নিবিদ্রিতা কাহন পর্ব -৩৮

#নিবিদ্রিতা_কাহন—-৩৮
®মেহরুমা নূর

★আদ্রিতা নূরানের রুমে আসতেই দেখলো নূরান ওর সব পেইন্টিং গুলো এক জায়গায় জড়ো করছে। আদ্রিতা কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“কি করছ ভাইয়া! এগুলো এভাবে জড়ো করছ কেন?”
নূরান তার কাজ করতে করতেই বলল,
“কারণ, এগুলোর এক্সিবিশন হবে।”
আদ্রিতা উৎসুক কন্ঠে বলল,
“সত্যিই! কিন্তু তুমিতো বলেছিলে এক্সিবিশন করতে ইচ্ছে হয়না তোমার।”
“হুম বলেছিলাম। আর এ’ও বলেছিলাম যে,কখনো প্রয়োজন হলে করবো। তো মনে কর আমার সেই প্রয়োজন এসে গেছে।”
“কি প্রয়োজন, ভাইয়া বলোনা!”
“প্রয়োজনটা পূর্ণ হোক। তারপর সবার আগে তোকেই বলবো। তুই দোয়া কর যেন তোর ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ হোক।”
আদ্রিতা হাসিমুখে বলল,
“অবশ্যই ভাইয়া। আমি দোয়া করি, তোমার ইচ্ছে যেন পূর্ণ হয়।”
স্মিথ হাসলো নূরান। আজকের এক্সিবিশন সে নীলাম্বরীকে খুঁজে পাওয়ার উদ্দেশ্যেই করেছে।কাল সে জীবনের প্রথম ফেসবুক স্টাটাস দিয়েছে। এই এক্সিবিশনের ব্যাপার বলেছে। সে জানে নীলাম্বরী নিশ্চয় তার স্টাটাস দেখবে। এবং তার বিশ্বাস সে এক্সিবিশনে আসবেও। তাকে চিনতে পারাই নূরানের প্রধান কাজ। যা সে পারবে নিশ্চয়।
__

