হৃদমাঝারে রাখবো পর্ব -০২

#হৃদমাঝারে_রাখবো
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ২
ফিহা আর ওর ফ্রেন্ডরা গিয়ে দেখলো আদ্রিবকে ওর ফ্রেন্ডরা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। আদ্রিবের ফ্রেন্ডরা ফিহার দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে আছে৷ ওরা ফিহাকে কিছু না বলে আদ্রিবকে নিয়ে যেতে লাগলো।

ফিহা ওর ফ্রেন্ডদের বললো, দেখ কত খারাপ। আমাদের দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে

ফিহার ফ্রেন্ডরা ওকে বললো, আস্তে কথা বল সবাই শুনতে পাবে তো

ফিহা ওর ফ্রেন্ডদের বললো, আমি তো তোদের আসতেই নিষেধ করেছিলাম তারপরও আসলি কেন?

তখন রাইসা ফিহাকে বললো, তোর কি হয়েছে বলতো? হঠাৎ এরকম করছিস কেন? একসময় তো আদ্রিব ভাইয়ার সাথে কত কথা বলতি। তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো যে তাকে এতটা ঘৃনা করিস? আমরা সবাই ভেবেছিলাম তোরা হয়তো রিলেশনে যাবি৷ আর আজ তুই এমন ব্যবহার করছিস মনে হচ্ছে যেনো আদ্রিব ভাইয়া তোকে কত বছর ধরে বিরক্ত করছে। আগে তো আদ্রিব ভাইয়ার সাথে সারাক্ষণ কথা বলতি। আর আজকে হঠাৎ তার সাথে এরকম ব্যবহার করে চলে গেলি। আদ্রিব ভাইয়া তোকে ভালোবেসে ফেলেছে তুই তাকে তোর মায়ায় ফেলে এভাবে ছেড়ে যেতে পারিস না।

রাইসার কথা শুনে ফিহা বললো, তুই তাহলে কথাও বলতে পারিস। আমি তো ভেবেছিলাম তুই বোবা হয়ে গেছিস৷ সেই কখন থেকে আমরা আড্ডা দিচ্ছি আর তুই চুপ করে আছিস। অবশেষে তোর মুখে কথা ফুটলো। শোন, আমার তখন ভালো লাগছিলো তাই কথা বলেছি। অনেক কিছুই বুঝতাম না। আবেগ ছিলো তখন। এখন বাস্তবতা বুঝতে শিখেছি৷ কেও যদি আমাকে ভালোবাসে তাহলে সেখানে আমি কি করতে পারি?

‘ তুই তাকে তোর মায়ায় ফেলতে বাধ্য করেছিস। আদ্রিব ভাইয়া কেমন রাগি,কিরকম তা তুই আগে থেকেই জানতিস। তুই তার লাইফে এসেছিলি। তাকে তোর আবেগে জড়িয়ে নিয়েছিস৷ আর এখন এমন রিয়্যাক্ট করছিস যেনো তুই কিছু জানিসই না।

‘ এখন কি তুই আমার ফ্রেন্ড হয়ে ওর জন্য ঝগড়া করবি

‘ ঝগড়া করছিনা। আমি তোর ফ্রেন্ড তাই তোকে সত্যিটা বলছি। তুই যদি আদ্রিব ভাইয়ার সাথে আবার কথা বলিস তাহলেও তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড থাকবি আর কখনও কথা না বললেও তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড থাকবি। এটা কোনদিন পরিবর্তন হবেনা। আমি শুধু তোকে সত্যিটা বলছি

ফিহা আর রাইসাকে এভাবে কথা বলতে দেখে ওদের অন্য ফ্রেন্ডরা বললো, ভাই এখানে একটা দূর্ঘটনা হয়েছে সবাই আছে এখানে আর তোরা নিজেদের ভিতর তর্ক করছিস। তোদের তর্ক করার হলে অন্য কোথাও চল। তাও এখানে এরকম করিস না।

ফিহা বললো, আমি তো আসতেই চাইনি এখানে। তোরা জোর করে নিয়ে এসেছিস। কোথায় মা’রা’মা’রি করে এমন অবস্থা হয়েছে তার জন্য আমাদের কেন আসতে হবে

‘ মা’রা’মা’রি হলে তো শুনতাম। কেও তো বললো না মা’রা’মা’রির কথা।

‘ তাছাড়া এরকম হবে কেন যে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া লাগবে। দেখ কার সাথে আবার কি ঝামেলা বাধিয়েছে।

‘ চল তো এখান থেকে। তোরা যেভাবে কথা বলছিস তাতে এখানে না থাকাই ভালো

‘ আমি তো সেই কখন থেকেই বলছি কিন্তু তোরা তো আমার কথা শুনছিস না

ফিহা আর ওর ফ্রেন্ডরা ওখান থেকে চলে আসলো। রাইসা বললো, আচ্ছা তখন আদ্রিব ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা আমাদের দিকে ওইরকম রাগিভাবে তাকালো কেন?

