তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -২১

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২১ [ প্রথমাংশ ]

নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে বাসায় সামনে। শুকনো ঢোক গিলে তাকাল হাতের ফোনের দিকে। মা একবারও কল করে নি। নির্ঘাত রেগে আছে, আর বাবা! বাবা’র কথা না বলাই ভালো। নিঝুম গুটি গুটি পায়ে এসে দাঁড়াল দরজার দিকে। হাত বাড়িয়ে কলিং বেল বাজাল সে। তাহমিনা বেগম এসে দরজা খুলতেই নিঝুমের শুকিয়ে যাওয়া মুখটা দেখে ভ্রু কুঁচকে নিল। নিঝুম হাসার চেষ্টা করল। কোন কথা ছাড়াই দরজা খুলে চলে গেলেন তিনি। নিঝুম আল্লাহর নাম দিয়ে ঘরে ঢুকল। তাহমিনা আবারো রান্না ঘরে ঢুকেছে। হিনা ঘরের থেকে উঁকি মেরে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। অতঃপর নিজের কোমরে বেল্ট বেঁধে স্কুলের জন্য তৈরি হতে লাগল। বাড়ির কেউ কিছু বলছে না এর একটাই অর্থ বাবা বাসায়।‌ আবারো ঢোক গিলে পা বাড়াল বাবা’র ঘরের দিকে।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছেন বাবা। নিঝুমের প্রতিচ্ছবি আয়নাতে দেখা সত্বেও তিনি এড়িয়ে গেলেন। নিঝুম দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল, “বাবা আসবো!

বাবা কোন কথা বললেন না। নিঝুম ছুটে ঘরে ঢুকল। এসে দাঁড়াল বাবা’র সামনে। বাবার কাছে দাড়ালে তার ভয় কিছুটা কমে যায়। নিঝুম এক গাল হেসে বলল, “তৈরি হচ্ছো বাবা!

গম্ভীর কন্ঠে বাবা বলেন, “কখন এলে!

“এই তো একটু আগে।

“ভালো!

“বাবা তুমি রেগে আছো!

“রেগে থাকার আমরা কে? তোমার যখন যা ইচ্ছে তুমি তো তাই করছো। আমাদের কারো কথা ভাবো একবার। হ্যাঁ মানছি, বড় হয়ে গেছো। বুঝ নিতে শিখে গেছো তাই বলে মা বাবা কে একেবারেই অগ্রাহ্য করবে তা তো হয় না।

মাথা নিচু করে ফেলল নিঝুম। গলা ধরে আসছিল তার। এই কন্ঠেই বলল, “সরি বাবা! আর কখনো এমনটা হবে না।

“যা ইচ্ছে তাই করো।

বলেই ঘর ছেড়ে বের হলেন। নিঝুমের বেশ কান্না পেল। কাঁদতেই কাঁদতেই বাবা’র পিছু নিল সে। বাবা”র শার্ট টা একটু টেনে ধরল সে। বাবা মুখ ফিরিয়ে দেখলেন কাঁদতে কাঁদতে নিঝুমের হেঁচকি উঠে গেছে। বাবা কখনো কঠোর হন নি! তাই আজ এতটুকুতেই মেয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। বাবা আর রাগ করে থাকতে পারলেন না। জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে। নিঝুম কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“আমার কোন দোষ নেই বাবা! সব দোষ ওই বৃষ্টির। একদম অসময়ে চলে এলো। আমি এতো রাতে আর বের হতেই পারলাম। তুমি বিশ্বাস করো না, আমি এমনটা আর কখনো করবো না।

বাবা মাথায় বুলিতে জিজ্ঞেস করলেন,‌ “নাস্তা করেছো?

“না! আমি ঘুম থেকে উঠেই দৌড়ে চলে এসেছি!

মা এবার বলে উঠেন, “উদ্ধার করেছেন। এক ঘুম দিয়ে উঠে এসেছে এখানে তার বাবা’র ঘুম হয় নি। একটু পর পরই উঠে বসে থাকেন। আর বির বির করে, “মেয়েটা বাড়ি আসলো না! বলি কি বিয়ে হবার পর কি হবে !

নিঝুম দ্রুত চোখ মুছে মুখ ভেংচি কেটে বলল, “তাও তো আমার বাবা আমার চিন্তায় ঘুমাতে পারে নি। কিন্তু তুমি তো ঠিকই ঘুমালে। এতোটুকু চিন্তা আছে নিজের মেয়ের।

“আমার কিসের ঠেকা তোমাদের কথা ভাবতো যাবো। নিজের টা নিজে ভেবে নাও!

বাবা হেসে খাবার টেবিলে বসলেন! হিনা মুচকি হেসে খাবার টেবিলে বসে বলল, “মা ঘুমিয়ে থাকলে বাবা’র বর্ণনা কিভাবে দিল আপু।

নিঝুম চোখ ছোট ছোট করে নিল। হ্যাঁ তাই তো! মা হিনার মাথায় বারি মেরে বলেন, “বেশি কথা বলতে শিখে গেছো। যখন একটা মানুষ কানের কাছে মাছির মতো ভন ভন করে তখন কার ঘুম আসে শুনি।

নিঝুম বলে উঠল, “একদম ঠিক বলেছ, এটাই হয়েছে। নাহলে তো এক মিনিটের জন্য আমিও ভেবে নিয়েছিলাম তুমি আমার জন্য…

মা চোখ রাঙিয়ে তাকালেন। নিঝুম মুখে আসা কথাটা গিলে ফেলল। বাবা হেসে বললেন, “মুখ হাত ধুয়ে খেতে আসো!

নিঝুম লাফাতে লাফাতে রুমের দিকে চলে গেল। মা পানি গ্লাসে ঢালতে ঢালতে বলেন, “মেয়ের পাখনা গজিয়েছে, দ্রুত কিছু একটা করার ব্যবস্থা করো।

“এই বয়সে এমনটা হবেই!

“এই বয়সটাই খারাপ!

বলেই রান্না ঘরে চলে গেল। বাবা রাগের মাত্রা বুঝতে পেরে আর কিছু বললেন না!

———

নিঝুম আজ ভার্সিটিতে খুশি মনেই ঘোরাফেরা করছে। আহিম, আফিন আর নীলাভ্র কে দেখে হাত নাড়িয়ে হাইও বললো। কিছু একটা হয়েছে এটা তো বোঝাই যাচ্ছে। নিঝুম দাঁত কেলিয়ে হেসে ফোনে থাকা শান্ত’র ছবিটাই দেখতে লাগল। এতোদিনে তাকে ফাঁদে ফেলা সম্ভব হয়েছে। হঠাৎ করেই ফোনটা কেউ ছো মেরে কেড়ে নিল। নিঝুম চোখ বড় বড় করে তাকাল তার দিকে। শান্ত বাঁকা হেসে বলল, “আমাকে হয়রানি করা! নাও এবার ফোনের লক খুলো নাহলে তোমার ফোনের বারোটা বাজাবে!

নিঝুম এক গাল হেসে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! এই নিন পাসওয়ার্ড হলো ১৯৯৮ সাল!

“হ্যাঁ এটা কি রকম পাসওয়ার্ড!

