তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -০৪+৫

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪

নিঝুম নির্বাক চোখে তাকিয়ে রইল। শান্ত’র তিন বলার সাথে সাথেই লাফিয়ে পড়ল মেয়েটি। নিঝুম সামনে থেকে তানিশা কে সরানোর জন্য ধাক্কা দিতেই সে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল। দৌড়ে এলো গ্রিলের কাছে। নিচে তাকাতেই দেখল শান্ত’র হাত ধরে ঝুলে আছে মেয়েটা! নিঝুমের দম আটকে যাবার উপক্রম। এমন দৃশ্য তাকে অস্থির করে তুলছে!

নিচে হইচই লেগে গেছে। মেয়েটার শান্ত’র হাত শক্ত করে ধরে আকুতিমিনতি করেই যাচ্ছে। শান্ত নিঝুমের দিকে চোখ বুলিয়ে মেয়েটা কে “গুড বাই” বলে হাত ছেড়ে দেবার ভান করল। নিঝুম তৎক্ষণাৎ মেয়েটার হাত ধরে নিল। শান্ত অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে। নিঝুমের সাহস তাকে হতবাক করছে।

আহনাফ এসে হাত রাখল শান্ত’র ঘাড়ে। শান্ত চোখ সরিয়ে নিল নিঝুমের থেকে। অতঃপর শান্ত আর নিঝুম দু’জনের হাত ধরে মেয়েটা উপরে উঠে এলো। মেয়েটা যেন এবার নিজের প্রাণ ফিরে পেল। ধপাস করে মেঝেতে বসে পড়ে হুমড়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। নিঝুম তাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করল। শান্ত এখনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে।

নিঝুম এবার চোখ ফিরাল শান্ত’র দিকে। শান্ত কে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উঠে এসে দাঁড়াল সে শান্ত’র সামনে।

“আপনি কি পাগল? মনুষ্যত্ব নেই আপনার মাঝে। আপনার জন্য একটা মানুষের প্রাণ চলে যেতে পারতো। আপনি বুঝতে পারছেন এর মানে।

শান্ত খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল, “না!

নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল। ইচ্ছে করছে আরো দু একটা কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু বলতে পারছে না সে। শান্ত নিঝুমের এই অবস্থা দেখে হুট করে হেসে বলে, হাম! সবসময় এভাবেই থাকবে। আর আজকের হিসাবটা আমি মনে রাখবো। সুদে আসলে ফেরত পাবে এটা দেখে নিও!

রিয়ার হাত ধরে তানিশা মেঝে ছেড়ে উঠে বলল, কিন্তু আমার হিসাব নিকাশ টা আমি এখন’ই করবো!

অতঃপর হন হন করে নিঝুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। চেঁচিয়ে বলতে শুরু করে, “এতো আস্পর্ধা তোমার? সিনিয়রদের গায়ে হাত তুলো!

“আমি তোমার গায়ে কখন হাত তোললাম?

“তুলো নি! ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিয়েছে আর বলছো হাত তুলো নি! ( চিৎকার করে বলল )

নিঝুম থমতম খেয়ে গেল। তানিশা বাঁকা হেসে বলল, এরপর নাকি আবার ফুল তোলার চেষ্টা করেছ?

বলেই নিঝুমের হাত মুচরে ধরল তানিশা। নিঝুম ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠল। তানিশা বলল, তোমার এই হাতের হাল আমি কি করি দেখো!

নিঝুম চোখ ফিরে তাকাল আহনাফের দিকে। আহনাফ অবাক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ব্যাথায় ছটফট করতে করতে নিঝুমের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আহনাফ কিছু বলতে নিবে এর মাঝেই ছাদে এসে উপস্থিত হয় ইফা আর তিথি!

নিঝুমের এই হাল দেখে ইফা বলে উঠে, “থামো!

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দুজনের দিকে। তানিশা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ইফা বলে উঠে, আমি বলছি হাত ছাড়ো তানিশা!

তানিশা রেগে হাত ছুড়ে ফেলে দিল নিঝুম কে। নিঝুম হুমড়ি খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। তিথি দৌড়ে এলো তার কাছে। ইফা শান্ত আর আহনাফ’র দিকে তাকিয়ে বলল, যদি না চাও আমি প্রিন্সিপাল স্যার কে সবটা জানাই তাহলে এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাও সবাই!

শান্ত শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলে, তোমার মনে হয় আমি তোমাকে ভয় পাই!

“শান্ত ভাইয়া!

আহনাফ এসে শান্ত’র হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে যায়। তার সাথে সাথে বাকি সবাই বের হয়ে যায়! ইফা এসে দাঁড়ায় নিঝুমের সামনে।

“খুব ব্যাথা পেয়েছ হাতে!

“না বেশি পাই নি। তুমি ওকে দেখো!

ইফা এসে আগলে নেয় মেয়েটা কে!

