হৃদমাঝারে রাখবো পর্ব -০৩

#হৃদমাঝারে_রাখবো
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৩
ফিহার কথা শুনে রাইসা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রাইসা চিন্তাও করেনি ফিহা এমন রিয়্যাক্ট করবে। আদ্রিবের জন্য ওর একটু হলেও মন খারাপ হওয়ার কথা ছিলো। রাইসা যেনো এই ফিহাকে মোটেই চিনতে পারছেনা৷ আগের ফিহা আর এখনকার ফিহার মধ্যে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করলো রাইসা।

রাইসা ফিহাকে বললো, আদ্রিব ভাইয়া লাস্ট তোর সাথে কথা বলেছিলো। তুই চলে আসার পরই এরকমটা একটা ঘটনা ঘটলো। আর তুই এভাবে রিয়্যাক্ট করছিস!

ফিহা বললো, তো আর কিভাবে রিয়্যাক্ট করবো? এখন কি তার জন্য কান্না করবো নাকি? আমি কি তাকে বলেছি নাকি যে আমি চলে গেলে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়ো। আমার দোষ কেন হবে এখানে। যেহেতু আমার কোনো দোষ নেই তাই রিয়্যাক্ট কেন করতে হবে।

‘ আমি না তোকে ঠিক বুঝতে পারছিনা। একটা মানুষ তোকে কতটা ভালোবাসে তোর জন্য অসুস্থ হয়ে পড়লো। আর তোর কাছে কিনা তার কোনো মূল্যই নেই। অন্তত সমবেদনা তো জানাতে পারতি৷ এতটুকু মনুষ্যত্ববোধ তো থাকা দরকার তাইনা।

‘ কেও আমাকে ভালোবাসলেই যে আমাকেও তাকে ভালোবাসতে হবে এটা তো না৷ আমার যাকে পছন্দ হবে তাকে ভালোবাসবো। যাকে আমি ভালোইবাসি না তার মূল্য আমার কাছে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।

‘ আদ্রিব ভাইয়া এরকম অসুস্থ হয়ে পড়লো তাতেও তোর কিছু যায় আসেনা তাইনা?

‘ হ্যা, একদম তাই। আর অসুস্থ হয়েছে ঠিক হয়ে যাবে। এখানে আমার রিয়্যাক্ট করা না করায় কি আসে যায়।

‘ একসময় রিয়্যাক্ট করতি। তখন এই কথাগুলো ভাবা উচিত ছিলো। তাহলে আজকে এরকম হত না।

‘ তখন আবেগ ছিলো তাই সবার মত আমিও সেইম কাজ করছি। এখন বুঝতে শিখেছি।

‘ বুঝতে পারলে ভালো৷ এই বুঝতে পারাটা তখন পারলে আজকে এরকম হত না

ফিহা আর রাইসার কথা শুনে ওদের অন্য বন্ধুরা বললো, তোরা কি শুরু করলি। সেই কখন থেকে আদ্রিব ভাইয়ার জন্য একে অপরের সাথে ঝগড়া করছিস৷

রাইসা বললো, ঝগড়া করছিনা৷ আমি শুধু সত্যিটা বলছি

‘ সত্যিটাও আর বলতে হবেনা। তাও নিজেদের মধ্যে এরকম তর্ক করিস না। আমরা সবাই চাই আদ্রিব ভাইয়া সুস্থ হয়ে যাক।

******
আদ্রিবের ফ্রেন্ডরা ওকে এসে বললো, দোস্ত আংকেল আন্টি আসছে হাসপাতালে

‘ শোন আমি এখন এমন ভান করবো যে আমি তেমন কথা বলতে পারছিনা৷ তাহলে আমাকে আর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবেনা। তোরা কিন্তু কোন ঝামেলা পাকাবি না৷ আমি শুয়ে পরলাম।

আদ্রিবের আম্মু,আব্বু আসলো। তারা এসে দেখলো আদ্রিব ঘুমাচ্ছে। আর ওর স্যালাইন চলছে৷ আদ্রিবের আম্মু ওর ফ্রেন্ডদের জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছিলো?

কিয়াম বললো, ক্লাস করার সময় হঠাৎ আদ্রিব মা’থা ঘুরে পরে যায়৷ তারপর আমরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার বলেছে তেমন কোন সমস্যা না। স্যালাইনটা দিলেই ও ঠিক হয়ে যাবে৷ অতিরিক্ত দূর্বলের কারনে ওর এমন হয়েছে।

‘ ও কি কোন কারনে উত্তেজিত ছিলো

‘ একদমই না আন্টি৷ আদ্রিব একদম চুপচাপ, শান্তভাবে ক্লাস করতেছিলো। তারপর হঠাৎই ও মা’থা ঘুরে, পরে যায়।

*****

কিছু ঘন্টা পর স্যালাইনটা শেষ হয়ে গেলে আদ্রিব এখন মোটামুটি সুস্থ। আদ্রিবের আব্বু আম্মু ডাক্তারের সাথে কথা বলে ওকে বাসায় নিয়ে যেতে চাইলো। আদ্রিবের বন্ধুরাও সবাই আদ্রিবের সাথে ওদের বাসায় গেলো। ওরাই আদ্রিবকে নিয়ে এসেছে।

