দ্বিতীয় বসন্ত পর্ব -০৪

#দ্বিতীয়_বসন্ত
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৪
রুদ্ধ স্বগতোক্তি করে বলে,
” তোমার চোখের কাজল হবার অধিকার দিবে!”

রিথী চমকে তাকায় পেছোনে আর দেখে রুদ্ধ হাতে একটা কালো গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিথী অবাক হয় ভিষন। এই মূহুর্তে রুদ্ধকে এখানে আশা করেনি রিথী। রুদ্ধ রিথীর চোখের সামনে চুটকি বাজিয়ে ধ্যান ভাঙায় তারপর বলে,

–কি ভাবছেন মিস রিথী? উপস! মিসেস রিথী!

রিথীর বিরক্ত লাগা শুরু হয়েছে। তাই সে খানিকটা সরে যায়। রিথীকে সরে যেতে দেখে রুদ্ধও খানিকটা রিথীর দিকে সরে আসে। এভাবে রিথী সরে গেলে রুদ্ধও সরে যায় রিথীর দিকে। রিথীর এবার রাগ লাগে তাই বলে,

–কি সমস্যা আপনার? আমার পেছোনে কেনো লেগেছেন?

–উমম! কি সমস্যা বলো তো? আসলে নিজেও বুঝতে পারছি না!

রুদ্ধর ভাবুক ও বেখেয়ালি কথা শুনে রিথীর আর এখানে দাঁড়াতেই মন চায়না কিন্তু রুমে তো সানভিরা আছে। তাও অগ্যতা রিথী রুমের দিকেই অগ্রসর হয়। রিথীকে চলে যেতে দেখে রুদ্ধ রিথীর হাত ধরে টান দেয়। হাতে টান দেওয়ার দরুন রিথী তাল সামলাতে না পেরে রুদ্ধর বুকে এসে পড়ে আর রুদ্ধর রেলিংয়ের সাথে পিঠ ঠেকে যায়।

চুলের সাথে কালো ক্লিপ ও আলপিন দিয়ে ওড়না মাথায় সিকিউর করাতে ওড়না মাথা থেকে পরে না তবে মুখের সামনে খানিকটা চুল কানের পাশ থেকে বেড়িয়ে আসে। রুদ্ধ রিথীর চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। তখনি সানভি ও সারিকা রুম থেকে বের হয় আর এই দৃশ্য দেখে। সানভি রাগে কাঁপতে থাকে। সানভি এগিয়ে ওদের কাছে যেতে নিলে সারিকা তাকে আটকায়। মালিহা রুম থেকে এখনো বের হয়নি।

রুদ্ধ রিথীর চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে কানের পাশে কালো গোলাপটা গুঁজে দেয়। তারপর বলে,

–কালোতে আপনি অপরূপা। একদম কালো পরির মতো লাগছে আপনাকে। যখন আপনাকে দেখি আমি আমার ভাষাতে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনা। এক ভয়ংকর হৃদয়হরণী আপনি!

রিথী পলকহীন তাকিয়ে তাকিয়ে সবটা শুনলো। কথাগুলো মোহনীয় তবে এগুলো তার জন্য নিষিদ্ধ। রিথী অনেকটা অস্বস্তি নিয়ে সরে আসে। তারপর কানের পাশে হাত দিয়ে কিছু বলবে তার আগেই রুদ্ধ বলে,

–একবার নিজেকে এই সাঁজে আয়নায় দেখবেন তারপর না হয় ফুলটাকে সরিয়ে ফেলবেন! আর হ্যাঁ, আমি কিন্তু আপনার শুধু হাত আর চুল ধরেছি। নাথিং এলস। সো, আমাকে আবার বকা ও ক্যারেক্টারলেস উপাধি দিবেন না। আফটার অল, আই এম এ ডিসেন্ট বয়!