——

ইফা আর তিথি’র সাথে মেয়েটা। মেয়েটার নাম হিয়া! আজ সকালেই সাহস করে শান্ত কে একটা প্রেমপত্র দিয়েছিল সে। শান্ত খুব শান্ত ভঙ্গিতেই পত্র টা হাতে নিল। পুরো পত্র টা জোরে জোরে পড়ল। তবে একটা লাইন পড়ে থেমে গেল সে। যেখানে লেখা ছিল, তোমার জন্য আমি সব করতে পারি! এটা দেখেই বাঁকা হাসি দিল শান্ত। এরপর যা হবার তা তো হলোই!

ক্যাম্পাসে এক কোনে বসে আছে নিঝুম। তানিশার হাত মুচরানোর কারণে একটু ব্যাথা এখনো করছে তার। হাত টাও লাল হয়ে গেছে। কিন্তু তার খেয়াল সেদিকে নেই। নিঝুম শুধু ভাবছে আহনাফের কথা। আহনাফ কিভাবে পারল এমনটা করতে। সেও তো ওখানেই ছিল তবুও আটকালো না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা শুধু দেখল। তাহলে কে নিঝুম যা ভেবেছিল তা ভুল। বাকিদের মতোই আহনাফ তাদের চেয়ে আলাদা না সে!

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুড়ো আঙুল দিয়ে হাতের উপর নাড়াচাড়া করছে নিঝুম! হঠাৎ মনে হলো কেউ তার সামনে দাঁড়ানো। মাথা তুলে তাকাতেই দেখল আহনাফ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। নিঝুম অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। আহনাফের দৃষ্টি নিঝুমের হাতের দিকে।

“তোমার হাতের অবস্থা এখন কেমন?

এতোক্ষণ যা সব ভাবছিল আহনাফ কে নিয়ে নিমিষেই সব উধাও হয়ে গেল। বলার ভাষা অবদি হারিয়ে ফেলল নিঝুম। আহনাফ এসে নিঝুমের পাশে বসল। তার হাতটা ধরল। নিঝুম চমকে উঠলো। আহনাফ নিঝুমের হাত পর্যবেক্ষণ করে বলে, “চিন্তা করো না, একটু ব্যাথা করবে। বাসায় গিয়ে এই ঔষধ খেয়ে নিও তাহলে ব্যাথা কমে যাবে!

“হুম!

“হাম!

বলেই নিঝুমের হাতে ঔষধ গুটিয়ে দিয়ে উঠে পড়ল আহনাফ। নিঝুম দেখল আহনাফ চলে যাচ্ছে। সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল সে। পেছন থেকে বলে উঠলো, “আপনি এমনকা কিভাবে করতে পারেন!

আহনাফ কিঞ্চিত হেসে পেছনে ফিরল। নিঝুম আবারো চুপ হয়ে গেল। আহনাফ কে দেখলেই যেন সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে বার বার। আহনাফ চোখের পাতা ফেলে বলে,

“কি জানি বলছিলে বলো!

নিঝুম শুকনো ঢোক গিলল। চোখ নামিয়ে নিল। ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, “মেয়েটা মারা যেত পারত!

“তোমার সত্যি মনে হয় এমনটা হতো!

নিঝুম চোখ তুলে তাকাল আহনাফের দিকে। আহনাফ শব্দ করে মৃদু হেসে নিঝুমের কাছে এগিয়ে বলল, “আমি জানি শান্ত কেমন? শান্ত থাকতে মেয়েটা কখনোই নিচে পড়তো না। তুমি দেখো নি শেষ মুহূর্তে শান্ত মেয়েটার হাত ধরে ফেলেছিল।

নিঝুম এবার ভাবতে লাগলো। আসলেই তো শান্ত যদি মেয়েটাকে ফেলে দিতেই চাইতো তাহলে তার হাত ধরেছিলো কেন। তাহলে এমনটা করার কারণ কি? মেয়েটা প্রেমপত্র দেবে বলে এমনটা করতে হবে। কথাগুলো বিড় বিড় করলেও আহনাফ তার জবাব দিয়ে দিল। সে বলে উঠলো, কারণ আমরা গ্যাং ডেভিল! কিছু করার জন্য আমাদের কোন কারণ থাকা লাগে না।

নিঝুমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, তবে হ্যাঁ একটা কথা তুমি কিন্তু আসলেই খুব সাহসী! তবে সাবধানে থেকো, কারণ শান্ত এখন কি করবে এটা কেউ জানে না!

বলেই চলে গেল আহনাফ! নিঝুম সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল!

বিছানার উপর সোজা হয়ে শুয়ে আছে নিঝুম। তার কোলের মাঝে বালিশ আর সামনে আহনাফের দেওয়া ঔষধ খানা। এটা সে দেখছে আম মিটিমিটি হাসছে।‌ ঔষধ তাকে খেতে দিয়েছে কিন্তু এটা সে দেখেই যাচ্ছে! আবার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখছে। আহনাফ আজ ছুঁয়ে ছিল তাকে। এটা ভাবতেই তার শরীর শিউরে উঠছে।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে নিঝুম। চোখের চশমাটা বোধহয় না থাকলে আরো সুন্দর লাগতো তাকে দেখতে! অতঃপর চোঁখের চশমাটা খুলে ফেলল। ওমা! সামনের কিছুই দেখতে পারছে না সে। তড়িখড়ি করে আবারো চশমা পড়ে ফেলল। চশমা ছাড়া যে সে অচল এটা হয়তো ভুলে গেছিল সে!

