দ্বিতীয় বাসর পর্ব ২০+২১+২২

দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-২০
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

বেলা প্রায় দুটোর মতো বেজে গেছে।বন্ধন মিতুকে এখানে নিয়ে এসেছে সকাল প্রায় সাড়ে দশটায়।
মিতু গোসল করে তোয়ালে দিয়ে চুল ঝাড়ছিল।তোয়ালে প্যাঁচিয়ে চুল ঝাড়া তার অভ্যাস।হোটেলের ভারী তোয়ালে তবুও কষ্ট করে চুল ঝাড়ছিল,কাবার্ডের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
চুল ঝাড়ার পানিগুলো বন্ধনের মুখে লেগে গেল।
ঘুম কাতুরে এখনো বন্ধন।
মিতুর দিকে নিভু নিভু চোখে তাকায় সে।
ঘরে বেশ আলো।মিতু ততক্ষণে হোটেলের ভারী পর্দাগুলো সরিয়ে দিয়েছে।
চাচার বাসায় আসার সময় সেই সবুজ আর লাল পাড়ের শাড়ী পড়েছে এখন।ওফ ওয়াইট ব্লাউজ দিয়ে।যেটা তার মৌভাবী তাকে শাড়ীর সাথে দিয়েছে।
হঠাৎ টাওয়াল এর তন্তু মিতুর ব্লাউজের পিছনের হুকের সাথে লেগে যায়।
মিতু বিরক্ত খুব।
“উফ্ কি আটকালো আবার? ইশ্…’
বন্ধন ততক্ষণে বিছানা ছেড়ে উঠে যায়।
তোয়ালের সুতাটা সযতনে ছুটিয়ে দেয়।দেখে মিতুর ফরসা পিঠ।
“এত লোম পিঠে তোমার?’বন্ধন অবাক বেশ।
“হুম কেন? আপনার ভালো লাগে না বুঝি?’
পেছন থেকে জাপটে ধরে ফের বন্ধন।পিঠে আদর বুলিয়ে বলে,
“কেন আজ বুঝো নাই? তোমার সব কিছুই এখন আমার ভালো লাগে বুঝছো?পাগলী একটা…. ‘
“উহু ছাড়েন তো?যান সরেন…সরেন।’মিতু ঝটকে সরিয়ে দেয় বন্ধনকে।
“কই সরবো?’
“গোসলে ঢুকেন যান।কটা বাজে দেখেন।ক্ষুধা লাগসে অনেক।’
“হুম কিন্তু কাজটা ঠিক কর নাই মিতু?’
“ওমা আমি আবার কি করলাম?’মিতুর বিস্ময়।
ফের কাছে টানতে চায় বন্ধন।
“এই আমাকে রেখে গোসল করলা কেন?একসাথে করলে কি হতো?’
মিতু ধরা দেয় না,ফের দূরে সরে যায়।
“আপনি তো পড়ে পড়ে মহাসুখে ঘুমাচ্ছিলেন,ডাকবো কি করে?উফ্ যান তো অনেক হয়েছে…ফ্রেশ হোন জলদি।’
“থ্যাংকস।’
“কেন?’
“ঐ যে বল্লা মহাসুখের কথা….।’
“হুম।’মিতু লাজুক হাসে।
বন্ধন শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে চলে যায়।
মিতু হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়ায় কিছুক্ষণ।হোটেলের চারপাশটা দেখার চেষ্টা করে।রাতে বোধহয় হোটেলটা আরো বেশী জাঁকজমক দেখায়।
ফের আকাশটা দেখে।বেশ ঝকঝকে স্বচ্ছ লাগে আকাশটা।মিতু প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয় চোখ বুজে।
ফের আকাশটার দিকে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেয় দুহাত মুঠো করে আর মৃদু হেসে।
বন্ধন ফ্রেশ হয়।তার লাগেজ ছিল গাড়িতে।হোটেল বয় এসে দিয়ে যায়।
লাগেজ খুলতে বলে বন্ধন।কি পড়বে তাই বের করে দিতে বলে মিতুকে, মিতুর পছন্দ মতোন।
ওয়াশরুম থেকে এসে ফিরে টিভিটা ছেড়ে দেয় সে।ইন্দ্রাণী সেন এর ভালোবাসি ভালোবাসি
গানটা হয় তখন।
মিতুর খুব পছন্দের গান এটা।গুন গুন করে মিতুও গায় তখন।
“আচ্ছা,গানও জানেন দেখছি?’বন্ধনের মুগ্ধতা।
“তা জানি একটু অাধটু।তবে শিখলে বোধহয় ভালোই করতাম।’
বন্ধন এসে কপালে আলতো চুমু খায় মিতুর।
“বোধহয় না অনেক ভালো করতে।গান শিখবে তুমি?বলে দিব…..?’
