তোর নামেই এই শহর পর্ব -২০

#তোর_নামেই_এই_শহর
#লেখিকা_সুমাইয়া_জাহান
#পর্ব_২০

(৫৬)

ইদানীংকালে সামিরের সঙ্গে হুরায়রার সখ্যতা খুব বেড়েছে। সামির প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে হুরায়রার পাশে থাকার চেষ্টা করে। অন্তঃকরণে হুরায়রার প্রতি যে সুপ্ত ভালোবাসা জেগেছিলো সেটা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে অথচ প্রকাশ করার মতো ইচ্ছা তার কোন দিন হয় নি। সামির জানে হুরায়রা ইয়াদকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে। ইয়াদের প্রতি তার ভালোবাসাকে সামির শ্রদ্ধা করে। যদিও ইয়াদ নামক পুরুষটি তার চিরশত্রু চাইলে প্রতিশোধ নিতে পারতো হুরায়রাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কিন্তু সে তা করে নি। আর করতে চায়ও না। ইয়াদের সঙ্গে যতই শত্রুতা থাকুক না কেনো হুরায়রাকে সে প্রথম দিন থেকেই ভালোবেসেছে। ভালোবাসা আর যাই করুক প্রতিশোধ নিতে শিখায় না তাই তো অন্তঃকরণে নিজের ভালোবাসা চেপে রেখে দিব্যি হুরায়রা সঙ্গে বন্ধু হয়ে মিশছে সে। এক মুহূর্তের জন্য কখনো বুঝতে দেয় নি সেও হুরায়রাকে ভালোবাসে। অব্যক্ত প্রেম সত্যিই বড্ড জ্বালা দেয়। দিন শেষে প্রেয়সীকে পাওয়ার বাসনাটা দমিয়ে রাখা বড্ড পীড়াদায়ক হয়ে উঠে। সামির এই সত্যটা মেনে নিয়ে প্রতিনিয়ত অভিনয় করে চলেছে ভালোবাসার মানুষটির কাছে অথচ সে জানেও না তাকে ভালোবেসে আরোএকটি মানবী কেয়েকটা বছর অসহ্য যন্ত্রণা অন্তরে বয়ে বেড়াচ্ছে।

তিয়াশা আজও নিজের ভালোবাসার কথা বলে উঠতে পারে নি সামিরকে। দায়িত্বের কাছে ভালোবাসা বিসর্জন দেয়া কি এতই সহজ? কিন্তু তিয়াশা এই কঠিন জিনিসটাকে সহজ করে নিয়েছে। আজকাল নিজেকে বড্ড একা বলে মনে হয় তার। ছোট্ট বেলায় বাবা মাকে হারিয়েছে সে। নানা মুবিনুল আহসানের দ্বিতীয় পক্ষের কন্যাসন্তানের ঘরে তিয়াশার জন্ম। ইয়াদের দাদা বিদেশে থাকাকালীন সময় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সে বিয়ের কথা তিনি পরিবারের কাউকে জানান নি। সেই ঘরে তার একটি কন্যাসন্তান হয়। ভদ্রলোক মেয়েটিকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর পর। নিজের কন্যাসন্তানকে পালিত মেয়ে হিসেবে সমাজের কাছে বড় করে তুলেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রী মেনে নিয়েছিলেন মেয়েটিকে। ছোট্ট পুতুলের মতো ফুটফুটে মেয়েটিকে দত্তক নেন তিনি অথচ জানতেই পারলেন না মেয়েটি তার সতীনের ঘরের মেয়ে। যাকে তিনি দত্তক নিয়েছেন সেই মেয়ের বাবা তারই নিজ স্বামী।

