তোমার স্মৃতি পর্ব -০৪

#তোমার_স্মৃতি
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

শশী দেখলো সানজিদা চোখ বন্ধ করে বেডে শুয়ে আছে। সেলাইন চলছে। শশী দৌড়ে সানজিদার পাশে গিয়ে বসে পরলো। সানজিদার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে ওর কপালে ঠেকিয়ে ফুপিয়ে উঠলো।

সানজিদা পিটপিট করে চোখ খুলে এদিক ওদিক তাকাতেই নিবিড়কে দেখতে পেল। নিবিড় ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ও চোখ সরিয়ে শশীর দিকে তাকালো। ও শশীকে উদ্দেশ্য করে বলল “ধুর পাগলী কান্না করছিস কেন! আমার কিছু হয়নি তো। আমি মরিনি তো।”

শশী এবার সানজিদাকে ধমক দিয়ে বলল “তুই আর যদি এসব আজেবাজে কথা বলিস তাহলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।”

সানজিদা মুচকি হেসে বলল “হয়েছে আর ঢং করতে হবে না।” সানজিদা এবার নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলল “আমি বাসায় যাবো। একটু ব‍্যবস্থা করে দিবেন।”

নিবিড় বলল “আপনার শরীরটা অনেক দুর্বল অন্তত আজ রাতটা থেকে কাল সকালে না হয়।”

সানজিদা নিবিড়কে থামিয়ে দিয়ে বলল “আমার ভালো লাগছে না। এখন কয়টা বাজে।”

নিবিড় তার হাত ঘড়ি দেখে বলল “বিকেল সাড়ে চারটা বাজে”

সানজিদা বলল “আমার এখানে কেমন যেন দম বন্ধ বন্ধ লাগছে। দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন।”

নিবিড় আর উপায় না পেয়ে সানজিদার কথা মেনে নিলো। সে সানজিদাকে সেলাইন শেষ হওয়া পযর্ন্ত থাকতে বলল। নিবিড় চলে গেল সানজিদার কেবিন থেকে।

সানজিদা এবার শশীর হাত ধরে কেঁদে দিলো। শশী অবাক হলো। কারণ মেয়েটা অনেক শক্ত। ওকে কখনো কান্না করতে দেখেনি শশী। শশী সানজিদার মাথাটা ওর বুকে আকরে ধরলো। সানজিদা ফোপাতে ফোপাতে বলল “দোস্ত আমার শেষ ইচ্ছাটাও পূর্ণ হয়ে গিয়েছে রেএ। আমার সময় শেষ। আমার কিছু হয়ে গেলে তুই কিন্তু একদম পাগলামী করবিনা।”

শশী কান্নাভেজা কন্ঠে বলল “প্লীজ এমন করিস না। আর বলিস না এগুলো। আর কি শেষ ইচ্ছা শেষ ইচ্ছা করছিস।”

সানজিদা ওর চোখের পানি মুছে মুচকি হেসে বলল “আমি মরে গেলে আমাকে কি তুই মনে রাখবি!”

শশী এবার রাগে কটমট করে বলল “তুই আর একবার মরার কথা বললে আমি কিন্তু এবার তোকে মারবো।”

সানজিদা হেসে বলল হয়েছে “আর রাগ করতে হবে না। এবার বল মনে রাখবি তো আমায়।”

শশীর চোখের কোণ বেয়ে নোনা জল বেয়ে পরলো। সানজিদাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে শশী হুহু করে কেঁদে উঠলো। আর বলল “তোকে আমি কি করে ভুলে যাবো বল। তুই যে আমার আত্মার সঙ্গে মিশে আছিস। এখন বল তো শেষ ইচ্ছা মানে।”

সানজিদা বলল “আমার ইচ্ছা ছিল রোহানের সঙ্গে শেষ বারের মতো একবার দেখা করার। সেটা পূরণ হয়ে গিয়েছে।”

শশী অবাক হয়ে বলল “মানে কখন দেখা হলো তোদের।”

সানজিদা ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল “আমি যখন ডা.নিবিড়ের কেবিন থেকে বের হচ্ছিলাম তখনই আমি রোহানকে দেখতে পাই। হঠাৎ করেই চোখ ঝাপসা হয়ে আসে আমার। আর কিছু মনে নেই আমার।”

প্রায় কেটে গেছে দুইঘন্টা নিবিড় সানজিদার কেবিনে ঢুকে দেখলো শশীর কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে সানজিদা। নিবিড়ের পরনে শার্ট ঘামে ভিজে আছে। হাতে ঔষধের প‍্যাকেট।

নিবিড় হাতের প‍্যাকেটটা শশীকে দিয়ে সানজিদাকে বলল “সব ব‍্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। আপনি এখন থেকে প্রতিদিন হাসপাতালে একবার করে আসবেন।”

সানজিদা চোখ ছোট ছোট করে বলল “প্রতিদিন কেন! আর আপনি কেন ঔষধ আনলেন। ফিরিয়ে নিয়ে যান। আমি আমার নিজের ঔষধ কিনে নিতে পারি।”

নিবিড় বলল “না আমি কেন আনতে যাবো। এটা হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়েছে।”

সানজিদা সন্দেহভাজন দৃষ্টি নিবিড়ের দিকে নিক্ষেপ করলো। নিবিড় আমতা আমতা করে বলল “আমি সুন্দর সেটা আমি জানি তাই বলে এমন করে তাকিয়ে থাকবেন না।”

