নীলচে তারার আলো পর্ব -১৭+১৮

#নীলচে_তারার_আলো
#নবনী_নীলা
#পর্ব_১৭

কোমড়ে ওড়না বেধে নূপুর পায়ে হিয়া গানের তালে নাচছে। গান চলছে,
মম চিত্তে নীতি নৃত্যে কে যে নাচে
তা তা থই থই তা তা থই থই…।

অনেকদিন পর যেনো তার আনন্দের বাধ ভেঙেছে। এর আগে এতো আয়োজন করে সে কখনো নাচেনি। নাচের এক পর্যায়ে হটাৎ গানটা বন্ধ হয়ে গেলো। হিয়া ভ্রু কুঁচকে পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখল শুভ্র একদম তার কাছে দাড়িয়ে আছে। হিয়া হকচকিয়ে পিছাতে গিয়ে পড়ে যেতেই ভয়ে শুভ্রের শার্টের কলার চেপে ধরলো। আর চোখ মুখ কুঁচকে বন্ধ করে ফেললো, আস্তে আস্তে চোখ খুলে শুভ্রের দিকে তাকাতেই শুভ্রের দিকে যেনো চোখ আটকে গেলো হিয়ার। এতো সুন্দর হয় কিভাবে একটা মানুষ? লালচে ঠোঁট, সুন্দর চোখ দুটি চিকন ফ্রেমের চশমায় বন্দি সাদা ফরমাল শার্টে যেনো পুরো প্রিন্স। সামনের চুল গুলো এসে বিধেছে কপালে। শুভ্রের কপালে হালকা ভাজও পড়েছে। তবুও দেখতে সুন্দর লাগছে। হিয়ার মনে সূক্ষ্ম একটা ইচ্ছে জাগলো, হাত বাড়িয়ে এই বদরাগী ছেলেটাকে ছুঁতে ইচ্ছে করছে তার। হিয়া হাত বাড়িয়ে শুভ্রের গাল স্পর্শ করতেই বিকট শব্দে হিয়ার ঘুম ভেঙে গেলো। কোনো কিছু ভাঙার আওয়াজে লাফিয়ে উঠে বসে পড়লো সে।

হিয়া দুই হাত দিয়ে নিজের বুক চেপে ধরলো। হৃদপিন্ডটা রীতিমতন লাফাচ্ছে। এটা কেমন স্বপ্ন? স্বপ্নের মধ্যে শুভ্রর প্রতি এতো মুগ্ধ হওয়ার কারণ কি? শুভ্রের চেহারা এখনো তার চোখের সামনে ভাসছে। হিয়ার গাল দুটো টমেটোর মতন লাল হয়ে আছে। হিয়া নীচের ঠোঁট কামড়াতে লাগলো। তারপর নিজেকে বুঝলো। এইটা একটা স্বপ্ন! শুধু স্বপ্ন,এতো… এতো… লজ্জার কি আছে? এইটা কোনো ভালো স্বপ্ন না এইটা হলো দুঃস্বপ্ন। তারপর মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে পাশের ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো, দেরী হয়ে গেছে। এই বদমাইশ ডাক্তারের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে আজ এতো দেরি। হিয়া লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়লো। তারপর চটজলদি রেডি হয়ে গেলো। এক পাশের বেনি করতে করতে ব্যাগ নিয়ে নিচে নামলো হিয়া। বেড়িয়ে যেতেই সামনে পড়লো রাবেয়া ফুফু। হিয়া যেতে যেতে বলল,” কেমন আছেন,ফুফু?”

রাবেয়া ফুফু হাতের ইশারায় হিয়াকে ডাকলেন। হিয়া গাড়ির কাছে গিয়েও ফিরে আসতেই ফুফু বললেন,” এইভাবে চুল বেধেছ কেনো? কলেজে যেতে যেতেই তো খুলে যাবে চুল।” বলেই তিনি হিয়ার চুলে বেনী করে দিলেন। হিয়া ফুফুর এই ব্যাবহারে অবাক। আচ্ছা এই বাড়ির সবাই এতো ভালো কেনো?