“আরে না না এই বুড়া বয়সে কি আবার গান শিখবো?’
“তুমি বুড়া তাহলে আমি কি?’
“বুড়া স্কয়ার….হাহা হাঃ।’
হাসিতে ফেটে পড়ে যেন মিতু।
বন্ধনের মুগ্ধতা আরো বেড়ে যায়।জড়িয়ে ধরে ফের মিতুকে।
“এত পাগল করে দিচ্ছো কেন আমাকে?’
বলে ফের মিতুর মুখটা ধরে আদর বুলিয়ে দেয় মমতায়।
“এই কি হয়েছে আজ আপনার?’
“সত্যি বুঝতে পারছি না।সারাক্ষণ তোমার কাছে থাকতেই ভালো লাগছে।এভাবে তোমাকে জড়িয়ে…..আজ কতো বছর পর….বিশ্বাস করো আজ তোমার ছোঁয়ায় আমি আরো বেশী …..’
“কত বছর পর কি বন্ধন?’
হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে বন্ধনের?ওপাশ থেকে নানু বলে ওঠে,
“কই আছোস বাবু?মিতু কি তোর লগে?কাইল রাত্রে কইল আইবো না,আইজ তো কোন খবরই নাই?’
“হুম নানু মিতু আমি দুজনেই একসাথে আছি।’
বন্ধন বিছানাতে মিতুর কোলে মাথা দিয়ে ফোনে কথা বলে নানুর সাথে।আর হাত দিয়ে মিতুর মুখে আদর বুলায়।
মিতুও কোথায় যেন হারিয়ে যায়,আর শোনে তার স্বামীর কথা।বন্ধন ফের বলে ওঠে,
“আছে আছে মিতু ভালো আছে।এত চিন্তা করো না।আর আমাদের আসতে একটু লেট হতে পারে।বাবাই আর নীবিড়কে নিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।’
মিতুও মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখে,বন্ধনকে অনেক বেশী সজীব,সতেজ লাগছে।
“এত সুপুরুষ বন্ধন?’মনে মনে ভারী অবাক হয় সে।
বন্ধনের চোখ দুটো অদ্ভুত সুন্দর!মিতুর মনে হতে লাগলো এর আগে কোন পুরুষের চোখ,তার চাহনী তো তার হৃদয় কাঁড়তে পারেনি?
তাছাড়া ভালো করে কারো দিকে মিতু তাকাতেও পারতো না ওর লাজুক স্বভাবের জন্য।হীমেলের ভাষায় ওর ক্ষেত স্বভাবের জন্য।ফের ভাবে মিতু।
“ঐ চোখে জাদু আছে বন্ধন…..আমার প্রানণাথ… শুধু আপনি আজ পাগল হোন নি…..আমিও যে….আচ্ছা সত্যি আমাকে আদর করে আপনি পাগল হয়েছেন?’
মনে মনে বুলি আওরায় মিতু।ফের শোনে বন্ধন বলছে,
“কোন মেহমান আসবে?’মিতু এবার বুঝে ফেলে নানু কি জানতে চাচ্ছে বন্ধনের কাছ থেকে।
বুদ্ধু একটা নানু কি বোঝাতে চাইছে কিছুই বুঝতে পারছে না বন্ধন।মিতু এইবার বন্ধনের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে নানুকে বলে,
“আমি ঠিক আছি নানু চিন্তা করো না,বাবাই কি করছে?আচ্ছা এসে পড়বো তোমরা খেয়ে নাও।’
ফোন রেখে দিয়ে মিতু বন্ধনকে বলে
“চলেন বাসায় চলেন।’
“বাসায় কেন?আজ তো আমরা সারাদিন ঘুরবো,তারপর এখানেই কাটাবো।’
কিছুক্ষণ ভেবে মিতু বলে
“না না আজ না।’
“কেন?এখানে ভালো লাগছে না?’