বেশ কয়েক বছর ভালোই কেটেছিলো কিন্তু বাঁধ সাধল তখন যখন সামিরের দাদা এসে নিজের বোনের অধিকার চেয়ে বসলেন। ইয়াদের দাদা অর্থাৎ তিয়াশার নানাভাই মুবিনুল আহসান বিদেশে থাকাকালীন সময় সামিরের দাদা মিজান এহসানের বোন আবেরজান এহসানকে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ের কথাটা দুই পরিবারের কেউই জানতেন না এক মাত্র মিজান এহসান ছাড়া। বোনের মৃত্যুর কয়েক বছর পর জানতে পারেন তার ভাগ্নি নিজের পরিবারে পালিত মেয়ে হিসেবে বড় হচ্ছে। সমাজের কাছে দত্তক মেয়ে হিসেবে বড় হওয়ার ব্যাপারটা তিনি মেনে নিতে পারেন নি। মুবিনুল আহসান সৎ নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে সমাজের কাছে পরিচিত হয়েও তিনি তার নিজের ব্যক্তিনিষ্ঠা ধরে রাখতে পারেন নি। নিজের মেয়েকে পালিত মেয়ে হিসেবে সমাজে পরিচিত করে তুলেছিলেন আর এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেন নি মিজান এহসান। সত্যিটা সকলের সামনে প্রকাশ করে দেন একদিন। যদিও মুবিনুল আহসান অস্বীকার করেছিলেন সে সময় কিন্তু বেশিদিন সেটা অস্বীকার করে থাকতে পারেন নি। নিজের বিবেকের কাছে মুখ লুকাতে না পেরে পরিবারের কাছে শেষ পর্যন্ত সেটা স্বীকার করতে হয়েছে তাকে।

স্বামীর প্রতারণার শোক সে সময় দাঁড়িয়ে মেনে নিতে পারেন নি ইয়াদের দাদী নূরজাহান। শোক সামলাতে না পেরে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছিলেন তিনি। তখন ইয়াদের বাবা ইশরাক ইহতেশাম তেইশ বছরের যুবক। বোন তনুকে তিনি কখনো সৎ বোন কিংবা পালিত বোনের চোখে দেখেন নি। এত কিছু হয়ে যাবার পরো বোনকে আগলে রেখেছিলেন। একা হাতে মানুষ করে বিয়ে দিয়েছিলেন নিজের বন্ধুর ভাইয়ের কাছে। তনুর জীবন ভালোই চলছিলো। কিন্তু মায়ের মতো তার কপালেও বেশিদিন সুখ সহ্য হলো না রোড এক্সিডেন্ট এ স্বামী স্ত্রী দুজনি মারা গেলেন, রেখে গেলেন দেড় বছর বয়সী ছোট্ট তিয়াশাকে। আর তখন থেকেই তিয়াশা ইশরাক ইহতেসামের পরিবারে বড় হতে থাকে। মাধ্যমিক দেয়ার পর তিয়াশাকে ইশরাক ইহতেসাম বিদেশ পাঠিয়ে দেন পড়াশুনার জন্য। অবশ্য পড়াশুনাই যে একমাত্র কারণ তা নয় এহসান পরিবারের সঙ্গে তখন ব্যবসায়ীক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন ইশরাক ইহতেসাম। পারিবারিক দ্বন্দ্ব আর পরিবারে সীমাবদ্ধ থাকে নি ব্যবসা জগতেও প্রভাব ফেলে সেই সময় তিয়াশাকে নিয়ে বেশ ঝামেলা হয় দুই পরিবারের মধ্যে। ভাগ্নির জীবন বিপদের মুখে ফেলতে চান না বলে তিয়াশাকে তিনি দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দেন। আর সেখানেই তিয়াশার সঙ্গে সামিরের আলাপ হয়। তিয়াশার ভার্সিটির সিনিয়র ছিলো সামির। তখন দুজনের কেউ জানতো না তাদের পারিবারিক ঝামেলার কথা।