এইদিকে সাহারা খাতুন চটে আছে। রান্নাঘরে শুভ্রের ফুফু নেই তাই তিনি নিজের মেয়েকে বললেন,” তোর বাবা পেয়েছে টাকি? এইটা কি খেলা চলছে? তোর ফুফুকে না বলতে পারলো না। তার ইচ্ছে মতোন হবে নাকি সবকিছু। ছয় মাস হয়নি বিয়ে হয়েছে এর মাঝে নতুন নাটক শুরু করেছে তারা ভাই বোন মিলে।”, কাল রাত থেকেই প্রচন্ড রেগে আছেন সাহারা খাতুন।

মোহনা তাকে শান্ত করতে বললো,” আরে ফুফুর কথাকে এতো সিরিয়াসলি নেওয়ার কি আছে? আর রায়হানের হিয়াকে পছন্দ নাও হতে পারে। কিংবা ওর নিজস্ব পছন্দ আছে হয়তো।”

” হ্যা, তোর ফুফুকে তো চিনিস না। কম মেয়ে সে দেখেনি ছেলের জন্যে। শেষমেষ আমার ছেলের বউকে তার পছন্দ করতে হলো। এরা ভাই বোন মিলে আমার ছেলে জিবনটা নরক বানাবে।”,

মোহনা ভ্রু কুঁচকে বললো,” তুমি এতো রিয়েক্ট করছো কেনো? তোমার ছেলেরই তো এই বউ পছন্দ না।সমস্যা নাই নতুন বউ আনতে পারবা ছেলের জন্যে।”

” নাহ্ তোর ফুফুর নজর সব সময়ে আমার ছেলের সবকিছুর দিকে। অসহ্য লাগে আমার এইসব। তোর বাবাকে তো আমি আর সহ্যই করতে পারছি না।”, মোহনা নিজের মাকে শান্ত করতে ব্যাস্ত হলো। সাহারা খাতুনকে বিয়ের পর থেকে এই মহিলার মানে শুভ্রের ফুফুর অনেক কথা সহ্য করতে হচ্ছে। এইবার সে একদম বিরক্ত।

কলেজে দিবার আরেক যন্ত্রণা। দিবা নাকি ক্রাশ খেয়েছে! ক্রাশ শব্দটা হিয়ার নতুন জানা হলো দিবার থেকে। যদিও ক্রাশ মানে ছেলেটাকে হিয়া চিনে না। তবে দিবা এমন ভাবে ছেলেটার বর্ণনা দিয়েছে তাতে হিয়া ছেলেটার চেহারা ভালো করেই কল্পনা করতে পারছে।

লম্বা, ফর্সা, চুলে আর্মি কাট, আর চোখে চশমা। ছেলেটা নাকি সবসময় শান্ত থাকে। তাদের কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সেই ছেলে। তাই ছুটির পর, প্রায় দিবা দাড়িয়ে থাকে একপাশে। কিন্তু আজ সে একা নয়, হিয়াকেও টানতে টানতে নিয়ে এলো। কি যন্ত্রনা এবার নাকি একটা ছেলেকে দেখার জন্যে দাড়িয়ে থাকতে হবে।

হিয়া কলেজের বড় গাছটার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কখন যে আসবে দিবার রাজপুত্র। হটাৎ দিবা হিয়াকে টেনে এনে হাতে ঈশারা করে বললো,” দেখ দেখ, ঐযে ছেলেটা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।”

হিয়া তাকালো কিন্তু তেমন ভালো করে দেখতে পারলো না। তার আগেই দিবার হাত নামিয়ে দিয়ে বললো,
” এইভাবে দেখাচ্ছিস কেনো? দেখে ফেলবে তো।” দিবা আর হিয়া এখন বন্ধুত্বের তুই পর্যায়ে চলে গেছে।

” দেখুক, আমি তো সেটাই চাই। চশমা পড়া ছেলে গুলো এতো সুন্দর হয় কেনো? দেখলেই তুলে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।”, দিবার মুখে এমন কথা শুনে হিয়া হা করে আছে। হায় হায় মেয়েটা কি শুরু করেছে।

” হুর, তুলে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে মানে কি? তুলে নিয়ে কি করবি তুই?”,অবাক হয়ে প্রস্ন করলো দিবা।

” জানি না।”,বলেই দিবা খিল খিল করে হেসে উঠলো।

” আচ্ছা এইবার চল। অনেক দেখেছিস।”,বলেই হিয়া টেনে দীবাকে নিয়ে এলো। এই দিবাটা চশমা পড়া, সুন্দর, লম্বা আর চুপচাপ ছেলে দেখলেই খালি কই মাছের মতন লাফায়।