“আরে আমার মা বাবার বিয়ের ডেট, মনে রাখতে সুবিধা আর কি!

শান্ত খানিকটা অবাক হলো। এতো সহজে পাসওয়ার্ড দিয়ে দিল। মনে হচ্ছে ভুল বলেছে। অবাক চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল যখন দেখল পাসওয়ার্ড একদম ঠিক। চোখ ফিরিয়ে দেখল নিঝুম মিটিমিটি হাসছে। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “ছবি কি অন্য কাউকে দিয়েছ ?

“হ্যাঁ তবে তেমন কেউ না, ওরা কেউ আপনাকে চিনে না।

“মমমানে, কাকে দিয়েছ?

“এই আমায় মা , বাবা, ছোট বোন, খালাতো বোন, মামাতো বোন, ফুফাতো ভাই, চাচাতো ভাই, আমার মামানী, দাদি আর নানুর হোয়াটসঅ্যাপ পাঠিয়ে দিয়েছি।

“চৌদ্দ গুষ্টির কাছে!

“হ্যাঁ হ্যাঁ আর বলে দিয়ছি ছবিটা যেন যত্ন করে সেভ করে রাখে, কারণ এটা আমার লাগবে। আপনি আমার ফোন থেকে ডিলেট করবেন আমি চট করে তাদের থেকে চেয়ে নেবো। ভালো আইডিয়া নাহ!

শান্ত তেড়ে গিয়ে বলল, “তোমাকে আমি!

নিঝুম এক পা পিছিয়ে গেল। শান্ত রেগে চোয়াল শক্ত করে নিল। মারাত্মক রেগে আছে সে। নিঝুম শান্ত’র হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলল , “কুল কুল! রেগে যাবার মতো কিছু হয় নি। তারা কেউই তো চিনে না আপনাকে, তাই নিশ্চিত থাকুন। কিন্তু..

“কিসের কিন্তু!

“শুধু তিথি কে পাঠিয়েছিলাম।

“কিহহ?

“হ্যাঁ ! ( শব্দ করে হেসে) কিন্তু সে আপনাকে চিনতে পারে নি।

“ঝুমের বাচ্চা!

“আরে আরে অশান্ত! শান্ত হন! আমি কি ওকে বলেছি নাকি এটা আপনি। তবে হ্যাঁ আপনার খুব প্রশংসা কিন্তু করলো ও! খুব কিউট ছিলেন আপনি। একদম গোলুমুলু!

“একদম চটাবে না আমায়।

“ধুর! পাগল নাকি কেন এমনটা করবো বলুন তো।

“কি চাও তুমি!

“শান্তি! শান্ত এখন ভার্সিটিতে শান্তি বজায় রাখবে। বুঝতে পারলেন।

“অসম্ভব!

“আমি বরং ভার্সিটির গ্রুপে আপনার পিক পোস্ট করে দিই আর ক্যাপশন লিখি আমাদের গোলুমুলু অশান্ত। দারুন হবে তাই না বলুন!

বলেই নিঝুম ফোন টাইপিং শুরু করল। শান্ত তার মুঠো করে নিল।‌ বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিঝুমের দিকে। নিঝুম চোখের চশমা ঠিক করে বলল, “ঠিক আছে!

বলেই ফোনটা হাতে নিল।‌ অতঃপর শান্ত’র গাল দুটো টেনে বলল, “আপনি এতো স্লিম হয়ে গেলেন কি করে বলুন তো। আপনার ওই গোলুমুলু চেহারায় আপনাকে খুব সুন্দর লাগছিল ,জানেন !

বলেই শব্দ করে হেসে শান্ত’র গাল ধরে টানতে লাগল। শান্ত যথাসম্ভব রাগ সংগত করল। দূর থেকে তানিশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। রিয়া বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠল, “আমি যা দেখছি তোরাও কি সেটাই দেখছিস!

দিয়া বলে উঠে,
“চোখ কি তোর একাই আছে নাকি! আমাদেরও আছে।

তানিশা থমথমে গলায় বলে উঠল, “এই মেয়েটা আসলে কি চাই বুঝি না। খানিকক্ষণ আগেও মনে হয় আহনাফ কে আর এখন…

“পাগল হলি নাকি! শান্ত আর ও, না কখনো না। তবুও আহনাফের সাথে একটা চান্স ছিল

তানিশা বিস্ফোরিত চোখে তাকাল দিয়ার দিকে। দিয়া সাথে সাথেই চুপ হয়ে গেল। রিয়া বলে উঠল, “মনে হচ্ছে শান্ত এবার বড়সড় কিছু একটা করবে!

তানিশা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। এদিকে নিঝুম ততোক্ষণে চলে গেল।‌ শান্ত’র চোখাচোখি হলো তানিশার সাথে। শান্ত মুখ ঘুরিয়ে বলল, মিস চশমিশ দাঁড়াও!

বলেই পিছনে চলে গেল।‌ তানিশার মনে হলো শান্ত পালিয়ে গেল! অবশেষে তানিশা ভেবে নিল কি করবে সে!

——-

ইফা নিঝুম কে খুঁজতে খুঁজতে ক্যাম্পাসের কাছে এসে বলল, “কিরে কি‌ হলো ওত রাতে। এতোবার কল করলি যে।

“তখন ধরিস নি এখন বলে কি লাভ।

“আরে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু সকালে আমি ফোন করার পর ধরলি না কেন?

“বোঝাতে চাইলাম কতটা রাগ হয় যখন কেউ ফোন না ধরে।

“😒

তিথি ছুটতে ছুটতে এসে বলল , “এই নিঝুম গতরাত কোন ছেলের সাথে ছিলি তুই!

ইফা চমকে তাকাল। নিঝুম থমতম খেয়ে বলল, “ছেলে কোন ছেলে?

“তাহলে আমাকে বললি কেন বাসায় বলতে আমার সাথে আছিস। কিন্তু সত্যি তো এটা তুই আমার সাথে ছিলি না!

নিঝুম ঢোক গিলল। ইফা আর তিথি দুজনেই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। প্রশ্ন এক, ‘কোন ছেলের সাথে ছিলি!

হঠাৎ পেছন থেকে গলা ভেসে এলো, “এই চশমিশ!

তিনজন’ই ফিরল পিছনে। শান্ত হাতের আইসক্রিম ছুঁড়ে ফেলল নিঝুমের হাতে। নিঝুম কোনমতে তা ধরে ফেলল। শান্ত’র কর্মকান্ডে দুজনেই অবাক। নিঝুম নিজেও অবাক! আইসক্রিম তো সে চাই নি, তাহলে! শান্ত চলে যেতে নিতেই ইফা বলে উঠল, শান্ত ভাইয়া তোমার হাতে কি হয়েছে?

শান্ত ভ্রু কুঁচকে হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, “কিছু না!

অতঃপর হন হন করে চলে গেল। ইফা আর তিথি মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখল নিঝুম আইসক্রিম খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। কারণ না জেনেই আইসক্রিম খাচ্ছে। গতরাতের কথাটা সেখানেই চাপা পড়ে গেল। গাছের আড়াল থেকে দিয়া সবটা দেখল!