অনেকটা সময় পেরিয়ে আসার পর যখন তিয়াশা দেশে ফিরে আসে তখনি সব জানতে পারে। ততদিনে ইয়াদ সামিরের মধ্যেও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। অজান্তেই সামির ইয়াদের সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে কেড়ে নেয়। হয় তো তখন থেকেই তাদের মধ্যকার ঘৃণার সম্পর্কটা শত্রুতায় পরিণত হয়। জীবনের টানাপোড়নে পড়ে তিয়াশা শেষ পর্যন্ত সামীরের কাছ থেকে সরে আসে। যদিও সামির তার সাথে খুব একটা বেশি কথা কখনো বলে নি। ভার্সিটিতে জুনিয়র এবং সিনিয়রের সম্পর্ক ছিলো তাদের। তিয়াশাই সামিরকে মনে মনে পছন্দ করতো আর একটা সময় সেটা ভালোবাসায় পরিণত হয়। তিয়াশা বেশ কয়েকবার বলার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু কখনো বলতে পারে নি। আর যখনি ঠিক করলো সব সামিরকে জানাবে তখন তার সামনে এসে দাঁড়ায় অতিতের সত্যিগুলো। সে জানে না কে প্রথম ভুল করেছিলো তবে এতটুকু জানে যারা তাকে ছোট থেকে এত আদর যত্ন করে বড় করে তুলেছে, যে ইয়াদ নিজের পাতের খাবার আগে মুখে না নিয়ে তিয়াশাকে খাইয়েছে তাদের সাথে আর যাই হোক বেইমানী করা চলে না।

পড়ন্ত বিকেকের সোনালী রোদ পুকুরের জলে চিকচিক করছে। তিয়াশা কতক্ষণ সেখানে বসে থেকে উঠার জন্য পা বাড়াবে ঠিক তখনি হুরায়রা এসে সেখানে উপস্থিত হলো। হুরায়রাকে দেখে তিয়াশা তার অধর যুগল প্রসারিত করলো। বলল,
“আরে হুরায়রা তুমি এখানে? কখন এলে পরিক্ষা কেমন হলো তোমার।”

হুরায়রা নিশ্চুপে তিয়াশার পাশে এসে বসলো। খানিকক্ষণ পুকুরের জলে অবনত দৃষ্টিপাত করে বলল,
“তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাস করবো তিয়াশা আপু?”

“আমাকে? কি কথা বলো?”

“তুমি সামির ভাইকে চেনো?”

তিয়াশা এবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো। স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বলল,

“তাকে চিনবো না কেনো। উনি যেহেতু আমাদের বিজনেস রাইভাল সেহেতু উনাকে চিনতে পারাটা স্বাভাবিক।”

“উঁহু আমি তার জন্য বলছি না।”
তিয়াশা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। হুরায়রার মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করে সন্দিগ্ধ কন্ঠে বলল,

“হঠাৎ এসব কথা কেন হুর? সামির তোমাকে কিছু বলেছে আমার ব্যাপারে।”

“উনি কিছু বলেন নি।”

“তবে?”

“উনি আমাকে একটা এলবাম দেখিয়েছিলেন। ভার্সিটি লাইফের পুরনো কিছু ছবি ছিলো সেখানে। সম্ভবত সেখানকার কোন একটা প্রোগ্রামের হবে।”

“তো?”

“আমি দুই তিনটে ছবিতে তোমায় দেখেছি।”
তিয়াশা এবার চুপ করে গেলো। নিজেকে লুকনোর আর কোন জায়গা রইলো না। এবার নিশ্চই হুরায়রা আরো অনেক প্রশ্ন করবে কিন্তু তিয়াশা চায় না এই ব্যাপারে আর কেউ কিছু জানুক। নাবাদ ছাড়া এত দিন এই কথা কেউ জানতো না কিন্তু হুরায়রা এই সকল প্রশ্ন করলে কি জবাব দিবে সে। হুরায়রা তিয়াশার মুখের দিকে জবাবের অপেক্ষা করলো। তিয়াশা পরিস্থিতি সামলে নেয়ার জন্য বলল,

“ওসব অনেক পুরনো কথা। আমার অনেক কিছুই মনে নেই। বাদ দাও তো এসব এখন বলো পরীক্ষা কেমন হয়েছে। ইয়াদ গেছিলো তোমার সাথে?”

“উঁহু। আমি যেতে বারণ করেছি।”

“কিন্তু কেন?”

