দখিনা হাওয়া পর্ব -০৩

#দখিনা_হাওয়া
#মারিয়া_আক্তার
[০৩]

অনেকটাই রাত এখন। চারদিকে ঝিঁঝিঁপোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। সময়টা প্রায় রাত বারোটার কাছাকাছি। বিন্দুর বাবা মা ঘুমিয়ে থাকলেও ঘুমোয়নি বিন্দু। সে গুনগুন করে পড়ছে। কাল পরীক্ষা। থার্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষার শেষটা কালকে। বিন্দুর পড়া শেষ করতে করতে রাত বারোটা বেজে যায়। বিন্দু বই বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস টেনে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকে। আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানায় গিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়ে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেইসবুকে লগ ইন করে। প্রথমে নোটিফিকেশন চেক করে। তারপর ম্যাসেঞ্জারে ডুকে দেখে আরানের আইডি থেকে অনেকগুলো টেক্সট এসে জমা হয়ে আছে। রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় আরানের টেক্সট সিন করে না আর। আবারও নিউজফিডে খানিকক্ষণ ঘুরাঘুরি করে। হঠাৎ একটা আইডি চোখের সামনে পড়ে। মিউচুয়াল ফ্রেন্ড আরান মির্জা। আর আইডিটার নাম আরাধ মির্জা। তাহলে এটা আরাধের আইডি। বিন্দু কৌতূহলবশত আইডির ভিতরে ডুকে। আইডিতে তেমন কিছুই পায় না সে। শুধু প্রোপাইলে আরাধ আর আরানের একটা ফটো। দু’জনেই নেভিব্লু পাঞ্জাবি পরে আছে। এটা গত ঈদে তোলা ছবি। এই পিকটা বিন্দু আরানের মোবাইলেও দেখেছে। আর কভার পিকে আরাধ আর একটা ছেলের পিক। বিন্দু ব্যাক করতে নিচ্ছিল আবার কি মনে করে যেন পিকটাকে জুম করে দেখার চেষ্টা করে। আরাধের পাশের ছেলেটাকে দেখে বিন্দু ঘাবড়িয়ে যায়। এই ছেলটাকে সে চেনে। এর নাম অন্তর। বিন্দুর পিছনে টানা দুই বছর ঘুরেছে ছেলেটা। বিন্দুকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় নি বরং সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বিন্দু তখন সবে ইন্টারে উঠেছিল। তখন বিন্দু আর তার মা চাঁদপুরে থাকতেন। সেখানে তাদের দাদার বাড়ি। তার বাবা চাকরীসূত্রে ঢাকায় থাকেন বিগত কয়েক বছর। ট্রান্সফার হয় কয়েকবছর পর পরই। তাই বিন্দু তার দাদার বাড়ি চাঁদপুরেই মাকে নিয়ে থাকে। আর বিন্দুও ইন্টারমিডিয়েটের এর পর মাকে নিয়ে বাবার কাছে ঢাকায় চলে আসে। বিন্দু আগে থেকেই এই সব প্রেমজনিত বিষয়গুলোতে সবসময় খুব ভয় পায়। তাই অন্তর নামক ছেলেটাকেও কিছুটা ভয় পেত সে। বিন্দুর সাথে টানা দুইবছর আঠার মত লেগে ছিল অন্তর। তারপর বিন্দুও ঢাকায় চলে আসে আর ছেলেটারও কোনো খোঁজ নেই তার পর থেকে। কিন্তু সেই ছেলেটার সাথে আরাধের কি সম্পর্ক বিন্দু বুঝতে পারছে না। সে ভাবে আরাধের বন্ধু অথবা আত্মীয় হতে পারে। কালকে পরীক্ষা তাই আর মাথায় বেশি চাপ নেয় না সে। ডাটা অফ করে ঘুমিয়ে পড়ে।

______________

– বিন্দু আরানের ভাইটার নাম যেন কি?

মীমের প্রশ্নে বিন্দু চোখমুখ কুঁচকে ফেলে। এই মেয়ে হঠাৎ করে আরাধের কথা কেন জিজ্ঞেস করছে?