“লাগছে…..কিন্তু বাবাই এর জন্য চিন্তা হচ্ছে,ওর পরীক্ষা সামনে।তাছাড়া নানুর শরীরও তো ঐদিন খারাপ করেছিল….’
“উফ্ নীবিড় আছে তো….?এত চিন্তা করছো কেন?’
“কিন্তু…..?’
“কোন কিন্তু না….।’মিতুর ঠোঁটে হাত রাখে বন্ধন।
ফের আদুরে কন্ঠে বলে,
“আচ্ছা মিতু তুমি এত ভালো কেন?’
“আপনার জন্যে….’
“সত্যি জান!’
“হুম।’ফের লাজুকতা মিতুর
বন্ধন জড়িয়ে নেয় মিতুকে।বুকে বুক লাগিয়ে কপালে চুমু খায় ফের।
“আমার সোনামনি বউ…।’
“হুম খাবেন না?ক্ষুধা লাগসে তো অনেক?’
“ওহহো ভুলেই তো গেছি…..!’
ফের দুষ্টু হেসে বন্ধন বল্ল একটা কথা।
মিতুও জবাব দেয়।
“হুম তাই না?ওসব ছাড়েন তো?’
এবার বন্ধন এর বাহুডোর থেকে নিজেকে মুক্ত করে
দাঁড়ায় মিতু।কোমড়ে হাত দিয়ে বন্ধনকে শাসনের ভঙ্গীতে বলে
“তাড়াতাড়ি খাবারের অর্ডার দিবেন নাকি না খাইয়ে আজ মারবেন আমাকে….?’
বন্ধন দুষ্টু মাখা কথায় মিতুকে ঘায়েল করে।
“অনেক অসভ্য আপনি বন্ধন?’
ফের লজ্জা পায় ফের শাসন বন্ধনকে।
বন্ধন তার স্ত্রীর আদুরে আল্লাদি মাখা ব্যাকুলতা দেখতে থাকে তখন মুগ্ধ বিস্ময়ে।(চলবে)দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-২১
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

হোটেলের বুফে লাঞ্চ করতে যেয়ে প্রায় সাড়ে তিনটা বেজে যায়।বুফে সাজানো নানা ধরনের খাবার।বাশমতি চালের ভাত,চাইনিজ খাবার,খিচুড়ীও ছিল।চিকেন মাশালা,কাবাব,টিক্কা,খাশীর মাংস,ডাল দিয়ে সবজি,বন্ধনের প্রিয় গলদা চিংড়ি কারী ইত্যাদি।এত খাবার মিতু একসাথে এভাবে দেখেনি।
ভাত খাবে মিতু বল্ল।
“ভাতের সাথে কি খাবা?’
“ভর্তা তো দেখলাম না?’
বন্ধন মুচকী হেসে বল্ল,
“ম্যাডাম পাঁচতারা হোটেলে এসে আপনি ভর্তার জন্য মন খারাপ করছেন?’
“পাঁচতারা তো কী?বাংলাদেশী খাবার কি থাকবে না?’
“আরে বাবু,যা আছে তাই খাও না?’
“এখানের খিচুড়ীটা অনেক মজা হয়,খাশির মাংস,মাসায়ালা,টিক্কা দিয়ে খাও মজা লাগবে।’
মিতুকে একটা মনোরম পরিবেশে হোটেলে লাঞ্চ এর জন্য টেবিলে বসালো।বল্ল,
“তুমি বসো আমি খাবার আনছি ঠিক আছে?’
মূলত এত খাবার দেখে মিতু বুঝতে পারছিল না কোনটা আগে নিবে।বন্ধন নিজেই ব্যস্ত হয়ে গেল।
প্লেটে করে খিচুড়ী,খাশীর মাংস,কাবাব, একপাশে চাটনী,গলদা চিংড়ী সুন্দর করে সাজিয়ে আনলো।
“আপনারটা কই?’
