মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?

আবরার এভাবে ঝুঁ*কে আসায় হৃদস্পন্দন বে*ড়ে গেলো আরশির। চেয়ারের সাথে একেবারে লেগে গেলো সে। বললো,

— আমি কেন জে*লা*স হতে যাবো? জে*লা*স হতে আমার বয়েই গেছে।

আবরার হেসে দিলো আরশির কথা বলার স্টাইল দেখে। আবরার কে হাসতে দেখে নাকের পা*টা ফু*লা*লো আরশি। গাল ফু*লি*য়ে বললো,

— আপনি জানেন আপনি একটা চরম লেভেলের অ*সভ্য লোক এমপি সাহেব?

আবরার আরশির আরও কাছাকাছি যেতেই চোখ খি*চে বন্ধ করে নিলো আরশি। আবরার আলতো করে ফুঁ দিয়ে আরশির মুখের উপর পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিলো। আরশির মনে হচ্ছে তার দম টা এবার ব*ন্ধই হয়ে যাবে। আবরার আরশির কানের কাছে মুখ টা নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— আমি অ*সভ্যই মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। সবার কাছে সভ্য হলেও তোমার কাছে নাহয় অ*সভ্য হলাম।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here