তোমার পিছুপিছু পর্ব -০১+২+৩

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-১+২+৩

‌বর্ন দাঁড়িয়ে আছে তাদের বিশাল বড় ডুপলেক্স বাড়িটার খোলা বারান্দায়….. এই বিশাল বড় বাড়িটার এই বিশাল বড় খোলা বারান্দাটা বর্নর দ্বিতীয় প্রিয় একটা জায়গা…… বর্নর হাতে ধূমায়িত কফির মগ….. বর্ন একমনে তাকিয়ে আছে সামনের নাড়িকেল গাছটার দিকে…… নারিকেল গাছটার বড় বড় পাতাগুলোর নিচে আশ্রয় নিয়েছে দু’টা কাক…… গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে……বৃষ্টিতে ভিজে পুরোই চুইয়ে আছে কাক দুটি……. কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে….. বর্নর মনে হচ্ছে এই চুইয়ে থাকা অবস্থাটা কাক দুটো খুব উপভোগ করছে…. কারন এরা দুজন সানন্দে ঠোকাঠুকি করেই যাচ্ছে….. কিন্তু একে অপরকে ছেড়ে উড়ে যাচ্ছে না….. বর্ন ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি লাগিয়ে রেখে একমনে কাকদের ঠোকাঠুকি দেখেই যাচ্ছে…… আচ্ছা কাক কি বৃষ্টি পছন্দ করে!!!! বৃষ্টির সময় কাককে ভিজতে দেখা যায়,,,, কই অন্য কোন পাখিতো ভিজতে দেখা যায় না!!! বর্ন এবার খুব মনোযোগ দিয়ে অন্য কোন পাখি খুজতে শুরু করল……
পারভিন বেগম বেশকিছুক্ষন ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন…… ছেলেটা কি এত দেখছে মনোযোগ দিয়ে!!! ছেলেটা এত আলভোলা কেনো!!!! বৃষ্টির মধ্যে কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে….. সেই কখন পাঠানো হয়েছে কফি অথচ এতক্ষনে এক চুমুকও দেয় নি কফিতে….. মাথায় বৃষ্টির পানি পড়ছে……!! এই বৃষ্টিতে যে সাংঘাতিক সর্দি জ্বর লেগে যেতে পারে,,,,,, এই ব্যাপারে বোধহয় ছেলেটার কোন ধারনাও নেই!!! তিনি হেটে যেয়ে আস্তে করে বর্নর মাথার উপর হাতের টাওয়ালটা বিছিয়ে দিলেন……..
বর্ন মাথা ঘুড়িয়ে মা’র দিকে তাকালো….. পারভিন বেগমের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল যেনো…. এত সুন্দর হাসি কেনো আমার ছেলেটার……. পারভিন বেগম সাথে সাথে বিড়বিড় করে কিছু একটা পড়লেন তারপর ছেলের নাকে মুখে হালকা করে ফু দিয়ে দিলেন….. মা’র কান্ড কারখানা দেখে বর্নর হাসি যেনো বিস্তৃত হয়ে গেলো…..
-এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছিলিরে বাপ!!
-কাক দেখি,,মা….
-কাক!!!! কাক কি একটা দেখার জিনিস হল….. সেটাতো রোজই দেখা যায়,,!!!!!
-তুমিও তো আমাকে রোজই দেখো…… তাহলে কেনো সবসময় অমন ভাবে কেনো তাকিয়ে থাকো বলতো!!!!
-এটা কেমন কথা হল!!!! তোকে দেখা আর কাক দেখা কি এক নাকি!!!! তুই হলি রাজপুত্র,,,,, তোকে সামনে রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে দেখলেও সময় সাশ্রয়!!! আর কাক!!! কাকের কোনো ছুড়ুত বুড়ুত আছে যে,,,, এত মনোযোগ দিয়ে দেখবো!!!!
মা’র কথা শুনে বর্ন হো হো করে হেসে উঠল…..
