হৃদমাঝারে রাখবো পর্ব -০১

ভার্সিটিতে সবার সামনে ফিহা আদ্রিবকে থা’প্প’ড় মে’রে বললো, তোর মত গু’ন্ডা, খারাপ ছেলের সাথে আমি কখনও কথা বলবো না ভালোবাসা তো দূরের কথা। তুই যদি আবার আমাকে বিরক্ত করিস তাহলে আমি স্যার দের কাছে বিচার দিতে বাধ্য হবো

” ফিহার কথাগুলো আদ্রিবের হৃদয়ে আঘাত করলো। ফিহার কাছ থেকে এমন কিছু শুনবে তার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলোনা আদ্রিব। আদ্রিব ফিহাকে বললো, এমন করছো কেন? আমি কি করেছি?

” তুই কিছু করিসনি। আর কখনও আমাকে বিরক্ত করবিনা।

” ওই পিচ্চি আমার ইচ্ছে বিরক্ত করবো।

‘ কেন বিরক্ত করবি? আমি তোর কি ক্ষতি করেছি?

‘ কিছু করোনি তাও বিরক্ত করবো৷ এখন বলো তুমি আহানের সাথে কথা বললে কেন

‘ আমি তোকে বলতে বাধ্য নই

‘ হ্যা, আমাকেই বলতে বাধ্য

‘ তোর আর কিছু বলার না থাকলে এখান থেকে যেতে পারিস

‘ যাবো না৷ আগে বলো তুমি তারপর

‘ তোকে বলতে আমি বাধ্য নই। আমার উপর অধিকার খাটাতে আসবি না৷ আমি তোর এমন কেও না যে তুই আমার উপর অধিকার খাটাতে আসবি

‘ আমার ইচ্ছে আমি অধিকার খাটাবো। আমি যা বলবো তাই শুনবে তুমি

‘ আমি বাধ্য নই। গেলাম আমি

ফিহা যেতে নিলে আদ্রিব ওর হাত ধরলো। তখন ফিহা আদ্রিবকে থা’প্পড় মেরে বললো, তোর সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরার ৷ তোকে কতবার বলতে হবে আমাকে বিরক্ত না করতে। আমি যা ইচ্ছে করবো তাতে তোর কি

‘ সরি, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার উপর এত রাগ কেনো সেটা তো বলবে। বুঝতে পেরেছি, ঘুরতে গিয়েছি আর ওই মেয়ের সাথে কথা বলেছি তার জন্য রাগ৷ সরি আমি

‘ আজব তো! তোর যা ইচ্ছে করবি তাতে আমার কি

‘ আগে তো এমন ছিলেনা তুমি। তাহলে হঠাৎ কি হলো তোমার

‘ এখন থেকে এমনই থাকবো। অনেক কিছু বুঝতে শিখেছি এখন যা আগে বুঝতে পারিনি। আপনার যদি আর কিছু বলার না থেকে তাহলে এখান থেকে যেতে পারেন। আমি আর কখনও আপনার সাথে কথা বলবো না। আর আপনিও আর কখনও আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না , আমাকে বিরক্ত করবেন না। ভালো থাকবেন

‘ প্লিজ এমন করো না। মানছি আমার ভুল হয়েছে। আমি সরি, আর কখনও এমন হবেনা।

‘ আজব তো! আপনি কিসের ভুলের কথা বলছেন। আপনার যা ইচ্ছে করবেন তাতে আমার কি। আমি কেন আপনার উপর রেগে থাকবো৷ আপনার কারও সাথে কথা বলা বা ঘুরতে যাওয়ার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।

‘ এমন করো না প্লিজ। দেখো, আমি যখন তোমার উপর রাগ করেছিলাম তখন কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে যাইনি৷ তাহলে এখন তুমি কেন আমাকে ছেড়ে যাচ্ছো?

‘ তোকে কতবার বলবো আমি তোর উপর রাগ করবো কেন। আমি শুধু আমারটা জানি। আগে অনেক কিছু বুঝতে পারতাম না। এখন বাস্তবতা বুঝি। তুই আর কখনও আমাকে বিরক্ত করতে আসবি না।

” এটা বলে ফিহা চলে গেলো। ফিহার বলা কথা গেলো আদ্রিবের হৃদয়ে আঘাত করলো। আদ্রিব যেনো থমকে গেলো ফিহার কথা শুনে৷ আদ্রিব কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা ফিহা এতটা পরিবর্তন হয়ে যাবে। আদ্রিব কি করবে কিছুই বুঝতেছে না৷ ওর কি করা উচিত। মনে হচ্ছে যেনো আদ্রিব ওর দুনিয়াতে নাই। বার বার ওর মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে, ফিহা ওকে ছেড়ে চলে গেছে ”

আদ্রিব এখনও একি স্থানে দাঁড়িয়ে আনমনে তাকিয়ে আছে। আদ্রিব যেনো অনুভূতিহীন হয়ে গেছে। কিছুখন পর আদ্রিবের বন্ধুরা আসলো। আদ্রিবকে শান্তনা দিতে লাগলো। ওরা আদ্রিবকে নিয়ে গেলো।