🦋 হিয়া গেট দিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই হটাৎ সে বাগানে কিছু একটা দেখলো। সাদা সাদা ছোট্ট কি জানি বাগানে দৌড়াচ্ছে। হিয়া কৌতূহল বশত এগিয়ে এলো এ বাড়ির বাগানে সে আগে কখনো আসেনি। বাড়িটার চারিপাশ উচু প্রাচীরে ঘেরা। বাগানের একপাশে সুইমিংপুল। বাগান বললে ভুল হবে! ঘাসের মতন কার্পেট বিছানো তার এক পাশে টবে সারি করে কিছু গাছ আছে। ফুলের গাছ সবগুলো, গোলাপ, টগর, গাঁদা, বেলি এইসব।

হিয়া বাগানে এসেও কিছু একটার নড়াচড়ার আওয়াজ পেলো। হিয়া এদিক ওদিক তাকালো তারপর দেখতে পেলো ফুলের টবের পিছনে বাচ্চা একটা খরগোশ বসে আছে। একদম সাদা দেখতে, হিয়া খরগোশটাকে ধরার জন্যে এগিয়ে যেতেই খরগোশটা দৌড়াতে লাগলো। হিয়ার অনেক পছন্দ হয়েছে খরগোশটা। ধরতে পারলে হিয়া খরগোশটা রেখে দিবে। তাই সে খরগোশটাকে ধরার জন্যে ছুটছে। কিন্তু এই পিচ্চিটা ছোট ছোট পায়ে শুধু ছুটছে।

হিয়া চুপ করে দাড়িয়ে রইলো এবার সুযোগ পেলে সে এগিয়ে আসবে। খরগোশটা সুইমিংপুলের সামনে এসে বসে নিজের কান হাত দিয়ে পরিষ্কার করছে। হিয়া সুযোগ বুঝে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতেই খরগোশটা ছুটে বাম দিকে চলে গেলো। হিয়া সেদিকে তাকাতেই দেখলো একটা ছেলে দুহাতে খরগোশটাকে কোলে নিলো। ছেলেটা সাদা টি শার্টের উপরে লেদারের জ্যাকেট পড়েছে। ছেলেটাকে হিয়ার চেনা চেনা লাগছে। ঠিক চিনে উঠছে পারছে না। ছেলেটা তার দিকে এগিয়ে আসছে। হিয়ার চুলের মাঝে হাত চালিয়ে যাচ্ছে, কে এই ছেলে? ভাবতে ভাবতে হটাৎ কেনো জানি মনে হলো এই সেই হুডিপড়া ছেলেটা। ভেবেই চোখ বড় বড় করে তাকালো হিয়া। ধুর ওই এলিয়েনটা এইখানে আসবে কি করে? সে নিশ্চয়ই ভুল দেখেছে কিন্তু ছেলেটা আরেকটু এগিয়ে আসতেই হিয়া আতকে উঠলো। এইটাই তো সেই ছেলে!

হিয়া একটা ঢোক গিলে দু পা পিছিয়ে গেলো। বেশি পিছাতে পারবে না কারণ পিছনে সুইমিংপুল। ছেলেটার প্রথমে মনোযোগ খরগোশটার দিকে থাকলেও এবার তার দৃষ্টি হিয়ার দিকে। হিয়াকে দেখে তার ঠোঁটের কোনায় সূক্ষ্ম একটা হাসি জমেছে। ছেলেটা খরগোশটাকে আদর করতে করতে এগিয়ে এসে বললো,” তা মিস বৃহস্পতি আবার দেখা হয়ে গেলো যে?”

ছেলেটা এখন হিয়ার একদম কাছে দাড়িয়ে আছে। হিয়া এদিক ওদিক তাকালো এই ছেলেটা এইখানে এলো কি করে? হিয়া আমতা আমতা করে বলল,” আপনি এইখানে কি করছেন?”

ছেলেটা একটা ভ্রু তুলে বললো,” আমি…..?”,বলেই হাসলো তারপর বললো,” হুম….. পার্সেল দিতে এসেছি।”

হিয়া হা করে তাকিয়ে বললো,” আপনি না ফটোগ্রাফার? ডেলিভার বয় হলেন কবে?”

” এইতো মাত্র।”,বলেই আবার হাসলো সে। আবার সেই রহস্যময় হাসি। হিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না। পরক্ষনেই হিয়ার চোখ গেলো খরগোশটার দিকে। হিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমনা আমনি ঠোঁটের কোণে হাসি জমলো হিয়ার। হিয়ার দৃষ্টি খরগোশটার দিকে থাকলেও ছেলেটার দৃষ্টি হিয়ার দিকে। হাসলে কি সুন্দর লাগে মেয়েটাকে!