“আমি চাই না উনি আমার জন্য সময় নষ্ট করুক।”

“তুমি বড্ড জেদি হুর।”

“ঠিক তোমার মতো।”
তিয়াশা চমকালো। ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো হুরায়রাকে। বুঝতে পারছে না সামির তার ব্যপারে কিছু বলেছে কিনা হুরারাকে। বললেও বলতে পারে আজকাল দুটিতে বিষণ ভাব হয়েছে। সামির এর মাঝে কয়েকবার এসেছেও এই বাড়িতে। প্রথম যেদিন এসেছিলো ইয়াদ বাড়ি ছিলো না। পরের বার ইয়াদ থাকতেই এসেছিলো। হুরায়রার জোরাজুরিতে আসতে বাধ্য হয়েছিলো। ইয়াদ অবশ্য সামিরের উপস্থিতিতে কোন প্রতিক্রিয়া করে নি মেনে নিয়েছিলো চুপচাপ। ইয়াদের চুপচাপ মেনে নেয়াটা এই বাড়ির সকলে সহজ ভাবে নিতে পারে নি অন্তত পক্ষে ইশরাক ইহতেসাম। কিন্তু ইয়াদ সকলে অবাক করে দিয়ে সামিরকে যথেষ্ট আপ্যায়ন করার কথা বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো।

হয় তো হুরায়রার উপর রাগ করেই মেনে নিয়েছিলো সব মুখ বুজে। হুরায়রা যে ইচ্ছা করে তাকে কষ্ট দিতে সামিরের সঙ্গে মেলামেশা করছে ইয়াদ সেটা বুঝতে পেরেছে। কিন্তু হুরায়রার মতে সে ইয়াদকে জ্বালানোর জন্য কিছুই করছে না। কথা বলতে বলতে সামিরের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এই ছাড়া কিছুই নয়। তাছাড়া ইয়াদের কাছ থেকে অনেক টা দূরে সরে এসেছে হুরায়রা। নিজের চারপাশে অদৃশ্য বেড়াজাল তৈরী করে রেখেছে সে। ইয়াদ এখন আর আগের মতো তাকে কথায় কথা শাস্তি দেয় না আবার রাগানোর জন্যও হেয়ালি করে কথা বলে না। কেমন একটা গম্ভীর প্রকৃতির হয়ে উঠেছে সে। হুরায়রা ইয়াদের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করলেও প্রকাশ্যে তেমন কিছুই বলে না কিংবা গায়ে মাখে না এমন ভাব করে তবে সকলের অগোচরে এই পরিবর্তনগুলো তাকে বড্ড যাতনা দেয়।

হুরায়রা খুব করে চায় ইয়াদ তাকে বুঝুক। অবহেলা নামক বস্তুটা যে কতটা ভয়ানক তা অনুভব করুক। কিন্তু না দিন শেষে ইয়াদ তার নিজের জায়গায় অবিচল। হুরায়রার অবহেলা যেন তাকে বিন্দু পরিমাণ পীড়া দিতে পারে নি এমনি ভাব তার। হুরায়রা যত তাকে আঘাত করার চেষ্টা করছে ততোই সে নিজেকে কঠিন থেকে আরো কঠিন মানবে পরিণত করছে।

(৫৭)

দুপুরের দিকে ইয়াদ কাউকে কিছু না জানিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো। কোম্পানির পার্টনারশিপের একটা অংশ মি.মেহেবুব সেলিম এহসানকে লিখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেটা জানতে পেরে ইয়াদ আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না শহরের যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পড়লো। মি.মেহেবুব শেষ পর্যন্ত এইভাবে বেইমানী করবে ভাবতে পারে নি। সেলিম এহসান কায়দা করে তাকে ডুবাতে বসিয়েছে কিন্তু সে এত সহজে নিজের অবস্থান কিছুতেই হারাতে পারবে না। মি.মেহেবুব যে কিছু একটা করবে সেটা তো আগেরই জানা কিন্তু নিজের পার্টনারশিপের অংশ এইভাবে সেলিম এহসানকে লিখে দিবে এটা ভাবতে পারে নি। নতুন প্রোজেক্টের পাঁচ পারসেন্ট শেয়ার যদি সেলিম এহসান পেয়ে যান তবে তার সব প্লান নষ্ট হয়ে যাবে। আর এইভাবে তীরে এসে তরী ডুবাতে পারবে না ইয়াদ। তাই গতরাতে মি.মেহেবুবের দেয়া শর্তটাই হয় তো তাকে মেনে নিতে হবে। এই ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বাবা যদি জানতে পারেন তাদের নতুন প্রোজেক্টে সেলিম এহসান ঢুকে পড়েছেন তবে আর উনাকে কেউ শান্ত করতে পারবেন না। ইয়াদ যথেষ্ট ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মি.মেহেবুবের কথাই তিনি মেনে নিবেন।

