দ্বিতীয় বাসর পর্ব ১৬+১৭

দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-১৬
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

মিতুও অবশেষে কিছু না খেয়েই তৈরী হতে থাকে।সবুজ শাড়ী,লাল পাড়ের শাড়ী পড়ে সে।বাংলাদেশী পতাকা।এমনিতেই ভীষন রকম মন খারাপ।তার উপর শখের নূপুরটাও হারিয়েছে।বাসা থেকে কি করে গায়েব হলো কিছুতেই বুঝতে পারে না সে।
“কে নিতে পারে আমার নূপুর?বুয়া? না তা কি করে হয়?বুয়া তো কত পরে এল?আমার সামনেই তো খুঁজে দিচ্ছিল… ‘
নুপূরটা নানী গড়িয়ে দিয়েছিল মিতু যখন হয়েছিল।নানী বুদ্ধি করে বড় করেই বানিয়ে দিয়েছিলেন যাতে তার মেয়েও পড়তে পারে।
“মাও কত পড়েছে এই নুপূরটা!’
নূপুরটায় তার মায়ের শরীরের স্পর্শ লেগে আছে।শুধু তাই নয়।মিতুর গা থেকে স্বর্নের চেইন বা আংটি বহুবার খুলে গেছে।কিন্তু নূপুরটা সহজে খুলে যায়নি।একবার এক আত্মীয়ের বিয়েতে নূপুরটা হারিয়ে গিয়েছিল।খুঁজে না পেয়ে মিতুর সে কি কান্নাকাটি।হঠাৎ তার মামাতো ভাই হীমেল পাঞ্জাবীর পকেট থেকে বের করে মিতুর প্রিয় সেই নূপুর।
“দাও, দাও বলছি… ‘
“হুম দিতে পারি এক শর্তে।’
“কি শর্ত?’
ঐতো ছেলেরা সু্যোগ পেলেই যা চায়
“পাপ্পী চাই…তবে দিব।’
“ঐসব পাপ্পী,টাপ্পী বিয়ের পরে হবে।’
“তাহলে নূপুরও বিয়ের পরে পাবা?’
“দেখো হীমেল আমার জিনিস আমাকে দিয়ে দাও,ঐটা তো তোমার না যে বিয়ের পরে আমাকে দিবা।’
“ঐসব জানি না।সোজাকথা কিস করতে দিতে হবে….দিতে দিলে পাবা না হলে পাবা না।’
“আমি এসব জানি না দিতে।’
“ও বাবা কি বলে এখনো বুঝি ষোল,সতেরো বয়স?আচ্ছা আমি জানি,শিখিয়ে দিচ্ছি….’
হীমেল এ জিনিসটা চাইলেই মিতু মামা, মামী বা অভিভাবকদের জেনে ফেলার দোহাই দিত।
“আগে বিয়ে করতে হবে তারপর।’ আর এ কথাটাও বলতো হীমেলকে।
হীমেল ভীষন রেগে যেত।
“ক্ষেত একটা।প্রেম করবে আর সোহাগ করতে দিবে না।যত্তসব!’
“হুম আমি ক্ষেত।এইবার দাও আমার নূপুর।’
হীমেল মিতুর হাতে দুম করে নূপুরটা দিয়ে রাগে কটমট করে চলে যেত।মিতুর এতে হাসি পেলেও আরো বেশী রেগে যেত হীমেল।
মিতু একেবারেই বুঝতো না হীমেলকে।হীমেলের সাথে অন্তরঙ্গ হতে সেও চাইতো।কিন্তু কেমন করে যেন হীমেল বদলে যেতে লাগলো।বিশেষ করে হীমেলের বি সি এস ইঞ্জিনিয়ারিং হয়ে যাবার পর।
একবার রোজার ঈদের সময়,ঈদের কিছুদিন আগে মিতুর শখ হলো চুড়ী কিনবে।হীমলে খুব করে বল্ল সে কথা।
“হ্যালো।’
“হ্যা বল কি ব্যাপার?এই অসময়ে ফোন দিলা?’
“কি করো?’
“আরে বাবা কাজ করি, কি করবো আবার?’
“এই শুনো একটু নিউমার্কেটে আসো না চুড়ী কিনবো।’আল্লাদে গদগদ মিতু শুধায় হীমেলকে।
“এখন আমি অফিসে আর এই রোদের ভিতরে আমি নিউমার্কেট আসবো তোমার চুড়ী কিনে দিতে?খেয়ে দেয়ে তো কাজ নেই আমার?’