বসার ঘরে নিঝুমের বাবা হিনা কে গনিত বুঝিয়ে দিচ্ছে। হিনা মাথা নেড়ে নেড়ে বুঝছে। নিঝুমের মা খাবার গুলো সব টেবিলে দেওয়ার পর নিঝুমের ঘরে নক করে বলে, খাবার খেয়ে আয়!

নিঝুম তাড়াতাড়ি করে বাইরে চলে আসে। সবার আগে এসে বসে পড়ে খাবার টেবিলে। নিঝুমের বাবা এমন কান্ড দেখে হেসে ফেলেন। হিনা মুখ ভেংচি কাটে। দু’জনে এসেই বসে পড়ে। বাবা হিনা আর নিঝুমের পাতে খাবার বেড়ে দেয়। মা বিরক্তি স্বরে বলেন, এতো বড় মেয়ে হয়ে গেছিস? এখনো কি খাবার টা বাবা বেড়ে দেবে!

নিঝুম ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলে, আমার আব্বু , তোমার কি সমস্যা। হিংসে হচ্ছে নাকি।

বাবা হেসে বলেন, হচ্ছে হচ্ছে। তোর নানা হয়তো কখনো এমন করে ভাত বেড়ে দেয় নি তাই!

মা রেগে বলেন, “হ্যাঁ ,আমার বাপের এছাড়াও আরো কাজ ছিল বুঝলে। সারাদিন মেয়ে নিয়ে আদিখ্যেতা!

বাবা এবার কিছু বলতে নিবে নিঝুম হাত ধরে বলে, বাদ দাও! নাও খাইয়ে দেও আমাকে!

মা মুখ ভেংচি কেটে বলে, ঢং!

হিনা হেসে বলে, আবার শুরু হয়ে গেল!

——

পরদিন ভার্সিটি যেতেই সবাই তাকিয়ে আছে নিঝুমদের দিকে। তাকে নিয়ে কানাঘুষাও চলছে। তিথি তার ফোনে ব্যস্ত আর ইফা তার বইয়ের ভেতর! নিঝুম কাঁধের ব্যাগটা দুই হাত শক্ত করে ধরে কনুই দিয়ে দুজনকে ধাক্কা দিল !

“কি হয়েছে?

নিঝুম ফিসফিসিয়ে বলল, দেখ সবাই কেমন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে!

ইফা হেসে নিঝুমের ঘাড়ে হাত রেখে বলল, আমাদের না, বল আমার! সবাই তোকে নিয়ে কথা বলছে!

“কেন? আমি কি কোন সেলিব্রিটি নাকি!

তিথি নিঝুমের থিতুনি তে হাত রেখে বলে, তার চেয়েও অনেক বড়! গতকাল যেই কাজ করলি তুই। মানে ফাটিয়ে দিয়েছিস। আর কেউ না শেষে কি না শান্ত!

দু’জনেই হেসে উঠল। নিঝুম মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে লাগলো। না জানি আজ কি হয়। গতকাল একটু বেশিই সাহস দেখিয়ে ফেলেছে। আজ ঠিক ততোটাই ভয় করছে তার। তবে গ্যাং ডেভিলের কাউকেই এখনো চোখে পড়ছে না ‌। তিন জন’ই একসাথে হাঁটতে লাগলো। তাদের সামনে দিয়ে কিছু মেয়ে যেতে নিল। তারাও থেমে গিয়ে নিঝুমের দিকে তাকাল। একজন বলে উঠল,

“এই এই গতকালের মেয়ে না ও!

আরেকজন নিঝুমের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, বেশিই সাহস করে ফেলেছিল গতকাল। কে জানে আজ কি হবে?

নিঝুম বিচলিত হয়ে পড়ল। আরেকজন হেসে বলল, আমি শুনেছি মেয়েটা নাকি নতুন। শান্ত কে তো চিনে না। কি যে করবে ভাবতে পারছে না।

ইফা চেঁচিয়ে তাদের বলল, কথা বলার হলে অন্য কোথায় গিয়ে বলো। এভাবে সামনে দাঁড়িয়ে কি বলছো!

“যা সত্যি তাই বলছি।

তিথি দাঁতে দাঁত চেপে বলে, আমি দেখাব সত্যি টা কোনটা?

নিঝুম সাথে সাথে তার হাত ধরে থামিয়ে দিল। অতঃপর ইফার হাত ধরে পাশ দিয়ে চলে গেল। তখন পাশ থেকে কেউ বলে উঠল,

“এভাবে পালিয়ে কতোদিন বাঁচবে!

