দ্বিতীয় বাসর পর্ব ১৮+১৯

দ্বিতীয় বাসর (গল্প),পর্ব-১৮
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান

বড় চাচা মিতুর চোখের নীচটা দেখলেন,হাতের পালসটা চেক করলেন।
“কী রে মা এখনো এনিমিয়ায় ভুগছিস?মাঝখানে তো পুরাই সুস্থ হয়ে গিয়েছিলি?’
চাচী, ভাবী সবাই হা হয়ে গেল শুনে।বেচারাদের মন যেন ভেংগে গেল শুনে।মিতু ভীষন অপ্রস্তুত হয়।ও ও ভাবেনি যে বিয়ে হয়ে যাবার পর মেয়েদের যেটা হওয়ার কথা,সেটা না হয়ে সে হলো রক্তস্বল্পতার রুগী।
এই রোগটা তার আগে থেকেই।বিশেষ করে তার মা মারা যাবার পর।বাবা কত তাকে জোর করে ভিটামিন ও আয়রন খাওয়াতেন।
চাচা ওষুধগুলি লিখে দিলেন।বেশী করে কচু শাখ,আনার, বেদানা, ডালিম সেই একই ফলগুলি খেতে বল্লেন।
চাচী মৌ ভাবীকে কি যেন বলতে লাগলেন।মৌ ভাবী মিতুকে কাছে ডেকে নিয়ে মুখখানিতে পরম মমতায় হাত ছুইঁয়ে তার চোখের দিকে চাইলো।
“কী হয়েছে ননদিনী ?আমি তোমার বোনের মতো আমাকে বল?’
“কই ভাবী কিছু না।’
“বন্ধন তোমাকে আদরটাদর করে না?’
“করে তো?’
“তাহলে এসব কি শুনছি?তোমার এনিমিয়ার এখনো কেন থাকবে?বড় লোক আর্মির বধু তুমি,খাবা দাবা,বরের সাথে ঘুরবা আর বাচ্চা নিয়ে নিবা?তোমার যে বয়স তাতে তো কতবার মা হওয়ার কথা?’
মিতু ভাবীর কথার কোন উত্তর খুঁজে পায় না।
“আমার তো সবে বিয়ে হলো ভাবী?এর ভিতর কতবার মা হওয়া যেত?’অবাক হয় ভাবীর কথা শুনে।
“আরে সেটা বলিনি,বলতে চেয়েছিলাম যে বিয়ের সাথে সাথে মা হয়ে গেলে আরও দুই বার কি তিনবার মা হতে পারতে তুৃমি?’
ভাবীর দুষ্টুমীতে মিতুও হেসে দেয়।কিন্তু মিতু বারবার মোবাইলটা দেখছিল আর উদাস, দীর্ঘশ্বাস বারবার ভাবী ঠিক বুঝে ফেলে।
“এই মিতু সত্যি করে বলো কি হয়েছে?উনার জন্য মন খারাপ করছে?মিস করছো উনাকে?ফোন করো তাহলে?’
মিতুর চোখ ফের ছলছল হয়।ভাবীকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ওঠে,
“আমার কিছু ভালো লাগছে না ভাবী,আমি উনাকে অনেক মিস করছি….’
“আরে বোকা কাঁদছো কেন? এটা তো ভালো কথা উনাকে ফোন করে এখানে আসতে বলো?’
“করেছিলাম তো,উনি ধরেন নি।’
“ধরেননি মানে কি হয়েছে?’
