তোমার পিছুপিছু পর্ব -০৪+৫+৬

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-৪+৫+৬

বর্ন বসে আছে নিজের রুমে। হাতে একটা বেশ মোটাসোটা বই…..”The 100 A Ranking of the Most Influential Persons in the History” বর্ন খুব মনোযোগ দিয়ে বইটা পড়ছে….. ওর রুমে বিশাল বড় একটা বুকসেল্ফ,,,,, যা বিভিন্ন প্রকার বই দিয়ে ভর্তি….. বুকসেল্ফ ছাড়াও ওদের বাসায় একটা ছোট্ট লাইব্রেরী আছে……দিনের মধ্যে বর্ন বেশিরভাগ সময় হয় নিজের রুমে নয়ত লাইব্রেরীতে কাটায়,,,,,
এখনও তার ব্যাতিক্রম নয়…. ডিনারের পর ওর সাথে সাথে ঘুম আসে না….. এই সময়টুকু ও বই পড়েই কাটায়…..
মিলন সাহেব ছেলের রুমের দরজার সামনে এসে দাড়ালেন…. দরজাটা হালকা করে চাপানো….. কিন্তু তিনি বেশ দেখতে পারছেন ছেলে বসে বসে বই পড়ছে….. ছেলের রুমে যাবেন কি যাবেন না তাই ভাবছিলেন….
-বাহিরে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো বাবা!?…
মিলন সাহেন দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলেন…. বর্ন তখনো বইয়ের ভিতরে মুখ ডুবিয়ে। মিলন সাহেব যেয়ে সোজা ছেলের বিছানায় বসলেন….. বর্ন বই থেকে মাথা উঠিয়ে বাবার দিকে তাকালো….এবং খুব সুন্দর করে একটা হাসি দিলো…
-কেমন আছো বাবা!?…..
-যেমন তুই আছিস,,,,,,
-ঘুম ঘুম আছি, বাবা।
-সেটা আবার কেমন?
-মানে ঘুম আসছে আবার চলে যাচ্ছে….. এমন।
-বিছানায় শুয়ে পড়লেই পারিস…. দেখবি একটু পর ঘুম চলে আসবে….
-উহু…. হয় না বাবা….. পুরোপুরো ঘুমে ঢুলতে শুরু না করলে…. বিছানায় গেলেও আমার ঘুম আসে না….
-এটা আবার কেমন কথা….. আগে বলিস নি কেনো!?… ডক্টরের সাথে একটা এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখি……
-আরে আরে…. বাবা… তুমি উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছো কেনো!!!! আর এটা কোনো রোগ না বাবা….. আমি যাস্ট টায়ার্ড না…. তাই সহজে ঘুম আসতে চায় না….. আমি যদি ক্লান্ত থাকতাম তাহলে ঘুম চোখের উপর ঘুর ঘুর করত……..
-ওহ….
-কি বলতে এসেছিলে বাবা?
-না…. মানে….. আসলাম… তোকে দেখতেই…. সারাদিন দেখি না… তাই আর কি…..
-রোজ সকালেই তো অফিসে যাওয়ার আগে তুমি দেখা করে যাও। আমি ঘুমিয়ে থাকলেও দেখে যাও….তাহলে!!!
-আবার দেখতে আসলাম….. কেনো সকালে দেখলে কি রাতে দেখতে পারি না!?…
এই পর্যায়ে বর্ন হাতের বই বন্ধ করে পাশের টেবিলে রাখলো…ঘুরে সোজা হয়ে বাবার দিকে তাকালো..
-কি হয়েছে বাবা…… এনিথিং রং?
-না….. আসলে..…. তোর তো মাস্টার্স কমপ্লিট….. তাই ভাবছিলাম…. তোর কোম্পানি তো তৈরিই…… তাই আর কি….
-বাবা তুমি এত টেনসড হয়ে যাচ্ছো কেনো!?….
-আসলে তুই বিজনেসে জয়েন করার আগে আমার কাছে সময় চেয়েছিলি আমি জানি….. তোর এখনই জয়েন করতে হবে না… তুই যাস্ট এখন একটু যাওয়া আসা করলি আর কি…..পরে যখন সম্পুর্ণভাবে দ্বায়িত্ব নিতে পারবি বলে মনে হবে তখন জয়েন করিস…… তো….. আমার সাথে যাবি একদিন… তোর কোম্পানি দেখে আসবি…
-বাবা আমি যাবো……
-আগামী রবিবার যাবি??
বর্ন মাথা ঝাকিয়ে বলল..” যাবো”
মিলন সাহেবের মনে হল অনেক বড় একটা পাথর নেমে গেল তার বুকের উপর থেকে….. তিনি কখনোই কোন ব্যাপারে ছেলেকে জোর করেন নি….. ছেলের মতামতই তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন…..