তিনজন’ই দাঁড়িয়ে গেল। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখল তানিশা! রিয়া হেসে তানিশার দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে বলল, আরে পাখির দাপট শুধু আকাশেই থাকে। যখন পাখা কেটে যায় তখন মাটিতে ছটফট করে।

দিয়া নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলে, একজনের হাল খুব জলদি এমন হতে চলেছে।

তানিশা হেসে সামনে থেকে চলে যায়। নিঝুম দেখতে পায় আহনাফ দূরে বসে আছে বেঞ্চিতে। তার হাতেও একটা বই। তার ওখানেই আহিম, নীলাভ্র আর আফিন! তারা সবাই কি একটা নিয়ে মাতামাতি করছে। নিঝুম এক দৃষ্টিতে আহনাফের দিকেই তাকিয়ে রইল। তিথি মিনমিনিয়ে বলল, শয়তানের দল গুলো সব!

ইফা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ইচ্ছে তো করে এদের কে..

নিঝুম থামিয়ে বলে, বাদ দে! চল এখান থেকে!

অতঃপর সবাই ক্লাসে ঢুকে। ক্লাসের সবাই কথা বলতে থাকে নিঝুম কে নিয়ে। কিছু জন তো এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে যেন নিঝুম কোন বড় অপরাধী। অস্বস্তি লাগছে এবার নিঝুমের। তিথি রেখে দাঁড়িয়ে বলে, ক্লাসে এসেছ পড়াশোনা করতে নাকি এমন ভাবে বিড় বিড় করতে। আর কোন কাজ নেই তোমাদের!

তিথির চিৎকারের আওয়াজে চুপ সবাই। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বসে পড়ে তিথি। ইফা তিথির ঘাড় চাপড়ে বলে, এই তো আমাদের শেরনি!

নিঝুম তিথির গাল টেনে বলে, আমার কিউটি বেস্টি!

তিথি লজ্জায় নুইয়ে পড়ে। নিঝুম ইফার দিকে ফিরে বলে, ইফা!

“হুম!

“আচ্ছা এই গ্যাং ডেভিল কি অনেক দিন ধরে একসাথে!

“হুম অনেকদিন! তাদের ফ্রেন্ডশিপ সেই স্কুল লাইফ থেকে। আমি, শান্ত ভাইয়া, আহনাফ ভাইয়া, তানিশা,‌আহিম ভাইয়া সবাই একসাথেই স্কুলে পড়েছি।

“তুমি তাদের ছোট ছিলে।

“হুম হুম! তুমি জানো প্রতিদিন স্কুলে আসার পথে শান্ত ভাইয়া আর আহনাফ ভাইয়া আমাকে চকলেট কিনে দিত। আমাকে স্কুলে তারাই নিয়ে যেত!

“তাহলে এখন আর কেন থাকো না তাদের সাথে।

ইফা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নিঝুমের দিকে ফিরে বলল, সময় বদলে গেছে। কলেজ থেকেই তাদের একটা গ্যাং হলো! গ্যাং ডেভিল! এই গ্যাংদের সদস্য সবাইকে হেনস্তা করে মজা পায়। কোন কারণ দরকার পড়ে না কিছু করতে। ক্ষমতা আছে বলে অনেক কিছুই করে। আমার ভালো লাগে না এসব কিছু তাই আমি চলে এসেছি তাদের থেকে।

তিথি ইফার গাল টেনে বলে, তুই তো আমাদের সাথে!

নিঝুম গালে হাত রেখে বলে, শান্ত আর আহনাফ’র বন্ধুত্ব অনেক দিনের নাহ!

“হুম অনেক? ছোট থেকেই তারা একসাথে বলা যেতে পারে। তবে দুজন দুই চরিত্রের মানুষ। শান্ত ভাইয়া যেখানে সব কিছু তছনছ করে সেখানে আহনাফ ভাইয়া শান্ত। আহনাফ ভাইয়া সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারে শান্ত ভাবেই কিন্তু শান্ত ভাইয়া তা পারে না!

“তাহলে বলছিস শান্ত নাম না হয়ে অশান্ত হওয়া দরকার ছিল।

তিথি হাতে তালি মেরে বলে, একদম ঠিক!

ইফা হেসে বলে, তবে আহনাফ ভাইয়ার..

আর বলা হলো না। তখন’ই স্যার চলে এলো ক্লাসে। তারা সবাই চুপ হয়ে ক্লাসে মনোযোগ দিল!

খানিকক্ষণ পর..

পিয়ন এসে দাঁড়াল ক্লাসের সামনে। স্যারের কাছে এসে কিছু বলল। সবাই চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে। স্যার সবার দিকে তাকিয়ে বলে, নিঝুম কে?

