তোর নামেই এই শহর পর্ব -২৬ ও শেষ

#তোর_নামেই_এই_শহর
#লেখিকাঃসুমাইয়া_জাহান
#পর্বঃ২৬(অন্তিম পর্ব)

(৬৮)

ঘুম ভেঙ্গে ইয়াদ দেখতে পেলো তার ফোনে অনেক গুলো মিসড কল। শেষ কলটি এসেছে হুরায়রার নাম্বার থেকে। ইয়াদ ফোন রেখে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল। তার ঘরের জানালা থেকে টেমস নদীর তীর দেখা যায়। বাড়ির পরিচারিকা এসে কপি দিয়ে গেলে সেটায় চুমুক বসিয়ে ফোনটা পুনরায় হাতে নিলো। ঘড়িতে তখন সকাল সাতটা বাজে। এগারোটার প্লাইটে সে বাংলাদেশ ফিরছে, সেটাই মেসেজ করে জানালো কাউকে।

সারা রাত ঘুম হয়নি তার। এক প্রকার মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে শেষে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলো। হুরায়রা ফিরে গেছে মাস দুয়েক হলো। এই দু’মাসে সে একবারের জন্য ইয়াদকে কল করে নি। এক প্রকার গুটিয়ে নিয়েছে তার কাছ থেকে নিজেকে। ইয়াদ অবশ্য তাতে কোন প্রকার প্রতিবাদ করে নি। নীরবে যেতে দিয়েছে তাকে।
সেদিন হাসপাতালে তাদের দেখা হয়েছিলো। পবাদ লিয়ানার ছেলেকে দেখতে দুজনি ছুটে গিয়েছিলো অথচ দুজনে মুখোমুখি হয়েও কোন কথা বলে নি সেদিন। হুরায়রার অভিমানী মুখটার দিকে তাকিয়ে নিজেকে বড্ড কালপুরুষ বলে মনে হয়েছিলো তার। কিন্তু উপায় কি সে যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলো।

হুরায়রার প্রতি ইয়াদের অধিকার বোধ, শাসন সব কিছুই মেনে নিয়েছিলেন হুমায়রা। ইয়াদকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসতেন তিনি। কিন্তু যতদিন যেতে লাগলো ইয়াদের প্রতি মেয়ের এমন পাগলামীর কারণ কিছুটা আঁচ করতে পারেন তিনি। হুরায়রা যে ইয়াদকে ভালোবেসেছিলো সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ ছিলো না উনার। তিনি ভেবেছেন বয়সের দোষে মেয়ে হয় তো ভালোবাসা নামক নিছক কোন মোহে জড়িয়েছে, কিছুদিন গেলেই সেটা কেটে যাবে। কিন্তু তার ধারণা পুরোপুরিভাবে বদলে গেলো সেদিন যেদিন ইয়াদকে গভীর রাতে হুরায়রার ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে দেখলো। তিনি ইয়াদের কঠোরতাকে বিশ্বাস করতেন, ভেবেছিলেন হুরায়রার ছেলে মানুষী গুলোকে ইয়াদ প্রশ্রয় দিবে না কিন্তু তিনি ভুল ছিলেন। ইয়াদ হয় তো হুরায়রা আবেগ ভালোবাসাকে বার বার তুচ্ছরূপে ফিরিয়ে দিয়েছে কিন্তু সে মনে মনে হুরায়রাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে। হুমায়রা ভয় পেতেন ইয়াদ যদি নিজের কঠিনতার খোলস ছিঁড়ে বেড়িয়ে আসে। যদি হুরায়রার ভালোবাসার কাছে বিগলিত হয়ে নিজেকে সমর্পণ করে দেয় তবে? তিনি ইয়াদকে ভালোবাসলেও নিজের মেয়ের সাথে কখনোই মেনে নিতে পারতেন না। তিনি ভয় পেতেন ইয়াদ যদি তার দাদার মতোই কিছু করে বসে তবে নিজের ছোট্ট মেয়েটার জীবন ও হয় তো শেষ হয়ে যাবে। ইয়াদের কোপনস্বভাব, কড়া ব্যক্তিত্ব আর কঠোরপ্রকৃতি সব কিছুই তার দাদার মতো ছিলো।
অনেকে তো বলেই ফেলতো ইয়াদ একেবারে মুবিনুল আহসানের কার্বনকপি। দাদার সকল গুন যেন ইয়াদ নিজের মধ্যে গড়ে তুলেছে।
হুমায়রা ইয়াদের মধ্যে উপস্থিত দাদার স্বভাবটাকেই ভয় পেতো পাছে ইয়াদ দাদার চরিত্রটাও না জানি নিজের মধ্যে সুপ্ত ভাবে লালিত করছে।