তামান্না মাত্র একটা টিউশনি শেষ করে বের হয়েছে… তখনই তার ফোন বেজে উঠল…. একটা আননোন নাম্বার….. রিসিভ করবে না করবে না ভেবেও রিসিভ করল।
-হ্যালো,, মিস তামান্না সুলতানা বলছেন…
ফোনের ওপাশ থেকে এক চিকন কন্ঠী নারীর প্রশ্ন শোনা গেলো….
-জ্বী,,, আমি তামান্না সুলতানা…
-মিস সুলতানা,,, আগামীকাল সকাল ৯টায় কাজী এন্ড গ্রুপসে আপনাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
তামান্না একটু অবাক হলো…. কিন্তু একটু বেশি পেলো ভয়। সেদিন ওভাবে মুখের উপর জবাব দিয়েছে বলে কি….. আবার ওকে ডাকা হচ্ছে। নিশ্চয়ই সেদিন ওভাবে মুখের উপর জবাব দেওয়াতে উনি রেগে গিয়েছেন। কিন্তু আবার ওকে ডেকে নিয়ে গিয়ে অপমান করবে!!!
-জ্বী কিন্তু,,,, কারনটা জানতে পারি!?
-এই সম্পর্কে আমরা আপনাকে কিছু অবগত করতে পারছি না।
-জ্বী আচ্ছা।
-ধন্যবাদ।
তামান্নার নিজের চুল নিজের ছিড়তে মন চাইছে। সেদিন এত ফডং ফডং করার কি দরকার ছিলো!!!! এখন যে খাল কেটে কুমির সহ কুমিরের চোদ্দ ঘুষ্টি ডেকে নিয়ে আসলাম!!!! ইয়া আল্লাহ…. কিছু একটা করো…… আল্লাহগো…. ওভাবে অপমান করার জন্য আবার জেলে দিয়ে দিবে নাতো!!!! তামান্না ঘামতে শুরু করল…..

নীলময়ী ছাদে দাঁড়িয়ে ঘুড়ির নাটাইয়ে ঘুড়ির সুতা পেচাতে ব্যস্ত…… আজকে যেভাবেই হোক ঘুড়ি উড়ানো শিখতেই হবে। দারোয়ানের ছেলে সজিব আবার এসব ব্যাপারে খুব এক্সপার্ট। এমন কোন আউটডোর গেম নেই যা ও জানে না। তাই নীলময়ী আজ ওকে…. ঘুড়ি উড়ানো শিখানোর জন্য হায়ার করেছে….. তাও এতো সহজে না…. পার আওয়ার ১০০ টাকা করে দিতে হবে….. কি পরিমান চালু… এতটুক বয়সেই…. ভাবলেই নীলময়ী অবাক হয়ে যায়!!!
-গুড ইভনিং ইয়াং লেডি……
-গুড ইভনিং ওল্ড ম্যান……
-তা কি নিয়ে এমন গুটুর গুটুর চলছে….
-নাটাই সূতা নিয়ে, বাবা…..
– ঘুড়ি উড়ানো কবে থেকে শিখলি!?…
-শিখি নি… আজ শিখবো…. দারোয়ান কাকার পিচ্চি ছেলেটা আছে না..… ও শিখাবে..
-তাই নাকি!!! তা কই তোর টিউটরকে দেখছি না যে….
-আসবে….না আসলে খবর করে ছাড়বো না…. পার আওয়ার ১০০ টাকায় ঠিক করেছি…..
-কি বলিস!!! বাপরে!!! এত ডিমান্ড….. এর চেয়ে ভালো…. আমিই তোকে শিখাতে পারি..… তুই আমায় বললেই পারতি….
নীলময়ীর চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল…
-সত্যি বাবা!!!
-হুম…. দেখি… নাটাইটা দে দেখি…
-ইয়েএএ…
-তুই পার আওয়ার আমাকে ৮০ টাকা করে দিস….
নীলময়ী হা করে রইল…
-বাবা…. আমি তোমার আপন একমাত্র মেয়ে!!! তুমি আমার কাছে টাকা চাইছো!!!
-অবশ্যই…. ভুলে গেলে কি চলবে…. আমি একজন বিজনেসম্যান…. এন্ড টু মি টাইম ইস মানি…..
-ও মাই গড…. শেষ পর্যন্ত নিজের আপন বাবা ও!!!! কি নিষ্ঠুর এই দুনিয়া!!!!
মেয়ের কথা শুনে মাহমুদ সাহেব হো হো করে হেসে উঠলেন…..