“এভাবে কথা বলছো কেন?’
“আমি এভাবেই কথা বলি ঠিক আছে?’
“চুড়ী কিনে দিবে না তাহলে?’
“না তো করছি না?কিন্তু এই রোজা রমজান মাসে তোমার সাথে দেখা করা ঠিক না।’
“কি হবে দেখা করলে?’
“আল্লাহ গুনাহ দিবে…. ‘
“হুম খুব আল্লাহওয়ালা কামেল লোক হয়েছো আজকাল….’
“দেখো মিতু এমনিই অনেক কাজের প্রেশারে আছি,এখন আমার মাথাটা খেয়ো না।’
“সত্যি তুমি আসবে না?’
“বল্লাম তো না… ‘
চুড়ী কিনে দিতে বলাটাতো ঐদিন একটা বাহানা ছিল।কিন্তু সত্যি মিতুর মন চেয়েছিল হীমলকে একবার দেখতে।সম্পর্কের অবনতির বেশ কিছুদিন আগে থেকেই হীমেল তার সাথে এমন রূঢ় আচরন করতো।তাছাড়া বড় মামা মারা যাবার পর থেকে তাদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে।এজন্য হীমেলকেও দায়ী করা হতো।এছাড়া অন্য মেয়ে আসক্তি হওয়ার প্রবণতাও দেখেছিল মিতু।
দুচোখ জলে ছাপিয়ে যায়।এসব কি ভাবছে মিতু।
“ঐটা তো একটা অহংকারী পাঠা, শুধু শুধু পুরোনো দিনের কথা কেন ভাবছি?’
বড় চাচার বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ীতে উঠল মিতু।সারা রাস্তায় মনমরা থাকে।হালকা বৃষ্টি,সবুজ প্রকৃতি,পথচারী কোনকিছুই আজ তার মনে দোলা দেয় না।
বারবার দুপুরের বাজে ঘটনা মনে করে।পরপর দুবার ফোন করে মিতু বন্ধনকে।বন্ধন একবারো ফোন ধরেনি।
“আচ্ছা পৃথিবীর সব পুরুষ কি একরকম।যখন ইচ্ছে হয় ভালোবাসবে যখন ইচ্ছে হয় এভাবে অবহেলা করবে,কষ্ট দিবে…?’
তৃতীয়বার ফোন করে ফোন অফ পায় বন্ধনের।মিতুর উদ্বিগ্নতা বেড়ে যায়।
“বাবা এত রাগ বন্ধনের?ফোনটা পর্যন্ত অফ করে রেখেছে?’
কিন্তু বন্ধনই তাকে নীবিড় সম্পর্কে বলেছিল।
“ও একটু চঞ্চল,একটু সেন্টিমেন্টাল ধরনের….
ওর আচরনে তুমি কিছু মনে করো না।’
নানুও বলতো।বাবা,মা মারা যাবার পর বন্ধন ওর ভাইদেরকে নিজের ছেলের মতো আদর করেছে বিশেষ করে নীবিড়কে।তবে কেয়া নাকি নীবিড়কে খুব একটা পছন্দ করতো না।
“ঠিকই তো এভাবে হাত ধরে টানাটানি করলে পছন্দ করবেই বা কেন?’
তাছাড়া ওদের এসব কথা শুনে তো মিতু এতদিন নীবিড়কে কিছু বলেনি।ছোটভাই তাও আবার বন্ধনের আদরের ভাই,তাই এড়িয়ে গেছে।
কিন্তু এখানে কি মিতুরও দোষ।বন্ধনের ঐ কথাটা খুব লেগেছে মিতুর।
“ভালোই তো আছো আমাকে ছাড়া…..’
এ কথায় বন্ধন কি ইংগীত করতে চাইছে।নীবিড় আর তাকে জড়িয়ে কিছু।
বন্ধনের মোবাইল বন্ধ দেখে মিতু এবার একটা টেক্সট পাঠায়।
“কোথায় আপনি?খেয়েছেন?ফোন ধরছেন না কেন?ফোন আবার অফ পাচ্ছি?আমি চাচার বাসায় রওনা দিচ্ছি……কেন এমন করছেন?কি হয়েছে বলবেন তো?