” আপনি এই খরগোশটা আমাকে দিবেন?”,হিয়া হাসি মুখে বললো।

” কেনো? তোমার কাছে একটা নাম জানতে চেয়েছিলাম, তুমি বলেছো?”, বলতে বলতে ছেলেটা এগিয়ে আসতেই হিয়া পিছাতে লাগলো। ছেলেটা আরো বললো,” আগে তোমার নাম বলো। তারপর ভেবে দেখবো ম্যারিকে দিবো কি দিবো না?”,
খরগোশটার নাম ম্যারি।

হিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” বলেছি না আমার নাম বৃহস্পতি।” শেষ শব্দটা বলে শেষ না করতে পড়ে যেতেই ছেলেটা হাত বাড়িয়ে হিয়া এক হাত ধরে ফেললো। কথায় কথায় কখন সুইমিংপুলের এতো কাছে চলে এসেছে হিয়া নিজেও টের পেলো না। এখন হিয়ার এমন অবস্থা যে ছেলেটা যদি হাত ছেড়ে দেয় তাহলে হিয়া সোজা গিয়ে পানিতে পড়বে। হিয়া ভয়ের চটে বললো,” আমাকে ছাড়বেন না। পড়ে যাবো।”

” আচ্ছা ছাড়বো না।”, বলে অন্য হাতে থাকা ম্যারিকে জ্যাকেটের সামনের পকেটে রাখতেই ম্যারি পকেট দিয়ে মুখ বের করে পিট পিট চোখে তাকিয়ে আছে।

” তুলুন আমাকে, আমি পড়ে যাবো….. জলদি করুন।”, ভয়ার্ত গলায় বললো হিয়া। ছেলেটা হাসতে হাসতে বললো,” নাহ্ আগে তোমার নাম বলো। নাম না বললে এক্ষুনি ফেলে দিবো।”

হিয়া এক চিৎকার করতেই ছেলেটা টান দিয়ে হিয়াকে সুমিংপুলের কাছ থেকে সরিয়ে এনে বললো,” নামটা বলো এইবার!”

হিয়া দুই হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে হাপাতে লাগলো। আরেকটু হলেই প্রাণটা বেরিয়ে আসতো। আরে এই ছেলেটা তার নামের পিছনে পড়েছে কেনো? নাম জেনে কি করবে? আকিকা দিবে? হিয়া ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।

ছেলেটা গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,” থাক তোমার নামটা না হয় নাই বা জানলাম। আমি কিন্তু তোমাকে একটা নাম দিয়েছি, স্ট্রবেরি।” বলেই একটু এগিয়ে এসে কানে কানে বললো,” সুন্দর না নামটা আমার কিন্তু খুব পছন্দ স্ট্রবেরি”, বলেই হিয়ার দিকে তাকাতেই দেখলো হিয়ার চোখ মুখের অবস্থা ভয়াভয়। হিয়ার চোখ মুখের অবস্থা দেখে ছেলেটা হেসে উঠে বললো,”আই মিন স্ট্রবেরি আমার অনেক পছন্দ। তোমার এতো ভয় পেতে হবে না।”

হিয়া অবাক হয়ে কিছুটা সরে দাড়ালো। ছেলেটার কথাগুলো হিয়ার কানে বাজছে। হিয়া জড়সড় হয়ে ছেলেটাকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির ভিতরে যেতেই ছেলেটা পথ আটকে দাড়ালো তারপর বললো,” তুমি এই বাড়িতে থাকো?”

হিয়া চোখ পিট পিট করে তাকালো কিছু বললো না এই ছেলেকে তার ভয় লাগছে। ছেলেটা নিজের পকেট থেকে ম্যারিকে হিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,” ম্যারিকে তুমি চাইলে নিজের কাছে রাখতে পারো। আমি কিন্তু আবার এসে ফেরত নিবো।”

শেষের কথা শুনে হিয়া খুশি হয়ে গেলো। হাত বাড়িয়ে ছেলেটার থেকে ম্যারিকে নিজের কোলে নিলো। কি কিউট! হিয়া খুশি হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো,” ধন্যবাদ।”

ছেলেটা ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বললো,” কি বললে তুমি? ধন্যবাদ! তোমার মুখে ধন্যবাদ শুনে আমি ধন্য। যাক প্রথমবার না বললেও দ্বিতীয়বার যে বলেছ এই জন্যে প্রথমবারেরটা মাফ।”

