দ্যি এল্ডরিচ সিটিজেনস, পর্ব:১১

#দ্যা_এলেমেন্টাল
#লেখনীতে_মাহমুদা_মায়া
১১তম পর্ব

বিজ্ঞানী ম্যাক্স তার পরিকল্পনায় সফল হয়। অফিসারের সহায়তায় নিগাম ভবনটি দখল করে নিশি এবং রিহানকে বন্দি করে নেয়। কেননা, এ পর্যন্ত যতোবার মায়রার সাথে নিশি ও রিহানের কথোপকথন শুনেছে ততোবার সে বেশ ভালোমতো বুঝতে পেরেছে যে, মায়রার দূর্বলতা রিহান ও নিশি। নিগাম ভবনের হলরুমে মুটামুটি বেশ বড় করে একটি খাঁচা বানানো হয়েছে। বিজ্ঞানী ম্যাক্স সেই খাঁচাতে নিশি ও রিহানকে আটকে রেখেছে। যেন তারা কোন মানুষ নয়, বন্য পশুপাখি। সময়মতো তাদের খাবার ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। নিশি ও রিহান একটি মাত্র প্রার্থনা করছে এবং তা হচ্ছে মায়রা যেন এই নিগাম ভবনে না আসে।
এমন’ই এক দুঃসময়ে রুহান এসে উপস্থিত হয় নিগাম ভবনে। তার যথাযথ কারণ আছে। মায়রার সাথে তার বেশ কয়েকমাস যাবত যোগাযোগ হয় না, এমনকি মায়রা ক্লাসেও যাচ্ছে না। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় সে মায়রার ব্যাপারে বেশ চিন্তিত। মায়রার খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তার এই নিগাম ভবনে আসা। কিন্তু নিগাম ভবনের ভেতর এসে এমন ভয়ানক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, তা রুহানের অজানা ছিল। এক প্রকার রাগান্বিত হয়ে রুহান ম্যাক্সের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,
“কোন সাহসে আপনি আমার আঙ্কেল আন্টিকে এভাবে বন্দী করেছেন? মায়রা কোথায়? মায়রাকে কি করেছেন?”
“বাহ! প্রেমিকার চিন্তায় ব্যাকুল প্রেমিক এসেছে প্রেমিকার পরিবারকে বাঁচাতে!” বিজ্ঞানী ম্যাক্স নীলাভ বর্ণের তরল পদার্থ ভর্তি একটি টেস্টটিউব হাতে নিয়ে বললেন।
“একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না। দেখে তো সুস্থ মানুষ মনে হচ্ছে না। এক্ষুনি আঙ্কেল,,, ” কথা সম্পূর্ণ করতে পারল না। বিকট এক শব্দ, অতঃপর রুহান মুখ থুবড়ে মেঝেতে পরে গেলো।
পেছন থেকে অফিসার রুহানকে গুলি করেছে। রুহানের শরীর থেকে তাজা রক্ত বেরিয়ে মেঝে রঞ্জিত করছে। নিশি ঘটনাটা সহ্য করতে পারেনি। রিহানের বুকে মুখ লুকিয়ে নেয় ভয়ে। রিহান নিজেও চোখ বন্ধ করে নেয়।
ছোট একটি চারাগাছে টেস্টটিউবের তরল পদার্থটুকু ঢেলে দিয়ে ম্যাক্স বলল,
“অতিরিক্ত কথা আমার অপছন্দ। ”

এল্ডরিচ শহরে,

হঠাৎ করে এল্ডরিচ শহরের বাহিরের পরিবেশ উতলা হয়ে পরেছে। ম্যাকিউক পাখিগুলো কোন কারণ ছাড়া এল্ডরিচ শহরে প্রবেশ করার জন্য পাগল হয়েছে। ব্যাপারটা কারো কাছেই ভালো ঠেকছে না। মায়রা, আহান, অর্ণব, অরণি, প্রফেসর ডেভিড ও প্রফেসর জুলিয়া সহ এল্ডরিচ শহরের সকল জনগণ সমুদ্র উপকূলে এসে উপস্থিত হয়েছে। সকলের দৃষ্টি উড়ন্ত ভয়ংকর ম্যাকিউক দলের দিকে। হঠাৎ করে প্রফেসর ডেভিড একটি মাউথ স্পিকারের সহায়তায় বলেন,