– কেন? তুই আরানের ভাইরে দিয়া কি করবি?

মীম লাজুক হেসে বলে,

– বিয়া করমু। আরানের ভাইটারে ভাল্লাগে আমার কাছে। আরানের মত ধলা ইন্দুর না। আমার আবার আরানের ভাইয়ের মত এমন শ্যামলা মানুষ ভাল্লাগে। তার উপরে আরানের ভাইটার কথা বলার স্টাইলটাও ফাটাফাটি। আবার সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। দোস্ত তুই বুঝতে পারছিস এমন ছেলে বিয়ে করতে কে না চাইবে?

বিন্দু জানেনা কেন তার খারাপ লাগছে। কিন্তু হ্যাঁ মীমের কথাগুলো শুনে তার খুব খারাপ লাগছে। মীম কেন আরাধের প্রশংসা করবে?কেন মীম আরাধকে বিয়ে করতে চাইবে? বিন্দু এসব মানতে পারছে না। কিন্তু আরাধের সাথেতো বিন্দুর কোনো প্রণয়ের সম্পর্কও ছিল না। তাহলে? শুধু কি তার সাথে আরাধের বিয়ের কথা হয়েছিল বলে তার এত খারাপ লাগছে? আরাধকে সে ভালোবাসে এমনটাও নয়। তাহলে? মীম বিন্দুর ফ্রেন্ড। মীমের সাথে বিন্দুর বন্ধুত্ব হয় ভার্সিটিতে এসে। মীম মেয়েটা একটু ঠোঁটকাঁটা স্বভাবের। যে ছেলেকে দেখবে একটু স্টাইলিশ তাকেই মীমের পছন্দ হয়ে যায়। আবার সেটা জনে জনে প্রচার করবে। বিন্দু জানে মীম আরাধের কথা দুষ্টামি করে বলেছে। তাও বিন্দুর খারাপ লাগছে।

– কিরে দোস্ত বল না নামটা?

বিন্দু মুখটাকে থমথমে করে রেখেছে। যেন পণ করেছে মীমের প্রশ্নের জবাব দেবে না।
মীম এবার বিন্দুর হাত ধরে বলে,

– ওই বিন্দু বল না।

– আর..

বিন্দু না পেরে এবার বলতে নিচ্ছিল কিন্তু মীম ও কে থামিয়ে দেয়।

– ওই বিন্দু এটা আরানের ভাইটা না?

মীম বিন্দুকে উদ্দেশ্য খুব জোরে বলে উঠে। আরাধ রাস্তার অন্যপাশ দিয়ে যাচ্ছিল। মীমের কথা শুনে বিন্দুদের দিকে তাকায়। বিন্দুও আরাধের দিকে তাকায়। মীম বিন্দুর হাত ধরে টেনে রাস্তার ওপারে আরাধের কাছে নিয়ে যায়। মীমকে এভাবে দৌঁড়িয়ে আসতে দেখে আরাধ হকচকিয়ে যায়।

– আপনি আরান মির্জার ভাই না?

আরাধ সরু চোখে মীমের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটাকে আরো একবার
দেখেছে আরানের ভার্সিটিতে আরানের সাথে।নামটা ঠিক মনে করতে পারছে না।

– হুম আমি আরান মির্জার ভাই। কোনো দরকার ছিল আপনার?

আরাধের কথার বিপরীতে মীম খুব উৎসাহ নিয়ে বলে,

– আপনার নামটা যেন কি?

– আমার নাম আরাধ মির্জা।

মীম লাজুক হেসে বলে,

– আপনার নামটা খুব সুন্দর।

মীমের মুখের ভঙ্গিমা দেখে আরাধের ভ্রুঁ কুঁচকে যায়। হাত ঘড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে বলে,

– মিস আপনি কি আর কিছু বলবেন? না আসলে আমার কাজ আছে একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

মীম কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু মুখ থেকে বের করার আগেই আরাধ বলে ওঠে। তাই মিতালী ভদ্রতার খাতিরে বলে,

– না না, সমস্যা নেই। আপনি যেতে পারেন। সবকিছুর আগে কাজই তো, তাই না?