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-৫

তামান্না ঘাড় ঘুড়িয়ে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে….ও বসে আছে পরিচিত সেই রুমে…. যেখানে কিছুদিন আগেই সেই ভয়াভহ ইন্টারভিউ ঘটেছে। আজকেও ভয়ে ওর হাত পা ঘামাচ্ছে….. বেশকিছুক্ষন বসে থাকার পর… জনাব কাজী রুমে প্রবেশ করলেন…. তামান্না সাথে সাথে উঠে দাড়ালো…. তামান্না ভেবেছিলো উনি হয়ত রুমে এসেই হাউকাউ শুরু করে দিবেন… বকাঝকা করবেন…. কিন্তু তামান্নাকে অতিমাত্রায় অবাক করে দিয়ে জনাব কাজী হাসি হাসি মুখ করে তামান্নার সামনের ব্লাক লেদার চেয়ারটায় বসলেন….
-মিস তামান্না সুলতানা,,,, কেমন আছেন?
-জ্ব,,জ্বী স্যার,,,,এইতো ভালো….
-হুম… তো মিস সুলতানা,,,, আপনি কি জানেন কেনো আপনাকে আজ আবার ডাকা হয়েছে….?
-……… কারন…….. সেদিনের বাজে ব্যবহারের জন্য আপনি আমার উপর রেগে আছেন………… তাই!!!
-কিন্তু…. আমি তো আপনার উপর রেগে নেই!!!
-আপনি রেগে নেই!!!!!…….. কিন্তু!!!! তাহলে…. আজ আমাকে ডাকা হলো যে!!!
-আপনাকে ডাকা হয়েছে…… বিকজ ইউ হেভ গট দ্যা জব….. কংগ্রাচুলেশনস……
বড় বড় চোখ করে তামান্না তাকিয়ে রইল,,,,,কাজী সাহেবের দিকে…..
-আ…. আমি….. মানে…..সত্যি!!! আমি জবটা……..
-জ্বী….. আপনি পরীক্ষায় পাস করেছেন…বিধায়,,,আপনাকে চাকরিটা দেওয়া হয়েছে…….
-আমি ঠিক বুঝলাম না স্যার… কোন পরীক্ষার কথা বলছেন!!!!
-মিস সুলতানা…. আপনার হয়ত মনে আছে…. আপনি ফিরে যাবার সময়,,,, আপনাকে আমি একটা প্রশ্ন করেছিলাম……।
সেই ভয়ানক প্রশ্নের কথা মনে পড়তেই তামান্নার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো…..
-জ্বী,,,জ্বী স্যার মনে আছে….।
-জ্বী,,,,সেটাই ছিলো আপনার পরীক্ষা…
তামান্না শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল,,,,
-মিস সুলতানা…. আপনি আমার ছেলের এক্সিকিউটিভ এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করবেন। এই পোস্টের জন্য আমার অবশ্যই এমন একজন এমপ্লয়ি প্রয়োজন…. যে প্রফেশনালি কাজ করবে….. আমার ছেলের সাথে পারসনালি ইনভলভ না হয়ে…. আপনি কি সিচুয়েশানটা বুঝতে পারছেন…..
তামান্না কিছুক্ষন চুপ থেকে…. বলল
-জ্বী স্যার আমি বুঝতে পারছি….. আপনি নিশ্চিতে থাকতে পারেন…… আমি সম্পূর্ণ অনেস্ট এবং প্রফেশনালি কাজ করবো…. কাজের বাহিরে আমার আর কোনো ইনটেনশন থাকবে না।
-জ্বী,,,, এটাই কারন আপনাকে একসেপ্ট করার।আমি আশা করি আপনি কখনো আমাকে অভিযোগের সুযোগ দিবেন না।
-জ্বী স্যার…… আমি আগেও বলেছি এই জবটা আমার অনেক বেশি প্রয়োজন। আর মানুষের অধিক প্রয়োজনীয় জিনিস সে কখনো হেলায় ফেলে দেয় না…….। ধন্যবাদ স্যার…..
-ধন্যবাদ আপনাকে…… টু বি ইন্টারেস্টেড ইন দিস জব… নট ইন মাই সান…..
বলেই জনাব কাজী মৃদু হাসলেন।
-মিস সুলতানা…. আসলে…. আমার ছেলেটা একটু অন্যরকম….. তাই আমি কোন প্রকার রিস্ক নিতে চাই না…..
তামান্না একটু নড়েচড়ে বসল। অন্যরকম!!!!! অন্যরকম কিরকম!!! লুইচ্চা টুইচ্চা নাকি রে বাবা!!!!
-জ্বী স্যার ঠিক বুঝতে পারলাম না!!!
-আমার ছেলেটা অনেক বোকা সোকা,,,,, বর্তমান যুগের পরিস্থির সাথে ওর কানেকশন কম। তাই আমাকে অবশ্যই সাবধান থাকতে হয়….. তাই সেদিন ওরকম একটা প্রশ্ন করা……
-ইটস ওকে স্যার..…. আমি বুঝতে পারছি…..

