তোমার পিছুপিছু পর্ব -০৭+৮+৯

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-৭+৮+৯

-স্যার…. আপনে কোথায় আছিলেন,,,,, আমি আপনারে খুইজ্জা মরি….
সালাম মিয়ার চিন্তিত চেহারা দেখে,,,বর্নর নিজেরও একটু খারাপ লাগলো। বেচারা বেশ টেনশনে পড়ে গিয়েছিলো বোধহয়।
-বই কিনা শেষ চাচা….. গাড়ি কোথায়??
-মার্কেটের সামনে পার্ক করেছি স্যার…… স্যার ছাতার নিচে আসেন…. ভিইজ্জা চুবায়া যাইতেসেন….
এতক্ষনে বর্ন টনক নড়ল…. ঝট করে পাশে তাকালো… আরে আশ্চর্য্য!!!! মেয়েটা কই গেলো…. পাশেই তো ছিলো…. বর্ন ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক সেদিক তাকালো…. নাহ..!!! কোথাও নেই….
-স্যার,,,, চলেন,,, চলেন.…… ম্যাডাম বার বার ফোন দিতেছে….. দেন,,,বইগুলা আমার হাতে দেন।

বাসের একটা সিটই খালি ছিলো,,,তামান্না দ্রুত যেয়ে সিটটা দখল করে নিলো…. ফোস করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো…. চলন্ত লোকাল বাসে খালি সিট পাওয়া… আর হাতে চাঁদ পাওয়া একই রকম মনে হয় তামান্নার কাছে….। হাতের ভিজা ছাতাটা একপাশে সড়িয়ে রাখলো। বাস পেয়ে গেছে এখন সেই গাড়িওয়ালা জাহান্নামে যাক…….ভাগ্যিস ঠিক সময় বাসটা ধরতে পেরেছিলো…..এখন ওই শালার গাড়ি ছিলো নাকি না ছিলো ওইসব নিয়ে আর সিআইডি গিরি করার প্রয়োজন মনে হয় নি।
বাস এসে থামলো জুরাইন রেলগেট…. বাস থেকে নেমে রাস্তার অবস্থা দেখে তামান্নার রীতিমতো কান্না করে দিতে মন চাইলো….. এতো বাজে অবস্থা কেনো হয় রাস্তার… আর বৃষ্টিই বা কেনো পড়ে!!!!
বর্ন বাসায় যেয়েই শাওয়ারে চলে গেলো….. মোটামুটি ভিজে গেছে ও নিজেও….. শাওয়ার থেকে বের হয়ে…. টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বইগুলো আবার চেক করতে লাগলো….নিজের অজান্তেই ওর মুখে ছোট্ট হাসির রেখা ফুটে উঠল….. মেয়েটা ঝগড়াটে ছিলো বটে….. কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো!!! বর্ন যে সত্যি কথাই বলেছিলো সেটাও পর্যন্ত যাওয়ার আগে চেক করে গেলো না!!!!

নীলময়ী যখন লিভিংরুমে প্রবেশ করল মাহমুদ সাহেব রীতিমতো চিৎকার করে উঠলেন…. কারন!!! নীলময়ী পুরোদমে কাদায় লেপ্টে আছে…
-বিশ্বকাপ জিতে এলাম বাবা….
মাহমুদ সাহেব মেয়ের দিকে তাকালেন….. গ্রে কালারের ট্রাওজার কাদায় লেপ্টে সম্পুর্ণ কালারই চেঞ্জ করে ফেলেছে…. বা হাতের কুনই-এর দিকটা কেটেছে বোধহয়… হালকা লাল লাল লাগছে….. কোকরা চুলগুলো একদম বৃষ্টির পানি আর মাটিতে………!!!!
মাহমুদ সাহেব মেয়ের দিকে একনজর তাকালেন। নীলময়ী সেই নজর উপেক্ষা করে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে রওনা দিতে লাগলো…রুমে যেয়ে ধড়াম করে দরজা বন্ধ করল…. এবং ঠিক সেকেন্ড খানিক পর দরজা খুলে… চিৎকার করে বলল,
-বাবা খিচুড়ি করতে বলতো…. আমার টিম জিতেছে…. সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ট্রিট….।
মেয়ের কথা শুনে মাহমুদ সাহেব ছোট্ট একটা নিঃশ্বাসের ফেলে… কিচেনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন..