“তুমি শুরু করো।দুজনেরটা কি একসাথে আনা যায়?’
বন্ধন নিজের খাবারও আনল।ও একই খাবার আনল,তবে চাইনিজ রাইস টাও অল্প করে নিল।সব খাবার অল্প করে নিল বন্ধন।
মিতু অবশ্য মেনুটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল।টেবিলে মেনুটা বন্ধন দিতে বলেছিল।
তাতে দেশী বিদেশী নানা খাবার লেখা।
অরগানিক রাইস, যেটাতে নানারকম সীমের বিচি,বাদাম, চিকেন কখনো বিফ দেয়া থাকে।
চিকেন সাসলিক,হারিয়ালী কাবাব,চিকেন অনিয়ন,রোস্টেড ল্যাম্ব লেগ,বাসবুসা,চিকেন উইংস,ফিশ কাটলেট,নার্গিস কোপ্তা,ল্যাম্ব কোপ্তা,মিক্সড ফ্রুট ককটেল এছাড়া রোজার ভিতর ইফতারীতেও রকমারী খাবার এর আইটেম থাকে।হারিরা স্যুপ,পনির সামবোসিক ইত্যাদি খাবারের ছবি দেখে মিতু।
বন্ধন বলতে লাগলো,
“কি হলো খাচ্ছো না যে?’
“মেনুতে তো অনেক খাবার? এত খাবার প্রতিদিন রান্না হয়?কারা খায়?’মিতুর বিস্ময়।
বন্ধন বেশ বুঝতে পারে মিতু এর আগে কখনো পাঁচতারা হোটেলে ব্যুফে লাঞ্চ বা খাবার খায় নি।
বেলা সাড়ে তিনটা তাই ভীড় টাও কম ছিল।
দুচার জন বিদেশীরাও লাঞ্চ করছিল।
“আরে প্রতিদিন এত রান্না হয় না।এখানে বিদেশী নানা পেশার মানুষ আসে,কুটনীতিবিদ ও টুরিষ্টরাই বেশী।তারা তো এসব হোটেলেই খায়।তাছাড়া ব্যবসার কাজেও নানা টুরিষ্ট এন্ড ডেলিকেটস আসে। এছাড়া মন্ত্রী,মিনিষ্টার,এম.পি, বড় বড় নেতা,ব্যবসায়ী এখানে হামেশাই আসে।’
“হুম।’
“তুমি চাইলে পুরান ঢাকার খাবারো খেতে পারো।তবে সেটা বিশেষ অকেশনে যেমন রোজার ইফতারিতে বা ঈদে পাওয়া যাবে।’
“তাই?’
“তোমাকে রোজার সময়ে ইফতারীর সময়ে নিয়ে আসবো।ঐসময়ের খাবারের আয়োজন বিশাল ব্যাপার বুঝছো।’
বন্ধন দেখলো মিতুর আসলেই খুব ক্ষুধা লেগেছে।মিতু বেশ আয়েশ করে খাচ্ছে।গলদা চিংড়ীটা বন্ধনের প্লেটে দিয়ে দিতে চায়।
“আরে কি করছো মিতু?আমার আছে তো?’
“আপনি আমারটাও খান,এটা তো আপনার প্রিয়।’
“হুম যে খাচ্ছে সেও কিন্তু আমার প্রিয়….’বলেই শুরু হয়ে যায় বন্ধনের দুষ্টুমী।
মিতুর দিকে অবাক চোখে তাকায় বন্ধন।কিশোরীর মতোই মেয়েটার আচরণ।খাবার খেলেও মুখের কোণাটায় লেগে থাকে।বিয়ের আগেও যখন ধানমন্ডি রেষ্টুরেন্ট এ তারা খেয়েছিল সেদিনও মিতুর মুখে এমন খাবার লেগেছিল।ফের টিস্যু আগিয়ে দেয় মিতুকে।মিতু বুঝতে পারে।
“ওফ্হো দেখেন তো আজও এমন হয়ে গেল?আমি আসলে আপনার তেমন স্মার্ট বউ না,তাই না বন্ধন?’