বিন্দু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মীমের তামাশা দেখছে। মেয়েটাকে তার ইচ্ছা করছে পঁচা ডোবার পানি খাওয়াতে। বিন্দু চোখের ভাষায় যেন প্রকাশিত হচ্ছে, আমাকে এখানে টেনে আনার মানেটা কি? আরে ভাই তুই আরাধ মির্জার সাথে কথা বলতে চাস বল না কে মানা করেছে। আমাকে এখানে টানার মানেটা কি? বিন্দু মনে মনে মীমের গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। বিন্দুর ভাবনার মাঝেই মীমের ফোন বেজে উঠে। মীম ফোন রিসিভ করে ফোনের ওপাশের ব্যক্তির সাথে কথা বলে খানিকক্ষণ পর লাফ দিয়ে উঠে। বিন্দুকে একটা টাইট হাগ দিয়ে বলে,

– দোস্ত আমার ক্রাশ পইট্টা গেছে। আমারে সামনের কফিশপে দেখা করতে বলছে। মনে হয় আজ আমারে প্রোপোজ করবো। দোস্ত চল না তুই আমার সঙ্গে।

বিন্দু নাকোচ করে বলে,

– তুই জানিস এসবে আমি নেই। তোর ক্রাশের কাছে তুই-ই যা।

বিন্দুকে নিতে পারে নি বলে মীম নিজেই দৌঁড়িয়ে চলে যায়। বিন্দু মীমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসে। মেয়েটা আসলে পারেও বটে।

– আপনি উল্টোদিকে যাচ্ছেন যে?

হঠাৎ কথাটা শুনে বিন্দু বেশ চমকিয়ে যায়। বিন্দু মনে করেছে আরাধ হয়তো এতক্ষণে চলে গেছে। কিন্তু আরাধ তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল।

– আমার টিউশনি আছে। আর আপনি আমায় তুমি করে বলতে পারেন। আমি বয়সে আপনার চেয়ে অনেকটাই ছোট।

– আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।

আরাধের সোজাসাপ্টা উত্তরে বিন্দু মুখটা থমথমে করে রেখেছে। কিছু বলে না বিন্দু। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। বিন্দু কি মনে করে যেন আরাধকে জিজ্ঞেস করে,

– আচ্ছা আপনি হেঁটে যাচ্ছেন কেন? আজ আপনার গাড়ি কই?

আরাধ মুচকি হেসে বলে,

– আজ হেঁটে যেতে ইচ্ছা করছিল তাই হাঁটছি। আপনার সমস্যা?

আরাধের উত্তর শুনে বিন্দু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। বিন্দুর সাদা মনে কোনো কাদা ছিল না। এমনিতেই আরাধকে প্রশ্নটা করেছিল। কিন্তু তার প্রশ্নের বিপরিতে আরাধের এমন উত্তর সে আশা করে নি।

– আমার সমস্যা থাকবে কেন? এমনিতেই জিজ্ঞেস করেছিলাম, যত্তসব।

বিন্দুর উত্তরে আরাধ শব্দ করে হেসে দেয়।

– আমিও এমনিতেই বললাম। আপনি শুধু শুধু আমায় যত্তসব বললেন কেন?

– এই আপনি যান তো যেখানে যাচ্ছিলেন। মীমকে তো বললেন আপনার কাজ আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। এখন যাচ্ছেন না কেন?

আরাধ নিজের বামপাশের ভ্রুঁ খানিকটা উপরে তুলে বিন্দুর দিকে কিছুটা অগ্রসর হয়। বিন্দু তা দেখে এক পা পিছিয়ে যায়। আরাধ ঠোঁট টিপে নিঃশব্দে হাসে।

– আপনার ওই বান্ধুবিকে দেখে আমার সুবিধার মনে হয় নি। তাই কাজের কথাটা বললাম। এখন সে যেহেতু নেই তাই এখানে থাকাই যায় তাই না?

