নষ্ট গলি পর্ব ১৫

#নষ্ট_গলি
পর্ব-১৫
লেখা-মিম

টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছে মায়া। সোহান অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো। সে দেখতে পাচ্ছে মায়া মুখটা কালো করে রেখেছে। কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে এমন সময় দেখলো সালমান এসেছে রুমে। চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
– তোমার ওয়াইফের সাথে ইন্ট্রোডিউস করাও।
সালমানকে দেখে মায়া তার চেহারা স্বাভাবিক রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করছে। ঠোঁটের কোনে হাসি ধরে রাখার প্রানপন চেষ্টা চালাচ্ছে।
– ওর নাম মায়া। মায়া এটা সালমান। আগে তো ওর ছবি তোমাকে দেখিয়েছি।
– কেমন আছেন ভাইয়া?
– হুম ভালো। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও আমার যথেষ্ট ছোট হবে বয়সে ।
– হুম ও তোর বেশ ছোট। শি ইজ অনলি এইটিন।
– এত ছোট মেয়েকে বিয়ে করলে?
– করলাম। ছোটগুলোই ভালো। কোনো কিছু বললে চুপচাপ মেনে নেয়।
– এত ডিফারেন্সে কোনো মেয়ে আজকাল বিয়ে রাজি হয় নাকি?
– ও হয়েছে। কারন ও আলাদা।
– কেনো? ওর কি পিছনে ডানা আছে নাকি?
সালমানের কথায় হাসি পাচ্ছে মায়ার। তবে মনখুলে হাসতে পারছে না। মনে হচ্ছে বুকের মধ্যে কেউ পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। তবুও খানিকটা জোর করে হাসলো মায়া।
– শুনো আমি কিন্তু এত ফর্মালিটিজ মেইনটেইন করতে পারবো না। আমি তোমাকে নাম ধরেই ডাকবো। বয়সে ছোট মেয়েকে আমি ওসব ভাবী টাবী ডাকতে পারবো না। তোমার কোনো প্রবলেম নেই তো?
– না ভাইয়া নাম ধরেই ডাকবেন। আমি আপনার ছোট।
– প্লিজ আমাকেও নাম ধরেই ডাকো। আর এসব আপনি টাপনি বলো না তো। নিজেকে বেশি মুরুব্বি মনে হয় এসব শুনলে।
– ভাইয়া আপনাকে নাম ধরে ডাকবো ব্যাপারটা কেমন দেখা যায় না?
– কেমন দেখা যাবে কেনো? যেখানে আমি পারমিশন দিচ্ছি সেখানে তো কেমন দেখার কোনো প্রশ্নই আসে না।
– তবুও….
– মায়া ও যথেষ্ট ফ্রি মাইন্ডেড ছেলে। তাছাড়া সম্পর্কে ও তোমার ছোট। নাম ধরে ডাকতে তো কোনো আপত্তি আমি দেখছি না ।মায়া খানিকটা ইতস্তত করে বললো,
– জ্বি ডাকবো।
– তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো? আমাদের সাথে বসে পড়ো।
– আমি একটু পর খাবো। আপনি খান।
– আপনি? ভাইয়া মায়া তোমাকে আপনি করে ডাকে?
– হুম।
– এটা কেমন কথা? ও তোমাকে আপনি ডাকে কেনো?
– শুরু থেকে আপনি করে ডাকে। আমি কখনো বাঁধা দেইনি। তাই ও এখন পর্যন্ত আপনিতেই সীমাবদ্ধ আছে। তুমি পর্যন্ত আসতে পারেনি।
– তোমাদের সত্যিই বিয়ে হয়ছে তো?
সালমানের প্রশ্নে বেশ চমকে গেলো মায়া। ব্যাপারটা সালমানের নজর এড়ালো না। সে আরো সন্দেহ নিয়ে মায়াকে দেখছে। মায়া, সালমান দুজনকেই দেখছে সোহান। সে বুঝতে পারছে সালমানের মনে মায়ার চমকে যাওয়াটা খটকা লাগছে।
– কি ব্যাপার? তুমি এমন চমকে উঠলে কেনো? ভাইয়া তোমরা কি বিয়ে করোনি?
– আসলে কেউ বিশ্বাস করে না আমরা বিবাহিত। এ নিয়ে ছয় সাতজন এই প্রশ্ন করেছে। তাই মায়া এমন চমকে গেছে।