অপরাহ্ন রুগী দেখতে দেখতে প্রচুর টায়ার্ড ফিল করছে।মাথা করছে ভীষণ পরিমাণে তার। অপরাহ্ন কম্পাউন্ডারকে ডেকে বলল,আপাতত যেন আর কোনো রুগী না পাঠায়। কম্পাউন্ডার চলে যেতেই অপরাহ্ন চেয়ার মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঁজে রইল। একটু পরেই দরজা খোলার শব্দ পেয়ে অপরাহ্ন চোখ না খুলেই বলে উঠলো,
“মনির,তোমাকে বলেছিনা এখন রুগী পাঠিও না। ”
সামনে থেকে মেয়েলী কন্ঠে কেউ বলল,
“কিন্তু রুগীর অবস্থাতো ক্রিটিকাল। এখুনই দেখতে হবে ডক্টর সাহেব।”
ঠাস করে চোখ খুলে তাকালো অপরাহ্ন। তানহাকে সামনে দেখ অনেকটাই অবাক হলো সে। এতদিন পর তার শ্যামকন্যাকে দেখে মনটা খুশি হতে নিয়েও আবার সেদিনের তিক্ত কথাগুলো মনে পড়ে গেল তার। মনের মাঝে জমানো অভিমান কেমন যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠল তার।তানহা এরইমধ্যে সামনের চেয়ারে এসে বসলো।অপরাহ্ন তানহাকে এই মুহুর্তে একজন পেশেন্টের মতোই সম্বোধন করে বলল,
“জি বলুন, কি সমস্যা আপনার?”
তানহা অসহায় মুখ করে বলল,
“সমস্যা খুবই গুরুতর ডক্টর সাহেব। ইমার্জেন্সি চিকিৎসা না দিলে পরলোকগমন পাক্কা।”
তানহার কথার ভঙ্গি দেখে অপরাহ্নের ভ্রু কুঁচকে এলো। মেয়েটার কি এমন হয়েছে! অপরাহ্ন গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করলো,
“হয়েছে কি সেটা বলুন আগে। অসুখ কি আপনার! ”
“আরে হচ্ছেইতো না। এটাইতো আসল সমস্যা।”
“মানে!”
“মানে। কিছুদিন পূর্বে একজন আমাকে প্রায় রোজ কলেজ থেকে বাইকে চড়িয়ে ঘোরাতো। কিন্তু গত কয়েকদিন হলো সেটা আর হচ্ছে না।কিন্তু আমারতো অভ্যাস হয়ে গেছে তাইনা। তাইতো আর কোনো বাহনে উঠতে মন চায়না আমার। হেঁটে হেঁটে চলা ফেরা করতে হয়। যারজন্য আমার পা দুটোয় অসম্ভব ব্যাথা হয়। সেই ব্যাথা থেকে জ্বর আসে, জ্বর থেকে কাশি,কাশি থেকে বমি,বমি থেকে ডায়রিয়া, ডায়রিয়া থেকে দূর্বলতা, দূর্বলতা থেকে মাথাব্যথা, তারপর কোমড় ব্যাথ,তারপর….
তানহার রোগের লিস্ট শুনে অপরাহ্ন ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,
” ব্যাস, ব্যাস রোগ বলছেন নাকি রোগের নামের উপর পরিক্ষা দিচ্ছেন।”
“কি করবো বলুন।সব রোগ ওই বাইক ওয়ালার জন্যই হয়েছে। এখন আপনিই এর, চিকিৎসা করুন।”
অপরাহ্ন মনে মনে একটু হাসলো। তারপর বলল,
“হতে পারে আপনার দোষেই সে আসেনা৷ একবার মন থেকে ডেকে দেখুন অবশ্যই আসবে।”
তানহা এবার অপরাধী সুরে বলল,
“দোষতো আমি করেছি।অনেক বড়ো দোষ। কি করবো, আমি আবার একটু টিউবলাইট কিনা।”
অপরাহ্ন মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তানহা আবার বলল,
“আমি সেই বাইক ওয়ালাকে খুব মিস করছি। আমার এতো অসুখ থেকে শুধু সেই বাঁচাতে পারবে। বলুন না সেকি আসবে আবার।”
অপরাহ্ন মুচকি হেঁসে বলল,
“মন থেকে যখন ডাকছেন তাহলে অবশ্যই আসবে সে। আসতেই হবে তাকে। নাহলে এত রোগের অভিশাপে সে ভস্ম হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, আপনাকেও তাকে সিওরিটি দিতে হবে যে আপনি সত্যি সত্যিই তাকে বিশ্বাস করেন। ভরসা করেন তার উপর। কারণ অবিশ্বাসের মাঝে সে আসবেনা কখনো।”
তানহা নমনীয় কন্ঠে,
“আমি বোকা বলে এতটাও না যে,এক ভুল বারবার করবো।নাড়া বেল তলায় একবারই যাই। বিশ্বাস না করার ভুল একবার করেছি। তারজন্য অপরাধবোধেও ভুগছি। আর এই অপরাধবোধে আমি আর কখনো ভুগতে চাইনা।”
অপরাহ্নের বিষন্ন মনের আকাশের মেঘ কেটে যেন খুশির রুনঝুন বর্ষন হলো। তার ভালোবাসা জিতেছে আজ। তার ভালোবাসা পেরেছে তার সত্যতা বোঝাতে। তানহা উঠে গিয়ে দরজা পর্যন্ত এসে পেছনে অপরাহ্নের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি বাহিরে অপেক্ষা করবো বাইক ওয়ালার। আশা করি আসবে এবার।”
বলেই বেড়িয়ে গেল তানহা৷ অপরাহ্ন খুশিতে পারলে এখুনি লুঙ্গি ডান্স শুরু করে দেয়। দ্রুত হাতের কাজ সেরে সে নিজেও বাইরে দৌড়াল। আজ তার শ্যামকন্যাকে নিয়ে বের হবে নীল দিগন্তে।
__

