তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -০২

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
#পার্টঃ২

বলতে বলতে বিষন্ন আমার একদম সামনে দারালো।ওর নিশ্বাস আমার মুখের ওপর পড়ছে।বিষন্ন আমার ওড়নাটা বুক থেকে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো।এরপর ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো বিছানায়।

বিছানায় ফেলে দিয়ে বিষন্ন শয়তানের মতো হাসছে।ওর এমন আচরনে আমার যেমন ভয় হচ্ছে তেমনি রাগও হচ্ছে। আমি বিছানা থেকে উঠতে চেষ্টা করলে বিষন্ন আমার দুই হাত চেপে ধরলো।ওর শক্তির কাছে আমি পেরে উঠতে পারলাম না।অনেক্ক্ষণ ওর সাথে হুরঝুটি করে এখন খুব ক্লান্ত লাগছে।বিষন্ন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি রাগি স্বরে বললাম

” বিষন্ন ছাড় আমায়,তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? কেনো করছিস এমন? ছাড় প্লিজ,কেউ দেখে ফেললে আমার মরণ ছাড়া উপায় থাকবে না ”

” এখন কেনো এসব বলছো? যখন সারাক্ষণ পেছন পেছন ঘুরেছিলাম,সারাক্ষণ ভালোবাসি ভালোবাসি বলতাম তখন তো খুব বকা দিতে,শাসন করতে।একবারও আমার মনের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করোনি, ”

” বিষন্ন তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি তোকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখি।আর আমি এতোদিন ভাবতাম তুই মজা করে বলতিস এসব,কিন্তু… ”

” কোনে কিন্তু নয়,অনেক সহ্য করেছি আমি।এই বিষন্নকে তুমি অনেক ঘুরিয়েছো,সেই সবকিছুর প্রতিশোধ আমি এবার নিবো ”

” বিষন্ন প্লিজ এরকম করিস না,ছাড় আমায়।হাতে প্রচন্ড ব্যাথা লাগছে ”

” লাগলেও আমার কিছুই করার নেই,এর থেকেও অনেক কষ্ট তুমি আমাকে দিয়েছো।এসব বাদ দাও,চলো তোমায় একটু আদর করি, ”

কথাটা বলেই বিষন্ন আমার মুখে আছড়ে পড়া চুলগুলি সরিয়ে দিতে লাগলো।আমি কয়েকটা চিৎকার দিতেই ওর হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলো।আমার চোখ দিয়ে শুধু টপটপ করে পানি পড়ছে।এই মুহূর্তে নিজেকে খুব তুচ্ছ লাগছে।বিষন্ন আরো কাছাকাছি আসলো।লজ্জায়,ভয়ে আমি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চোখ বন্ধ করে রইলাম।

বেশ কিছুক্ষণ হলো বিষন্নর কোনো স্পর্শ পাচ্ছি না।ভয়ে ভয়ে চোখটা হাল্কা মেলতেই দেখলাম বিষন্ন চেয়ারে পা নাচিয়ে নাচিয়ে চা খাচ্ছে।আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম।কি হলো ব্যাপারটা? ও কি অন্য কোনো মতলব আঁটছে নাকি? আমি বিছানা থেকে উঠে বসলাম।হাত খুব ব্যাথা করছে।হাত চেপে ধরায় চুরির আঘাতে হাত কালচে হয়ে গেছে।বিছানা বসে থেকেই আয়নাটা দেখা যায়।আয়নায় নিজেকে দেখে একটু অবাক হলাম।আয়নায় দেখছি আমার চুলে একটা গোলাপ,সাথে বেলী ফুলের মালা।আমি বিষন্নর দিকে তাকালাম।

বিষন্ন নিজের মতোই পা নাচিয়ে চা খাচ্ছে।এমন একটা ভাব করছে যেন কিছুই হয়নি।রাগে গা ঘিনঘিন করতে লাগলো আমার।উঠে গিয়ে ওর গালে ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দিলাম।বিষন্ন চুপ করে মাথা নিচু করে বসে রইলো।চুল থেকে বেলী ফুলের মালা আর গোলাপটা ওর মুখে ছুড়ে দিয়ে কিছু কটু কথা গজগজ করে বলে বাইরে চলে আসলাম।কথাগুলি ছিলো