-বৃষ্টিতে কেনো ভিজে যাচ্ছিস!!!! চল ভিতরে চল….. নরম খিচুড়ি করেছি…. গরম গরম মাছ ভাজা দিয়ে খাবি….. চল….
-তুমি যাও আমি আসছি, মা…..
-আর কত ভিজবি!!!! জ্বর বাধিয়ে ফেলবিতো পড়ে!!!
-এইতো পাচ মিনিট……
কিন্তু একমিনিটও গেলো না….. বর্ন বারান্দা থেকে ঘরের ভিতরের দিকে রওনা দিলো….. ও জানে যতক্ষন না ও ভিতরে যাচ্ছে…. মা ততক্ষন দরজার আড়ালে দাড়িয়েই থাকবে…….
#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-২

তামান্না বার বার দুই হাতের তালু একত্রে ঘষছে…. রুমটা বিশাল বড়….কারো অফিস রুম যে এতো বড় হতে পারে তা তামান্নার জানা ছিলো না….. তামান্না বসে আছে বড়সড় একটা টেবিলের সামনে…. তামান্নার বরাবরা টেবিলের অপর পাশে একটা কালো লেদার চেয়ার….. এবং চেয়ারের পিছনের দেয়ালের বড় একটা জায়গা জুরে থাইগ্লাসের জানালা….. জানালার কাচে বৃষ্টির ঝাপটা এসে পড়ছে…. এবং রুমেও এসি চলছে…. কিন্তু তামান্না এতো ঘামছে কেনো!!!!
হাতের তালু ঘেমে চিপ চিপ করছে….. কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে…. আশ্চর্য্য!!!! এতো নার্ভাস হওয়ার কি আছে!!!! সামান্য একটা ইন্টারভিউই তো!! বোর্ড এক্সাম তো আর না!!! কথায় আছে….ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইস দ্যা লাস্ট ইম্প্রেশন….. আর প্রথমেই যদি ও এমন ঘেমে জুবাজুবা হয়ে থাকে তাহলে তো ইন্টারভিউয়ার আর শেষ পর্যন্ত যাবেই না…… উহহহ!!! রিল্যাক্স তামান্না….. কিন্তু এসব চিন্তায় তামান্নার মন বুঝ মানার বদলে আরো যেনো নার্ভাস হয়ে লাফিয়ে উঠল..,,,,, তামান্না দেয়ালে ঝুলানো গ্রান্ডফাদার ক্লকের দিকে তাকালো…. ১১.৩০ বাজে…. মানে ২৫ মিনিট হতে চলল ও এসেছে….
হঠাৎ পিছনের দরজা খোলার আওয়াজ পেলো তামান্না…. কিন্তু ঘুরে তাকানোর সাহস পেলো না…. শুধু নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো….. হেটে এসে কেউ একজন তামান্নার সামনে দাড়ালো….. তামান্না মাথা উঠিয়ে তাকালো…. একজন উচা লম্বা বয়স্ক ভদ্রলোক…. মাথার আধ পাকা চুলগুলো খুব সুন্দর করে সেট হয়ে আছে…. ভদ্রলোক নিজের মিড অথবা লেট ফরটিসে আছেন… এর বেশি হবে না…… ওনার বেশ ভুশায় বেশ বুঝা যাচ্ছে,,,ইনিই মি. কাজী…. কাজী এন্ড গ্রুপস এর অওনার….. ভদ্রলোক খুব সুন্দর করে হাসলো তামান্নাকে দেখে….. ভদ্রলোকের হাসি দেখে তামান্না ছোট্ট করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো….. যাক… ইন্টারভিউ ততটা কঠিনও হবে না… যতোটা তামান্না ভেবেছিলো….. ভদ্রলোক নিজের ব্লাক লেদার চেয়ারে বসতে বসতে তামান্নাকেও ইশারায় বসতে বলল…..
