দ্যি এল্ডরিচ সিটিজেনস, পর্ব:৭

#দ্যা_এলেমেন্টাল (১)
#লেখনীতে_মাহমুদা_মায়া
৭ম পর্ব

গম্ভীর কণ্ঠের কথাটা শুনে মায়রা,অরনি এবং অর্ণব তিনজনই সামনে তাকায়।একজন ছেলে কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটিকে দেখামাত্রই অরনি এবং অর্ণব কিছুটা ঘাবড়ে যায়। অরণি আমতা-আমতা করে বলে,
“দুঃখিত, আহান। প্রফেসর মায়রাকে সব দেখিয়ে কক্ষে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিয়েছেন। আমরা তাই করছি।”
” কক্ষে নিয়ে যাচ্ছিলে? নাকি গল্প করায় মগ্ন ছিলে? আর কে এই মেয়ে?” আহান বেশ কঠিন গলায় বলে।
অর্ণব কিছু বলতে চায়। কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে মায়রা বলে,
“আমি মায়রা। এল্ডরিচ শহরের নতুন নাগরিক। আমিই ওদের শক্তি সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। সেটা বুঝানো এবং দেখানোর জন্য ওরা দুইজন এখানে দাঁড়িয়েছে। এতে ওদের কোন দোষ নেই। এছাড়াও এটা প্রফেসরের আদেশ। তুমি অযথা রাগারাগি করছ কেন?” মায়রা গরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
“এল্ডরিচ শহরের কেউ কখনো কারো জন্য সাফাই দেয় না। সেটা কি তুমি জানো না?”
“একজন ব্যক্তি অপর একজন ব্যক্তিকে কি করতে হবে, না করতে হবে সে সম্পর্কে ভদ্রভাবে বলতে পারে। আদেশ করার মতো নয়। সেটা কি তুমি জান না? অবশ্য যার সাধারণ জ্ঞান নেই সে এসব কিভাবে জানবে! ”
“শহরে পদার্পণ করতে না করতে মুখের জোর দেখানো হচ্ছে? আমার সাধারণ জ্ঞান নেই তা তুমি কিভাবে উপলব্ধির করলে?”
—” মুখের জোর এবং শক্তি দুটোই আছে এবং জায়গামতো দুইটাই প্রয়োগ করতে জানি। যে ব্যক্তিকে কয়েক সেকেন্ড আগে জানানো হয়েছে যে, আমি এল্ডরিচ শহরে আজ নতুন এসেছি, সে আমায় প্রশ্ন করছে এল্ডরিচ শহরের রীতিনীতি জানি কি-না!”

কথাটা বলামাত্র আহান নিজেই বোকা বনে যায়। কেননা মায়রা ঠিক বলেছে। আহান কোন কথা না বাড়িয়ে সরে দাঁড়ায়। এতক্ষণে অরণি ও অর্ণব মায়রাকে চুপ করাতে সার্থক হয়েছে। অরণি মায়রাকে টেনে নিয়ে সরে যায়। অর্ণব আহানের পাশ কেটে যাওয়ার সময় জোরপূর্বক হাসি দেয়। কক্ষে গিয়ে নিজেদের জন্য সিট খুঁজে নেয় তিনজনই। একত্রে বসতেই আরো কয়েকজন এসে ভীড় জমায় মায়রার সামনে। সকলেই মায়রার সাথে পরিচিত হতে চায়।
“এতো ভীড় জমানোর কারণ কি নতুন মেয়ে নাকি? ধীরে ধীরে তো পরিচিত হতেই পারবে। একদিনে সব খেয়ে বদহজম করার ইচ্ছা?” পেছন থেকে রাগী কন্ঠে আহান কথাটা বলে। সবাই কিছুটা ঘাবড়ে যায় এবং যার যার সিটে চলে যায়।

মায়রার পাশের সিটে এসে আহান বসে সামনের দিকে তাকায়। মায়রা আহানের দিকে তাকিয়ে ভেঙচি কাটে। মায়রা হাসিমুখে সামনে তাকায়।
প্রফেসর ডেভিড কক্ষে প্রবেশ করেছেন। মূলত তাদের ক্লাসগুলো তাদের শক্তি সম্পর্কে বুঝানোর জন্য করা হয়। কোথায় কেমন শক্তি ব্যবহার করতে হবে, কিভাবে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, এসব কিছু। এছাড়াও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো পাঠ্যবই পড়ানো হয়।