মিতু মোটামুটি ভাবীকে খুলে বল্ল,আর এটাও বল্ল আজ আসবেন না।এটা শোনার পর মিতুর কোন কিছুই ভালো লাগছে না।
“আহা ছেলে মানুষ। হঠাৎ রেগে গেলে তারা কিছু বলতে পারে না বিশেষ করে মেয়েমানুষকে আর যাকে সে ভালোবাসে তাকে।অন্যজন তোমার হাত ধরে টানাটানি করছে বাইরে থেকে এসে দেখে, রেগে যাওয়াই তো স্বাভাবিক।শোন মিতু কয়েকটা সময় ছেলেরা মানে স্বামী চায় একান্তে স্ত্রীকে কাছে পেতে।বিশেষ করে যখন ঘরে ফিরে। সারাদিন কাজের চাপে তারা ঘরে কেন আসে?শান্তি খুঁজতে।সেই শান্তির দিকে খেয়াল রাখা আমাদের স্ত্রীদের কাজ।তাছাড়া বাইরে থেকে আসলে স্বামীর চেহারা দেখে বুঝে নিতে হয় সে কি চায়?মন ভালো থাকলে হাসিমুখে কথা বলবে।যখন মন খারাপ থাকবে কিছুক্ষ্ন চুপচাপ।কিন্তু সবসময় তাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা তোমাকেই করতে হবে।’
মিতু মনোযোগ দিয়ে ভাবীর কথা শোনে।
“আচ্ছা ফোনটা দাও আমি কথা বলে দেখি।’
“কি বলবা ভাবী?’
“কেন আমার ননদিনীকে জ্বালাচ্ছেন আপনার ভাইকে গিয়ে ঝাড়েন এসব বলে ঝাড়বো উনাকে?’
“হায় আল্লাহ না না ভাবী উনি এটাতে আরো রেগে যাবেন?’
“আরে পাগল সত্যি সত্যি এসব বলবো নাকি?আহা ফোনটা দাও না তারপর দেখো।’
মিতুর কাছ থেকে ফোনটা নেয় মৌভাবী।বন্ধনকে ডায়াল করে।ভাবী বেশ বাকপটু।বন্ধন ফোন ধরে, ভাবী গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলে তার সাথে
“তোমার বর তো খুবই ভালো লোক।সে বল্ল যুদ্ধবিমান এর কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা চালাবে মিরপুর পারাবতে।ওখানের ইনচার্জে তোমার বর।আর তোমার শরীর কেমন কি হয়েছে বারবার জানতে চেয়েছে?কত উতলা দেখলাম তাকে।ফোনটা দিলাম কথা বল্লে না কেন বোকা মেয়ে।’
মিতু আসলে অনেক ঘাবড়ে গিয়েছিল,সেই ভয়ে ফোনও ধরেনি।যদি আবার বন্ধন তাকে এমন কিছু বলে দেয়।তবে তো ফের কষ্ট পাবে।
“বাব্বা কি ভাব তখন দেখালো বন্ধন সাহেব তুমি তো দেখোনি ভাবী তাই একথা বলছো?’
মনে মনে বুলি আওরায়।তবে সুখের কথা বন্ধন ভাবীকে বলে দিয়েছে,
“ভাবী ও থাকুক আজ আপনাদের সাথে।আমি বরং ওকে কাল এসে নিয়ে যাবো।’
মিতু যেন ভালোমতো খাওয়াদাওয়া করে,নিজের খেয়াল নেয় তাও বলতে বল্ল ভাবীকে।
মিতু খেয়ে দেয়ে ভাবীর পাশেই শুয়ে পড়ে।সত্যি ভাবীটা বড় লক্ষী।
কানন ভাই গেষ্টরুমে চলে যায়।মিতুর বুকটা হালকা লাগছে বেশ।তবে খুব ঘুম পাচ্ছে তার এখন।পাবেই তো বন্ধনের জন্য কি কম চোখের পানি ফেলেছে আজকে?
“আর একবার আদর করতে চাইলে ঠিকই বলব আপনাকে?কেন আমায় এত কাঁদালেন….?তখন অত সহজে আদর করতে দিব না বুঝবে তখন…..কিন্তু আমিও যে…..’