শান্ত মুখ ভেংচি কেটে তাকাল হাতের দিকে। গতরাতের ঘটনা আবারো পুনরাবৃত্তি করিয়ে নিঝুম শুনিয়েছে তাকে। এক পর্যায়ে মিস চশমিশ বলে উঠল, “আপনার জন্য আমার সাধের আইসক্রিম খাওয়া আর হলো না, জানেন! কতোটা কষ্ট লাগছিল তখন?

“আমাকে বাঁচানোর সময়ও একটা আইসক্রিম’র কথা ভাবছিলে তুমি!

নিঝুম মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। সেই আইসক্রিম ফেরত দিল সে! অতঃপর সামনে তাকাতেই হতচকিয়ে গেল। রায়ান আংকেল দাঁড়ানো তার সামনে। শান্ত ঠিক দেখল দূর থেকে হেঁটে কবীর চৌধুরী আসছে! লোকটা তার জন্মদাতা তবুও তাকে দেখে শান্ত অস্থির। কিন্তু তাকে দেখলেই কেন যেন ভয় করে তার। ঠিক মিস আশফিয়া সামনে থাকলে যে অনুভূতি অবিকল সেই অনুভূতি।

শান্ত চলে যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না। কবীর চৌধুরী ইতিমধ্যে তার নাম ধরে ডেকে ফেলেছে। তিনি সামনে এগিয়ে এলেন। শান্ত চোখ নামিয়ে ফেলল। কবীর চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন আছো?

প্রশ্নোওর দিল না শান্ত। কবীর চৌধুরী হাতের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আঘাত লাগলে কিভাবে?

“কিছু না!

“নিজের যত্ন নাও! আমি তোমার জন্য গার্ড পাঠালো তা রাখতে চাও না কেন?

“কোন দরকার নেই তার

“অ্যাকাউন্টে তোমার জন্য প্রতিমাসে টাকা পাঠানো সেটা জানো।

“কিন্তু আমি সেই টাকা ছুঁতে চাই না।

“কেন? একসময় আমার সব সম্পত্তির উত্তরাধিকারী তো তুমিই হবে!

“কিন্তু আমি তা অস্বীকার করি!

“ভার্সিটি থেকে তোমার নামে কমপ্লেন এসেছিল

“সেটা মিথ্যে প্রমাণ হয়!

“এমন কাজ করো যার জন্য আমার কাছে কমপ্লেন আসে।

“আমি কি করব না করব সেটা আপনি আমায় বলে দিবেন!

“শান্ত!

ধমকে খানিকটা চমকে উঠল শান্ত। কবীর চৌধুরী অস্থির হয়ে উঠেছেন। রায়ান আংকেল তার পাশে দাঁড়িয়ে শান্ত হতে বলে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত’র দিকে তাকালো কবীর চৌধুরী! অতঃপর নরম গলায় জিজ্ঞেস করে,

“এভাবে কেন কথা বলো আমার সাথে, আমার তোমার বাবা!

শান্ত চোয়াল শক্ত হলো। রাগে চোখজোড়া লাল হয়ে গেছে তার। কবীর চৌধুরীর চোখে চোখ রেখে বলে উঠে, “তুমি আমার বাবা নও!

কবীর চৌধুরী থমকে তাকিয়ে থাকেন। এই যেন তার সামনে সেই ছোট শান্ত, আজ থেকে ১২ বছর আগে তার সামনে যেভাবে অভিমানী স্বরে বলে উঠে, “তুমি আমার বাবা নও, নও তুমি আমার বাবা! অতঃপর সেই রাত্রিবেলা ছুটে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে। সেদিনও কবীর চৌধুরী থমকে ছিলেন। তার এই ছোট ছেলের কন্ঠে সেদিন শুধু অভিমান ছিল না সেই সাথে তার চোখে একরাশ ঘৃণা দেখতে পেয়েছিলেন। আজও তাই দেখছেন! শান্ত আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। রাগে তার ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মুখ ফিরিয়ে নিল সে। দাঁতে দাঁত চেপে চলে আসতে নিল সেখান থেকে। তখনই পেছন থেকে আবারো ধমকের সুরে কবীর চৌধুরী বলে উঠে, “শান্ত! আমার কথা এখনো শেষ হয় নি!

শান্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কবীর চৌধুরী ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছেন। রাগ সংগত করতে পারছেন না উনি। কিছু বলার প্রয়াস করতেই আহনাফ বলে উঠল, “আপনার বলার থাকলেই যে শান্ত’র তা শুনতে হবে এমনটা নয়!

কবীর চৌধুরী মুখ ফিরিয়ে তাকালেন আহনাফের দিকে। একটু অবাকও হলেন। আহনাফ হেঁটে এসে শান্ত’র পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “সবসময় নিজের সিদ্ধান্ত শান্ত”র ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া বন্ধ করুন!

অতঃপর শান্ত’র দিকে ফিরে বলে, “চল!

শান্ত নির্বিকারে হেঁটে চলে যায় আহনাফের সাথে। কবীর চৌধুরী তাদের চলে যাবার দৃশ্য দেখতে থাকেন স্থির চোখে। এর মধ্যেই প্রিন্সিপাল স্যার ছুটে আসেন কবীর চৌধুরী’র সাথে। তার সাথে কুশল বিনিময় করেই চলে যান তিনি। প্রিন্সিপালের শত অনুরোধও এক মুহুর্ত থাকেন না এখানে। তার দম যেন এখানে থাকলেই বন্ধ হয়ে যাবে!

নিঝুম, ইফা আর তিথি ক্লাসের উদ্দেশে সেখান দিয়ে যাবার মুহুর্তেই দেখতে পান কবীর চৌধুরী কে। রায়ান আংকেল কে দেখে নিঝুম শুধু অনুমানের উপর বলে উঠে, “অশান্ত’র বাবা!

ইফা তার কথা মাথা দোলায়। স্পষ্ট স্বরে বলে উঠে, “শান্ত ভাইয়ার সাথে তার বাবা’র সম্পর্ক ভালো না!

নিঝুম বলে উঠে, “তাই উনি একা থাকেন!

ইফা আবারো মাথা দুলাতেই ভ্রু কুঁচকে আসে তার। অতঃপর নিঝুমের দিকে ফিরে বলে, “কিন্তু তুই জানলি কি করে?

নিঝুম নির্বাক! মুখ ফসকে কি বলে ফেলল এটা সে। তিথি চোখ বাঁকিয়ে বলে, “নিঝুম! তুই এটা বলিস না গতরাতে তুই আর অশান্ত…

নিঝুম ঠোঁট কামড়ে মাথা দোলায়। দুজনেই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। তিথি বলে উঠে, “পুরো এক রাত, তোরা একসাথে ছিলি!

নিঝুম চোখ মুখ খিচে আবারো মাথা দোলায়। ইফা চোখ বাঁকিয়ে বলে, “সত্যি বলছিস তো তুই নিঝুম। আমার কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না। শান্ত ভাইয়া তোকে রাখতে রাজী হলো কিভাবে!