নূরানের পেইন্টিং এর এক্সিবিশন চলছে। অনেক লোকের ভীড় জমেছে তা দেখতে। তবে নূরানের নজর খুঁজছে শুধু তার নীলাম্বরীকে। চারিদিকে নজর ঘুরিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে সবার নজর। আশায় আছে সেই কাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি চোখে পড়ার। এবং নূরানের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সে দৃষ্টি যেন তার চোখে পড়েই গেল। নূরানের আঁকানো সেই নীলাম্বরীর চোখের পেইন্টিং এর সামনে একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে আছে।পড়নে বেগুনি রঙের লম্বা গোল জামা। ফর্সা ছিমছাম গড়নের ষোড়শী কন্যা।চুলগুলো অনেক লম্বা। পেছনে তার লম্বা বেনুনিটা কোমড়ের নিচে পড়ে আছে। মেয়েটি কেমন অপলক মায়াবী নয়নে তাকিয়ে আছে ছবিটির দিকে। তার ওই চোখের নজর নূরানের খুব চেনা। আর চিনতে পেরেই নূরানের হৃৎস্পন্দনের ধ্বনি তুমুল হলো। ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে এগিয়ে গেল সে মেয়েটির কাছে। যত কাছে যাচ্ছে ততই যেন হৃদপিণ্ডের অস্থিরতা বাড়ছে। নূরান নিঃশব্দে মেয়েটির পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
“ঠিকঠাক আঁকাতে পেরেছিতো তোমার চোখ? ”

মেয়েটি চমকে তাকালো নূরানের পানে। তার চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ। যেন চুরি করে ধরা পড়া চোরের মতো তার নজর। মনে হচ্ছে আৎকে উঠেছে সে। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে এদিক ওদিক তাকিয়ে হঠাৎ সে দ্রুত পায়ে বাইরের দিকে যেতে লাগলো। নূরানও গেল তার পেছনে। গেটের বাইরে আসতেই নূরান পেছন থেকে বলে উঠলো,
“দাড়াও নীলাম্বরী। যেতে চাচ্ছো যাও আটকাবো না তোমাকে। তবে একটা কথা শুনে যাও।”
নীলাম্বরী দাঁড়িয়ে পড়লো তবে পিছনে তাকালো না। নূরান তখন বলল,
“যাওয়ার আগে শুধু আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাও। আমার সাথে যতটা কথা হয়েছে তাকি তোমার মনের শুদ্ধ আলাপন,নাকি এই যুগের বাকিদের মতো তুমিও জাস্ট ফান করেছ?প্লিজ, আমি শুধু উত্তর জানতে চাই,আর কিছুনা।নাহলে আমাকে এভাবে রেখে গেলে আমি সেই বালুচরে পড়ে থাকবো, যেখানে না নদীর ঢেউ পৌঁছাবে আর না সেখানে সবুজ ঘাস গজাবে। ”

নূরানের প্রশ্নের উত্তরে মেয়েটির পক্ষ থেকে কোনো জবাব এলোনা। শুধু চুপচাপ ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। নূরান এবার ধীরে ধীরে মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দেখতে পেল মেয়েটির চোখে পানি। নূরান তখন মুচকি হেঁসে বলল,
“তোমার চোখের পানিই তোমার জবাব দিয়ে দিচ্ছে। তাহলে সেদিনের পর থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছ কেন? তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছনা?”
মেয়েটি কিছু না বলে আবারও চলে যেতে নিলে নূরান আবারও মেয়েটির সামনে গিয়ে তার পথ আঁটকে দিয়ে বলল,
“এভাবে জবাব না দিয়ে যেতে দিবোনা আমি। প্লিজ, কিছুতো বলো!”
তখনই পেছন থেকে অন্য একটা মেয়ে হঠাৎ বলে উঠলো,
“ও কিছু বলবে না।”
মেয়েটির কথায় নূরান ভ্রু কুঁচকে তাকালো তার দিকে। মেয়েটি ওদের কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“ওকে হাজার প্রশ্ন করলেও কোনো জবাব পাবেন না।”
নূরান প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কেন?”
“কারণ ও কথা বলতে পারে না।”