সানজিদা মুখ বাকিয়ে বলল “এহ নিজেকে সুন্দর বলে। দেখতে তো হনুমানের মতো।”

নিবিড় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো এখন পযর্ন্ত কেউ তাকে এভাবে বলেনি। সে যথেষ্ট সুদর্শন ছেলে।

সানজিদা বলল “শশী বেশিক্ষণ মুখ খুলে রাখলে মশা ঢুকে যায় সেটা হয় তো কেউ ভুলে গিয়েছে মনে করিয়ে দে তো।”

নিবিড় লজ্জা পেল। ও মিনমিনে কন্ঠে বলল “আমি তাহলে যাই ভালো থাকবেন। কাল আবার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।” বলেই চলে গেল নিবিড়।

সানজিদা হেসে বলল “আবুল ডাক্তার”

শশী অবাক হলো সানজিদার এমন হাসি দেখে। এতোদিন পর সানজিদার এমন হাসি দেকে শশীর মুখেও হাসি ফুটে উঠলো।

সন্ধ্যা সাতটা বাজে সানজিদা আর শশী দাড়িয়ে আছে হাসপাতালে দরজায়। রিক্সার জন‍্য এদিকে ওদিকে তাকালো। তখনই একটা গাড়ি এসে দাড়ালো ওদের সামনে। গাড়ির জানালা নামিয়ে নিবিড় বলে উঠলো “উঠে আসুন আপনাদের ড্রপ করে দেই।”

সানজিদা চোখ ছোট ছোট করে বলল “এতো শখ কেন আমাদের গাড়িতে তোলার। লাগবে না আপনার হেল্পের।”

নিবিড় বলল “আচ্ছা কি আর করার।”

শশী সানজিদাকে ধাক্কিয়ে বলল “রিক্সাও তো পাচ্ছিনা চল না ওনার সাহায্য নিয়েই নেই।”

সানজিদা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে শশীর দিকে তাকালো। শশী হাত জোর করে বলাতে সানজিদা রাজি হয়ে গেল। নিবিড় ও ঠোঁট কামড়ে হাসলো। শশীর চাচা হঠাৎ ফোন করে ডাকায় সে অর্ধেক রাস্তায় নেমে গেল। সানজিদাও যেতে চেয়েছিল কিন্তু শশী মানা করায় বাধ‍্য হয়ে গাড়িতেই বসে রইলো। নিবিড় গাড়ি চালাচ্ছে আর সানজিদার দিকে তাকাচ্ছে। সানজিদা এতে বিরক্ত হচ্ছে কিন্তু তার এখন কোনো মতেই কথা বলতে মন চাচ্ছেনা নিবিড়ের সঙ্গে। সে চুপচাপ বসে রইলো গাড়িতে। সানজিদাকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল নিবিড়।

সানজিদা বাসায় আসতেই বাসার বাড়িআলা মধ‍্যবয়স্ক লোকটা এসে দাড়ালো সানজিদার দরজার সামনে। সানজিদা কপাল কুচকালো।

লোকটি নাকমুখ কুচকে বলল “কার গাড়ি ছিলো ওটা। ভালোই তো দেখছি গাড়িতে ঘোরাঘুরি করছো। খালি আমার বাসার ভাড়া দিতে গিয়েই তোমার সমস্যা হয়ে যায়। আমি ভেবেছিলাম তোমার চরিত্রটা হয় তো ভালো। তাও দেখছি না। তাই তো বলি তোমার স্বামী তোমাকে কেন ছেড়ে গিয়েছে। তোমার যে পরপুরুষের দিকে নজর। এটা দেখেই তো সে তোমাকে ছেড়ে গিয়েছে।”

সানজিদা চিল্লিয়ে বলে উঠলো “চুপ করুন দয়া করে চুপ করুন। না জেনে একদম কথা বলবেন না বলে দিলাম।”

লোকটি বলে উঠলো “এহ এখন এতো ঢং করছো কেন! এতো বড় গাড়িতে করে এসেছ আবার আমি বললেই দোষ। তোমার মতো চরিএহীন মেয়েকে আমি আর আমার বাসায় জায়গা দিতে পারবো না বলে দিলাম।”

সানজিদা চিল্লিয়ে বলে উঠলো “চুপ করুন আর একটাও কথা শুনতে চাইনা। আপনার যখন এতোই সমস্যা আমি চলে যাবো আপনার বাসা থেকে। রাতে তো একলা মেয়ে আমি কোথাও যেতে পারছিনা সকালেই আমি চলে যাবো। হয়েছে আপনার।”

লোকটি এবার বলে উঠলো “তা ঠিক আছে কিন্তু আমার ভাড়া।”

সানজিদা হনহন করে রুমের ভিতর ঢুকে গেল। সে আলমারি খুলে টাকা ব‍্যাগটা বের করে দেখলো মাত্র একহাজার টাকার একটা নোট পরে আছে। কিন্তু ভাড়া দিতে তো আরো পাঁচ হাজার টাকা দরকার। সে পাগলের মতো এখানে ওখানে টাকা খুজতে লাগলো। কিন্তু ফল শূন্য। মাথা কাজ করছে না তার। তখন হঠাৎ….

#চলবে

(আসসালামু আলাইকুম ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here