একটু পরে এস এম এস ফিরতি রিপ্লাই এর রিংটোন বেজে ওঠে।বন্ধন রিপ্লাই করেছে তাকে।উত্তরটা সাথে সাথে পড়ে মিতু।একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে এবার।গাড়ীর গ্লাসটা খুলে দিতে বলে ড্রাইভারকে।বাইরে বৃষ্টির টপটপ ফোঁটা বেড়েই চলেছে। এই অসময়ে বৃষ্টি শীতের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে যেন।
“ম্যাডাম ভিজে যাবেন তো বৃষ্টিতে?’
“ভিজলে ভিজবো,এই ভেজাতে কিছু হবেনা,আপনি গ্লাস খুলে দিন… ‘
বন্ধনের ম্যাসেজটা আবার পড়ে মিতু।
গাড়ীর খোলা জানালায় ঠান্ডা ঠান্ডা টপাটপ বৃষ্টি আর প্রাণবন্ত হাওয়ায় চুল উড়ছে মিতুর।কাঁপাকাঁপা আবেশে উদাস পানে তাকায় জানালার ওপাশটায়।
“আহ্ কি অবিরাম বৃষ্টি!তুমিও বোঝ তবে?’
তেমনি একরাশ চোখের বৃষ্টি যেন সেই ছন্দে কেবলই ঝরতে থাকে মিতুর, দুচোখ বেয়ে ।(চলবে)দ্বিতীয় বাসর,গল্প(পর্ব-১৭)
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

বন্ধন এর এসএমএস টা ছিল এরকম।
“কিছু হয় নি।তুমি বুঝবে না।আর শোনো চাচার বাসায় সাবধানে যাবে।পৌঁছে জানাবে।চাচাকে সব খুলে বলবে কেন মাথা ঘোরায়,ভালো মত জেনে নিবে।আর হ্যা আজ বাসায় নাও ফিরতে পারি।’
কি আজব একটা মানুষ?কেন আজ আসবে না সেটাও মিতুকে জানালো না?
“এমন ভাবে উনি আমাকে এসএমএস টা দিলেন যেন আমাকে দয়া করছেন?পৌঁছে জানাতেও বল্ল,আবার বল্ল আজ আসবে না… কেন উনি এমন করছেন আমার সাথে…? ‘
মিতু ফের মোবাইলটা নাড়াচাড়া করে।
“আচ্ছা জিজ্ঞেস করবো কেন আজ আর আসবে না?’
“না থাক….’
ভাবতে ভাবতে উত্তরা বড় চাচার বাসায় পৌঁছে যায়।বৃষ্টি ততক্ষণে চলে গেছে।গাড়ী থেকে প্রচন্ড রকম মন ভার করে নামে মিতু।এসএসএসটা পড়ার পর,তার বুকটা মনে হচ্ছে আরো ভেঙে গেছে।ব্যথায় ভারাক্রান্ত মিতু গাড়ী থেকে নেমে খেয়াল করলো আকাশটা অনেক বেশী ঝকঝকে লাগছে।রঙধনুও রঙ ছড়িয়ে মেলে ধরেছে আকাশটায়….এসব তো মিতুর ভীষন প্রিয়!
কিন্তু আজ কোন কিছুতেই মনে ভাল লাগা নেই তার।নেই সেই চপল চঞ্চলতা।
“কেন এত খারাপ লাগছে?
উনি তো বেশ আছেন?শুধু খারাপ লাগার বেলায় আমার কেন লাগবে?’