#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-৮

তামান্না বের হওয়ার আগে শেষবারের মত নিজেকে আয়নায় দেখল… ঘড়িতে বাজে ৭.২৭,,,, ৯টায় অফিস…. প্রথমদিন অবশ্যই লেট হওয়া যাবে না…. তাই ব্যাগটা হাতে নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ির বাহিরে….. সকালের নাস্তা খুব কম সময়ই ওর কপালে জুটে…. সুতরাং অফিসে যেয়েই কিছু একটা খাওয়া যাবে…… তামান্না বাসের বদলে একটা রিকশা নিয়ে নিলো…. কেনো যেনো আজ ওর খুব খরচ করতে ইচ্ছে করছে…..

অফিসে পৌছে… প্রথম যেই কথাটা জানতে পারলো…. যে তামান্নার স্যার অলরেডি অফিসে এসে বসে রয়েছে…. এবার তামান্নার ভয় করতে লাগলো… যদিও ও ৯টার আগেই অফিসে পৌছেছে… কিন্তু স্যারতো তারও আগে অফিসে বসে…… এখন তামান্না কি আর্লি এসেছে নাকি লেট!!!!
তামান্না নিজের ডেস্কে বসতেই এক মধ্যবয়স্ক লোক…. সম্ভবত জনাব কাজীর বয়সী হবেন…. ওর ডেস্কের সামনে এসে দাড়ালো….
-স্যারের সাথে এখনো পরিচিত হও নি তো, তাই না?? চলো….কাজ শুরুর আগে তোমার সাথে স্যারের পরিচয় হওয়া জরুরি….
তামান্না বাধ্য মেয়ের মত লোকটার পিছন পিছন রওনা হলো……
রুমের ভিতর প্রবেশ করে তামান্নার মুখ হা হয়ে গেলো!!! আচ্ছা মানুষের অফিস রুম এতো ফ্যান্সি ডিজাইং-এর কি প্রয়োজন…..তামান্নার সামনে বরাবরই ফ্লোর টু সিলিং বিশাল বড় কাচের দেয়াল…. এবং বড়সড় একটা মাহগানী ডেস্ক….. ডেস্কের অপর পাশে চেয়ারে যেই লোকটা বসা তার চেহারা তামান্না দেখতে পারছে না…. কারন ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মধ্যবয়স্ক লোকটি.. এবং তখন তামান্নার মনে পড়ল ওরা স্যারের রুমে দাঁড়িয়ে…….
-বর্ন, ইনি হচ্ছেন তোমার এক্সিকিউটিভ এসিস্টেন্ট মিস তামান্না সুলতানা…. তোমার সিডিউল থেকে শুরু করে মিটিং এবং ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলা সব ওর দ্বায়িত্বে..।
তামান্নার দৃষ্টি এতক্ষন ফ্লোরের দিকে ছিলো….কিন্তু লোকটার কথা শেষ হওয়া মাত্রই তামান্না চোখ তুলে স্যারের দিকে তাকালো…এবং তৎক্ষনাতই তামান্নার মনে হলো,,, ওর জীবনে এটাই ছিলো ওর সবচেয়ে বড় ভুল….. এটা কি আদৌ সম্ভব!!!! চেয়ারে বসা ছেলেটা যাকে ওর স্যার হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে…যাকে তামান্না ঠিক দু’দিন আগেই নীলক্ষেত মোড়ে বেদমসে ঝেড়ে এসেছে…. সেই ছেলেটা খুব অতি ভদ্রতার হাসি নিজের ঠোটে ঝুলিয়ে রেখেছে….
তামান্নার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো… হাতের তালু ঘামতে শুরু করল..
ছেলেটা অর্থাৎ ওর স্যার অর্থাৎ মি. বর্ন বেশকিছুক্ষন তার প্লাস্টিক হাসি ঝুলিয়ে ওকে পর্যবেক্ষণ করে,
-গুড মর্নিং মিস তামান্না..…. কেমন আছেন আপনি..?
তামান্না ভ্রু কুচকে তাকালো….. ইনি কি ভুলে গেছেন দু’দিন আগের ঘটনা!!!
-জ্বী,,,জ্বী স্যার ভালো….
তামান্নার ভাংগা কন্ঠে জবাব…. ইশ!! পানি খাওয়া প্রয়োজন জলদি…..
-আচ্ছা তাহলে… আমরা এখন আসি বর্ন…. মিস সুলতানার ডেস্ক ঠিক তোমার রুমের বাহিরেই….অন্য কিছু লাগলে ডেস্কের উপরই বেলটা প্রেস করো…..
বর্ন হালকা হেসে মাথা নাড়লো….
রুম থেকে বের হয়েই ফোস করে একটা শ্বাস ছাড়লো…. নিজের ডেস্কে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো….. একেই কি বলে ভাগ্যের নিরমম পরিহাস!!!! প্রথমে বাপকে অপমান করলো….. এরপর ছেলেকে…. যাও টেনেহেচড়ে জবটা হয়েছিলো…. কিন্তু এবারতো গেছে..… শেষ!!! এবার পুরোই শেষ….. টিউশনিগুলো আবার কনফার্ম করা প্রয়োজন।