বলতে বলতে ছেলেটা গেটের দিকে এগিয়ে গেলো। হিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এমন হুট করে এই লোকের সাথে তার দেখা হয় কেনো? হিয়া তার কোলে থাকা ম্যারির দিকে তাকালো। কি কিউট! হিয়া ম্যারিকে আদর করতে করতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো আর বললো,” তোমার মালিকটা এমন কেনো? হুট হাট করে সামনে এসে পড়ে। যাদের হার্টে সমস্যা তারা তো এনাকে এভাবে হুট করে দেখলে, ইন্নালিল্লাহ।”

কথার মাঝেই ম্যারি হিয়ার হাত থেকে লাফ মেরে দোতলায় দৌঁড়াতে লাগলো। মনে হয় এলিয়েনের বদনাম এই খরগোশের পছন্দ হয় নি। হিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে ম্যারির দিকে তাকালো। সে দৌড়াচ্ছে কিন্তু একি! এবার কি হবে? হিয়ার বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠলো। ম্যারি শুভ্রের রূমে ঢুকে গেছে। এই লোকটা তো মানুষকে নিজের রুমে যেতে দেয় না আর এইটা তো নিরীহ প্রাণী। হিয়া ভয়ে একটা ঢোক গিললো।
#নীলচে_তারার_আলো
#নবনী_নীলা
#পর্ব_১৮

হিয়া পা টিপে টিপে শুভ্রের ঘরে এলো। এই ঘরে এইটা তার দ্বিতীয় প্রবেশ। প্রথমবারে বাড়ি মাথায় তুলেছে এবার হয়তো তাকেই তুলে আছাড় দিবে। হিয়ার মুখের সামনে শুভ্রের রাগী চোখগুলো ভাসছে। এই ম্যারিও এলিয়েনটার মতোন উধাও, হিয়া আস্তে করে শুভ্রের খাটের সামনে বসলো। তারপর খাটের নীচে খুজতে লাগলো। শুভ্র বারান্দায় ছিলো, ফোনে কথা বলতে বলতে ঘরে আসতেই দেখলো হিয়া খাটের নিচে মাথা ভরে কি যেনো দেখছে।

শুভ্র কানের কাছ থেকে ফোনটা নামিয়ে দিয়ে এগিয়ে এসে ভ্রু কুঁচকে হিয়ার পিছনে দাড়ালো।

” কি করছো এইখানে?”, হটাৎ শুভ্রের আওয়াজ পেয়ে হুরমুরিয়ে উঠতে গিয়ে ঠাস করে কাঠের সাথে বাড়ি খেয়ে মাথায় হাত পড়লো হিয়ার। অনেক জোরে লেগেছে কিন্তু ভয়ে চিৎকার করছে না সে। ঠোঁট কামড়ে ব্যাথা সহ্য করলো হিয়া। তারপর আস্তে করে মাথা বের করে বেড়িয়ে আসেতেই দেখলো। শুভ্র তার একদম পিছনে দাড়িয়ে আছে।

এইবার সে কি বলবে? শুভ্রের চোখে মুখে বিরক্তি ছাপ স্পষ্ট। সে এমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কেনো হিয়ার সেটা জানা আছে। হিয়া একটা ঢোক গিলতেই শুভ্র বললো,”খাটের নিচে মাথা দিয়ে কি করছিলে তুমি?”

হিয়া মাথার সেই অংশ ডলতে ডলতে বললো,” এইটা আপনার রুম?… হে .. হে আমি তো দেখিই নি। ভুলে.. এসেছি।” বলেই এদিক সেদিক তাকিয়ে ম্যারিকে খুঁজতে লাগলো।

শুভ্র স্থির দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,” এবার দেখেনিয়েছ? যাও নিজের রুমে।”

” সে তো আমি যাবোই.. আমি কি এইখানে থাকতে এসেছি নাকি?”,হিয়া প্রসঙ্গ বাড়িয়ে খালি এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। এনার ঘরে খরগোশ আছে জানলে তার খবর আছে।

” তোমাকে থাকতে দিচ্ছে কে?”,বলেই হিয়ার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফোনের দিকে তাকালো।

” আপনার ঘরে থাকতে চেয়েছে কে?”, আনমনে বলে উঠলো হিয়া। বলেই নিজের মুখ চেপে ধরে শুভ্রের দিকে তাকালো। এই কথা শুনে শুভ্র নিশ্চয়ই রেগে গেছে। শুভ্র ফোনটা পকেটে ভরে হিয়ার দিকে এগিয়ে এসে বললো,” থাকতে যখন চাইছো না তাহলে এখনো এই ঘরে কি করছো?”