– কিন্তু এখন এখানে থেকে আপনার লাভ কি? আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই যান না।

আরাধ খানিকক্ষণ আমতাআমতা করে বিন্দুর উদ্দেশ্যে বলে,

– আমি আপনার কাছেই যাচ্ছিলাম। আসলে আরান আপনায় অনেকবার ফোন দিয়েছিল। কিন্তু আপনার ফোন নাকি বন্ধ। আমার অফিস আপনার ভার্সিটির কাছাকাছি বলে আরান আমায় ফোন করে বললো আপনার কাছে যেতে।

– কেন? কি হয়েছে?

– বাবা আপনায় আমাদের বাড়িতে যেতে বলেছে। বাবা সকালে আপনার বাড়ি গিয়েছিল কিন্তু আপনি তখন ভার্সিটিতে ছিলেন। তাই এখন আমার সাথে চলুন আমার বাড়ি।

– আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনার বাড়িতে যাবো। আপনার ফুফুর করা ওইদিনের অপমানের কথা আমি কিন্তু ভুলি নি।

– দেখুন বিন্দু সেদিন ফুফু যেটা করেছে সেটা অবশ্যই ভুল করেছে। কিন্তু আপনি এখন না গেলে বাবা খুব কষ্ট পাবে। প্লিজ চলুন।

বিন্দু কি করবে বুঝতে পারছে না। আলী আকবর মির্জাকে সে খুব শ্রদ্ধা করে। কিন্তু বিন্দু নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আর কোনোদিন মির্জাবাড়িতে পা রাখবে না। এখন আলী আকবর মির্জার কথাকে কি করে অগ্রাহ্য করবে?
_____________

– আমায় ক্ষমা করো বিন্দু। আমার ওইদিনের করা ব্যবহারের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। পারলে আমায় ক্ষমা করো।

– আপনি আমার গুরুজন আন্টি। আমার কাছে আপনার ক্ষমা চাইতে হবে না। তবে যদি আপনি সত্যিই অনুতপ্ত হয়ে থাকেন তাহলে দয়া করে আমার বাবার কাছে ক্ষমা চাইবেন।

শাপলা বেগম বিন্দুর দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকান, যেন এই মূহুর্তে তার দৃষ্টি দিয়ে তিনি বিন্দুকে ভষ্ম করে দিবেন। বিন্দু তা দেখে তাচ্ছিল্য হাসে। সে জানতো শাপলা বেগম সকলের জোরাজুরিতে তার কাছে ক্ষমা চাইছে। তিনি নিজে যে অনুতপ্ত নন সেটা বিন্দু ভালোভাবেই জানে।

– বিন্দু ঠিক বলেছে আপা। আপনি কবির ভাইয়ের কাছেই ক্ষমা চেয়ে নিবেন। মানুষটা সেদিন খুব অপমানিত হয়েছিলেন।

নয়না বেগমের কথাকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে শাপলা বেগম দপাদপ পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেলেন। নয়না বেগম এবার বিন্দুর কাছে গেলেন। বিন্দুর ডানহাতটা নিজের দু’হাতে ভরে আদরমাখা কন্ঠে বলেন,

– বিন্দু তুমিতো জানো আপা এরকমই। ওনাকে কিছু বলতেও পারবো না আমরা। তাহলে দেখা যাবে পরে রাগ করে চলে যাবেন আর কখনও আসতেও চাইবে না। তুমিই বলো এ অবস্থায় আমরা কি করতে পারি?

– আন্টি আপনায় এসব নিয়ে এত ভাবতে কে বলেছে। আর ওনাকেও কিছু বলার প্রয়োজন নেই। শুধু শুধু আমাদের মত বাহিরের লোকের জন্য আপনারা নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক কেন নষ্ট করতে যাবেন।

– তুমি এসব কি বলছো বিন্দু? তুমি আমার কাছে বাহিরের কেউ নও। তুমিতো আমার একটা মেয়ে। কি আমায় মা বলতে অসুবিধা নেইতো তোমার?

