দ্যি এল্ডরিচ সিটিজেনস, পর্ব:১০

#দ্যা_এলেমেন্টাল (১)
#লেখনীতে_মাহমুদা_মায়া
১০ম পর্ব

সেদিনের একাডেমিক কার্যক্রম অর্থাৎ ক্লাস শেষ করে অরণি, অর্ণব ও মায়রা কথা বলতে বলতে রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছিলো। অর্ণব ছেলেদের ভবনে থাকে বলে সে কিছুক্ষণ পর মায়রা ও অরণির থেকে আলাদা হয়ে যায়। মায়রাকে দেওয়া বইগুলো থেকে একটি বই হাতে নিয়ে মায়রা পড়ছে, রাস্তা দিয়ে হাঁটছে এবং অরণির কথা শুনছে। বইগুলো আমাদের সাধারণ বইয়ের মতো নয়। বইটি মুঠোফোনের মতো একটি যন্ত্রের ভেতর। মুঠোফোনের মতো চালু করলে নীলাভ বর্ণের স্বচ্ছ পানির মতো একাধিক পাতার উদয় হয়। হাওয়ার মতো হালকা সেই পাতাকে হালকা স্পর্শ করলে তা উল্টে যায় এবং অন্য পাতা চলে আসে। ভেতরের লেখাগুলো মায়রার বোধগম্য এবং কালো বর্ণের অক্ষরে লেখা। এল্ডরিচ শহরের একটি সুবিধা মায়রার বেশ ভালো লেগেছে। এই শহরের রাস্তা দিয়ে কোন গাড়ি চলাচল করে না। সকল গাড়ি আকাশপথে চলাচল করে। এজন্য বই পড়ে হেঁটে যেতে মায়রার তেমন একটা সমস্যা হয় না।

“মায়রা, দাঁড়াও,” পিছু ডাকে মায়রা থমকে দাঁড়ায়। পিছু ফিরে তাকালে আহানকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে। মায়রা পুনরায় বই পড়ায় মনোযোগ দিয়ে প্রশ্ন করে,
“কী? কিছু বলবে?”
“হ্যাঁ। আমার সাথে কোথাও যেতে হবে তোমায়,” আহান আরো কিছুটা এগিয়ে এসে বলে।
“দুঃখিত, আমার সময় নেই।”

মায়রা উল্টো ঘুরে হাঁটাতে থাকে। আহান নিষ্পলক মায়রার দিকে তাকিয়ে আছে, যেন সে কিছু করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে যে ব্যর্থ হয় তা তার মুখমন্ডলের ভাবভঙ্গিতে বুঝা যায়। মায়রা হাঁটতে হাঁটতে পিছু ঘুরে না তাকিয়ে আহানের উদ্দেশ্যে বৃদ্ধা আঙুল উল্টো করে দেখায়। আহান তার ব্যর্থতার কারণ বুঝতে পেরে নিজের ইউনি ব্যাগটা আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে এবং চলে যায়।
অরণি মায়রার দিকে তাকিয়ে হেঁটে হেঁটে বলে,
“আহানের সাথে যাওয়াটা বোধহয় ঠিক হতো। হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতো তোমায়।”

‘গুরুত্বপূর্ণ’ শব্দটা শুনে মায়রা চমকে উঠে এবং অরণির দিকে তাকায়। অরণি মায়রার দৃষ্টির অর্থ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে,
“কী হলো?”
“এই শব্দটা কিছুক্ষণ আগে কেন উচ্চারণ করোনি?” বলামাত্র মায়রা উল্টো ঘুরে দৌড় দেয়। পেছন থেকে অরণি মায়রাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে,
“কোথায় যাচ্ছ?”
“আহানের কাছে। তুমি ফিরে যাও,” এক ঝলক পিছু ফিরে কথাটা বলে মায়রা।