হিয়া মুখ থেকে হাত নামিয়ে শুভ্রের টেবিলের পাশে তাকালো। ধুর এই দুষ্ট খরগোশটা কোথায় গেলো? এই লোকটা তো বেড়িয়ে যাও বেড়িয়ে যাও শুরু করেছে। হিয়াকে এদিক সেদিক তাকাতে দেখে শুভ্র বিরক্তি নিয়ে বললো,” কি দেখছো তুমি?”

” দেখছি না খুঁজছি।”, মুখ ফসকে বলে ফেললো হিয়া। বলেই হিয়া আড় চোখে শুভ্রের দিকে তাকালো। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

হিয়া আমতা আমতা করে বলল,” না মানে আপনার ঘরে কিছু ফেলে গেলে তো আর নিতেও আসতে পারবো না তাই খুঁজছি কিছু ফেলেছি কিনা..”বলেই হিয়া শুভ্রের খাটের পিছনে চলে গেলো ম্যারিকে খুজতে।

হিয়ার উপর এখন শুভ্রের রাগ হচ্ছে। তখন থেকে ভালো করে বলছে চলে যেতে তা না কথা পেঁচিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। আবার দেখো ইদুরের মতন গিয়ে খাটের পিছনে দাড়িয়ে আছে। শুভ্র এগিয়ে এসে হিয়ার হাত ধরে দেওয়ালের সাথে দাড় করাতেই হিয়া হকচকিয়ে তাকালো। শুভ্র শান্ত দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো,” তোমার কি আজ আমার ঘরে রাত কাটানোর ইচ্ছে আছে?”

শুনেই হিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। হিয়া রেগে উঠে বলল,” সবসময় এমন আজে বাজে কথা বলেন কেনো? আপনার ঘরে রাত কাটানো ইচ্ছে আছে মানে কি?”

” ইচ্ছে না থাকলে এক্ষুনি এই ঘর থেকে যাও। নয়তো এরপর তোমার মামা ময়মনসিংহ থেকে এসেও তোমাকে এ ঘর থেকে নিতে পারবে না। খুব শখ না আমার ঘরে আসার, একেবারে রেখে দিবো।”, শুভ্র শান্ত গলায় বলল।

একেবারে রেখে দিবে মানে কি? শুভ্রের কথা শুনে হিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” মানে?”

” মানে তোমার মাথা। মাথায় বাড়ি খেয়ে কি বোধশক্তি কমে গেছে? যাও নিজের রুমে যাও।”, বিরক্তির স্বরে বললো শুভ্র। হিয়া শুভ্রের বারান্দার দিকে তাকাতেই ম্যারির লেজ দেখতে পেলো। এইবার সে কি করবে? ম্যারিকে কিভাবে আনবে? আর কোনো জায়গা পেলো না এই ম্যারি।

” যাচ্ছি, এক মিনিট। আপনার বারান্দাটা এক নজর দেখেই চলে যাবো। কোনোদিন তো দেখিনি।”, বলেই বারান্দার দিকে এগুতেই শুভ্র হিয়ার ব্যাগ ধরে টেনে হিয়াকে আবারো আগের জায়গায় এনে বললো,” এখন কি ধমক দিয়ে বলতে হবে? ধমক দিলে তো আবার আতকে উঠবে, অজ্ঞান হয়ে যাবে। ভালো ভাবে বলছি ভালো লাগছে না তোমার?”

” ভালো লাগবে না কেনো? অনেক ভালো লাগছে। কিন্তু একটু বারান্দায় যাই তাহলে আরো ভালো লাগবে। সত্যি বলছি এরপর চলে যাবো। আর জীবনেও আপনার রূমের আশেপাশে ঘেঁষবো না।”, বলেই হিয়া শুভ্রের হাতের নিচে দিয়ে একটা দৌড় দিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। শুভ্র হিয়াকে এমনভাবে এর আগে দেখেনি। এটাই কি সেই মেয়ে যে তাকে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছিলো। আর এখন তার রূমে এসে দৌড়াচ্ছে এভাবে। শুভ্র বিরক্তি নিশ্বাস ফেলে বারান্দায় আসলো। তারপর বুকের কাছে হাত ভাজ করে দাড়ালো। কি করতে চাইছে এই মেয়েটা?