“সকল নাগরিক নিরাপদ দূরত্বে সরে দাঁড়ান। ম্যাকিউকের দল থামবার নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ম্যাকিউকের সাথে আমাদের শহরের রক্ষী যন্ত্র মানবেরা লড়াই করবে।”

প্রফেসর ডেভিড শহরের প্রেসিডেন্ট নয় তবে তেমন’ই মূখ্য একজন ব্যক্তি। অর্থাৎ পৃথিবী হলে অবশ্যই তাকে প্রেসিডেন্ট বলা হতো। তাই সকলে ডেভিডের কথা মানতে বাধ্য হলেন। নির্দিষ্ট দূরত্বে সরে দাঁড়ায় সকলে। শুধুমাত্র ম্যাকিউক নয়, বরং আরো একদল সামুদ্রিক দৈত্য এসে যুক্ত হয়েছে। মাথার অংশ দেখতে অনেকটা সি হর্সের মতো কিন্তু এদের পিঠের অংশ কাঁটাযুক্ত আবার দুই হাত দুই পা আছে। মায়রা অদ্ভুত প্রাণিগুলোকে এই প্রথমবার দেখছে। সে আহানের দিকে তাকায়৷ আহান দৃষ্টি সমুদ্রের দিকে রেখেই বলে,
“উড়ন্ত জন্তুগুলোকে ম্যাকিউক এবং সামুদ্রিক জন্তুগুলোকে স্যাকিউক বলা হয়।”
মায়রা তার দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে উত্তেজিত স্যাকিউক ও ম্যাকিউক দলের দিকে তাকায়। ইতিমধ্যে হাজারখানেক যন্ত্র মানব এসে নিজেদের পজিশনে দাঁড়িয়েছে। মায়রা সবটা দেখছে। সে অস্ফুটস্বরে বলে,
“যন্ত্রমানব দ্বারা ম্যাকিউক ও স্যাকিউকের দলকে থামানো অসম্ভব।”
যন্ত্র মানব অবস্থানরত সীমানার বাহিরে আরেকটি রক্ষনশীল দেয়াল সৃষ্টি করা হয় এবং পূর্বের দেয়ালটি ভেঙে দেওয়া হয়।হিংস্র জন্তুগুলো পাগলের ন্যায় ছুটে আসে। মায়রার কথাটা ফলে যায়। এতো যন্ত্রমানব হওয়া সত্ত্বেও তারা জন্তুগুলোর সাথে পেরে উঠছে না। যেসব জন্তুর বুক বরাবর গুলি লাগছে, শুধুমাত্র সেগুলো মারা পড়ছে এবং সবুজ গাছ ও নীলাভ পানিতে পরিণত হচ্ছে। তাও এ দলের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটা। বাকিগুলো তেড়ে এসে যন্ত্র মানবগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলানো দ্রব্যের মতো ফেলে এগিয়ে আসছে। মায়রা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিজের মাথা না বোধক নাড়ায়। একনজর অরণির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে মায়রা। মায়রার ইশারায় অরণি সম্মতি দেয়।
সকলের দৃষ্টির সামনে দিয়েই মায়রা এগিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে। প্রফেসরসহ অর্ণব ও আহান মায়রাকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারে না যে ধরে রাখবে। মায়রা কারো কথাই শুনছে না। মায়রার মুখমন্ডলে এক হিংস্রভাবের উদয় হয়েছে, যা আজ পর্যন্ত কখনও হয়নি। দুই হাতের তালু একবার করে ঘুরিয়ে মেলে দেয় মায়রা। সেই মুহুর্তে তার দু’হাতে সবুজ বর্ণের বৃত্তের মাঝে পঞ্চভুজ আকৃতির এক আলোকরশ্মির উদয় হয়। মায়রার চোখজোড়া রঙধনুর সাতরঙে আরো গাঢ় হয়ে সজ্জিত হয়। মায়রা ভূমিতে হাঁটছে ঠিক, কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে হাওয়ায় এমনভাবে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে, যেন সে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। পানির কোন ঝর্ণা ভেদ করার মতো মায়রা রক্ষণশীল দেয়ালটি ভেদ করেছে।