তামান্না চেয়ারে বসেই নিজের সিভি এগিয়ে দিলো ভদ্রলোকের দিকে….. ভদ্রলোক খুব মনোযোগ সহকারেই সিভি চেক করলেন….. তারপর হালকা একটু কেশে শুরু করলেন…
-মিস তামান্না সুলতানা…..
একটু নড়েচড়ে বসল তামান্না…..
-আপনার সিভি অনুযায়ী আপনার এর আগে কোন জব এক্সপিরিয়েন্স নেই!?…
-জ্বী স্যার…..
-কিন্তু আমরা তো এমন কাউকে চাচ্ছি যার পূর্ব এক্সপিরিয়েন্স আছে…..
-জ্বী স্যার…. কিন্তু নতুন প্রার্থীদের যদি সুযোগ না দেয়া হয়… তাহলে তারা কিভাবে এক্সপিরিয়েন্সড হবে!!!
-ওকে…. কিন্তু আমাকে একটা ভেলিড রিসন দেখাও যে কেনো আমরা তোমাকে এই সেক্রেটারীর পোস্টটার জন্য একসেপ্ট করবো??
-স্যার আমি জানি আমার পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা নেই…. কিন্তু আমি আপনাকে এতোটুক আশ্বাস দিতে পারি যে আমি আমার কাজকে কোন প্রকার অবহেলা করবো না…. এবং যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে প্রতিটা দায়িত্ব পালন করবো….. এই জবটা আমার অনেক বেশি প্রয়োজন…. এবং মানুষ নিজের প্রয়োজনের জিনিসকে কখনো হেলায় ফেলে দেয় না….তাই আপনি আমার কাজের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন…..
ভদ্রলোক বেশ কিছুক্ষন তামান্নার দিকে তাকিয়ে রইলেন…… তামান্না কলিজা ভিতরে ডিপডিপ করছে…. কিন্তু বাহির থেকে ওকে দেখে কেউ তা বুঝবে না……
-ঠিকাছে মিস তামান্না…. আমরা আপনার সাথে পরে যোগাযোগ করবো….
একটু নিরাশ হয়ে গেলো তামান্না…… ভেবেছিলো হয়তো আজই ওনারা পুরোপুরি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিবে।
-জ্বী,,, থ্যাংক ইউ স্যার। হ্যাভ এ নাইস ডে……
নিজের সিভি নিয়ে উঠে দাড়ালো….. দরজার কাছাকাছি যেতেই ভদ্রলোক আবার পিছন থেকে ডেকে উঠলেন…..
-মিস তামান্না সুলতানা….
তামান্না জায়গায় দাড়িয়েই ঘুরে তাকালো….
-জ্বী স্যার…..
ভদ্রলোক হালকা একটু কেশে,,,, জিজ্ঞেস করলেন….
-আপনি যাওয়ার আগে….. আপনার কাছে আমার একটা ছোট্ট প্রশ্ন ছিলো…..
-জ্বী স্যার….. বলুন…
-লেটস সেয়,,,,, মিস তামান্না, ,,,,,, আমি আপনাকে যদি ২ কোটি টাকা দেই…. তাহলে আপনি কি আমার ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হবেন???
তামান্না কিছুক্ষন বোকার মত ওর জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল…. এটা কি কোন প্রকার ফ্রড কোম্পানি…… কিন্তু এতো নামী দামি একটা কোম্পানি তো ফ্রড হওয়ার কথা না….. তাহলে এটা কি ধরনের প্রশ্ন করা হল!!!! তামান্না কনফিউজড হয়ে কয়েকবার চোখের পলক ফেলল…..
-স্যার আমি ঠিক বুঝলাম না…. আপনার প্রশ্নটা!??
-এটাতো খুব সহজ একটা প্রশ্ন….. আপনাকে আমি ২কোটি টাকা দিবো…. ইন রির্টান আপনি আমার ছেলেকে বিয়ে করবেন কি না!!