বন্ধন মিতুর কানের কাছে বলে একটা কথা, মিতুর ভালো লাগে শুনতে।
“আমার কি ইচ্ছে হচ্ছিল জানো মিতু?’
“কি?’
“তোমার মুখে লেগে থাকা খাবারটা আমি নিয়ে খাই….হোটেল রুম হলে তাই করতাম।’
“হুম থাক বুঝেছি…এই যে আবার শুরু হয়েছে,অনেক দুষ্টু আপনি?’
“শুধু দুষ্টু?’
“না অসভ্যও..’
“জামাইরা এমন অসভ্যই হয়?তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো?’
“কেন?’
“রুমে যাবো।’
“আবার রুমে কেন?’
“আরে আমরা কি চেক আউট করেছি নাকি?আর…’
“হুম।কিন্তু আজ তো কোন নামাজ পড়েন নি?’
“রুমে গিয়ে নামাজ পড়ে নিবো,তুমিও পড়বা।’
“হুম চলেন।’
দুজনে রুমে গিয়ে সকাল ও দুপুরের নামাজটা কাযা পড়ে নেয়।তারপর আসর পরে।
বন্ধনের পাশে মিতু সুন্দর করে নামাজে দাঁড়ায়।বন্ধন পিছনে দাঁড়াতে বলে।
“নামাজে স্বামীর পিছনে স্ত্রীকে দাঁড়াতে হয়।’
“ও আচ্ছা তাই।’
নামাজ শেষ করে ফের মিতুকে বুকে জড়িয়ে কপালে আদর বুলায়।
“তোমাকে এই বেশেই বেশী সুন্দর লাগে মিতু।হিজাব কিনে দিবো তোমাকে?’
“হুম দিয়েন।আচ্ছা আমি তো শাড়ীর সাথে টিপ,কাজল,দুল পড়তেও পছন্দ করি।সেগুলো পড়বো না?’
“কেন পড়বা না? আমার সামনে পড়বা?কিন্তু অনলি ফর মি তুমি সাজবা আর কারো জন্যে নয়।শাড়ী ঢেকে ঢুকে রাখবে।নীবিড় যেন কিছু না দেখে।আর ওর সামনে এত হাসবে না।হাত ধরতে চাইলে বকা লাগাবা…’
“কি বলেন?আমি নীবিড়ের সামনে কেন বের করে রাখবো?’
“ম্যাডাম আপনি বেশ হেলদি গার্ল।চাইলেও বোঝা যায় আপনার বাহু, ফরসা পেট বুঝছেন?’
মিতু বেশ অবাক হয় ওর স্বামীর কথা শুনে।
“এত কিছু খেয়াল করে বন্ধন?’
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। মাগরীবের আযানের জন্য অপেক্ষা করে দুজন।
শোকরানা নামায আদায় করতে বলে বন্ধন।মিতু বুঝতে পারে কেন বন্ধন এটা তাকে বলেছে।
আযান দেবার সময় বন্ধন মিতুকে কিভাবে আযানের জবাব দিতে হয় তাও শেখায়।আযান শেষ হলে জবাব কি হবে তাও বলে দেয় বন্ধন।আর বলে,
“যখন আযান হবে এবং শেষ হবে তখন আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে হয়…’
আযান শেষ হবার পর মিতু চোখ বন্ধ করে চাইতে থাকে তার প্রভুর কাছে।বুক ভরে প্রশান্তির প্রশ্বাস নেয় সে….।(চলবে)দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-২২
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

মাগরীবের নামাজ শেষ করে প্রার্থনা করলো দুজনে।মিতু ঘর অন্ধকার করে নামাজ পড়তে ভালোবাসে।আজ সে অনেক খুশি।
স্বামীর পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছে।বন্ধন প্রার্থনা করছিল তাতেও অদ্ভুত ভালো লাগা মিতুর।
অন্যদিন অবশ্য বন্ধন সকালে ফজরের নামাজ পড়ে চলে যায়।মিতু তখন বলে,
“জায়নামাজটা উঠায়েন না।’
“কেন তুমি পড়বে?’