বর্নর আজ কোম্পানি ট্যুরের দিন….. অর্থাৎ আজ ও বাবার সাথে নিজের কোম্পানিতে যাবে….. মা একটু ঘাই গুই করলেও…. বর্ন কিভাবে কিভাবে ওর মা’কে রাজি করিয়েছে…. মিলন সাহেব তা বুঝে পারেন না।বর্ন খুব হাসি হাসি মুখ করে… গাড়িতে বসে আছে….পাশেই মিলন সাহেব……বর্ন খুব মনোযোগ দিয়ে জানালার বাহিরে রাস্তার দৃশ্য পর্যবেক্ষন করছে….. গাড়ি এসে থামলো মতিঝিলের ব্যস্ত রাস্তার পাশে। গাড়ি থেকে নেমেই বর্ন নিজের অফিসের মুখোমুখি হল।

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-৬

দীর্ঘ চার ঘন্টার ননস্টপ অফিস ট্যুরের পর মিলন সাহেব আর বর্ন এসে বসেছে অফিসের ক্যান্টিনে। এই দীর্ঘ চার ঘন্টায় বর্নর মুখ থেকে এইমুহূর্তের জন্যও হাসি উধাও হয় নি। মিলন সাহেব বার বার আড়চোখে ছেলের দিকে তাকিয়েছেন,,,,, কিন্তু প্রতিবারই ছেলেকে হাসি মুখেই দেখেছেন। বর্ন অতি বাধ্য এবং আগ্রহী ছেলের মত অফিসের প্রতিটা স্টাফ এবং প্রতিটা ডিপার্টমেন্টের সাথে পরিচিত হয়েছে। মিলন সাহেবের মাঝে মাঝে মনে হয় তার পাগলা ছেলেটা বোধহয় কাদতেই জানে না। ছোটবেলা থেকেই বর্ন খুব বুঝদার…… আচ্ছা… বর্ন শেষ কবে কেদেছিলো!!!! মিলন সাহেব চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করলেন। এইমুহুর্তে বর্ন কান্না করার যেই ঘটনা মনে পড়ছে,,,,তা ছিলো বর্ন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময়কার ঘটনা। ঘটনা তেমন বড় না…… বর্নর ছোটবেলার সবচেয়ে প্রিয় খাবার ছিলো নুডুস….. কিন্তু ও নিজের এই অতি প্রিয় খাবারটা ঠিকমত উচ্চারণই করতে পারতো না….. ওর জন্য নুডুস ছিলো তুতুস…. এভাবেই একদিন বাড়িভর্তি মেহমানের সামনে নুডুসকে তুতুস বলায়… সবাই হো হো করে হেসে উঠে…… এবং নিজের ভুল উচ্চারণে অতিমাত্রায় লজ্জা পাওয়াই ছিলো বর্নর কান্না করার কারন।
সেই ঘটনা এখন আবার মনে পড়ায় মিলন সাহেবের মুখে আবার মুচকি হাসি ফুটে উঠল। উনি চোখ মেলে ছেলের দিকে তাকালেন…..
বর্ন নিজের চায়ের কাপের মাথায় আংগুল বুলিয়ে যাচ্ছে…. কিন্তু চুমুক দেয় নি…. ওর দৃষ্টি আবদ্ধ জানালার বাহিরে। দিন কালো করে আছে ভারি মেঘে…. একটু পর পর গুড়ুম গুড়ুম করছে…. আর দমকা বাতাস বইছে……
-কিরে তুতুস বাবা…. কি ভাবচ্ছিস….!!??
বর্ন বাবার দিকে তাকালো….. লজ্জা এবং দুষ্টুমি মিশ্রিত একটা হাসি দিলো।
-তোমার এখনো মনে আছে….. বাবা!!!