তিনি প্রায় সময় লক্ষ্য করতেন ইয়াদ যতই হুরায়রার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করুক না কেন দিন শেষে হুরায়রার অলক্ষ্যে নিজের প্রেম স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করতো না। নিজেকে খোলা ডাইরির মতো উজাড় করে দিতো ঘুমন্ত হুরায়রার সমুখে। ইয়াদ হয় তো চাই হুরায়রা তার প্রেমে পড়ে নিজের সুন্দর সময়টাকে নষ্ট না করুক। বাল্যপ্রেম অভিশাপ সেটা মনে করেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল কিন্তু একটা সময় পর ঠিকি হুরায়রাকে নিজের ভালোবাসায় সিক্ত করে নিতো।

ইয়াদ যখন লিয়ানাকে বিয়ে করে বাড়ি তুলে আনে তখন না চাইতে মনে মনে খুশি হয়েছিলেন হুমায়রা। কিন্তু সেই খুশি বেশিক্ষণ ঠিকে নি তার যখন ইয়াদের বউ রুপে লিয়ানাকে দেখলো। ইয়াদ যে শেষ পর্যন্ত এমন এক কান্ড ঘটাবে তা ঘুণাক্ষরেও ভাবেন নি তিনি। নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করতে করতে সেই নিজের ছেলের ভবিষ্যৎও যে একি হলো তা কিছুতেই মানতে পারেন নি। সব কিছুর জন্য ইয়াদকেই দোষী মনে করলেন তিনি। ছেলের ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছে ইয়াদ এতে অবশ্য তিনি লিয়ানাকেও কম দোষ দেননি। লিয়ানা না চাইলে ইয়াদ কিছুতেই তাকে বিয়ে করে আনতে পারতো না তাই ভেবে গেছেন। এক দিকে মেয়ে অন্যদিকে ছেলের কথা ভেবে পাগল প্রায় হয়ে উঠেছিলেন। যখন সব কিছু মেনে নিয়ে স্বাভাবিক হলেন। হুরায়রার কথা ভেবে এতটুকু স্বস্তি পেলেন যে ইয়াদ বিয়ে করে ভালোই করেছে অন্তত হুরায়রার জীবন থেকে তো সরে গেছে। হুরায়রাও নিজেকে সামলে নিয়েছে। গুটিয়ে নিয়েছে ইয়াদ নামক আসক্তি থেকে ঠিক তখনি জানতে পারলো ইয়াদ লিয়ানা আসলে বিয়েই করে নি। লিয়ানা চলে যাবার আগে নিজের আলমারিতে কিছু কাগজ আর বিয়ের জাল সার্টিফিকেট এবং একটা চিঠি হুরায়রাকে লিখে রেখে যায়। আর সেটাই হাতে পরে হুমায়রার। সব জেনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে উনার। তিনি সঙ্গে সঙ্গে আলমারি থেকে সব সরিয়ে ফেলেন। কাউকে কিছু জানতে না দিয়ে ইয়াদকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠান। হাত জোর করে মিনতি করেন যেন ইয়াদ হুরায়রার জীবন থেকে চলে যায়। সত্যিটা যেন হুরায়রা কোন দিন কোন ভাবে জানতে না পারে। ইয়াদও তাই করে সব কিছু মেনে নিয়ে ভোর হওয়ার আগেই গ্রাম ছাড়ে। ছেড়ে আসে তার হুরমতিকে। যাকে ভালোবাসার অপরাধে অনিচ্ছাকৃত বিচ্ছেদের বাণ শাস্ত হিসেবে মাথা পেতে নিতে হয়েছে।