“জ্বী।’
“বাহ্ খুব ভালো।আলহামদুলিল্লাহ্‌। আমার পেছনে দাঁড়িয়েও পড়তে পারো।’
মিতু অবশ্য একটু আড়ষ্ট হতো।তার কেন জানি ইচ্ছে হতো বন্ধন নামাজ থেকে উঠলে সে ওখানটাতে পড়ে নিবে,যেখানে সে নামাজ আদায় করেছে।
বন্ধন জায়নামাজ খানিকটা ভাঁজ করে রাখতো।মিতু ততক্ষণে বন্ধনের তোয়ালে জামাকাপড় রেডী করতো।
বন্ধন অবশ্য বলতো,
“নামাজ যত দ্রুত আদায় করে নিবে ততো ভালো।তবে তাড়াহুড়ো নয়।’
বন্ধন গোসলে ঢোকার পরপরই মিতু নামাজ আদায় করে।
তবে বন্ধনের সামনে পড়তে ও খুব লজ্জা পায়।তারপর সযতনে টেবিলে নাসতা গুছাতো।
বন্ধন খুব অল্পই খায়।জেলী বা মাখন দিয়ে রুটিটাই পছন্দ।মাঝে মাঝে ডিম ওমলেট করে দিলে খায়।
আর ফলের জুস অথবা গ্রিন টি।
খুব তাড়াহুড়ো করে খেয়ে বা কোনদিন রুটি হাতে নিয়েও চলে যায়।
বিয়ের পর মিতু খুব অবাক হতো, এত সকালে চলে যায় বন্ধন?মাঝে মাঝে বেলা বারোটাও আসতো।তাও লেপটপে কাজ করে চলে যেত।
নামাজ শেষ করে মিতু দেখল,বন্ধনকে বেশ ক্লান্ত লাগছে।
বন্ধনের গালে হাত দিয়ে আলতো স্পর্শ করে সে।
“বাবু ক্লান্ত লাগছে আপনার?বিশ্রাম নিবেন? ‘
“না না ঠিক আছি।বলেছি তো আজ তোমাকে নিয়ে ঘুরবো।তারপর বিশ্রাম।’
“এখন আবার কই যাবেন? ‘
“তুমি গান ভালোবাসো না?’
“হ্যা বাসি ?’
“ঠিক আছে চল….. ‘
বন্ধন এবার মিতুকে নিয়ে উত্তরা মিউজিক ক্যাফেতে নিয়ে যায়।আজ সৃষ্টিকর্তাও প্রসন্ন তাদের উপর।মৃদুমন্দ বাতাস চারিপাশ,সেই সাথে হালকা মেঘের গর্জন।বৃষ্টি নামবে হয়তো।সেপ্টেম্বর মাসে শীতের আগমনী, বারতা জানায়।
কি ভীষন ভালো লাগে মিতুর!সাতাশ বছরের জীবনে তার কাছে আজকের দিনটা অনেক বেশী অনন্য সাধারন মনে হতে থাকে।
“আচ্ছা আজকের তারিখটা জানি কত?’
মনে মনে ভাবে আর আনন্দে পরমকরুনাময়ের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে ফের।
রাত নেমেছে,তাই আর খোলা চুল রাখল না মিতু।ঘন কালো দীঘল কেশ, বন্ধন মুগ্ধ আবেশে তার সুঘ্রান নেয়।
এলো চুলগুলো বাতাসে অবাদ্ধ হতে চায়।তাই মিতু ছোট রাবার দিয়ে হালকা করে পরিপাটী করে বেঁধে নেয়।
পছন্দের টিপ পড়ে।বন্ধনের কথামতো নিজেকে ঢেকেঢুকে সাড়ী আবার ঠিক করে পড়ে।
এ মুহুর্তে ঐ দুটো সাড়ী ছাড়া তার কাছে আর কোন পোশাকও নেই।
বন্ধন অবশ্য হাতের বুড়ো আর তর্জনী আঙুল এক করে বোঝায় মিতুকে মন্দ লাগছে না।
রাজধানীর উত্তরায় মিউজিক ক্যাফে ফায়ার অন আইসে আসে তারা।
দুজন শিল্পী গান শোনাচ্ছিল,মিতালী মুখার্জি আর তপন চৌধুরীর সেই অসাধারন গানটি।
“না ফিরে যাবো না,তুমিও যাবে না আমিও যাবো না…
এই মধু চন্দ্রিমা ফিরে পাবো না…..’