“ঠিকাছে শিক্ষার্থীরা। সবাই তবে আমাদের শহরের বিশেষ দুইজন নাগরিকের এর সাথে সাক্ষাত করেছ, যারা পৃথিবী থেকে আগত। আশা করছি, তোমরা তাদেরকে সকল ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।”
“কিন্তু প্রফেসর, আমার কিছু প্রশ্ন আছে,” মায়রা হাতের এক আংগুল তুলে বলে।
“কি তোমার প্রশ্ন?” প্রফেসর ডেভিড মায়রাকে প্রশ্ন করার অনুমতি দেয়।
“আপনি বললেন দুইজনের কথা, এই ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝলাম না।”
“মাথায় কি মাটি আছে না-কি? ” পাশ থেকে আহান ফিসফিসিয়ে বলে।
আহানের কথায় মায়রা রাগান্বিত হয়ে তার দিকে তাকায়। বাদবাকি সবাই হেসে উঠে। ডেভিড সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“মায়রা, আমি জানি তুমি বুদ্ধিমতী। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপার বুঝতে তোমার সময় লাগে। তোমার পাশের সিটে বসে থাকা ছেলেটি হচ্ছে আহান, যে কি-না মাত্র এক সপ্তাহ আগে এল্ডরিচ শহরে এসেছে। ”
প্রফেসর ডেভিড সবাইকে তাদের শক্তি বুঝানোর জন্য ক্লাস করানোতে মনোযোগ দেয়। মায়রা হা করে আহানের দিকে তাকায়। আহান কিঞ্চিৎ হেসে মায়রার দিকে না তাকিয়ে বলে,

“আমি জানি তোমার চোখজোড়া রংধনুর রঙে সজ্জিত এবং অনন্য। প্রশংসা শোনার জন্য এভাবে তাকিয়ে থেকে মনোযোগ আকর্ষণ করার প্রয়োজন নেই। ”

আহান মায়রার দিকে একনজর তাকায়। সেসয় মায়রা আহানের চোখজোড়া দেখতে পায়। হলদে বর্ণের চোখজোড়া জলন্ত আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে। আহানের চোখজোড়া মায়রাকে আহানেত শক্তি নিয়ে ভাবাতে বাধ্য করে। কিন্তু মায়রা বেশিক্ষণ না তাকিয়ে ভেংচি কেটে ক্লাসে মন দেয়। ক্লাস শেষে মায়রা বের হতে যাবে তখন আহান বলে,

“অবশ্য অদৃশ্য দেয়াল সম্পর্কে এবং তার বাহিরের বিপদ সম্পর্কে জানো। ভুল করেও কখনও নিষিদ্ধ জঙ্গলে প্রবেশ করো না, যেটা এই শহরেই অবস্থিত।”
” এক সপ্তাহ যাবত শহরে এসে সব কিছু সম্পর্কে ভালো জানো কিভাবে?”
“তোমার মাথায় যে আমায় চিংড়ির মতো লাফানোর পরিকল্পনা চলছে, তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো, ” আহান উত্তরে কথাটি বলে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যায়।
মায়রা হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“আহান আমার মস্তিষ্কে কি চলছে তা কিভাবে বুঝতে পারলো?”
“মায়রা, তুমি কি যাবে আমার সাথে? নাকি এই কক্ষে সারাদিন কাটানোর পরিকল্পনা করছ?” অরণি মায়রার উদ্দেশ্যে বলল।
“হ্যাঁ, আসছি।”