পেছনের পথ ধরে কিছুক্ষণ ছুটতে ছুটতে একসময় মায়রা আহানকে দেখতে পায়। আহান আকাশের দিকে তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। মায়রা নিজের হাঁটুতে দু’হাতের ভর দিয়ে একটু দাঁড়ায়। গ্রীষ্মের গরমে তৃষ্ণার্ত প্রাণীর মতো হাঁপাচ্ছে মায়রা। কিছুক্ষণ পর মাথা তুলে আহানকে ডাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সে বেশ অবাক হয়। সে ভেবেছিলো, এতক্ষণে আহান আরো অনেকটা দূরে চলে গিয়েছে। কিন্তু না, আহান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আহানের পাশ কাটিয়ে আহানের পেছনের পথে একবার তাকিয়ে মায়রা পুনরায় আহানের দিকে তাকায়। সে আহানকে কিছু প্রশ্ন করার আগে আহান উত্তর দিয়ে বলে,
“কেননা আমি মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রক (মাইন্ড কন্ট্রোলার)।”
মায়রা বেশ অবাক হয় এবং আহানের ব্যক্ত করা কথাটি বিশ্বাস করে নেয়। কেননা, মায়রা আহানকে প্রশ্ন করতে চেয়েছিলো যে, ডাক না দেওয়া সত্ত্বেও সে কিভাবে বুঝেছে মায়রা তাকে ডাকবে। মায়রা কিছু বলার জন্য মুখ খুলে। কিন্তু মায়রাকে বলতেও হয় না। আহান উত্তর দিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, গতরাতে এবং আজ সকালের ঘটনাটা আমি’ই ঘটিয়েছি। এখন চলো আমার সাথে,”
আহান মায়রার এক হাত ধরে টেনে নিয়ে চলতে থাকে। মায়রা একইভাবে হা করেই আছে। আহান যেই জঙ্গলের ধারের কাছে যেতে নিষেধ করেছিল, আজ মায়রাকে সে এক’ই জঙ্গলে নিয়ে এসেছে। মায়রা ভয় পাচ্ছে না ঠিক, কিন্তু সে চিন্তিত এটা ভেবে যে আহান কী করতে চাইছে। মায়রা নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কয়েক মুহুর্ত পর জঙ্গলের ভেতর থেকে বিশাল আকৃতির কোন জন্তুর পায়ের শব্দ ভেসে আসে। মায়রার মনে হচ্ছে জঙ্গলের সকল গাছপালা ভেঙে জন্তুটি আসছে। নির্বাক দৃষ্টিতে জঙ্গলটির দিকে তাকিয়ে আছে মায়রা। আহান কিছুক্ষণ পরপর মায়রার দিকে তাকিয়ে তার প্রতিক্রিয়া দেখছে। আরো কিছুক্ষণ পর একটি অদ্ভুত জন্তু তাদের সামনে এসে উদয় হয়। জন্তুটির মাকড়সার মতো আটটি পা এবং উপরের অংশটি হনুমানের মতো। মাথা উঁচু করে জন্তুটির দিকে তাকাতে হচ্ছে মায়রা ও আহানের, এতটাই বড় আকৃতির। জন্তুটি বেরিয়ে এসেই নিজের বুকে কয়েকটা ঘুষি মেরে হুংকার করে উঠে। আহান তার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মায়রার মস্তিষ্কে বার্তা পাঠিয়ে বলে,
“এই জন্তুটি হলো ‘স্পাইডার মানকি’। এই জন্তুটি যে আজ আমাদের শহরে আক্রমণের জন্য আসবে তার পূর্বাভাস আমি পেয়েছি। তাই তোমায় এখানে নিয়ে আসা। এখন এটাকে আমাদের থামিয়ে পুনরায় জঙ্গলে পাঠাতে হবে। ”