মিতু ফের গুন গুন গানে হারিয়ে যায়।
বন্ধন মুগ্ধ হয় তাতে।
“তুমি এই গানও জানো?’
“হুম জানি তো…..’
“আচ্ছা শোনো তোমার গানের গলা কিন্তু সুন্দর,শিখতে চাইলে বলো ব্যবস্থা করে দেই।’
“হাহাঃ হাঃ দূর কি যে বলেন?ওরকম সবাই ই একটু আধটু জানে,আমিও তাই।আর এখন শিখে কি হবে?কে শুনবে? ‘
মিতুর নাকটা টিপে ধরে বন্ধন বলে,
“তোমার এই বুড়ো স্বামী আবার কে?’
“এই খবরদার আমার স্বামীকে বুড়ো বলবেন না……’
“তাই বুঝি?তোর জামাই বুড়া না তো কি?’মজা করে বন্ধন।
“অনেক সুন্দর আর….. ‘
“আর? ‘
“আর কিছু না…।’
মিতুও রহস্য করে হাসে তখন।
মনে মনে ভাবে,
“যার চোখ যুগল, কথায় আর ভালোবাসায় এত জাদু এত গভীরতা তাও এই বয়সে সে কি করে বুড়ো?’
মিতুর মুগ্ধতাও ধরা দেয় বন্ধনের চোখে।বন্ধন বারবার মিতুর গোলগাল মুখটা ধরে।
মিতু চারপাশটা তাকায়,
“বারবার এভাবে ধরেন না,দেখেন সবাই তাকায় থাকবে তাহলে?’
“তাকালে তাকাক,বুড়া জামাই এর এমন সুন্দর কচিঁ বউ ধরবে,সোহাগ করবে এটাই তো স্বাভাবিক?’
“আবার শুরু করেছেন বাবু?দেখেন বারবার বুড়া বুড়া করলে আমি কিন্তু রেগে যাব এবার।’
“আরে বাবা,বুড়াকে তো বুড়াই বলবো….?’
মিতু মুখ ফোলায় এবার,
“যান কোন কথা নাই আপনার সাথে….।’
“আচ্ছা বাবা ভুল হয়েছে আমি বুড়া না আমি শাহরুখ খান, বাট ঐ ব্যাটাও কিন্তু বুড়া!’
“কি? শাহরুখ খান কি আপনার থেকে সুন্দর?’
বন্ধন তাজ্জব বনে যায় মিতুর কথা শুনে
দুজনে নানান কথায় আর মিউজিক ক্যাফের গানে হারিয়ে যায়।
দুপুরে ভারী খাবারের পর রাতে তারা বেশী কিছু খায় না।
বন্ধন স্যুপ আর নানরুটি, সাসলিকের অর্ডার দেয়।
ক্যাফে তে আসার আগে তারা হোটেল লা মেরিডিয়ান থেকে চেক আউট করে।বন্ধনের অবশ্য ইচ্ছে ছিল রাতটা এখানে থাকতে।তবে মিতু বাসায় যাবার জন্য অস্থির।
বাসায় ফিরে দুজনেই বেশ ক্লান্ত।তবে দুজনকেই ঝরঝরে লাগছিল।বাসার সবাই ঘুমিয়েই ছিল।মিতু অবশ্য বুয়াকে আজ রাতে থাকার জন্য ফোন করে আগেই বলে দিয়েছিল।বুয়াই দরজা খুলে দেয়।
বন্ধন অবশ্য বলছিল
“পা দুটো জ্বালা করছে, ধকলও গেছে বেশ।’
“তাই বুঝি বাবু আপনি শুয়ে পড়েন।’
“তুমি কি করবে?’