পুরো ক্লাসে আবারো কানাঘুষা শুরু। স্যার সবাইকে চুপ করিয়ে বলেন, নিঝুম কে প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছে।

নিঝুম একবার তিথির দিকে তাকায় আরেকবার ইফার দিকে। ইফা চোখ দিয়ে আশ্বাস দেয় তাকে। নিঝুম উঠে দাঁড়ায়। পিয়নের পিছন পিছন যেতে থাকে। সবাই আবারো বির বির করছে।

নিঝুম হাঁটছে অনেকক্ষণ হলো। প্রিন্সিপালের রুম কোথায় সে জানে। কিন্তু পিয়ন কোথায় যাচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। এগিয়ে এসে পিয়ন কে বলে,

“আংকেল আমরা এদিকে কোন দিকে যাচ্ছি!

“প্রিন্সিপালের কাছে।

“কিন্তু প্রিন্সিপালের রুম…

পিয়ন থেমে যায়। নিঝুম ভড়কে উঠে। একটা ক্লাসের দিকে হাত বাড়িয়ে দেখায় পিয়ন। নিঝুম উঁকি মারে ক্লাসে। বলে উঠল, এই রুমে!

পিয়ন মাথা নাড়ে।‌ নিঝুম ভ্রু কুঁচকে ক্লাসের দিকে তাকায়। হুট করেই কেউ তাকে টেনে রুমের ভেতর নিয়ে যায়। নিঝুম চেঁচিয়ে উঠে। ধপাস করে মেঝেতে পড়ে যায়। ক্লাসের দরজা বন্ধ করে দিয়ে শান্ত হাত নাড়িয়ে বলে, হেই চশমিশ!

নিঝুম চোখের চশমা ঠিক করে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে শান্ত’র দিকে। বলে উঠে, প্রিন্সিপাল!

শান্ত দাঁত বের করে হাসে! নিঝুম শুকনো ঢোক গিলে আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে থাকে!
#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৫

নিঝুম চোখের চশমা ঠিক করে সামনের দিকে তাকাল। শান্ত কে দেখতে পেয়ে তার চক্ষু ছানাবড়া। মেঝেতে শক্ত করে হাত বিছিয়ে বসে রইল। শান্ত হাত নেড়ে তাকে বলছে, “হেই চশমিশ!

নিঝুম শুকনো ঢোক গিলে। কাঁপা কন্ঠস্বরে বলে উঠে,‌ প্রিন্সিপাল!

শান্ত এসে তার সামনে আগায়। নিঝুম ঠিক ততোটাই পিছনে যেতে থাকে। শান্ত এক হাঁটু গেড়ে বসে বলে, এই যে তোমার সামনে!

“এর মানে আপনি আমাকে এখানে আনিয়েছেন।

“বুদ্ধির তারিফ করতে হবে তোমার!

নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে ধরল। চেঁচিয়ে উঠল, আআআআ! আমাকে এখানে কেন এসেছেন আপনি।

শান্ত কানে হাত দিয়ে বলে, চিৎকার কেন করছো? সবাইকে জানাতে চাও তুমি আর আমি এখানে। তা সেটা কি সত্যি ভালো হবে বলে তুমি মনে করো।

নিঝুম ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে ধরল। শান্ত হেঁসে তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। নিঝুমের চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। শান্ত হেসে তার চশমা খুলে নিয়ে বলল, বাহ তোমার চোখ দুটো তো সুন্দর!

চশমা হাতে নিয়ে শান্ত দাঁড়িয়ে গেল। এদিকে নিঝুম চশমা ছাড়া চারদিকের সবকিছু অন্ধকার দেখছে। ‌কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে শান্ত’র দিকে হাত বাড়িয়ে এসে বলল, চশমা দিন আমার!

শান্ত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে এক পা সরে দাঁড়িয়ে বলল, তোমার যা লাগবে খুঁজে নাও!

“আমি চোখে সব ঝাপসা দেখছি, চশমা দিন আমার।

“হুম হুম নিয়ে নাও!

বলেই শান্ত চশমা হাতে নিঝুমের চারদিকে ঘুরছে। এদিকে নিঝুম চোখে যতটুকু ঝাপসা দেখছে ততোটুকুতেই শান্ত’র কাছে যাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু শান্ত’র কাছে যেতেই সে আবারো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে!

শান্ত একটু দূরে এসে দাঁড়াল। নিঝুম এক জায়গায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে। শান্ত হেসে চশমার দিকে তাকাল। ভাবল এটা এখন ফেলে দিবে, তারপর এই চশমিস মেয়েটা কে ছাদের উপর ছেড়ে দিয়ে আসবে। তখন এই মেয়েটা ছাদে ঘুরপাক খেতে থাকবে। দেখতে বেশ লাগবে!

ভেবেই বাঁকা হাসল শান্ত। হঠাৎ করেই মনে হলো তার পেছন থেকে কেউ তাকে খামচে ধরেছে। শান্ত চমকে উঠল। নিঝুম দুহাত মুঠো করে শান্ত’র টি শার্ট আঁকড়ে ধরল। বলে উঠল, আমার চশমা দিন!

শান্ত রেগে উঠে বলে, এই মেয়ে ছাড়ো আমায়।

“আগে আমার চশমা দিন, দিন বলছি!

