তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব -১০

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১০

আবরার কে অন্যমনস্ক দেখে তাকে কনুই দিয়ে ধা*ক্কা দিলেন আব্বাস আহমেদ। আবরার চোখ ছোট ছোট করে তাকালো নিজের বাবাই এর দিকে। আব্বাস আহমেদ ফিসফিস করে বললেন,

— কি বেটা কোথায় মন হা*রা*লো তোমার?

আবরার বাবার মতোই ফিসফিস করে বললো,

— যা বলার সোজাসা*প্টা বলো বাবাই। আমার আবার কোথায় মন হারালো?

আব্বাস আহমেদ এক্সসাইটেড হয়ে হাতে হাত ঘ*ষে ফিসফিস করে বললেন,

— কাউকে মনে ধরেছে বুঝি? কাউকে পছন্দ হলে দেখাতে পারো। আমার আর ত*র স*ই*ছে না। কবে যে একটা লাল টুকটুকে বউ ঘরে তু*ল*বো উফঃ?

আবরার বাঁ*কা হেসে বললো,

— ওহ তাই বুঝি? কেন একটা বউ দিয়ে মন ভরছে না? ওয়েট করো একটু। বাসায় যেয়ে নেই। তারপর মা কে বলবো তোমার জন্য মেয়ে দেখতে। তোমার জন্য লাল টুকটুকে বউ আনার ব্যবস্থা করতে বলবো কেমন?

আব্বাস আহমেদের মুখ টা শু*কি*য়ে ছোট হয়ে গেলো। তিনি মুখ টা গো*ম*ড়া করে বললেন,

— তুমি আমার ছেলে না শ*ত্রু বলো তো? আমার সুখের সংসারে আ*গু*ন লাগাতে চাচ্ছ? আমি তো তোমার বউ আনার কথা বলছিলাম।

আবরার নিজের বাবাই কে ফিসফিস করে বললো,

— তোমাকে না বলেছি এতো বিয়ে বিয়ে করবে না? সময় হলে আমি ঠিক বিয়ে করবো।

আব্বাস আহমেদ রা*গ করে বললেন,

— আমরা ম*রে গেলে তারপর বিয়ে করবে বুঝি?

বাবার মুখে এমন কথা শুনে রা*গ হলো আবরারের। দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— আর একবারও এসব আ*জে*বা*জে কথা বলবে না। নাহলে বাসায় চলো শুধু মা কে বলবো তোমার এই বু*ড়ো বয়সে নতুন বউ লাগবে। আর জানোই তো মা আমাকে কতো বিশ্বাস করে।

বলে বাঁ*কা হাসলো আবরার। আব্বাস আহমেদ ছেলের দিকে রা*গী চোখে তাকিয়ে বললেন,

— অ*সভ্য ছেলে একটা। বাপ কে ভ*য় দেখায়। কোথায় ভ*য়ে আমার দিকে চোখ তু*লে তাকাতে পারবে না, তা না উ*ল্টো সে আমাকে ভ*য় দেখাচ্ছে।

বাবাইয়ের কথা শুনে হাসলো আবরার। কিন্তু পরোক্ষনেই হাসি গা*য়ে*ব হয়ে গেলো তার। আপন মনে বি*ড়*বি*ড় করে বললো,

— আমি এখনো তার ব্যাপারে সিওর নই। আর যদি সিওর হয়েও যাই তারপর তাকে মানাতে কতো সময় লাগবে কি জানি। সে যা চি*জ! তবে আমি তাকে জানতে চাই, বুঝতে চাই। সিওর হতে চাই তার বিষয়ে।

——

সুন্দর ভাবে বিদায় অনুষ্ঠান শেষ হলো ফাইনাল বর্ষের ছাত্র ছাত্রীদের। তবে কেউ এখনো ভার্সিটি থেকে যায় নি। সবাই ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করছে, ফ্রেন্ডদের সাথে আ*ড্ডা দিচ্ছে। আরশিরাও ক্যাম্পাসের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই ব*ক*ব*ক, হাসাহাসি করলেও এসবে মন নেই আরশির। সে উ*দা*স হয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। কিন্তু হুট করে এমন এক কা*ন্ড ঘটলো যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না আরশি আর তার বন্ধুরা।

আরশি যখন নিজ চি*ন্তা*য় ম*গ্ন তখন হুট করে একটা ছেলে এসে হাঁটু গে*ড়ে বসে আরশির সামনে। হাতে তার এক গুচ্ছ লাল গোলাপ। এই ছেলে কে চেনে আরশি আর তার বন্ধুরা। নাম সাগর। বেশ সুদর্শন আর অনেক ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। ফাইনাল ইয়ার এর স্টুডেন্ট। অত্যান্ত ভদ্র, আর চুপচাপ স্বভাবের। আরশিরা বেশ কয়েকবার পড়াশোনার ব্যাপারে সাহায্য নিয়েছে সাগরের কাছ থেকে। আরশি আর তার বন্ধুরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সাগরের দিকে। এর মাঝেই সাগর আরশির চোখে চোখ রেখে বললো,