” তোকে আমি এতো স্নেহ করি,আর তুই আমার সাথে এরকম জঘন্য একটা কান্ড করতে পারলি? আমার চোখের সামনে আর কখনে আসবি না তুই।আমিও আর আসবো না এই বাড়িতে।এই আসাই আমার শেষ আশা।আমার মনে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছিস তুই,কখনে ভাবিনি তুই এমন একটা কাজ করবি ”

বলে ওড়নাটা বুকে জরিয়ে স্বাভাবিক হয়ে ঘরের বাইরে চলে আসলাম।বিষন্নকে যখন এসব বলছিলাম তখন লক্ষ্য করেছিলাম বিষন্নর চোখে জল।চোখে জল তাতে কি হয়েছে? ও যে কাজটা করেছে তাতে ওর এটা প্রাপ্য।ওড়টাটা মাথায় জড়িয়ে চোখের জল মুছে দোতলা থেকে নিচে নামতেই কেউ একজন পেছন থেকে আমার হাত ধরে ফেললো।বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা বিষন্ন। আমি পেছন না ফিরেই বললাম

” খবরদার বলে দিচ্ছি আমার টার্চ করবি না ”

” মিষ্টি আমার কথাটা একবার শোনো প্লিজ? ”

” নাম ধরে ডাকছিস? তোর কি সাহস বেড়ে গেলো? সে যাই হোক আমার সামনপ যদি তোকে দেখি তাহলে তোর খবর আছে বলে দিলাম ”

” আমার কথাটা না শুনলে পড়ে পস্তাবে, প্লিজ শুনে যাও ”

ওর কোনো কথা না শুনে ওখান থেকে চলে আসলাম।রিকশায় উঠে হুট তুলে বসলাম।প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। ওরনায় মুখ ঢেকে চোখের জল ফেললাম।

হোস্টেলে পৌঁছেই সোজা ওয়াসরুমে গেলাম।গিয়ে নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না।শরীর ঘিনঘিন করছে, মুখ ভর্তি করে বমি করে শাওয়ার নিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম।কখন চোখ চোখ ভর্তি হয়ে ঘুম চলে এলো বুঝতেই পারলাম না।

ফোনের রিংটনে ঘুম ভাঙ্গলো সন্ধায়।ঘুমঘুম ঘোরে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়ে কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেলো।স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম নীলু ফোন করেছে।নীলু কান্না করতে করতে বললো

” মিষ্টি,তুই কোথায়? ”

” আমি তো হোস্টেলে,কি হয়েছে? কান্না করছিস কেনো? ”

” বিষন্ন খুব অসুস্থ, হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি,আমার খুব ভয় লাগছে,তুই আসবি? আমি বাড়িতে একাই, মা এখনো মামার বাড়িতে।মা বললো বিষন্ন বাড়িতে একা আছে,আমি যেন বাড়িতে চলে আসি।আমি এসে দেখি, তুই আসবি? ”

” ওহহ শিট,বিষন্ন কি ছোটো বাচ্চা নাকি? এরকম পাগলামি কেই করে,আচ্ছা তুই দারা আমি আসছি”

” তুই হোস্টেলের সামনেই থাক।হসপিটাল তো তোর হোস্টেলের সামন দিয়েই যেতে হবে, ওখানে উঠিয়ে নিবো তোকে ”

” আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়,আমি নিচে নামছি ”

ফোনটা রেখে দৌড়ে নিচে গেলাম।নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।যদি ওর কথা তখন শুনতাম তাহলে হয়তো ওর এমনটা হতো না।মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

কালো রঙ্গের একটা কারের ভেতর থেকে নীলু ডাকলো।আমি গাড়ির ভেতরে ঢুকে বিষন্নকে দেখে আঁতকে উঠলাম।এটা কিভাবে করতে পারলো বিষন্ন?

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here