এবারও ওই একি প্রশ্ন,,,,, তারমানে তামান্না ভুল শুনে নি….. মুহুর্তেই তামান্নার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো…. কিন্তু মুখে হাসি লাগিয়ে রেখেই জবাব দিলো….
-জ্বী না স্যার……
-কিন্তু কেনো!! আমার মনে হয় আমার অফারটা খুব ভালো ছিলো…..
-হতে পারে স্যার…… জব এবং টাকা দুটোই আমার প্রয়োজন….. কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমি নিজেকে বিক্রি করবো….. থ্যাংক্স ফর ইউর অফার এনি ওয়ে স্যার…..
বলেই তামান্না কোনো প্রকার উত্তরের আশা না করেই বের হয়ে গেলো…… এলিভেটর দিয়ে সোজা নিচে নেমে এসে কাচের দরজার সামনে দাড়ালো….. বৃষ্টি আপাতত একটু কম দেখা যাচ্ছে…….

তামান্না হাটতে হাটতে কাছাকাছি বাস স্ট্যান্ডের সামনে এসে দাড়ালো….. বৃষ্টির তোড় বাড়ার আগে…. বাসায় ফিরতে হবে…. দুপুরের পর থেকেই টিউশনি শুরু হয়ে যাবে…..
বাসে উঠে তামান্না জানালার পাশে একটা সিটে বসল….. আচ্ছা ওর সাথেই কি শুধু এমন হতে পারে!!! যতবার ওর মনে হয় এবার বুঝি সব ঠিক হয়ে যাবে…. ঠিক ততবার ভাগ্য খুব সুন্দর করে ওর চিন্তা ভাবনায় পানি ঢেলে দেয়…… এই চাকরীটা যে ওর কি পরিমার প্রয়োজন ছিল…. তা একমাত্র তামান্নাই জানে….. তামান্না ধরেই নিয়েছিলো এই চাকরিটা বোধহয় হয়েই যাবে….. আর এখানেই কিনা এসব ফ্রডবাজি….. চাকরি না দিতে চাইলে চাকরি না দিবি কিন্তু তোদের এসব আউল ফাউল প্রশ্নের কি মানে!!! ব্যাটা বদ……হঠাৎ পাশ থেকে গুতাগুতির যন্ত্রণায় তামান্না পাশে ফিরে তাকালো…. পাশের সিটে এক অতি ভদ্রলোক নিজের ভুড়ি নিয়ে বিছিয়ে বসে আছেন…. এবং কিছুক্ষন পর পর সানন্দে তামান্নাকে নিজের কুনই দিয়ে গুতিয়ে যাচ্ছেন…… ওমা!!!! ব্যাটার আবার কি সাহস আড়চোখে আবার তামান্নাকে চেক করছে বারবার…….
মুখ তিতা হয়ে এলো তামান্নার……জানালা দিয়ে মুখ বের করে থু করে এক দলা থুতু ফেলল তামান্না…… পাশের অতিব ভদ্রলোককে কিছু একটা বলতে যেয়েও বলল না….. আজকের দিন এমনিতেই যথেষ্ট খারাপ গেছে…. আর খারাপ করার মানে হয় না….. তাছাড়াও তামান্না এর চেয়েও খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে….. তাই এখন এ নিয়ে হাউকাউ করতে মন চাইছে না…. তামান্না আরো একটু জানালার দিকে সড়ে বসল…… ওর মাথায় এখন অনেক চিন্তা…. ছোট বোন…. মা…. কিভাবে এদের সাপোর্ট করবে…. টিউশনি গুলোও ততটা ভালো না…… এতো কঠিন কেনো জীবনটা……. পরীক্ষার দুই একটা প্রশ্নের মত মাঝে সাঝে একটু সহজ হতে পারে না!!!