নিঝুম ঢোক গিলল। সে ভেবে পেলো না ওদের কিভাবে বলবে শান্ত নেশা করে ছিলো। তার সাথেই বাকিটা রাত পার করলো সে। বিশ্বাস করবো তো ওরা! নাকি বলবে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলছে!
#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২১ [ বর্ধিতাংশ ]

[ সারপ্রাইজ 🤭🫣 ]

নিঝুমের কথা হেসে উড়িয়ে দিল তিথি আর ইফা। তারা কেউই বিশ্বাস করছে না নিঝুম আর শান্ত রাতে একসাথে ছিল। এটা হতেই পারে না। শান্ত তো নিঝুম কে সহ্য’ই করতে পারে না। তার সাথে কি না রাতে এক ঘরে , অসম্ভব! তিথি তো হেসে বলেই ফেলল, “নিঝুম চাপা মারা ছাড়! আমার বিশ্বাস হচ্ছে না কিছু।

ইফা বলে উঠল, “অন্য কাউকে লুকাতে শান্ত ভাইয়ার নাম নিলি তুই।

“অন্য কাউকে লুকাতে মানে!

“সত্যি করে বল কার সাথে ছিলি?

নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে উওর দিল, “ভুতের সাথে হয়েছে শান্তি। যদি ওই অশান্ত’র সাথে না থাকি তাহলে সে কেন আমায় আইসক্রিম দিতে এলো বল।

অতঃপর হন হন করে চলে গেল। তিথি বলে উঠে, “আরে নিঝুম। যা রেগে গেল। কিন্তু ইফা এই কথাটাও কিন্তু সত্যি। শান্ত তাকে আইসক্রিম কেন দিল।

“তা আমি কি করে বলবো। কিন্তু তুই আর যাই বলিস না কেন? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না কিছু।

“আচ্ছা চল এখন!

বলেই ইফার হাত টেনে ক্লাস রুমের দিকে এগিয়ে গেল!

—-

নিঝুম একগাদা বিরক্তি নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। কেন জানি খুব রাগ হচ্ছে তার কিন্তু রাগের কোন কারণ নেই এখানে। পাশে গাড়ি থামার শব্দে মুখ ফিরে তাকাল। গাড়ির কাচ নামিয়ে আহনাফের মুখটা দেখা গেল। আহনাফ হেসে বলল, “খুব রেগে আছো নাকি?

“আপনি জানলেন কি করে?

“তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

বলেই হেসে উঠলো আহনাফ। স্থির দৃষ্টিতে স্নিগ্ধ সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইল নিঝুম। ভ্রু উঠিয়ে ইশারা করতেই নিঝুম চট করে বলে উঠে, “আপনার হাসি এতো সুন্দর কেন বলুন তো!

“কি বললে তুমি?

জিহ্বা কামড় দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল নিঝুম। উল্টাপাল্টা কি বলছে এসব। গাড়ির হর্ন বেজে উঠল। আহনাফ বলল, “লিফট লাগবে তোমার, চাইলে আসতে পারো।

“না আমি হেঁটেই চলে যাবো! এই তো সামনে থেকে বাস নেবো।

তবুও গাড়ি থেকে নেমে আহনাফ গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল, “এখনো কি না বলবে?

নিঝুম মাথা চুলকিয়ে একগাল হেসে গাড়ির ভেতর ঢুকলো। আহনাফ দরজা বন্ধ করে এসে পাশে এসে বসল। নিঝুম আজ নিজে নিজেই সিট বেল্ট বেঁধে নিল। আহনাফ হেসে বলল, “আমার হাসি সুন্দর কেন বললে তুমি?

“বাহ রে হাসি সুন্দর হলে বলবো না।

“সত্যি এতো সুন্দর!

“আমার কাছে তো বেশ লাগে।

“আমার কাছে তোমার হাসি খুব সুন্দর লাগে।

খানিকক্ষণ লজ্জা পেয়ে গেল নিঝুম। দৃষ্টি বাইরে ফেলে কিঞ্চিত হাসল সে।

“ঠিক আছে, যখন আমাকে তোমার ভালোই লাগে তাহলে এক কাপ কফি তো খেতেই পারি আমরা তাই নয় কি?

নিঝুম মাথা নেড়ে সায় দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই কফি হাউজের সামনে গাড়ি থামাল আহনাফ। নিজে নেমে নিঝুমের জন্যও দরজা খুলে দিল সে। নিঝুম কাঁধের ব্যাগ টা কে শক্ত করে ধরে নামল।

টেবিলের এক প্রান্তে নিঝুম অন্য প্রান্তে আহনাফ। দুজনের হাতেই কফি মগ! মানুষজন বলতে এই তো হবে কয়েকজন। এই দুপুরে তো আর সবাই আসবে কফি খেতে। কিন্তু চারদিক বেশ শান্ত, নিরিবিলি! নিঝুম চারদিকে তাকিয়ে কেমন এক শান্তি অনুভব করল।‌এখানকার রাস্তাটাও বেশ নিবর। গাড়ির চলাচল অনেকটা কম হওয়ায় আরো ভালো লাগছে। আহনাফ কফি মগে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কফিটা কেমন লাগছে?

“বেশ ভালো।

“তোমার হয়তো খাবার অভ্যাস নেই।

“হ্যাঁ আমি চা তে অভ্যস্ত কিন্তু আপনি জানলেন কি করে ?

“তুমি যখন কফি মগে প্রথম চুমুক দিচ্ছিলে তখন তোমার চেহারার ধরণ দেখে।

“প্রথমে ভেবেছিলাম খেতে ভালো হবে না কিন্তু না বেশ লাগছে।

আহনাফ হেসে বাইরে তাকাল। আবারো কফি মগে চুমুক দিল সে। নিঝুমের‌ মাথায় বেশ অনেকক্ষণ ধরেই একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। আহনাফ কেন তাকে এখানে নিয়ে নিল আর কেন:ই বা তার সাথে আছে। কিছু কি বলবে তাকে। জিজ্ঞেস করবে? কিন্তু কিভাবে? শান্ত কিছু বলে নি তো! তখনই মনে পড়ল আজ সকালের কান্ডর কথা। হূলস্থোর কান্ড ঘটেছিল সকালে। আহনাফের হাত থেকে বাঁচতে কতোকিছুই না করল সে। ভাবতেই এখন লজ্জা লাগছে। আহনাফ কন্ঠস্বর শোনা গেল। হঠাৎ করেই এই কন্ঠস্বর মধুর লাগছে নিঝুমের কাছে!

“আজকের দিনটা খুব সুন্দর! কথায় বলে আঁধারের পরেই আলোর স্থান। ঠিক তেমনি গতকাল যে ভয়ঙ্কর বৃষ্টি হলো এরপর আকাশের এই অবস্থা দেখে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় নেই।

“গতকালতো আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ল।

“তুমি জেগে ছিলে নাকি!

“এতোক্ষণ না…

“আমি জেগেছিলাম অনেকক্ষণ! প্রায় বৃষ্টির গতি না কমা অবদি। অনেকরাত অবদি বৃষ্টি দেখছিলাম!

“বৃষ্টি বুঝি খুব ভালো লাগে আপনার!

“হুম! এই বৃষ্টির সাথে কিছু মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার। অতঃপর কিঞ্চিত হাসল আহনাফ। এই হাসির মাঝে যেন রহস্য খুঁজে পেল নিঝুম।

“আচ্ছা বাদ দাও সেই কথা! তোমাকে এখানে নিয়ে এলাম বলে বেশি অবাক হয়ো না। আমার শুধু একটা সঙ্গ দরকার ছিল তোমাকে দেখার পর ভাবলাম সঙ্গী হিসেবে তুমি খারাপ হবে না! আচ্ছা আমার সঙ্গ কি তোমার ভালো লাগছে না।

“এ্যা মা না না আমি কখন বললাম সেই কথা!