এলোমেলো চিন্তা করতে করতে বাসা থেকে বেড়িয়ে এসে গাড়ি উঠলো ইয়াদ। গন্তব্য এয়ারপোর্ট।
প্লাইটে উঠার আগে আরেকবার ফোন চেক করলো। তিয়াশা ম্যাসেজ করেছে।
“নিজেকে নির্বাসন দিয়ে আর যাই হোক ভালো থাকা যায় না আর কাউকে ভালো রাখাও যায় না।ইচ্ছাকৃত নির্বাসনের এবার অবসান হওয়া চাই। ফিরে এসে দেখো যার বিরহে সেচ্ছায় নির্বাসন নিয়েছো সে এখনো তোমার দেয়া বিরহের বহ্নিশিখা বুকে লালন করে বেড়াচ্ছে।”
ম্যাসেজ পড়ে মৃদু হাসলো ইয়াদ।
এতদিনের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে আজ।
কঠিনতা বলো কিংবা হৃদয়হীনতা এই দুইয়ের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসার যে সময় হয়েছে আজ।

জৈষ্ঠ্যের কাঠাফাটা রোদ্দুর। দুপুরের কড়া রোদ পুকুরের দিকে এলিয়ে পড়া আম গাছটার আগায় এসে পড়েছে। হুরায়রা কঞ্চি হাতে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে। গাছের আগায় বেশ কয়েকটা আম পেকে হলুদ হয়েছে দুপুরের রোদ পড়তেই সেগুলো সোনালি বর্ণ ধারণ করেছে। ইনান গাছের আগায় উঠে বলল,
“এই হুরায়রা কঞ্চিটা খানিক এগিয়ে দে, নাগাল পাচ্ছি না।”
হুরায়রা কঞ্চি এগিয়ে দিতে যাবে তখনি পায়ে কাপড় জড়িয়ে গেলো। পানিতে পড়ে নিবে ঠিক সে সময় কেউ পেছন থেকে এক টানে তাকে সরিয়ে নিয়ে এলো। ঘটনা এত দ্রুত ঘটলো যে হুরায়রা কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। নিজেকে বাহুবন্ধ অবস্থা থেকে আলগা করে নিবে তখন ইনান বলল,
“ইয়াদ ভাই,,,,।”
ইনানের মুখে ইয়াদ শব্দটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো হুরায়রা। পেছন ফিরে তাকাবে সেই সাহস পাচ্ছে না। সত্যিই কি ইয়াদ এখানে এসেছে? নিজেকে কারো বাহুতে আবদ্ধ দেখে সহসায় ফিরে দেখলো। ইয়াদের গম্ভীর দৃষ্টি দেখে ছিটকে সরে এলো। কোমরে আঁচল গুঁজতে গুঁজতে বলল,
“এই লোকটা এত বছরেও পিছন ছাড়ছে না বিভ্রম হয়ে সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
ইয়াদ গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“ইনান হুরমতি কে বলে দে আমি তার বিভ্রম নয়, সশরীরে দাঁড়িয়ে আছি।”
হুরায়রা পুনরায় ঘুরে দাঁড়াল। সত্যিই তো এটা তার বিভ্রম নয়। ইয়াদ সত্যিই তবে এসেছে। বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো। পাঁচ পর ঠিক সেই মুহূর্তটাই যেন তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ছাব্বিশ বছরের যুবক ইয়াদ যেনো এখনো তার সামনে দাঁড়িয়ে আর সে? এখনো ষোল বছরের কিশোরীটি। লাজ্জা পেলো হুরায়রার। লজ্জায় আরক্ত হয়ে উঠলো তার গাল দুটো। কিছু বলতে চেয়েও পারলো না। দৌড়ে ছুটে গেলো বাড়ির দিকে।