-অবশ্যই……. একটা মাত্র ছেলে আমার তুই……. তোকে ঘিরে অতি ছোট থেকে ছোট ঘটনাও আমার মনে আছে…….
-তাহলে তো বলতে হয়…. তোমার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো….
-হুম,,,,,তা বলতে পারিস….. আফটারঅল আই এম এ বিজনেসম্যান……..
-বাবা মা কিন্তু হাউসওয়াইফ….. কিন্তু মা’র স্মৃতিশক্তিও খুব ভালো…..
-ওরে বাবারে!!! তোর মা’র সাথে আমার তুলনা হয় নাকি!!! তোর মা’তো ৫০০ পর্বের হিন্দি সিরিয়াল পানির মত মুখস্ত বলে যেতে পারবে……….
বলেই নিজেই হাহা করে হাসতে শুরু করলেন…. সাথে যোগ দিলো বর্নও….. কিন্তু মনে মনে বলল
“সরি মা…. কিন্তু কথাটা সত্য ছিলো”
অফিস থেকে বের হয়ে মিলন সাহেব নিজের গাড়িতে উঠলেন…… আর বর্ন উঠল নিজের….
মিলন সাহেব এখন নিজের অফিসে যাবেন বিধায়…. বাসা থেকে ফোন দিয়ে বর্নর গাড়ি আনানো…..
বর্ন গাড়িতে উঠার কিছুক্ষন পর বলল….
-সালাম চাচা,,,গাড়ি নিয়ে একটু নীলক্ষেত চলুন তো…..
-জ্বী….. আচ্ছা স্যার।
গাড়ি নীলক্ষেত বইয়ের দোকানগুলোর সামনে এসে দাড়ালে….. বর্ন গাড়ির বাহিরে এসে দাড়ালো…..
-স্যার,,,, আপনে কেনো বাইর হচ্ছেন…..?? আমাকে বলুন কি কি বই লাগবে… আমি যায়ে নিয়ে আসছি……
সালাম মিয়ার অতি শুদ্ধভাষা শুনে বর্ন হালকা মুচকি হাসলো…. পারভিন বেগমের কড়া নির্দেশ ছিলো বর্নর সামনে সবসময় শুদ্ধভাষায় কথা বলতে হবে….. এবং তাদের বাড়ির এই মানুষ গুলো অর্থাৎ জরজরি বেগম.. সালাম মিয়া আর বাগানের মালী কুদ্দুস মিয়া অতি সততার সাথে এখনো পর্যন্ত সেই আদেশ পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন….
-চাচা বইগুলো দেখে কিনতে হবে….. আপনি বুঝবেন না যে…..
-কিন্তু স্যার…………….
সালাম মিয়া পুরো বাক্য শেষ করার আগেই পিছন থেকে অন্য গাড়ি হর্ন বাজানো শুরু করল…..
-স্যার আপনি এখানে একটু সময়ের জন্য খাড়ান…. আমি গাড়িটা এক সাইডে পার্ক করে আসি……
সালাম মিয়া গাড়ি ঘুরালে… বর্নও ঘুরে দাড়ালো…..ঢাকা ভার্সিটির ছাত্র হওয়ার সুবাদে… নীলক্ষেত এর আগে দেখে থাকলেও বর্ন কখনো নিজে এসে বই কিনে নি….. এর আগে যত প্রকার বই প্রয়োজন ছিল…. ওর বাবার ম্যানেজার সোলাইমান সাহেবই সব বই নিয়ে যেতেন ওর কাছে…… কিন্তু আজ বর্ন নিজের এই ছোট দ্বায়িত্বগুলো নিজেই সম্পুর্ণ করতে চায়…. অনেক বড় কোন দ্বায়িত্ব নেওয়ার পুর্বে ছোটখাটো নিজের দ্বায়িত্বগুলো নিজেরই পূরণ করা প্রয়োজন।