মায়রার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ততোধিক অরণি। অরণি এবং মায়রাকে দেখে জন্তুগুলো এমনভাবে এগিয়ে আসছে যেন তারা তাদের শিকারকে হাতের মুঠোয় পেয়েছে। অরণিদের হাতে অন্যরকম এক অস্ত্র। কাছাকাছি চলে আসতেই মায়রা আলোকিত দুই হাত এমনভাবে উঁচিয়ে ধরে, যেন সে কোন দেয়ালকে ধ্বসে পড়া থেকে আটকাচ্ছে। জন্তুগুলো এগোতে পারছে না। মায়রা আরো বেশি শক্তি ব্যবহার করে। তার হাতের আলোকরশ্মি আরো গাঢ় হতে থাকে। একসময় মায়রা আলোকরশ্মিকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলে জন্তুগুলো ছিটকে দূরে পরে যায়। আলোকিত হাতদুটো দু’দিকে দিয়ে ঘুরালে কিছু সংখ্যক ম্যাকিউক গাছে এবং কিছু সংখ্যক স্যাকিউক পানিতে পরিণত হয়ে যায়।
অরণিরা তাদের হাতের অস্ত্র দিয়ে জন্তুগুলোকে আঘাত করছে। অদ্ভুত যন্ত্রগুলো দেহের অন্য অংশে লাগলেও তা আরো বৃদ্ধি পেয়ে জন্তুগুলোর বুকে ছিদ্র তৈরি করে দিচ্ছে। এতে সহজেই জন্তুগুলো মারা পরছে। হঠাৎ, একটি স্যাকিউক এসে এক অরণির গলা চেপে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে অরণি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। স্যাকিউকটি বোকার মতো নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। স্যাকিউকটির পেছনে কেউ খোঁচা দিলে সে পিছু ফিরে তাকায়। অরণি মুচকি হেসে স্যাকিউকটিকে হাতের ইশারায় হাই দিয়ে বুকে অস্ত্র ঢুকিয়ে দেয়।
মায়রা নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে লড়াই করছে। তার হাতের আলোকরশ্মি ব্যতীতও সে মাটি এবং পানির সাহায্য নিচ্ছে, যা তার শক্তির একটি অংশ। মায়রা ও অরণিকে এভাবে লড়াই করতে দেখে আহান ও অর্ণব অস্ত্র হাতে নিয়ে এগিয়ে আসে। আহান এগিয়ে আসতে না আসতেই কয়েকটা স্যাকিউক আর্তনাদ করে হাঁটু ভেঙে বসে যায়। পরক্ষণে তারা পানিতে পরিণত হয়। অর্ণব এগিয়ে যেতে যেতে পানির তৈরি একাধিক হাত ও জলমানবের উদয় হয়, যেগুলো ম্যাকিউককে পানির নিচে টেনে নিচ্ছে। ফলস্বরূপ, ম্যাকিউকিগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে এবং তাদের মৃত লাশগুলো উপকূলে ভেসে এসে গাছে পরিণত হচ্ছে। মুহুর্তে স্থানটি সবুজ প্রকৃতিতে পরিণত হচ্ছে। আহান ও অর্ণবের পরপর বাকি এল্ডরিচবাসীও গিয়ে লড়াইতে যুক্ত হয়। সকলের এক হয়ে লড়াই করার কারণে খুব সহজেই ম্যাকিউক ও স্যাকিউকের দলকে পরাজিত করা সম্ভব হয়। শেষমুহুর্তে কিছু জন্তু পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়।
মায়রা বেশ ক্লান্ত হয়ে পরে। হাঁটু ভেঙে নিচে বসে পরে সে। তার চোখজোড়াও নিভু নিভু হয়ে আসছে। এই প্রথমবার একসাথে নিজের এতো শক্তি খরচ করার ফল এটা৷ অরণি ও অন্যান্য মেয়েরা মায়রাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে৷ প্রফেসর জুলিয়া মায়রাসহ বাকি আহত মেয়েদের এবং প্রফেসর ডেভিড আহত ছেলেদের নিজ নিজ কক্ষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
এই ঘটনার পর দুইদিন এল্ডরিচ শহরের সকলকে ছুটি দেওয়া হয় বিশ্রামের জন্য। নিজেদের ব্যয়কৃত শক্তিটুকু সঞ্চয় করতে এই দুইদিনের তুলনায় বেশি সময়ের প্রয়োজন। তবুও সকলে দুইদিন’ই মেনে নেয়। যেসকল কাজকর্ম এল্ডরিচবাসীর ছিল, তা এই দুইদিন যন্ত্রমানব দ্বারা সম্পন্ন করা হয়। এল্ডরিচ শহরে মানুষের তুলনায় যন্ত্রমানবের সংখ্যা বেশি।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here