মায়রা ও অরণি সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘুরে ঘুরে দেখছে। মায়রা খেয়াল করে দেখে উপস্থিত সবার মাঝেই কিছু কিছু অলৌকিক শক্তি আছে। হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের কূলে চলে আসে। মায়রা ও অরণি একত্রে অদৃশ্য দেয়াল ভেদ করে বাহিরের আকাশের দিকে তাকায়। ম্যাকিউক পাখিগুলো মায়রা ও অরণিকে সমুদ্র কূলে দেখতে পেয়ে তেড়ে আসছে, যেন তাদের শিকার করবে। কিন্তু অদৃশ্য দেয়াল ভেদ করা ম্যাকিউকের পক্ষে সম্ভব নয়। কিছুক্ষণ ম্যাকিউক পাখিগুলোর হিংস্রতা দেখে অরণি এবং মায়রা সেখান থেকে চলে যায়। এল্ডরিচ শহরে একটিমাত্র শপিংমল এবং তার নাম ‘মল অফ এল্ডরিচ’। অরণি মায়রাকে বেশ কিছু জামা-কাপড় ক্রয় করে দেয়। মল থেকে বের হয়ে মায়রা জিজ্ঞাসা করে,

“আমরা এখন কোথায় যাব?”
” মেয়েদের আস্তানায়, যেখানে আমরা বসবাস করি।”
“সেটা কোথায়?”
“আমার সাথে হাঁটলেই দেখতে পাবে।”

মায়রা কোন প্রকার কথা না বলে অরণির পাশে হাঁটতে থাকে। হঠাৎ তুষারপাত বেশি হতে থাকে। এই তুষার থেকে বাঁচতে অবশ্যই এখন ছাতা প্রয়োজন। হাঁটতে হাঁটতে অরণি মায়রার দিকে একটি স্বচ্ছ কাচের তৈরি হ্যান্ড ব্র্যাচ এগিয়ে দেয়। মায়রা আগ্রহী দৃষ্টিতে তা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। মায়রা প্রশ্ন করে,
“এটা কি?”
” ইউনি ব্রেচ ,” অরণি উত্তর দেয়।
” ইউনি ব্রেচ? ”
“এই ব্রেচ হাতে পরলে তুমি একই সাথে সময় দেখতে পারবে, কারো সাথে কথা বলতে পারবে, লোকেশন দেখতে পারবে, এল্ডরিচ শহরের কোন প্রান্তে কি ঘটছে তা দেখতে পারবে,,,, ” অরণিকে থামিয়ে দিয়ে মায়রা জিজ্ঞাসা করে,
“এটা মুঠোফোনের মতো কাজ করে, এটাই তো তুমি বলতে চাচ্ছ?”
“না, মুঠোফোন নয়। সম্পূর্ণ একটা কম্পিউটারের তুলনায়ও অধিক কিছু বহন করে এই ইউনি ব্রেচ। ধীরে ধীরে এর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারবে।”
“কিন্তু এখন ইউনি ব্রেচ দিয়ে আমি কি করব?”
“হাতে পরিধান করে তুষার থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় চাইবে,” বলামাত্র অরনি তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
মায়রা দেখতে পায় অদৃশ্য কোন কিছু অরণির মাথায় তুষার পরতে বাধা দিচ্ছে। অরণির ইউনি ব্রেচ তখন হালকা নীলাভ বর্ণ ধারণ করে আছে। মায়রা অরণির দিকে তাকিয়ে না বোধক মাথা নাড়ায়। সে বলে,
“তুষার থেকে বাঁচতে ইউনি ব্রেচ কেন? আমার শক্তি যথেষ্ট। ”
অরণি মায়রাকে বাধা দিতে চায়। কিন্তু বাধা দেওয়ার আগে মায়রা আকাশের দিকে তাকিয়ে তুড়ি বাজায়। এতে তুষারপাত কমে যায়। মায়রা হেসে অরণির দিকে তাকায়। অরণি ভয়ার্ত চাহনিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁপানো কন্ঠে সে বলে,
“জলদি আবহাওয়া পূর্বের মতো করে ইউনি ব্রেচ ব্যবহার করো।”
“কিন্তু কেন?” মায়রা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে।
“যা বলছি তা করো। নয়তো নিজেও মরবে, সাথে আমায় মারবে।”

অরণির কথায় মায়রা কনফিউজড হয়ে আবহাওয়া আগের মতো করে দেয়। কিন্তু অরণি কেন এতো ভয় পাচ্ছে তা মায়রা বুঝতে পারছে না। অরণির সাহায্যে মায়রা ইউনি ব্রেচের প্রয়োগ শিখে এবং তুষার থেকে রক্ষা পায়।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here