(৬৯)
বেগুনী রাঙা শাড়ি পড়েছে হুরায়রা। দু হাতে কালো কাঁচের চুড়ি পড়েছে। শুভ্র পা দুটি রাঙ্গিয়েছে আলতায়। চুলে হাত খোঁপা করে কয়েকটা শিউলি গুঁজেছে খোঁপায়। কঁপালে কালো
টিপ পড়ে আয়নায় মুখ দেখে মৃদু হাসলো। ইয়াদ ঘাটের সিঁড়িতেই বসে ছিলো। হুরায়রা জলে আলতা রাঙা পা ডুবাতেই ইয়াদ বলল,
“এখন আর ষোলোবৎসরের ষোড়শীটি নেই তুই বুঝলি তো হুরমতি। যতই সাজিস না কেন সেই বুড়ি বুড়িই দেখাচ্ছে।”
ইয়াদের কথায় ঠোঁট ফুলায় হুরায়রা। চোখ বাঁকিয়ে বলল,

“লোকে বলে কুড়ি তে বুড়ি হয়, কিন্তু আমি তো বাইশে পা রেখেছি। আমি কিন্তু বুড়ির খাতায় নাম না লেখিয়ে যুবতীতে নাম লেখিয়েছি।”

“যে জন পার করে কুড়ি সে জন বাইশেও হয় বুড়ি।”

“বত্রিশ বছরেও আপনি যুবক রইলেন। বয়সটাকে কি এখনো ধরে রেখেছেন নাকি।”

“বয়স ধরে রাখি নিরে হুরমতি। তোর হবো বলেই এখন যুবক হয়ে রয়েছি। এই যৌবন ধরে রাখতে কম কষ্ট করতে হয় নি আমাকে।”

“তা এত কষ্ট করতে বলেছে টা কে আপনাকে।”

“কষ্ট না করলে তো লোকে তোকে বুইড়া ইয়াদের বউ বলে খেপাতো।”
হুরায়রা মুখ বাঁকিয়ে জলের দিকে দৃষ্টি দিলো। জলে তার প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসলো সে।
হুট করেই সেদিন ইয়াদ কাউকে কিছু না বলে দেশে ফিরে এসেছিলো। ইয়াদের আসার খবর শুধু তিয়াশাকেই দিয়েছিলো। হুমায়রা এত বছরে বুঝতে পেরেছে ইয়াদ শুধুমাত্র হুরায়রাকেই প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে। আর হুরায়রা?

ইয়াদকে হঠাৎ দেখে অবাক হয়েছিলো হুরায়রা। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে নি যে ইয়াদ সত্যিই এসেছে। খানিকটা সময় লেগেছিলো বিশ্বাস করতে অথচ কেন যেন খুশি হতে পারে নি সে।
লন্ডনের কথাগুলো মনে পড়তেই বড্ড অভিমান হয়েছিলো তার। সেদিন ইয়াদ তাকে ফিরিয়ে না দিলে হয় তো আজকের দিনটা অন্যরকম হতো।
সামিরের সাথে হাসপাতালে আসার পর ইয়াদও সেখানে আসে। দুজন মুখামুখি হয়েও কেউ কারো সাথে একটি কথাও বলে নি। একরকম তাকে এড়িয়ে গেছে ইয়াদ। প্রচন্ড কষ্ট হয়েছিলো হুরায়রার। এতবছরের অপেক্ষার আনন্দ নিমিষে বিষাদে পরিণত করতে এতটুকু সময় নেয় নি ইয়াদ। তাকে দেখা না দিয়ে মুখোমুখি না হয়ে পালিয়ে গেছে। অথচ ঠিক কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে দুজন মুখোমুখি হলো অথচ কারো মুখেই পুনরায় মিলনের সেই খুশির আলোকচ্ছটা নেই।
সেদিন কোন আলাপ আলোচনা ছাড়াই দুজন দু পথে পা বাড়িয়েছিলো। হুরায়রা একাই দেশে ফিরে এসেছিলো।