— যেদিন প্রথম তোমরা আমার কাছে পড়াশোনার ব্যাপারে সাহায্য চাইতে আসলে সেদিন একজনের মায়ায় আ*ট*কে গিয়েছিলাম। সেই একজন টা তুমি আরশি। হ্যা তুমি। তোমার কথাবার্তা, চা*ল*চ*ল*ন সব কিছু আমাকে মুগ্ধ করে। প্রথম প্রথম মনে করতাম তেমন কিছু না। নিজের অনুভূতি কে গুরুত্ব দেই নি। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারি আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।

সাগর নিজের কথা থামিয়ে আলতো হাসলো। তারপর আবার বলা শুরু করলো,

— ভেবেছিলাম নিজের অনুভূতি কখনো তোমার কাছে প্রকাশ করবো না। কারণ আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না আর না কখনো সেরকম নজরে দেখেছো। কিন্তু আজ কেনো যেনো নিজেকে সং*য*ত করতে পারলাম না। বলে দিলাম আমি কি অনুভব করি তোমার জন্য। তোমার উপর কোনো জো*র নেই আরশি। আমি ভালোবাসি মানে যে তোমাকেও বাসতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তুমি রি*জে*ক্ট করলেও আমার কোনো আ*ফ*সো*স থাকবে না। ভালোবাসার মানুষের কাছে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে পেরেছি এই তো বেশি।

নিজের কথা শেষ করে মাথা নিচু করে ফেললো সাগর। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাগরের দিকে। আরও একজন তী*ক্ষ্ণ চোখে দেখে যাচ্ছে সব টা। সবাই কে আরও এক ধাপ অবাক করে দিয়ে সাগরের হাত থেকে ফুলের গুচ্ছ টা নিলো আরশি। আরশি কে সাগরের হাত থেকে ফুলগুলো নিতে দেখে লোক টা ধু*প*ধা*প পা ফেলে বেরিয়ে গেলো ভার্সিটি থেকে।

আরশি ফুলগুলো নেয়ায় সোজা হয়ে দাঁড়ালো সাগর। আরশি মৃদু হেসে সাগর কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— আপনি ঠিক ধরেছেন। আমি আপনাকে ভালোবাসি না আর না কখনো সেভাবে চি*ন্তা করেছি। তবে ভালোবাসা টা পা*প নয় আর না ভালোবাসা জো*র করে হয়। আমি সত্যি অবাক হয়েছি কেউ আমাকে এভাবে ভালোবাসে দেখে। এতগুলো মাস ধরে আপনি আমাকে লু*কি*য়ে ভালোবেসে এসেছেন। তবে আমি চাই না আপনার মাঝে আমাকে নিয়ে আশা জাগিয়ে রাখতে। আমি অত্যান্ত দুঃ*খি*ত কারণ আমি আপনার প্রস্তাব টা গ্রহণ করতে পারছি না। আমার জীবনে কিছু লক্ষ্য আছে, স্বপ্ন আছে। যা পূরণের জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি চাই না আমার জীবনে প্রেম ভালোবাসা আসুক। তবুও যদি কখনো চলে আসে তা হবে অ*না*কা*ঙ্খি*ত। আপনি অনেক ভালো একজন মানুষ। আপনার সাথে যতবার দেখা হয়েছে ততবারই আমার এমন টা মনে হয়েছে। আমি pray করবো আপনার লাইফে যেনো অনেক ভালো একজন আসে। আমি আপনাকে ক*ষ্ট দিতে চাই নি কিন্তু কি করবো বলুন মনের উপর যে কারোর জো*র চলে না। আমি আপনার অনুভূতি কে সম্মান করি তাই আপনার দেয়া ফুলগুলো গ্রহণ করলাম। ক্ষ*মা করবেন আমায়।

আরশি আর দাঁড়ালো না। বেরিয়ে আসলো ভার্সিটি থেকে। ভার্সিটির বাইরে আসতেই একটা কল আসলো আরশির ফোনে। ফোন রিসিভ করে এক মিনিটের মতো কথা বললো আরশি। তারপর কল কে*টে দ্রুত একটা ট্যাক্সি নিলো।