“তুমি আগে ছাড়ো আমায়!

বলেই শান্ত ছুটোছুটি করতে লাগলো। নিঝুম লাফিয়ে উঠে শান্ত’র চুল টেনে ধরল। শান্ত নুইয়ে পড়ল।

“আহ কি করছো?

“চশমা দিন, নাহলে আপনার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলব আমি।

শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল, আমার চুল ছাড়ো বলছি !

“আগে চশমা দিন!

শান্ত রেগে নিঝুমের হাত থেকে চুল ছাড়িয়ে তার হাত শক্ত করে নিল। নিঝুম তৎক্ষণাৎ কেঁপে উঠল। শান্ত ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে। নিঝুম চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শান্ত যে তার হাত ধরে আছে এটা সে বুঝতে পারছে তার সাথে শান্ত’র রাগের উপস্থিতি পাচ্ছে। ধীরে ধীরে বলল, চশমা টা দিন প্লিজ!

শান্ত নিঝুমের হাতে ধপ করে চশমা দিয়ে তাকে ধাক্কা দিল। নিঝুম চশমা হাতে এক পা পিছিয়ে গেল। দ্রুত চশমাটা পড়ে নিল। শান্ত’র দিকে তাকিয়ে দেখল সে তার চুল নিয়ে ব্যস্ত। নিঝুম এই ফাঁকে পালিয়ে যাবার জন্য দৌড় দিতে নিলেই শান্ত খপ করে তার হাত ধরে ফেলল। আবারো ধরা পড়ে গেল নিঝুম। শান্ত তাকে টেনে নিজের কাছে এনে বলল, “এতো সহজ আমার থেকে পালানো!

“আআমি!

“তোতলাচ্ছো! ভালো তো কিছুক্ষণ পর এমন হাল করবো না কথা বলার অবস্থায় থাকবে না।

“কককেন?

শান্ত রেগে নিঝুম কে দেওয়ালের দিকে ঠেকাল। নিঝুম চোখ ঘুরিয়ে হাত ধরে তাকিয়ে আছে শান্ত’র দিকে। শান্ত শব্দ করে শ্বাস ফেলে হেসে বলল,

“তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। আমার গায়ে হাত তুলছো তুমি। সাহস কি করে হয় আমার চুল ধরে টানার।

শান্ত’র ধমকে কেঁপে উঠে নিঝুম। চোখ বন্ধ করে সব ধমক শুনে চোখ মেলে তাকায়। শান্ত তার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে। নিঝুম এবার নাক ফুলিয়ে বলে উঠে,

“তাহলে আপনি আমার চশমা কেন কেড়ে নিলেন।

“তুমি আবার চেঁচিয়ে কথা বলছো। আহহ!

নিঝুম চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে। শান্ত নিঝুমের কপালে আঙ্গুল দিয়ে বলে, আবারো এই ভাবে তাকিয়ে আছো। তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ!

নিঝুম নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে রইল। শান্ত হেসে বলল, তোমার চোখের ধার আছে বলতে হবে।
অতঃপর তার সাথের দেওয়ালে হাত দিয়ে থাপ্পড় দিতেই নিঝুম চোখ বন্ধ করে দেওয়ালের সাথে আটকে গেল। শান্ত মুখ টিপে হাসলো‌। নিঝুমের মুখের দিকে ফুঁ দিল খুব জোরে। নিঝুম চোখ মেলে তাকাল। শান্ত’র দৃষ্টি চশমা ভেদ করে তার চোখ দু’টো দেখতে লাগল। চোখের পাতা ফেলে ফেলে তাকিয়ে রইল সেই চোখের দিকে।
নিঝুম চোখ ঘুরিয়ে এখনো তাকিয়ে আছে। না এভাবে ভয় পেয়ে দাড়িয়ে থাকলে চলবে না। শান্ত এখানে একা আর সেও! পালিয়ে যাওয়া খুব একটা কঠিন হবে না। শুধু একটু সাহস জোগাতে হবে। নিঝুম চেঁচিয়ে উঠল। শান্ত’র বোধ হলো। একটু সরে দাঁড়াল সে। ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল তার। নিঝুম শান্ত’র মুখের উপর বলল, আপনাকে ভয় পাই না আমি বুঝলেন।

“হুমম কি বললে তুমি।

“যা শুনেছেন তাই, আপনাকে ভয় পাই না আমি।

“নিজের কথা ফিরিয়ে নাও, নাহলে খুব পস্তাতে তুমি।

“না, আমি সত্যি বলছি। আপনাকে ভয় পাই না আমি।

শান্ত হেসে উঠল। খুব জোরে জোরে হাসল। নিঝুম অবাক হলো। সে তো আর কোন জোঁকস বলে নি, শান্ত এমনভাবে কেন হাসছে। শান্ত হাসি থামিয়ে দম নিয়ে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। কথাটা মনে রেখো কিন্তু, কারন এখন থেকে আমি তোমার সাথে যা যা করবো তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। অতঃপর একসময় তুমি নিজেই আমার কাছে এসে বলবে, আমি ভুল করেছি। তোমার মুখের উপর কথা বলা একদম উচিত হয় নি আমার!