প্রচন্ড রকম ধাক্কা খেল নূরান। বিস্মিত নজরে তাকালো সে নীলাম্বরীর দিকে। মেয়েটির দুই চোখের নোনাজল আরও বাড়লো যেন। অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে আছে। হয়তো তার সত্যতা প্রকাশ পাওয়ায় নূরানের সামনে লজ্জিত অনুভব করছে নিজেকে।নীলাম্বরীর সাথের মেয়েটি আবার বলে উঠলো,
“হ্যাঁ, ঠিক শুনছেন। তনয়া কথা বলতে পারে না। ছোটবেলায় একটা এক্সিডেন্টে ওর বাকশক্তি হারিয়ে যায়। শুধু শুনতে পারে।”
নূরান ভ্রু কুঁচকে বলল,
“এক মিনিট, তনয়া কে?”
“ওর নামই তনয়া। নীলাম্বরী ওর আইডির নাম। আর আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।”

নূরানের বুকের মাঝে মুষড়ে উঠল যেন। সে মায়া ভরা চোখে তাকালো তনয়ার পানে। এখন যেন সব পরিষ্কার হয়ে গেল। মেয়েটা যে একারণেই তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে তা বুঝতে পারলো সে। হয়তো ভেবেছে সামনাসামনি দেখা হলে নূরান তার এই অসম্পূর্ণতার ব্যাপারে জানলে তাকে পছন্দ করবেনা। তাই দেখা করার কথা বলায় সে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। নূরান তনয়ার বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি কিছু মনে না করলে এই হলের ক্যাফেটেরিয়াতে তনয়াকে নিয়ে একটু বসবেন আমার সাথে? শুধু পাঁচ মিনিটের বেশি নিবোনা।”
নূরানের কথায় তনয়ার বান্ধবী তনয়ার দিকে তাকালো তার মতামত জানতে। তনয়া মাথা নাড়িয়ে না করলো তাকে।উল্টো বান্ধবীর হাত ধরে চলে যেতে চাইলো। নূরান তা দেখে আবারও অনুনয়ের সুরে বলল,
“দেখুন ওর কথা শুনেন না। আপনি যদি ওর ভালো চেয়ে থাকেন তাহলে প্লিজ বসুন একটু।”
মেয়েটা যেন বুঝলো নূরানের মনোভাব। সে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালো। মেয়েটি তনয়ার হাত ধরে নূরানের সাথে এসে ক্যাফেটিয়ার একটি খালি টেবিলে বসলো একপাশে নূরান, আর একপাশে ওরা দুজন৷ তনয়ার বান্ধবী বলা শুরু করলো,
“তনয়া আপনাকে প্রথম দেখেছিলো বাসের ভিতরে। আপনি বোদহয় কলেজের ড্রেসে ছিলেন। আমি আর তনয়াও ওই বাসে ছিলাম। আমরাও কলেজ থেকেই ফিরছিলাম। আপনার সিটের পাশের ছিটে। আপনি বাসের মাঝেই আর্টবুক বের করে বাসের অন্য সিটে মায়ের কোলে বসে থাকা এক শিশুর স্কেচ আঁকছিলেন।”
মেয়েটির কথায় নূরানের মনে পড়লো।নূরান সবসময় সাইকেল নিয়ে কলেজে যায়।কখনো বাসার গাড়ি ব্যবহার করে না। একদিন ওর সাইকেল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেদিন ও বাসে করেই ফিরেছিলো। আর সেখানে পিচ্চি বাচ্চাটাকে তার স্কেচ বানানোর খুব ইচ্ছে হয়েছিল তার। তনয়ার বান্ধবী আরও বলল,
“সেদিনই তনয়ার আপনার ব্যক্তিত্ব পছন্দ হয়েছিল। আপনার ব্যাপারে জানার খুব উৎসুকতা হয়েছিল ওর। আপনার গলার আইডি কার্ড থেকে আপনার কলেজের নাম আর আপনার নামও জেনেছিল। তারপর একদিন আপনার কলেজে গিয়ে লুকিয়ে আপনাকে ফলোও করেছিলো। তারপর ফেসবুকে আপনার আইডি খুঁজে বের করে। আর তারপরই আপনার সাথে আলাপন শুরু হয়। আপনার দেখা করার কথায় ও বিচলিত হয়ে যায়। নিজেকে অপরাধী ভাবে। ভাবে হয়তো ওর আপনার সাথে কথা বলাটাই উচিত হয়নি। আপনার মনে কোনোরকম আশা জাগানো উচিত হয়নি। কারণ ওর সত্যি জানলে আপনি হয়তো ভাবতে পারেন তনয়া আপনাকে বোকা বানিয়েছে। কারণ ওর মতে ও হয়তো আপনার কাছের কেউ হওয়ার যোগ্য না।আর একারণেই ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি ওর সব কথাই জানি৷ আমার মনে হলো আপনাকে জানানো জরুরি। কারণ আপনার মাঝে আমি শুদ্ধতা দেখেছি। ওর ব্যাপারে সবটা বলে দিয়েছি। আপনার এখন যা বলার তনয়াকে বলুন। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।”