বিষন্ন মনে মিতু চাচার বাসায় কলিংবেলটা চাপ দেয়।উত্তরা চার নাম্বার সেক্টরে আবাসিক এলাকায় নিজেদের বাসা চাচার।
চাচা মতিউর রহমান তার বড় চাচা।ভীষন ভালোবাসেন মিতু ও তার ভাই বোনকে।চাচীও মায়ের মতোনি স্নেহ করেন।
তবে চাচীকে আগে অহংকারী মনে হতো।আগে কথা বলতে চাইতেন না,তবে এখন আর আগের মতো নেই চাচী।বয়স হয়ে যাচ্ছে দুজনেরই।তাছাড়া মিতুর মা,মারা যাবার পর চাচী সেতারা ও মিতুকে রান্নাবান্না,সেলাই,সাংসারিক অনেক কাজ শিখিয়েছেন।চাচারা জামালপুর থেকে আসার পর মিরপুরে ফুপাদের বাসায় ভাড়া থাকতো।মিতুরা,বড় চাচা,ছোট ফুপু ও তার পরিবার একসাথেই মিরপুর বারো নাম্বার বাসায় থাকতো।পাঁচতলা বিল্ডিং ছোট ফুপুদের।একতলায় বড় চাচা,দোতলায় মিতুরা আর তিন তলায় থাকে ছোট ফুপুরা।চার তলায় আবার মিতুর বাবার চাচাতো ভাই গফুর চাচারাও ভাড়া থাকতেন।সেতারার বিয়ের সময় খুব মজা হয়েছিল।গফুর চাচার মেয়ে স্বর্না খুব ভালো নাচতে পারতো।গুনবতীও বটে।সেতারাকে হলুদে সাজিয়েও দিয়েছিল।কি নাচ স্বর্নার?এছাড়া মিতুর কাজিন,আত্মীয়,ভাতিজা, ভাগিনা,পাড়া পড়শী,ভাড়াটিয়া সবাই গান গেয়ে,কবিতা বলে,অভিনয় করে অনেক মজা করেছিল সেতারার বিয়েতে।মিতুর বয়স তখন চোদ্দ কি পনেরো।হীমেল তখন থেকে তাকে পছন্দ শুরু করে।যদিও জানায় তাও বহু পড়ে।সত্যি মনে রাখার মতো বিয়ে ছিল সেটা।
মিতুর বিয়েতে তেমন একটা আনন্দ হয় নি।বিয়েতে একশোটা কথা না হলে সেই বিয়ে নাকি বিয়ে না।যদিও বন্ধনের যোগ্যতা,বংশ, স্বচ্ছ্বলতা দেখে মিতুর বাবার বাড়ীর মানুষ মোটামুটি খুশি ছিল।কিন্তু এই বড় চাচা চাচীর মন ক্ষুন্ন হয়।
“কেন ফজলু মিতু কি পানিতে পড়েছে?বুড়ো লোকের সাথে বিয়ে দিচ্ছো?আর্মি অফিসার তো কি আর একটু খুঁজতে? ওর জন্য কি বরের অভাব হতো?আমাদের মেয়ে কি কানা খোঁড়া?ঐ ঘরে তো ছেলেও আছে বেশ বড়…..একবার বিয়ে ভেঙে গেছে দেখে ওকে বানের জলে ভাসিয়ে দিচ্ছো?’
এসব কথা বড় চাচীই বলেছিল সেদিন মিতুর বাবার উপর রাগ করে।
মিতুর বাবা তেমন সঠিক উত্তর দিতে পারেন নি।হীমেলের সাথে মিতুর বাগদান হয়েও গিয়েছিল।সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ভেংগে যাবার পর মেয়েটা শুধু মন খারাপ করে থাকতো। ছেলেদের প্রতি আস্থা হারিয়ে মিতু বলেও দিয়েছিল আর কখনো বিয়ে করবে না।
তাছাড়া বিয়ে ভেংগে গেছে এমন মেয়ের এর চেয়ে ভালো বর জুটবে না।মিতুর বাবা,এমনকি বড় বোন সেতারা তা ধরেই নিয়ে ছিল।মিতুও আর অমত করেনি।
“তাছাড়া বন্ধনকে দেখে তো ভালো মনে হয়েছে,পুরুষ মানুষের আবার বয়স বোঝা যায় নাকি…. ‘
মিতুর বাবা প্রতিউত্তরে তাই বলেছিল বড় চাচীকে।
বেল বাজতেই দরজা খুলে দিল মৌ ভাবী।শ্যামলা বরণ,কিন্তু চোখগুলো বেশ বড় বড় ভাবীর,ঘন পাঁপড়ী।
মিষ্টি হেসে ভাবী বল্লেন,
“আরে ননদিনী? কি খবর আসো ভেতরে আসো?’
ভাবী চাচাতো ভাই কাননের বউ।চাচা চাচীরও তিন ছেলে মেয়ে। কানন ভাই বড়।ছোট ভাই কাজল বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চাকরী করতো।কিন্তু জাহাজ দূর্ঘটায় আগুন লেগে মারা যায়। তাও পাঁচ বছর হতে চল্ল।ছোট বোন পান্না ময়মনসিংহ মেডিকেল এ পড়ে।কানন ভাই রিয়েলস্ট্যাট ব্যবসায়ী।কানন ভাই ও একটু দেরী করে বিয়ে করেছে।অনেকদিন লন্ডনে ছিল,সি এ পড়ছিল সেখানে।সেখানে একটা মেয়ের সাথে নাকি সম্পর্ক ছিল।ঐ মেয়ে কানন ভাইয়ের কাছ থেকে প্রায়ই টাকা নিতো।তারপর সুযোগ বুঝে প্রতারনা করে।ভাই ভীষন কষ্টও পেয়েছিল।দীর্ঘদিন মানসিকভাবে অসুস্থও ছিল কানন ভাই।
মৌ সদর দরজার ওপাশে উঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কি গো তোমার বর কই?উনি আসবেন না?’