তামান্নার মেজাজ চূড়ান্ত পর্যায়ের খারাপ হয়ে আছে….. ১৫০০ টাকা দিয়ে বইগুলো এই নীলক্ষেত থেকেই কিনা হয়েছিলো…. আর এখন যখন বিক্রি করতে এলো তখন ধরিয়ে দিলো কত…!!!! ৫০০ টাকা!!!! ১৫০০ টাকার অর্ধেকও না….. এর আগের দোকানদার তো ৩০০ ধরিয়ে দিতে চাইছিলো..… তামান্না বুঝে পায় না…. ৭ মাসে বইগুলোর কি এমন পরিবর্তন হয়ে গেলো…. যে দোকানদার সব বই দেখেই নাক ছিটকানো শুরু করল….. তামান্না চোখ কান বন্ধ করে দোকানদারকে ভয়ানক দুইটা গালি দিলো…… মেজাজ খারাপের আরো একটা কারন হল…. বৃষ্টি….. যখন বইয়ের দোকানগুলোর ভিতরে গেলো… তখন কেবল মেঘ করতে শুরু করেছে…. তামান্না ভেবে রেখেছিলো দ্রুর কাজ সেড়ে বাড়ি চলে যাবে…… কিন্তু ভাগ্যের কি নিরমম পরিহাস…..
তামান্না নিজের ছাতা খুলে ফুটপাতে ধরে হাটতে শুরু করল….. পুরোপুরি ভিজে যাওয়ার আগে বাস ধরা প্রয়োজন। বেশকিছুদূর হাটার পর তামান্না মোড় ঘুরে একটু দাড়ালো…. বৃষ্টির তেজ বাড়ছে…. হঠাৎ পিছন থেকে কেউ ডেকে উঠল…
-এক্সকিউজ মি…. হ্যালো….
তামান্না ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো…. দুই হাতে বিশাল মোটা মোটা দুইটা সম্ভবত বইয়ের প্যাকেট হাতে…… একদম সাদা জিন্সের প্যান্ট আর সাদা একটা শার্ট পড়নে একটা ছেলে দাঁড়ানো….. ছেলেটা হালকা ভিজে আছে…. কিন্তু প্যাকেট দুইটা খুব সাবধানে ধরে রেখেছে যেনো ভিজে না যায়….. তামান্না এদিক সেদিক তাকালো…. কারন ও বুঝতে পারছে না…. ছেলেটা কি ওকে ডাকছে নাকি অন্য কাউকে…..
-জ্বী মানে…. আমি আপনাকেই ডাকছিলাম…..
-কারন??
-আসলে….. আমি…. মানে বুঝতে পারিনি…. বৃষ্টি এতো জোরে নামবে……
তামান্নার এখন বিরক্ত লাগছে…. এই ছেলে বলতে চাইছেটা কি!!!
-আপনি আমার কাছে কি চাইছেন…?
-জ্বী,,, আসলে…. আমার গাড়িটা একটু সামনেই পার্ক করা আছে….আপনি যদি আমাকে একটু লিফট দিতেন!!!! আসলে বইগুলো না থাকলে আমি বৃষ্টিতে ভিজেই চলে যেতাম…. কিন্তু…….
-ছাতা হাতে কি শুধু আমাকেই আপনার চোখে পড়ল….. আর মানুষ কি চোখে লাগে না আপনার!!!
-না…. মানে… আসলে…. আছে… অনেকের হাতেই ছাতা আছে…. কিন্তু…. মানে সবাই এত তাড়াহুড়োর মধ্যে চলাফেরা করছে যে…. কাউকে জিজ্ঞেস করবো সেই সূযোগটাও পাচ্ছিলাম না…. আর তাছাড়া আপনাকে দেখে আমার একটু কম আনইজি লাগলো তাই আর কি…….
তামান্না তীক্ষ্ণ চোখে ছেলেটার দিকে তাকালো….
-সরি… কিন্তু আমি আপনাকে কোন হেল্প করতে পারবো না…… আর বইয়ের জন্য আপনি যেকোন দোকান থেকে পলি চেয়ে নিন….
-জ্বী আমি চেয়েছিলাম….. কিন্তু তাদের কাছে নাকি পলি নেই…. আর এদিকের দোকানগুলো বন্ধ তাই আর কি…..!!