হিয়া হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে হাত দুটো পিছনে রেখে। সে হাতে ম্যারিকে নিজের পিছনে লুকিয়ে রেখেছে সে। শুভ্রকে দেখেই হিয়া হাসতে লাগলো। কি বলবে সে কিছুই জানে না। সিংহের গুহায় তো ঢুকেছে এবার বের হবে কি করে। শুভ্র রীতি মতন দরজা আটকে দাড়িয়ে আছে যেতে হলে তার গা ঘেঁষে যেতে হবে। হিয়ার হাসি দেখে শুভ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক কিছু বলতে চায় কিন্তু বলছেনা নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে।

হিয়া হাসি থামিয়ে বললো,” আপনার বারান্দাটা অনেক সুন্দর।”,হিয়া জানে এইসব বলে কোন লাভ নেই। শুভ্রের দৃষ্টি তার দিকেই স্থির। শুভ্র ঠান্ডা গলায় একটা ভ্রু তুলে প্রশ্ন করলো,” তোমার পিছনে কি?”

এই প্রশ্ন শুনেই হিয়ার পুরো শরীরে শীতল হাওয়া বইতে লাগলো।মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। বুকের ভিতরটায় যেনো ড্রাম বাজছে। হিয়া দুপা পিছিয়ে গিয়ে বললো,” কই কিছু না তো।”

শুভ্র সন্দেহের দৃষ্টিতে এগিয়ে এসে বলল,” তাহলে পিছিয়ে যাচ্ছো কেনো?” হিয়া কোনো উত্তর দিলো। এইবার সে ধরা খেয়ে যাবে মনে হচ্ছে। হিয়া একদম দেওয়ালের সাথে মিশে দাড়িয়ে আছে। এই ম্যারিটা হাতের মধ্যে খালি নড়াচড়া করছে। কখন আবার হাত ফসকে নিচে লাফ দেয়।

শুভ্র হিয়ার সামনে এসে দাড়ালো তারপর বললো,” কি জন্যে আমার রুমে এসেছো? হাতে কি তোমার? হাত দুটো সামনে আনো বলছি।”

হিয়া না সূচক মাথা নাড়লো। শুভ্র রাগী চোখে তাকাতেই হিয়া হাত দুটো সামনে এনে শুভ্রের মুখের সামনে ধরলো। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে ম্যারির দিকে তাকিয়ে আছে। ম্যারি সামনে এমন অগ্নিমূর্তি একজনকে দেখে চোখ পিট পিট করে তাকালো।

শুভ্র প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বললো,” এইটা আমার ঘরে কি করছে? তুমি তাহলে এতক্ষণ এইটাকে খুঁজছিলে? নাকি তুমি ইচ্ছে করে আমার ঘরে একে ছেড়ে দিয়েছো?”

হিয়া আড় চোখে তাকালো তারপর বললো,” আমি কেনো ওকে এই ঘরে ছেড়ে দিবো?”,বলেই ম্যারিকে কোলে তুলে বললো,” ম্যারি তো ভুল করে চলে এসেছে। সে কিভাবে জানবে যে এইটা একটা নিষিদ্ধ ঘর। একজন ব্যাতিত কারো ছায়া এ ঘরে পড়ে না।”

” কোথায় পেয়েছো তুমি এইটা?”, গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো শুভ্র।

” এইটা এইটা করছেন কেনো? নাম আছে না? ম্যারি ওর নাম ওকে ম্যারি বলুন।”, ভ্রু কুচকে বললো হিয়া।

” জাস্ট শাট আপ। তুমি আর তোমার এই টুইন এক্ষুনি আমার ঘর থেকে বের হও।”, রেগে বললো শুভ্র। হিয়া মুখ বাঁকিয়ে ম্যারিকে আদর করতে করতে শুভ্রের ঘর থেকে বের হয়ে এলো। যাক এই যাত্রায় বাঁচা গেছে।

শুভ্র বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। বেছে বেছে নিজের মত আরেকটা খুঁজে বের করেছে এই মেয়ে। দুজনই প্রথম এসেই তার ঘরে হানা দিয়েছে।

🦋 হিয়ার মাথা ঘুরাচ্ছে। হিয়া সামনের বোতল থেকে পানি খেলো। টিভির সামনে বসে থাকলেও কিছুক্ষণ পর পর আড় চোখে পাশের সোফায় বসে থাকা ব্যাক্তিটির দিকে সে তাকাচ্ছে।

ব্যাক্তি ছাড়া একে কি বলে সম্মোধন করবে সেটা হিয়া বুঝতে পারছে না। একে কি ফুফুর ছেলে রায়হান বলবে নাকি বাসের হুডিওয়ালা এলিয়েন কিংবা পাহাড়ের সেই রবি ফটোগ্রাফার নাকি ডেলিভারি বয় মানে ম্যারির মালিক । কে এই ছেলে? উফফ! ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে হিয়া।