ভেবে ভেবে ঘুমিয়ে যায় ফের মিতু।
বন্ধন তো অবাক করে দিয়ে পরদিন সকাল সাতটায় এসে হাজির।
চাচী ও ভাবী তো পুরোই অপ্রস্তুত।আজ প্রথম এসেছে বন্ধন তাদের বাসায়।তড়িঘড়ি করে নাস্তার আয়োজন করে।কাননও বাইরে থেকে কিছু নাস্তা,পরোটা,সুপ,চিকেন ফ্রাই নিয়ে আসে।চাচী জর্দাসেমাই করে দেন ঝটপট।পায়েশ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বন্ধন বল্ল,তার তারা আছে।
নীল সু্্যটে ক্যাপ আর সানগ্লাস লাগিয়ে এসেছেন।
“কিন্তু এই পোশাক তো কাল দেখিনি।সেনাবিভাগ থেকে পড়ে এসেছেন।’
মিতু আড়চোখে তাকায় তার স্বামীর দিকে।
এত হ্যান্ডসাম তার স্বামী?আগে তো মনে হয়নি?
সবার সাথে কুশল বিনিময় করে বন্ধন
চাচাচাচীদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে।গাড়ী থেকে একটা ডালা নামায় তাতে স্যান্ডউচিত,লাড্ডু, বিভিন্ন ধরনের ফলমুল সাজানো।আর্মিদের সকাল বা বিকেলের নাস্তা যেটা এভাবে সাজিয়ে পরিবেশন করে।মিতু এটা আগেও দেখেছে।
চাচাকে জিজ্ঞেস করে মিতুর মাথা ঘোরানোর ব্যাপারটা।চিন্তার কিছু আছে কিনা,টেষ্ট লাগবে কিনা বা বাইরে নিয়ে মিতুকে চিকিৎসা করাতে হবে কিনা।
একসাথে এত প্রশ্ন শুনে চাচাও হেসে দেন
“কিচ্ছু লাগবে না যা ওষুধ দিয়েছি তাতেই চলবে,তোমার ওয়াইফকে ভালো করে খেতে বলবে।এন্ড মাই সন গিভ হার প্রপার টাইম।তোমরা বাইরে কোথা থেকে ঘুরে আসো ভাল মেডিকেয়ার হবে এটা।’
“জ্বী চাচা ঘুরে আসবো খুব দ্রুত।চিন্তা করবেন না।’
মিতু এবার গাড়ীতে ওঠে।আজ ও হালকা অফওয়াইট কালার শাড়ী,লাল বেনারসি ব্লাউজ দিয়ে পড়েছে।ব্লাউজটা কালকেরই ছিল।রাতে ভাবী চেইঞ্জের জন্যে ঢিলেঢালা ম্যাক্সি দিয়েছিল মিতুকে পড়তে।আর শাড়ীটা ভাবীর।ভাবী মিতুকে সত্যি অনেক পছন্দ করে।মিতুও পছন্দ করে তার এই প্রিয় ভাবীকে
মিতুকে সেইরকম লাগছে।হালকা কালারটা ওকে ভীষন মানিয়েছে।গোসল করেছে মিতু চুল ছাড়া।গাড়ীতে উঠে গাড়ীর গ্লাস নামিয়ে দিতে বলে ড্রাইভারকে।পাশে বসে বন্ধন সাহেব।মিতুর দিকে বারবার তাকায়।মিতু অভিমানী মুখ করে গ্লাসের পাশে চেয়ে দেখে প্রকৃতি।হঠাৎ বন্ধন তার গা ঘেষে বসে।মিতু টের পায় বন্ধনের এক হাত মিতুর শরীরের পেছন দিক থেকে, তার বাহুতে চলে গেছে।পেটে স্পর্শ করতে চাইছে বন্ধন।
মিতুর খোলা চুলের ধার ঘেষে ঘাড়ের কাছে মুখ ছোঁয়ায় ফের।
“কি করছেন,ড্রাইভার কিন্তু সামনে?’
“তোমার গায়ের গন্ধ নিচ্ছি মিতু,সেইরকম তোমার শরীরের ঘ্রান আমাকে পাগল করে দেয়…..’