রিথী কি বলবে ভেবে পেলো না। অস্বস্তি হচ্ছে প্রচুর। রুদ্ধ চলে যায় সেখান থেকে। সারিকা ও সানভি রুদ্ধকে দেখে আবারো রুমে ঢুকে পরে। রিথী সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। সানভি সারিকার হাত ছাড়িয়ে হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে যায়। সারিকাও পেছোনে যায়। সানভি রেগে সারিকাকে বলে,

–এই রিথীকে একটা শিক্ষা না দিলে আমার রাগ কমছে না। কি করবো আমি? রিকা প্লিজ টেল মি, হোয়াট আই উইল ডু?

সারিকা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,
–রিথীর বদনাম!

সানভি অবাক হয়ে যায় তা দেখে সারিকা বলে,
–রিথীর ক্যারেক্টার নিয়ে কাল প্রশ্ন উঠবে যদি আমরা কাজটা করতে পারি। তবে হ্যাঁ, মালিহাকে কিন্তু এসব বলা যাবে না।

সানভি কিছু না বুঝেই রাজি হয়ে যায়।

রাত ৮.৩০ তে ডিনার করতে যায় সবাই। রিথী পরে কি মনে করে যেনো ফুলটা আর খোলেনি। তার কালো গোলাপ পছন্দের। রিথীর ও নিদ্রের যেদিন বিয়ে হয়েছিল সেদিন নিদ্র রিথীকে কালো গোলাপ দিয়েছিল। এই ফুলটা সবসময় পাওয়া যায় না। ডিনারের সময় রুদ্ধ রিথীর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বলে, “সুন্দর লাগছে।”
রিথী তখন থম মেরে যায়। সে তো ফুলটা ভালো লাগলো বলে ফেলেনি!

আর এদিকে সানভি ও সারিকার পরিকল্পনা করা শেষ। তারা দুজনেই রুদ্ধর এরকম রিথীর প্রতি কেয়ার দেখে ফুলছে। ডিনার শেষ তাই এখন ডেজার্ট সার্ভ হবে। ডিনারের সময় পানি দেওয়া হয়নি। সেভেনআপ ও পেপসি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই দুইটা ড্রিংকসে রিথীর গ্যাস হয় তাই পানি বা জুস খুঁজছে। তখন ওয়েটারের কাছে ওরেঞ্জ জুস দেখে রিথী একটা নেয়। রিথী জুসটা নেবার পর সারিকা ও সানভি শয়তানি হাসে কারন তারা এটাতে এলকোহলিক ওয়াইন কিছুটা মিক্স করেছে।

জুসটা খাওয়ার পর রিথীর ভালো লাগছে। সে তার বাবাকে বলে রুমে চলে যায়। রিহা আরেকটু থাকবে তাই যায়না। দোতালার সিঁড়ি পার হওয়ার পর রিথীর মাথা হালকা ভার লাগছে। তখন সারিকা ও সানভি পেছোন থেকে এসে ইচ্ছা করে একটা ফাঁকা রুমে ঢুকে পরে। আসলে রুমটা রুদ্ধর। রিথী তখন ভাবে এটাই তার রুম কারন সানভিরা তো তার সাথেই রুম শেয়ারে। রিথী রুমে ঢুকে শুয়ে পরে আর সানভি ও সারিকা বের হয়ে যায়।

আধ ঘন্টা পর সবাই যে যার রুমে চলে যায়। রুদ্ধর বাবা পার্টির হোস্ট তাই রুদ্ধ একটা এক বেডের আলাদা রুম নিয়েছে। রুদ্ধ রুমে ঢুকে লাইট জ্বালিয়ে দরজা বন্ধ করে বিছানায় তাকালে অবাক হয়ে যায়। রুদ্ধ রিথীর কাছে গিয়ে বসে কিন্তু রিথীকে দেখে গভীর ঘুমে মনে হচ্ছে। রুদ্ধ বার কয়েক ডাকলে সারা পায় না। রুদ্ধ আর ডাকে না। রুদ্ধর কেনো জানি রিথীকে বারবার দেখতে ইচ্ছে করছে তাই হাত দিয়ে রিথীর মুখের উপর এসে পরা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে রিথীর ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে।