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-৩

জনাব কাজী মিলন সাহেব বসে আছেন পেপার হাতে….. এক কাপ চায়ের অপেক্ষা করছেন….. এই অপেক্ষা ব্যাপারটা তার একদমই ভালো লাগে না….. বরাবরই বিরক্তিকর….. কিন্তু তার ওয়াইফ পারভিন বেগমকে তিনি বারবার বলেও পাংচুয়েল করতে পারেন না….. কোন কাজেই পারভিন বেগম সময়মত উপস্থিত হতে পারেন না….. এই যে সামান্য এক কাপ চা…. যার জন্য মিলন সাহেব গত সাড়ে সাত মিনিট যাবৎ বসে আছেন…. অথচ তার ওয়াইফের কোন খোজ খবরই নেই………
মিলন সাহেব ভ্রু কুচকে আবারো হাত ঘড়ির দিকে তাকালেন……. অপেক্ষা যখন চূড়ান্ত পর্যায় পৌছালো তখন পারভিন বেগম চায়ের কাপ রাখলেন সামনের গোল কফি টেবিলটায়,,,,,,মিলন সাহেব স্ত্রীর দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকালেন….. কিন্তু কিছু বললেন না….. দিনের শুরুটা তিনি শান্তিতে কাটাতে চান……
পারভিন বেগম চায়ের কাপ রেখে স্বামীর পাশের সিংগেল সোফায় বসলেন……
-এই শুনছো!!! কিছু কথা বলার ছিলো…..
মিলন সাহেব কিছুই বললেন না…. এমনকি নিউজপেপার থেকে চোখও সড়ালেন না…… একমনে চায়ের কাপে চুমুক দিতে লাগলেন…..
স্বামীর স্তব্ধতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই পারভিন বেগম বলতে শুরু করলেন…….
-ছেলেটাকে নিয়ে আমার আজকাল খুব বেশি টেনশন হয়….. এত্ত আলভোলা মানুষ হয় বলোতো….. আমার এই ছেলেটা যুগের সাথে কিভাবে তাল মিলিয়ে চলবে বলতো….
-সবকিছুতে ওভার রিয়েক্ট করা তুমি কবে বন্ধ করবে বলোতো….!?
-আরে কি বলো..… কিসের ওভার করছি….. তুমি তো সারাদিন বাসায় থাকো না…. তাই কিছু দেখোও না…. সেদিন আমি দেখি কি বৃষ্টিতে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাক দেখছে….. বলতো কাক কি দেখার মত কিছু হলো!!!! আবার গতকাল দেখি চোখ বন্ধ করে কানা ভুতের মত সারাবাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে….. দুইবার দুই দেয়ালে মাথা ঠুকেছে,,,,,,জিজ্ঞেস করতেই বলে,,,, মা একটা থিওরি প্রমাণ করার চেষ্টা করছি!!!! দেখো দেখি এখন অবস্থা…..
-তো!!! এগুলো তো ওর সাধারণ কাজ কারবারের মধ্যেই পড়ে……
-ধুর তুমি বুঝতে পারছো না……. আগের কথা আর এখনকার কথা কি এক হল!!!! আগে ছোট ছিল…. এখন বড় হয়েছে…. বিয়ের বয়স হয়েছে…. এখন কি এসব করলে হয়!!!!
স্ত্রীর এতক্ষনের ভ্যাজর ভ্যাজরের আসল উদ্দেশ্য মিলন সাহেব এখন বুঝলেন। ছেলের বিয়ে বিয়ে করে মাথার পোকা নাড়িয়ে ফেলছে……
-পারভিন….. ছেলেকে ওর মত থাকতে দাও….. মাস্টার্স কম্পলিট করেছে কয়েক মাস হলো মাত্র….. এবার ওকে একটু ফ্রিলি চলতে দাও..…… আর বিয়ের কথা বলছো!!!!! আগে ওকে নিজের বিজনেসে জয়েন করতে দাও….. সেটেল হতে দাও….. এরপর বিয়ে….
-মানে কি!!! তুমি কি চাও,,,,,, বুড়া বয়সে ছেলেকে বিয়ে দেই!!! এই চাও তুমি!!!!
-আমি কি তাই বলছি!!!