আদ্রিবের আম্মু বললো, তোমাদের খাবার দিচ্ছি আদ্রিবকেও নিয়ে এসো নিচে

আদ্রিবের আম্মু যাওয়ার পর আদ্রিব কিয়ামকে বললো, খুব ভালোভাবেই ম্যানেজ করেছিস আম্মুকে। আম্মু কিছু বুঝতে পারেনি। এখন কাল ভার্সিটিতে যেতে হবে৷ ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে

‘ আপাতত ওর চিন্তা মাথা থেকে বাদ দাও। আন্টি তোকে এই অবস্থায় ভার্সিটিতে যেতে দিবেনা তা নিশ্চিত থাকতে পারো৷

‘ আমিও তো সেই ভয় টাই পাচ্ছি। ওকে না দেখতে পারলে তো কিছুই ভালো লাগবেনা। আর আম্মুও কিছুতেই যেতে দিবেনা। তোরা আম্মুকে বলবি, ডাক্তার বলেছে আমার সারাদিন বাসায় থাকা ঠিক হবেনা। সবার সাথে মিশলে আমি আরও ভালোভাবে সুস্থ হয়ে যাবো।

‘ হ্যা, তারপর আন্টি আমারে থা’প্প’ড় দিক। অসুস্থ হলে সবাই বাসায় থেকে রেস্ট নেয় আর তুই বলছিস রেস্ট না নিলে সুস্থ হবে৷ কি আইডিয়া রে ভাই। তুই বলিস আন্টিকে আমি পারবো না

‘ বন্ধুর জন্য এটা করতে পারবিনা ভাই

‘ ওরে ইমোশনাল ব্লাকমেইল রে ভাই। তোকে তখন বারবার বলেছি এত উত্তেজিত হস না। মা’থা ঠান্ডা রাখ৷ কিন্তু তুই করলি কি আরও ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে মা’থা ঘুরে পরে গেলি। এরকমটা না হলে তুই কাল ভার্সিটিতে থাকতি আর ওকেও দেখতে পেতি

‘ তখন কি হয়েছিলো আমার আমি নিজেও জানিনা। মনে হচ্ছিলো যেনো আমার হার্টবির্ট বেড়ে যাচ্ছিলো৷ এরকমটা আর কখনও হয়নি আমার৷ মা’থা ঠিক ছিলোনা আমার

‘ বুঝতে পারছি তোর সিচুয়েশনটা

‘ এক কাজ করবি তোরা, তোরা ভার্সিটিতে গিয়ে সবসময় আমার সাথে ভিডিও কলে থাকবি তারপর আমি ওকে দেখবো

‘ আর ওর আশে পাশো থেকে ভিডিও কলে থাকলে ও এটা বুঝতে পারবেনা। তখন কিন্তু তোর প্রতি ওর রাগ আরও বাড়বে। আর তোকে একটা কথা বলতে চাইনি বাট এখন বলছি, তোকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসতে লাগলাম তখন তো স্টুডেন্টরা সবাই জড়ো হয়ে গিয়েছিলো৷ তাদের সাথে ফিহাও ছিলো। কিন্তু ওর চোখে আমি বিন্দুমাত্র আফসস কিংবা মন খারাপ ওর এরকম কিছু ওর মধ্যে দেখিনা। ও এমন রিয়্যাক্ট করলো যেনো এটা নর্মাল কোনো ব্যাপার। তখন আমার যা রাগ হয়েছিলো। ইচ্ছে করছিলো ওকে গিয়ে কিছু বলি। কিন্তু তোকে হাসপাতালে নিয়ে আসতো হবে তাই কিছু বলিনি।

‘ ফিহা হঠাৎ এতটা পরিবর্তন কিভাবে হতে পারলো? তোরা তো সবকিছুই জানতি

‘ তোর মত আমরাও সবাই সেইম কথা ভাবছি। যে মেয়েটা তোকে ছাড়া কিছু বুঝতো না সে এরকম কি করে হয়ে গেলো।

‘ এই জন্যই তো আমার কষ্টটা আরও বেশি

‘ থাক ভাই এখন এসব বাদ দে। তা না হলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বি।

কিছুখন পর আদ্রিবের আম্মু ওদের খাওয়ার জন্য ডাক দিলো৷ ওর সবাই একসাথে খেতে বসলো৷ খাওয়ার পর কিছুখন রেস্ট নিয়ে আদ্রিবের ফ্রেন্ডরা চলে গেলো।

পরেরদিন ভার্সিটি গিয়ে আদ্রিবের ফ্রেন্ডরা ভিডিও কলে ফিহাকে দেখাতে লাগলো। আদ্রিব দেখলো, ফিহা ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত। এটা দেখে আদ্রিবের আরও মন খারাপ হলো। আদ্রিব বুঝতে পারলো ফিহা ওকে নিয়ে এখন আর ভাবেনা। কিন্তু আদ্রিবের মন মানছে না

****

ফিহার এক ফ্রেন্ড বললো, ফিহা আদ্রিবের ফ্রেন্ডরা মনে হয় তোর ভিডিও করছে। অনেকখন থেকে লক্ষ্য করছি ওরা মোবাইল বের করে তোর আশেপাশে ঘুরছে৷

এটা শুনে ফিহার অনেক রাগ হলো। আদ্রিবের ফ্রেন্ডের কাছে গিয়েই ওদের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে ভেঙে ফেললো

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here