“তা পড়ালেখায় খবর কি তোমার। আমার অনুসন্ধান মতে পড়ালেখা তোমার ভালো লাগে না।

“অনুসন্ধানের কি দরকার ছিল? আমাকে জিজ্ঞেস করলেই তো আমি বলে দিতাম। পড়ালেখা আমার একটুও ভালো লাগে।

“তুমি পারোও বটে!

নিঝুম খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। আহনাফ হঠাৎ অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইল তার দিকে। এই দৃষ্টি শিহরণ বয়ে গেল নিঝুমের পুরো শরীর দিয়ে। কফি মগ কে দু হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল সে। হঠাৎ করেই তার শরীর কম্পিত হলো। আহনাফ উঠে দাঁড়িয়ে তার দিকে একটু ঝুঁকে গেল। নিঝুম নির্বাক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আহনাফ আরেকটু এগিয়ে এসেই তার চোখের চশমা খুলে নিল। সাথে সাথে সমস্ত কিছু ঝাপসা হয়ে গেল নিঝুমের কাছে। নিজেকে একটা পাথরের ন্যায় বলে মনে হচ্ছিল। আহনাফ সামনে থেকে টিস্যু নিয়ে চশমা মুছে বলল, “তোমার চশমায় ধুলো লেগে ছিল, খেয়াল করো নি।

বলেই আবার পড়িয়ে দিল। নিঝুমের‌ বোধ হলো। সে গলা নামিয়ে বলল, “না তো!

আহনাফ আবারো কফি মগে হাতে আকাশের দিকে তাকাল। এক টুকরো মেঘ ঘুরে এখানেই আসছে। পৃথিবী ঘূর্ণয়মান! প্রতি নিয়ত এটা ঘুরে চলছে অথচ তারা স্থির। কি বিস্ময়কর ব্যাপার। নিঝুম একটু পর পর কফি মগে চুমুক দিচ্ছে। গলা ধরে আসছিল তার। এ কেমন অনুভূতি! আহনাফের কাছে থাকলে এ কোন অনুভূতি আঁকড়ে ধরে তাকে। এর অর্থ কি? কিছুই বুঝছিল না কিন্তু ক্রমশ’ই চিন্তা গুলো মাথায় জট পাকিয়ে যাচ্ছিল।

——–

দু তিন দিন পেরিয়ে গেল অথচ গ্যাং ডেভিলের কেউই তেমন কিছু করছে না। না লাগছে নিঝুমের পিছনে না অন্য কারো পিছনে।‌ আর শান্ত! তাকে শুধু ভার্সিটিতে ঢুকতে আর বের হতেই দেখা যায়। বাকি টা সময় বসে থাকে আহনাফের সাথে। আহনাফ তো আজ ্যভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,
“ব্যাপার কি বলতো?

“কিসের ব্যাপার?

“আমার সাথে কি করছিস তুই।

“কিসব বলছিস?

“আরে বলছি আমার সাথে কেন তুই।

“তো কার সাথে থাকবো?

“আজ কারো পিছনে লাগতে যাবি না।

“তোর মনে হয় আমি সবার পিছনে লাগি।

“না এমনেই বললাম কথাটা!

“আচ্ছা তুই বল, ব্যাপারটা কি? তানিশা তোকে গতকাল আর আজ কোন চিরকুট দিল না কেন?

“আমি না করে দিয়েছি।

“তুই না করলি আর ও মেনে নিল

“আমি এবার সরাসরি ওকেই বলেই, দিয়া কে না। তাই হয়তো..

“অভিমান আর আত্নসম্মান বোধে দেয় নি। কিন্তু হঠাৎ কেন?

“কতোদিন আর এভাবে কাটবে বল। আমিও জানি তুইও জানিস এমনকি তানিশাও জানে এটা হবার নয়। তাই আর বাড়িয়ে লাভ নেই।

“হুম বুঝলাম!

“ওহ শান্ত শোন…

বলতে গিয়েই থেমে গেল। শান্ত বলে উঠল, “কিরে চুপ হয়ে গেলি যে! অতঃপর খেয়াল করল আহনাফ হাসছে। তার চোখ সামনের দিকে। শান্তও সেখানে চোখ বুলাল। পুরো সাদা রঙের বেশে দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে। এক টুকরো মেঘ হয়তো নিচে নেমে এসেছে। শান্ত আরেকটু মনোযোগ দিয়ে মেয়েটার মুখ দেখতেই বলল, “ও তো..

“নিঝুম!

শান্ত আহনাফের মুখের দিকে ফিরল। তার চাহনি আজ অন্যরকম। শান্ত কিঞ্চিত হেসে বলল, “এই মেয়েটার নাম মিস ঝামেলা হওয়া দরকার ছিল।

“সবসময় ঝামেলা করে বলে। – হেসে বলল!

“আবার জিজ্ঞেস করছিস!

এর মাঝেই নিঝুমের সাথে চোখাচোখি হলো। নিঝুম হাত নাড়াল। আহনাফ ও কিঞ্চিত হেসে হাত নাড়িয়ে যাচ্ছে। শান্ত ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নিঝুম তার দিকে তাকিয়েও হাত নাড়ছে। শান্ত মুখ ভেংচি কেটে কিছুটা বিরক্ত নিয়েই হাত নাড়ল। নিঝুম চলে গেলো ততোক্ষণে। আহনাফ বলে উঠল, “মেয়েটা খুব ভালো বল!

আহনাফের গলার স্বর পাল্টে গেছে। শান্তর কপালে ভাঁজ পড়ল! “কি বলছিস?

“বললাম নিঝুমের কথা‌। মেয়েটা পিচ্চি তবে ভালো। সরলতা আছে ওর মাঝে।

“তাই!

“হুম! কিছুদিন আগে ওর সাথে কফি হাউজে গেলাম।

“ওহ আচ্ছা!

“ওর সাথে সময় কাটাতে খুব লাগল। ওর একটা বৈশিষ্ট্য জানিস?

“আমাকে জ্বালানো!

শব্দ করে হেসে উঠলো আহনাফ। বলল, “তা তো বটেই। কিন্তু এছাড়া আরেকটা আছে। সেটা হলো না ভেবে চিন্তে কথা বলা। ওর মনে যাই আসে তাই বলে ফেলে। পরে সেটা নিয়ে ভাবে।

“উল্টো কোথাকার। কবি বলেছেন ভাবিয়া করিও কাজ আর তিনি কাজ করে ভাবে।

“তবুও বল মেয়েটা মিষ্টি!

“আহনাফ! কি হলো তোর?

“আমার আবার কি হবে?

“এই প্রথম তাকে রেখে অন্য কোন মেয়ের প্রশংসা করছিস তুই।

“তাই নাকি!

“আহনাফ আমি সিরিয়াস! কি বলতো এতোদিনের ভালোবাসা গেলো কোথায়?