বিন্দু মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ তার অসুবিধা নেই। নয়না বেগম এবার খুব অভিমানী কন্ঠে বলেন,

– তাহলে আমার বাড়িতে আসতে চাইছিলে না কেন?

বিন্দু কিছু না বলে চুপ করে থাকে। আরাধ এগিয়ে এসে বলে,

– মা তোমার এই মেয়েকে আনতে আমার অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আসতেই চাইছিল না শেষে কত অনুরোধ করে এনেছি।

বিন্দু আড়চোখে আরাধের দিকে তাকায়। তখন বিন্দু আসতে চাইছিল না বলে আরাধ বিন্দুকে আশ্বাস দিয়ে বলেছে-‘আপনি প্লিজ চলুন। বাবা সত্যিই খুব কষ্ট পাবে আপনি না গেলে। এবার আর আপনাকে কেউ অপমান করবে না। আমি আপনায় কথা দিচ্ছি।’ শেষে বিন্দু মনের সাথে লড়াই করে নিজের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে মির্জা বাড়ির চৌকাঠে পা রাখলো।

– বাবা তুমি কি যেন বলবে বলছিলে।

আরানের কথায় আলী আকবর মির্জা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। চোখমুখ কেমন যেন হয়ে আছে ওনার। বিন্দুর সম্মুখে দাঁড়িয়ে খানিকটা ইতস্তত করে বললেন,

– তোমার বাবার সাথে আজ সকালে আমার কথা হয়েছিল। আমি তোমাকে আমার বাড়ির বৌমা করে আনতে চাই এটা তুমি জানো। আমার বোনের সেদিনের করা অপমানের কথা তোমার বাবা ভুলতে পারেন নি এটাই স্বাভাবিক। সেই অপমানের জের ধরে তিনি এখন তোমাকে আমার ছেলের হাতে তুলে দিতে নারাজ। এবং তিনি এটাও বলেছেন যদি তুমি রাজি হও তাহলেই তিনি ভেবে দেখবেন অন্যথায় নয়। এখন সবকিছু তোমার হাতে নির্ভর করে মা। এখন তুমি বলো তোমার কি অভিমত? আমি কিন্তু না শুনতে চাইছি না।

বিন্দু মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তার এখন কি বলা উচিৎ সেটাই সে বুঝতে পারছে না। শাপলা বেগম এখনই তাকে বিন্দুমাত্র পছন্দ করে না। বিয়ের পরে যে কি করবেন সেটা না বলাই ভালো। হ্যাঁ এটা ঠিক সম্পর্কে উনি তৃতীয় ব্যক্তি। কিন্তু তাও বিন্দু অপমান সহ্য কর‍তে পারে না।

– কি হলো বিন্দু মা কিছু বলছো না কেন ?

– আঙ্কেল আমার মনে হয় আপনি আমার উত্তরটা জানেন।

বিন্দু মাথা নিচু করেই উত্তরটা দেয়।

– না বিন্দু মা। দয়া করে আমায় ফিরিয়ে দিও না। আমার যে বড় স্বাদ তোমায় আমার বড় ছেলের বৌ করে ঘরে তুলবো। এই বুড়ো বাপটাকে ফিরিয়ে দিও না মা।

বিন্দু মাথা তুলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো আলী আকবর মির্জার দিকে। ওনার চোখ ছলছল করছে। কিন্তু কেন উনি বিন্দুকে এ বাড়ির বৌ কর‍তে চান? ওনার ছেলের জন্য কি মেয়ের অভাব পড়বে নাকি। ওনার বিন্দুকে এত পছন্দ করার কারণটা বিন্দুর বোধগম্য হলো না। বিন্দু নিজের মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করে বললো,

– আমি এ ব্যাপারে আপনার সাথে পরে কথা বলবো আঙ্কেল। আমি এখন বাসায় যাই। আসি।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here