‘ আদ্রিবের বন্ধুরা ওকে বললো, দোস্ত মন খারাপ করিস না। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

আদ্রিব বললো, কিছু ঠিক হবেনা ভাই। ও আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছে। এখন হঠাৎ কোনো কারন ছাড়া কিভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারে? আমি ওরে ছাড়া থাকতে পারবো না ভাই। আমার বর্তমান পরিস্থিতি তোদের বুঝাতে পারবো না। মনে হচ্ছে আমার হার্টবির্ট বেড়ে যাচ্ছে। সাইকো হয়ে যাচ্ছি আমি। আমি করবো কিছু মাথায় আসছে না ভাই।

আদ্রিবকে এভাবে উত্তেজিত হতে দেখে ওর ফ্রেন্ডরা বললো, শান্ত থাক ভাই। এত উত্তেজিত হসনা। অসুস্থ হয়ে পড়বি। তুই তো জানিস এরকম উত্তেজিত হলে তোর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

‘ আমি কিছু ভাবতে পারছিনা ভাই। ফিহা আর আমার সাথে কথা বলবেনা এটা আমি মেনে নিতে পারছিনা ভাই। ও কিভাবে আমাকে ভুলে যেতে পারে বল। আমি নাকি ওর কাছে বিরক্তিকর। সত্যিই কি আমি ওকে বিরক্ত করি? ও কি সত্যিই আমার অধ্যায় ভুলে যেতে চায়? কিভাবে করতে পারলো ও এটা?

আদ্রিব আর কিছু বলতে পারলে না। তার আগেই ও মাথা ঘুরে পড়ে গেলো। আদ্রিবের ফ্রেন্ডরা এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। আদ্রিব কোন কিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত থাকলে, উত্তেজিত হলে ওর এরকম সমস্যা হয়। ডাক্তার আদ্রিবকে অনেক বার সতর্ক করে দিয়েছে উত্তেজিত না হতে৷ আদ্রিবের ফ্রেন্ডরা ওকে এটাই বুঝিয়েছিলো। সবাই যেই ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই হলো। আদ্রিবের ফ্রেন্ডরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে লাগলো।

*****

ফিহা ক্যাম্পাসে ওর ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। হঠাৎ ফিহা দেখতে পেলো আহান ও তার ফ্রেন্ডরা তাড়াহুড়ো করে কোথাও যেনো যাচ্ছে। ফিহা দূর থেকে বললো, খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছে আহান ভাইয়া? তা ভাবি কি অপেক্ষা করছে নাকি?

আহান ফিহার ডাক শুনে থামলো। ওর ফ্রেন্ডদের অপেক্ষা করতে বলে ফিহার কাছে গেলো। ফিহাকে বললো, একটু ব্যস্ত বলতে পারো। তবে অপেক্ষা করার মত কেও নেই।

ফিহা বললো, এটাও কি মানা যায় ভাইয়া! ভার্সিটির সবথেকে ভদ্র ছেলেটার গার্লফ্রেন্ড নেই।

‘ আসলে হয়ে ওঠেনি। তা তোমার কি অবস্থা? কি করছো?

‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া। ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তা আপনাকে অহেতুক থামিয়ে দিলাম। আপনার হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। সরি ভাইয়া

‘ আরে না! সরি বলতে হবেনা। আচ্ছা তোমরা থাকো। পরে কথা হবে

আহান চলে গেলে ফিহা আর ওর ফ্রেন্ডরা আড্ডা দিতে লাগলো। ফিহার ফ্রেন্ডরা আহানকে নিয়ে কথা বলতে লাগলো। আহান ভার্সিটির সবথেকে ভদ্র ছেলে। স্যাররাও আহানকে প্রচন্ড ভালো জানে।

” ফিহার ফ্রেন্ডরা ওকে বললো, দোস্ত আহান ভাইয়া সিঙ্গেল আছে। তোদের জুটি কিন্তু মন্দ হত না ”

এটা বলেই ফিহার সব ফ্রেন্ডরা হাসতে লাগলো। ফিহা ওদেরকে বললো, ধু’রো কি যে বলিস তোরা। আমি কোনো রিলেশনের ভিতরে নাই।

হঠাৎ ওরা সবাই দেখলো সবাই তাড়াহুড়া করে কোথাও যেনো যাচ্ছে। ফিহা একজনকে জিজ্ঞেস করলো, কোথায় যাচ্ছো তোমরা?

‘ আদ্রিব অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

কথাটা শুনে ফিহা চুপ হয়ে গেলো। ফিহার ফ্রেন্ডরা বললো, দোস্ত আমাদের কি যাওয়া উচিত?

‘ ফিহা বললো, আমরা কেন যাবো ওই গু’ন্ডাটার জন্য। হয়তো কারও সাথে মা’রা’মা’রি করেছে তাই এমন হয়েছে।

ফিহার ফ্রেন্ডরা বললো, তারপরও সবাই যেহেতু যাচ্ছে তাই চল গিয়ে দেখি

ফিহা একটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বললো, তোরা যখন এতি উদগ্রীব হয়ে আছিস তাহলে চল যাই

চলবে—-
#হৃদমাঝারে_রাখবো
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here