এদিকে রিহা রুমে গিয়ে তার বোনকে খোঁজার পর না পেয়ে বাবার কাছ গিয়ে বলে। মিস্টার বাশার আশেপাশে খোঁজ করে। কিন্তু পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ খোঁজার পর সারিকা বলে,

–আংকেল, আমার মনে হয় আমাদের প্রতিটা রুম খোঁজা উচিত।

সারিকার কথা সবাই ঠিক মনে করে সব রুম খুঁজতে থাকে। আর এদিকে রুদ্ধ ফ্লোরে বসে রিথীর দিকে তাকিয়ে আছে। মোবাইলে কয়েকটা ছবিও তুলেছে। কেনো তুলেছে জানে না সে।
আধ ঘন্টার মতো হয়ে গেছে খুঁজছে। শেষে তারা রুদ্ধর রুমে নক করে। রুদ্ধর প্রথমে নকের শব্দ শোনে না। এরপর আরো দুইবার নক করার পর রুদ্ধর হুঁশ ফিরে। এরপর দরজা হালকা খুলে বাহিরে যায়। রুদ্ধর বের হতে দেরি কিন্তু সারিকার দরজা ঠেলে ভেতরে যেতে দেরি নেই। এগুলো কি হচ্ছে রুদ্ধর বোধগম্য হচ্ছে না। সারিকা ভেতরে ঢুকে চিল্লিয়ে সবাইকে ডাকে। সবাই ভেতরে এসে রিথীকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে স্বস্তি পায় কিন্তু সারিকার একটা কথায় থমকে যায়। সারিকা বলে,

–এই মেয়ে রুদ্ধর রুমে কি করে? সন্ধ্যার থেকে দেখছি যে মেয়েটা রুদ্ধর সাথেই বেশি মিশছে। কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই তো এদের আবার?

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রুদ্ধ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই রাগে চিল্লিয়ে বলে,

–মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ সারিকা! আমি জানি না সে এখানে কিভাবে এলো। আর সন্ধ্যা থেকে আমি নিজে তার সাথে পরিচিত হতে গিয়েছি। তাকে কম্ফোর্টেবল ফিল করাতে। নাথিং মোর। সো কিপ ইউর ব্লাডি মাউথ সাট।

সারিকা ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
–নিজেরা তামাশা করবা আর আমি বললেই খারাপ! ওয়াও! তো এতোক্ষন কেনো সবাইকে জানাওনি যে এই মেয়েটা তোমার ঘরে? আমাদের হইচই কি শুনো নি? দরজাও তো একাধিকবার নক করতে হয়েছে। এতো লেট কেনো করলে দরজা খুলতে?

সানভির সারিকার ইঙ্গিত কেনো জানি ভালো ঠেকছে না। কেনো জানি মনে হচ্ছে বড় কিছু হবে। যদি তাকে রুদ্ধকে হারাতে হয়! সানভি কিছু বলতে নিবে তার আগেই মালিহা রক্ত চক্ষু নিয়ে সানভির হাত খামচে ধরে আর আস্তে করে বলে,

–আমি জানি না তোদের দুজনের এতে কোন হাত আছে কিনা! তবে প্লিজ পরিস্থিতি আর খারাপ করিস না। সারিকার ব্যাবহার জাস্ট জঘন্য। রিথী আপুকে যে ফাঁসাচ্ছে সেটা বুঝা যাচ্ছে। তাই এখন বড়রা যা বলবে তাই হবে এন্ড এন্ড নো মোর ওয়ার্ডস।

সানভির অস্থির লাগছে সবকিছু। সানভির ভাবনা,
“রিথীকে খারাপ বানাতে গিয়ে আবার নিজের ক্ষতি করে বসলো নাতো!”

চলবে ইনশাআল্লাহ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here