মিতু পুরোই অপ্রস্তুত, মনে মনে ভাবে দুইদিন ভাব দেখিয়ে এখন নতুন করে ঢং করে দেখাচ্ছে বন্ধন।রাগ করার সময় মনে ছিল না।
মিতু হাত দিয়ে সরিয়ে বাঁধা দেয়।এখনো খানিকটা অভিমানে মিতু।
কম কষ্ট পায় নি মিতু,রাগ তো হবেই।
বন্ধন বুঝে যায়।গ্লাস উঠিয়ে দেয়।মিতুর গলায় আবার মুখ ঘেষে।একহাতে মিতুর গোলগাল গালটা নিজের মুখের কাছে টেনে ধরে বন্ধন।কোন বারণই শোনেনা সে।
“বন্ধন কি নেশা জাতীয় কিছু খেয়েছে নাকি,গাড়ীতে এমন করছেন কেন?’মিতু কিছুই বুঝতে পারছে না।
ফের ড্রাইভারকে গন্তব্যস্থলে যেতে বলে।কিন্তু সেটা তাদের বাসা নয়।কোথায় গাড়ী ঘোড়াচ্ছে,বন্ধন আজ মিতুকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে?
মিতু একেবারেই বুঝে উঠতে পারে না।(চলবে)দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-১৯
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

বন্ধনের কথা অনুযায়ী ড্রাইভার উত্তরাতেই গাড়ী ঘোড়ায়।এয়ারপোর্ট রোড,নিকুঞ্জ দুই এ,পাঁচতারা বিলাস বহুল হোটেল।হোটেল লা মেরিডিয়ান।বন্ধনের এক ব্যাংকার বন্ধুর ক্লায়েন্ট হোটেলের ফুড কোর্টের এর ম্যানেজার।
বন্ধন এখানে আগে প্রায়ই আসতো বিশেষ করে ওর ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, বিভিন্ন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।
হোটেল এ ঢোকার পর মিতুর কৌতুহলের শেষ নেই।
বন্ধন গাড়ীতে অবশ্য বলছিল।এই হোটেল তার প্রিয় জায়গা।
রিসেপশনে যারা ছিল বন্ধনকে দেখে মনে হলোআগে থেকেই চিনে ওকে।তাছাড়া তারা এখানে আসবে।বিজনেস ক্লাস রুম বুকিং করা।সেটাও বুঝল
মিতু।
মিতুকে পরিচয় করিয়ে দিল বন্ধন
“দ্যাটস মাই লেডী। ‘
সবাই হাসিমুখে গুড মরনিং ম্যাম বলে তাকে অভ্যর্থনা জানালো।
বন্ধনের হাতে ডোর কি দিয়ে বলতে লাগল
হ্যাভ এ গুড ডে।
মিতু হোটেলে ঢোকার আগেই বলতে লাগল
“বাসায় যাবেন না?বাসা ছেড়ে এখানে নিয়ে এলেন কেন?’
বন্ধন বল্ল,
“কারন এখন বাসায় যাওয়ার মতো মুড নাই,খুবই প্লেজেট জায়গা এটা।আর এভাবে কেন বলছো?তোমার কি ভালো লাগছে না?’
“তা লাগছে কিন্তু…. ‘
“কোন কিন্তু না তুমি আমার বিয়ে করা বউ এত আনইজি হচ্ছো কেন?’