বর্ন হাতের বইটা টেবিলে রাখলো…। সামনের দিকে তাকালো….. ওর রম বলতে গেলে পুরোই কাচের দেয়ালে আবৃত। তাই সামনে বসা চিন্তিত তামান্নাকে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে….. বর্নর মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। মেয়েটা এতোটা ভয় পেলো কেনো!!!! অবশ্যই বর্নকে এই জায়গায় এবং এই পোস্টে মেয়েটা কখনোই আশা করে নি…বর্ন কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের ডেস্কের টেলিফোন রিসিভার হাতে নিয়ে বাটন প্রেস করল… এবং সাথে সাথেই তামান্নাকে ফোন রিসিভ করতে দেখা গেলো….
-মিস তামান্না….. একটু আমার রুমে আসুন….
(আসছে)
#তোমার_পিছু_পিছু
পর্ব-৯

তামান্না কলিজায় হাত রেখে ডেস্ক থেকে উঠল… মনে মনে “দুরুদ শরীফ” পড়তে পড়তে… বর্নর রুমের দরজায় নক করল। ভিতর থেকে সাড়া পেয়ে আস্তে করে দরজা ঠেলে ভিতরে গেলো….
-দাড়িয়ে কেনো!! বসুন মিস তামান্না…..
বাধ্য মেয়ের মত তামান্না যেয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল।
বর্ন হাতের বইটা নিচে নামিয়ে রাখল।
-মিস তামান্না,,,আজকে আমার সারাদিনের সিডিউল কি বলুন তো……
-জ্বী!?…
তামান্না একটু হতভম্ব হয়ে গেলো…
-আমার জানা মতে আপনি আমার সিডিউল এরেঞ্জ করবেন….. তাই নয় কি!?…
-জ্বী মানে… হ্যা… জ্বী স্যার…… স্যার এখনো কোন প্রকার মিটিং ফিক্স হয় নি…. সু.. সুতরাং আপনি ফ্রি আছেন বলেই ধরা যায়…..
-ওকে….. তার মানে… আপনি নিজেও ফ্রি আছেন…..
-জ্বী… হয়ত স্যার….
তামান্নার ভয়টা বাড়ছে…. এই লোক গোল গোল কথা ঘুরাচ্ছে…… কখন জানি বোম ফাটায়!!!
-লাঞ্চের সময়… আর একবার আমার অফিসে আসবেন…..
-……….. জ্বী স্যার…..
-এখন আপনি আসতে পারেন…..
তামান্না কিছুক্ষন ইতস্তত করে উঠে পড়ল। যতক্ষন উনি নিজ থেকে কিছু না বলছেন… ততক্ষন তামান্নারও কিছু বলার কোন দরকার নেই…… তামান্না একটু খুশী হয়েই দরজার দিকে পা বাড়ালো…. বর্ন তখনই পিছন ডেকে উঠল…
-মিস তামান্না….
তামান্নার কলিজা ধড়াস করে লাফিয়ে উঠল….
-জ্ব.. জ্বী স্যার?…
-মিস তামান্না… আপনি কি বলতে পারবেন মেয়ে পটানো কাকে বলে….
তামান্না কিছুক্ষন বর্নর দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। বর্ন এতোটা সিরিয়াসলি প্রশ্নটা করল…. যেনো অংকের টিচার তার কোন স্টুডেন্টকে বীজগণিতের সূত্র জিজ্ঞেস করছে…..
তামান্না আস্তে করে ঢোক গিলল,
-স….. সরি স্যার?
-নাথিং সিরিয়াস তামান্না…. আই ওয়াজ যাস্ট কিউরিয়াস… দ্যাটস অল..…
বলেই বর্ন সুন্দর করে হাসল…. এই হাসি দেখে তামান্নার পিত্তি জ্বলে গেলো… কত্তবড় ফাজিল না হলে… এরকম ইচ্ছে করে মজা নেয়…!!!! প্রথমে তামান্না ভেবেছিলো…. হয়ত সেদিনের ঘটনা ভুলে গেছে…. কিন্তু এখন অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পারছে এগুলো সব এই শালার নাটক। ভদ্র সেজে ইচ্ছে করে মজা নিচ্ছে……আবার হাসে!!!! কত্তবড় নিমচা….
মনে মনে এসব কথা আওড়ালেও…. মুখে একটা শক্ত নকল হাসি ঝুলিয়ে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো…..