——-

আজ এতগুলো বছর পর নিজের পুরনো বাসায় পা রাখলো আরশি। যেই বাসায় তাদের সুখের সংসার গড়ে উঠেছিলো। হাজারো স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো আরশির। নিজের বাবার সাথে কতো খেলেছে এই বাড়ির আঙিনায়। অথচ এই বাড়ির উপর আজ তার কোনো অধিকার নেই।

নিজের সেই সুখের সম্রাজ্য আজ চিনতে পারছে না আরশি। বাড়িতে ঢুকার পথে নেমপ্লেটে নিজের চাচার নাম দেখে চোখ ভ*রে উঠলো তার। এখানে তো তার বাবার নাম ছিলো। অথচ এখন তার চাচার নাম জ্ব*ল*জ্ব*ল করছে। বাড়ির সামনে আগে বেশ বড় একটা বাগান ছিলো আরশিদের। আজ আর তা নজরে পড়লো না আরশির। ফুল তার ভীষণ প্রিয় ছিলো তাই তার বাবা তার জন্য অনেক ফুলের গাছ লাগিয়েছিলেন। কিন্তু এখন সেগুলোর একটাও নেই। তার বাগানের জায়গাটায় দুটো গাড়ি পা*র্ক করা।

আরশি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই তার কা*নে এসে বা*রি খেলো অনেক মানুষের কা*ন্না*র শব্দ। সে দেখলো একজন লোক কে কা*ফ*নে*র কাপড়ে মু*ড়ি*য়ে নিচে রাখা হয়েছে। শুধু মুখ টা বের করা। এই মানুষ টা আর কেউ নয় বরং আরশির চাচা।

কিছুক্ষন আগে আরশি কে তার চাচাতো বোন নাতাশা ফোন করে জানায় আরশির চাচা কে হ*ত্যা করা হয়েছে। কেউ একজন তার চাচা কে হত্যা করে বাড়ির সামনে ম*র*দে*হ ফেলে গেছে। কে করেছে এখনো কিছু জানা যায় নি। সব টা শুনে আরশি চলে আসে শেষবারের মতো বে*ই*মা*ন লোকটাকে দেখার জন্য।

আরশির চাচা লো*ভী, বে*ই*মা*ন হলেও আরশির চাচী আর চাচাতো বোন এমন নয়। যখন আরশির চাচা তাদের শেষ আশ্রয়টুকু কে*ড়ে নিচ্ছিলেন তখনও তারা দুইজন অনেক হাত পা ধরেছিলো আরশির চাচার। কিন্তু তিনি মানেন নি। লো*ভে অ*ন্ধ হয়ে স্ত্রী কে আ*ঘা*ত করেছেন, মেয়ে কে অ*কথ্য ভাষায় গা*লি*গা*লা*জ করেছেন।

আরশি লাল চোখে তার চাচার লা*শে*র দিকে তাকিয়ে বি*ড়*বি*ড় করে বললো,

— পা*প বাপকেও ছাড়ে না জানেন তো চাচা? দেখুন আজ আপনার পরিণতি। আমার বাবা আপনাকে কতোটা সম্মান করতো। আমি আপনাকে বড় বাবা, বড় বাবা বলে মুখে ফে*না তু*লে ফেলতাম এক সময়। অথচ আপনি কি করলেন? একটা এ*তি*মের শেষ আশ্রয় কে*ড়ে নিলেন যে কিনা আপনার ই ছোট ভাইয়ের মেয়ে। এক অ*ন্ধ*কা*র রাতে আমাকে আর আমার মা কে ঘর থেকে বের করে দিলেন। একবারও ভাবলেন না দুইজন মেয়ে মানুষ এতো রাতে কোথায় যাবে? রাস্তায় কতো বি*প*দ হতে পারে।

চোখ থেকে টপটপ করে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো আরশির। সে একটু থেমে আবার ভা*ঙা গলায় বললো,

— ভাবেন নি চাচা। একটুও ভাবেন নি। না জানি আরও কতো পা*প করেছেন আমাদের অ*গো*চরে। যা হয়তো আমরা জানিও না। যদি আমার স*ন্দে*হ সত্যি হয়ে থাকে তবে আপনার মতো নি*কৃ*ষ্ট ভাই যেনো দুনিয়ার কেউ না পায়।

আরশি চোখ মু*ছ*তে মু*ছ*তে বেরিয়ে আসলো বাসা থেকে। তার মুখ মাস্কের আ*ড়া*লে ছিলো তাই কেউ তাকে চিনতে পারে নি। সে আবার ট্যাক্সি ধরলো বাড়িতে যাওয়ার জন্য।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। আমি দুঃ*খি*ত এতো লেট করার জন্য। বাড়িতে মেহমান ছিলো। ফোন ধরার সুযোগ পাই নি। তা*ড়া*হু*ড়ো করে লিখেছি। জানিনা কেমন হয়েছে। সবাই ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here