কথাগুলো বলা শেষ করে তনয়ার বান্ধবী উঠে চলে গেল। তনয়া নিজেও উঠে যেতে চাইলো তবে নূরান টেবিলের উপর তার হাত ধরে আবারও আঁটকে দিলো। তনয়ার হাত ধরে বলে উঠলো,
“আমি জানি তোমার মনে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলছে অনেক। তবে একটা কথা না বলে পারছিনা। তোমার কথাবার্তায় আমি তোমাকে খুব বুদ্ধিমতী ভেবেছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে তুমি মোটেও বুদ্ধিমান না। আরে তুমি যদি নিজেকেই অন্যদের থেকে কম ভাবো তাহলে অন্যরা কি ভাববে! নিজেকে কখনো ছোট ভাবতে নেই।একটা কথা মনে রাখবে, অন্য কারোর অধিকার নেই তোমাকে জাজ করার।সে আমিই হোক বা অন্য কেউ।তুমি যেমনই হও তোমার নিজের তাতে গর্ব হওয়া উচিত। অন্য কেউ কি ভাবলো সেটা ভেবে কখনো নিজের পথ চলবেনা। তাহলে কখনো জীবনের আত্মতুষ্টি পাবে না। দেখ আমি তোমার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার কেউ না।তুমি যা চাইবে তাই হবে। শুধু তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। তোমার যদি আমার উপর একটুও বিশ্বাস থেকে থাকে তাহলে আমাকে আজ আটকাবে তুমি। আর যদি না আটকাও তাতেও রাগ হবোনা। তোমার সিদ্ধান্তের রেস্পেক্ট করবো আমি। আর আজকের পর তোমার সাথে যোগাযোগ করবোনা।
বলেই নূরান উঠে যেতে উদ্যোত হলো। তৎক্ষনাৎ তনয়া নূরানের চেপে ধরলো। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটল নূরানের। তাকালো সে তনয়ার পানে। তনয়াও হালকা লাজুক হাসলো।
___