তামান্না আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো… আসলেও দোকানগুলো বন্ধ….
-সরি…. আমি তারপরও আপনার হেল্প করতে পারবো না…..
-আমার গাড়িটা একটু সামনেই….. প্লিজ যাস্ট একটু হেল্প করুন….. আপনি চাইলে,,, আমি আপনাকে গাড়িতে লিফট দিয়ে…..
-দেখুন… সস্তা ফাজলামি বন্ধ করুন….. এটা কি মেয়ে পটানোর কোন নতুন থার্ডক্লাস ট্রিকস শুরু হয়েছে নাকি….
-মেয়ে আবার পটায় কিভাবে!!!!
-ও!!!! ভাবটা তো এমন নিচ্ছেন যে মেয়ে কি জিনিস তাই জানেন না….. মেয়ে কিভাবে পটায় তা পাবলিকের ধোলাই খেলে অ আ-এর মত মনে পড়ে যাবে…..
-আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না…. আপনি কি……………..
-এই মিয়া এই….. ঢং করেন….. আমি কি এতোই বোকা ভেবেছেন…..
-নাতো…. আপনি কেনো বোকা হবেন!!!
তামান্না ফোস করে একটা শ্বাস ছাড়লো..
-আপনি আপনার ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে আসতে বলুন…
ছেলেটা মুখ কাচুমাচু করে বলল
-আমার কাছে ফোন নেই…. আমি ইউজ করি না….
তামান্নার মেজাজ আবারো খারাপ হতে শুরু করল….. তামান্না মনে মনে বলল,,,তোরে রে লুইচ্চা শালা,,,,আজ আমি এমন ধোলাই খাওয়াবো…..দাড়া তুই….
-শোনেন,,,,ছাতার নিচে আসার আগে একটা কথা খুব ভালো করে শুনে রাখুন,,,,, আমি যদি সামনে কোন প্রকার গাড়ি না পাই… তাহলে আজ আমার একদিন কি আপনার একদিন…..
ছেলেটা মাথা ঝাকিয়ে টুপ করে এসে ছাতার নিচে দাড়ালো….. তামান্নার পাশাপাশি…..
তামান্না আর ছেলেটা পাশাপাশিই হাটছে…. তামান্না একনজর ছেলেটার দিকে তাকালো…. ছেলেটা হাসি হাসি মুখ করে সামনে তাকিয়ে হেটে যাচ্ছে….. ছেলেটার মাথার ঘন কালো চুলগুলো কপালের উপর আছড়ে আছড়ে পড়ছে…. তামান্না হঠাৎ খেয়াল করল…. ছেলেটার একদম মাথা বরাবর ছাতার উপর একটা ফুটো…. সেই ফুটো দিয়ে টুপ টুপ করে ছেলেটার মাথায় বৃষ্টির পানি পড়ছে……কি ভয়ানক লজ্জাজনক পরিস্থিতি…. তামান্না খুব কৌশলে ছাতাটা ঘুরানোর চেষ্টা করল….. কিন্তু তার আগেই…..
-স্যার…..
তামান্না এবং ছেলেটা উভয়ই মাথা ঘুড়িয়ে পাশে দাড়ালো…. একজন বয়স্ক লোক…. হাতে বিশাল বড় একটা কালো ছাতা…. যার নিচে হয়ত এই লোকের পুরো গুষ্ঠি আশ্রয় নিতে পারবে…. লোকটা দৌড়ে এসে ওদের পাশে দাড়ালো…
-স্যার,,,, আপনে কোথায় আছিলেন….. আমি আপনারে খুইজ্জা মরি….

(আসছে)

নিয়মিত গল্পের লিংক পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন হয়ে সাথেই থাকুন।

https://facebook.com/groups/999645603764557/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here