নিঝুম হেসে বলল, ঠিক বলেছেন আপনি। যান আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম।

শান্ত নিঝুমের মাথায় বাড়ি মেরে বলল, এগুলো আমার লাইন না তোমার! তুমি বললে এসব।

“কচু! কিছু বলবো না আমি। আপনাকে ভয় পাই না আমি, বুঝলেন।

“সিরিয়াসলি, তোমার এতো কাছে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে আর তুমি বলছো তুমি আমাকে ভয় পাও না।

নিঝুম দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলল না। শান্ত হেঁটে আরো এক কদম এলো। নিঝুম পারলে এবার দেওয়ালের সাথে মিশে যায়। শান্ত পাশের দেওয়ালে হাত রেখে বলল,” এখন বলো! নিজেকে বাঁচাবে কিভাবে তুমি?

নিঝুম চোখ ঘুরিয়ে আর নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে রইল। শান্ত হেসে বলল, এরকম কার্টুনের মতো মুখ করবে না তো।

নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে ধরল। কতো বড় সাহস তাকে কার্টুন বলছে। ইচ্ছে করছে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে। কি মনে করে এই লোকটা নিজেকে। হঠাৎ শান্ত হাত বাড়িয়ে নিল নিঝুমের কাছে। তার মুখে বাঁকা হাসি। নিঝুম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। শান্ত’র হাত তার কাছে আসতেই তার হাত ধরে ফেলল। শান্ত’র কপাল কুঁচকে গেল। নিঝুম তার হাতে হুট করে খুব জোরে কামড় দিয়ে ধরল। শান্ত চেঁচিয়ে উঠল। নিঝুম অনেক জোরে কামড় বসাল। শান্ত কোনমতে তাকে সরিয়ে ধপ করে নিচে পড়ে গেল। দম ফেলে হাতের দিয়ে বলে, রাক্ষস নাকি তুমি! কামড়াচ্ছো কেন?

“আমার রাগ হলেই কামড়াতে ইচ্ছে করে তাই কামড় দিয়েছি। আপনাকে দেখলেই আমার রাগ হয় বুঝলেন। অতঃপর দুই হাত কোমরে দিয়ে বলল,
“তাই এরপর থেকে আমার থেকে দূরে থাকবেন। নাহলে কামড়ে আপনাকে ভূত বানিয়ে দেবো হুহ!

“কিহ?

নিঝুমের বোধ হলো। শান্ত এখন তার কাছে নেই। পেছনে তাকিয়ে এক দৌড় দিল সে। দরজা খুলে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে গেল। শান্ত পিছন থেকে ডেকে উঠল, “এই চশমিশ!

নিঝুম কাঁধের ব্যাগ শক্ত করে ধরে দৌড়ে যাচ্ছে। বার বার পিছন ফিরে চেয়ে দেখছে শান্ত আসছে কি না। অতঃপর হঠাৎ করেই সামনে ফিরতে দেখল আফিন দাঁড়িয়ে। নিঝুম থামতে চেমেও থামতে পারছে না। আফিন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। এই বুঝি ধাক্কা লাগল। তখন হুট করেই আহনাফ নিঝুমের হাত ধরে ঘুরিয়ে নিল তাকে। নিঝুমের কপাল এসে বাড়ি খেল আহনাফের বুকের মাঝে। সব চুল গুলো এসে তার মুখের কাছে পড়ল। তানিশা, রিয়া আর দিয়া হা হয়ে তাকিয়ে আছে নিঝুম আর আহনাফের দিকে। আহনাফ নিঝুমের হাত ধরে আছে এটা দেখেই সবার চোখ কপালে। আফিন হাতটা বুকের কাছে এনে বলল, “আরেকটু হলেই আমার হার্ট অ্যাটাক হতো!

নীলাভ্র বাঁকা হেসে আফিনের কানের কাছে বলল, তুই বেঁচে গেলেও আরেকজন বাঁচবে না। ওদিকে তাকা!

আফিন ওদিক ফিরে দেখল। সাথে সাথে তার চোখ বড় হয়ে গেল। ক্যাম্পাসে দাঁড়ানো সবাই আহনাফ আর নিঝুম কে দেখছে। ভরা ক্যাম্পাস পুরো শান্ত। নিঝুম আহনাফের বুকের মাঝে থেকে মাথা উঠাল। মাথা ঝাঁকিয়ে চুল সরালো। অন্য হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করতেই মনে পড়ল, বাম হাত দিয়ে কেন এসব করছি। আমার ডান হাত!

বলেই উপরে তাকাল। আহনাফ কে তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আঁতকে উঠল সে। হাত ছাড়িয়ে এক ফুট দূরে সরে গিয়ে চারদিকে তাকিয়ে রইল। তানিশা’র রক্তবর্ণ চোখ দেখে শুকনো ঢোক গিলল সে। এর মাঝেই আহনাফ জিজ্ঞেস করল, ঠিক আছো তুমি!