বাক্যগুলো শুনামাত্র মায়রা এবং আহান একে অপরের দিকে একপলক তাকায়। এই এক পলকের সুযোগ জন্তুটি নেয়। তার বিশাল হাত আহানকে আঘাত করার জন্য এগিয়ে আসে, যা আহানের বুঝে উঠে সময় লাগে। জন্তুটির হাত আহানের একদম নিকটে চলে আসে। কিন্তু জন্তুটি সেই হাত আর বিন্দুমাত্র এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়। আহান বুঝার জন্য সামনের দিকে তাকায়। পিচঢালা রাস্তার পিচগুলো উঠে জন্তুটির হাতের তুলনায় দ্বিগুণ আকৃতি এবং শক্তির একটি হাতের সৃষ্টি করে, যা জন্তুটির হাতকে থামিয়ে রেখেছে। আহান মায়রার দিকে তাকালে তার চোখ জোড়া রংধনুর রঙে সজ্জিত এবং তার চুলগুলো বিনা হাওয়ায় সবুজ বর্ণের আলো ছড়িয়ে উড়তে দেখে৷ মায়রার দৃষ্টি জন্তুটির দিকে। মায়রা হাত দিয়ে চলে যাওয়ার মতো ইশারা করতে জন্তুটি দূরে ছিটকে পরে। মায়রা জন্তুটির দিকে দৃষ্টি রেখে বলে,
“জন্তুটির মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করো, আহান।”
মায়রা কথাটি বলে আহানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায়। আহান মায়রাকে থামাতে চেয়েও থামালো না। সে জন্তুটির মস্তিষ্ক পড়ার চেষ্টা করছে।
জন্তুটি উঠে দাঁড়িয়ে আরো ভয়ংকর হুংকার দিয়ে মায়রার দিকে তেড়ে আসে। মায়রার মুখমণ্ডল এতটা শক্ত করেছে যে তাকে সবথেকে গম্ভীর ব্যক্তি বলে মনে হচ্ছে। মায়রা সবুজ বর্ণের গোলাকার বৃত্তের ভেতর পঞ্চভুজ আকৃতির এক আলোকরশ্মি নিজ হাত থেকে জন্তুটির দিকে ছুড়ে দেয়। জন্তুটি পুনরায় ছিটকে পরে। কিন্তু এতেও যেন জন্তুটির বিন্দুমাত্র ব্যথা লাগছে না। মায়রার সাথে জন্তুটির তুমুলযুদ্ধ হচ্ছে। এদিকে আহান বারবার চেষ্টা করেও জন্তুটির মস্তিষ্ক পড়তে ব্যর্থ হয়। মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করার পূর্বশর্ত হলো মস্তিষ্ক পাঠ। আহান ব্যর্থ হয়ে মায়রার দিকে তাকায়। মায়রা গাছের লতাপাতার সাহায্যে জন্তুটিকে আটকে রেখেছে। আহান বুঝতে পারে এসময় মায়রাকে মস্তিষ্কের মাধ্যমে বার্তা পাঠালে সমস্যা হতে পারে। তাই সে চিৎকার করে বলে,