“আনইজি তো হওয়ারই কথা….কথা নাই,বার্তা নাই আজ হোটেলে নিয়ে আসলেন।কি চলছে মনে কে জানে।’
বিড়বিড় করে মিতু।
মিতুকে রুমে নিয়ে আসলো বন্ধন।
রুমের গেট লাগিয়ে দিল।
পাঁচতারা হোটেল বলে কথা। তারউপর বিজনেসক্লাস ডিলাক্স রুম।
রুমে ঢোকার আগে ফ্লোর গুলোতে মিউজিকের শব্দ পাচ্ছিল মিতু।রুমের চারপাশে সাউন্ড সিষ্টেম দেয়া।
বেশ লাগে মিতুর।
এ রকম বিলাসবহুল হোটেল এ সে আগে কখনো আসে নি।
স্টাডি টু্্যরে কক্সবাজারে এসেছিল কলেজের শিক্ষার্থী বন্ধু ও শিক্ষকদের সাথে।যদিও সে হোটেলও পরিপাটি সুন্দর।সেটা ছিল সাধারন হোটেল।তবে পাঁচতারা হোটেলের ভাবই আলাদা।
সেইরকম জাকঁজমকপূর্ন দেখে মিতু ভীষন মনোমুগ্ধ হয়।
বন্ধন মিতুকে দেখে তা বোঝে।
দরজা লাগিয়ে মিতুর ডান হাত ধরে কাছে টানে।
“কি মিতু কেমন লাগছে এখানে?’
“ভালো,খুব ভালো।’
মিতুকে ভীষন আনন্দিত দেখে বন্ধন।মিতুর চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।খুব মায়া হয় তার।
এতদিন ধরে মেয়েটাকে সে আলাদা ভাবে কোথাও নিয়ে যাই নি পর্যন্ত।
“আর কোথাও যাবে মিতু?’
“আর কই যাবো?’
“না তুমি যদি চাও হোটেলটা ঘুরে ঘুরে দেখতে পারো।ছবিও তুলে নিতে পারো।’
“হোটেল ঘুরে ঘুরে দেখার কি আছে?’
“সেটা আপনার ইচ্ছা ম্যাম।’অনুনয় জ্ঞাপন করে যেন বন্ধন।
“আচ্ছা পর্দাগুলো সরিয়ে দেই ‘বলে রুমের করিডোরের কাছে যায় মিতু।
বন্ধন বাঁধা দেয়।
“উহুহ কোন পর্দা এখন সরাসরি নাই।’
ফের কাছে টানে।
তাকায় মিতুর মায়াভরা মুখটাতে।
ফের কাপাকাপি মিতুর
“আচ্ছা এত কাঁপো কেন তুমি আমি কি বাঘ না ভাল্লুক।’
মিতু কিছুই বলে না চোখ নামিয়ে লাজুক হাসে।
“চা কফি, সফট ড্রিংকস খাবে মিতু?’
“হুম ঠান্ডা শরবত অর্ডার দিতে পারেন।’
“কি শরবত?’
“বেলের শরবত পাওয়া যাবে এখানে?’
“হাহাঃ হাঃ বেলের শরবত এখানে কই পাবো আচ্ছা দেখি।’
রুমে প্রয়োজনীয় নাম্বার গুলোতে ফোন দেয় বন্ধন।
“বেলের শরবত হবে না পাপায়া,বেনানা,অরেঞ্জ এসব হবে খাবা?কোনটা বলব?’
“পাপায়া তবে ঠান্ডা। ‘
“ঠিক আছে আর কিছু চিকেন বা থাই স্যুপ?’
“না এখন না।’
ঠিক আছে।বন্ধন পাপায়া জুসের অর্ডার দেয়।রুম সারভেন্ট এর জন্য অপেক্ষা করে।
জুস প্রায় সাথে সাথেই দিয়ে যায়।
ফের গেট লাগিয়ে রুমে লাইট অফ করে।ঘরটা পুরোপুরি অন্ধকার।তবে মিতু এখন খেয়াল করলো ক্যান্ডেল আগে থেকেই জ্বলছে ঘরের দুপাশে।
মিতুর হাতে শরবতের গ্লাসটা দিয়ে বলতে লাগল
“মাই লেডী নাউ ইটস আওয়ার শ্যামপেইন টাইম,রেডী ফর ড্রিংক ইট’
পাপায়া জুস টাকেই শ্যামপেইন বলছে বন্ধন।
শরবত খুব ধীরে ধীরে খাচ্ছে মিতু।বিছানায় বসা মিতু।
এখনো সেই লাজুক হাসি।বন্ধন মিতুর কানের পাশ থেকে চুল গুলো আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া করে।ফের ওর গালে আদরের পরশ বুলায়।মিতু চোখ তো বন্ধই করে ফেলে আবেশে।
“এখন বুঝছো কেন তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি?’