ফিহা বললো, কি জানি৷ যে যেরকম তার ফ্রেন্ডরাও তো সেরকমই হবে৷

‘ একসময় তো এই মানুষটা ছাড়া কিছুই বুঝতা না৷ সবসময় তার সাথে কথা বলতা। এখন হঠাৎ করে কি এমন হলো যে তাকে সহ্যই করতে পারিস না

‘ কিছু হয় নায়। মানুষ তো আর সবসময় একরকম থাকেনা। আগে আবেগ ছিলো এখন বাস্তবতা বুঝতে পারছি

‘ সেই কখন থেকে শুধু এটাই বলে যাচ্ছিস। তা কি এমন বাস্তবতা তুই বুঝতে পেরেছিস যে আদ্রিব ভাইয়ার সাথে আর কথাই বলবিনা।

‘ কিছুনা

‘ আমি তোর এরকম আচরনে খুবি অবাক হচ্ছি। তুই কিন্তু একদিন আমাকে অন্যকিছু বলেছিলি আর আজ তুই এরকম বলছিস।

‘ বললাম না তখন আবেগ ছিলো তাই বলেছি। তুই আমার ফ্রেন্ড না ওর ফ্রেন্ড বলতো

রাইসা আর কিছু বললো না। রাইসা ফিহার বেস্টফ্রেন্ড অথচ ও নিজেও জানেনা ফিহা এমনটা কেন করলো। অবশ্যই কিছু কারন থাকবে তা না হলে ফিহা এমনটা করবেনা।

কিছুখন পর ***

আদ্রিবকে ওর ফ্রেন্ডরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। ডাক্তার আদ্রিবকে স্যালাইন দিয়েছে। লো প্রেশারের কারনে এমনটা হয়েছে। ডাক্তার আদ্রিবের ফ্রেন্ডদের বললো, এই বয়সেই লো প্রেশার৷ খাওয়া- দাওয়া কি ঠিকমত করেনা। এত চিন্তা কিসের?

আদ্রিবের ফ্রেন্ডরা ডাক্তারকে সত্যিটা বলতে পারলো না। ডাক্তার ঔষধ লিখে চলে গেলো। আদ্রিব মোটামুটি কথা বলতে পারে। আদ্রিব বললো, আব্বু- আম্মুকে জানানোর দরকার নেই। এসে আবার হাজারটা প্রশ্ন করবে।

কিয়াম বললো, অনেকবার তোর ফোনে কল করছিলো আন্টি। আমি তো তাদের বলে দিয়েছি।

‘ কপাল! এখন কি হবে। এসে যখন জিজ্ঞেস করবে এরকমটা কিভাবে হলো তখন কি বলবো?

‘ বলবি এক মেয়ের জন্য আমার এই অবস্থা।

‘ ফাইজলামি করিস না ভাই। আমার অনুভূতি বুঝবিনা৷ ও কেন এমনটা করলো? হঠাৎ এরকম পরিবর্তন কিভাবে হতে পারে? আমি নাকি ওর কাছে বিরক্তিকর, গু’ন্ডা, খারাপ আমি। আগে যখন কথা বলছিলো তখন কি এগুলো খেয়াল ছিলোনা।

‘ শান্ত হ। তোর স্যালাইন চলছে৷ তখন বলেছিলাম আমরা এত উত্তেজিত হস না। এখন দেখলি তো কি হলো

‘ তখন আমি আমার ভিতরে ছিলাম না। আমার মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছিলো ফিহা আমাকে ছেড়ে গেছে। আর কখনও আমার সাথে কথা বলবেনা। ফিহার বলা কথাগুলো আমার হৃদয়ে তীরের মত আঘাত করছিলো৷ আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিনা ফিহা এমনটা বলেছে।

‘ এখন থাম ভাই। আগে সুস্থ হ পরে দেখা যাবে। এখন একটু চুপ করে থাক

*****

ফিহা আর ওর ফ্রেন্ডরা ক্লাস করে রুম থেকে বের হয়ে শহীদ মিনারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। হঠাৎ ওদের এক ফ্রেন্ড এসে ফিহাকে বললো, তুই চলে আসার পরই আদ্রিব ভাইয়া মা’থা ঘুরে পরে গেছিলো। কি বলেছিলি তাকে যে এমন হলো

এটা শুনে রাইসা ফিহার দিকে তাকালো। ফিহা রাইসার থেকে চোখ সরিয়ে বললো, কেও মা’থা ঘুরে পরে গেলে আমি কি করতে পারি? আমার সাথে কথা বলেছিলো তারমানে এই না যে আমার জন্য এমনটা হয়েছে।

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here