“আমি বারংবার ব্যর্থ হচ্ছি।”
মায়রা সম্পূর্ণ বাক্য শুনতে পায়নি, কিন্তু ‘ব্যর্থ’ শব্দটি শুনতে পেরেছে। সে বুঝতে পারে। কিন্তু কি জন্য আহান ব্যর্থ তা বুঝতে পারছে না। মায়রা নিজের শক্তি ব্যবহার করে আরো লতাপাতা এবং মাটির সাহায্যে বেশ শক্ত করে জন্তুটিকে আটকে রাখে। জন্তুটিকে আটকানো হলে মায়রা নিজের শক্তি ব্যবহার করে হাওয়ায় ভেসে জন্তুটিকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। আহান দ্রুত জন্তুটির কাছে চলে আসে। মায়রা পর্যবেক্ষণ করার সময় জন্তুটির গলার দিকে ছোট একটি চিপ দেখতে পায়, যা লালচে আলোতে জ্বলজ্বল করছে। মায়রা তার ইউনি ব্রেচের সাহায্যে সেই চিপকে অকার্যকর করে এবং জন্তুটির সামনে ফিরে আসে। আহানকে তার হাতে থাকা চিপ দেখালে আহান বলে,
“তবে এর জন্য আমি মস্তিষ্ক পড়তে ও নিয়ন্ত্রিত করতে ব্যর্থ হয়েছি।”
জন্তুটি অনেকটা শান্ত হয়ে যায়৷ মায়রাকে দেখামাত্র জন্তুটি অসহায় ও মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে মায়রার দিকে তাকায়। মায়রা জন্তুটির দিকে তাকিয়ে আহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“এমনভাবে জন্তুটির মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করো, যেন দ্বিতীয়বার শহরে প্রবেশ না করে।”
আহান মায়রার কথা মেনে নিয়ে একইভাবে কাজ করে। আহানের কাজ শেষ হলে মায়রা জন্তুটিকে মুক্ত করে দেয়। জন্তুটি মুক্ত হয়ে খুশি হয় এবং জঙ্গলে ফিরে যায়। মায়রা জঙ্গলটির সামনে দাঁড়িয়ে সবুজ বর্ণের গোলাকার বৃত্তের ভেতর পঞ্চভুজ আকৃতির এক আলোকরশ্মি নিজ হাত থেকে জঙ্গলটির দিকে ছুড়ে দেয়। আলোকরশ্মিটি নির্দিষ্ট এক দিকে না গিয়ে সম্পূর্ণ জঙ্গলটিকে ঘিরে একটি হালকা সবুজ বর্ণের দেয়াল সৃষ্টি করে দেয়।
পিছু হেঁটে মায়রা তার ইউনি ব্যাগ কাধে নিয়ে আহানকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,
“আর কোন কাজ আছে কি?”
আহান উত্তরে না বোধক মাথা নাড়ায়। মায়রা আহানের সাথে ফিরে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পর আহান ও মায়রা দুই পথে চলে যায়। মায়রা যেখানে বাস করছে, সেই ভবনের রক্ষী যন্ত্র মানবী মায়রার পথ আটকে দেয়। প্রশ্ন করে,
“কেন? এতো দেরি করে কেন ফিরেছ?”
“বই, বই আনতে দেরি হয়েছে,” মায়রা তার ইউনি ব্যাগ খুলে দেখিয়ে মিথ্যা বলল।

যন্ত্র মানবী মায়রার মিথ্যা ধরতে না পেরে তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়।
রাতের বেলা খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে মায়রা নিজ কক্ষে বসে পড়ছিল। এমন সময় তার হাতে থাকা ইউনি ব্রেচ থেকে মেয়েলি কন্ঠে ভেসে আসে,
“প্রিয় মায়রা, তোমাকে আহান কল করেছে।”
মায়রা ইউনি ব্রেচে একবার স্পর্শ করতে কল রিসিভ হয়ে যায়। অপরপাশ থেকে আহান প্রশ্ন করে,
“মায়রা, তুমি কি ব্যস্ত?”
“ছিলাম, কেন?” উত্তরে মায়রা বলল।
” যতো যা-ই করো। গতরাতের মতো ভুল দ্বিতীয়বার করো না।”
“ঠিকাছে।”
“আচ্ছা, রাখছি।” আহানের এই কথায় মায়রা দ্রুত বলে,
“এই না। আমার কিছু প্রশ্ন আছে।”
“কোন বিষয়ে?”
“আজকের বিষয়ে,” মায়রা বলল।
“হ্যাঁ, বলো।”
“স্পাইডার মানকির গলা থেকে যে চিপ পেয়েছি, তাতে বুঝা যাচ্ছে কেউ জন্তুটিকে নিয়ন্ত্রণ করছিলো। তোমার কি তা মনে হয়নি?”
মায়রার প্রশ্নে আহান চিন্তিত হয়ে বলে,
“না। ব্যাপারটা আমার মাথায় আসেনি। তবে তুমি ভুল বলো নি।”
“সাধারণ কেউ এসমস্ত চিপ দিয়ে কোন জন্তু নিয়ন্ত্রণ করার কথা নয়।”
“আরো একটি ব্যাপার হলো, এল্ডরিচ শহরের সুরক্ষার জন্য চতুর্দিকে অদৃশ্য দেয়ালের সৃষ্টি থাকলেও, জঙ্গলের ভয়ংকর জন্তু থেকে রক্ষার কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি।”
“হ্যাঁ, আমিও সেটাই ভেবেছি। নিশ্চয়ই এই জঙ্গলে কিছু একটা আছে। ”
“তা তো স্পষ্ট। ধীরে ধীরে এসব ব্যাপারের রহস্য উদঘাটন করতে পারব। আপাতত, আমরা চিন্তা মুক্ত। কেননা, তুমি দেয়াল সৃষ্টির মাধ্যমে জঙ্গলটি থেকে এল্ডরিচ শহরকে আলাদা করেছ।”
“হ্যাঁ, বলা তো যায় না। রাতের বেলা আরেকটা বের হতো যদি!”
“আচ্ছা, ঘুমিয়ে পরো। আগামীকাল কলেজে কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে হবে,” আহান কল কাটার জন্য বলল।
“জ্বি, শুভ রাত্রি,” মায়রা বলল।
“শুভ রাত্রি,” আহান কল কেটে দিল।