“হুম…’
“তুমি জানো এটা আমার ফেভারেট প্লেস।ভ্যালেন্টাইন এ তো এখানে কাপলরা বেশ এনজয় করে।’
মিতু এবার চোখ বড় করে চায় বন্ধনের দিকে।
এবার কোমড়ে হাত দিয়ে বেশ একটা ভঙ্গী নিয়ে বলে,
“মানে কি? আর কতবার কতজনকে আনসেন?’
“হাহাঃ হাঃ তোমরা মেয়েরা এত সন্দেহ প্রবণ কেন?মিথ্যা বলব না বাবাই এর মাকে নিয়েও হোটেলে গিয়েছি তবে সেটা কক্সবাজারে।ওর অসুখটা ধরা পড়ার আগে খুব ইচ্ছা ছিল এখানে একবার নিয়ে আসবো।বাট…’
মিতুর বড্ড মায়া হয় শুনে।বন্ধনের গালে হাত দিয়ে বলে
“থাক মন খারাপ করবেন না।উনার জন্যে দোয়া করেন।’
মিতুর ছোঁয়া পেয়ে জাপটে ধরে ওর হাত থেকে গ্লাসটা সরিয়ে বুকের কাছে মাথা দেয় বন্ধন।
মিতুর মনে হলো বন্ধন কাঁদছে।
মিতু বন্ধনের মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে
“প্লিজ বাবু এভাবে কাঁদবেন না?আপনি কাঁদলে আমার
ভালো লাগে না….’
“তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো মিতু?চোখের সামনে আমি কেয়ার মৃত্যটা সহ্য করেছি শুধু বাবাই এর মুখ চেয়ে।না হলে আমিও শেষ হয়ে যেতাম।’
“এত ভালোবাসেন আপনি কেয়াকে?’
“হুম…’
মিতু চুপ করে তার স্বামীর দিকে তাকায়,ফের জিজ্ঞেস করে
“এখনো…..’
বন্ধন দেখল মিতু কথাটা শুনে মন খারাপ করে ফেলেছে।এখনি কেঁদে ফেলবে যেন।চোখ ছলছল মিতুর বন্ধনের বাহুডোর থেকে সরে আসতে চায়।
কান্নাকাটি তো করবেই।তার চাইতে চৌদ্দ,পনেরো বছর বয়সের ছোট।কত স্বপ্ন নিয়ে সে তার কাছে এসেছে।কিন্তু বন্ধন এসব তাকে কি বলছে।
কোন মেয়েই তার ভালোবাসার মানুষের মুখ থেকে এটা শুনতে চাইবে না।মেয়েরা আর যাই হোক ভালোবাসার ভাগ দিতে চাইবে না।
“আরে কই যাও মিতু?’
“কই আর যাবো?আমাকে তো আপনি ভালোবাসেন না,কেয়াই আপনার সব….সেই একই কথা শুরু করে দিয়েছেন?’
প্রচন্ড অভিমান করে মিতু।
“আরে তুমি কি বাচ্চা এত রাগ করছো কেন?ও তো এই পৃথিবীতে নেই?ওর উপর রাগ করবে বলো?’
“উনার ওপর রাগ করছি,কে বল্ল?আমি আপনার কথা বলছি….সত্যি করে বলেন,আপনি এখনো তাকেই ভালোবাসেন? আর আমি কি ফেলনা?কেন বিয়ে করেছেন আমাকে বলেন?কি চান আপনি?আমার শরীর তাই তো….যে এখনো তাকে ভুলতে পারছেন না,বারবার একি কথা?’