“কোথায় যায় নি আছে। আর সত্যি বলতে নিঝুমের মাঝে আমি ওকে দেখতে পাই।

“অসম্ভব! ও আর মিস চশমিশ এক হলো নাকি।

“হুম অনেকটা‌।

“আহনাফ! তোর কিছু একটা হয়েছে। আমি বলছি তুই নিঝুমের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। তোর মন পাল্টে যাচ্ছে

“ধুর কি সব বলছিস!

“তুই আজ উল্টো সুর গাইছিস। আচ্ছা একটা কথা বল তো যদি নিঝুমের মনে তোর জন্য ফিলিংস থাকে তখন।

“তখন.. তুই কি বলতে চাইছিস‌। আমি ওকে ভুলে নিঝুম কে ভালোবাসবো!

“তোর চোখ মুখ তাই বলছে আমায়।

আহনাফ মুচকি হাসল। অতঃপর বলল, “আমি জানি না তুই কি ভাবছিস কিন্তু আমার মনে এখনো এসব কিছু আসে নি। তবে হ্যাঁ যদি ওর সাথে দেখা হবার আগে নিঝুম কে দেখতাম তাহলে হয়তো মন বদলাতো।

“তাহলে তুই স্বীকার করছিস।

“এটা স্বীকারের কিছু নেই। মেয়েকা বড্ড ভালো তাই যে কারো সাথেই সহজে ভাব হয়ে যায়।‌ ভালো লাগে ব্যস এতোটুকুই।

শান্ত নিশ্চুপ হয়ে গেল। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “না না না!

“তোর আবার কি হলো?

“ওর সাথে আমার কখনোই বনে না। তাই ও আর তুই না আমি মেনে নিতে পারবো না।

“মানতে বলছে কে? তুই বেশি ভাবছিস। ভালোবাসার তুই কি বুঝিস। আজ পর্যন্ত কোন মেয়েটা কে নিয়ে পাঁচ মিনিটের বেশি ভাবলি তুই।

খানিকক্ষণের জন্য আহনাফের মুখের দিকে তাকাল শান্ত। মন অস্থির! মিস চশমিশ কে নিয়ে পাঁচ মিনিটের বেশি ভেবেছে সে, হ্যাঁ হয়তো! সেদিন সারারাত ভাবল। তবে কি এটাই ভালোবাসা! নিশ্চুপ সে!

“কি হলো তোর।

“না কিছু না!

“এই প্রথম আমাদের পছন্দের অমিল হলো তাই বল। নিঝুম কে আমার পছন্দ অথচ তোর না। কিন্তু আজ অবদি এমনটা হয় নি।

শান্ত বাঁকা হেসে বলল, “দেখিস বেশি পছন্দ করিস না তাহলে কেলিংকারী ব্যাপার ঘটবে। আরেকজন বিরহে পাগল হবে। আহ তানিশার কথা ভুলবো কিভাবে?

“শান্ত!

“আহ, হৃদয়ে লাগল কথাটা।

“অশান্তর বাচ্চা!

“তুই কি বললি আমায়!

“নিঝুমের দেওয়া নামটা কিন্তু বেশ, তাই না বল।

“একদম এসব ফালতু নামে ডাকবি না আমায়।

*আমি তো ডাকব?

“ভালো হবে না কিন্তু, যদি তুই এমন করিস তাহলে আমি তোর সাথে আর কথাই বলব না!

বলেই উঠে গেল শান্ত। আহনাফ হা হয়ে তাকিয়ে বলল, “যদি আবারো করি, কিন্তু এখনো তো করি নি তাহলে যাচ্ছিস কোথায়?

“যেখানে দুই চোখ যায়!

“সংসারী মানুষদের মতো কথা কেন বলিস!

“আমাকে তোর সংসারে মানুষ মনে হলো,ধ্যাত!

বলেই চলে গেল‌ শান্ত। আহনাফ ভেবেই পেল না রাগের কি বলল সে!

তানিশা বসে আছে ফাঁকা ক্লাসরুমের এক কোনে। মুখটা মলিন, উদাসিন। চোখের চঞ্চলতা নেই, স্থির হয়ে বসে আছে। খানিকক্ষণ পর পরই দৃষ্টি ফেলছে বাইরের দিকে। আহনাফ ঠিক যেখানটায় বসে আছে সরাসরি এখান থেকে দেখা যায়। এই লোকটা ভীষণভাবে ভালোবাসে সে। সে অন্যকারো এটা জানা সত্বেও ভালোবাসে। বার বার তাকে প্রত্যাখান করার পরও ভালোবাসা এতোখানি কমে নি। ভালোবাসার মানুষটির ওপারে তবুও এপারে থেকে অসম্ভব ভাবে ভালোবেসে যাচ্ছে আহনাফ ব্যাপারটা প্রভাবিত করে তানিশা কে। কতোটা পাগলামি থাকলে এতোটা ভালোবাসা যায়। পাগলামি সেও তো কম করে নি কিন্তু তবুও ভালোবাসা দূরে সরে যাচ্ছে তার থেকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ নামিয়ে ফেলল সে। চোখ ভরে উঠেছে। দু একটা ফোটা নোনতা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে হাতে পড়ছে। ইচ্ছে করে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠতে কিন্তু সে অবলা নয়। ঠোঁট কামড়ে কান্না কে চেপে যাচ্ছে সে। কষ্টে ভেতরকার হা হা কার করছে। কানে বাজছে আহনাফের বলা তীক্ষ্ণ কথা গুলো।

দুদিন আগেই দুজনের চোখাচোখি হয়। তানিশা আশপাশ কাউকে দেখতে না পেয়ে বিচলিত হয়ে পড়ে। সেখান থেকে পালিয়ে আসতে নিতেই পেছন থেকে ডাক পড়ে। তানিশা থমকে যায়। আহনাফ দু পা এগিয়ে আসে।

“তানিশা! তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। দয়া করে আর চিরকুট দিও না আমায়। বন্ধ করে দাও এসব কারণ এতে তোমার সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই হবে না। ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততো তোমার জন্য ভালো! – এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলল আহনাফ। এরপর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে তার পাশ বেয়ে চলে যায় সে। তানিশা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যতদূর অবদি আহনাফ কে দেখা ততোক্ষণই কান্না টা চেপে ছিল। আহনাফ যেতেই যেন সে ভেঙে পড়ল। মেঝেতে ধপাস করে বসে রইল। চোখ বেয়ে আপনা আপনি জল গড়িয়ে পড়ল। তার সাথে ঘটা এই নির্মম ঘটনা গুলোর কথা এখন অবদি কাউকে বলে নি সে। বলতেও চায় না! যা একসময় নিজ থেকে শুরু হলো আবার নিজ থেকেই থেমে গেল। ভালোবাসা ছাড়া কি বাঁচা যায় না নাকি, ভালোবাসার মানুষটিকে না পেলে যে ভালোবাসা যায় না এটা কোথায় লেখা আছে। নাই বা পেল তাকে, নাই বা দিল চিরকুট কিন্তু এই এক জীবনে শুধু আহনাফ কেই ভালোবাসবে সে। অন্য কোন ছেলেকে ভালোবাসা তো দূর সেই কথা ভাবতেই চায় না সে। কাঁপা হাতে দুই চোখের জল মুছে ফেলল সে। ঠোঁট কামড়ে ব্যাথা সয়ে রইল। কান্না করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার আর নেই। দুর্বলরা কান্না করে আর সে দুর্বল নয়! একা একা বসে কান্না করার বিষয়টা জঘন্য ছাড়া আর কিছু না!