সেদিন ইয়াদের আবদ্ধ বাহু থেকে নিজেকে মুক্ত করে দৌড়ে বাড়ি ছুটে আসে হুরায়রা। নিজের ঘরে গিয়ে দরজায় খিল তুলে। প্রচন্ড অভিমানে দুচোখের পাতা সিক্ত হয়ে উঠে। এতদিনের সকল রাগ অভিমান অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়ে।
রাতে সকলে ঘুমিয়ে পড়লে ইয়াদ হুরায়রার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ায়। কিছুটা ইতস্ততা করে দরজায় করাঘাত করে। হুরায়রা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। সবাই ব্যপারটা বুঝতে পেরে তাকে আর বিরক্ত করে নি। হুমায়রা মেয়েকে ডাকতে চাইলেও স্বামীর নিষেধে আর ডাকেন নি। মেয়েটার উপর দিয়ে কম ঝড় যায় নি। তত দিনে সকলে বুঝে গিয়েছিলো মেয়েটা যে ইয়াদকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলো।

ইয়াদ কয়েকবার করাঘাত করতেই দরজা খুলে দেয় হুরায়রা। খাবার হাতে করে ঘরে ঢুকে ইয়াদ একটা চেয়ার টেনে বসে টেবিলের উপর খাবার রেখে বলে,
“অনেক রাত হয়েছে হুর খাবার টা খেয়ে নে।”
হুরায়রা কিছু না বলে চুপচাপ নতমস্তকে দাঁড়িয়ে থাকে। ইয়াদ কিছুসময় অপেক্ষা করে শেষে উঠে দাঁড়ায়। জানালার বাহিরে ছাতিম গাছটা এখনো আগের মত দাঁড়িয়ে আছে। তীব্র সুবাস ছড়াচ্ছে ছাতিম ফুলে। ইয়াদ দীর্ঘ শ্বাস টেনে সুবাস নিলো। দু কদম এগিয়ে এসে হুরায়রার সামনে বাহুতে হাত গুঁজে দাঁড়াল। বলল,
“সব কিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে হুর। নির্দিষ্ট সময়ের আগে চাইলেও আমরা কিছু করতে পারি না। আল্লাহ সব কিছু আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন সেখানে তোর আর আমার কিছু করার ছিল না।”
“চাইলেই পারতেন সব কিছু ঠিক করে নিতে। ভালোবেসে তা গোপন করার কি খুব দরকার ছিলো?”
“বয়সটা সঠিক ছিলো না। ওই বয়সে যা ভালোবাসা বলে আমরা মনে করি তা নিছক ছলনা কিংবা মোহ মাত্র।”
“কিন্তু আমি তো মোহে পড়িনি। পেড়েছিলাম ভালোবাসায়।”
“বাল্য প্রেম অভিশাপ!”

“আমি তা মানি না।”

“তোকে মানতে বারণ করেছে কে?”