– লোকজন সন্দেহ করাটাই স্বাভাবিক। একে তো মায়া এত ছোট। তার উপর ও তোমাকে আপনি করে বলে। আজকাল কেউ আপনি করে বলে নাকি?
– আচ্ছা তুই এই আপনি কথাটার পিছনে হাত ধুয়ে লেগেছিস কেনো বল তো?
– শুনতে কেমন যেনো লাগছে। এনিওয়ে, বাদ দেই সেসব আমি এবার ১৫-২০ দিন থাকবো। মায়া আমি কিন্তু ভোজনরসিক মানুষ। হুটহাট এটা সেটা খেতে ইচ্ছে হয়। আমাকে কিন্তু বানিয়ে দিতে হবে।
– হুম দিবো।
সোহানের ফোনটা বেজে উঠলো। আলিশা ফোন দিচ্ছে। স্ক্রিনে আলিশার নামটা দেখতে পেয়েছে মায়া। মনের ভিতরটাতে খচখচ শুরু হয়েছে আবার। যদিও সোহান ফোনটা রিসিভ করেনি। তবুও খচখচ চলছেই। মুখে আপেলের টুকরা ঢুকিয়ে চিবুতে চিবুতে সোহান জিজ্ঞেস করলো
– তুই তো ৫-৬ দিনের বেশি থাকিস না। তোকে ধরে বেঁধেও রাখতে পারিনা। এবার হঠাৎ ১৫-২০ দিন থাকবি যে?
– শিমুর সাথে অনেকদিন ধরে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
– কি নিয়ে?
– ওকে সময় দেই না। ওর সাথে দেখা করতে আসি না।
— ভুল তো কিছু বলে নি। তুই লাস্ট ঢাকা এসেছিলি পাঁচ মাস আগে। বিগত পাঁচ মাসে শিমুর সাথে একদিনও দেখা করিসনি। ও যে এখনও তোকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে না এটাই অনেক।
– পরীক্ষার প্রেশার ছিলো। বাবার সাথে ব্যবসার কাজও করতে হয়েছে। তাই ওকে সময় দিতে পারিনি।
– এটা কোনো কথা হলো না সালমান। কাজ কাজের জায়গায়। এটার সাথে তুই সম্পর্কগুলো গুলিয়ে ফেলছিস কেনো। কাজের ফাঁকে ওর জন্য সময় বের করাটা তোর উচিত ছিলো। সম্পর্কের যত্ন নিতে শিখ। আর নয়তো সব সম্পর্ক এক এক করে ভাঙতে শুরু করবে। বাবা- মা কে দেখিসনা? দুজনের সাথে দুজনের শুধুমাত্র একটা কাগজের সম্পর্ক রয়ে গেছে। ভিতর থেকে কারো প্রতি কারো কোনো টান নেই। সবটাই হয়েছে অযত্ন অবহেলার কারনে।
– এজন্যই তো ১৫-২০ দিনের সময় নিয়ে এসেছি। প্রতিদিন ওর সাথে মিট করবো। দূরে, শহরের বাইরে ঘুরবো। শুনো মায়া তোমাকে কিন্তু অবশ্যই শিমুর সাথে দেখা করাবো। তবে সেটা কাল। আজকে না। আজকে ওর রাগ ভাঙাবো।
– শিমু কি তোমার প্রেমিকা?
– হ্যা। তোমার চেয়ে একটু বড়। বেশি না। মাত্র একবছরের। সমবয়সী বলা চলে।
ফোনটা আবার বাজছে সোহানের। এবার লাগাতার বেজে চলছে। ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিয়েছে সোহান। সালমানের সাথে মায়া কথা বলছে ঠিকই। তবে নজর পড়ে আছে সোহানের ফোনের দিকে। যন্ত্রনাটা ক্রমশ বাড়ছে মায়ার। যন্ত্রনা আড়াল করার চেষ্টা করছে তবু চোখে মুখে ভেসে উঠছে । প্রিয় কোনো কিছু হারানোর ভয়গুলোর যন্ত্রনা বুঝি এমনই হয়। হাজার চেষ্টায়ও লুকিয়ে রাখা যায় না। খাওয়া শেষে সোহান বেরিয়ে গেলো অফিসের জন্য। প্রতিদিনের মতো আজ মায়া গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসে নি। কাজের মিথ্যে অযুহাতে কিচেনের ওদিকটাতেই পড়ে ছিলো। সোহানের চোখ এড়ায়নি ব্যাপারটা। তার মনেও খচখচানি চলছে। সমস্যাটা কোথায় মায়ার? সুযোগ বুঝে ধরতে হবে এই মেয়েকে।
(চলবে)

/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here