-তুমি কি বলছো না বলছো জানি না…… কিন্তু আমি আমার ছেলের বিয়ে এই বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ করতে চাই… দশটা না পাচটা একটা মাত্র ছেলে আমার….. তুমি আর তোমার ছেলের বিজনেস তোমরা জানো….. এই নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে আসবে না…. আর বিয়ের ব্যাপার আমাকে হ্যান্ডেল করতে দাও,।
বলেই পারভিন বেগম উঠে ভিতরে চলে গেলেন…..
সোজা রান্না ঘরে গিয়েই থামলেন পারভিন বেগম….. রান্না ঘরে জরজরি খাতুন পরোটা ভাজচ্ছেন…… পারভিন বেগম চুলার কাছে গিয়েই আতকে উঠলেন…..
– জরজরি এই পরোটা তুমি কার জন্য ভাজচ্ছো!?
-কেনো ছুডো স্যারের লাইগা….
-তোমাকে কতবার বলেছি জরজরি….. বর্নর পরোটা এরকম তেলে ডুবিয়ে ভাজবে না……তাও তুমি বারবার একই কাজ করো…..
-সোরি আম্মা…. আমার মনেই থাকে না…. আম্মা আমরার বাইত তো সবতে তেলে ভিজা পরোটাই খাইবার চায় বেশি…. তাইলে মনে করেন গায়ে গতরে বল পাইবো বেশি…… আমিতো…..
-হয়েছে…. থামো…. আর ব্যাখ্যা শুনাতে হবে না…. তুমি টেবিলে নাস্তা লাগাও… পরোটা আমি ভেজে নিয়ে আসছি……

তামান্নার ঘুম ভাংলো ওর মামির চিৎকার চেচামেচি শুনে….. একজন মানুষ অহেতুক কি পরিমান চিৎকার চেচামেচি করতে পারে তা তামান্না নিজের মামিকে না দেখলে বুঝতে পারতো না…… এই মহিলার জন্য হাউকাউ চেচামেচি যেনো অক্সিজেনের মত জরুরি!!!! তামান্নার বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চাইছে না…. গতরাতে ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় তিনটা….. আর এখন বাজে মাত্র আটটা…… ভার্সিটির ক্লাসেও যাওয়া হয় না…. সুতরাং এত সকালে উঠার কোন মানে নেই….কিন্তু তারপরও উঠতে হবে……
তামান্না ওর ছোট্ট ঘুপচিখানা থেকে বের হতেই মামির মুখে পড়ে গেলো…. বেশ বুঝা যাচ্ছে…. আজকের দিনটাও খারাপ যাবে….. বড়সড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তামান্না যুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিলো…..

নীলময়ী নিজের হাতের লাটিমটায় ফিতা পেচালো……. তারপর সেটাকে উলটো করে মাটিতে ছুড়ে মারলো…… এবং লাটিমটা প্রতিবারের মত এবারও ফ্লোরে পড়ার সাথে সাথে ঘুরতে শুরু করল…. নীলময়ীর মুখে ফুটে উঠল একটা গর্বময় হাসি..….. সেই হাসি মুখে লাগিয়ে রেখেই পাশের প্লেটে রাখা চিকেন বার্গারটা হাতে নিয়ে বেশ বড়সড় একটা কামড় বসালো তাতে…… আজকে একটা বিশেষ দিন…..দারোয়ানের ছেলেটা ওকে মার্বেল খেলায় চ্যালেঞ্জ করে গেছে গতকাল…. নীলময়ীও চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করেছে…. আজকে সেই খেলা অনুষ্ঠিত হবে…. বাড়ির পিছনের গার্ডেনে….. যেভাবেই হোক নীলময়ীকে জিততেই হবে…… নীলময়ী ট্রাওজারের পকেটে হাত দিয়ে মার্বেল গুলো চেক করে নিলো……. তারপর হালুম করে বার্গারে আরেকটা কামড় বসালো….।

(আসছে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here