“আপনি ই তো আমাকে,,,।”

“আমি শুধু উত্তম সময়ের অপেক্ষা করেছিলাম কিন্তু তার মাঝে অনেক কিছু ঘটে গেছে। আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম হুর।”

“আপনি নিষ্ঠুর। আগেও ছিলেন আর এখনো আছেন।”

“তাই তো ফিরে এসেছি আবার।”

হুরায়রা কথা বলল না। কান্নাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে উঠতে চাইলো। নিজের আবেগ সংবরণ করতে চেয়েও পারলো না। অশ্রুজল গড়িয়ে পড়লো কপোলদ্বয় বেয়ে। ইয়াদ এগিয়ে এসে তার মুখটা আঁজলা ভরে নিলো। মুখের কাছে মুখ এনে বলল,
“তুই তো আমার সেই প্রেম যাকে আমি দেখেছিলাম আগুন ভরা যৌবনে।
তোর তৃষ্ণায় নিজেকে হারিয়েছি বার বার অথচ ছুঁয়ে দেখার সাহস হয় নি কখনো।”
হুরায়রা নিশ্চুপে ইয়াদের কথা গুলো শ্রবণ করলো। যার অপেক্ষায় এত দিবস রজনী পার করেছে সেই মানুষটা তার এত কাছে।
হঠাৎ ইয়াদ তার কপলে উষ্ণ পরশ এঁকে দিলো। হুরায়রা লজ্জায় লাল হতে দেখেই ইয়াদ তার অধর যুগল প্রশ্বস্ত করে বলল,
“প্যাঁচ প্যাঁচ করে কেঁদে চোখ দুটো তো রসোগোল্লার মতো বানিয়ে ফেলেছিস। দেখতে কি বিচ্ছিরী লাগছে রে তোকে।”
ইয়াদ কথা শেষ করতেই হুরায়রা গাল ফুলালো। হুরায়রাকে গাল ফুলাতে দেখে ইয়াদ পুনরায় হো হো করে হেসে উঠলো।

কথাগুলো মনে করে নিজের মনে হাসলো হুরায়রা। ইয়াদ ইতিমধ্যে ঘাট ছেড়ে পাড়ে উঠে এসেছে। শিউলি তলা শুভ্র হয়ে উঠেছে ফুলে। ইয়াদ কিছু ফুল মুঠোভরে নিলো। হুরায়রা কোচর মেলে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াদ ফুল তুলে কোচর ভরে দিলো। হুরায়রা সেখান থেকে আরো কয়েকখানা শিউলি তুলে খোঁপায় গুঁজে নিলো। ইয়াদ হাত বাড়িয়ে দিলো। বলল,
“সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে এসেছে হুর চল বাড়ি যাই।”
“উঁহু। আজ আর বাড়ি যেয়ে কাজ নেই চলুন সারা সন্ধ্যেটা না হয় ঘাটে বসেই কাঁটাই।”

আকাশে খুন বড় চাঁদ উঠেছে। নিশাকান্তের আলোয় চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠেছে। ইয়াদের কাদে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে আছে হুরায়রা। ইয়াদ পুকুরের শান্তজলে দৃষ্টি পাত করে মনে মনে বলল
“তোর নামেই এই শহর রেখেছিলাম কোন এক সন্ধ্যের ঘন আধারিতে। আজও সে সন্ধ্যে নেমে এলো। তবে আজ আর কোন আধারি নয় নিশাকান্তের আলোয় আলোকিত আমার হুরপরী। ঘুরে বেড়িয়ে বিচরণ করছে আমার মনের শহর জুড়ে। আমার অতন্দ্রিতা। আমার নিশি জাগরনকারিনী। তোর চোখে চেয়ে হাজার সন্ধ্যে কাটিয়ে দিতে পারি, কাটিয়ে দিতে পারি হাজার রাত্রি দিবস।”

সমাপ্ত

(এডিট ছাড়া পর্ব। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। অনেক অপেক্ষা করিয়েছি গল্পটা নিয়ে। আর অপেক্ষা করতে হবে না কারো। নতুন গল্প নিয়ে আসবো খুব তাড়াতাড়ি তবে আর অনিয়মিত হয়ে নয়। একেবারে নিয়মিত হয়েই ফিরিবো। ধন্যবাদ সবাইকে এত অপেক্ষা করে, দৈর্য নিয়ে গল্পটা পড়ার জন্য।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here