নিঝুম অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আহনাফের দিকে। আহনাফ বলল, সাবধানে চলাফেরা করো!

বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেল আহনাফ। তার সাথে সাথে আফিন আর নীলাভ্র গেল। দু’জনে মুখেই মিটিমিটি হাসি। তানিশা রেগে হন হন করে চলে গেল। নিঝুম দেখল সবাই ভূত দেখার নিঝুমের দিকে তাকিয়ে আছে। নিঝুম দৌড়ে পালিয়ে গেল সেখান থেকে!

ক্যান্টিনে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে। আহনাফের চোখ বইয়ের দিকে আর তানিশার চোখ আহনাফের দিকে। রাগে তানিশার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। নিঝুম কে কিভাবে ছুঁতে পারল আহনাফ। কেন ধরল তাকে। তানিশার রাগ দেখে দিয়া আর রিয়া তাকে সান্তনা দিচ্ছে। এদিকে আফিন আর নীলাভ্র মুখ টিপে হাসছে।

আহিম হন হন এসে বলে, শান্ত কোথায়? কেউ দেখেছিস তোরা!

আহনাফ বই নিচে নামিয়ে রাখল। আহিমের দিকে তাকিয়ে বলল, অনেকক্ষণ ধরে দেখেনি।

আফিন বলে উঠে, আচ্ছা আমি কল করছি।

নীলাভ্র বলে উঠে, ওই তো শান্ত এসে পড়েছে।

আহনাফ মৃদু হেসে শান্ত’র দিকে তাকায়।‌ শান্ত’র মুখে রাগ স্পষ্ট! শান্ত রেগে এসে বসে পড়ে আহনাফের সামনে। ঢক ঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেলে সে। আহনাফের চোখ পড়ল শান্ত’র হাতের দিকে। সে ছুটে এসে শান্ত’র হাত ধর বলল, কামড় দিল কে তোকে?

শান্ত থমতম খেয়ে বলল, এটা কামড়ের দাগ না।

“কামড়ের দাগ না মানে কিসের দাগ এটা দাগলে। স্পষ্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে কেউ তোকে কামড় দিয়েছে আর তুই বলছিস না। এই আফিন, যা তো ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়।

“ঠিক আছি আমি।

“চুপ করে বসে থাক। আর কামড় দিল কে তোকে।

আফিন চলে গের ঠান্ডা পানি আনতে। শান্ত চুপ হয়ে বসে আছে। বুঝতে পারছে না কি করে বলবে ওই চশমিশ তাকে কামড় দিয়েছে। এদিকে আহনাফের দৃষ্টিও তার দিকে। শান্ত হাত গুটিয়ে বলে, ওহ হ্যাঁ কামড় দিয়েছে!

“কে দিয়েছে?

“বি..বিড়াল!

সবাই একসাথে বলে উঠে, বিড়াল!

“হ্যাঁ ,একটা বিড়াল কে কোলে তুলেছিলাম কিন্তু বিড়াল টা ভালো না ছিল না। আমার হাতে কামড় বসিয়ে ছুটে চলে গেল।

রিয়া বলে উঠে, বিড়ালের দাঁত এমন হয় নাকি।

“হ্যাঁ এমন’ই। কেন কখনো বিড়ালের কামড় খাস নি তুই।

“না মানে..

আহনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে শান্ত’র দিকে। শান্ত ভেবে পাচ্ছে না আহনাফ আদৌও তার কথা বিশ্বাস করল নাকি করল না। আহনাফ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ডাক্তারের কাছে চল। বিড়ালের কামড়ের ক্ষত অনেকটা। ডাক্তার কে দেখানো দরকার।

“না না কোন দরকার নেই।

“আছে চল!

“আরে আমি বললাম তো নেই, ঠিক আছি আমি। তুই একটা কাজ কর আমাকে একটু পানি এনে খাওয়া। তৃষ্ণা পেয়েছে। আফিন এখনো এলো না।

“যাচ্ছি, কিন্তু তুই আগে বল ডাক্তারের কাছে যাবি।

“হুম যাবো, কেন যাবো না। এই তো একটু পরেই যাবো।

“হুম!

বলেই আহনাফ চলে গেল। আহিম মিটিমিটি হেসে শান্ত’র কানের কাছে বলল, বিড়াল টা মনে হয় চশমা পড়তো তাই না!

শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে আহিমের দিকে তাকিয়ে রইল। আহিম মুখ টিপে হাসতে লাগলো। একমাত্র আহিম জানতো শান্ত নিঝুমের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সবাই যদি জানে নিঝুম তাকে কামড় দিয়েছে তাহলে এটার অন্য এক মানে বের করে ছাড়বে। শান্ত’র ইগো তেও আঘাত লাগবে। আর যাই হোক, এই চশমিশের কাছে হার মানবে না সে!

#চলবে….

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here