মিতুর অস্থিরতা বেড়ে যায়।চোখ বেয়ে জলের ফোয়ারা যে কতখানি ঝরে পড়ছে বন্ধন দেখে ভীষন অবাক হয়।
একবারেই বাচ্চা আর ভীষন আদুরে মেজাজের মনে হয় মিতুকে।
বন্ধন ফের জড়িয়ে ধরে মিতুকে।মিতুর পাগলামী বন্ধনের কাছ থেকে সরে যেতে চায় অভিমানে।
এবার শক্ত করে জাপটে ধরে বন্ধন মিতুকে
“আহা কেন রাগ করছো? শুনো কেয়া আমার প্রথম স্ত্রী,বাবাই এর মা চাইলেই কি আমি ওকে ভুলে যেতে পারি?’
“তাহলে আমাকে?’
“সত্যি বলবো?’
মিতুর মুখখানা দুহাত দিয়ে মুখের কাছে এনে বন্ধন বেশ কিছু কথা বলে,
“তুমি এখন আমার জীবন,বেঁচে থাকার ঠিকানা।আমি ভাবতে পারিনি আমি আবার নতুন করে ভালোবাসবো।যখন থেকে দেখেছি তুমি বাবাইকে বিয়ের পর থেকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসছো।নানুর দিকেও কত খেয়াল।আর নীবিড়কেও স্নেহ করো তা আমি জানি।’
“তাহলে কাল রাগ করলেন কেন বলেন?এতবার আপনাকে ফোন দিলাম সে কি রাগ আপনার খেয়ে পর্যন্ত গেলেন না।’
“তোমার উপরে রাগ করি নি সোনা।রাগটা নীবিড়ের উপরই ছিল আর তোমাকে কাছে পেতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল।তুমি আসছিলে না তাই আরো মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল।’
“আচ্ছা এতদিন আমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করেনি?অথবা বিয়ের আগে আমাকে কি আপনার ভালো লাগতো না,যখন আমি পড়াতে আসতাম বাবাইকে?’
“কেন লাগবে না,তুমি সুন্দরী,যৌবনা না লাগার তো কোন কারন নেই?’
“তাহলে যে বিয়ের আগে বল্লেন……’
“তার পেছনে কারন ছিল মিতু।নানু যখন প্রথম তোমার কথা আমাকে বল্ল,তুমি বাসায় আসতে কিন্তু ভালভাবে তো তোমার সাথে দেখাই হতো না, কথা কি হবে?তারপর তোমার ছবি দেখালো আমার কেমন জানি মায়া হতে লাগল তোমার ছবি দেখে।মনে হল আমার চেয়ে এত অল্প বয়সী মেয়ে সে কেন রাজী হবে আমাকে বিয়ে করতে?
“তারপর? ‘
“তারপর ঐ কথাটা এজন্যেই বলেছিলাম যাতে তুমি ঠিক সিদ্ধান্তটা আমাকে জানাও।যে তুমি আসলে কি চাও।পরে দেখলাম তুমিও আর অমত করলেনা।বিশ্বাস করো মিতু ভীষন খুশী হয়েছিলাম আমি।’
মিতু মুগ্ধ নয়নে বন্ধনের কথা শুনছে।
কি যে ভালো লাগছিল তার।
“আচ্ছা ঐদিন আমাকে এক হাজার টাকার একটা নোট দিয়েছিলেন মনে আছে আপনার?’
“হুম মনে আছে?কিন্তু তুমি তো নিতে চাও নাই জোর করে তোমার হাতে গুজে দিতে হয়েছিল।’
“কেন নিব আপনি বলেন?আচ্ছা কেন দিয়েছিলেন?’