চেয়ার টেবিলে বসে পড়ছিল মায়রা। হঠাৎ সে নিজে নিজে বলে,
“অরণি এবং অর্ণবকে ব্যাপারগুলো জানালে হয়তো তারাও সাহায্য করতে পারবে। আগামীকাল বলব এ সম্পর্কে।”
বইপত্র সব গুছিয়ে নিয়ে মায়রা নিজের বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরে। পরদিন একাডেমিতে এসব বিষয়ে আলোচনা করার বা তথ্য সংগ্রহ করার কোন সুযোগ পায়নি মায়রা। কারণ, প্রফেসর ডেভিড এবং প্রফেসর জুলিয়া সকল শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ও কথাবার্তা বলেছেন, যার মাধ্যমে সম্পূর্ণ একাডেমিক সময় অতিবাহিত হয়েছে৷
একাডেমি থেকে ফেরার পথে মায়রা আহানকে অর্ণব ও অরণিকে ব্যাপারগুলো জানানোর পরামর্শ দেয়। আহান সম্মতি জানায় এবং অর্ণবকে ব্যাপারগুলো জানাবে বলে নিশ্চিত করে। মায়রার মনে হয়, তার উপর থেকে যেনো একটি বুঝা কমেছে। পথিমধ্যে মায়রা অরণিকে ব্যাপারগুলো জানালে অরণির মনেও কৌতুহল জন্ম নেয়। চারজন দলবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়।

একদিন, দুইদিন, এক সপ্তাহ। এর মাঝে চারজনের একজনও একাডেমিক সময়টাতে এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার সুযোগ পায়নি। একাডেমির বাহিরে কাউকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করার সাহস তাদের হয়নি।