“আপনার পা দুটো ডলে দিচ্ছি।’
“হুম তা দিলে মন্দ হয় না।’
মিতু,বন্ধন কাপড় ছেড়ে দুজনেই রাতের নামাজ আদায় করে।
বন্ধন মিতুকে বল্ল,
“আগে থেকেই নামাজ পড়তে তুমি?’
“হুম।’
“এজন্য আমার মতো ভালো বর পেয়েছো।’
“জ্বী,আলহামদুলিল্লাহ।’
“আলহামদুলিল্লাহ্‌। ‘
মিতু সযতনে পা দুটো ম্যাসেজ করতে থাকে বন্ধনের।
বরফ পানি ও তেলও নিয়ে নেয় সাথে।
“বাহ্ মিতু খুব ভালো লাগছে তো….’
বন্ধনের চোখে মুখে প্রশান্তির ছাপ ফুটে ওঠে।মিতু দেখল খুব তাড়াতাড়ি বন্ধন নিস্তেজ হয়ে যায়।দুচোখে রাজ্যের ঘুম তার।
কি যে ভীষন মায়া লাগে মিতুর তখন বন্ধনের মুখখানা দেখে?
ঘরটা আঁধার করে রাখে মিতু।ডিম লাইটটাও নিভিয়ে দেয়।
হঠাৎ পায়ে কিসের যেন ভেজা পরশ পায় বন্ধন।
“আরে মিতু তুমি এখনো আমার পা টিপছো?বন্ধন হঠাৎ সজাগ হয়ে ঘড়ী দেখে রাত অনেক বেজে গেছে।অবাক বন্ধন মিতুর কাছে আসে।
“একি বাবু তুমি কাঁদছো ?কি হয়েছে…..’
“কিছুনা।’অভিমানী মিতু
“আমাকে বলবেনা? ‘
মিতু এবার বন্ধনের বুকে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
“কেন এমন করলেন বলেন?’
“আবার কি করেছি আমি?’
“আমাকে ভালোবাসতে,সোহাগ করতে এত দেরী কেন করলেন?’
“আহা বাবু সত্যি খুব ভুল হয়ে গেছে আমার।প্লিজ লক্ষীটি এভাবে কাঁদে না….’
“হুম।’
“আদর চাই?’
“না।’
“সত্যি বাবু।’
“হুম….. এখন না।’
“এখন না তো কখন?’
“এখন ঘুমায় থাকবো অাপনার বুকে।অনেক ক্লান্ত লাগছে।’
“আচ্ছা আসো,ঘুমাও।’
মিতুকে বুকে জড়িয়ে শোয় বন্ধন
“আমার একটা বাচ্চা বউ।’
বন্ধন লক্ষ্য করলো মিতু তার বুকের লোমগুলো তার নরম আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া করছে।ফের আলতো করে চুমু খায় মিতু বন্ধনের রোমশ বুকে।’
এটা অনেক প্রিয় মিতুর।
বন্ধন নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না।
মিতু অবশ্য বারণ করছে তাকে কোনরকম দুষ্টুমী এখন না করতে।কারন এখন সে ঘুমাতে চায়।এখন ঘুমটা দুজনেরই দরকার তেমনি তো বল্ল মিতু।
তাদের শোবার ঘরের জানালার পর্দা কেঁপে কেঁপে উঠছে বাতাসে।এমন হীমেল হাওয়া যখন বয়,মিতু জানালা খোলা রাখতে বেশ পছন্দ করে।
অন্ধকার ঘর,বাহিরে একফালি চাঁদ।
সেই চাঁদের মৃদু আলোতে বন্ধন তাকায় আদুরে চেহারার যেন, কিশোরী কোন বধুকে।
হাওয়ায় পর্দা উড়ছে তো উড়ছে।সেই সাথে মেঘও ডেকে ওঠে হালকা গর্জে।
বাইরে বৃষ্টি হবে কি হবে না বোঝা যাচ্ছে না।
মিতু বন্ধনের বুকে দুষ্টুমী করেই চলছে তার দুষ্টু হাসি আর চোখের চাহনী দিয়ে।
আদর লাগবে, না লাগবে না তেমনিও যেন বুঝতে পারে না বন্ধন,মিতুর রহস্যময়ী দুষ্টমী আচরনে।(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here