মি.মেহেবুবের বাড়ি সামনে এসে গাড়ি থামালো ইয়াদ। মাথায় হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সে যে এখানে এসেছে কাউকে জানিয়ে আসে নি। আসার পর মনে হলো অন্তত নাবাদকে সব কিছু জানিয়ে আসা উচিৎ ছিলো। কিন্তু এখন আর সময় নেই পরিস্থিতি সামাল দিতে তাকেই কিছু করতে হবে। গাড়ি থেকে নেমে ইয়াদ বাড়ির ভেতর চলে গেলো। মি.মেহেবুব মেয়ের সঙ্গে বসে কয়েকটা ফাইল ঘাটাঘাটি করছেন। ইয়াদ সেখানে উপস্থিত হতেই তিনি উঠে এগিয়ে গেলেন। ইয়াদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,

“আমি জানতাম আপনি আসবেন মি.ইয়াদ ইহতেসাম। আর যাই হোক সেলিম এহসানকে নিজের প্রজেক্টের অংশীদার আপনি করতে চাইবেন না।”

ইয়াদ প্রচন্ড রেগে আছে। নিজের রাগ দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে সে বলল,

“হঠাৎ আপনার এমন সুবুদ্ধি হলো কেন?”

“কারণ অনেক আছে। আপাতত বলতে চাইছি না।”

“আপনি কি মজা করছেন আমার সঙ্গে।”

“মোটেই না।”

“আপনি ভুলে যাবেন না আমার জন্যই কিন্তু আপনি সেলিম এহসানের প্রায় পেয়ে যাওয়া প্রজেক্টটা নিজে পেয়েছেন।”

“কিন্তু আপনি তার বিনিময়ে আমার কাছ থেকে কিছু পান নি? এমনি এমনি সাহায্য করেছিলেন। দেখুন ইয়াদ ব্যবসা মানেই হলো গিভ এন্ড টেক। আপনি আমাকে কিছু দিয়েছেন বিনিময়ে আমিও আপনাকে কিছু দিয়েছি।”

“আপনি ব্যবসা আর ব্যাক্তিগত জীবন দুটো এক করতে চাইছেন।”

“আমি আগেই চেয়েছিলাম লিয়ানাকে আপনি।”

“আর এই জন্য এত সুন্দর কৌশল প্রয়োগ করলেন বুঝি? তাছাড়া আপনার কি মনে হচ্ছে না ব্যবসায়ীক লাভের জন্য নিজের মেয়েকে ব/লি পাঠা বানাচ্ছেন। উনি এক জন শিক্ষিত মেয়ে উনার ইচ্ছা অনিচ্ছার মুল্য আছে।”

“সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না। মেয়ে যেহেতু আমার তাই ভাবনা টাও আমার নিজের।”

ইয়াদ একবার লিয়ানার দিকে তাকালো। স্বল্পভাষী মেয়েটা চুপচাপ নিজের জায়গা বসে আছে। মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে বড্ড মায়া হলো তার। বাবার ইচ্ছার কাছে নিজের ইচ্ছা নিজের মতামত জলাঞ্জলি দিতে হচ্ছে তাকে। এই কেমন পরিবারে তার জন্ম হলো যেখানে তার ইচ্ছার প্রাধান্য দেয়া হয় না।

চলবে,,,।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here