X গবেষণাগারে,

বেশ কয়েকদিন যাবত বিজ্ঞানী ম্যাক্স মায়রার কক্ষ থেকে আনা আয়নার দিকে কড়া নজর রাখেন। তিনি সর্বদা অপেক্ষায় থাকেন এ ভেবে যে, এই বুঝি আয়না পথ ব্যবহার করে মায়রা তার সামনে এসে হাজির হলো। কিন্তু না, সেরকম কিছু ঘটলো না। ম্যাক্সকে আরো বেশি রাগান্বিত করে অন্য ঘটনা ঘটে। মায়রা পৃথিবীতে আসে ঠিক। কিন্তু ম্যাক্সের ভবনে নয়। মায়রা আয়না পথে নিগাম বাড়িতে এসেই উপস্থিত হয়। একইভাবে অল্প মুহুর্ত বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে ফের আয়না পথে চলে যায়। এসব দেখে রাগে গজগজ করতে থাকে ম্যাক্স। ম্যাক্সকে পরামর্শ দিয়ে অফিসার বলে,
“জনাব ম্যাক্স, আপনি নিজেকে শান্ত করুন। আমার মনে হয় নিগাম পরিবারের সকল আতনা নিয়ে আসা হলেও মায়রা কোন না কোনভাবে নিগাম ভবনে এসে পৌঁছাবে৷ সুতরাং, আমাদেরকে নিগাম ভবন দখল করতে হবে।”
পরামর্শটি শুনে ম্যাক্সের দৃষ্টি জ্বলজ্বল করতে থাকে। চমকে গিয়ে সে অফিসারের দিকে তাকায়৷ শক্ত করে অফিসারের বাহু ধরে ম্যাক্স বলে,
“বাহ, অফিসার, বাহ! বেশ ভালো বুদ্ধি দিয়েছ। খু৷ সুন্দর পরামর্শ। বলেছিলাম না, আমার সাথে মিশতে মিশতে তুমি আরো বুদ্ধিমান হয়ে উঠবে।” ম্যাক্স হাসিমুখে নিজের ঢোল নিজে পিটিয়ে বলল।হঠাৎ মুখমণ্ডল শক্ত করে অফিসারের দিকে তাকিয়ে বলে,
“নিগাম ভবন দখলের ব্যবস্থা করো।”
“জ্বি,” অফিসার ম্যাক্সের গবেষণাগার ত্যাগ করে চলে যায়।

এল্ডরিচ শহরে,

রাতের বেলা পড়তে বসে মায়রার মাথায় পুরোনো চিন্তা নতুন করে উদোয় হয়। সে ভাবছে তাকে পুনরায় কে স্বাগতম করা হয়েছে, সে কিভাবে আগে থেকে এখানে ছিলো, কিভাবে প্রফেসর জুলিয়া এবং ডেভিড তাকে চেনেন এবং তার অপেক্ষায় ছিলেন? প্রশ্নগুলো বারংবার তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। হাজার চেষ্টা করেও সে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না, আর না পারছে এসব প্রশ্ন ভুলে যেতে ৷ পড়ায় মনোযোগ দিতে না পেরে মায়রা চেয়ার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায়। জানালার মোটা কাচ ভেদ করে রাতের আকাশের দিকে তাকায়। পৃথিবীর রাতের আকাশের সাথে নিউট্রোপিয়ার রাতের আকাশের মাত্র তিনটি পার্থক্য। প্রথমত, নিউট্রোপিয়ায় ‘চাঁদ’ নামক উপগ্রহ নেই, আছে ‘কেফ্’ নামক সবুজ বর্ণের জ্বলন্ত এক উপগ্রহ। দ্বিতীয়ত, পৃথিবীর রাতের আকাশে তারাগুলো খুব ক্ষুদ্র দেখায়, কিন্তু নিউট্রোপিয়ায় তা তুলনামূলকভাবে অনেক বড়। তৃতীয়ত, পৃথিবীর ক্ষেত্রে রাত যতো গভীর হয়, চারপাশের পরিবেশ ততো নির্জন, পিনপতন নীরবতাময় হয়৷ কিন্তু নিউট্রোপিয়ায়, রাত যতো গভীর হয়, ভয়ংকর সব জীবজন্তুর হুংকারের ধ্বনি গাঢ় হয়, অদৃশ্য রক্ষণশীল দেয়ালে আঘাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে সম্পূর্ণ শহরটিকে বিন্দুমাত্র কাঁপিয়ে তুলে। মায়রা এমন পরিবেশে বর্তমানে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ায় তার তেমন সমস্যা হয় না। মায়রা সকল নেতিবাচকে একটি ইতিবাচক দিক খুঁজে বেরায়। তেমন’ই, সে এল্ডরিচ শহরের সৌন্দর্যকে বেশি প্রাধান্য দেয়।
তারা ও কেফ্’র দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মায়রার কিছুটা হালকা অনুভব হতে শুরু করে। যেই প্রশ্নগুলো তার মস্তিষ্ক ঘিরে ধরেছিল, তা যেন ধীরে ধীরে তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ক্ষণিকের জন্য হলেও কিছুটা হালকা অনুভূতি বড় শান্তিময়।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here