——–

“কিরে নিঝুম! তোকে তো আজ একদম মেঘকন্যা লাগছে। – বিস্মিত কন্ঠে কথাটা বলে উঠল ইফা!

তিথি বলবে কি দেখেই কুল পাচ্ছে না। নিঝুম ঘাড়ের চুল উড়িয়ে এক গাল হেসে বলল, “আমি জানি, আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।

“ব্যাপার কি বল তো! হঠাৎ করে যে এতো সাজগোজ।

“মনে হচ্ছে ওই ছেলেটার জন্য এতকিছু।

“তেমন কেউ নেই আর না তেমন কিছু। ইচ্ছে করল হঠাৎ!

“তোর মতো তোর ইচ্ছা গুলোও অদ্ভুত!

“তা সত্যি!

তিথি শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল, “আজ আদনান স্যার কেও অনেক সুন্দর লাগছে। ব্লাক শার্টে কি হ্যান্ডসাম টাই না লাগছিল তাকে!

“তাই! – দুজন এক কন্ঠে বলে উঠল।

তিথি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। মিনমিনিয়ে বলে উঠল, “আজ আমিও কালো রঙের পোশাক পড়ে আসলে ভালো হতো, মিলে যেত!

“ওহহহ আচ্ছা… 🤭

বলেই দুজন তাকে দুপাশ দিয়ে ঠেলতে রাখল। এক রাশ হাসির শব্দ নিমিষেই নিরব হয়ে গেল একটি কন্ঠে। পেছন ফিরে তাকাতেই স্নিগ্ধ এক হাসিতে আবির্ভাব ঘটল আহনাফের। তার এই হাসি সবার থেকে আলাদা করে তাকে। নিঝুম চোখের পাতা ফেলে ফেলে তাকাচ্ছে তার দিকে। সামনে আগাতে আগাতে বলল, “কি নিয়ে কথা হচ্ছিল!

ইফা তিথির দিকে তাকিয়ে বলতে নিলেই তিথি তার মুখ আটকে দিয়ে বলল, “কিছু না ভাইয়া! এই এমনে কথা বলছিলাম আর কি!

আহনাফ হেসে চোখ বুলাল নিঝুমের দিকে। হঠাৎ করেই হাত বাড়িয়ে তার কানে তাজা কাঠগোলাপ গুঁজে দিয়ে বলল, “কখন থেকে এটার অভাব দেখছিলাম!

ইফা আর তিথি হা হয়ে তাকিয়ে রইল।‌ নিঝুমের চক্ষু ছানাবড়া। আহনাফ হেসে বলল, “অন্য কিছু ভেবো না। ফুলটা ভুল করেই তুলে ফেলেছি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সব ভুলের পেছনে হয়তো এমন কিছু সুন্দর কারণও থাকে!

বলেই নিঃশব্দে পা এগিয়ে চলে গেল। নিঝুম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। এক পাশে ইফা আর এক পাশে তিথি দাঁড়ানো। ইফা অবাক কন্ঠে বলল, “এই প্রথম কোন মেয়ের কানে ফুল গুঁজে দিতে দেখলাম।

তিথি বলে উঠল, “এই প্রথম এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে শুনলাম!

নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “ফুলটা সরা তো!

দুজনেই এক সাথে বলে উঠল, “কেন?

“আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে!

“এ্যা মা কি বলে!

বলেই দ্রুত ফুলটা সরিয়ে নিল। নিঝুম ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। ইফা ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “ঠিক আছিস তুই।

“একদম না!

তিথি গুন গুন করে কাজে বলে, “পিরিতি কাঁঠালের আঠা লাগলে পড়ে ছাড়ে না!

“চুপ করবি তুই। এটা সত্যি না আমার স্বপ্ন।

তিথি কপালে ধপাস করে বাড়ি মেরে বলে, “সত্যি, তা ফুল টা কি নিবি নাকি..

বলতেই নিঝুম তড়িখড়ি করে ফুলটা ছিনিয়ে নিল। ইফা মুচকি মুচকি হেসে বলল, “ডাল মে কুচ কালা হে!

“কুচ টুচ না। আসলেই আছে। এই বলতো ঘটনা কি?

“কিসের কি ঘটনা! আমি নিজেই তো অবাক।

হালকা কেশে ইফা বলে, “আমি কিছুটা বুঝতে পারছি। ভাইয়ার মন বসছে তোর উপর।

“পাগল হলি নাকি।

“পাগল হবার কি আছে? তুই দেখলি না তোকে ফুল দিল।

“ফুল দেবার অনেক অর্থ থাকে, ভুলে গেলি।

“প্রধান উদ্দেশ্য তো এটাই

তিথি বলে উঠে, “এছাড়া তুই বল! আহনাফ ভাইয়া কে কি তোর পছন্দ না!

নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে রইল। কোনমতে হাসা যাবে না। ইফা ধাক্কা মেরে বলল, “বলছিস না যে!

“শোন! আহনাফ এমন একজন পুরুষ যাকে প্রত্যেক নারী চাইবে। যেকোন নারী তার প্রতি আকর্ষিত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। একটা নারীর যতটুকু চাওয়া পাওয়া থাকতে সবটা আছে উনার মাঝে।

“তার মানে তুইও স্বীকার কর!

নিঝুম এবার মিটিমিটি হেসে ফুলের দিকে তাকাল। দুপাশ দিয়ে দু’জনে ধাক্কা মেরে বলল, “হায় হায়!

নিঝুম লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিল। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “থাম তো তোরা। আমার মনে কি আছে না আছে এতে কি যায় আসে। উনার মনে কি আছে সেটা আসল কথা।

“হ্যাঁ তাই তো!

“হুম হুম! এই নারী যে সে পুরুষের মতো আসক্ত তা বুঝতে আর কারোই বাকি নয়।

নিঝুম চোখ মুখ বুজে ঘুরে দাঁড়াল। তার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বার বার। আবারো সেই এক অনুভুতি। পুরো শরীর কম্পিত হলো তার। ঠোঁট ভিজিয়ে চোখ রাখল বিশাল আকাশের বুকে। আকাশের মেঘ আর তার মাঝে আজ কোন পার্থক্য নেই। দু’জনেই আজ খুশিতে আত্মহারা!

——

ওয়াশরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিঝুম। খুব যত্নে হাতের কাঠগোলাপ টা কানে গুঁজে নিল সে। কিঞ্চিত হাসল সে। গাল দুটো অসম্ভব লাল হয়ে উঠেছে। তার সাথে যেন এই কাঠগোলাপ টা একদম মিশে গেছে। চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে কাঁধের ব্যাগটা ধরে বেরিয়ে এলো সে। এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগল ইফা আর তিথি কে। এখানেই তো থাকতে বলল তাদের এখন কোথায় গেলো। টুং টুং শব্দে ফোনটা বেজে উঠল । মেসেজ চেক করতেই দেখল দুই বান্ধবী তাকে ফেলে ক্যান্টিনে চলে গেছে। নিঝুমও এখন সেদিকে হাঁটা ধরল। মনটা আজ ভীষণ ফুরফুরে। দুরের কিছু কিছু ছেলে তার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। নিঝুম এতে এতোটা পাত্তা দিল না। একটা ছেলে তো একসময় তার সামনে এসে দাঁড়িয়েই গেল। নিঝুম ভ্রু কুঁচকে গেল। ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে বলল, “আপুর নাম কি জানতে পারি?