“এটা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য, হবু বউ বা স্ত্রীকে কিছু দেয়া।মা থাকলেও তো দিতেন।তাছাড়া তুমি বিয়েতে অমত করোনি,গাড়ীটাতেও চড়তে চাও নি?আমার নিজের কাছে খারাপ লাগছিল তাই টাকাটা তোমার হাতে দেখলেন না গুজে দিয়ে চলে গেলাম।’
“হুম বিয়ের আগে প্রথম স্পর্শ করেছেন আমার হাত ধরে।আর যখন বিয়ে হলো স্পর্শের নামগন্ধ নেই!’
ফের অনুযোগ মিতুর।
“আহা বাবু আমার কি কম খারাপ লেগেছে তোমাকে আদর করতে পারিনি?’
“তাহলে এতদিন করেন নি কেন?’
“তোমাকে হারানোর ভয়ে বাবু,কেয়াকে হারিয়েছি,আমার মনে হতো তোমার চেয়ে বয়স বেশী আমার মতো স্বামীকে তুমি যদি গ্রহন করতে না চাও,তাই জোর করিনি।হারাতে চাই নি তোমাকে?’
মিতু অপলক চোখে দেখে তার স্বামীকে।বন্ধন যে তাকে এসব বলছে তার বিশ্বাসী হচ্ছে না।
“সত্যি বন্ধন,সত্যি আমাকে এত ভালোবাসেন…..? ‘
“হুম…..অনেক সেদিন বুঝো নাই সোনা?’
সেদিন ভালো করে তোমায় আদর করতে পারিনি,আজ মন ভরে ভালোবাসবো জান…….’
বলেই অনবরত মিতুর মুখটায়,গলায়,কাঁধে ফের বাহুতে আদরের উষ্ণ পরশ বুলিয়ে দেয়।কাপাকাপা ঠোঁটগুলো আজ যেন আরো গভীর আবেশে নিজের করে চুষে নেয় বন্ধন পরম তৃপ্তিতে।
“কি হলো মিতু চুপ করে আছো কেন?চোখ খোল, তাকাও আমার দিকে।’
লজ্জায় আর আবেশে মিতু তাকাতেই পারেনা,তবু বন্ধনের ভালো লাগে মিতুর কিশোরীর মতো আবেগী আচরন দেখে।
আবার লক্ষ্য করে বন্ধন মিতুর চোখ দুটো সেই দিনের মতোই আজকে যেন আরো বেশী টসটসে লাল।ভালোবাসার মধুর ছোঁয়ায় একেবারে বুঁদ হয়ে আছে যেন সে।ঐ চোখ পড়ে বন্ধন বুঝে নেয় মিতুর অন্তরে উত্তাল আহবান আর কত যে আকাংক্ষা?
মিতুর অবশ শরীরটা পাঁজকোলা করে তুলে নেয় এবার।
“আরে কি করছেন?পড়ে যাবো তো?’
“পড়বা কেন আমি আছি না,সারাজীবন বুকের পাঁজরে এই ভাবে বেঁধে রাখবো তোমায়….’বলে মিতুকে সযতনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের বুকের কাছে টেনে নেয় বন্ধন।
“সত্যি?’
“হুম সত্যি……’
বিশাল রুমে, করিডোরের পর্দাটা হঠাৎ হাওয়ায় উড়তে শুরু করে।একপাশের জানালা,শোবার বিছানার পেছনে খোলা মনে হচ্ছে।বাইরে বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ আসছে বৃষ্টি আসবে হয়তো।রুমে মৃদুৃমন্দ বাতাস ঢুকেছে খানিকটা।বন্ধন যায় করিডোরের খানিকটা খোলা দরজাটা বন্ধ করে দিতে।মিতু বন্ধনের কোলার ধরে আটকে রাখে।
বাইরে বৃষ্টি ঝরা শুরু হয় ধীরে ধীরে টপাটপখোলা জানালার বাতাসে ক্যানডেলগুলোও নিভে যায়।
বদ্ধরুমে দুজন মানুষও সেই কত দিন পর ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে অবিরাম…..(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here