আদ্রিতা আচারের বোয়াম কোলে নিয়ে সোফায় বসে টিভি দেখছে আর আচার খাচ্ছে। তানি খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে এসে আদ্রিতার সামনে বসে বলল,
“দুপুরের খাবার বাদ দিয়ে তুই বসে বসে আচার খাচ্ছিস! আচার খেলে পেট ভরবে! খালি পেটে এত আচার খেলে এসিডিটি হবে পাগলী।”
আদ্রিতা আহ্লাদী হেঁসে বলল,
“আমার হবে না।”
“বললেই হলো। আয় আমি খাইয়ে দেই। নাহলেতো আর আজ সারাদিন আচার খেয়েই থাকবি৷”
বলেই তানি নিজের হাতে ভাতের লোকমা তুলে আদ্রিতার মুখে তুলে দিতে লাগলো। ওদের খাওয়ার মাঝেই নিবিড়কে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতে দেখলো ওরা। তাকে বাইরের দিকে যেতে দেখে তানি বলে উঠলো,
“নিবিড়, কথায় যাচ্ছিস!”
তানির প্রশ্নে নিবিড় দাঁড়িয়ে গেল। তার চোখে মুখে হালকা অপ্রস্তুত ভাব দেখা গেল। সে প্রতিত্তোরে বলল,
“একটা মিটিং আছে মা। সেখানেই যাচ্ছি।”
“আজতো শুক্রবার। ছুটির দিনেও কিসের মিটিং! ”
“একটা ইমার্জেন্সি পড়ে গেছে। তাই জরুরি মিটিং রাখা হয়েছে। খুবই ইম্পরট্যান্ট। আমি আসছি।”
বলেই নিবিড় বেড়িয়ে গেল। আদ্রিতা একটু অবাকই হলো।সাথে মন ক্ষুন্নও। সকালেই নিবিড় ওকে বলেছিল আজ ওদের সবাইকে বেড়াতে নিয়ে যাবে। আর এখন আবার এভাবে চলে গেল। আদ্রিতার আর খেতে ইচ্ছে করলোনা। সে তানিকে বলে নিজের রুমে চলে এলো। তখনই ওর বান্ধবী ইভার ফোন এলো। সে বলল আজ নাকি বন্ধুরা মিলে বেড়ানোর প্ল্যান করেছে আদ্রিতাকেও যেতে বলল ওদের সাথে। আদ্রিতা ভাবলো এটাই ভালো হবে। ঘরে বসে মন খারাপ করে থাকার চেয়ে বেড়িয়ে আসলে মন ভালো হবে। তাই আদ্রিতাও রাজি হয়ে গেল। রেডি হয়ে বেড়িয়ে গেল ইভার বলা লোকেশন অনুযায়ী।

একটা রেস্টুরেন্টে গেল আদ্রিতা। সেখানে বান্ধবীদের সাথে অনেকক্ষণ আড্ডাও দিলো তারা। ওরা আড্ডা দিচ্ছিল রেস্টুরেন্টের তিনতলায়। আড্ডা দেওয়া শেষে নামতে নিয়ে দেখলো লিফটের সামনে অনেক ভীড়। তাই আদ্রিতা দাঁড়িয়ে না থেকে সিড়ি বেয়েই নেমে আসতে লাগলো। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় আসতেই হঠাৎ আদ্রিতার দেখতে পেল নিবিড়কে। দোতলার একটা টেবিলে বসে সে। তাকে এখানে দেখে অনেকটাই অবাক হলো সে। তবে তার চেয়েও বেশি অবাক হলো তার সামনের ব্যাক্তিকে দেখে। কারণ সেই ব্যাক্তিটি আর কেউ না৷ সেদিনের সেই ডক্টর জেরিন। তা দেখে বড়সড় একটা ধাক্কা খেল আদ্রিতা। নিবিড় ভাইয়া তাহলে জেরিনের সাথে দেখা করতে এসেছে! তাও আবার বাসায় মিথ্যে বলে! আদ্রিতা স্তব্ধ হয়ে গেল। অনুভূতিশূন্য মনে হলো যেন নিজেকে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলছে। রাগে দুঃখে মন মস্তিষ্ক চরম পরিমানে বিষিয়ে উঠলো তার। আর একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের কান্না আঁটকে দৌড়ে নেমে গেল সে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here