“পারবেন না কেন? ভাইয়া আমার নাম নিঝুম।

“প্রথম বর্ষ!

“জি!

“তাহলে তো ভাইয়া বলাই লাগবে। আমি তোমার সিনিয়র।

“নাম জানা তো শেষ, পথ টা এখন ছাড়ুন।

“হ্যাঁ নিশ্চয়ই!

বলেও ছেলেটা পথ ছাড়ল না। নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে ধরল। পেছনে তার বন্ধুরা অযথা ইশারা করছে। নিঝুম হেসে বলল, “ভাইয়া বোধহয় কথাটা শুনতে পান নি, তাহলে পথ থেকে সরে দাঁড়াতেন।

পেছন থেকে একজন বলে উঠল, “পথ থেকে সরে দাঁড়ান ভাইয়া!

সাথে সাথে সবাই হেসে উঠল। ওই দলে থাকা এক ছেলে তখন এসে সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা কে ধরে নিয়ে গেল আর বলল, “সরি আপু। যাও তুমি।

নিঝুম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে এলো। তখন আরেক ছেলে বলে উঠল, “বাহ চোখের তেজ! বেশ ভালো লাগলো।

নিঝুম ঘুরে বলল, “আমি ভালো লাগার মতোই মেয়ে ভাইয়া! কিন্তু আপনারা না।

“এই কি বললে তুমি?

“কেন সত্যি কথা গায়ে ফো*স্কার মতো পড়লো নাকি।

“এই মেয়ে শোন..

বলতেই থেমে গেল। নিঝুম কোমরে হাত রেখে বলল, “কি হলো বলুন। থেমে গেলেন কেন? কথা শোনার জন্য’ই তো দাঁড়িয়ে আছি নাকি। আমাকে কি মনে হয় আপনাদের। কিছু বলছি না বলে ভাববেন না কিছু করতে পারি না। নেহাত মনটা ভালো তাই কিছু বলছি!

অনর্গল কথা গুলো বলে ছেলে গুলোর মুখের দিকে তাকাল। হঠাৎ তারা এতো নিশ্চুপ হয়ে গেল কেন? একটা ছেলে বলে উঠল, “চল এখান থেকে!

তার কথায় সায় দিয়ে বাকিরা চলতে শুরু করল। নিঝুম মিনমিনিয়ে বলল, “আমাকে ভয় পেল নাকি!
পেছন থেকে কেউ একজন তার মাথায় হাত রেখে পিছনে ঘুরাল। নিঝুম ভ্রু কুঁচকে বলল, “আপনি!

শান্ত এক গাল হেসে বলল, “ওরা আমাকে দেখে কিছু বলে নি বুঝলে!

“আপনি বলতে চাইছেন আমাকে বাঁচালেন।

“জি না, শান্তি বজায় রাখছি। এখন তুমি অশান্তি করতে চাইলে আমাকে তো আটকাতেই হবে তাই না।

“বাজে কথা!

বলেই নিঝুম হাঁটা ধরল। শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার চলার দিকে তাকিয়ে রইল। হুট করে এসেই চেয়ার টেনে বসে পড়ল নিঝুম। তিথি বলে উঠল, “রেগে আছিস কেন?

“ইচ্ছে হলো তাই।

“তুই আর তোর ইচ্ছে!

“সবটাই বোঝা দায়।

“থামবি তোরা।

“থেমেই আছি।

তখনি শান্ত আর আহিম এসে হাজির হলো সেখানে। তারা পাশের টেবিলে বসে পড়ল। তিথি নিঝুম কে খোঁচা দিয়ে দেখাতে লাগল। হন হন করে হেঁটে উপস্থিত তানিশা আর রিয়া দিয়া। দিয়া হাত উঠিয়ে দেখিয়ে দিল, “ওই তো নিঝুম!

তানিশা চেঁচিয়ে উঠে বলল, “নিঝুম!

নিঝুম আর উপস্থিত সবাই কেঁপে উঠলো। শান্ত আর আহিম অবাক হয়ে উঠে দাঁড়াল। তানিশা মারাত্মক রেগে আছে। রাগের কারণে তার শরীর কাঁপছে। তিথি , ইফা আর নিঝুম উঠে দাঁড়াল। তানিশা দাঁতে দাঁত চেপে তার দিকে আগাতেই শান্ত এসে সামনে দাঁড়াল। বলে উঠল, “কি হয়েছে? রে*গে আছিস কেন?

“বোঝাপড়া আছে আমার সামনে থেকে সর।

“আগে রাগ কমা।

“রাগ মাথায় চড়েছে আমার শান্ত!

আহিম শুকনো ঠোক গিলল। বোঝাই যাচ্ছে তানিশা ভয়ংকর কিছু একটা করতে চলেছে। এদিকে নিঝুম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তানিশা শান্ত কে সরিয়ে এসে দাঁড়াল নিঝুমের সামনে। নিঝুম কিছু বুঝে উঠার আগেই কানে গুঁজে থাকা ফুলটা ছিনিয়ে নিল। রেগে ফুলটা কে মুঠো করে নিল। নিঝুম অবাক কন্ঠে বলে, “এ কি করছো?

“এই ফুল নেবার সাহস হয় কি করে তোমার?

শান্ত ইশারা করে রিয়া কে তানিশা কে নিয়ে যেতে। জায়গাটা ভিড় জমে গেছে। শান্ত রিয়া দিয়া এগিয়ে এলো। আহিম দাঁড়ানো এক দিকে। ইফা স্পষ্ট স্বরে বলে উঠল, “ফুলটা ভাইয়া নিজে দিয়েছে!

“কে দিল সেটা দেখার ব্যাপার না। ও কোন সাহসে ফুলটা নিল!

নিঝুম ঢোক গিলল। বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তানিশা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তানিশা একটু এগিয়ে এসে নিঝুমের কানের কাছে বলে উঠল, “নিজের ভালোবাসা নিজের মনের ভিতরে রাখো। আহনাফ শুধু আমার, তার ভাগ আমি কাউকে দিচ্ছি না বুঝলে তুমি!

শান্ত পেছন থেকে বলে উঠল, “তানিশা সিন ক্রিয়েট করিস না। চল!

তানিশা সরে এলো তার থেকে। পেছন ফিরে যেতে নিল তখনি নিঝুম বলে উঠল, “তুমি এটা একদম ঠিক করো নি!

দাঁতে দাঁত চেপে তানিশা বলে উঠে, “আমাকে এখন ঠিক ভুল বোঝাবে তুমি! অতঃপর তৎক্ষণাৎ পানি ভর্তি গ্লাস হাতে উঠিয়ে নিয়ে নিঝুমের মুখের দিকে ছুঁ*ড়ে মারল তানিশা। অতঃপর….

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here