বর্ন ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের দক্ষিণ দিকের জানালার ধারে বসল….. সারাদিনে বলতে গেলে কোন পরিশ্রমই করা হয় নি….. শুধু অফিসের চেয়ারেই বসে ছিল….. তাই তেমন টায়ার্ডই লাগছে না…. কতক্ষন এভাবে বসে ছিলো জানে না…. কিন্তু মনোযোগ ফিরল দরজার শব্দে…. ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখল…. মিলন সাহেব দরজার আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে আছেন….. বাবার এই কান্ডটা দেখলে বর্নর খুব হাসি পায়…… ছোটবেলা থেকে দেখে আসছে…. বাবা কখনো রুমে প্রবেশ করার আগে নক করে না… বরং দরজা ঠেলে কেবল মাথা দিয়ে একটু উঁকি দিবে…..
মিলন সাহেব ছেলের হাসি মুখ দেখে ছেলের রুমে প্রবেশ করে সোজা ওর সামনে বরাবর চেয়ারে বসলেন…..
-সো,,,, ইয়াং ম্যান….. হাও ওয়াজ ইউর ডে টুডে?
বাবার প্রশ্ন শুনে বর্নর খুব হাসি পেয়ে গেলো…. ছেলের হাসি দেখে মিলন সাহেব ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন…
-হাসছিস যে!!! অফিসে কিছু ঘটেছে!!
-নাহ…. না বাবা…. আসলে তোমার প্রশ্ন শুনে….. “ফার্স্ট ডে এট স্কুল” রচনার কথা মনে পড়ে গেলো…. তাই হাসছি….
-ওহ,,,,আচ্ছা,,,,,তাহলে সেভাবেই বল,,,,হাও ওয়াজ ইউর ফার্স্ট ডে এট অফিস?
-ইট ওয়াজ গুড…..
-হুম…. প্রথম প্রথম একটু বোরিং লাগতে পারে… কিন্তু আশা করি ধীরে ধীড়ে তুই এডজাস্ট হয়ে যাবি…. প্রথম মিটিং, প্রথম ডিল, প্রথম ক্লাইন্ট, প্রথম সাকসেস….. ইউ উইল ডেফেনেটলি ফিল গুড….
-আই হোপ সো……
(আসছে)

নিয়মিত গল্পের লিংক পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন হয়ে সাথেই থাকুন।

https://facebook.com/groups/999645603764557/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here