রায়হান হিয়ার বিভ্রান্ত চেহারাটা দেখে বেশ মজা পাচ্ছে। হিয়ার সাথে যে তার নিজের মামার বাড়িতে দেখা হবে সেটা রায়হানও ভাবেনি। এই মেয়েটার সাথে কি অদ্ভূতভাবেই না বার বার দেখা হয়।

রায়হানের কোলে উঠে লাফাচ্ছে ম্যারি। রায়হানের পশুপাখি অনেক পছন্দ তবে সে কখনো খরগোশ পালে নি। এই খরগোশ তার না। এই রকম আবাসিক এলাকায় কোথা থেকে এই পিচ্চিটা এলো কে জানে। শুধুমাত্র হিয়ার সাথে কথা বলতেই সে খরগোশটাকে নিজের বলে পরিচয় দিয়েছে। আর ম্যারি নামটা রায়হানের পোষা এক বিড়ালের নাম ছিল। যদিও সে যখন খুব ছোট তখন ম্যারি মারা যায়। রায়হানের খুব আদরের ছিলো সে বিড়াল।

হিয়ার পাশে বসে মোহনা তার প্রিয় মুভি দেখছে। রায়হান ইচ্ছে করেই রিমোট দিয়ে চ্যানেল চেঞ্জ করে মোহনাকে একটু বিরক্ত করলো। মোহনা রীতিমত রেগে বললো,”এই তুই চ্যানেল বদলেছিস কেনো? এক্ষুনি চেঞ্জ কর।”

” আমি খেলা দেখবো। এতদিন পর এসেছি, কোথায় সবাই আমার আদর যত্ন করবে তা না বসিয়ে রেখেছো।”, বলতে বলতে ম্যারিকে আদর করলো।

মোহনা ভ্রু কুচকে বললো,” একদম ঢং করবি না। খেলা দেখতে হলে তুই তোর খরগোশ ছানার লাফালাফি দেখ।”বলতে বলতে পাশ দিয়েই ফুকুকে দেখে অভিযোগ করে বললো,” বড় ফুফু, দেখো তোমার বদমাইশ ছেলে আমাকে জালাচ্ছে।”

ছেলের অভিযোগ শুনে বরাবরের মতনই তিনি হাসলেন। রায়হান ফিসফিসিয়ে বললো,” রিমোট দিয়ে দিবো, আগে বলো আমাকে ডেকেছে কেনো মা?” প্রশ্নটা মোহনার জন্যে থাকলেও পুরোটা সময় রায়হান হিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো। মেয়েটা টিভির দিকে তাকিয়ে থেকে গভির চিন্তায় ডুবে আছে।

রায়হানের প্রশ্ন শুনেই মোহনার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। তারপর কিছু একটা চিন্তা করে জিজ্ঞেস করলো,” আচ্ছা, তোর কি পছন্দের কোনো মেয়ে আছে?”

মোহনার হটাৎ এমন প্রশ্ন শুনে রায়হান আন্দাজ করতে পারছে কেনো তার মা তাকে ডেকেছে। ভেবেই তার হাসি পাচ্ছে। প্রশ্নের উত্তরে রায়হান মুচকি হেসে বললো,” হুম, আছে তো।”

হিয়া আড় চোখে তাকালো। কিভাবে খাপছাড়াভাবে বলছে এই ছেলেটা। হিয়া আড় চোখে তাকাতেই চোখাচোখি হলো রায়হানের সাথে। হিয়া না দেখার ভান করে চোখ সরিয়ে নিলো।

মোহনা আগ্রহ নিয়ে বললো,” কি নাম মেয়েটার?”

” আমার তো অনেককেই পছন্দ। কোন মেয়ের নাম জানতে চাচ্ছো তুমি?”, ঠোঁটে কোন হাসি রেখে বললো রায়হান।

মোহনা ভ্রু কুঁচকে বললো,” অনেককে পছন্দ মানে?”

” হ্যা, রাইট নাও দীপিকা পাড়ুকোন কে আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ।”, বলেই হাসতে লাগলো সে।

” ফাজলামি করিস আমার সাথে? সত্যি করে বল।”, সিরিয়াস হয়ে প্রশ্ন করলো মোহনা।

রায়হান পরক্ষনেই একবার হিয়ার দিকে তাকালো তারপর বললো,” হুম, আছে একজন। খুব সাধারণ একটি মেয়ে।”

[ #চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here