“না ভাবী।’
“সেকি আমার এত সুন্দর ননদিনীকে একা এতদূর ছেড়ে দিয়েছে?তাও এই অবস্থায়…..?’
ভাবী জিভ কেটে মজা নেয় মিতুর।মিতু আসার আগে চাচীকে ফোন করে বলেছিল।যে সে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে।
আর ভাবী ভেবে বসে আছে কি না কি?
“কি অবস্থা ভাবী?’ মিতু অবাক হয়।
“ইশ বুঝছো না কি অবস্থা?’
মানে তোমারও আমার মতো এই অবস্থা হতে যাচ্ছে নাকি?তাই বল্লাম।’
ভাবী অন্তঃস্বত্ত্বা।মিতুর বিয়েতেই খুশীর খবরটা জানা হয়।সাত মাস চলছে এখন।
চাচী অবশ্য ভাবছেন সাত মাসের একটা অায়োজন করবেন,মিতুকে ফোনে বলছিলেন।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে।চাচী পাড়ার এক বাসায় মাহফিলে গেছেন।মাগরীব পড়ে ফিরবেন,ভাবী তাই বল্ল।চাচা হাঁঠতে গেছেন,উনিও নামাজ পড়ে মসজিদ হয়ে আসবেন।প্রাইভেট ম্যাডিকেলে অধ্যাপনা করছেন সরকারী হাসপাতাল থেকে অবসর প্রাপ্ত চাচা মতিউর রহমান।এই বয়সে এখন আর প্র্যাকটিস করেন না।
মিরপুরের বাসায় থাকতে চাচীও মাহফিল করাতো।অন্য কোথাও হলে মিতুকেও সাথে নিতো।ঈদ আসলে তো চাচী মাঝে মাঝে রান্না করে দিয়ে যেত মজার সব খাবার।
ফের কলিং বেল বাজলো।কানন ভাই এসেছে। বৃষ্টিতে ভিজেছে কানন ভাই।মিতুকে দেখে হাসি দিয়ে বল্ল,
“কি রে আপু কখন এসেছিস?তোর শরীর কেমন?জামাই কই…… ‘
মিতুকে আদর করে আপু ডাকে কানন ভাই।
“উনি আসেন নি।হুম চাচাকে দেখাব বলেই তো আসলাম তারপর না বুঝবো কি হয়েছে….. ‘
ভাবী তরিঘরি করে ঘর থেকে তোয়ালে আনতে যায়।
কানন ভাই এর উৎকন্ঠা
“এই আস্তে যাও দৌড়াচ্ছো কেন…..?’
আহা ভাবীর জন্যে কত দরদ ভাইয়ের…..উনার কি কখনো হবে এমন দরদ আমার জন্যে?’
ভাবী পাশের রুমে, কানন ভাই ও যায়।ভাবী সযতনে ভাই এর মাথা মুছে দিচ্ছিল।
ওপাশ থেকে ভাই-ভাবীদের ফিসফিস শোনে মিতু
“এই মৌ মিতুর কি হয়েছে বলেছে কিছু?ও ও কি তোমার মতো…..’
ভাবী ফিসফিসিয়ে হেসে ওঠে কি যেন বলে ভাইকে।চাচীও ব্যাপারটা জানতে চেয়ে ছিলেন।তাছাড়া মিতুর হাতে মিষ্টির প্যাকেট চাচীদের সবার জন্যে।বন্ধন সাহেবই মিতু যাওয়ার আগে সৈনিক দিয়ে কিনে পাঠিয়ে দিয়েছেন।বিয়ের পর প্রথম চাচার বাসায় বেড়াতে আসবে,খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না?
আহারে সবাই তার শরীর খারাপ নিয়ে কি না কি ভেবে বসে আছে।
অথচ কেউ তো আর জানে না আজ পাঁচ মাস হতে চল্ল তার বিয়ে হয়েছে।অথচ আজো হয়নি মিতুর ফুলশয্যায় বাসর!
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মিতু ফের……(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here